Wednesday 10 November 2010

জীবন যেখানে যেমন

আফা মালা নিবেন মালা? একটা মালা লন না আফা মাত্র দুই টেকা, ট্র্যাফিক সিগন্যালে গাড়ী থামতেই কচি গলার কাতর অনুরোধ। প্রখর রৌদ্রের প্রচন্ড খরতাপ উপেক্ষা করে হাতে অর্ধনির্মিলিত ফুলের মালা নিয়ে গাড়ীগুলোর কাছে দৌড়ে আসে আমেনা। নোংরা, ছেড়া জামা গায়ে, পিচগলা এই খরতাপে খালি পায়ে প্রত্যেক সিগনালে গাড়ী থামা মাত্র ঝাপিয়ে পড়ে মালা নেয়ার আবেদন নিয়ে জীবন সংগ্রামের এই কঠিন যুদ্ধে। অপুষ্টির জন্য স্বাস্থ্য দেখে বয়সের সঠিক আন্দাজ না পাওয়া গেলেও আমেনার, অনুমান বয়স সাত/ আট হবে তার। শুকনো লিকলিকে হাতে মালা বাড়িয়ে দেয় গাড়ীর খোলা জানালা দিয়ে তার সাথে থাকে কাতর আকুতি। কেউ বা কখনও মালা নেয়, কখনও কখনও এমনিতেই কেউ দু-চার টাকা দেয় তাকে। সারাদিনে এভাবেই পঞ্চাশ-ষাট টাকা রোজগার হয় তার। কখনওবা একটু বেশী কম। এই তার জন্য অনেক, মাকে দিবে সে এ টাকা, মায়ের সাহায্য হবে। মা খাবারের ব্যবস্থা করবেন তাদের জন্য হয়তো এ টাকা দিয়ে, রোজকার বাজার খরচ তাদের এটাকা। কাকডাকা ভোর হতেই ফুলের দোকানের সামনে থেকে দোকানীদের ফেলে দেয়া পচা ফুল থেকে একটু ভালো ফুলগুলো কুড়ানো দিয়ে জীবন শুরু হয় তার, খুব ভোরে না গেলে আবার ফুল পাবে না, সহযোদ্ধারা নিয়ে যাবে ফুল। ফুল কুড়ানো শেষ হলে শুরু হয় দ্রুত মালা গাথা। তারপর মায়ের রেখে যাওয়া পান্তা কিংবা মুড়ি খেয়ে বেড়িয়ে পড়ে সারাদিনের জন্য। সিগনালে সিগনালে দৌড়াদৌড়ির এক ফাকেই আবার ঘরে ফিরে খেয়ে নেয় দুপুরের খাবার। তারপর আবার রাস্তায়। এই রাস্তার ছোটাছুটির মাঝেই অনেকের সাথে আমেনার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে, অন্য এক জীবন তৈরী হয়ে গেছে রাস্তায় তার। মালা বিক্রি নিয়ে এমনিতে তাদের মাঝে রেষারেষি থাকলেও সিগন্যাল শেষ হলেই আবার তারা বন্ধু। বন্ধুরা এক সাথে সুখ দুখের গল্প করে, ফাকে ফাকে রাস্তার পাশে খেলাও করে। কোথাও গরীব খাওয়ানো হবে সন্ধান পেলে সবাই সবাইকে খবর দেয় আর একসাথে সকলে খেতে যায়। বন্ধুদের কাছ থেকে সিনেমার গান শোনে আর শুনে শুনে শিখেও নেয় মাঝে মাঝে। রাস্তায় বন্ধুদের সাথে তাল দিয়ে দিয়ে সেই গান গেয়ে গেয়ে হেসে হেসে গড়িয়ে পড়ে আমেনা, গান গাইতে তার বড় ভালো লাগে। ট্যাকা নাই, ট্যাকা থাকলে গানের বাদ্য কিনে অনেক গান গাইতো সে। গানের বাদ্য কিনতে কতো ট্যাকা লাগে তার আন্দাজও আমেনার নাই কিন্তু অনেক ট্যাকা লাগে সে ধারণা সে করতে পারে। কিন্তু মনের সাধ সে এই রাস্তায় গান গেয়ে কিংবা একা কোথাও ফাক পেলে গলা ছেড়ে গেয়ে মিটিয়ে নেয়, এই তার আনন্দ। মাঝে মাঝে এরই ফাকে দেখা যায় মা ডাকে তাকে তখন সে মায়ের কাজেও সাহায্য করে কিংবা ছোট বোনটাকে দেখে রাখে। সেই অনেক রাতে যখন গাড়ীর আনাগোনা কমে যায়, বেশীরভাগ লোকেরই যখন বাড়ী ফেরা শেষ তখন কর্মব্যস্ত দিন শেষে ছুটি আমেনারও, ফিরে যায় সারাদিনের পারিশ্রমিক নিয়ে সদর্পে মায়ের কাছে।

সখিনা, সখিনা বারান্দার গ্রীল ধরে আনমনে দাড়িয়ে থাকা সখিনার ভাবনার তার ছিড়ে যায় বিবিসাহেবের চিৎকারে। আজ কয়মাস হলো সখিনার খালা সখিনাকে এ বাড়ীতে এনে দিয়েছে এ বাড়ির ছোট বাচ্চাটাকে দেখাশোনা আর বাড়ির ছোটখাট ফাই ফরমাস খাটার জন্য। সাত / আট বছরের ছোট সখিনা এর আগেও এক বাসায় বাচ্চা রাখার কাজ করেছে। লিকলিকে রোগা পাতলা দেখতে হলে কি হবে? কাজে সে দারুন ভালো, বিবিসাহেবের ডাকের সাথে সাথে উড়ন্ত ঘূর্নি হয়ে সে উড়ে যায় তার কাছে, তাইতো বিবিসাহেবের ছোটমেয়ে খুব পছন্দ। বড়দেরতো নড়চড়তে সময় লাগে, ডাকের সাথে সাথে পাওয়া যায় না, বিবিসাহেবের সখেদ উক্তি। সখিনার কাজ করতে খারাপ লাগে না, বাচ্চার সাথে খেলা করার সময় বাচ্চার খেলনা দিয়ে সে নিজেও একটু খেলতে পারে, সাথে টিভিতে মজার মজার কার্টুন দেখে, পেট পুড়ে খাবার পায়, ভালো জামা-কাপড়, ফিতে-ক্লিপসহ নানা শৌখিন জিনিস পায় যা সে নিজের সংসারে কল্পনাও করতে পারে না। শুধু বাড়িতে রেখে আসা তার ছোট ভাইটার কথা যখন মনে পড়ে তখন বড্ড পেট পুড়তে থাকে। মা যখন বাড়ির বাইরে কাজে থাকত তখন সখিনার কাছেইতো থাকতো তার ছোট ভাইটা। মা না হয়েও মায়ের ভালোবাসায় আর যত্নে বড় করছিল ছোট ভাইকে সখিনা। কিন্তু মা বাবার দুজনের কাজের পরও পেট পুড়ে খেতে পারে না তাদের পুরো পরিবার, তাই সখিনার কাজে আসা। মাঝে মাঝে যখন সখিনার ফেলে আসা নীল আকাশ আর দিগন্ত জোড়া সবুজ মাঠের জন্য ভীষন মন কেমন করতে থাকে, এই বারান্দার গ্রীল ধরেই দাড়িয়ে আকাশ দেখে সে আর মনে মনে ফেলে আসা কাশবনে হারিয়ে যায়। কিন্তু সে ফুরসতও খুব কমই হয় সখিনার। খুব ভোরে উঠে ঘর ঝাট দেয়া দিয়ে দিন শুরু হয় সখিনার আর রাতে সবার খাওয়া শেষ হলে বাসন-কোসন মেজে ধুয়ে রেখে তবে ছুটি। সারাদিনে কতবার তাকে উপর নীচ দৌড়াদৌড়ি করে দোকানে যেতে হয়, ছাদে যেতে হয় কাপড় শুকোনোর জন্য তার কি কোন ইয়ত্তা আছে? দিনের শেষে পা যেনো আর চলে না সখিনার। তবুও এর মাঝেই আনন্দ খুজে নেয় সখিনার মন, ছাদে গেলে অন্য বাসার মেয়েদের সাথে দেখা হয়, গল্প হয়, মজার কথা নিয়ে হাসাহাসি হয়। বাসায় বাবুটাকে নিয়ে খেলে সে, গল্প শোনায় তাকে। ভাইয়ের কথা যখন অনেক বেশী মনে পড়ে তখন এই বাবুকেই অনেক বেশী আকড়ে ধড়ে অনেক আদর করে সখিনা। কিন্তু এ বাড়ির বড়বাবুটা যখন পুতুলের মতো কাপড় চোপড় পড়ে স্কুল যায় আসে, রঙ্গিন রঙ্গিন ছবি আকা বই নাড়ে চাড়ে, সুর করে রাইমস পড়ে তখন বুকের ভিতরটা তিরতির করতে থাকে সখিনার। কিন্তু সখিনাকে যে মাকে টাকা পাঠাতে হবে মাসের শেষে, পড়াশোনার বিলাসিতার কথা ভাবা কি তাকে সাজে? তাই যখন বড়বাবুর ঘর সে পরিস্কার করে, গোছায় তখন অনেক ভালোবাসা নিয়ে বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখে।

খুব সকালে খাবারের পুটলি বেধে নিয়ে মায়ের সাথে কাজে রওয়ানা হয় ছোট রহিমা। মা যোগালী দেয়, ইট টানে, পাথর ভাঙ্গে। মায়ের সাথে রহিমাও তাই করে তবে রহিমা ছোট বলে একসাথে অনেক ইট টানতে বা পাথর ভাংতে পারে না তাই রহিমার বেতন কম। কিন্তু রহিমাকে কাজ করতে হয় খুব মনোযোগ দিয়ে আর দ্রুত নইলে সর্দার (যে সামনে দাড়িয়ে কাজের তদারকী করে) খুব বাজে গালাগাল দেয় মাঝে মাঝে চড় - চাপড়ও দেয়। আট / নয় বছরের রোগা রহিমার কাজ করতে করতে দিনের শেষের দিকে হাত-পা ব্যাথা করতে থাকে, মাঝে মাঝে শরীর আর চলতে চায় না, কাতরাতে থাকে সে। রাতে শোয়ার পর অনেক সময় রহিমার মা রহিমার হাতে পায়ে তেল গরম করে মালিশ করে দেয়, রহিমার তখন খুব আরাম লাগতে থাকে। পয়সা বেশী পায় বলে যোগালী কাজ করে রহিমা আর তার মা কিন্তু এ কাজে এতো খাটুনী যে মাঝে মাঝে গায়ের ব্যথায় অসহ্য কোকাতে হয় তাদের মা বেটিকে। আধ ঘন্টা খাবারের ছুটি ছাড়াতো সারাদিনে কোন ছুটি নেই। দিন যেনো ফুরাতে চায় না রহিমার। সন্ধ্যে নামতে কেনো এতো দেরী হয় বুঝতে পারে না রহিমা, দুপুরের পর থেকেই সে আল্লাহর কাছে বলতে থাকে দ্রুত সন্ধ্যে করে দেয়ার জন্য যাতে বাড়ি ফিরতে পারে। রহিমা যখন মায়ের সাথে সকালে কাজে বের হয় তখন ওর বয়সী অনেক বাচ্চারাই তাদের বাবা মায়ের হাত ধরে নানারকম বায়না করতে করতে নাচতে নাচতে প্রজাপতির মতো স্কুলে যায় আর সেদিক তৃষিত নয়নে তাকিয়ে থাকে রহিমা। কিন্তু মায়ের তাড়া খেয়ে আবার দ্রুত পথ চলতে হয় রহিমার, সময়মতো কাজে না পৌছালে সর্দারের হাতে নাকাল হওয়াতো আছেই সাথে আবার পয়সা কাটা। শরীরটাকে দ্রুত তাড়িয়ে নিয়ে গেলেও মন তার উড়ে যায় সেসব প্রজাপতি বাচ্চাদের সাথে অন্যকোন ভুবনে, যে ভুবনে তার প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কল্পনা করতে চায় রহিমা কেমন হতো সে জীবন তার বই-খাতা হাতে নিয়ে? হয়তো একদিন সেও মাষ্টারনী হতে পারতো। রাস্তার শব্দ আর কাজের তাড়া তাকে সে কল্পনার পাখা অনেক দূর পর্যন্ত অবশ্য মেলতে দেয়া না, দ্রুতই ফিরিয়ে নিয়ে আসে তার নিজের জগতে। তবে কাজের জায়গায় ওর মতো আরো যে পিচ্চী যোগালী আছে তাদের সাথে দারুন ভাব আছে রহিমার। মাঝে মাঝেতো শুক্রবারে ওদের সাথে যেয়ে রহিমা বাংলা সিনেমাও দেখে আসে। তারপর সারা সপ্তাহ ধরে সব পিচ্চী যোগালীরা সেই সিনেমার নায়ক নায়িকা আর সিনেমার গান নিয়ে মজা করে হাসতে হাসতে এর তার গায়ে লুটিয়ে পড়ে, অবশ্যই সর্দার যেনো দেখতে না পায় সেভাবে। সারাদিনের কাজ শেষ করে বাড়ী ফিরে তারপর আবার সদাই এনে রান্না বসানো। এর ফাকেই গোসল আর অন্যান্য কাজ সেরে নেয়। মাকে রান্নায় সাহায্যও করে, খাওয়া দাওয়ার পাট চুকলে সব মায়ের সাথে গুছিয়ে সেই রাতে ছুটি হয় রহিমার।

সেই ভোর না হতেই নাকে মুখে রাতের বাসী দুটো গুজেই দুপুরের খাবারের বাক্স হাতে নিয়ে ছুটতে হয় শিল্পীর। সকাল আটটা থেকে ডিউটি শুরু হয় শিল্পীর বিকাল পাচটা পর্যন্ত কিন্তু বেশীর ভাগ দিনই ওভারটাইম করতে হয় বলে রাত আটটার আগে ছুটি পায় না। ওভারটাইম না করলে সুপারভাইজার রাগ করে, কাজ থেকে বের করে দেয়ার, বেতন কাটার হুমকি দেয় সারাক্ষন। এ লাইনে এখন এতো মেয়েদের ভীড় যে সুপারভাইজারকে চটাতে সাহস হয় না শিল্পীর। প্রতিদিনই প্রায় নতুন নতুন মুখ দেখা যায় ফ্যাক্টরীর গেটের কাছে, কাজের সন্ধানে গ্রাম থেকে চলে এসেছে। চাকরী চলে গেলে খাবে কি, সংসার চলবে কেমন করে তাদের? গার্মেন্টসে হাতের কাজ করে এখন শিল্পী, বড় হলে মেশিনে কাজ পাবে বলেছে সুপারভাইজার। এখন পিস হিসেবে টাকা দেয়, সারাদিন যে কটা কাপড় সেলাই করতে পারে তার উপরই তার বেতন নির্ভর করে। রোগা অপুষ্ট হাত নিয়ে তাই শিল্পী চেষ্টা করে যত দ্রুত সম্ভব যত বেশী কটা কাপড়ে বোতাম লাগাতে পারে। সাত / আট বছরের রোগাভোগা শিল্পীর সারাক্ষন কাপড় আর সুচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় বলে সন্ধ্যা না নামতেই ঘাড় আর দুচোখ ব্যাথায় টনটন করতে থাকে আর চোখ জূড়ে রাজ্যের ঘুম আস্তে চায়। কিন্তু ঘুম আসতে চাইলেইতো সুযোগ নেই, সারাদিন গার্মেন্টসের কাজ শেষ করে বাড়ী ফেরার পথে বাজার নিয়ে যেয়ে বড় বোনের সাথে রান্না বসায় শিল্পী, তারপর খেয়ে দেয়ে শুতে শুতে কখনও রাত এগারোটা আবার কখনও বারোটা। শিল্পীর বড়বোন মেশিনে কাজ করে, অনেক টাকা বেতন পায় তা দিয়ে তাদের ঘর ভাড়াটা হয়ে যায়। ফ্যাক্টরীতে কাজের ফাকে ফাকে শিল্পী অফিসে বসা আপা ম্যাডামদের মাঝে সাঝে যখন দেখে তখন ওর চোখ জুড়িয়ে যায়। মনে প্রশ্ন জাগে কি করে তারা এতো সুন্দর করে শাড়ী পড়ে, বসে, কথা বলে, চা খায়? শিল্পী জানে তারা অনেক পড়াশোনা করেছে, সাথে সাথে তার ছোট্ট মনে প্রশ্ন জাগে আহা আমি কি পারতাম না অনেক পড়তে? স্কুলে যেতেতো আমারও ইচ্ছা করে, আমারও ইচ্ছা করে এমন সুন্দর অফিস রুমে বসে কাজ করতে, আমারো ইচ্ছে করে- - - - এমনি আরো অনেক না বলা ইচ্ছেই শিল্পীর বুকের ভিতরে রিনরিন করে। কিন্তু শিল্পীর বাস্তব চেতনা জানে তাকে কাজ করে যেতে হবে তাদের পুরো পরিবারকে খেয়ে বেচে থাকতে হবে, এটাই শিল্পীর জীবনের চরম সত্য এখন। তবে এর ফাকেই মাঝে মাঝে শিল্পী একটু নিজেদের বস্তির মধ্যে পাড়া বেরিয়ে নেয়, সাথীদের সাথে গল্প গুজব করে, খেলার সময়তো আর হয় না তার, সারাটা দিনতো তার ফ্যাক্টরীতেই কেটে যায়। তবে গার্মেন্টসেও বন্ধু আছে শিল্পীর অনেক। অনেক সময় বেখেয়ালে হাতে সুই ফুটে গেলে কিংবা হাত কেটে গেলে তারা সুপারভাইজারের চোখ বাচিয়ে তাকে ডেটল লাগিয়ে দেয়, শরীর খারাপ লাগলে একটু বিশ্রাম নেয়ার ফাক করে দেয়। সারাদিনের একটানা কাজের ফাকে ফাকে তারাও গল্প করে, হাসে, মজা করে। মাঝে মাঝে শিল্পী ওদের সাথে শুক্রবারে বেরিয়ে সিনেমা দেখে আসে, শখের কেনাকাটা করে, আইসক্রীম খায়।

ঘুমের মধ্যেও যেনো আজকাল গানের শব্দ পায় রেনু, ঘুমোলেও আজকাল নাচের মাষ্টারমশায়কে স্বপ্নে দেখে সে। মাস্টারমশায় যেনো এক দুই তিন বলে নাচের প্র্যাকটিস করাচ্ছেন সব বাচ্চাদেরকে একসাথে, আর তারা সবাই ভীত মন নিয়ে প্র্যাকটিস করে যাচ্ছে। একটু ভুল হলেই গালাগালির সাথে আছে মার আর তার চেয়েও বড় ভয় হলো কাজ থেকে বের করে দেয়া। আর কাজ না থাকলে তারা খাবে কি? এমনিতেই তার স্বাস্থ্য খারাপ দেখে কাজ দিতে চায় না তাকে বেশী কেউ। সিনেমায়তো আর তার মতো রোগা পটকা চেহারার বাচ্চার তেমন দরকার হয় না, দরকার থাকে সুন্দর সুন্দর গোলগাল চেহারার বাচ্চাদের। কিন্তু নাদুস নুদুস চেহারা কোথায় পাবে রেনু? বন্যায় গ্রামে সব ভেসে যাওয়ার পর মা-ভাইয়ের হাত ধরে শহরের এই বস্তিতে এসে উঠেছে তাদের পুরো পরিবার। সবাই কাজ খুজেছে পাগলের মতো। একদিন বস্তির একজনের কাছেই জানতে পারল সিনেমার শুটিং এর জন্য বাচ্চা ভাড়া নেয়া হয়, সিনেমায় নাচের জন্য, দাড়িয়ে থাকার জন্য, একসাথে অনেক বাচ্চার প্রয়োজন হয় আর যারা এফ। ডি। সি এর গেটে আগে থেকে দাড়িয়ে থেকে প্রোডাকশনের লোককে কমিশন দেয় তারা কাজ পায়, যেতে পারে ভিতরে। তো একদিন সেই হদিসমতো রেনুর মাও সাত / আট বছর বয়সী রেনুর হাত ধরে এসে দাড়ালেন এফ।ডি।সির গেটে। প্রথমদিকে কদিন দাড়িয়ে থেকেও কোন কাজ পায়নি রেনু, লোকজনের ডাকাডাকি আর ধাক্কাধাক্কির ফাকে কোথায় উড়ে যেতো রেনু আর তার মা। এখন আস্তে আস্তে রেনুও লোক চিনে গেছে তাই মোটামুটি রেনুও কাজ পায়। সুন্দর জামাকাপড় পরে নাচ করা বাচ্চাদের সিনেমার পর্দায় দেখলে কারো রেনুদের কাঠফাটা রোদে আর গরমে সারাক্ষন দাড়িয়ে থাকার, প্র্যাকটিসের কষ্টের কথা কল্পনাও হয়তো করতে পারবে না। কিন্তু এখানের কাজে কমিশন দিয়েও ভালো পয়সা হাতে থাকে তাছাড়া রেনু যখন জুনিয়র থেকে সিনিয়র হবে তখন আরো অনেক বেশী পয়সা পাবে সেদিকটাও ভাবে। আর এখানে কাজের সুবাদে অনেক বড় বড় নায়ক নায়িকাকেও কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছে সেটাও কি কম কথা, যাদেরকে একজনর দেখার জন্য গেটের বাইরে হরহামেশা ভীড় লেগেই থাকে। বড় বড় গাড়ি হাকিয়ে অনেক বড় বড় লোক আসেন ষ্টুডিওতে, অনেক সময় তাদের সাথে থাকে ফুটফুটে সব বাচ্চা। সেসব গোলগাল ফুটফুটে বাচ্চারাই সিনেমার মেইন রোল পায়। রেনুরও বড্ড ইচ্ছে করে ঐসব গোল গোল সাহেব বাচ্চাদের মতো ফটফটিয়ে ইংরেজীতে কথা বলতে, বাবা-মায়ের কাছে নানারকম বায়না করতে, সিনেমার মেইন রোল করতে। কিন্তু কি করে হবে সব, তারাতো পড়াশোনা জানে, রেনু জানে না। কিন্তু পড়াশোনা করতে রেনুরও বড় সাধ মনে, হবে কি সেই সাধ পূর্ণ কখনও? সারাদিন রেনুর এই কোলাহলেই কেটে যায়, তবে ওদের মধ্যে যাদের চেহারা ভালো তারা অনেক সময় দু বেলাই কাজ পায় সেদিক থেকে রেনুর কপাল মন্দ বললেই হয়, দুবেলা কাজ খুব কমই পায় সে। কিন্তু তাই বলে সন্ধ্যে নামলেই রেনুর ছুটি হলো এ কথা ভাবার কোন কারণ নেই, বাড়ি ফিরে মাকে ঘরের সমস্ত কাজে সাহায্য করে, সব গুছিয়ে সেই রাতের বেলায় তার ছুটি হয়।

জরিনা, জরিনা চা নিয়ে আয়তো দু-কাপ। নার্সদের চিৎকার করে ডাকার বিরাম নেই আট / নয় বছরের জরিনাকে। জরিনা এ ক্লিনিকের সব ডাক্তার-নার্সদের ফুট ফরমাশ খাটে আর মায়ের সাথে সাথে ক্লিনিকের সাফ-সাফাই করে। মাঝে মাঝে রুগীদেরও ফরমাস খেটে দেয় সে আর তার বিনিময়ে পায় বখসীস। মায়ের আলাদা বখসীস আর তার আলাদা। জরিনার মা এ ক্লিনিকের আয়া। কাজে আসার সময় জরিনার মা জরিনাকে কোথায় রেখে আসবেন? তাই ছোটবেলা থেকেই সাথে নিয়ে আসতেন জরিনাকে এখানে। সেই থেকে এখন আস্তে আস্তে জরিনাও এই ক্লিনিকের এক অবিচ্ছেদ্য কর্মী হয়ে গেছে। সবার মুখে মুখে এখন সারাক্ষন তার নাম ঘুরে। সারাদিনে দম ফেলানোর সুযোগ নেই জরিনার। পাশের দোকান থেকে রোগীদের প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দাও, ডাক্তারদেরকে দফায় দফায় চা এনে দাও আবার মায়ের সাথে ক্লিনিক মুছতে হাত দাও। মাঝে মাঝে এই দৌড়াদৌড়িতে মাথা ঘুরতে থাকে তার মনে হয় এখুনি পড়ে যাবে। এতো দৌড়াদৌড়ির জন্যই স্বাস্থ্যটা খারাপ জরিনার। না কোন অসুখ নেই তার কিন্তু পাটকাঠি চেহারা। তার বয়সী বাচ্চা যারা ক্লিনিকে আসে তারা কতোই না ঝরঝরে স্বাস্থ্যের থাকে, আর সে হাড় জিরজিরে। তবে সবাই ভালোবাসে জরিনাকে, মাঝে মাঝেই হাতে দু / চার টাকা দেয় চকোলেট খাবার জন্য, কোন কোন ডাক্তার আঙ্কেল-আন্টি তাকে তাদের বাচ্চাদের পুরোন কাপড় এনে দেন বাড়ি থেকে আবার কেউ কেউ ঈদে নতুন জামা কেনার পয়সাও দেন। এই রোজ দিনের বিশ / তিরিশ টাকা একসাথে করে মাসের শেষে দেখা যায় অনেক টাকা হয়ে গেছে তার, এটাকা সে মায়ের কাছে দেয়। মা খরচ করেন কিংবা কিছুটা হয়তো জমান। না বাধা কোন বেতন নেই তার। ডাক্তার আঙ্কেল আন্টিদেরকে দেখতে কিই সুন্দর যে লাগে জরিনার। গলায় মালার মতো স্টেথিসকোপ ঝুলিয়ে কি সুন্দর করেই না গটগট করে হেটে যান তারা। কি মিষ্টি করেই না তারা কথা বলেন রোগীদের সাথে। জরিনারও খুব সাধ হয় স্কুলে যেতে অনেক পড়তে, তবেই না একদিন সে এমন করে সুন্দর গাড়ি থেকে নেমে এভাবে গলায় ষ্টেথিসকোপ ঝুলিয়ে রুগী দেখতে পারবে। মাকে কতোবার বলেও সে কথা, বায়না করে, ওমা আমিও স্কুলে যাব। মা ঝাঝিয়ে উঠেন বলেন খাওয়ার চিন্তা নেই তো স্কুল। বাস্তবকে অস্বীকার করতে পারে না, কি করবে জরিনা? তবে সে মাঝে মাঝে ক্লিনিকের দারোয়ান, ড্রাইভার, অন্য আয়াদের বাচ্চাদের সাথে খেলা করে, ক্লিনিকের সবার সাথে বসে টিভি দেখে। টিভি দেখতে জরিনার ভীষন ভালো লাগে। কি সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় পড়া ছেলে মেয়েরা কি সুন্দর করে নাচে, গান গায়। ফাক পেলে জরিনাও একা একা আপন মনে সেসব গান গুনগুন করে।

সারাঙ্গা তার ছোট ছোট হাতে ফুট ম্যাসাজ করতে করতে ক্লান্ত চোখ মেলে বাইরের দিকে তাকায়, আকাশ দেখে বুঝে নিতে চায় সন্ধ্যা হতে আর কতো দেরী। সকাল নটা থেকে রাত নটা পর্যন্ত কাজ করে সারাঙ্গা এই বিউটি পার্লারে। ছোট সারাঙ্গা দু বছর ধরে কাজ করছে এই বিউটি পার্লারে। সারাঙ্গার গ্রামের এক মেয়ে বিউটি পার্লারে চাকরী করতো তার সাথে দশ বছরের সারাঙ্গাও ঢাকায় চলে এসেছিল জীবনের খোজে। গ্রামের মেয়েটি সারাঙ্গাকে তার সাথে কাজে নিয়ে নেয় মালিককে বলে কয়ে। প্রথমে ছিল কাজ শেখার পালা তখন সারাঙ্গা শুধু থাকা আর খাওয়ার পয়সা পেতো। আস্তে আস্তে কাজ শেখার পর থেকে সারাঙ্গা এখন বেতন পাচ্ছে আর তা থেকে নিজের খরচ বাচিয়ে সে বাবা মাকে মাসে মাসে টাকা পাঠাতে পারে। সারাদিন অবিশ্রান্ত খাটতে হয় অবশ্য সারাঙ্গাকে এজন্য। ম্যাসেজ করতে করতে এক এক সময় হাত আর চলতে চায় না তার কিন্তু কাজে কোন ফাকি দেয়ার অবকাশ নেই। কাজের সামান্য একটু হেরফের হলেই কাষ্টমাররা ডিরেক্ট নালিশ করেন মালিককে আর শুরু হয় মালিকে বকাঝকা, মাঝে মাঝে অনেকের বেতনও কেটে নেন মালিক। অথচ এক সময় কতো স্বপ্ন ছিল সারাঙ্গার, অনেক অনেক পড়াশোনা করবে, বাবা-মায়ের দুঃখ ঘুচাবে, নিজে বড় হবে, নিয়মিত স্কুলে যেতোও সারাঙ্গা সেজন্য। পড়াশোনাও করতো মন দিয়ে কিন্তু প্রয়োজন সারাঙ্গাকে সে সুযোগ দিল না। নিষ্ঠুর অভাব সারাঙ্গাকে তার আগেই তার স্বপ্নের পথ থেকে ছিড়ে এই কঠিন বাস্তবে নিয়ে এলো। সপ্তাহে সাত দিনের সাত দিনই কাজ করতে হয় সারাঙ্গাকে। তবে মাঝে সাঝে যখন পার্লার কম ব্যস্ত থাকে তখন একবেলা কিংবা বা দু/তিন ঘন্টার ছুটি নেয় সারাঙ্গা। তখন দু / তিন জন সহকর্মী মিলে একসাথে ঘুরতে বের হয়, ঝালমুড়ি খায়, এটা ওটা টুকটাক বাজার করে বাড়ির জন্য, যখন বাড়ি যাবে নিয়ে যাবে সাথে। সারাদিন কাজের পর বাসায় যেয়ে সারাঙ্গা যখন টিভি দেখে তখন সারাঙ্গার খুব ভালো লাগে। সারাদিনের মধ্যে এই টিভি দেখার সময়টুকুই সারাঙ্গা নিজের জীবনের সব দুঃখ ভুলে যেয়ে আনন্দে মেতে উঠতে পারে অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে।

বিউটির বাবা পুকুরে পুকুরে মাছ ধরে সেগুলো ঘরে ঘরে যেয়ে বিক্রি করে প্রায় সারা বছর। আর গ্রামে যখন শীতকালে নদী, পুকুর, খাল শুকিয়ে আসে সেখানের কাদা-পানিতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় যা হাতে ঘেটে ঘেটে ধরা যায়, বিউটি তখনও তার বাবার সাথে সাথে, সামনে পিছনে থেকে বাবাকে সাহায্য করে। বাবা মাছ ধরে দিলে ঝাপিতে পুড়ে রাখে, কিংবা ডেকচিতে পানির সাথে জিইয়ে রাখে। কখনও কখনও বাবার সাথে মাছ ধরতেও নেমে যায় কাদা পানিতে। রোগা লিকলিকে দশ বারো বছরের হাড় জিরজিরে বিউটি বাবার সাথে কাজ হয়ে গেলে মাকেও ঘরের কাজে, পানি আনা, খড়ি আনাতে সাহায্য করে। মাঝে মাঝে স্কুলেও যায় সে, স্কুলের খাতায়ও নাম আছে, স্কুলে গেলে চাল পাওয়া যায় তাই যাওয়া। পড়াশোনা করার সময় ও সুযোগ কম, কিন্তু চালটা পেলে বেশ উপকার হয় সংসারে, তাই মাসে দু-চার দিন স্কুলে যেতেই হয়। রোদে তাতানো, বৃষ্টিতে ভিজানো শরীর বিউটির, শ্রী বলতে কিছুই নেই। আর কাক ডাকা ভোর থেকে যে জীবন কাদা পানিতে আরম্ভ হয়, তার আর কিই বা শ্রী বাকি থাকে? কাদা মাখা নোংরা পানি ঘেটে ঘেটে হাতে পায়েও অনেক সময় ঘা এর মতো হয়ে থাকে। তবুও এই শরীর নিয়েই বিউটি আগামী দিনের সুন্দর স্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্ন কেমন করে পূরন হবে তা বিউটি জানে না কিন্তু তবুও ওর কিশোরী মন একটি ছোট খড়ের ঘর, পেট ভরে খাওয়ার নিশ্চয়তার আশায় দিন গুনে। আর সেই স্বপ্নকে সফল করার জন্য তেজী টগবগে ঘোড়ার মতো দিনমান ছুটে চলে। মাঝে মাঝে আশে পাশের বাড়ির সমবয়সী মেয়েদের সাথে খেলা করে, বিভিন্ন পার্বনে মেলা হলে সেখানেও যায় বন্ধুদের সাথে, ছোট মাটির পুতুল কিনে এনে তাদের শাড়ি পড়ায়, সাজায় সাথে হয়তো আগামী দিনের কিছু স্বপ্নও আনমনে ভেসে যায় নিজের চোখে। আগামী একটি সুন্দর দিনের আকাংখাই হয়তো এই নিরানন্দময় কঠিন জীবনের বিউটিদের বাচিয়ে রাখে।

সুখী মধ্যবিত্তরা অল্প একটু সাংসারিক কাজ করলেই হাপিয়ে পড়ে, কাজের লোকের জন্য আশে পাশের চতুর্দিকে লোক লাগিয়ে খোজ করে, যতক্ষন লোক না পাওয়া যায় সংসারে চরম বিশৃংখলা সুদ্ধ, গৃহীনির মেজাজে অন্যদের বাড়ি টেকাই সাধারণত দায় হয়ে পড়ে। কাজের লোক থাকা সত্বেও রোজ দিনের এক ঘেয়েমি নিয়ম বদলানোর জন্য কিংবা নিয়মের ক্লান্িত কাটানোর জন্য ছুটি কাটানো, বেড়ানো থেকে আরম্ভ করে লোকে কতো কিনা করে। আর এই নিস্পাপ শিশুগুলি জীবন কি তা জানার আগেই যে কঠিন সংগ্রাম আরম্ভ করেছে তাদের বিশ্রাম কিংবা মুক্তি কোথায় হবে এবং কবে হবে? ক্লাশ এইট পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হলেও কজন বাচ্চা মেয়ে স্কুল পর্যন্ত পৌছতে পারে সংসারের এই সীমাহীন প্রয়োজনকে পাশ কাটিয়ে? শুধু শিক্ষা বাধ্যতামূলক আর অবৈতনিক করাই হয়তো সমস্যার সমাধান নয়। প্রয়োজন অর্থনৈতিক অবকাঠামো পরিবর্তনের যা এই সমস্ত নিয়ম পালন করার পরিবেশ তৈরী করবে। ১৯৫৪ সালের ১৪ই ডিসেম্বর জেনারেল এ্যাসেম্বলী নির্ধারণ করেছিলেন প্রতি বছর বিশ্বে একটি দিন ‘আন্তর্জাতিক শিশু দিবস‘ হিসেবে উদযাপন করা হবে। সেদিন শিশুদের সাথে বিশেষ ধরনের খেলাধূলা, বিভিন্ন রকমের ব্যাপার, নতুন নতুন ধারণা নিয়ে কথা বলা হবে। যে সমস্ত খেলা ও বিনোদন শিশুরা সবচেয়ে বেশী উপভোগ করে তার বন্দোবস্তও করা হবে। বড়দের সাথে শিশুদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করা হবে। শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য নানারকম মঙ্গলকর ও আনন্দদায়ক প্রকল্পের ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন সময় শিশুদেরকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ ও আইন প্রনয়ন করা হয়েছে, এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ২০শে নভেম্বর ১৯৫৯ সালের ‘শিশুর অধিকার আইন‘ যা ১৯৮৯ সালে আরো পরিশোধিত ও পরিবর্ধিত ও বস্তুনিষ্ঠ আকারে আসে। কিন্তু আজো তা পৃথিবীর সব শিশুর জন্য আসেনি। আইন পারেনি সব শিশুর অধিকার আর মুখের হাসি রক্ষা করতে। ২৩শে এপ্রিল ২০০৭ আন্তর্জাতিক শিশু দিবসে বিশ্বর সব শিশুদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই, সাথে এই আশাও রাখি শিশু দিবসের আনন্দ সব শিশুরা সমানভাবে উপভোগ করার সুযোগ পাবে। এই আনন্দ শুধু উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তের ব্র্যাকেট কিংবা এন।জি।ও দের বিশেষ কার্যক্রম আর টেলিভিশনের তাৎক্ষনিক প্রদর্শনীতেই বন্দী হয়ে থাকবে না। অযত্নে জন্মানো কুড়িকেও ফুল হয়ে ফোটার সুযোগ করে দিবে।


তানবীরা তালুকদার
১২।০৫।০৬

এই লেখাটি ২০০৬ সালের, কোথাও কখনো প্রকাশ হয়নি। আজ সন্ধ্যায় জিটকে ছোটবোন বললো কাল ইউনিভার্সেল চিলড্রেন্স ডে উপলক্ষ্যে সে গুলশান এক নম্বর সিগন্যালে ফুল বিক্রি করতে যাবে। এক হাজার বাচ্চাকে গুলশান ওয়ান্ডার ল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হবে। একদিনের জন্যে হলেও বাচ্চারা আনন্দ পাক, সবার জন্য শুভকামনা রইলো। অনেক খোঁজাখুজি করে হারিয়ে যাওয়া ভাবনাটা সবার সাথে ভাগ করলাম।