Wednesday 31 October 2012

আ-কি-হ



আ-কি-হ = আমি কি হলামরে হইলো মুই কি হনুরে এই রোগের মর্ডান ভার্সান। যাহাকে অন্তত জলিল ভাইয়ের ইংলিশে “সিকিং এটেনশন ডিসঅর্ডার” ও বলা হইয়া থাকে। আমরা অনেকেই এই রোগে অল্প বিস্তর আক্রান্ত। আজিকে ইহার লক্ষন ও প্রতিকার নিয়া আলোচনা করিবো প্রিয় পাঠকরা, ধৈর্য্য ধরিয়া বসুন, বিজ্ঞাপন বিরতিতেও টিভির রিমোট ঘুরাইবেন না। যাহা মিস করিবেন তাহাই মিস হইয়া যাইবে। মিসকে মিসেস করিবার আর সুযোগ পাইবেন না।

প্রাথমিক লক্ষনঃ ইনারা হার্ডকোর ফেবু ইউজার হইয়া থাকেন। ঘন্টায় ঘন্টায় স্ট্যাটাস আপডেট করিয়া থাকেন। কি খাইয়া কি অনুভূতি হইলো, ধরেন কোন দেশের শুটকী মাছ বিখ্যাত, সেই বিখ্যাত শুটকী পেটে পড়িবার পর শারীরিক ও মানসিক অনুভূতি ইত্যাদি ইত্যাদি। ইহাছাড়াও আছে, পৃথিবীর কোন জাতের ও প্রকারের কূল মিষ্টি কিংবা কাঁচামিঠা হয়, সবচেয়ে ভাল বেতফল পৃথিবীর কোন স্থানে জন্মে, স্থানভেদে ইহাদের প্রকারভেদ ও স্বাদভেদ ইত্যাদি তথ্য তাহার বন্ধুতালিকা তথা সাবস্ক্রাইবারদের জানাইয়া ধন্য করেন। কূল মুখে দিবা মাত্র যে অনুভূতি শরীর দ্বারা চালিত হইয়া মস্তিকে প্রবাহিত হয় তাহাই হয় সেই মূহুর্তের স্ট্যাটাস মানে হোয়াটস অন ইউর মাইন্ড। কূল আগে ভক্ষন করেন না স্ট্যাটাস মাথায় আগে সেট করা হয় তাহা জানিবার পদ্ধতি অবশ্য এখনো জুকারবার্গ সেট করিয়া উঠিতে পারেন নাই। ইনারা ক্রিকেট খেলা, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ মোবারক, শুভ বিজয়াতেও মূল্যবানবানীসহ শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস দিয়া থাকেন।

বিখ্যাত ও ব্র্যান্ডেড জিনিস ছাড়া তাহারা অন্যকিছু ভক্ষন করিয়া সময়, পয়সা ও শরীর কোনটাই নষ্ট করেন না। স্যালমন খাইবেনতো নর্থ সীতে যেয়ে ছিপ ফেলিবেন, উট খাইবেনতো সৌদির মরুভূমিতে যাইয়া রাখাল সাজিবেন, ফ্রান্সে যাইবেনতো লী মিউরিসে খাইবেন (Le Meurice), ইটালী যাইবেনতো ফরটুনাটো আল পানঠেওন (fortunato Al Pantheon), নিউইয়র্কে যাইবেনতো ফোর সীজন্সে খাইবেন। তাহারা আসন্ন শীতে কোন ব্র্যান্ডের জ্যাকেট কিনিবেন, জ্ঞান অর্জনের জন্যে কতো টাকার কি কি বই কোথা হইতে খরিদ করেন, কোন বুটিকের শাড়ি পড়েন, কোন তেলে তাহাদের কেশ এতো ঘন কালো রেশমি সবই জনসাধারনকে রীতিমতো জানাইয়া হেদায়েত করিয়া থাকেন। যাহাতে অবার্চীনেরা তাহাদেরকে ফলো করিয়া নিজেদেরকে লাইনে আনিতে পারে।

বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তির সাক্ষাত পাওয়ামাত্র ঝাপাইয়া পড়িয়া তাহার সহিত হাসিমুখে আর বিভিন্ন ইমারতকে জড়াইয়া ধরিয়া কাত হইয়া ফটো তুলিয়া ফেবুতে পোষ্টাইয়া থাকেন। কোথায় কোথায় নাটকের কিংবা চলচিত্রের শুটিং হইবে, কোন নেতানেত্রী বা উচ্চপদস্থ আমলা বিদেশ সফরে আসিতেছেন, কিংবা বিডি দল কোথায় কখন ক্রিকেট খেলিবে তাহার খোঁজ পাইবা মাত্র অন্যসকল কিছু মাথায় তুলিয়া দ্বিগবিদিক শূণ্য হইয়া সেইদিক পানে ছুটিবেন। ছবি তুলিয়া তুলিয়া ফেবু ভাসাইয়া তাহা সর্বসাধারনকে জানাইয়া আত্মপ্রসাদ লাভ করিবেন। হে হে হে দেখ এই যে আমিওওওওওওও। তাহাদের চিন্তা ভাবনা এইভাব নিয়া প্রকাশ হইবে যে, উহাই সর্বজনীন, ইহার আগে পরে পৃথিবীতে আর কোন মতামত থাকিতে পারে না, তিনি যাহা ভাবিয়াছেন তাহাই ঠিক – সঠিক – অত্যধিক। তিনিই সত্য তিনিই সর্বজনীন, তিনি তিনি তিনি, বাকি সব গুড়া গুড়া চিনি তথা বানের পানি।  

তাহারা সাধারনতঃ প্রেমিক প্রকৃতির হইয়া থাকেন। দুনিয়ার তাবদ জিনিসের প্রতি নিঃস্বার্থ প্রেমানুভূতি থাকে তিনাদের। শিল্পপ্রেমিক হইয়া থাকেন। শিল্পের বিভিন্নক্ষেত্র যেমন সঙ্গীত, ফটোগ্রাফি, চিত্রশিল্প, সাহিত্য ইত্যাদি ভালবাসেন। ইহা ছাড়াও তাহারা পশুপ্রাণী, জলবায়ু, পুষ্প, মানবতা ইত্যাদির প্রতিও নিখাঁদ প্রেম ধারন, লালন ও পালন করেন।

প্রতিকারঃ সাধারনতঃ নিরাময়ের অযোগ্য। দিনে দিনে এই রোগের প্রকোপ বাড়িতে থাকে। অনলাইন মনষ্টার হইতে অফলাইন মনষ্টারে রুপান্তরিত হন। ফেবুতে পাকনামি করিতে করিতে শেষে নিজের আশেপাশে শুরু করিয়া দেন। এক সময় শিকল দিয়া বাঁধিয়া রাখিবার প্রয়োজন পড়ে, ইলেকট্রিক শকে কাজ হয় না, উলটা মেশিন বিকল হইয়া যায়।

তানবীরা
০৪/০৯/২০১২

Tuesday 30 October 2012

দিন যায় কথা থাকে



নিয়মমতো অক্টোবরের শেষ রোববারে ঘড়ির কাটা ঘুরে গেলো। অফিসিয়ালি এখন হেমন্ত আর এখানে শীতকালীন সময়সীমা শুরু হয়ে গেলো। উত্তর গোলার্ধের খুব কাছের দেশগুলোতে নভেম্বর থেকে শুরু করে তারপর পুরো টানা প্রায় ছয় মাস অন্ধকারে লোকজন বাড়ি থেকে বেরোবে আবার অন্ধকারে বাড়িতে ঢুকবে। সূর্য্যি মামা শীতনিদ্রায় যাবেন। যদিও বিশেষ দিনক্ষন দেখে সূর্য মামা কখনো কখনো এখানে উঁকি দিবেন তবে সেটাও বয়ে আনবে দুঃসংবাদ। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় এরপরই বরফ পড়তে শুরু করে। সেই বরফে পড়ে যেয়ে কারো কারো হাত পা ভাঙ্গবে, আর প্যাচপ্যাচে কাঁদাতো আছেই। নিকষ কালো অন্ধকারের ভার সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ ডাক্তারের শরনাপন্ন হবেন, এন্টিডিপ্রেসন মেডিসিনের জন্যে। হিম হিম ঠান্ডা পড়ছে, তাপমাত্রা দুই অঙ্ক থেকে এক অঙ্কে নামা শুরু করেছে, মাঝে মাঝে রাতে শুণ্যের নীচেও নামছে।

শীতের আগমনে সেই কাঁচা খেজুরের রসের গন্ধ, ঠান্ডা খেজুরের রস খেতে খেতে সোয়েটার পরা গায়েও কেঁপে কেঁপে ওঠা, স্কুলের ফাইন্যাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার সুবাদে গ্রামে বেড়াতে যাওয়া,  সেই বেড়ানোকে উপলক্ষ্য করে গ্রামে সদ্য বন্ধুত্ব হওয়া নাম না জানা তুতো ভাইবোনদের সাথে ফসল ভরা জমিতে বেড়াতে যাওয়া। জমি থেকে টেনে তোলা শিশির ধোয়া ধনেপাতা দিয়ে তাজা কূল আর তেঁতুল মাখা ভর্তার গন্ধ, চারদিকে হলুদ সর্ষের চাদর বিছানো, কাঁচা সর্ষে শাকের গন্ধ, মাটি তোলা নতুন আলু আর মটরশুটি। জমি থেকে তুলে আনা টমেটো – ধনেপাতা দিয়ে ছোট মাছের চর্চরি। ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা আর পাখি শিকারীদের ভীড়। বন্দুক কিংবা এয়ারগান নিয়ে এদিকে একজনতো অন্যদিকে অন্যজন। তেল ভরা বালিহাঁস আর ভুনা খিচুড়ি।

গ্রাম্য সেসব তুতো ভাইবোনদের আজ আর নামও মনে নেই। সামনে দেখলেও কেউ চিনিয়ে না দিলে চিনবো কি না জানি না। অথচ সেসময় এই শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে আসা তুতো ভাইবোনদের মনোরঞ্জন করার কি চেষ্টাই না তারা করতো। নানুর বাড়ির আশপাশের বাড়িতে থাকা মায়ের কাজিনদের ছেলেমেয়ে ওরা। নানুর বাড়িতে থাকার সেই তিন চার দিনে তাদের সাথে খুব বন্ধুত্ব হয়ে যেতো। শ্যাওলা পড়া পুকুর ঘাট, গাছে গাছে জড়াজড়ি করে থাকা গ্রাম্য জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া এবড়ো থেবড়ো পায়ে চলা মেঠো পথ, এ বাড়ি ও বাড়ির আঙ্গিনা ডিঙিয়ে কোন মাঠে গিয়ে মিশেছে। সেই মাঠ আবার মিশেছে আকাশের সাথে। প্রত্যেক বাড়ির সামনে বিরাট বিরাট উঠোন, সীমের মাচা, লাউয়ের মাচা, পাশেই গরুর ঘর। কি শান্ত অলস যেনো পটে আঁকা ছবি। প্রায় শুকিয়ে আসা খালের পাড়ে বাঁধা নৌকা, মসজিদের পিছন দিকে জঙ্গল। ঐদিকে যেতে হয় না। জায়গাটা নষ্ট। সেখানে ওনারা থাকেন। তাদের রাগিয়ে দিলে আর উপায় নেই। রেগে গিয়ে কবে তিনারা জানি কার কার ঘাড় মটকে দিয়েছিলেন, পরে অনেক খোঁজাখুজি তাদেরকে পাওয়া গেছে মধ্য পুকুরের মাঝে বসা অবস্থায়। এগল্পটা যখন হচ্ছে, তখন নাম না জানা কিছু পাখি ডেকে উঠবে মাঝে মাঝেই। অতি প্রাকৃতিক সেই গল্পগুলোকে তখন পাখির গা ছমছমানো ডাকে সত্যি মনে হতে শুরু হবে।

পুরো পরিবেশটাই রোজকার জীবনের সাথে এতো অবাস্তব আর স্বপ্নসম যে মনে হয় সেখানে যে কারো সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যেতে পারে। বন্ধুত্ব করার জন্যে সামাজিক স্ট্যাটাস মিলানোর, স্কুল কিংবা ক্লাস মিলানোর, গান নাটক সিনেমার রুচি মেলানোর কোন দরকার পড়ে না। প্রাথমিক দ্বিধা কাটিয়ে যখন তাদের সাথে মিশে যেতাম, তখন গায়ে ধূলো মেখে, সেই পরিবেশে হাডুডু, দারিয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, বউচি, এক্কা দোক্কা খেলতে আর বাধো বাধো লাগতো না। গোল্লাছুটের সময় অন্য পক্ষের খেলোয়ারকে টানাটানি করতেও আর খারাপ লাগতো না, মাটিতে বসে পড়াটাও স্বাভাবিক লাগতো। সেই শীতেও ঘেমে নেয়ে লাল হয়ে উঠতাম এক একজন। নানুর বাড়ি থেকে আবার বাসায় ফিরে এলে দাদু আর আব্বু বলতেন, নানুর বাড়ি যেয়ে একেবারে “কালা” হয়ে ফিরেছি। এখন অবশ্য বুঝতে পারি, মাকে খোঁচা দেয়ার ব্যাপার হয়তো ছিল সেখানে। কিন্তু আমাদের কাছেতো সেই শীতেও কলাগাছের ভেলায় চড়ে পুকুরের পানিতে ঘন্টার পর ঘন্টা ঝাপাঝাপি করার আনন্দটাই মূখ্য ছিল, কে কাকে কোথায় খোঁচায়, তা দিয়ে আমাদের কি আসে যায়। ঢাকা এলে প্রথম কয়েকদিন গ্রামের খেলার সাথীদের কথা বেশ মনে পড়ত। তারপর নতুন বই, নতুন ক্লাশ আবার অতি দ্রুত ভুলে যেয়ে চেনা গন্ডীতে মিলে যেতাম। এই শীতের শুরুতে সেসব দিন খুব মনে পড়ছে। আহা সেই নাতিশীতোষ্ণমন্ডলের দিন এই কনকনে উত্তর গোলার্ধে আমি কোথায় পাবো? কিন্তু জনম জনম তারে আমি খুঁজিব।

তানবীরা
৩০/১০/২০১২

Wednesday 17 October 2012

শারদীয় শুভেচ্ছা



আহা আমার ছেলেবেলা ------- গ্রামের বাড়ি, দুর্গা পূজা, ঢাকের শব্দ, ঠাকুর দেখা, ক্ষীরের সন্দেশ, কলাপাতা ভোগ, শিশিরভেজা সকালের ঘাস মাড়িয়ে হাটা, শিউলি ফুলের মালা গেঁথে গেঁথে হাত রঙীন করা ------ কে আমাকে ফিরিয়ে দিবে? 


অনেকবার ফিরে ফিরে গেছি ছোটবেলা খুঁজে পেতে সেই সে ফেলে আসা জায়গায়। কিন্তু ছোটবেলা ছোটবেলার সাথে হারিয়ে গেছে। এখন ক্ষীরের সন্দেশের জায়গায় চলে এসেছে হরেক রকম নাড়ু আর লাড্ডু। কলাপাতার ভোগ চলে গিয়ে নানা জাতের বাসন, শিউলি ফুলের গাছ অনেক অংগনেই খুঁজে পাওয়া দায়। গ্রামের বাড়ি তার গ্রাম্যতা হারিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়ার পেতে উঠতি বয়সের চঞ্চলা সদ্য শহরে আসা কিশোরীর ন্যায় যেনো। যে সব আধুনিকতা এখনো রপ্ত করে উঠতে পারেনি কিন্তু চেষ্টায় আছে। 



ছবি কৃতজ্ঞতাঃ তারেকুল ইসলাম



তানবীরা
১৭/১০/২০১২