Tuesday 31 January 2012

তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা

তোমার দীর্ঘ অনুপস্থিতি আমাকে

তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা শিখিয়েছে

তোমার নির্দয় চলে যাওয়া আমাকে

চোখে জল নিয়ে মুখে হাসি দিয়েছে

হাত বাড়িয়ে তোমাকে ছুঁতে না পারার

বেদনা শীতল নিজেকে গোটানো দেখিয়েছে।

জানিয়েছে এভাবেও বেঁচে থাকা যায়

অসহ্য যন্ত্রনায় তোমার বুকে কাঁদতে না পেরে

শিখেছি কান্না কি করে গিলে ফেলতে হয়

জীবনের প্রতিটি আঘাত আমাকে আরো দৃঢ় করেছে

আজ আমি জানি জীবন কাটবে জীবনের নিয়মে

ভালবাসা হারিয়ে যাবে ভালবাসার নিয়মে

তারপরো অপ্রত্যাশিত কোন আশা মনে নিয়ে

রোজ সকালে আমি চোখ মেলি।

প্রতিদিন আমি পথ চলি।

তানবীরা

৩১/০১/২০১২

Monday 30 January 2012

আমার যত সিনেমা - ১

জ্ঞানীগুনী লোকেরা প্রায়ই সিনেমা নিয়ে লিখেন। তাদের লেখা পড়ে আমারো সাধ জাগে সিনেমা নিয়ে লিখতে। মনে মনে লিখি কিন্তু ভয়ে পোষ্ট দেই না। সিনেমা দেখে আমি টেকনিক্যাল সাইড তেমন কিছু বুঝি না। শুধু বুঝি আমার ভালো লেগেছে কি লাগেনি। কিংবা আমি কি কিছু বুঝলাম নাকি বুঝিনি। অনেকদিন কিছু লিখি না। কিছু সিনেমা দেখলাম। মাথায় সিনেমাগুলো ঘুরছে, কাজের ফাঁকে ফাঁকে মনে হয় আচ্ছা নীরা বাবার বাড়ি চলে গেলেই হয়তো পারতো কিংবা মহিলা কি করে সারাক্ষণ এমন চিৎকার করে যান। এটা ওভাবে হলে কি হতো? কেন সেভাবে হলো না? মনে হয় এ চরিত্রগুলো আমার বড্ডো চেনা। আমি আমার অতি সরলীকরণ ভঙ্গীতেই সিনেমা নিয়ে কিছু লিখছি। প্রথমে,

ইতি মৃণালিনীঃ আমাদের আর আমাদের এক বন্ধুর সিনেমা দেখার রুচি মোটামুটি খুব কাছাকাছি। আমরা প্রায়ই একসাথে খেয়ে দেয়ে সিনেমা দেখি। একদিন সে দেখালো ইতি মৃণালিনী। একজন সাফল্যের তুঙ্গে থাকা নিঃসঙ্গ রমনীর ইতিকথা। সাফল্যের জন্য, স্বপ্ন পূরনের জন্য বা জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্যে শুরু থেকে তার সংগ্রাম। প্রায় আর দশটি সাধারণ আলাভালো মেয়ের মতো সেও ট্যালেন্টের পাশে আরো অনেক কিছু বিলিয়ে দিয়েই সংগ্রামে থিতু হয়েছে। অন্যের প্রতারনার শিকার হয়ে মেনে নিয়েছে। যেটা আমার মনকে সবচেয়ে বেশি টেনেছে সেটা হলো মৃণালিনীর মেয়ের আকস্মিক মৃত্যু। তারপর তার একাকী জীবন। আমার খুব একজন আপনজনের জীবনেও ঠিক একই রকম একটা ঘটনা আছে। একাকী ছিলেন তিনি তার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে। আকস্মিক ছেলেটি একটি দুর্ঘটনায় মারা যায়। তিনি এখনো একা বেঁচে আছেন। সিনেমার লাষ্ট টার্নিং পয়েন্টটা হলো মৃণালিনী যখন আত্মহত্যার চিন্তা বাদ দিয়ে বেঁচে থাকার জন্যে সকাল দেখতে কিংবা পৃথিবী দেখতে বের হলেন তখন দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। হায়রে নিয়তি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ড্রেসম্যানের কাজ। অনেকদিন এমন রুচিশীল শাড়ি গয়নার সামঞ্জস্য দেখিনি বাংলা সিনেমায়। ম্যাচুরিটি দিনে দিনে কঙ্কনাকে অন্যধরনের সৌর্ন্দয এনে দিচ্ছে। অপর্না সেনের আরো একটি মাষ্টারপিস, যদি দেখতে চান ক্লিক করুন এখানে

এক যে আছে কন্যাঃ আজকের এই অস্থির সমাজ ব্যবস্থায় অতি আধুনিকভাবে বেড়ে ওঠা এক টিন এজ মেয়ের গল্প হলো এই সিনেমাটি। গার্ল নেক্সট ডোর যাকে বলে। বাবা মা ডিভোর্সড, মা কিছুটা মানসিকভাবে অপ্রকৃতস্থ, নানা বাড়ির বেপোরোয়া স্বাধীনতায় বখে যাওয়া সে। সারাদিন রাজ্যের ফ্যান্টাসীতে ভোগে কিন্তু চরম জেদী, অপরাধী মানসিকতার মেয়ে। কিছুটা থ্রিলারের স্বাদ পাওয়া যায় এ সিনেমাটিতে। একবার শুরু করলে শেষ না করে ওঠা মুশকিল। কলেজে পড়া এই মেয়ে মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোককে যে তাদের বাড়িতে ভাড়াটে হয়ে এসেছে তার প্রেমে পড়াতে চায় জোর করে। ভদ্রলোকের অন্য একটি মেয়ের সাথে আগে থেকেই সম্পর্ক আছে। এ জানার পর থেকে সে আরো বেপোরোয়া হয়ে ওঠে। ভদ্রলোকের প্রেমিকাকে খুন করার চেষ্টা করতেও সে পিছপা হয় না। এক খুনের পর অন্য খুন। খুন করে অন্যকে ফাঁসিয়ে দেয়া তার কাছে ব্যাপার না, সেদিকে তার মাথা এতোই ঠান্ডা। সব্যসাচী চক্রবর্তী, কঙ্কনা সেনশর্মার অভিনয় অসাধারণ এজ ইউজুয়্যাল। দেবশ্রী গতানুগতিক, স্টিরিও টাইপড। এখানে দেবশ্রীকে না দিয়ে অন্য একটা সাধারণ মেয়েকে দিলেও চলতো। কিছুই করার নেই টাইপ চরিত্র। এই সিনেমার রুপসজ্জাও ছিল বাস্তবধর্মী। প্রতীক চৌধুরীর গলায় একটা অসাধারণ গান আছে যেটা শুনতে পাবেন এখানে

হঠাৎ নীরার জন্যঃ সুনীল গাঙ্গুলীর লেখা ছোট গল্প “রানি ও অবিনাশ” নিয়ে একটি অসাধারণ সিনেমা। নীরা তার পুরনো প্রেমকে অতি কষ্টে চাপা দিয়ে স্বামী ছেলেকে নিয়ে মোটামুটি ভালোভাবেই নিজেকে গুছিয়ে সংসার করে যাচ্ছিল। হঠাৎ আবার পুরনো প্রেম সামনে এসে দাঁড়ালো কিছু অন্যায্য দাবী নিয়ে। নীরা জানে এ দাবি অন্যায্য, এ হয় না। সে নিজেকে অনেকভাবে সামলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আগুনের স্পর্শে এক সময় মোম হয়ে সে গলতে বাধ্য হয়। অবাক ঘটনা এ নিয়ে নীরার সংসারে অশান্তি শুরু হলেও নীরা আর অবিনাশকে যোগাযোগ করতে পারছে না। দাবি পূরন হয়ে যাওয়া মাত্র অবিনাশ তার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে, নীরা রয়ে যায় পিছনে। এক সময় নীরা আবার নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত হয়। সিনেমায় দারুন গান আছে দুটো। একটি গান সুনীলের বিখ্যাত কবিতাকে সুরে বসানো হয়েছে, “এ হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ, আমি কি এ হাতে কোন পাপ করতে পারি”? ড্রেসাপের কাজ এখানেও ভালো ছিল। যারা সিনেমাটি দেখতে চান ক্লিক করুন এখানে

নাগরদোলাঃ রুপা গাঙ্গুলীর অসাধারণ অভিনয়ে একটি সিনেমা। আমাদের দেশের কিছু টিপ্যিকাল চরিত্রকে তিনি উপস্থাপন করেছেন। যাদের নিজেদের শেখার জানার বাইরে আর কোন জগত নেই। আর বাইরের জগতকে শিক্ষা দিতে তিনি এতোই ব্যস্ত যে ঘরে কি হয়ে যাচ্ছে তার কোন হুঁশ নেই। সিনেমার প্রথম অংশটুকু যতোটা ভালো লেগেছিল, শেষেরটুকু ঠিক ততোটা ভালো লাগেনি। শেষেরটুকু এসে গতানুগতিক সিনেমাধারায় মিলে গেছে। তবুও প্রথমটুকু দেখলেও শেষের ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। এ সিনেমার গেটাপ ভালো ছিল। দেখতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে

শেষের কবিতাঃ ঋতুপর্না সেনগুপ্তের অভিনয়ে শেষের কবিতা mon amour. এটিও অসমাপ্ত প্রেমের গল্প। তুচ্ছ কারণে ঝগড়া থেকে বিচ্ছেদে হারিয়ে ফেলে ভালোবাসার দুজন দুজনকে। তারপর সাত বছর পর দেখা। প্রেমিকাকে যেভাবে সুখী কল্পনা করেছিল তা হোচট খায়। প্রেমিককে প্রতারক ভেবেছিল সে ধারনাও ভাঙ্গে। কিন্তু নিঠুর নিয়তি, সব সত্য জেনেও আজকের বাস্তবতাকে বদলাতে পারে না কেউ। ছোট একটি রাজকুমারী মা-বাবার জন্যে প্রতীক্ষা করে বসে আছে। এ ছবির গেটাপ অত্যন্ত বাজে লেগেছে আমার কাছে। ছবির মাননুযায়ী প্রচন্ড সস্তা। পুরো ছবিতে চারটি ড্রেস ছিল নায়িকার। নায়িকাকে যৌন আবেদনময়ী দেখানোর জন্যে স্থুল টেকনিকে বার বার পায়ের কাছে ক্যমেরা ঘুরিয়ে নিচ্ছিলেন যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। জামা কাপড়ের হালতো বলা বাদ। শাড়ির সাথে যেভাবে মা কালী কায়দায় মাথায় সিঁদুর লেপ্টানো হয়েছে তাও অতি আধুনিকা চরিত্রের বৃষ্টিকে, বাসনা মাজা ঝিয়েরাও আজকাল সেভাবে সিঁদুর পড়েন না। নায়িকাকে বন্ধুর বাড়ির ডিভানে শুয়ে পড়ার এই চিন্তাও অবাস্তব লেগেছে আমার কাছে। রবীন্দ্রনাথের গানগুলোকে খুব সুন্দরভাবে ব্যবহার করেছে সিনেমাতে। এতোবার শোনা গানগুলো যেন আবার মনে দোলা দিল। কিন্তু সব মিলিয়ে সিনেমাটা দারুন।

তানবীরা
৩১/০১/২০১২

Monday 16 January 2012

বিষন্নতা দিবস

পশ্চিম বিশ্বে জানুয়ারী মাসের তৃতীয় সোমবারকে বিষন্নতা দিবস হিসেবে চিনহিত করা হয়েছে। স্কাই ট্রাভেল নামে একটি সংস্থা জরিপ চালিয়ে “Blue Monday” নামে অভিহিত করেছে এই সোমবারটিকে। Cardiff University একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে Cliff Arnall নামের অধীনে এই রিপোর্টটি উপস্থাপন করেন। গার্ডিয়ানের কলামিষ্ট Dr. Ben Goldacre বলেন, Cardiff University এর কয়েকজন গবেষক এই রিপোর্টটি বানান এবং প্রকাশ করেন। মূলতঃ গবেষনাটি ছিল Cliff Arnall এর যিনি তখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। জরিপ অনুযায়ী বছরের এদিনটিতে মানুষ সবচেয়ে বেশি বিষন্ন থাকে। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে নীচের এই ফর্মূলাটাকে

আবহাওয়া (weather) W, ঋন (debt) D, বড়দিনের ছুটি হিসেব থেকে সময় (time) T, নতুন বছরের সূচনা হলো Q, কাজ করার ইচ্ছে খুব কম (low motivational level) M, কিন্তু কাজ করা দরকার (need to take action) Na. “D” কে এখানে কোন ইউনিট হিসেবে আকা হয়নি।

Cliff Arnall এর মতে, তিনি অনেক বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই এই তারিখটিকে নির্দিষ্ট করে নির্বাচন করেছেন। বিষয়গুলো হলো আবহাওয়া, ঋনের মাত্রা (কতটুকু ঋন এর বোঝা আমার মাথায় আর কতটুকু আমি পরিশোধ করতে সক্ষম), বড়দিনের আনন্দ শেষ হয়ে যাওয়া, নতুন বছর শুরু হওয়ার পর থেকে, নতুন বছরের ইচ্ছা বা স্বপ্ন পূরন করতে না পারার আপাত হতাশা, কাজ করার খুব অনিচ্ছা কিন্তু সারাক্ষণ ভিতরে ভিতরে একটা ভাবনা কুঁড়ে খাওয়া, আমার কিছু কাজ করা প্রয়োজন। এ সমস্ত উপাদান মিলিয়েই দিনটিকে বিষাদপূর্ন করে তোলে। যদিও Dr. Ben Goldacre তার এই তত্বকে সঠিক বলে মেনে নিতে নারাজ। তার মতে, Arnall এর সমীকরন এর কোন গানিতিক ভিত্তি নেই।

গানিতিক ভিত্তি না থাকলেও গত কয়েক বছরের নিবিড় পর্যবেক্ষণে এর সত্যতা পাওয়া গেছে বলে আজকাল কিছু স্বাস্থ্য সংগঠন এ দিনটিকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের কর্মসূচী হাতে নেয়। লাফটার ক্লাব বানিয়ে সকাল থেকে দুপুর অব্ধি হাসির অনুশীলন জাতীয় কর্মকান্ডে তারা আগ্রহী নারী পুরুষকে ব্যস্ত রাখে। যাতে বিষন্নতা থেকে নিজের ক্ষতি করার মতো কোন সিদ্ধান্ত লোকে না নেয়।

Arnall যেমন বিষন্ন দিন খুঁজে পেয়েছেন, তেমনি খুঁজে পেয়েছেন সবচেয়ে আনন্দময় দিন। জুন মাসের মধ্যভাগে মানুষ সবচেয়ে খুশী থাকে। কারণ তখন আবহাওয়া আরামদায়ক ও চারপাশ আনন্দজনক থাকে গরমের আনন্দে।

তানবীরা

১৬/০১/২০১২

Friday 13 January 2012

ছেড়ে দেয়া মানে হেরে যাওয়া নয়

ছেড়ে দেয়া মানে হেরে যাওয়া নয়
ফিরে আসা মানে পরাজয় নয়
চোখে যা দেখি
সবসময়, সত্যি কি তা হয়?

স্বপ্ন দেখা মানে ভালো ঘুম নয়
মনের যন্ত্রনা মনে ঠিকি বয়
পথ চলায় কাউকে
ভালো লাগলেই, কি প্রেম হয়?

একা থাকা মানে কিন্তু একাকীত্ব নয়
হৃদয়ের মাঝখানটি হয়তো পলিময়
নিজের সাথে থাকে
অস্তিত্ব, লোকে কেন একলা কয়?

আকাশজোড়া মেঘ মানে মন খারাপ নয়
নবধারা জলে কিসের আবার ভয়
বৃষ্টি ভেজা মন
পুড়িয়ে, উড়ে কি যায় অনুতাপের ক্ষয়?

ভুলে থাকা মানে ভুলে যাওয়া নয়
কিছু কিছু ক্ষত জীবনভর রয়
প্রতিদিনের অভ্যাসে
পরাজিত, সব গ্লানি কি হৃদয়ে সয়?

তানবীরা
১৩/১/২০১২

Wednesday 11 January 2012

“ক্লাশ” বলতে আসলে কোন ক্লাশ নেই

কিছুদিন আগে দুপুরে এক ঘরোয়া আড্ডায় বন্ধু কাম প্রতিবেশির বাসায় গিয়েছিলাম আমরা ক’জনা। আমরা পাঁচজন মেয়ে আর আমাদের পাঁচজনের সাথে আমাদের কন্যারা পাঁচজন। মাঝে সাঝেই রোববারের অলস দুপুরে আমরা আড্ডা দেই, “হাই টী” আর আমাদের মেয়েরা একসাথে খেলে। এতো কাছে বাড়ি সবার, ঘন্টা দুয়েকের জন্যে যাই, ওভারকোটে মোবাইল কিংবা বাড়ির চাবি নিয়ে যাই, তার বেশি কিছু নিইনা। কিন্তু মোবাইল ওভারকোটে থাকলে কেউ ফোন করলে আবার শুনি না। স্বামী অসুস্থ, বাসায় আছেন একা, তাই মোবাইলখানা ওভারকোটের পকেট থেকে বের করে টেবলের ওপর রাখলাম সবার সামনে।

আড্ডা শেষে আমি আসার আগে করিডোরে গেলাম। ফিরে এসে দেখি টেবিলে আমার মোবাইল সেটটা নেই। ভাবলাম হয়তো, মনের ভুলে সোফায় রেখে, টেবিলে খুঁজছি। তাই সোফার চিপায়, সোফার নীচে, কার্পেটে, টেবলের তলায় সব জায়গায় হাতিপাতি করে খুঁজতে লাগলাম, নেই নেই নেই তো নেই। একজন বন্ধু জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে, বল্লাম, সে সমানে তার ফোন থেকে আমার ফোনে কল করছে, কোথাও সেই পরিচিত বাজনা আর বেজে উঠছে না। একদম নীরব। অথচ ফোন বাজলে শুনিনা বলে রিঙার অলওয়েজ সবচেয়ে হাই ভল্যুমে দেয়া থাকে। কেউ কেউ বললেন, কোথাও পড়ে হয়তো ফোন অফ হয়ে গেছে তাই আওয়াজ শুনছি না। কিন্তু পরিস্কার রিঙ শুনতে পাচ্ছি অপর প্রান্ত থেকে। তারমানে ফোন অফ নয়।

এই করতে করতে প্রায় চল্লিশ মিনিট পার হল। অন্যেরা সবাই তখন যাই যাই করছে। বাসায় যেয়ে ডিনার রেডি করতে হবে, সকলেরই কাজ আছে। আমি কাউকে বলতেও পারছি না, আমার মোবাইল না পাওয়া পর্যন্ত তোমরা যেতে পারবে না। যদিও মোবাইল না পেয়ে আমার মনের মধ্যে অনেক ধরনের চিন্তাই আনাগোনা করছে, যার কোনটাই সুখকর নয়। মোবাইল সামান্য একটা জিনিস হয়তো কিন্তু এতো বছর ধরে ব্যবহার করতে করতে, সমস্ত টেলিফোন নাম্বার, প্রিয় গান, ছবি, কোনদিন কি করবো তার এ্যালার্ম, রিমাইন্ডার, নোটস সব এরমধ্যে। এছাড়াও এই মোবাইলের ইমোশোন্যাল ভ্যালু অনেক। এই পৃথিবীতে শর্তহীন প্রিয় ব্যাক্তির সংখ্যা আমার খুবই নগন্য। সে নগন্য সংখ্যার একজন আমাকে এই সেটটি দেশ থেকে বিদেশে উপহার পাঠিয়েছিলেন। আমার দশা প্রায় পাগলপারা। অন্যনোপায় হয়ে স্বামীকে ফোন করে বললাম, তিনি তার অসুস্থ শরীর নিয়ে এলেন আমার সাহায্যার্থে।

যার বাসা তার দামি সোফা উল্টে-পাল্টে, তাতে ভ্যাকুম মেশিন ঢুকিয়ে, কার্পেট তুলে ঝেড়ে একশা অবস্থা, তিনজন মিলে। অন্যদিকে আর একজন তার মোবাইল থেকে সমানে ফোন করে যাচ্ছে আমার মোবাইলে কোথাও যদি একটু আওয়াজ পাওয়া যায়। সবাই হতভম্ব। যার বাসায় এই কান্ড ঘটেছে আর যারা সেখানে আড্ডা দিচ্ছিলেন তারা প্রায় প্রত্যেকেই মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ চালান, স্ট্যান্ড ফ্রী বাংলো বাড়িতে থাকেন। সেখানে সামান্য একটা মোবাইল নিয়ে এই অসামান্য কান্ড!!! কারো মুখে কথা নেই। প্রায় দেড় থেকে দু’ঘন্টা মল্ল যুদ্ধ চলার পর সবাই যার যার বাসায় ফেরা মনস্থ করলাম। আমার স্বামী আমাকে প্রায় যেকোন বিপদ থেকে যেকোন মূহুর্তে রক্ষা করে ফেলেন, তিনি অকৃতকার্য হবেন এটা আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, তারপরও তাই মেনে নিয়ে বেরিয়ে আসছিলাম।

আসার সময় রান্নাঘরে গিয়েছি গলা ভেজাতে। সারা দুপুরের হৈ চৈতে গলা শুকিয়ে কাঠ। হঠাৎ শুনতে পেলাম আমার সেই পরিচিত রিঙার। আমি এক চিল চিৎকার। সবাই দৌড়ে আমার কাছে এলো। এবার আর স্বামী ভুল করলেন না। রিঙারের শব্দকে অনুসরণ করে বাগানের বাউন্ডারীর পাতার নীচ থেকে আমার মোবাইল উদ্ধার করলেন। শতাব্দীর আর্শ্চয ঘটনা, লিভিং রুমের টি টেবল থেকে আমার মোবাইল কি করে সেখানে গেল! আর যে অবস্থা থেকে মোবাইলটা বের করা হলো তাতে মনে হচ্ছে, কেউ ছুড়ে মেরেছে যা ওখানকার পড়ে থাকা পাতার নীচে চাপা পড়ে গেছে। তারপর আমরা সবাই সুশীল ভদ্রলোকেরা আমাদের বাচ্চাদের দুষ্টমীর ওপর দোষ চাপিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসলাম। যদিও বাচ্চারা খুশিতে মোবাইল হারানো পার্টি করছে। এ উপলক্ষ্যে তারা আর বেশিক্ষণ একসাথে খেলতে পারলো।

সবাই তখন বেড়িয়ে এলেও, বাচ্চাদের দোষ দিলেও সবাই আমরা মনে মনে জানতাম, এ কাজ কিছুতেই কোন বাচ্চার নয়। আবার রাতে, দুপুরে শুরু হলো এ নিয়ে আলোচনা। কে বাগানের দিকে গিয়েছিল, কাকে দেখেছিলাম, কাকে সন্দেহমতো হচ্ছে। কাউকে দেখিনি, খেয়াল করিনি তাই বললাম। কিন্তু সাথে সাথে এও ভাবছি, এই যদি হয় আমাদের হাল তাহলে আমরা নিজেদের কি দাবী করবো? কিসের ক্লাশ আমরা? যারা আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম তাদের প্রায় প্রত্যেকের স্বামীরই সেখানে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার ডিগ্রীর সাথে আরো কিছু এ।বি।সি।ডি এক্সর্টা যোগ আছে। প্রত্যেকের সামাজিক অবস্থা ঈর্ষনীয়। বাবা-মা, ভাই, ছেলে-মেয়ে সবার অবস্থান সমাজে সুসংহত। সাধারণ শ্রেণী কিংবা শ্রেণীহীন মানুষের সংস্পর্শে তারা হয়তো কখনো যান না। এই তবে “ক্লাশ”!!!!! আসলে “ক্লাশ বলতে কোন ক্লাশ নেই”। কোট প্যান্টলুন, কিংবা লুঙি শার্ট, ভিতরে সবার সমান রাঙা। যার পাঁচ টাকা চুরি করার সামর্থ্য, সে পাঁচ টাকা চুরি করে যার পাঁচ মিলিয়নের সামর্থ্য সে পাঁচ মিলিয়ন করে।

কবি নজরুলের মতো, আমার জীবনের সব শিক্ষাই আমার অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া। এক আড্ডায়, এক বন্ধু “ভদ্রলোকের” সংজ্ঞা বলেছিলেন, “যতোক্ষণ ধরা না পড়ে, ততোক্ষণ ভদ্রলোক। দি মোষ্ট রেসপেক্টেড ওয়ান। সৎ পয়সা তা যতোই হোক তাতে কখনো “মার্জিন” ক্রস করা যায় না। স্ট্যান্ডার্ড অফ লিভিং এর মার্জিন কি? যার যার কাপড় অনুযায়ী তার তার কোট কি মার্জিন? তবে এটুকু জানি আজ, প্রদীপের তলার অন্ধকারটুকু দেখে ফেলা কখনোই কোন সুখময় অনুভূতি নয়। এটা যন্ত্রনাদায়ক। আর মাঝরাতে বসে আমিই এই নীতিকথা কেন লিখছি? আমি কি তাহলে অন্যায় করতে কিংবা ফাঁকি দিতে বা চুরি করতে চাই না? দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে বলছি, চাই অবশ্যই চাই। আজকে হিল্লি কালকে দিল্লী করতে কার না ভাল লাগে? ভিক্টোরিয়া সিক্রেট কিংবা রাফ লওরেন আমাকেও মুগ্ধ করে। আমি আসলে একজন ব্যর্থ, ভীরু, সুযোগের অভাবে সৎ থাকা মানুষ মাত্র। নীতিবান কেউ মোটেও না।

তানবীরা
২৭.১২.২০১২

Tuesday 10 January 2012

কি কথা সে রেখে যায় ......


দৈন্দদিন জীবন, একই রকম পথচলা
রোজ রোজ এলোমেলো টিভি দেখা
ফেসবুকে নিত্যনতুন উদ্ভাবনী স্ট্যাটাস পড়া
অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ জ্বালাময়ী ব্লগ পড়া
পড়ছি অনেক দেখছিও বহু
ল্যাপটপ বা টিভি বন্ধ করলে
স্ট্যাটাস আপডেটেড হয়ে গেলে
মনে থাকছে না কিছুই।

ভুলে যাই কি যেন কি ছিল
গানগুলো বাজে কিংবা
লেখাগুলো মূল্যহীন তা কিন্তু নয়
তারপরও কোথাও হারিয়ে যায়
হঠাৎ হঠাৎ এই মানেহীন গতানুগতিকতা
ভেঙ্গে, আচমকা কোন গানের দুটো কলি
কিংবা কারো একখানা এলেবেলে স্ট্যাটাস
নিজের অজান্তেই মাথায় গেঁথে যায়।

তারপর দিনভর অলস মাথাকে
নাড়া দিতে থাকে।
ভুলে যাওয়া অনেক কথাকে মনে পড়াতে
দিনভর লাইনদুটো ঘুরে ফিরে মনে আসে
মনে পড়ে কখনো এই আমি
হয়ত অন্য আমি ছিলাম
খুব সামান্য বৃষ্টিতেই খুশি হতাম
কিংবা অসামান্য জোস্ন্যায় ভেসে যেতাম।

তানবীরা
২৭/১২/২০১১

ডেকে যায়