Monday 10 January 2022

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – আঠারোই ডিসেম্বর টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – আঠারোই ডিসেম্বর টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান প্রিমিয়ে রুতেঃ গত সংবাদ সম্মেলনের মাত্র চারদিন পরেই, শনিবার রাতে আবার সংবাদ সম্মেলন করার অর্থই হলো, আজকে খারাপ খবর আছে। এক লাইনে বলতে গেলে, কাল থেকে নেদারল্যান্ডস আরো একবারের জন্য পুরোপুরি বন্ধ হবে। আমরা করোনার পাঁচ নম্বর ঢেউয়ের মধ্যে আছি যার মধ্যে ওমিক্রণের নতুন ধরনটিও উল্লেখযোগ্য। দেখা যাচ্ছে অন্যান্য ধরনের চেয়ে ওমিক্রণ অনেক বেশি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এই জটিল সংবাদটি নিয়ে আজকে আলোচনা হবে বলে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপরি ইয়ান ভান ডিজেলকে সাথে নিয়ে আসা হয়েছে। ইয়ান ভান ডিজেলঃ হাসপাতাল, জেনারেল ফিজিশিয়ান, কেয়ার হোমে যথেষ্ঠ ভীড় থাকা সত্বেও আমরা ভেবেছিলাম ডেল্টার ঢেউ আমরা সামলে উঠেছি, কিন্তু সেটার সংক্রমণের হার না কমতেই ওমিক্রণ ছড়িয়ে পড়ছে সব জায়গায়। আমর্স্টাডাম, লন্ডনের সংক্রমণের হার দেখে আমরা ধারনা করছি, ক্রিসমাস আর নিউ ইয়ারে ওমিক্রণ অনেক বেশি ছড়াবে যেহেতু এটির সংক্রমণের ক্ষমতা অনেক বেশি। ওমিক্রণ লীডিং থাকবে আর ডেল্টা হয়ত বিদায় নেবে। ওমিক্রণ দ্রুত ছড়ায় ছাড়া এটি নিয়ে আর অনেক বেশি কিছু এখনও জানা যায়নি। তবে ভয়ের কথা হলো, যখন ভ্যাক্সিন বানানো হয়েছিলো, তখন করোনার যেই রুপটি উপস্থিত ছিলো, ওমিক্রণের চরিত্র তার থেকে অনেক আলাদা। তাই ভ্যাক্সিন এটাকে পুরোপুরি প্রতিরোধ করতে হয়ত পারবে না। তারপরও বুস্টার নেয়া দরকার যাতে প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার থাকে, ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। আমরা যদি লন্ডনের সংক্রমণের হার ধরে আমাদের মডিউল হিসেব করি তাহলে দেখা যায়, এতো বেশি সংক্রমণ বাড়বে যে প্রথম ঢেউয়ের মত পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা করোনা রোগী সামলাতেই ব্যস্ত থাকবে। হয়ত, এত খারাপ অবস্থা নাও হতে পারে কিন্তু অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা সময় থাকতে সাবধান হতে পারি। প্রিমিয়ে রুতেঃ নতুন লক ডাউন উনিশ তারিখ সকাল পাঁচটা থেকে শুরু হবে চৌদ্দই জানুয়ারী পর্যন্ত চলবে। বাসায় দুজনের বেশি মেহমান নয়। বাইরে হাঁটতেও দুজনের বেশী নয়। তবে ক্রিসমাসের দুদিন আর থার্টি ফাস্টে চারজন মেহমান আসতে পারে আর বাইরেও চারজন এক সাথে আড্ডা দিতে পারে। সমস্ত দোকানপাট বন্ধ থাকবে তবে ক্লিক এন্ড কালেক্ট চলতে পারে। সুপারমার্কেট আর ওষুধের দোকান সন্ধ্যা আটটা পর্যন্ত খোলা থাকতে পারে। গাড়ির ট্যাকিং, লাইব্রেরি ইত্যাদি খোলা থাকবে। প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সব বন্ধ থাকবে সাথে ডে-কেয়ার সেন্টার। তবে দশই জানুয়ারী থেকে অনলাইন ক্লাশ চলবে। যাদুঘর, কনসার্ট, সিনেমা, চিড়িয়াখানা, এমিউজমেন্ট পার্ক সব বন্ধ থাকবে। রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে বন্ধ থাকবে তবে টেকওয়ে চলতে পারে। বিয়ে আর শেষ কৃত্যানুষ্ঠান নিয়মের মধ্যে চলতে পারে। চুল, নখ, বিউটি সেলুন সব বন্ধ থাকবে। সবরকম খেলাধূলা আর প্রতিযোগিতা বন্ধ থাকবে। তবে মাঠে খেলাধূলা চলতে পারে, দুজনের মধ্যে, দেড় মিটার দূরত্ব মেনে। যারা যারা ছুটিতে যাবে, যে দেশে যাবে সেখানকার নিয়ম মেনে চলতে হবে। সাবসিডি যেমন চলছিলো চলতে থাকবে। হুগো দ্যা ইয়ংঃ সংক্রমণ ঠেকানোর সর্বোচ্চ ব্যবস্থা হিসেবে আমরা প্রতি সপ্তাহে দেড় মিলিয়ন মানুষকে বুস্টার দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। জানুয়ারীর মাঝামাঝির মধ্যে সবাইকে বুস্টার দিয়ে সুরক্ষা করাই আমাদের আপাতত লক্ষ্য। এরমধ্যে আমরা বেশী সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার মত করে নিজেদের প্রস্তূত করছি। তিন মাস আগে যাদের করোনা ভ্যাক্সিনের শেষ ডোজ নেয়া হয়েছে তাদেরকে অবশ্যই অতি দ্রুত বুস্টার নেয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে, নইলে ওমিক্রন প্রতিরোধের জন্যে যথেষ্ঠ প্রস্তূত নয় বলেই দেয়া যাচ্ছে। সাংবাদিকঃ আপনারা কি বুস্টার শুরু করতে দেরী করে ফেলেছেন? ইয়ান ভান ডিজেলঃ দু’বছর ধরে কাজ করলে আপনি কিছুতেই বলতে পারেন না, আপনি কখনো ভুল করেন নি। তবে যেভাবে ভ্যাক্সিন নেয়া মানুষও এসে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে তাতে আমরা ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ও বুস্টার নিয়ে কিছুটা পর্যবেক্ষণের মধ্যে ছিলাম। বুস্টার দেয়ার জন্যে এখন আমরা এত মানুষ এপয়ন্ট করেছি, এভাবে পরিকল্পনা করেছি, আপনি দেখছেন এখন বুস্টার কার্যক্রম সময়ের আগে চলছে। সাংবাদিকঃ আজকের সার্ভে থেকে দেখা গেছে মাত্র ত্রিশ পার্সেন্ট মানুষ আপনার এই লকডাউন সমর্থণ করছে। হয়ত দেখা গেলো, ক্রিসমাসে তবুও মানুষ পরিবারের সাথে পার্টি করছে, তখন আপনি কি করবেন? প্রিমিয়ে রুতেঃ আজকের প্রেস কনফারেন্সে ইয়ান ভান ডিজেল পরিস্কার বলে দিয়েছে, কি কি ঝুঁকি আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। আমি বিশ্বাস করি ও জানি যে ছয়/সাত মিলিয়ন মানুষ এখন এই প্রেস কনফারেন্স দেখছে, তারা এটি উপলব্ধি করবে এবং আপনি পরের সপ্তাহে এই সার্ভেটি আবার করলে, আমি নিশ্চিত অন্যরকম ফলাফল আসবে। সাংবাদিকঃ ভ্রমণের ব্যাপারটা যদি আরেকটু পরিস্কার করতেন, হুগো দ্যা ইয়ংঃ স্যাঙ্গেইনের সাতাশটি দেশের মধ্যে আমরা ভ্রমনের ব্যাপারটা একটি ফর্মে নিয়ে আসতে চাই। এতদিন শুধু ডিসিসি থাকলেই চলতো কিন্তু এখন থেকে টেস্ট ও বাধ্যতামূলক করতে চাই। ইউরোপের বাইরে থেকে এলে/গেলে সবাইকে টেস্ট কিংবা ডাবল টেস্ট করা সহ, যে দেশে যাবে তার নিয়মগুলোও মানতে হবে। এতদিন যাদের ভ্যাক্সিনের সার্টিফিকেট ছিলো তাদের কেয়ারন্টিন করতে হতো না। কিন্তু এখন থেকে ইউরোপের বাইরে থেকে এলেই কেয়ারন্টিন বাধ্যতামূলক করার করা ভাবা হচ্ছে। এমনকি যুক্তরাজ্য থেকে এলেও। সাংবাদিকঃ এত অল্প সময়ে সবাইকে বুস্টার দেয়ার মত যথেষ্ঠ ভ্যাক্সিনের মজুদ আছে কি? হুগো দ্যা ইয়ংঃ ভ্যাক্সিন যথেষ্ঠ আছে, মর্ডানা, ফাইজার দরকারে ইয়ানসেন কিন্তু দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা ভ্যাক্সিন পুশ করার মত মানুষ নেই। লোকবল যোগাড় করতে পারলে আরও দ্রুত সবাইকে বুস্টারের আওতায় আনা হবে। সাংবাদিকঃ দুই ডোজ ভ্যাক্সিন যেই ভাইরাস আটকাতে পারেনি তাকে একটি বুস্টার দিয়ে আটকে দেবেন, এমন ভাবনার কারণ কি? ইয়ান ভান ডিজেলঃ খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যদিও আমি এর উত্তর জানি না। শুধু ভাবছি, বুস্টার ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করবে যা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
তানবীরা হোসেন ১১/০১/২০২২

Saturday 1 January 2022

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – চৌদ্দই ডিসেম্বর টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান

প্রিমিয়ে রুতেঃ আজকের সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য আমরা আমাদের এই নিয়মগুলো চৌদ্দই জানুয়ারী পর্যন্ত বহাল রাখবো। সামনেই ক্রীসমাস, আমি জানি এটা কারো জন্যেই আনন্দের কোন সংবাদ নয়, কিন্তু আশাকরছি, আপনারা বুঝবেন দুটো কারণে এটা এড়ানোর কোন উপায় নেই। প্রথমত, করোনা রোগী দিয়ে হাসপাতাল ভর্তি, অন্য সব চিকিৎসা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ওমিক্রন ঠেকাতে হবে। ক্রিসমাসের সময় সর্বোচ্চ চারজন মেহমান আসতে পারে। কোথায় বেড়াতে যাওয়ার আগে কিংবা বাসায় মেহমান আসার আগে নিজে করোনা পরীক্ষা করে নেবেন। কোন উপসর্গ না থাকলেও করে নেবেন। বাড়ির ভেতরেও দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুন। জানাল খুলে রাখার চেষ্টা করুন। আর মেহমান চলে গেলে দরজা আর জানালা অন্তত পনের মিনিট একসাথে খুলে রেখে ঘরকে সতেজ করুন। আর একবার মনে করিয়ে দিচ্ছিঃ সুপারমার্কেট আর ওষুধের দোকান ছাড়া, সন্ধ্যা পাঁচটা থেকে সকাল পাঁচটা পর্যন্ত সব বন্ধ থাকবে। তেলের পাম্প খোলা থাকবে আর রেস্টুরেন্টে টেক ওয়ে খোলা থাকবে। খেলাধূলা প্রতিযোগিতায় কোন দর্শক থাকবে না। রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল, কনসার্ট, থিয়েটার, যাদুঘর, চিড়িয়াখানা সবা জায়গাতেই তের বছরের ওপরের সবাইকে করোনা সার্টিফিকেট এর সাথে আইডি কার্ডও দেখাতে হবে। যেখানে বসার জায়গা নির্দিষ্ট নেই সেখানে প্রতি পাঁচ বর্গমিটারে একজন দর্শনার্থী। পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট, স্কুল, শপিং মল, চুল কাটার দোকান, ম্যাসাজ পার্লার কিংবা রেস্টুরেন্টে মাস্ক বাধ্যতামূলক। সর্বোচ্চ পচাত্তর জন ইউনিভার্সিটির একটি ক্লাশে আর থিয়েটার কিংবা কনসার্টে বারোশো পঞ্চাশ জন। যে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ সকল কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাদের সাবসিডি কন্টিনিউ হবে। এরকম পরিস্থিতিতে এটি আমাদের দ্বিতীয় ক্রিসমাস। দুঃখ, ক্ষতি, বেদনা আমরা কমাতে পারবো না কিন্তু দুই হাজার বাইশের প্রথম কোয়ার্টার পর্যন্ত সাবসিডি অব্যহত রেখে ক্ষতি খানিকটা পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো। আর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য আমরা তৃতীয় কোয়ার্টার পর্যন্ত সাবসিডি দিয়ে যাবো তবে সেখানে নিজস্ব বীমা’র ভূমিকাও মূল্যায়ন করা হবে। সত্তরোর্ধ নানা নানীর সাথে বাচ্চাদের মেলামেশা কমাতে হবে তার সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন। যেসব বাচ্চারা টিকা নেয়নি, তাদের দিয়ে করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে। তারা নিজেরা ততো অসুস্থ হয় না কিন্তু অন্যদের মারাত্বক অসুস্থ করে দেয়। ওমিক্রনের ঝুঁকি এড়াতে আমরা বিশে ডিসেম্বর থেকে সমস্ত প্রাইমারি স্কুল আর ডে কেয়ার সেন্টার বন্ধ করে দিচ্ছি। অনলাইন ক্লাশেরও দরকার নেই। বাবামায়েদের বিশেষ অনুরোধ এসময় বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে কোন প্ল্যানিং না করে বাড়ির মধ্যেই সময় কাটাতে। আমি জানি খুবই কষ্টকর আর তাই আবারো বলছি, সবাইকে সশ্রদ্ধ ধন্যবাদ এ কঠিন সময়টিতে পরিপূর্ণ সাহায্য করার জন্যে। গত সপ্তাহের এক জরিপে উঠে এসেছে, এই সংকটের শুরুতে মানুষের যতটা আস্থা ছিলো এখন তা নেই, যৌক্তিক বটে, কারণ সবাই যথেষ্ঠ ভুগেছে এই নিয়ে। কিন্তু আমি এটিকে আমাদের প্রতি এক ধরনের ম্যাসেজ হিসেবে দেখছি যে আমাদেরকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, আরও ভাল করার চেষ্টা করতে হবে। সেই একই জরিপে আবার উঠে এসেছে, মানুষ নিয়মনীতি মেনে চলতে প্রস্তূত, সেটি কিন্তু আবার আমাদের প্রতি এক রকমের বিশ্বাসও বটে। হুগো দ্যা ইয়ংঃ গত সপ্তাহে প্রতিদিন একুশ হাজার সংক্রমণ ছিলো এই সপ্তাহে সেটি সতের হাজার। প্রায় প্রতিদিন দুইশো আশি জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। উনিশে নভেম্বর প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে হল্যান্ডে, অন্যান্য দেশের পরিসংখ্যান দেখে আমরা ধারনা করছি হল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ মানুষ এখন ওমিক্রন দ্বারা সংক্রামিত। ইংল্যান্ডে প্রতি দুদিনে সংক্রমণ দ্বিগুন হচ্ছে। আমরা জানি না কিভাবে কি করতে হবে তবে বুঝতে পারছি আর একটি নতুন ঢেউ আসছে। যা করা সম্ভব করার চেষ্টা করছি। বুস্টার ডোজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবাই পাবে। ভ্যাক্সিন এখনও সংক্রমণ প্রতিরোধের সবচেয়ে শক্ত হাতিয়ার। আঠারোর্ধ্ব সবাই যারা তিন মাস আগে ভ্যাক্সিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে কিংবা করোনাক্রান্ত হয়েছে জানুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে তারা বুস্টার পেয়ে যাবে। সাংবাদিকঃ সারাক্ষণ বললেন, শিক্ষায় হাত দেবেন না আর এখন বলছেন প্রাইমারি স্কুল বন্ধ, ব্যাপারটা কি? প্রিমিয়ে রুতেঃ এবার স্কুল ছুটি পড়েছে পঁচিশে ডিসেম্বর থেকে, শেষ স্কুল চব্বিশে ডিসেম্বর, বাচ্চাদের কোন ছুটিই সেভাবে নেই। সাথে আছে ওমিক্রন সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়ার উচ্চ ঝুঁকি তাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির পরামর্শনুযায়ী এক সপ্তাহ আগেই স্কুল ছুটি দেয়া হলো। সাংবাদিকঃ কিন্তু আপনাদের কাছে তো ওমিক্রনের কোন পরিসংখ্যান নেই আর সংক্রমণের হার তো কমেও আসছে প্রিমিয়ে রুতেঃ আমাদেরটা তৈরী হচ্ছে কিন্তু আশেপাশের অবস্থা থেকে আমাদের ধারনা নিতে হবে। ইংল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মান, অস্ট্রিয়া এদের আপডেট প্রতিনিয়ত পাচ্ছি সাংবাদিকঃ ওখানে যা হচ্ছে এখানে তাই হবে, এমনতো কোন কথা নেই তাছাড়া, বাচ্চাদের স্কুল নেই, বাইরে যেতে মানা, সারাদিন ওরা বাসায় করবে কি? প্রিমিয়ে রুতেঃ আমি জানি এটি খুবই কষ্টকর একটি পরিস্থিতি কিন্তু যেহেতু আর কোন উপায় নেই, বাবামাকেই সন্তানকে সময় দিয়ে তাকে ব্যস্ত রাখার, আনন্দে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সাংবাদিকঃ ওমিক্রন সংক্রমণের ঢেউটি কখন আশা করছেন? হুগো দ্যা ইয়ংঃ সেটা আমরা এখনও জানি না। তবে এটুকু জানি, তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার একজন সুস্থ মানুষের শরীরে পচাত্তর শতাংশ রোগ প্রতিরোধ তৈরী করতে সক্ষম আর তাই আমরা এত দ্রুত সবাইকে বুস্টার দিচ্ছি। সাংবাদিকঃ মাত্র পনেরো শতাংশ মানুষ করোনা নিয়ে আপনার কার্যক্রমের ওপর আস্থা রাখছে? এটা কি করে সম্ভব হলো? প্রিমিয়ে রুতেঃ আমার কার্যক্রমে অনেক ঘাটতি ছিলো, মানুষকে যথেষ্ঠ আস্থা আমি দিতে পারিনি। আমি এখন আমার কাজের ধারা বদলে ফেলেছি। জানুয়ারী থেকে আমি চেষ্টা করবো অন্য পদ্ধতিতে কাজ করার। এখন থেকে আর অল্প সময়ের পরিকল্পনা নয়, করোনা প্রতিরোধ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা হবে লম্বা সময়ের জন্যে। কিন্তু মানুষ আমার দেয়া প্রাথমিক নিয়মগুলো মানছে, তারা অন্তত এটি বুঝতে পারছে, আমরা সত্যি সত্যি ঝামেলায় আছি। আমাকে পছন্দ করা বা না করা জরুরী না, নিয়ম মানা জরুরী। সাংবাদিকঃ মানুষ আপনার ওপর আস্থা রাখছে না কিন্তু আপনার দেয়া নিয়মাবলীর ওপর আস্থা রাখছে, ব্যাপারটা একটু কেমন কেমন না? মাত্রই নতুন মন্ত্রীসভা তৈরি হলো, তার মধ্যে কি এর প্রভাব পরবে না? (প্রেস কনফারেন্সঃ চৌদ্দই ডিসেম্বর, পয়ত্রিশ মিনিট থেকে সাইত্রিশ মিনিট) সাংবাদিকঃ আপনি বলছেন, ইউরোপের মধ্যে নেদারল্যান্ডসই সর্বোচ্চ কঠোর প্রতিরোধ ব্যবস্থা, লকডাউন ইত্যাদি দিয়েছে তারপরও নেদারল্যান্ডসের করোনা এত খারাপ কি করে হলো? আইসিইউ’র স্বল্পতা? হুগো দ্যা ইয়ংঃ অনেকেরই এটি একটি ভুল ধারনা। আইসিইউ বেশি থাকলেই যেনো করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকতো। ব্যাপারটা সেরকম কিছু নয়। আইসিইউ মেইনটেইন করতে শিক্ষিত কর্মী লাগে সাথে অন্যান্য রোগের চিকিৎসাও তো চলতে হবে। অন্য রোগের রোগীদেরতো সবসময় অপেক্ষা করিয়ে রাখা যায় না, সেগুলোওতো সমান জরুরী। সাংবাদিকঃ বারবার আপনারা যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টানছেন, এর মানে কি আপনারা ওদের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন? প্রিমিয়ে রুতেঃ ব্যাপারটা সেরকম না, আমাদের বিশেষজ্ঞরা পৃথিবীশুদ্ধ সব বিশেষজ্ঞদের সাথে দিনরাত যোগাযোগ রাখছে ও তথ্য আদান প্রদান করছে। আমাদের মডুলিস্টরা, এপিলিওজিস্টরা পৃথিবীর সেরা হিসেবে স্বীকৃত। সাংবাদিকঃ আপনারা যে এত দ্রুত বুস্টার দিচ্ছেন সবাইকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করেছেন? হুগো দ্যা ইয়ংঃ না, আলোচনা করিনি। প্রথমে আমরা শুধু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে পরিকল্পনা করেছিলাম এখন যেহেতু ওমিক্রণ এসে গেছে তাই আমাদের পরিকল্পনা বদলাতে হয়েছে এবং অসম্ভব দ্রুত গতিতে সবাইকে বুস্টার দিতে হচ্ছে। সাংবাদিকঃ আপনারাতো সেপ্টেমর থেকেই সব তথ্য জানতেন তাহলে পরিকল্পনা করতে এত দেরী হলো কেন? হুগো দ্যা ইয়ংঃ প্রথমে আমরা আইসিইউতে ভীড় কমিয়ে, সংক্রমণের হার কমিয়ে তারপর দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় হাত দিতে চাইছি। ফেব্রুয়ারীর শেষ থেকে আমরা পরের বছরের জন্যে পরিকল্পনা শুরু করবো। করোনা কোথাও যাবে না, আমাদেরকে করোনার সাথে বসবাসের পথ তৈরী করতে হবে। মার্চের শেষ থেকে আমরা পরের প্যান্ডামিক মোকাবেলা করার জন্যেও সব ধরনের পরিকল্পনা ও প্রস্তূতি গ্রহণ করছি। সাংবাদিকঃ ভাইরাস নিয়ে প্রায় দেড় বছরের ওপর হতে চললো। ক্যাবিনেট আর আপনার থেকেতো আমরা আরও একটু সময়মত সিদ্ধান্ত আশা করতে পারি? প্রিমিয়ে রুতেঃ মানুষ ভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার দায়িত্ব যেকোন পরিস্থিতিতে সবসময় সিদ্ধান্ত নেয়া। সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন কিছু না কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। সাধারণ ব্যাপারে ক্যাবিনেট দশটা সিদ্ধান্ত নেয়, যদি দেখা যায়, আটটা সম্পূর্ণ সঠিক, একটা ভুল আর একটা আরো সংশোধন করতে হবে তাহলে সে খুবই যোগ্য প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এটাতো সাধারণ পরিস্থিতি না, এখন আমরা আছি প্যান্ডামিক, এপিডেমির পরিস্থিতিতে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমত, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাকে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে, যেখানে অসংখ্য ভুল ভ্রান্তি থাকছে, যেটা আমি বারবার অকপটে স্বীকার করছি। আমরা বিশ্ব জুড়ে মানব স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে কাজ করছি। সাংবাদিকঃ বিরোধী দলতো আগেই লকডাউনের কথা বলেছিলো। আগেই যদি লকডাউন দিতেন তাহলে প্রাইমারি স্কুল বন্ধ করা এড়ানো যেতো না? প্রিমিয়ে রুতেঃ জাস্ট কোন বিপদ অনুমান করে লকডাউন করা যায়? লকডাউন আসবে হিসেবের ওপর ভিত্তি করে। আগে থেকে লকডাউন দিলে তার প্রভাব কি অর্থনীতি, সামাজিক জীবন, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পড়তো না? সাংবাদিকঃ চৌদ্দই জানুয়ারী কি সত্যিই স্কুল সব খুলবে? প্রিমিয়ে রুতেঃ সেটা আমি এখনই বলতে পারি না। ওমিক্রনের গতি প্রকৃতি দেখে বিশেষজ্ঞরা যা সিদ্ধান্ত দেবেন, সেই পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। তানবীরা হোসেন ০১/০১/২০২২