Wednesday 21 December 2022

স্মৃতি তুমি বেদনা

নিজের হাতে লাগানো কুমড়ো লতা কিংবা বেগুন ফুলে মায়া পড়ে কবে কোথায় বেড়াতে যেয়ে কিনে আনা লবনের চামচ, কফির মগের জন্য মন পুড়ে দশ বছরে একবার ভাঁজ খুলে দেখা হয়নি, সেই কলেজের প্রথম বছরে কেনা জামদানিটার জন্য মন হু হু করে মেয়ের জুডোর ড্রেস, সেই ছোট্ট গোলাপী বাথরোব সব ঝুলে আছে আলমিরায়, একরাশ মায়া মেখে বৃষ্টি ভিজে কাদা মাড়িয়ে গড়িয়াহাট থেকে কেনা শাড়িতে মায়া অসহ্য ভীড়-গরম উপেক্ষা করে গাউছিয়া থেকে কেনা ব্লাউজে মায়া নিজের শখে দুবাই এয়ারপোর্টে কিনে দেয়া মেয়ের ছোট হয়ে যাওয়া চুড়িতে মায়া পয়সা জমিয়ে জমিয়ে কেনা এত্ত সব সিডি, আর কোনদিন কোন কাজে লাগবে না জেনেও ফেলে দিতে কি নিদারুণ বুক ব্যথা প্রয়োজন ফুরায়, মায়া নয়। কত সহজে প্রতিদিন কত মানুষ চলে যায়, বেঁচে থাকাটাই কি একটা মায়া তবে? সাই-ফাই সিনেমায় দেখানো এলিয়নদের মত আমরাও কি কোন একটা ইল্যুশনের চক্করে ঘুরপাক খাচ্ছি?

স্বাধীনতা বনাম উচ্ছৃঙ্খলতা

এই বছরের মে মাসে জিন্স-টপস পরার কারণে নরসিংদী রেল স্টেশনে এক তরুণীকে মারধোর করে এক বোরকা পরা বেহেস্তী ভদ্রমহিলা। ঘটনার পর ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি। তরুণী জানিয়েছিলো, সে রেল স্টেশনের মারধোর আর গালি-গালাজের ট্রমা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আর একবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলড হয়ে ট্রমাটাইজড হওয়ার শক্তি তারমধ্যে নেই। যত শাদা চোখেই দেখি, এখানে কে স্বাধীন আর কে উচ্ছৃঙ্খল? পুরো পৃথিবীর সমাজবিজ্ঞান বলবে, বেহেস্তী ভদ্রমহিলা উচ্ছৃঙ্খল আর মেয়েটি নিরীহ। একজন মানুষের নিজের পোশাক নির্বাচন তার মৌলিক অধিকার। যেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর সমাজবিজ্ঞান সব ফেইল করে তার নাম বাংলাদেশ। একটি মেয়ে যে কারো ব্যাপারে নাক গলায় নাই, কারো ক্ষতি করে নাই, কাউকে নির্যাতন করে নাই, নিজের পোশাক পরে নিজের বন্ধুদের সাথে নিজের দিন শুরু করেছিলো সে উচ্ছৃঙ্খল আর বোরকার মত একটা অস্ত্র গায়ে চাপিয়ে আর একজনকে নির্যাতন করার মত এমপাওয়ারড ফিল করা কেউ হলো নিরীহ - স্বাধীন। একটা দেশের প্রশাসনে যারা কাজ করে তারা সে দেশের জনগনেরই অংশ, ভিন গ্রহ থেকে আসা কোন এলিয়েন নয়। এই মৌলবাদী সমাজ ব্যবস্থার অংশ হয়েও অন্তত এই ক্ষেত্রে প্রশাসন সিনেমার পুলিশের মত ক্যারিশমাটিক কাজ করছে। বোরকাওয়ালীকে ধরে জায়গা মত "স্বাধীনতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা" ফিট করে দিয়েছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ পুলিশ এরকম সুবিচারের দৃষ্টান্ত রাখবে এই আশা রাখছি। বাঙালিকে "হাইকোর্ট দেখানো" এদেশের বিচার ব্যবস্থার রীতি, এ নিয়ে আক্ষেপ রইলো। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশকে ভালবাসা।

তিন সেটের সোফা

অবশেষে বাসায় দুইটা তিন সিটের সোফা কিনলাম। একমাত্র মেয়ে আমার, সারাদিন ভর আদারে,বাদারে যেখানেই ঘুরে বেড়াক, রাত হলেই খেয়েদেয়ে আমার কোলে মাথা দিয়ে টিভি দেখা তার ছোটকালের অভ্যাস। ছোট যখন ছিলো তখন ছিলো কিন্তু এখন বড় হইছে, এই গরমের কালে এত ঘষটাঘষটি করলে কষ্ট মেয়েরে বল্লাম, আলহামদুল্লিল্লাহ, এখন দুইটা তিন সিটের সোফা, একটায় তুমি শুবা আর একটায় আমি। বন্ধুদের সাথে গুলটি মেরে বাইরে থেকে এসে এই কথা শুনে মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভালোমন্দ কিছুই বললো না, আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। আমি খুবই বিরক্ত হলাম, কিন্তু কিছু কেয়ার করছিলাম না। এরপর ও রুমে চলে গেলো আমিও আমার কাজে গেলাম। একটু পর ক্ষিদে লাগলে জোরে জোরে ডাকলাম, কিন্তু কোনো উত্তর দিচ্ছিলো না। জিজ্ঞেস করলাম, কি হইছে? জবাব দেয় না। বললাম, এই মূহূর্তে নীচে এসে টেবিল লাগা, নইলে তোর একদিন কি আমার একদিন। মেয়ে নীচে নামলে খেয়াল করলাম চোখ লাল হয়ে গেছে মুহূর্তেই গলার রগ বেয়ে গেছে। “জরে জরে" নিঃশ্বাস নিচ্ছে। সাধারণত মাইর খাওয়ার সময় হইলে ও এরকম করে। পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি হইছে, ভাল থাকতে ভাল লাগে না? কিন্তু সে একদম টাচ ও করতে দিতে ইচ্ছুক না। বললাম, পিঠ সুড়সুড় করলে এমনেই বলো, এত ভ্যানতাড়ার দরকার নাই। তারপর হঠাৎ বলে, একমাত্র মেয়ে আমি তোমার, কেন আমি তোমার সাথে এক সোফায় শুইলে তোমার সমস্যা? একা একাই খাও তাহলে, আমি তোমার টেবল সাজিয়ে দেবো না। এই কথা শুনার পর আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতেছিলাম না। এত বড় বড় দুই সোফায়, দুইজন আলাদা শুয়ে টিভি দেখবো বলাতেই এই অবস্থা! তাও মায়ের সাথে এমন রিয়াক্ট। বললাম, এইটা নরম গলায়ও আইসা বলতে পারতা। এত তেজ দেখানোর কিছু নাই। আমার খাইয়া আমার পইড়া আমারেই কইবা ম্যাও! তেজ সামলায় রাইখো নাইলে মাইর একটাও মাটিতে পরবে না। সাথে চোখ রাঙাইয়া বল্লাম, আগের সোফাটা লাফাইয়া ভাঙছো, এখন বড় হইছো, সোফার সাথে ভদ্রতা বজায় রাখবা, ব্যবহার বংশের পরিচয়। আমার এই কথা শুনে মেয়ে থ। ওয়াদা করছে এমন বেয়াদপি আর করবে না কখনো। মনে পড়ে গেছে পাঁচ বছর আগে সে এমন বেয়াদপি করছিলো, তিন দিন তার খাওয়া দাওয়া খুবই বেসিক পর্যায়ে ছিলো। মনে মনে সে ভাবলো, মা হইছে উনিশ বছর, যা ছিলো তাই আছে, বদলায় নাই। বাপরে বাপ, বাঙালি মা এমন জল্লাদও হয়!!!!

ঈশ্বর ও শুড়িখানা

গলির মুখে যে পুরনো চার্চটা ঠিক তার উল্টো দিকেই হঠাৎ করে একদিন একটা বার খোলা হলো। চার্চে প্রতিদিন প্রার্থণার সময়, হে লর্ড, বার ধ্বংস করে দাও, বার ধ্বংস হোক বলা হতে লাগলো। সত্যি সত্যি কয়েকদিন পর আচমকা ঝড় হলো, প্রচন্ড বজ্রপাতসহ বৃষ্টি যাকে বলে। বজ্রপাত থেকে আগুন লেগে পুরো বার পুড়ে ছারখার। বারের মালিক যেয়ে চার্চ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিলো। তার দৃঢ় বিশ্বাস, চার্চে প্রার্থণার কারণেই আগুন লেগেছে। আদালতে চার্চ কর্তৃপক্ষ তাদের সমস্ত দায় অস্বীকার করলো। বিচারক পড়লেন মহা ফাঁপড়ে, এই জীবনে প্রথম তিনি এমন সমস্যায় পড়লেন, একজন “বার” মালিক, ঈশ্বর, প্রার্থণার ওপর বিশ্বাস রাখছে অথচ পুরো “চার্চের" ইশ্বর আর তার শক্তির ওপর বিশ্বাস নাই!!!! (হোয়াটসএপ জোকের ভাষান্তর)

নারীর প্রতি সহিংসতা

প্রতি এগারো মিনিটে লিগ্যাল পার্টনার কিংবা পরিবার দ্বারা একটি মেয়ে খুন হয়, হ্যাঁ, এই পৃথিবীতেই হয়। বানিয়ে বলছি? আমি না পরিসংখ্যান বলছে অফিস থেকে মেইল করা হয়েছে, খালি চাকরি আর ক্যারিয়ার হলেই হবে না, কমিউনিটির জন্যেও কাজ করতে হবে। কি করা দরকার আর কি করা যায় এসব নিয়ে টিম করা হলো, বিভিন্ন চ্যারিটি অর্গানাইজেশানে যোগাযোগ করার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, “শেল্টার হোম” এর ভিক্টিম মহিলাদের “স্কিল ডেভেলাপমেন্ট” প্রজেক্ট করা হবে। কম্পিউটার ট্রেনিং, ইংরেজি শেখানো, হাতে কলমে সিম্পল ট্র্যানজেকশান বুকিং ইত্যাদি। ভবিষ্যতের সহকর্মী উঠিয়ে আনতে হবে ওদের মধ্যে থেকে। আত্মবিশ্বাস ফিরিয়া আনা দরকার ভিক্টিমদের। প্রজেক্ট ফাইন্যাল করে প্রেজেন্টেশান বানাতে গিয়ে আক্কেল গুড়ুম। নর্ডিক কান্ট্রি’স যাদেরকে পৃথিবীর বেহেস্ত বলা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতায় তারা ইউরোপেও সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছে!!!!!! গরীব, ভুখা বলে অবহেলিত ইস্ট ইউরোপীয়ানরা আছে সবচেয়ে নীচে!!!! অবশ্য লেডি ডায়না আর মেগান মার্কেল জানিয়েছে, নির্যাতন রাজবাড়িতেও চলে। আলোচনার মাঝেই রুমেনিয়ান ম্যানেজার গর্বের সাথে জানালো, ইন রুমেনিয়া নো বডি ক্যান টাচ আস, নো বডি। উই কন্ট্রোল এভ্রিথিং, হাউজ, শপিং, ওয়ার্ক। জীবনের প্রায় সবটা এই দেশে খরচ হয়ে গেলো, আগে জানা থাকলে রুমেনিয়াই চলে যেতাম।

বাঙালি চরিত

বাঙালি মানসিকতা ডিফাইন করতে পুরনো দিনের বাংলা সিনেমাগুলো আপনাকে যারপর নাই সাহায্য করবে। সিনেমা (প্রোডাক্ট) বানানোর আগে ব্যবসায়ীরা (প্রোডিউসার)রা ভাল মত মার্কেট রিসার্চ করেই মার্কেটে নামে। আর এই মার্কেট হলো “আমরা বা আমাদের মানসিকতা”। সেসময়ের দুই বাঙলার খুব কম মানুষই আছে যারা উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের সিনেমা দেখে নাই। কোন অজানা কারণে পুরো বাংলা জুড়ে ঐ দুজনকে ভাল ছেলে-মেয়ের রোল মডেল মানা হতো। অথচ বাঙালি বিয়ের আগে ছেলেমেয়ের প্রেম মানতে পারে না। কিন্তু এই দুজন বাবামায়ের অমতে প্রেম করে ব্যাড়াছ্যাড়া লাগানোর সিনেমাই করে গেছে। অদ্ভূদ। যাহোক, উল্লেখযোগ্য কিছু জিনিস, যা আপনার সিনেমা দেখাকে সহজ করবে, গরীব ভাল ছেলে মানে, ধূতি, চটি, পাঞ্জাবী বা শার্ট। বড়লোক মানেই মুখে পাইপ, সিল্কের হাউজকোট, থ্রি পিস স্যুট আর এর মাঝামাঝি যা আছে, প্যান্ট, পোলো, শার্ট সবই কম ভাল বা নন ভাল ছেলের পোশাক যার হাজার যোগ্যতা থাকলেও সুচিত্রার সাথে বিয়ে হবে না কারণ এরা আধুনিক। এরা ইংলিশ বলে, ফরেনে যায় বা আসে, টেনিস খেলে, ক্লাবে যায় এবং কাটা চামচে খায়। বিদেশ লোভী বাঙালি এভাবেই “খারাপ মানুষ” চিহ্নিত করে। ইংলিশ মিডিয়ামে বাচ্চা পড়ানোর জন্যে জীবন দিয়ে দেয়া বাঙালির সিনেমায় তাদের আদর্শ রোলেরা ইংলিশ বলে না বলে নেতিবাচক চরিত্ররা!!!!! আর ভাল মেয়ের চরিত্র? সবসময় শাড়ি পরবে, গরীব হলে সূতি, বড়লোক হলে নন সূতি। গৃহকর্ম সব জানবে আর খুবই ললিত সুরের বাঙলা গান গাইবে, রবীন্দ্র সংগীত হলেই পুরো জমে। প্রচুর দুঃখ জমিয়ে নীরব থাকবে আর কাঁদবে, মুখ খোলা নিষেধ। সালোয়ার কামিজ বা জিন্স মানেই হলো আধুনিক মেয়ে যারা কেক পেষ্ট্রি খায়, ববছাট চুল এবং এরাও একটু ইংলিশ ভিংলিশ বলে। টকাস টকাস কথা বলা মানেই নন কোয়ালিফাইড। এরা আর যাই হতে পারে “ভাল” মেয়ে হতেই পারে না, একজন মানবিক মানুষ হওয়ার সব গুনাবলীর সাথে জামা কাপড়ের সম্পর্ক অত্যন্ত সুগভীর। খানিকটা দুষ্টুমিষ্টি আধুনিক স্বভাবের কারণে সুর্দশন প্রতিভাবান নায়ক সৌমিত্র যিনি আবার একটু আধটু টুইষ্টও নাচতে জানতো, উত্তমকুমার বেঁচে থাকাকালীন বাঙালির সেকেন্ড চয়েজ হয়ে রইলো। উত্তমকুমারের পরে বিশ্বজিৎ তারপর প্রসেনজিৎ এখন শুধু জিৎ ও সিনেমা করছে। তিন জেনারেশন পরে ভাল – খারাপ চরিত্রের জামাকাপড়, সংলাপ ইত্যাদির ধরন এখন পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সমাজ আর আমাদের মানসিকতা? পশ্চিম বাঙলায় অন্তত ভাল ছেলেমেয়ে আর খারাপ ছেলেমেয়ের পোশাকের ধারনা বদলছে কিন্তু বাংলাদেশ???? কিছুদিন আগেই সিনহা হত্যা মামলায়, মামলার আসামী ওসি প্রদীপকে বাদ দিয়ে সবাই যেভাবে মামলার ভিক্টিম শিপ্রাকে নিয়ে পড়েছিলো, তাতে বলা যায়, বাংলাদেশ এখনও নিরাপদে ভিক্টোরিয়ান যুগেই পরে আছে, উত্তমকুমারের সাথে।

দ্যা রয়্যাল লাইফ - রানী জীবন - নারী জীবন

বিদ্রোহী রাজবধূ হিসেবে প্রয়াত লেডি ডায়না ইতিমধ্যে কয়েক জেনারেশানের চর্চার বিষয়। স্বামী, শাশুড়ি কেউ খুশি ছিলেন না তার ওপরে। সম্প্রতি তাতে যোগ হয়েছে মেগান মার্কেলের নাম। মেগানতো সংসার ভেঙে দেয়ার অপরাধে অপরাধী। রাজকীয় ঐতিহ্য ভেঙে স্বামী নিয়ে আলাদা সংসার পাতা ভাবা যায়! সম্প্রতি নেটফ্লিক্স এই বিতর্ক আরো উস্কে দিয়েছে। নেদারল্যান্ডসের রাজবধূ থেকে রানী'র সিংহাসনে বসা মাক্সিমা কিন্তু সবসময় আলোচনার আড়ালেই থেকে যান তার কারণ ১। প্রিন্স আলেকজান্ডার আর মাক্সিমার প্রেম হওয়ার পর যখন তাদের বিয়ের কথা উঠলো, জানা গেলো, উনিশো সত্তর সালে আর্জেন্টিনার সামরিক সরকারের কর্মকর্তা ছিলো মাক্সিমার বাবা। সামরিক জান্তার কর্মকর্তার মেয়েকে রাজবধূ করা প্রায় অসম্ভব। অনেক আলোচনার পর ডাচ পার্লামেন্ট জানালো, ঠিকাছে, প্রেম যখন হয়েই গেছে, বিয়ে তাহলে হোক কিন্তু মাক্সিমার বাবা, মেয়ের বিয়ের মূল অনুষ্ঠানে আসতে পারবে না। কারণ সেটি শুধু রাজার একান্ত ব্যাপার নয়, ডাচ জাতিরও ব্যাপার। তবে, মূল অনুষ্ঠানের পরের রাজকীয় নৈশভোজ ও অন্যান্য ক্লোজ ডোর অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন। এই শর্ত মেনে নিয়েই মাক্সিমা বিয়ে করেছেন। ইগিলি পিগিলি দেশের হেন কোন রাষ্ট্রদূত নেই যারা বিয়ের অনুষ্ঠানে যাননি, সারা পৃথিবী থেকে নানা দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, গায়ক, নায়ক সব উড়ে এসেছে বিয়ের দাওয়াতে কিন্তু মেয়ের বাবা ছিলেন, বাড়ির বাইরে। ২। আজ অব্ধি ডাচ দেশের কোন রাজকীয় অনুষ্ঠানে মাক্সিমার বাবা অংশগ্রহণ করেন নি। মেয়ে জামাইয়ের জন্মদিনে পুরো নেদারল্যান্ডস ছুটি থাকে কিন্তু জামাইয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শ্বশুর নেই। এমনকি নিজের কন্যা যেদিন নেদারল্যান্ডসের রানী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সেই অনুষ্ঠানেও তাঁর বাবা ছিলেন না। ৩। নেদারল্যান্ডসের রাজবধূ হওয়ার জন্যে মাক্সিমাকে বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে লাগাতার যেতে হয়েছে। এক একটি পরীক্ষায় তিনি কৃতকার্য হতেন আর রেডিও টিভি সেটি ফলাও করে প্রচার করতো, তিনি রাজবধূ হওয়ার জন্যে আর এক ধাপ আগালেন। প্রিন্স আলেকজান্ডারকে আর্জেন্টিনার জামাই হওয়ার জন্যে কোন পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো কিনা জানা নেই। কিন্তু মাক্সিমাকে, পোশাক, খাওয়া, ভাষা সব কিছুতেই নতুন করে অভ্যস্ত হতে হয়েছে। ৪। বিয়ের আগে তাকে মেডিক্যাল চেকাপের মধ্যে দিয়েও যেতে হয়েছে। রাজবাড়ির মেডিক্যাল টিম তাকে পরীক্ষা করে দেখেছে, সন্তান ধারনে তিনি সক্ষম কিনা, সেটি পজিটিভ হবার পরই রাজবাড়িতে তাঁর বিয়ের কথা পাকা হয়। রেডিও টিভিতে সেই নিউজও প্রচার হয়েছিলো। ৫। বিয়ের প্রায় সাথে সাথে তাকে গর্ভধারণ করতে হয় এবং আমাদের ক্রাউন প্রিন্সেস এমেলিয়ার জন্ম হয়। ঠাকুরবাড়ির ভবতারিনী থেকে মৃনালীনি হয়ে ওঠার গল্পের সাথে এই গল্পটার কিংবা বাস্তবতার পার্থক্য কোথায়? পুড়বে মেয়ে উড়বে ছাই, তবেই মেয়ের গুণ গাই।

Sunday 24 July 2022

"বিয়ের প্রলোভন”

আপাদেরকে বলছি, “প্রেম” যেমন মানব জীবনের একটি শ্বাশত ব্যাপার, “ব্রেকাপ”ও তাই। প্রেম হয়, প্রেম ভাঙে। মানুষের মন বদলায়, পরিস্থিতি বদলায়, পেশা বদলায় কত কি। “পাশে থাকার শুধু একটি কারণ থাকে ভালবাসা আর ছেড়ে যাওয়ার হাজার কারণ থাকে কিন্তু কারণ আসলে একটাই অ-ভালবাসা। এই ব্যাপারটি শুধু বাঙালি সমাজে ঘটে না। পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই যেখানে নর-নারী এই প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যায় না। প্রেম আসলে যেমন উত্তাল জোয়ারে ভাসে, ব্রেকাপে তেমন ডিপ্রেশানে ভোগে, নিদ্রাহীন রাত, অশ্রু জলে ভাসা, অদম্য রাগ আর ঘৃণা। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র বা আদালত প্রেমে প্রতারণার দায়ে একজন মানুষকে একজন মানুষের সাথে থাকতে বাধ্য করতে পারেনি, শাস্তিও দিতে পারেনি। লিভ টুগেদার কিংবা বিয়েও ভেঙে যায়, কাউকে কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে থাকার পারমিশান আদালত দেয় না। আদালত শুধু অর্থনৈতিক দিকটার সুরাহা করে দেয়। বাচ্চা থাকলে সাধারণতঃ দায় এড়ানো পুরুষদের, বাচ্চার দায়িত্ব নিতে আদালত নির্দেশ দেয়, কেউ যেনো কারো ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় ব্যস এটুকুই। “বিয়ের প্রলোভন” দেখিয়ে কথাটা চরম আপত্তিকর। “প্রলোভন” দেখানো যদি অপরাধ হয় তাহলে “প্রলোভিত” হওয়াও অপরাধ নয় কেন। আর চরম ডিসরেসপেক্টফুল শব্দতো বটেই। একজন কেউ আপনার থেকে বেশি বুদ্ধিমান, আপনার বেক্কলামির সুযোগ নিয়ে আপনাকে ধোঁকা দিছে, এটা জনে জনে বলে বেড়ানো কতটা মানের? প্রেম থাকলে ব্রেকাপ থাকবেই, এটা মাথায় রেখেই সম্পর্কে জড়ান। শুধু ফেসবুকে সেলিব্রেটি হলেই তো আধুনিক হওয়া যায় না, চিন্তা-চৈতন্যতেও যুক্তি আনেন, সামনের দিকে তাকান, পেছনে না।

কাপিল শার্মা শো

“কাপিল শর্মা কমেডি শো” এই মুহূর্তে আমার প্রিয় একটা অনুষ্ঠান। সময় পেলেই দেখি। অনেক সময় ব্যাক গ্রাউন্ডে লাগিয়ে কাজ করি। একটা মানুষের উইথ স্ক্রিপ্ট কিংবা উইদাউট স্ক্রিপ্ট এত উইটিনেস আর প্রত্যুৎপন্নমতিতা “কাপিল”কে না দেখলে বিশ্বাসই করা যেতো না। “আপ কি আদালত” অনুষ্ঠানে রাজাত শার্মা যখন প্রশ্ন করছে, কাপিল কাঠগড়ায় তখনও ঠিক সেরকম মুডেই কথা বলছে। অডিয়েন্সের সাথে কানেক্ট করার কৌশল তার অস্থি মজ্জায়। এসব হাসি কৌতুকের একটা বিশাল ভাগ থাকে বডি শেমিং। অডিয়েন্স থেকে প্রশ্নোত্তর পর্বের একটা বড় অংশ থাকে প্রশ্নকর্তাকে বডি শেমিং দিয়ে নাস্তানাবুদ করা। এই শরীর নিয়ে এই কাজ কিভাবে করেন। বাড়ি যেয়ে ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করেন। এত মোটা আপনি তারপরও আপনার পার্টনার আপনার সাথে থাকে সেটার শুকরিয়ে করেন ইত্যাদি ইত্যাদি। ন্যাশনাল টিভি থেকে বিশ্বজুড়ে এই জিনিস সম্প্রচার হচ্ছে, ভাবা যায়!!!! কিকু সারদা বলছে, ভারতী সিং বিছানায় বসেছে তাতে গদীর তুলো বেরিয়ে গেছে। ভিদ্যা বালানকে দেখে একজন পাকা চুলের ভদ্রলোক কবিতা পড়াতে, কাপিল অনেকক্ষণ তাকে বুড়ো বলে পঁচালো। বয়স বাড়ার অপরাধে অন্যদের সাথে ঐ ভদ্রলোকের নিজে্কেও ঐ পঁচানোতে হাসতে হলো। ঠিক কতটা বয়স হলে একজন নর একজন নারীকে দেখে কিংবা একজন নারী একজন নরকে দেখে মুগ্ধ হতে পারবে না? কবিতা পড়তে বা লিখতে কিংবা গান গাইতে পারবে না? অজয় দেবঘন, সালমান খান, শাহরুখ খান, ইমরান হাশমী, ভিদ্যা বালান সবাই এসব জোকে হেসে গড়িয়ে পড়ে। সিদ্ধু সিং আর অর্চনা ম্যাডামের কথাতো বাদই দিলাম। আর আমরা সেন্সেবিলিটি, কমন সেন্স, কনসাশনেস, রেসপেক্ট এগুলো আশাকরি ম্যাঙ্গো পিপল থেকে!!!!!! পারস্পারিক শ্রদ্ধা, অন্যের ব্যাপারে নাক না গলানো, মানুষের আকার আকৃতি, গায়ের রঙ এগুলো মজার উপকরণ নয় বেসিক এই সভ্যতাগুলো এই উপমহাদেশের মানুষগুলো কবে শিখবে।

বিলাই - শেয়াল কথন

নন ম্যাট্রিক সকল ননদ আর জা’দের সংসারে এক বউ এম এ পাশ। একান্নবর্তী সংসারের যত রকম মনোমালিন্য আছে তাতে তার বাড়তি পাওনা হলো, “বিএ-এমএ পাশতো”। সংসারের যত রকম কুৎসিত রুপ আছে তার মধ্যে দিয়ে চান কিংবা না চান আপনাকে অনেক সময় যেতেই হয়। অসহ্য হয়ে যদি “উফ” উচ্চারণ করেন, আপনার বাড়তি পাওনা হলো, “দু’খানা বই নিকেচেতো”। "মেয়ে মানুষ" বাজার আনা থেকে শুরু করে রান্না করা, পরিবেশন করা, কাপড় কাঁচা থেকে বিল দেয়া সবই করবেন। সবার সুখ-দুঃখ,ভাল-মন্দ বিবেচনা করে পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে সাংসারিক ব্যাপারে নিজের মতামত দিতে যাবেন, তখন শুনবেন, “দুই পয়সার একটা চাকরি করে তো”। আপনার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলো কিংবা না হলো, সেটা ব্যাপার না, দিনের শেষে, সকল শেয়ালের মাঝে কোন বিলাই থাকতে পারবে না, বিলাই হওয়াই দোষের।

Thursday 7 July 2022

কিসমাত আপনা আপনা

পকেটে টাকা নাই? গড়ের মাঠ? ফি মাসেই ম্যালা এদিক ওদিকের খরচা থাকে? ঐদিকে আবার বউ বাইরে খেতে যেতে বায়না করে? ঘুরতে যেতে চায়? জাস্ট বলবেন, ভাল মেয়েরা এত ঘুরতে বেড়াতে যায় না। বাইরের খাবার খায় না। এরকম মেয়েদের মানুষ মন্দ বলে। ভাল বংশের মেয়েরা, নিজেরা রেঁধে বেড়ে স্বামী- সন্তানকে খাওয়ায়। ব্যস, জোঁকের মাথায় নুন পরে যাবে। বউ নিজেকে ভাল মেয়ে প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে যাবে। কড়কড়া গরমে যতই তার ঠান্ডা ব্যানানা স্প্লিট কিংবা ডামে ব্ল্যাঙ্কের ওপরের আঠালো চকলেট সসের জন্যে জিহবা তড়ে যাক, সে নিজের চোখে দেবে ধূলো আর জিভে দেবে তুলো। বুক ফেটে গেলেও মুখ খুলবে না। ঘর সাজানোর জন্য মুরানো শোপিস, কিংবা শৌখিন বারবেরি কানের দুল, ক্রিস্টালের গ্লাস এসবের বায়না করে? ভদ্র বাড়ির বউরা কি মার্কেটে মার্কেটে ঘোরে? বাউন্ডুলে মেয়েরা এসব নাটক সিনেমা দেখে বেড়ায়, মার্কেটে ঘোরে, বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দেয়। সংসারি মেয়েরা না। আজন্মের শখ ছিলো একটা মিষ্টি, আদুরে, সংসারি মেয়ে আমার বউ হবে। বাড়িতে টুকটুক ঘুরবে, কারণে অকারণে চা-নাস্তা বানিয়ে আনবে। দেখবেন, বউ নিজেকে সংসারি প্রমাণ করার জন্যে, স্বামীর পরীক্ষার খাতায় মেধা তালিকায় থাকার জন্যে, মার্কেট, বান্ধবী, নাটক, গল্পের বই পড়া সব বাদ দিয়ে দেবে। শুধু জানবে না, সীতারা পরীক্ষা দিয়েই যায় আজীবন কিন্তু পাশ আর হয় না, কিছু না কিছু খুঁত থেকেই যায়। গৃহকর্মে সাহায্য করার জন্যে পাখি আপা ছিলো আমাদের বাসায় অনেক অনেক বছর। একদিন পাখি আপা বড় হলে সবাই ঠিক করে পাখি আপাকে বিয়ে দেয়া দরকার। পাখি আপার পুরো পরিবার আমাদের কারো না কারো বাড়িতে সাহায্য করে, এদের পুরো পরিবারের দাবী আছে আমাদের পুরো পরিবারের প্রতি। বেশ আয়োজন করেই পাখি আপার বিয়ে দিয়ে দেয়া হলো। পাখি আপার বরকে জাহাজে চাকুরি দিয়ে দেয়া হলো। এটা বেশ সুবিধাজনক সমাধান ছিলো। পাখি আপার বর জাহাজে চলে গেলে পাখি আপা বাসার কাজ করে, জাহাজ থেকে মাসে-দেড় মাসে বর পাঁচ-সাত দিনের জন্যে এসে ঘুরে যায়। তখন পাখি আপা বরের সাথে একটু সিনেমা টিনেমা দেখতে যায়। নতুন বিয়ের আনন্দে পাখি আপা তার বর চলে গেলেই বরের গল্প করতে চায়। বাসার সবাই এটা নিয়ে বেশ বিরক্ত, কেউ তার বরের গল্প শুনতে আগ্রহী নয়। একদিন আম্মি আমার সামনে বললো, স্বামীর নাম নিয়ে কথা বলতে হয় না তাহলে স্বামীর হায়াত কমে যায়। পাখি আপা নিদারুণ দুঃখের মুখ করে ফেললো, এই কয় মাসে কয়েক লক্ষ বার স্বামীর নাম তিনি মুখে উচ্চারণ করে ফেলেছে। বারবার জিজ্ঞেস করে, কে কইছে খালাম্মা, কে কইছে? আম্মি বললো, হুজুরের কাছে শুনেছে। আর আমার খটকা লাগলো, এই যে কাজিনদের বিয়ে হয়েছে, তারাও স্বামীর নাম হাজার বার মুখে আনে, আম্মি তাদেরকে সর্তক না করে, পাখি আপাকে কেন করতে গেলো!!! আমি আম্মির ঘরে যেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কোন হুজুর কোনদিন এটা বললো? আম্মি বিরক্তির গলায় বললো, কে জানে, কিসের! সারাদিন দেখোস না, পটর পটর জামাইর গল্প, বিরক্ত লাগে, এখন মুখটা একটু বন্ধ থাকবে। তারপর আবার আমাকে শাসানি দিলো, তুই কাউকে এটা নিয়ে কিছু বলতে যাবি না, চুপ থাকবি। আম্মির পছন্দের তালিকায় আসার নিদারুণ চেষ্টা থেকে আমি চুপই ছিলাম। শুধু জীবনের এই প্রান্তে এসে অনুভব করেছি, ধর্ম আর প্রথা তৈরিই হয়েছে শাসন আর শোষণ করার জন্যে। কাউকে "চুপ রাখার" জন্যে এর চেয়ে ভাল হাতিয়ার আর হয়ই না। যেখানে পাখি আপাকে পাকড়াও করা যায় সেখানে পাখি আপা আর যেখানে স্বাতী আপাকে পাকড়াও করা যাবে সেখানে স্বাতী আপা। কিসমাত আপনা আপনা।

Friday 1 July 2022

সোনার হরিণ

সাধারণতঃ বছরে দু’বার গ্রামে বেড়াতে যেতাম। সকালে গিয়ে বিকেলে আসা হলো নানুর বাড়ি। আর দাদুর বাড়ি মানে দু/তিন দিন থাকা। দাদুর বাড়ি বেড়ানোর মধ্যে একটা পার্ট থাকতো, দাদুর হাত ধরে আশে পাশের দাদুদের সাথে দেখা করতে যাওয়া। তখন সব গ্রাম জুড়ে এত পাকা বাড়ি ছিলো না। বেশির ভাগই টিনের বড় বড় ঘর। ঘরের সামনের অংশে থাকতো মেহমানদের বসার জায়গা। ঘরের ওয়াল জুড়ে নানারকম সূচিকর্ম। অনেক বাড়িতেই সোনালি জড়ির সূতা দিয়ে দুটো হরিণ আঁকা থাকতো, সাথে লেখা, “সোনার হরিণ, কোন বনেতে থাকো”? গ্রাম্য জিনিস ভেবে হয়ত অনেকে তাচ্ছিল্য করি। সূচি কর্মের নিপুনতার বাইরে এই বাক্যটির আর কোন উদ্দেশ্য বা গভীরতা আছে কিনা খোঁজার চেষ্টাও হয়ত করিনি বা করি না। আজকাল খুব মনে হয়, সেই লাজুক, নিরুপায় মেয়েগুলো হয়ত তাদের গোপন বেদনা, অশ্রু এই সুঁই -সূতার মাধ্যমে নিবেদন করে গেছে। কে কবে কার সোনার হরিণের খোঁজ পেয়েছে? তখনতো ব্লগ, ফেসবুক ছিলো না, যার যার মাধ্যমে সে তার নিজের বেদনা আকুলতা রেখে গেছে। হয়ত, এই দু’লাইনের মাঝেই লেখা আছে, খুব চেয়ে না পাওয়া সেই পাথর বসানো ঝুমকার দুঃখ, ঈদে বা পূজায় বাপের বাড়ি নাইওর যেতে না পারার কষ্ট কিংবা অকাল প্রয়াত সন্তানের প্রতি মমতা। ঘুরেফিরে তো একই উপসংহার, যা পাই তা চাই না, আর যা আজীবন চেয়ে বেড়াই তা কোথাও নেই। যারা পেয়েছি বলে ভড়ং দেখায়, তারা হয় নিজের কাছেই মিথ্যেবাদী নয় প্রবঞ্চক।

প্রিয়তমেষু

https://arts.bdnews24.com/archives/37553?fbclid=IwAR0UNZKrir-Xupit6sxRarBeLaRh7c1J9YaiFBoLZuwXyJM49X58BxDcPr8 প্রিয়তমেষু, তোমাকে চুমু খেতে বলিনি। ভুল করলে ক্ষমা চাইতেও বলি না। খুব মন খারাপ করলেও, ডাকবো না, বলবো না, এসো, জড়িয়ে ধরো আমায়, মিথ্যে করেও বলতে বলিনি, বলো, আমায় কত ভাল দেখাচ্ছে। আমায় একটা সুন্দর চিঠি লিখবে? বলিনি কখনো। ফোন করে আমায় বলো, সারাদিন কি করলে, কেমন কাটলো সব, না, তাও বলি না। সারাদিনে কি একবারও আমার কথা ভেবেছিলে, তাও জিজ্ঞেস করিনি এই যে দিনভর তোমার জন্য আমি এত কিছু করি তার জন্যে ধন্যবাদও চাইনি। মন খারাপ করেছে, পাশে থাকো আমার এ আব্দারও করিনি। যখন কোন কঠিন সিদ্ধান্ত নেই তুমি সমর্থন দেবে, সে প্রত্যাশাও রাখি না। জেগে থাকা রাতে, অর্থহীন হাজার গল্প করতে ইচ্ছে করে তোমাকে সেসব শুনতে হবে, সে দিব্যি দেইনি। কিছুই চাইনি আমি তোমার কাছে প্রিয় এমনকি সারাজীবন আমার পাশে থাকো এটিও না। চেয়ে নেয়ার মধ্যে কি আর আনন্দ থাকে সোনা। স্বামী ডিয়েগো’র সাথে ফ্রিদা কাহলো’র আলাপচারিতা অবলম্বনে

Thursday 26 May 2022

দূরের দোলাচল

https://samakal.com/kaler-kheya/article/2205113391/%E0%A6%AA%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC-%E0%A6%AA%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%AE-%E0%A6%A6%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AC-%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87 প্রায় দু’যুগের ওপরে হতে চললো প্রিয় বাংলাদেশ থেকে প্রায় দশ হাজার কিলোমিটার দূরে সংসার পেতেছে নিশি। কিংবা হুমায়ূন আজাদের ভাষায় বলতে গেলে “এই তাৎপর্যহীন জীবন”কে খানিকটা অর্থবহ করতে কিংবা “চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ার আগে আরো কিছু দূর যেতে" নিদারুণ ব্যস্ততায় কাটছে তার মূর্হুত, ঘন্টা, দিন। একসময় উত্তর সমুদ্রের পারের এই ভিনদেশি আবহাওয়ায় নিজেকে খাপ খাওয়াতে কি কষ্টটাই না হয়েছে। আজও কি পুরোপুরি পেরেছে? এখনও আনমনে দ্রুত হাঁটতে গিয়ে কি পা পিছলে বরফের ওপরে পড়ে না? নিজের সম্পূর্নটা ঢেলে যতখানি সম্ভব শুদ্ধ ওলন্দাজ উচ্চারণে ও ব্যাকরণে যখন কথা বলে, প্রায়শই টেবলের ওপারের উনি হেসে বলেন, ভাষাটা তুমি খুব সুন্দর শিখেছো। মূহুর্তেই জেনে যায় সে তাদের কেউ নয়, সে অন্য দেশের অন্য কেউ যে নিজেকে তাদের দেশের আচার আচরণে অভ্যস্ত করতে ব্যস্ত। অথচ এই অব্ধি পৌঁছতে তাকে কত পথ হেঁটে আসতে হয়েছে। কলেজ-ইউনিতে সালোয়ার কামিজ, চটিতে অভ্যস্ত জীবন এখন জীন্স, সোয়েটার আর বুটসে মোড়া। অফিসের লাঞ্চ ব্রেকে গরম স্যুপের সাথে লুমপিয়া কিংবা ক্রোকেট খেতে খেতে ভাবে আহা সেই আমার টিএসসির তেহারি কিংবা ডাসের কলিজা সিঙ্গারা। তারপরও কর্মময় জীবন একসময় এসব ভাবালুতা পেছনে ফেলে স্যুপ, স্যান্ডউইচে অভ্যস্ত হয়ে যায়। আজ জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয় | আয় মরণ ভুলে গিয়ে ছুটে ছুটে আয় হাসি নিয়ে আয় আর বাঁশি নিয়ে আয় আজ যুগের নতুন দিগন্তে সব ছুটে ছুটে আয় || আজ ফাগুন ফুলের আনন্দে সব ছুটে ছুটে আয় | প্রয়াত ভূপেন হাজারিকার গাওয়া এই গানটা নিশির খুব বেশি প্রিয়। আগে ভাল লাগতো শুধু কথা আর সুরের জন্য আর এখন ভাল লাগে নিজের যাপিত জীবনে অনুভব করার জন্য। এখানে কেউ পোশাক নিয়ে কটাক্ষ করে না, অযাচিত স্পর্শ নেই, নারী বলে কর্মক্ষেত্রে অবমাননা নেই, রাতবিরেতে সাইকেল চালাতে কিংবা জিমে যেতে বা হাঁটাহাঁটি করতেও কোন ভয় নেই। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর টিশার্ট পরে নিশ্চিন্তে বীচে হাঁটে, গলা ছেড়ে গান করে, ফুটবলে নেদারল্যান্ডস জিতলে সবার সাথে রাস্তায় নাচে, রাজার জন্মদিনে ওপেন এয়ার কনসার্টে নাচে কোনটাতেই এ বয়সের আদেখেলপনা নিয়ে চোখ বাঁকা করে জাজ করার কেউ নেই। এখানে জীবন হলো যাপন করার জন্যে, কোন বয়সে কি মানায় তার গন্ডীতে ফেলে নিজেকে শাস্তি দেয়ার জন্য নয়। সেই সাথে মনের গহীনে জমে থাকা পুঞ্জীভূত বেদনাও পোড়ায়, বাংলাদেশের ক্রিকেট জয়ের আনন্দে কখনও চুল খুলে রাস্তায় নামতে পারেনি, লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে নিজ দেশে জীবন খুঁজে নিতে পারেনি, উৎসবে আনন্দে ছুটে ছুটে আসতে পারেনি। খুব সোজা সাপটা কথা বলা, শাদামাটা জীবন যাপনের জন্য ওলন্দাজ সংস্কৃতি বিখ্যাত। প্রধানমন্ত্রীসহ প্রায় সব মন্ত্রীই রোজ সাইকেল চালিয়ে অফিসে আসে। অন্য সবার মতই তাদেরও যানজট এড়িয়ে সময়মত অফিসে আসার তাড়া থাকে। অফিসের সামনের ক্যাফেটারিয়াতে বসে কফি খায়। ফর্মাল কোন অনুষ্ঠান না থাকলে মোটামুটি সবাই সাধারণ জীন্স, কেডসে অফিস করে। মানুষের একাকীত্ব আর ডিভাইস আসক্তি কমানোর জন্য গার্ডেন অফিসের প্রচলন হয়েছে পৃথিবী জুড়ে, নেদারল্যান্ডসও এর ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং কারো কোন ফিক্সড ডেস্ক নেই, যে যখন আসবে, যেই ডেস্ক ফ্রী থাকবে সেখানে বসেই কাজ করতে হবে। এতে পদমর্যাদা নিয়ে লড়াই কিংবা বড়াই করার সুযোগ কম। বাংলাদেশের মত এরকম স্যার, বড় স্যার, ম্যাডামের দেশ থেকে এসে এসবে অভ্যস্ত হতে রীতিমত ধাক্কাই খেয়েছো প্রথম দিনগুলোতে সে। এখনও কি অভ্যস্ত হতে পেরেছে? আজও যখন লাঞ্চ ব্রেকে সিএফও অবলীলায় পাশের চেয়ারে বসে পড়ে তার অস্বস্তি কাজ করে। অহেতুক বাজে খরচা না করার জন্যে বিশ্ব জুড়ে “কিপ্টে” খ্যাতিও ওলন্দাজদের দখলে, এই নিয়ে কে কি বললো তা নিয়ে তাদের থোড়াই পরোয়া আছে? নিশির এখন সমস্যা হলো, দেশে বেড়াতে এলে অনেক কিছুই তার বাজে খরচা মনে হয়। কেউ তার সাথে দেখা করতে এলে তিন কেজি মিষ্টি নিয়ে আসে আবার নিশিকে বেড়াতে গেলেও একই কাজ করতে হয় যেখানে মানুষ হয়ত পাঁচ-থেকে দশ জন। এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে, বোঝাতে গেলে, মিতব্যায়ী হওয়ার ভাল দিকটা ব্যাখা করতে গেলে উলটো শুনতে হয়, অনেক বেশি ইউরোপীয়ান হয়ে গেছো, একদম দেখি ওদের মত। বুকের ব্যথা কাউকে বলা যায় না, কিন্তু ইচ্ছে করে বলতে জীবনের বেশি সময়টা ওখানে কাটলো, কি করে আশা করো আমি তোমাদের মত থাকবো? এধরনের কথবার্তা কি দেশের মানুষই বলে? না, এখানে বাস করা নিজ দেশী ভাইবোনরাও বলে। একবেলা ভাত খাও? সন্ধ্যা ছটায় খেয়ে নাও? পুরাই দেখি ডাচ। এই কথাগুলো যারা বলে তারা হয়ত একবারই বলে। যে শোনে সে হাজারবার শুনে ক্লান্ত। বাঙালির মেয়ে হয়ে সিগারেট খায়, মদ খায়, ডিস্কো যায় কিংবা ছেলে বন্ধু আছে? ভাবা যায়? বিদেশে এসে বাঙালিদের এই অধঃপতন? বাবামা ঠিক করে শিক্ষা দেয় নাই, পয়সার পেছনে ভাগছে আর কি? যে মেয়েটি শুধুমাত্র চামড়ায় বাদামী, কারণ তার বাবামা বাংলাদেশী বাকি তার জন্ম, পড়ালেখা, সমাজ, বন্ধু, খেলাধূলা সব নেদারল্যান্ডসেই। তার জীবন কেটেছে অন্যান্য বিদেশীদের সাথে, তিন কিংবা পাঁচ বছরে একবার কয়েক সপ্তাহের জন্যে ছুটি কাটানো ছাড়া বাংলাদেশের কোন অস্তিত্ব তার জীবনে নেই কিন্তু তাকেও অহরহ এসব নিন্দার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় শুধুমাত্র বাংলাদেশি কারো ঘরে জন্মেছে বলে। পূর্ব পশ্চিমের এই ব্যবধান দিন দিন বড় হয়ে দেখা দেয়। পূর্বে যেটাকে স্বাভাবিক লাগতো বহুদিন পশ্চিমে থাকার পর সেগুলোকে অযৌক্তিক লাগতে থাকে। এখানে সাধারণত খাওয়া মানে, ভাত নয় রুটি, মাছ বা মাংস, সব্জি কিংবা সালাদ। দেশে প্রায় প্রতিবেলায় পঞ্চ ব্যাঞ্জন রান্না করতে যে পরিমান শক্তি ব্যয় হয় তা যদি কোন উৎপাদনশীল কাজে ব্যয় হতো তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা আরো জোরেও হয়ত ঘুরতে পারতো। তাছাড়া পশ্চিমে বেশীরভাগ মানুষই নিজের কাজ নিজে করতে অভ্যস্ত, ছোটবেলা থেকেই সবাইকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা হয়। পূর্বে স্বনির্ভতার সংজ্ঞাটাই ভিন্ন আর তাই হয়ত প্রত্যেক বাড়িতেই সাহায্যকারী কর্মীর দরকার হয়। সব কিছু এই সব কিছুর পরেও হেমন্তে যখন এখানে পাতা ঝড়া শুরু হয়, পাতায় পাতায় রঙের খেলা, বিদায় নেয়ার পালা, চারধার শান্ত হয়ে আসতে থাকে, শীতের আমেজ মনে করিয়ে দেয় আরও একটি বছর কালের গর্ভে হারাতে যাচ্ছে তখন হারিয়ে ফেলা সেই ছোটবেলার কাঁচা খেজুরের রসের গন্ধ, ঠান্ডা খেজুরের রস খেতে খেতে সোয়েটার পরা গায়েও কেঁপে কেঁপে ওঠা, স্কুলের ফাইন্যাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার সুবাদে গ্রামে বেড়াতে যাওয়া, সেই বেড়ানোকে উপলক্ষ্য করে গ্রামে সদ্য বন্ধুত্ব হওয়া নাম না জানা তুতো ভাইবোনদের সাথে ফসল ভরা জমিতে বেড়াতে যাওয়া। জমি থেকে টেনে তোলা শিশির ধোয়া ধনেপাতা দিয়ে তাজা কূল আর তেঁতুল মাখা ভর্তার গন্ধ, চারদিকে হলুদ সর্ষের চাদর বিছানো, কাঁচা সর্ষে শাকের গন্ধ, মাটি তোলা নতুন আলু আর মটরশুটি। জমি থেকে তুলে আনা টমেটো – ধনেপাতা দিয়ে ছোট মাছের চর্চরি। ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা আর পাখি শিকারীদের ভীড়। কিংবা তেল ভরা বালিহাঁস আর ভুনা খিচুড়ির জন্যে মনটা কেমন কেমন করে উঠে না? সবই কি হারিয়ে যায়? উচ্চ প্রযুক্তির কেন্দ্রস্থল বলে খ্যাত এই শহরে থেকেও, নিশি চোখ বন্ধ করলেই পরিস্কার দেখতে পায়, শ্যাওলা পড়া পুকুর ঘাট, গাছে গাছে জড়াজড়ি করে থাকা গ্রাম্য জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া এবড়ো থেবড়ো পায়ে চলা মেঠো পথ, এ বাড়ি ও বাড়ির আঙ্গিনা ডিঙিয়ে কোন মাঠে গিয়ে মিশেছে। সেই মাঠ আবার মিশেছে আকাশের সাথে। প্রত্যেক বাড়ির সামনে বিরাট বিরাট উঠোন, সীমের মাচা, লাউয়ের মাচা, পাশেই গরুর ঘর। কি শান্ত অলস যেনো পটে আঁকা ছবি। প্রায় শুকিয়ে আসা খালের পাড়ে বাঁধা নৌকা, মসজিদের পেছন দিকে জঙ্গল, এসব কিছুর জন্যে আজও অন্তরে গভীর হাহাকার অনুভব করে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা চটপটি খাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষের অনুভূতি দেয়, বেলী কিংবা কাঁঠালিচাঁপার গন্ধ দেহ মনে সেই সময়ে যে শিরশিরানি আনতো আজো তেমনই আকুল করে। চওড়া পাড় দেয়া ভাজ ভাঙ্গা বাসন্তী রঙের নতুন তাতের শাড়ি, হাতে রঙ বেরঙের লাল হলুদ সবুজ রেশমী চুড়ি, কপাল জুড়ে বড় চাঁদের মতো কালচে লাল টিপ আর ঘাড় গলা খোঁপা জুড়ে জড়িয়ে থাকবে অজগরসম কাঁঠালিচাঁপার মালা, ফাল্গুনের এই সাজে নিজেকে সাজিয়ে বন্ধুদের সাথে বাংলা একাডেমীর প্রাংগনে বইমেলায় কলরবমুখর পদচারণা। সেই জ্বলে ওঠা নিভে যাওয়া জোনাকী পোকা, আমসত্ত্ব, চালতার আঁচার, সারা গায়ে সুর মেখে হুড খুলে বৃষ্টিতে ভেজা এর কোনটা সে ভুলতে পেরেছে? সবইতো মনে হয় এই সেদিনের কথা যখন সে ওখানকার একজন ছিলো। এখন কথা হতে পারে শ্যাওলা পড়া পুকুর নদী কি নেদারল্যান্ডসে নেই? এখানে কি ঘুঘু ডাকে না? রঙিন প্রজাপতি ওড়ে না? হ্যাঁ কথা সত্যি, এসকল সব এখানেও আছে, হয়তো খানিকটা অন্য ফর্মে অন্য ঢঙে। প্রবাসীরা যেমন সব কিছু ইউরো থেকে টাকায় কনভার্ট করে দেখতে ভালবাসে। তেমনি প্রকৃতির মধ্যেও নিজ দেশের তুলনা খুঁজতে ভালবাসে, স্মৃতিতে হারিয়ে নস্টালজিকতায় ভোগা প্রবাস জীবনের সতত ধর্ম বলা চলে। দেশে গেলে প্রায় প্রত্যেকেরই জিজ্ঞাসা, কবে এসেছিস, ক’দিন থাকবি? বক্তব্য খুব পরিস্কার, তুই আর আমাদের কেউ নোস, ক্ষণিকের অতিথি। তাকে ঘিরে চারপাশ জুড়ে এত আনন্দ কোলাহল থাকা সত্বেও নিশির শুধু মনে হতে থাকে, ছবি হয়ে রয়ে গেছি সবার স্মৃতিতে, বাস্তবে আর আমার কোন অস্তিত্ব নেই। সত্যিই কি নেই? তাহলে অনুষ্ঠানে আপনজনরা যখন ডাকে, তুই না এলে হবে না, তাড়াতাড়ি আয়। কোন সমস্যায় পড়লে বলে, তুই না বোঝালে কারো কথা শুনবে না সেগুলো কি তবে ভুল? তার অন্তর জানে, এগুলোও ভুল না। প্রতিবার বাড়ি ছেড়ে আসার কষ্টটা যেমন সত্যি তেমনি চলে আসার পর দিন দিন আবার এখানে অভ্যস্ত আরামে ফিরে আসাটাও ঠিক ততটাই সত্যি। তারচেয়ে বড় সত্যি হলো, তিন চার সপ্তাহ পরিবারের সবার সাথে থাকলে, বন্ধুদের সাথে র‍্যান্ডম আড্ডা দিলে, দেশের এই অসহ্য যানজট, খাবারে প্রাণনাশী ভেজাল, চারপাশেরর অকারণ উচ্চ শব্দদূষণ সব কেমন যেনো স্বাভাবিক লাগতে থাকে, সহ্যও হয়ে যায়। তসলিমা নাসরিনের মত বলতে পারে না, "আমার জন্য অপেক্ষা করো মধুপুর নেত্রকোনা অপেক্ষা করো জয়দেবপুরের চৌরাস্তা আমি ফিরব। ফিরব ভিড়ে হট্টগোল, খরায় বন্যায় অপেক্ষা করো চৌচালা ঘর, উঠোন, লেবুতলা, গোল্লাছুটের মাঠ আমি ফিরব। পূর্ণিমায় গান গাইতে, দোলনায় দুলতে, ছিপ ফেলতে বাঁশবনের পুকুরে-“ জীবনের এই প্রান্তে পৌঁছে আজ জানে নিশি নিষ্ঠুর এসময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। ছেড়ে আসা যত সহজ ফিরে যাওয়া ততই কঠিন। যে জায়গা একবার ছেড়ে আসা হয় সে জায়গায় আর ফেরা হয় না। বারবার ফিরে গেলেও ফেরা হয় না। মানুষ বদলে যায়, মন বদলে যায়, চিন্তা-ভাবনা পরিবেশ, অভ্যস্ততা, অভ্যাস সব বদলে যায়। এত ধীরে ধীরে এই পরিবর্তন হয় যে সহসা মন তা অনুভবই করে উঠতে পারে না। প্রবাসের পথে যারা পা বাড়ায় তাদের হয়ত দেশ বলতে আর কিছুই থাকে না। তারা প্রবাসেও খানিকটা বেমানান আবার দেশেও অনাকাঙ্ক্ষিত উৎপাত। লোপামুদ্রা মিত্রর এই গানটা নিশির তাই বড্ড প্রিয় ঠিক যেখানে দিনের শুরু, অন্ধ কালো রাত্রী শেষ মন যতদূর চায়ছে যেতে, ঠিক ততদূর আমার দেশ এই কাটাতার জঙ্গীবিমান, এই পতাকা রাষ্ট্র নয় দেশ মানে বুক আকাশ জোড়া, ইচ্ছে হাজার সূর্যদোয় এই মানচিত্র জ্বলছে জ্বলুক, এই দাবানল পোড়াক চোখ আমার কাছে দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্য লোক তানবীরা হোসেন ২২/০৫/২০২২

Friday 13 May 2022

হৃদস্পন্দন বন্ধ হলেই বুঝি মৃত্যু হয়?

বুক ধুকপুক বন্ধ হলেই বুঝি মৃত্যু হয়? দু'চোখের কাছের জন দূরে চলে যায়, মোম নরম আব্দারের গলাটা কর্কশ হয়ে যায়, গালের তিলের মত যাওয়া-আসার পরিচিত পথটা বদলে যায়, মিহি বোন চায়না বিশ্বাস ভেঙে যায়, পত্রিকা উল্টানোর রোজকার অভ্যাস বদলে যায়, কারণে অকারণে টম এন্ড জেরীর খুনসুটি হতো সেখানে আমাজনের দূরত্ব এসে যায়, মিষ্টি তেঁতুল শখের যেসব তুচ্ছ জিনিস না পেলে জীবন বৃথা মনে হতো তা অর্থহীন হয়ে পরে। বার্বি প্রিয় মানুষকে ছুঁতে না পারা, অমরেশপুরী স্মৃতি তাড়া করবে বলে প্রিয় গান,কবিতা, সিনেমা এড়িয়ে যাওয়া, ডিম্পল-রাজেশ দুজনের নির্জনের স্বপ্ন হারিয়ে যাওয়া, সঘন আবেগের ডায়রীর পাতা ছিঁড়ে ফেলা, তুলতুলে প্রিয় ছবির ফ্রেম হারিয়ে যাওয়া আরো কত বলতে না পারা সমুদ্র নীল বেদনা, এও কি মৃত্যুই নয়? ০৫/১৩/২০২২

Monday 7 March 2022

"মাইকেল কলিন্স"

রাশা আর ইউক্রেন যুদ্ধের চাপে বইপড়া কমে যাওয়াতে টিভি দেখা বেড়েছে। সিনেমা, সিরিজের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে বাছাবাছি করার টেন্ডেসিও বেড়েছে আমার। পড়ছি যেহেতু কম তাই বেশি ফ্যাক্টস এর ভিত্তি করে বানানো জিনিস দেখার চেষ্টা করি। একসময় প্রবাদ ছিলো, ব্রিটিশদের রাজত্বে সূর্য অস্ত যায় না। আধুনিকায়তনের চোটে অবশ্য সেসব এখন ফুটে গেছে। আয়ারল্যান্ড হলো ব্রিটিশ কলোনীর সবচেয়ে ভুক্তভোগী রাষ্ট্রের একটি। প্রায় সাতশো তেপান্ন বছর ব্রিটিশদের কব্জায় ছিলো। আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর নীল জর্দানের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় বানানো সিনেমা "মাইকেল কলিন্স" দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, বৃটিশ শাসনের সাফল্যের মূলমন্ত্র ছিলো প্রত্যেক দেশে একটি করে লর্ড ক্লাইভ নিয়োগ দেয়া। লর্ড ক্লাইভদের সাফল্য ছিলো সে দেশের মীর জাফরদের খুঁজে বের করা এবং সিরাজউদ্দোলাদের পরাজিত করে দেশের দখল নেয়া। মাইকেল কলিন্স ছিলো আয়ারল্যান্ডে নিযুক্ত ব্রিটিশদের লর্ড ক্লাইভ আর আইরিশ কর্নেল এডওয়ার্ড ব্রয় ছিলো মীর জাফর, আইরিশ প্রেসিডন্ট এমন ডি ভালেরা হলো সিরাজউদ্দোলা এবং দিনের পর দিন সেখানে যুদ্ধ চলতে থাকে। মাত্র একত্রিশ বছর বয়সে মাইকেল কলিন্স মারা যায়। বৃটিশ ও আইরিশ মিলিয়ে প্রায় হাফ মিলিয়ন মানুষ তার শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলো। আর্শ্চযের ব্যাপার হলো, মারা যাওয়ার আগে আয়ারল্যান্ডের রাজনীতি থেকে সে বন্দুক/যুদ্ধের অপসরনের চেষ্টা করেছিলো। ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে “গোল্ডেন লায়ন” জয়ী আর উনসত্তর একাডেমি এওয়ার্ডসে “বেস্ট অরিজিনাল স্কোর” আর “বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফী”র জন্যে নমিনেশান পাওয়া এই সিনেমাটা যাদের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ আছে দেখতে পারেন। টাইটানিকের পরে সর্বোচ্চ আয় করা মুভি আয়ারল্যান্ডের।

আমি যাই নির্বাসনে

আমার সুন্দরী কবি বন্ধু লোচন বন্ধুমহলে অত্যন্ত জনপ্রিয় নাম। যারা নিয়মিত লোচনের লেখা পড়েন তারা জানেন, লোচনের গদ্যের হাতও অসাধারণ যদিও লোচন নিজেকে কবি পরিচয় দিতেই ভালবাসে। ব্যাংকার হিসেবে ষোল বছরের কর্মজীবন, রাকিবের স্ত্রী, দীপিতার মা, জীবনের প্রতিটি কণাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা সদা হাসিখুশী আমুদে লোচন অভিমানে অতি সম্প্রতি দেশের মায়া ত্যাগ করে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছে। খুব কম সাহিত্যিকই আছে যার মনের ছায়া তার লেখাতে পড়ে না। কবির প্রেমের উচ্ছাসে যেমন লেখা হয় প্রেমের কবিতা, প্রেম ভেঙে গেলে তেমনি উঠে আসে ব্রেকাপ সঙ। প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে সাত সমুদ্দুর তের নদী পাড়ি দেয়া, করোনা, মহামারি, দুর্নীতি ইত্যাদির প্রভাব কবির কবিতায় পড়বে না, সেকি হয়! গল্প অনেক হলো, আসুন কয়েকটি কবিতার অল্প কিছু পংক্তি পড়ে নেয়া যাক। শুরু করি, “আমি যাই নির্বাসনে” কবিতাটি দিয়ে চোখের সামনে মানুষের উবে যাওয়া দেখেছি ব্যথায় কুঁকড়ে যাওয়া শিশুর আহাজারি অন্যায়, অনাচার ধর্ষণ, সব স্বাভাবিক জীবন যাপনের আবহে প্রতিদিন সয়েছি। কোনকিছু দিয়েই যখন পারছি না ঠেকাতে আপন প্রাণ স্বস্ত্বিতে বাঁচাতে, মস্তিকের উলটে যাওয়া রুখতে, নিজের মনের কোণে উচ্চারণ প্রকাশ্য গোপনে আমি যাই “নির্বাসনে”। খুব সহজ ভাষায় কঠিন কিন্তু সত্যিটা লেখা হয়েছে। বাংলাদেশের আজকের পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্যে এরচেয়ে বেশি লেখার প্রয়োজন আছে কি? তিনশো পয়ষট্টি দিনে খবরের কাগজের সব কলাম যেসব খবরে পূর্ণ থাকে তার সারমর্ম এই কয়েকটি লাইনেই আছে। কিছু কবিতা আছে মারাত্বক বিপদজনক বাস্তবতা নিয়ে, “জননীর সর্পখেলা” তার মধ্যে একটি জননী তার পোষা সাপ নিয়ে খেলা দেখাচ্ছিলেন মগজ খুলে রাখা এক জনপদে, পারিষদেরা বিনের আওয়াজে দুলছিলেন অর্হনিশ, কে সাপের কতভাবে প্রশংসা করতে পারে কবিতার বাকিটুকু আপনারা বইতে কিংবা কবির টাইমলাইনে পড়ে নেবেন। এবার একটু মিষ্টি প্রেম কিংবা অভিমানের কবিতা পড়ি, “উপেক্ষার এপিটাফ” এসো মৌনতায় বৃক্ষ হই প্রতি শব্দের শেষে দাঁড়িয়ে রই, ক্লেদ-ক্লান্তি সমারূঢ় সমাপতন স্পর্শের ভাষায় করি গ্রহণ। কতকাল এই ত্বকে কেউ আঙুল রাখেনি, কতকাল এই হাত কোনো অভিমান মাখেনি। এই হিমশীতল, বিষণ্ণ, নীরব প্রবাস নিয়ে আমাদের প্রত্যেকের আর্তনাদের খানিকটা আঁকা আছে কবির খাতায়, “বিষণ্ণতার ক্ষরণ” এ শহর এক চলমান মর্গ চারদিকে তুষারের আগ্রাসন এত ভারী পোশাকের নিচে নিজেকেও ছোঁয়া যায় না কোষে কোষে নীরবে ছড়ায় বিষণ্ণতার গভীর গোপন ক্ষরণ। আমরা যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তাদের জন্যে করোনা এক নিদারুণ যুদ্ধ। এত বড় মহামারী কাব্যে স্থান পাবে না, সেকি হয়! “করোনা করুক প্রাণসংহার” এমন এক সময় আমাদের দেখতে হচ্ছে যেখানে মানুষের প্রাণের চাইতে বানর মূল্যবান যেখানে মানুষের প্রাণের চাইতে বড় কে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান। এই তবে ভালো সুপারপাওয়ারের দেয়া উপহার, করোনা বিভেদ ভুলে করুক সবার প্রাণ সংহার। বোনাস একটি কবিতা রইলো সবার জন্যে, “রাষ্ট্রীয় সার্কাস” প্রতি লাশের নামে ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস আমার মরণে চাই না এমন রাষ্ট্রীয় সার্কাস!
শব্দের পর শব্দ গাঁথলেই কবিতা হয় না। ছন্দে-আনন্দে মিললেই না তবে কবিতার সার্থকতা। সাহিত্যের কাজই হলো সমসাময়িক বাস্তবতাকে তুলে ধরা, ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই দেয়া। কবিতাগুলো আজকের পরিস্থিতির আকাট্য দলিল। একাডেমিক প্রেস এন্ড পাবলিশার্স লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত হওয়া “আমি যাই নির্বাসনে” লোচনের এগারোতম কবিতার বই। বারো’তম বইটি এই ফাল্গুনেই আসছে। ভালবাসা অফুরান লোচন এবং সাফল্য এমনি পায়ে পায়ে ঘুরুক।

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন সেই মোতালেব

https://www.prothomalo.com/life/durporobash/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9C-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%AC?fbclid=IwAR2h97ls-CSDV_djALetA-ZdGO5z95Fai2RbFCdhb1tSgotVwwxjMLce__8 যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে শুধু খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন মোতালেব। সাত বছরের শিশু রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিল; সেখান থেকে একটি এতিমখানায় আশ্রয় হয় তার। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের ওয়াইটার্স দম্পতি একটি শিশু দত্তক নেওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলেন। তাঁরা দত্তক নেন মোতালেবকে। সেই মোতালেব ওয়াইটার্সকে প্রিয়জনেরা এখন ‘মো’ বলেই ডাকেন। অতীতের দিকে তাকিয়ে মোতালেব বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস আমার জন্য স্বর্গ ছিল।’ দ্রুতই তিনি ডাচ্‌ জীবনের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। নেদারল্যান্ডসকেই নিজের দেশ ভাবতে থাকেন, স্কুলে যেতেন, সমবয়সীদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন, অন্য সবার মতো কাজ করতেন। পড়াশোনার পর ২০ বছর বয়সে তিনি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার শিকড়ের সন্ধান করা প্রয়োজন মনে করি এবং ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসি। বাংলাদেশে এসে আমি আমার রক্তের বন্ধনকে খুঁজে পেয়েছি—চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান “ইত্যাদি” ও হানিফ সংকেত এ ব্যাপারে আমাকে দারুণ সমর্থন জোগান।’ পরিবারকে খুঁজে পাওয়া, তাদের অসহায়ত্ব আর দারিদ্র্য দেখে মো বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্তে নেন। একসময়ের পথশিশুটিই এখন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি অনেক মেয়ের জীবন বদলে দিয়েছেন। বাংলাদেশের নারীদের উন্নতির জন্য তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর এর জন্য আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছেন মোতালেব। মোতালেব বলেন, ‘১৯৯৫ সালে আমরা বাংলাদেশের পটুয়াখালীতে প্রচুর টিউবওয়েল ও শৌচাগার স্থাপন করেছি এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত শিক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বরগুনা ও দশমিনাতেও আমরা এসব প্রকল্প সম্প্রসারণ করেছি। এর মধ্যে ২০০০ সালে বাউফলে একটি এতিমখানা স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে এখন ৪০টির মতো শিশু আছে। ২০০১ সালে বাউফলে একটি মা-শিশু ক্লিনিক এবং ২০১৩ সালে একটি জরায়ু ক্যানসার পরীক্ষার ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি মৃত স্ত্রীর স্মরণে ইনখ্রিড মেমোরিয়াল হসপিটাল নামে একটি হাসপাতাল তৈরি করেছি, সেখানে মেয়েদের প্রসবের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার আছে। সেখানে ছোট–বড় সব ধরনের অপারেশন করা হয়। দরকার হলে শহর থেকে সার্জন নিয়ে আসা হয়। আমরা ইতিমধ্যে কয়েক হাজার নারীকে জরায়ুর ক্যানসার থেকে বাঁচিয়েছি। কেননা, মা ছাড়া বাচ্চাদের তো কোনো সুন্দর ভবিষ্যৎ হতে পারে না।’ মোতালেব আরও বলেন, ‘২০০৪ সালে শাকসবজি, মাছ ও মুরগির খামার শুরু করেছি। অল্প জায়গায় কোন পদ্ধতিতে কাজ করলে বেশি সুফল পাওয়া যায়, সাধারণত সেই কৌশলগুলো আমরা গ্রামবাসীকে শেখাই। ধরুন, একটি পুকুরের চারপাশে নানা ধরনের ফলের গাছ কিংবা সবজির গাছ লাগাতে পারেন, পুকুরে মাছের চাষ করতে পারেন আর পুকুরের ওপরেই মাচা বানিয়ে ঘর তুলে সেখানে মুরগি পালন করতে পারেন। মুরগির বর্জ্যই হবে মাছের খাবার। তিন হাজার পরিবার আমাদের এ প্রকল্পে এখন কাজ করছে। এ ছাড়া বাউফল, দশমিনা, বাকেরগঞ্জ, বরগুনাতে ছয় হাজার পরিবারকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে।’ নারীদের অবস্থান ও কল্যাণে মোতালেবের প্রচেষ্টার জন্য গত ২২ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের উডেনের রোটারি ক্লাব মোতালেবকে সম্মানিত করে। এ সময় রোটারি ক্লাব উডেনের গভর্নর লেনি খুইয়ার ইয়ানসেন, মেয়র হেলেগারস এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। মোতালেব বলেন, ‘অবশ্যই স্বীকৃতিটি অসাধারণ। সংস্থাটি আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বব্যাপী সমস্ত রোটারি ক্লাবের কাছে একটি প্রকল্প জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে আর সেই হাজার হাজার প্রার্থীর মধ্য থেকে নির্বাচিত ছয়জনের মধ্যে আমি একজন।’ এ জন্য মোতালেব চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে আনুষ্ঠানিক পুরস্কারও পাবেন। মোতালেবের স্ত্রী ইনখ্রিড ওয়াইটার্স ২০১৩ সালে স্তন ক্যানসারে মারা যান। তিনটি বাচ্চাকে লালনপালন করছেন তিনি। দুই মেয়ের বয়স যথাক্রমে ২০ ও ১৮, আর ছোট ছেলেটি ১৩ বছর বয়সের। নেদারল্যান্ডসের উডেন শহরে বসবাসরত মোতালেব পরিষ্কার বাংলায় কথা বলেন। বাচ্চাদের নিয়ে তিনি প্রায়ই দেশে আসেন। ঝাল কম দিয়ে প্রায়ই দেশি খাবার রান্না করেন। চীন থেকে নেদারল্যান্ডসে মোজাইক পণ্য আমদানির ব্যবসাসহ তিনটি ম্যাসাজ সেলুনের মালিক মোতালেব।

Monday 10 January 2022

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – আঠারোই ডিসেম্বর টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – আঠারোই ডিসেম্বর টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান প্রিমিয়ে রুতেঃ গত সংবাদ সম্মেলনের মাত্র চারদিন পরেই, শনিবার রাতে আবার সংবাদ সম্মেলন করার অর্থই হলো, আজকে খারাপ খবর আছে। এক লাইনে বলতে গেলে, কাল থেকে নেদারল্যান্ডস আরো একবারের জন্য পুরোপুরি বন্ধ হবে। আমরা করোনার পাঁচ নম্বর ঢেউয়ের মধ্যে আছি যার মধ্যে ওমিক্রণের নতুন ধরনটিও উল্লেখযোগ্য। দেখা যাচ্ছে অন্যান্য ধরনের চেয়ে ওমিক্রণ অনেক বেশি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এই জটিল সংবাদটি নিয়ে আজকে আলোচনা হবে বলে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপরি ইয়ান ভান ডিজেলকে সাথে নিয়ে আসা হয়েছে। ইয়ান ভান ডিজেলঃ হাসপাতাল, জেনারেল ফিজিশিয়ান, কেয়ার হোমে যথেষ্ঠ ভীড় থাকা সত্বেও আমরা ভেবেছিলাম ডেল্টার ঢেউ আমরা সামলে উঠেছি, কিন্তু সেটার সংক্রমণের হার না কমতেই ওমিক্রণ ছড়িয়ে পড়ছে সব জায়গায়। আমর্স্টাডাম, লন্ডনের সংক্রমণের হার দেখে আমরা ধারনা করছি, ক্রিসমাস আর নিউ ইয়ারে ওমিক্রণ অনেক বেশি ছড়াবে যেহেতু এটির সংক্রমণের ক্ষমতা অনেক বেশি। ওমিক্রণ লীডিং থাকবে আর ডেল্টা হয়ত বিদায় নেবে। ওমিক্রণ দ্রুত ছড়ায় ছাড়া এটি নিয়ে আর অনেক বেশি কিছু এখনও জানা যায়নি। তবে ভয়ের কথা হলো, যখন ভ্যাক্সিন বানানো হয়েছিলো, তখন করোনার যেই রুপটি উপস্থিত ছিলো, ওমিক্রণের চরিত্র তার থেকে অনেক আলাদা। তাই ভ্যাক্সিন এটাকে পুরোপুরি প্রতিরোধ করতে হয়ত পারবে না। তারপরও বুস্টার নেয়া দরকার যাতে প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার থাকে, ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। আমরা যদি লন্ডনের সংক্রমণের হার ধরে আমাদের মডিউল হিসেব করি তাহলে দেখা যায়, এতো বেশি সংক্রমণ বাড়বে যে প্রথম ঢেউয়ের মত পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা করোনা রোগী সামলাতেই ব্যস্ত থাকবে। হয়ত, এত খারাপ অবস্থা নাও হতে পারে কিন্তু অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা সময় থাকতে সাবধান হতে পারি। প্রিমিয়ে রুতেঃ নতুন লক ডাউন উনিশ তারিখ সকাল পাঁচটা থেকে শুরু হবে চৌদ্দই জানুয়ারী পর্যন্ত চলবে। বাসায় দুজনের বেশি মেহমান নয়। বাইরে হাঁটতেও দুজনের বেশী নয়। তবে ক্রিসমাসের দুদিন আর থার্টি ফাস্টে চারজন মেহমান আসতে পারে আর বাইরেও চারজন এক সাথে আড্ডা দিতে পারে। সমস্ত দোকানপাট বন্ধ থাকবে তবে ক্লিক এন্ড কালেক্ট চলতে পারে। সুপারমার্কেট আর ওষুধের দোকান সন্ধ্যা আটটা পর্যন্ত খোলা থাকতে পারে। গাড়ির ট্যাকিং, লাইব্রেরি ইত্যাদি খোলা থাকবে। প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সব বন্ধ থাকবে সাথে ডে-কেয়ার সেন্টার। তবে দশই জানুয়ারী থেকে অনলাইন ক্লাশ চলবে। যাদুঘর, কনসার্ট, সিনেমা, চিড়িয়াখানা, এমিউজমেন্ট পার্ক সব বন্ধ থাকবে। রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে বন্ধ থাকবে তবে টেকওয়ে চলতে পারে। বিয়ে আর শেষ কৃত্যানুষ্ঠান নিয়মের মধ্যে চলতে পারে। চুল, নখ, বিউটি সেলুন সব বন্ধ থাকবে। সবরকম খেলাধূলা আর প্রতিযোগিতা বন্ধ থাকবে। তবে মাঠে খেলাধূলা চলতে পারে, দুজনের মধ্যে, দেড় মিটার দূরত্ব মেনে। যারা যারা ছুটিতে যাবে, যে দেশে যাবে সেখানকার নিয়ম মেনে চলতে হবে। সাবসিডি যেমন চলছিলো চলতে থাকবে। হুগো দ্যা ইয়ংঃ সংক্রমণ ঠেকানোর সর্বোচ্চ ব্যবস্থা হিসেবে আমরা প্রতি সপ্তাহে দেড় মিলিয়ন মানুষকে বুস্টার দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। জানুয়ারীর মাঝামাঝির মধ্যে সবাইকে বুস্টার দিয়ে সুরক্ষা করাই আমাদের আপাতত লক্ষ্য। এরমধ্যে আমরা বেশী সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার মত করে নিজেদের প্রস্তূত করছি। তিন মাস আগে যাদের করোনা ভ্যাক্সিনের শেষ ডোজ নেয়া হয়েছে তাদেরকে অবশ্যই অতি দ্রুত বুস্টার নেয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে, নইলে ওমিক্রন প্রতিরোধের জন্যে যথেষ্ঠ প্রস্তূত নয় বলেই দেয়া যাচ্ছে। সাংবাদিকঃ আপনারা কি বুস্টার শুরু করতে দেরী করে ফেলেছেন? ইয়ান ভান ডিজেলঃ দু’বছর ধরে কাজ করলে আপনি কিছুতেই বলতে পারেন না, আপনি কখনো ভুল করেন নি। তবে যেভাবে ভ্যাক্সিন নেয়া মানুষও এসে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে তাতে আমরা ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ও বুস্টার নিয়ে কিছুটা পর্যবেক্ষণের মধ্যে ছিলাম। বুস্টার দেয়ার জন্যে এখন আমরা এত মানুষ এপয়ন্ট করেছি, এভাবে পরিকল্পনা করেছি, আপনি দেখছেন এখন বুস্টার কার্যক্রম সময়ের আগে চলছে। সাংবাদিকঃ আজকের সার্ভে থেকে দেখা গেছে মাত্র ত্রিশ পার্সেন্ট মানুষ আপনার এই লকডাউন সমর্থণ করছে। হয়ত দেখা গেলো, ক্রিসমাসে তবুও মানুষ পরিবারের সাথে পার্টি করছে, তখন আপনি কি করবেন? প্রিমিয়ে রুতেঃ আজকের প্রেস কনফারেন্সে ইয়ান ভান ডিজেল পরিস্কার বলে দিয়েছে, কি কি ঝুঁকি আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। আমি বিশ্বাস করি ও জানি যে ছয়/সাত মিলিয়ন মানুষ এখন এই প্রেস কনফারেন্স দেখছে, তারা এটি উপলব্ধি করবে এবং আপনি পরের সপ্তাহে এই সার্ভেটি আবার করলে, আমি নিশ্চিত অন্যরকম ফলাফল আসবে। সাংবাদিকঃ ভ্রমণের ব্যাপারটা যদি আরেকটু পরিস্কার করতেন, হুগো দ্যা ইয়ংঃ স্যাঙ্গেইনের সাতাশটি দেশের মধ্যে আমরা ভ্রমনের ব্যাপারটা একটি ফর্মে নিয়ে আসতে চাই। এতদিন শুধু ডিসিসি থাকলেই চলতো কিন্তু এখন থেকে টেস্ট ও বাধ্যতামূলক করতে চাই। ইউরোপের বাইরে থেকে এলে/গেলে সবাইকে টেস্ট কিংবা ডাবল টেস্ট করা সহ, যে দেশে যাবে তার নিয়মগুলোও মানতে হবে। এতদিন যাদের ভ্যাক্সিনের সার্টিফিকেট ছিলো তাদের কেয়ারন্টিন করতে হতো না। কিন্তু এখন থেকে ইউরোপের বাইরে থেকে এলেই কেয়ারন্টিন বাধ্যতামূলক করার করা ভাবা হচ্ছে। এমনকি যুক্তরাজ্য থেকে এলেও। সাংবাদিকঃ এত অল্প সময়ে সবাইকে বুস্টার দেয়ার মত যথেষ্ঠ ভ্যাক্সিনের মজুদ আছে কি? হুগো দ্যা ইয়ংঃ ভ্যাক্সিন যথেষ্ঠ আছে, মর্ডানা, ফাইজার দরকারে ইয়ানসেন কিন্তু দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা ভ্যাক্সিন পুশ করার মত মানুষ নেই। লোকবল যোগাড় করতে পারলে আরও দ্রুত সবাইকে বুস্টারের আওতায় আনা হবে। সাংবাদিকঃ দুই ডোজ ভ্যাক্সিন যেই ভাইরাস আটকাতে পারেনি তাকে একটি বুস্টার দিয়ে আটকে দেবেন, এমন ভাবনার কারণ কি? ইয়ান ভান ডিজেলঃ খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যদিও আমি এর উত্তর জানি না। শুধু ভাবছি, বুস্টার ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করবে যা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
তানবীরা হোসেন ১১/০১/২০২২

Saturday 1 January 2022

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – চৌদ্দই ডিসেম্বর টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান

প্রিমিয়ে রুতেঃ আজকের সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য আমরা আমাদের এই নিয়মগুলো চৌদ্দই জানুয়ারী পর্যন্ত বহাল রাখবো। সামনেই ক্রীসমাস, আমি জানি এটা কারো জন্যেই আনন্দের কোন সংবাদ নয়, কিন্তু আশাকরছি, আপনারা বুঝবেন দুটো কারণে এটা এড়ানোর কোন উপায় নেই। প্রথমত, করোনা রোগী দিয়ে হাসপাতাল ভর্তি, অন্য সব চিকিৎসা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ওমিক্রন ঠেকাতে হবে। ক্রিসমাসের সময় সর্বোচ্চ চারজন মেহমান আসতে পারে। কোথায় বেড়াতে যাওয়ার আগে কিংবা বাসায় মেহমান আসার আগে নিজে করোনা পরীক্ষা করে নেবেন। কোন উপসর্গ না থাকলেও করে নেবেন। বাড়ির ভেতরেও দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। জানাল খুলে রাখার চেষ্টা করুন। আর মেহমান চলে গেলে দরজা আর জানালা অন্তত পনের মিনিট একসাথে খুলে রেখে ঘরকে সতেজ করুন। আর একবার মনে করিয়ে দিচ্ছিঃ সুপারমার্কেট আর ওষুধের দোকান ছাড়া, সন্ধ্যা পাঁচটা থেকে সকাল পাঁচটা পর্যন্ত সব বন্ধ থাকবে। তেলের পাম্প খোলা থাকবে আর রেস্টুরেন্টে টেক ওয়ে খোলা থাকবে। খেলাধূলা প্রতিযোগিতায় কোন দর্শক থাকবে না। রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল, কনসার্ট, থিয়েটার, যাদুঘর, চিড়িয়াখানা সবা জায়গাতেই তের বছরের ওপরের সবাইকে করোনা সার্টিফিকেট এর সাথে আইডি কার্ডও দেখাতে হবে। যেখানে বসার জায়গা নির্দিষ্ট নেই সেখানে প্রতি পাঁচ বর্গমিটারে একজন দর্শনার্থী। পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট, স্কুল, শপিং মল, চুল কাটার দোকান, ম্যাসাজ পার্লার কিংবা রেস্টুরেন্টে মাস্ক বাধ্যতামূলক। সর্বোচ্চ পচাত্তর জন ইউনিভার্সিটির একটি ক্লাশে আর থিয়েটার কিংবা কনসার্টে বারোশো পঞ্চাশ জন। যে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ সকল কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাদের সাবসিডি কন্টিনিউ হবে। এরকম পরিস্থিতিতে এটি আমাদের দ্বিতীয় ক্রিসমাস। দুঃখ, ক্ষতি, বেদনা আমরা কমাতে পারবো না কিন্তু দুই হাজার বাইশের প্রথম কোয়ার্টার পর্যন্ত সাবসিডি অব্যহত রেখে ক্ষতি খানিকটা পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো। আর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য আমরা তৃতীয় কোয়ার্টার পর্যন্ত সাবসিডি দিয়ে যাবো তবে সেখানে নিজস্ব বীমা’র ভূমিকাও মূল্যায়ন করা হবে। সত্তরোর্ধ নানা নানীর সাথে বাচ্চাদের মেলামেশা কমাতে হবে তার সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন। যেসব বাচ্চারা টিকা নেয়নি, তাদের দিয়ে করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে। তারা নিজেরা ততো অসুস্থ হয় না কিন্তু অন্যদের মারাত্বক অসুস্থ করে দেয়। ওমিক্রনের ঝুঁকি এড়াতে আমরা বিশে ডিসেম্বর থেকে সমস্ত প্রাইমারি স্কুল আর ডে কেয়ার সেন্টার বন্ধ করে দিচ্ছি। অনলাইন ক্লাশেরও দরকার নেই। বাবামায়েদের বিশেষ অনুরোধ এসময় বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে কোন প্ল্যানিং না করে বাড়ির মধ্যেই সময় কাটাতে। আমি জানি খুবই কষ্টকর আর তাই আবারো বলছি, সবাইকে সশ্রদ্ধ ধন্যবাদ এ কঠিন সময়টিতে পরিপূর্ণ সাহায্য করার জন্যে। গত সপ্তাহের এক জরিপে উঠে এসেছে, এই সংকটের শুরুতে মানুষের যতটা আস্থা ছিলো এখন তা নেই, যৌক্তিক বটে, কারণ সবাই যথেষ্ঠ ভুগেছে এই নিয়ে। কিন্তু আমি এটিকে আমাদের প্রতি এক ধরনের ম্যাসেজ হিসেবে দেখছি যে আমাদেরকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, আরও ভাল করার চেষ্টা করতে হবে। সেই একই জরিপে আবার উঠে এসেছে, মানুষ নিয়মনীতি মেনে চলতে প্রস্তূত, সেটি কিন্তু আবার আমাদের প্রতি এক রকমের বিশ্বাসও বটে। হুগো দ্যা ইয়ংঃ গত সপ্তাহে প্রতিদিন একুশ হাজার সংক্রমণ ছিলো এই সপ্তাহে সেটি সতের হাজার। প্রায় প্রতিদিন দুইশো আশি জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। উনিশে নভেম্বর প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে হল্যান্ডে, অন্যান্য দেশের পরিসংখ্যান দেখে আমরা ধারনা করছি হল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ মানুষ এখন ওমিক্রন দ্বারা সংক্রামিত। ইংল্যান্ডে প্রতি দুদিনে সংক্রমণ দ্বিগুন হচ্ছে। আমরা জানি না কিভাবে কি করতে হবে তবে বুঝতে পারছি আর একটি নতুন ঢেউ আসছে। যা করা সম্ভব করার চেষ্টা করছি। বুস্টার ডোজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবাই পাবে। ভ্যাক্সিন এখনও সংক্রমণ প্রতিরোধের সবচেয়ে শক্ত হাতিয়ার। আঠারোর্ধ্ব সবাই যারা তিন মাস আগে ভ্যাক্সিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে কিংবা করোনাক্রান্ত হয়েছে জানুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে তারা বুস্টার পেয়ে যাবে। সাংবাদিকঃ সারাক্ষণ বললেন, শিক্ষায় হাত দেবেন না আর এখন বলছেন প্রাইমারি স্কুল বন্ধ, ব্যাপারটা কি? প্রিমিয়ে রুতেঃ এবার স্কুল ছুটি পড়েছে পঁচিশে ডিসেম্বর থেকে, শেষ স্কুল চব্বিশে ডিসেম্বর, বাচ্চাদের কোন ছুটিই সেভাবে নেই। সাথে আছে ওমিক্রন সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়ার উচ্চ ঝুঁকি তাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির পরামর্শনুযায়ী এক সপ্তাহ আগেই স্কুল ছুটি দেয়া হলো। সাংবাদিকঃ কিন্তু আপনাদের কাছে তো ওমিক্রনের কোন পরিসংখ্যান নেই আর সংক্রমণের হার তো কমেও আসছে প্রিমিয়ে রুতেঃ আমাদেরটা তৈরী হচ্ছে কিন্তু আশেপাশের অবস্থা থেকে আমাদের ধারনা নিতে হবে। ইংল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মান, অস্ট্রিয়া এদের আপডেট প্রতিনিয়ত পাচ্ছি সাংবাদিকঃ ওখানে যা হচ্ছে এখানে তাই হবে, এমনতো কোন কথা নেই তাছাড়া, বাচ্চাদের স্কুল নেই, বাইরে যেতে মানা, সারাদিন ওরা বাসায় করবে কি? প্রিমিয়ে রুতেঃ আমি জানি এটি খুবই কষ্টকর একটি পরিস্থিতি কিন্তু যেহেতু আর কোন উপায় নেই, বাবামাকেই সন্তানকে সময় দিয়ে তাকে ব্যস্ত রাখার, আনন্দে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সাংবাদিকঃ ওমিক্রন সংক্রমণের ঢেউটি কখন আশা করছেন? হুগো দ্যা ইয়ংঃ সেটা আমরা এখনও জানি না। তবে এটুকু জানি, তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার একজন সুস্থ মানুষের শরীরে পচাত্তর শতাংশ রোগ প্রতিরোধ তৈরী করতে সক্ষম আর তাই আমরা এত দ্রুত সবাইকে বুস্টার দিচ্ছি। সাংবাদিকঃ মাত্র পনেরো শতাংশ মানুষ করোনা নিয়ে আপনার কার্যক্রমের ওপর আস্থা রাখছে? এটা কি করে সম্ভব হলো? প্রিমিয়ে রুতেঃ আমার কার্যক্রমে অনেক ঘাটতি ছিলো, মানুষকে যথেষ্ঠ আস্থা আমি দিতে পারিনি। আমি এখন আমার কাজের ধারা বদলে ফেলেছি। জানুয়ারী থেকে আমি চেষ্টা করবো অন্য পদ্ধতিতে কাজ করার। এখন থেকে আর অল্প সময়ের পরিকল্পনা নয়, করোনা প্রতিরোধ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা হবে লম্বা সময়ের জন্যে। কিন্তু মানুষ আমার দেয়া প্রাথমিক নিয়মগুলো মানছে, তারা অন্তত এটি বুঝতে পারছে, আমরা সত্যি সত্যি ঝামেলায় আছি। আমাকে পছন্দ করা বা না করা জরুরী না, নিয়ম মানা জরুরী। সাংবাদিকঃ মানুষ আপনার ওপর আস্থা রাখছে না কিন্তু আপনার দেয়া নিয়মাবলীর ওপর আস্থা রাখছে, ব্যাপারটা একটু কেমন কেমন না? মাত্রই নতুন মন্ত্রীসভা তৈরি হলো, তার মধ্যে কি এর প্রভাব পরবে না? (প্রেস কনফারেন্সঃ চৌদ্দই ডিসেম্বর, পয়ত্রিশ মিনিট থেকে সাইত্রিশ মিনিট) সাংবাদিকঃ আপনি বলছেন, ইউরোপের মধ্যে নেদারল্যান্ডসই সর্বোচ্চ কঠোর প্রতিরোধ ব্যবস্থা, লকডাউন ইত্যাদি দিয়েছে তারপরও নেদারল্যান্ডসের করোনা এত খারাপ কি করে হলো? আইসিইউ’র স্বল্পতা? হুগো দ্যা ইয়ংঃ অনেকেরই এটি একটি ভুল ধারনা। আইসিইউ বেশি থাকলেই যেনো করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকতো। ব্যাপারটা সেরকম কিছু নয়। আইসিইউ মেইনটেইন করতে শিক্ষিত কর্মী লাগে সাথে অন্যান্য রোগের চিকিৎসাও তো চলতে হবে। অন্য রোগের রোগীদেরতো সবসময় অপেক্ষা করিয়ে রাখা যায় না, সেগুলোওতো সমান জরুরী। সাংবাদিকঃ বারবার আপনারা যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টানছেন, এর মানে কি আপনারা ওদের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন? প্রিমিয়ে রুতেঃ ব্যাপারটা সেরকম না, আমাদের বিশেষজ্ঞরা পৃথিবীশুদ্ধ সব বিশেষজ্ঞদের সাথে দিনরাত যোগাযোগ রাখছে ও তথ্য আদান প্রদান করছে। আমাদের মডুলিস্টরা, এপিলিওজিস্টরা পৃথিবীর সেরা হিসেবে স্বীকৃত। সাংবাদিকঃ আপনারা যে এত দ্রুত বুস্টার দিচ্ছেন সবাইকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করেছেন? হুগো দ্যা ইয়ংঃ না, আলোচনা করিনি। প্রথমে আমরা শুধু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে পরিকল্পনা করেছিলাম এখন যেহেতু ওমিক্রণ এসে গেছে তাই আমাদের পরিকল্পনা বদলাতে হয়েছে এবং অসম্ভব দ্রুত গতিতে সবাইকে বুস্টার দিতে হচ্ছে। সাংবাদিকঃ আপনারাতো সেপ্টেমর থেকেই সব তথ্য জানতেন তাহলে পরিকল্পনা করতে এত দেরী হলো কেন? হুগো দ্যা ইয়ংঃ প্রথমে আমরা আইসিইউতে ভীড় কমিয়ে, সংক্রমণের হার কমিয়ে তারপর দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় হাত দিতে চাইছি। ফেব্রুয়ারীর শেষ থেকে আমরা পরের বছরের জন্যে পরিকল্পনা শুরু করবো। করোনা কোথাও যাবে না, আমাদেরকে করোনার সাথে বসবাসের পথ তৈরী করতে হবে। মার্চের শেষ থেকে আমরা পরের প্যান্ডামিক মোকাবেলা করার জন্যেও সব ধরনের পরিকল্পনা ও প্রস্তূতি গ্রহণ করছি। সাংবাদিকঃ ভাইরাস নিয়ে প্রায় দেড় বছরের ওপর হতে চললো। ক্যাবিনেট আর আপনার থেকেতো আমরা আরও একটু সময়মত সিদ্ধান্ত আশা করতে পারি? প্রিমিয়ে রুতেঃ মানুষ ভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার দায়িত্ব যেকোন পরিস্থিতিতে সবসময় সিদ্ধান্ত নেয়া। সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন কিছু না কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। সাধারণ ব্যাপারে ক্যাবিনেট দশটা সিদ্ধান্ত নেয়, যদি দেখা যায়, আটটা সম্পূর্ণ সঠিক, একটা ভুল আর একটা আরো সংশোধন করতে হবে তাহলে সে খুবই যোগ্য প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এটাতো সাধারণ পরিস্থিতি না, এখন আমরা আছি প্যান্ডামিক, এপিডেমির পরিস্থিতিতে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমত, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাকে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, যেখানে অসংখ্য ভুল ভ্রান্তি থাকছে, যেটা আমি বারবার অকপটে স্বীকার করছি। আমরা বিশ্ব জুড়ে মানব স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে কাজ করছি। সাংবাদিকঃ বিরোধী দলতো আগেই লকডাউনের কথা বলেছিলো। আগেই যদি লকডাউন দিতেন তাহলে প্রাইমারি স্কুল বন্ধ করা এড়ানো যেতো না? প্রিমিয়ে রুতেঃ জাস্ট কোন বিপদ অনুমান করে লকডাউন করা যায়? লকডাউন আসবে হিসেবের ওপর ভিত্তি করে। আগে থেকে লকডাউন দিলে তার প্রভাব কি অর্থনীতি, সামাজিক জীবন, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পড়তো না? সাংবাদিকঃ চৌদ্দই জানুয়ারী কি সত্যিই স্কুল সব খুলবে? প্রিমিয়ে রুতেঃ সেটা আমি এখনই বলতে পারি না। ওমিক্রনের গতি প্রকৃতি দেখে বিশেষজ্ঞরা যা সিদ্ধান্ত দেবেন, সেই পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। তানবীরা হোসেন ০১/০১/২০২২