Wednesday 30 December 2020

সাতশো পয়তাল্লিশতম জন্মদিনে আমস্টারডাম

https://bangla.bdnews24.com/kidz/article1842666.bdnews?fbclid=IwAR34g75EqjGlHKeBl2HbwxSYwsyXdGaxMvWP_nDnbN7sjBHctlwO5_zZztY সাতশো পয়তাল্লিশতম জন্মদিনে আমর্স্টাডাম – ওলন্দাজ রাজধানীর গৌরবজ্জল ইতিহাস শত শত বছরের বিস্তৃত ইতিহাস সহ সংস্কৃতিতে পূর্ণ একটি ছোট শহরের নাম, আমস্টারডাম। আজও শহর ঘুরলে, প্রতিটি রাস্তার কোণে, প্রতিটি স্কোয়ারে আপনাকে অবাক করে দেয় এমন সমৃদ্ধ ইতিহাসের মুখোমুখি হওয়া আপনি এড়াতে পারবেন না। আমস্টারডামের অত্যন্ত মনকাড়া সাতশো পয়তাল্লিশতম জন্মদিনের সম্মানে, আসুন ইতিহাসের যে ঘটনাগুলি আজকের শহরটিকে তৈরি করেছে তা একবার দেখে নেওয়া যাক। আমস্টারডামের উৎস বারোশো পঁচাত্তর সালে যখন আমস্টেলের কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষকে জল পথে অবাধে যাতায়াত করতে দেয়ার তথাকথিত টোল সুবিধা দেওয়া হয়েছিল সেই ইতিহাসে আমস্টারডাম শহরের নামটি প্রথম খুঁজে পাওয়া যায়। এর প্রায় ত্রিশ বছর পরে, তেরশো কিংবা তেরশো ছয় সালে - সঠিক তারিখ খুঁজে পাওয়া যায়নি - আমস্টারডামকে সরকারী শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। চৌদ্দ শতকের গোড়ার দিকে আমস্টারডামের দ্রুত বিকাশ ঘটে। প্রথম চার্চটি প্রায় তেরশো সালের কাছাকাছি সময়ে নির্মিত হয়েছিল, যা “আউডে কের্ক” নামে এখন কেন্দ্রীয় আমস্টারডামের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, আমস্টেলোভার নদীতে একটি বাঁধ নির্মিত হয়েছিল, যেখানে ড্যাম স্কয়ারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এখন দাঁড়িয়ে আছে (তখন এটি প্লেটিস নামে পরিচিত ছিলো)। আমস্টারডামের বাণিজ্য ও অর্থনীতি পনেরশো তেতাল্লিশ সালে নেদারল্যান্ডসের একীকরণের পরে, আমস্টারডাম শহরটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল, এটি এমন এক শহরে পরিণত হয়েছিল যেখানে উত্তর ও দক্ষিণ উভয় ইউরোপের পণ্য সংরক্ষণ করা, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিক্রি করা হতো। এই উন্নয়নশীল বানিজ্য সংস্থা মানচিত্রাঙ্কন, মুদ্রণ, ব্যাংকিং এবং বীমাসহ বিভিন্ন শিল্প গুনে সমৃদ্ধ ছিলো। এই বাণিজ্যের ফলে এই শহরটির প্রভূত অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছিল এবং ষোড়শ শতাব্দীতে আমস্টারডাম হল্যান্ড প্রদেশের বৃহত্তম শহর হয়ে উঠেছিল – পনেরশো আশি সালে এই শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ত্রিশ হাজার। ডাচ স্বর্ণযুগ পঞ্চাশ শতাব্দীর শেষের দিকে, নেদারল্যান্ডস পন্য ও ক্রীতদাসের উপনিবেশিক ব্যবসায় জড়িত হয় এবং পনেরশো সালে দেশটি তাদের নিজস্ব বাহন ইন্ডিজে পাঠানো শুরু করে - এই প্রথম আমস্টারডাম থেকে ইন্ডিজে যাত্রা শুরু হয়। নেদারল্যান্ডসের পক্ষে ডাচ ইস্ট ইন্ডিজের যাত্রা আর্থিকভাবে প্রচুর সফল হয়েছিল এবং ষোলশ দুই সালে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (ভিওসি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভিওসি'র মূলধনের অর্ধেকেরও বেশি অংশ ছিলো আমস্টারডামের এবং এর ফলে কোম্পানির মধ্যে তারা উল্লেখযোগ্য শক্তি অর্জন করেছিল। ষোলশ একুশ সালে ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়া সংস্থা (ডব্লিউআইসি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এবং ডাচ দাস ব্যবসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, সব মিলিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে দেশের উন্নয়নে অবদান রেখেছিল। আমস্টারডাম এবং স্বর্ণযুগ এই উদীয়মান বাণিজ্য শিল্প এবং ক্রীতদাস ব্যবসায়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ আমস্টারডামের জন্য প্রচুর লাভের সঞ্চার করেছিল, সপ্তদশ শতাব্দীর ইতিহাসে এটি ডাচ স্বর্ণযুগ নামে খ্যাত। ঐ সময়টাতে এই নগরীতে সম্পদ, শক্তি, সংস্কৃতি এবং সহনশীলতার স্রোত বয়ে যায়। আমস্টারডামে নর্ডকের্ক এবং ওয়েস্টকের্ক সহ বেশ কয়েকটি নতুন প্রোটেস্ট্যান্ট গীর্জা নির্মিত হয়েছিল এবং একটি নতুন সিটি হল তৈরি হয়েছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতেও এই শহরটি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছিল এবং বর্তমানের কুখ্যাত খাল বেল্ট এবং জর্দান অঞ্চলটি নির্মিত হয়েছিল। সেই সময় থেকেই আমাদের আজকের পরিচিত আমস্টারডাম তার এই আদল নিতে শুরু করে। নেদারল্যান্ডসের বিদ্রোহ এবং গণতন্ত্র সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে স্বর্ণযুগের অবসান হওয়ার পরে, দেশপ্রেমিক হিসাবে পরিচিত একটি গোষ্ঠী, শাসক বংশোদ্ভূতদের দুর্নীতির অবসানের দাবি করেছিল এবং সতেরশো পঁচানব্বই সালে ফ্রান্স থেকে নেদারল্যান্ডসে ফিরে এসে নেদারল্যান্ডসকে দখল করে তারপর আমস্টারডাম শহরের সরকারকে বদলে স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগ করে এবং পুরো শহর এবং প্রজাতন্ত্রের কাছে গণতন্ত্রের ধারণা প্রবর্তন করে। তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, আঠারশো পনের সালে, ডাচ যুবরাজ উইলাম রাজার মুকুট গ্রহণ করেছিলেন এবং আঠারশো আটচল্লিশ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র হওয়ার আগে দেশটিতে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রবর্তিত হয়েছিল। আমস্টারডামের শিল্পায়ন আমস্টারডাম তখনও বিদ্রোহের কারণে দারিদ্র্য পর্যুদস্ত ছিল, কিন্তু শহরটি শিল্পায়নের দিকে চলে গেলো। এই সময়, আমস্টারডাম এবং ডেন হেল্ডারের মধ্যে নর্থ হল্যান্ডের খালটি নির্মিত হয়েছিল, শহরটির প্রধান বন্দরটিকে পলির হুমকির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে সুয়েজ খাল খোলা এবং জার্মানির একীকরণ সহ ঘটে যাওয়া উন্নয়নের ঘটনাগুলিতে ডাচদের রাজধানীতে আবার সমৃদ্ধি ফিরে আসে। আঠারশো ছিয়াত্তর সালে উত্তর সমুদ্র খাল খোলার ফলে আমস্টারডামকে সমুদ্রের সাথে সরাসরি সংযোগ দেওয়া হয়েছিল এবং আঠারশো উননব্বই সালে আমস্টারডাম তার সেন্ট্রাল প্রতিষ্ঠা করে একটি বিস্তৃত রেল যোগাযোগ স্থাপন করে। বিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত এই শহরের উন্নয়ন ও প্রসার অব্যাহত ছিল, এবং উনিশো ষোল সালে স্কিপলে ছোট একটি বিমানবন্দর খুলে আমস্টারডাম আরও প্রসারিত হয়েছিল। শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি নয়শ হেক্টরের বন তৈরি হয়েছিল, যা আমস্টারডাম বোস নামে পরিচিত, এবং তবে শেষ কিন্তু সর্বশেষে নয়, আমস্টারডাম শহর জুড়ে চৌদ্দটি ভেন্যুতে উনিশো আটাশ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আয়োজন করেছিল, যার বেশিরভাগ চিহ্ন পরে ধ্বংস করা হয়েছে। আমস্টারডাম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদিদের উপর অত্যাচারের ফলে আমস্টারডাম এর দশ শতাংশ জনসংখ্যা হারায় যদিও এই শহরটি পুরো যুদ্ধ জুড়ে ব্যাপক পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে যথেষ্ট ভাগ্যবান ছিল, তারপও এটি জার্মানদের দখলে চলে যাওয়ার পরে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে মিত্রবাহিনীর ভুল দিক নির্দেশনার বোমা হামলায় ক্ষত বিক্ষত হয়েছিলো। উনিশো চুয়াল্লিশ সালের সেপ্টেম্বরে আর্নহেমের যুদ্ধে পরাজয়ের পরে, উনিশো চুয়াল্লিশ থেকে উনিশো পয়তাল্লিশ সাল পর্যন্ত নেদারল্যান্ডস ক্ষুধার্ত শীত নামে পরিচিত ছিলো। ফলস্বরূপ আমস্টারডামে অগণিত মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। উনিশো পয়তাল্লিশ সালের পাঁচই মে, জার্মান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে, এবং আমস্টারডাম সাতই মে তাদের মুক্তি উদযাপন করেছিল। যদিও উৎসব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, বেশ কয়েকটি জার্মান সৈন্য ড্যাম স্কয়ারে হামলা চালিয়ে গ্রোট ক্লাব (দি বায়েনক্রোফের) বিপরীত দিক থেকে গুলি চালিয়েছিল এবং কয়েক ডজন আমস্টারডামারকে হত্যা করেছিলো। যুদ্ধোত্তর: বিংশ শতাব্দীতে আমস্টারডাম যুদ্ধের অবসানের পরে, শহরটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে, বন্দর এবং স্কিপল বিমানবন্দরের দিকে মনোনিবেশ করে এবং আধুনিক সময়ের ট্র্যাফিক এবং পরিবহন ব্যবস্থার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। ফলস্বরূপ, আইজে টানেলটি নির্মিত হয়েছিল এবং একটি মেট্রো নেটওয়ার্ক এবং আমস্টারডাম রিং তৈরি করা হয়েছিল। শহরের দক্ষিণ-পূর্বে বেলমেমার সহ নতুন আবাসিক পাড়াগুলিও নির্মিত হয়েছিল। আমস্টারডাম শহর তার পরিচয় নিয়ে লড়াই করছিল, মূলত আবাসিক রাজধানী বা অর্থনৈতিক ও আর্থিক কেন্দ্র কি হবে এটির পরিচয়, তা নির্ধারণ করতে অক্ষম ছিল। যাহোক, উনিশো ষাটের দশকে, এটি একটি উন্নত আবাসিক জায়গা হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিল এবং বাইরে থেকে এই শহরে আসা যুবসংস্কৃতির বিস্ফোরণ আমস্টারডামকে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন করেছিল। উনিশো আটাত্তর সালে পৌরসভা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে আমস্টারডামকে আবাসিক শহর হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। উনিশো আশি থেকে উনিশো নব্বইয়ের দশকে, স্থানীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধার শুরু হয়। যদিও শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহাসিকভাবে আবাসিক কার্যক্রম ছিলো কিন্তু শহরের উপকণ্ঠে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অফিসকে স্বাগত জানানো হয়েছে। শহরের দক্ষিন প্রান্ত ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছিল এবং আমস্টারডাম ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিল, উনিশো তিরানব্বই সালের মধ্যে স্কিপল ইউরোপের পঞ্চম বৃহত্তম বিমানবন্দরে পরিণত হয়। উনিশো চুরাশি সাল থেকে, পড়াশোনা করতে বা কাজের সন্ধান করতে শহরে আসা তরুণদের হিসাবে আবারও বাসিন্দাদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আবাসন সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রয়াসে শহরটির আরও বিস্তৃতি ঘটে। নব্বইয়ের দশকে, আমস্টারডাম ইস্টের বন্দরটি একটি আবাসিক এলাকায় রূপান্তরিত হয়েছিল, যা বর্তমানে জেইবার্গ নামে পরিচিত, এবং অন্যান্য আবাসিক অঞ্চলগুলি (অথ্যার্ৎ বেলমেমেয়ার এবং জেইডাইক) বসবাসের জন্য আরও আকর্ষণীয় ভাবে সংস্কার করা হয়েছিল। আধুনিক আমস্টারডাম এবং ডাচ রাজধানীর ভবিষ্যত গত পঁচিশ বছর ধরে আমস্টারডাম অর্থনীতির বিকাশ অব্যাহত রেখেছে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। শহরটি নেদারল্যান্ডসের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে রয়ে গেছে এবং প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটককে স্বাগত জানিয়ে এটি একটি মূল পর্যটন কেন্দ্র হিসাবেও পরিণত হয়েছে। আবাসন ঘাটতি এবং বাড়ির দাম বাড়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া, এবং শহর ও এর বাসিন্দাদের উপচে পড়া পর্যটকদের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগের কারণে এখন শহরটি ভবিষ্যতে কী হবে তা নিয়ে সকলে উদ্বিগ্ন। আমস্টারডামের মেয়র, ফেমেক হালসেমা এবং পৌরসভা, শহরের কেন্দ্রস্থলের বাসিন্দা এবং স্থানীয়দের সাথে নিয়ে আমস্টারডামকে আবারও একটি "সত্যিকারের শহর কেন্দ্র" হিসাবে গড়ে তোমার বিকল্পগুলি অনুসন্ধান করছে। মূলঃ ভিক্টোরিয়া সিভানো ভাষান্তরঃ তানবীরা তালুকদার ২৪/১২/২০২০ https://www.iamexpat.nl/expat-info/dutch-expat-news/amsterdams-745th-birthday-brief-history-dutch-capital?fbclid=IwAR2cfNNwGay-mTKZw0Eb3LyC18ywzbnl7wgapFxykxoJ_-m5UWSoM_78jkg

Friday 18 December 2020

#এনআনসেন্টলেটারটুমাইডিয়ারেস্টডটার ---- পার্ট থ্রি

প্রত্যেকের জীবনের হিসাব আলাদা, চাওয়া-পাওয়া আলাদা। আমার জন্যে, আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় রূপ "মা হওয়া"। আজও আমি এটাকেই জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অংশ হিসেবে অনুভব করি। আমরা যখন খুব আদর আদর মুডে থাকি তখন তোমাকে আমি বলি, হাজার বছরের পরমায়ু হোক তোমার, তুমি আগে এর মানে বুঝতে না, এখন একটা পাকা হাসি হেসে বলো, আমি টু ওল্ড হয়ে যাবো, ওটা আমি চাই না। তাই বলি, এই পৃথিবীর রূপ,রস,গন্ধ নিয়ে, যেখানে, যেভাবে, যে অবস্থায়ই থাকো, প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দ নিয়ে বাঁচো। সার্থক হোক এই বেঁচে থাকা। নাইদার এম আই আ পার্ফেক্ট মাদার নর ইউ আর আ পার্ফেক্ট ডটার তারপরও "শক্তির অবিনশ্বরতার" সূত্র মেনে যদি আবারও মেয়ে হয়ে পৃথিবীতে আসি, আমি তোমাকেই প্রতিবার আমার সন্তান হিসেবে চাইবো। আমি তোমাকে বকা দিলে তুমি মাঝে মাঝে মন খারাপ করে বলো, আই নো মামা, ইউ ডিজার্ভ বেটার চাইল্ড। লেট মি টেল ইউ ওয়ান থিংগ মাই বেবি, তুম সে আচ্ছা তো কোই হোয়ি নেহি সাকতা। সামটাইমস মামি’স আর মীন টু। মামিদেরকেও অনেক পেশেন্স রাখতে হয়, বাচ্চাদের ওতো বকা দিতে হয় না, ইউ নো। এই যে সন্ধ্যেবেলা আমার মাঝে মাঝে সোফা থেকে উঠতে ইচ্ছে না হলে, তোমাকে এটা ওটা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে ওপর থেকে জিনিস আনাই, এসব হলো মীননেস। বাট, আরভিন ভাইয়ার মত বলি, “ইট ইজ হোয়াট ইট ইজ” এন্ড ইটস নট দ্যাট ব্যাড। আচ্ছা এর পরের জন্মে আমরা কি হবো? পাখি হবো? ঐ নীল আকাশে ডানা ঝাপটে ওড়াওড়ি করে কেটে যাবে দিন? এখন তোমায় আমি হাতে তুলে খাইয়ে দেই, তখন ঠোঁটে তুলে খাইয়ে দেবো। অবশ্য তুমিও আমার মা হতে চাও, সেটা একটা বিরাট সমস্যা দেখা দেবে, কে মায়ের রোল প্লে করবে। তবুও জন্ম জন্মাতর মা-মেয়েতে, মেয়েতে-মায়েতেই যাক আমাদের, কি বলো? জন্মদিন আনন্দময় হোক মা আমার। কলিজা পাখি - সোনা পাখি, ভালবাসি তোমাকে, তুমি জানো আমি জানি তবুও বলতে ভাল লাগে তাই বলি, বারবার বলি। ***আই গেস, দিজ লেটার ইজ নট আনসেন্ট এনিমোর, ফেবুর ট্রান্সলেশানে ফেলে, আমার ফেবু ঘেটে তুমি পড়েই ফেলবে, কি বলো?” ইউ সি, মামিস রিমেইন মামিস ❤ ***

Thursday 17 December 2020

ইউরোপে কেন বাংলাদেশ অনুপস্থিত

https://www.prothomalo.com/business/world-business/%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6-%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%AA%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BF%E0%A6%A4 ভাষা, শিক্ষা, শিল্প, কৃষি, সংস্কৃতির এত প্রাচুর্য থাকা সত্বেও ইউরোপে কেন বাংলাদেশের চোখে পড়ার মত কোন অস্ত্বিত্ব নেই? কখনও কি এই দুই প্রান্তের চাহিদার সমন্বয় করার চিন্তা বা চেষ্টা হয়েছিলো? ইউরোপ বাংলাদেশে কি চাইতে পারে? কিংবা বাংলাদেশের কি চাহিদা থাকতে পারে তাদের কাছে? বানিজ্য? টাকা? ধরা যাক, তাই, কিন্তু সেটার প্রক্রিয়া কি ধরনের হওয়া উচিত? যেকোন ধরনের উন্নতির জন্যেই দরকার উন্নত কাঠামো আর সেজন্য চাই উন্নত প্রযুক্তি। প্রযুক্তির ওপর একবিংশ শতাব্দী দাঁড়িয়ে আছে, নিজেদের টিকে থাকার সার্থেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আমদানী করা দরকার। নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ীরা প্রায়ই অভিযোগ করে থাকেন, তারা তাদের জ্ঞান, চিন্তা, প্রযুক্তি নিয়ে বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছুক ও প্রস্তূত কিন্তু তারা আস্থাভাজন অংশীদার খুঁজে পান না। তাদের এত আগ্রহের কারণ কি? না, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্যে নেদারল্যান্ডসের কোন প্রেম ভালবাসা কাজ করছে না। ভৌগলিক দিক থেকে বিনিয়োগের জন্য এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে আর সেটাই তাদের লক্ষ্য। প্রতিটা দেশের বিনিয়োগ বিস্তৃত করার একটি লক্ষ্যমাত্রা থাকে, আপাতত সেই মাত্রার অভ্যন্তরে বাংলাদেশের অবস্থান। তারা লাভজনক বিনিয়োগে আগ্রহী। এতো গেলো নেদারল্যান্ডসের দিক। নেদারল্যান্ডস মানেই বুঝি আমরা পোল্ডার, ডাইক আর আলু। তাহলে বাংলাদেশ কেন নেদারল্যান্ডসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী হবে? আমরা কি জানি আয়তনে বাংলাদশের প্রায় তিন ভাগের একভাগের সমান হলেও নেদারল্যান্ডস এই বিশ্বের ষোলতম অর্থনীতি। নেদারল্যান্ডসের মত একটি ছোট্ট দেশে পচাঁশি রকমের টমেট্যো উৎপন্ন হয়, পাঁচশো পঞ্চাশ রকমের উৎপন্ন হয় আলু। দু হাজারের ওপর ভিন্ন রকমের হিয়াসিন্ট ফুলের চাষ হয়। পেয়াজের জন্যে ক’দিন পর পর আমাদের ভারতের মুখাপেক্ষী হতে হয় কিন্তু নেদারল্যান্ডস পেয়াজ রপ্তানী করে। ক’দিন আগে বাংলাদেশও নেদারল্যান্ডস থেকে পেয়াজ আমদানি করেছে। পেয়াজ আমদানী না করে পেয়াজ ফলানোর প্রযুক্তি আর উন্নত প্রজাতির পেয়াজ বীজ আমদানী করলে কেমন হয়? আজকের যুগের চাহিদাতো টাকায় বা পন্যে আটকে থাকতে পারে না, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো প্রযুক্তির। ভৌগলিক দিক থেকে বাংলাদেশের সাথে নেদারল্যান্ডসের অসাধারণ সাদৃশ্য রয়েছে, বাংলাদেশের ডেল্টা প্রজেক্ট নেদারল্যান্ডস তদারকি করছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এ বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডস প্রায় সম পরিমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অন্যান্য জাতীয়তার সাথে কাজ করছেন বাংলাদেশ থেকে আসা প্রযুক্তিবিদরাও। নেদারল্যান্ডসের সাথে কাজ করার জন্যে এর চেয়ে বেশি কারণ কি বাংলাদেশের প্রয়োজন আছে? প্রযুক্তি আমদানী ও বিনিয়োগ সমন্বয়ের লক্ষ্যে নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের দায়িত্বশীল ব্যবসায়ীদের নিয়ে, দি হেগে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যেগে প্রথমবারের মত ডিসেম্বরের আট আর নয় তারিখে ভার্চুয়ালি হয়ে গেলো, “বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ইনভেস্ট সাম্মিট টুয়েন্টি টুয়েন্টি।“ এতে অংশ নেয় ডাচ বিনিয়োগ সংস্থা আরভিও, আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশগ্রহন করে বিজিএমইএ, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, সিসিসিআই, স্কয়ার বাংলাদেশ, আকিজ গ্রুপ, প্রান আরএফএল গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, কাজী গ্রুপ, পিএইচপি, বিডা, বেজা, বেপজা সহ আরও অনেকে। বাংলাদেশের চাহিদা ছিলো কৃষি, হালকা প্রকৌশল আর সমুদ্র সম্পদের ব্যবহারে নেদারল্যান্ডসের সাহায্য। সে অনুযায়ী সম্মেলনটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিলো, ভার্চুয়াল এই সম্মেলনের কৃষি পর্বে দুশো একত্রিশ জন উপস্থিত ছিলো, লাইটিং এ একশোজনের কিছু ওপরে আর পানি সম্পদে একশো ত্রিশজন। সম্মেলন চলাকালীন সময়ে মন্তব্য বিভাগ ছিলো বাংলাদেশীদের উচ্ছসিত মন্তব্যে ভরপুর, যা ডাচ ব্যবসায়ীদের উৎফুল্ল করেছে। বাংলাদেশের ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কি করে এসব ডিজেল চালিত নৌকায় খরচ বেশি আর সাথে নদী ও পরিবেশ দূষন হচ্ছে তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হলো। ডাচ বিশেষজ্ঞরা নৌকার আকৃতি ও ডিজাইনে পরিবর্তন আনা সহ ডিজেল থেকে এলপিজিতে রুপান্তরের পরামর্শ দিলেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নদী ব্যবস্থায় দ্রুততম বেগে চলা রেল আর রাস্তার সংযোজনের পরিকল্পনা ডাচ ব্যবসায়ীদের জন্যে দক্ষ ও আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার সুযোগ হতে পারে। DAMEN, IHC এর মতে, বাংলাদেশ সরকার এবং বেসরকারী পর্যায়ে যত ড্রেজার আছে এখন তার চেয়ে অনেক বেশি ড্রেজার বাংলাদেশের প্রয়োজন। শহর জুড়ে মানসম্পন্ন পরিশোধিত পানি সরবরাহ করার ব্যবস্থা, শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য পানিকে পরিশোধিত করে পুনরায় ব্যবহার, একশোরও বেশি রকমের দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে মাছের জিন অন্বেষণ এমনকি ওমেগা থ্রিতে ভরপুর ইলিশ কি স্যামনের জায়গা নিতে পারে ইত্যাদি আরো বহু সম্ভাবনার কথা। বাংলাদেশে নিযুক্ত ডাচ রাষ্ট্রদূত হ্যারি ফেরওয়াই এক ভিডিও বার্তায় এই উদ্যেগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “ গত পঞ্চাশ বছর ধরে নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের পাশে আছে, বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের সাথে যেমন বানিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করতে চায় ঠিক তেমনি নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের সাথে বানিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি চায়। ডেনহাগে অপেক্ষা করে আছে বাংলাদেশে দূতাবাস আর ঢাকায় অপেক্ষা করে আছি আমি, যেকোন প্রয়োজন, প্রশ্ন, তথ্যের জন্য সরাসরি আমাদেরকে যোগাযোগ করুন। ব্যবসার জন্যে বাংলাদেশ হলো পরবর্তী এশিয়ান বাঘ, বাংলা বাঘ। বাংলাদেশের এখন শুধু ভাল প্রচার দরকার। এই সম্মলেনের বেশীর ভাগ অংশগ্রহনকারী ডাচ, তাই যখন কোভিড উনিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে আবার ভ্রমণের সুযোগ হবে তোমাদের সবাইকে দু হাজার একুশে আমি ঢাকায় আমন্ত্রণ জানাতে চাই।“ অনেকেই হয়ত বলতে পারেন এই সম্মেলন থেকে নগদ কি পাওয়া গেলো? না, নগদ নগদ কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়নি। দুই প্রান্তের সেতু বন্ধন করে দেয়া ছিলো সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্যে। এখন থেকে প্রতি বছর এই সম্মেলন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আস্তে আস্তে এই পরিকল্পনা ওয়ান টু ওয়ান বিজনেস, বিজনেস টু বিজনেসে নিয়ে যাওয়াও পরিকল্পনার অংশ। বড় লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে অনেক বড় প্রস্তূতির দরকার হয়। এই সম্মেলন তার সূচনা করেছে। আশাকরা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরী হয়ে যাবে। তানবীরা তালুকদার ১৩/১২/২০২০

Monday 14 December 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক - চৌদ্দই ডিসেম্বর

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক - চৌদ্দই ডিসেম্বর গায়ে হলুদ, নবান্ন উৎসব, বইমেলার আয়োজনে ব্যস্ত বাংলাদেশ আর ইউরোপ ক্রিসমাসে পার্শিয়াল থেকে পুরোপুরি লকডাউনে যাচ্ছে। বেলজিয়াম লকডাউনে আছে আর জার্মানী যেহেতু যাচ্ছে, ক্রিসমাস কেনাকাটার জন্যে নেদারল্যান্ডস-জামার্ন-বেলজিয়াম বর্ডারে থাকা ডাচ আউটলেটগুলোতে প্রচন্ড ভীড় হচ্ছে, জার্মান গাড়ির কিউ শহরে প্রায় যানজটের উপক্রম করছে তাই ডাচ সরকারও লকডাউনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে (বেসরকারী খবর)। আপাতত জার্মানী দশই জানুয়ারী পর্যন্ত লকডাউনে যাচ্ছে তাই নেদারল্যান্ডসও উনিশে জানুয়ারী পর্যন্ত লকডাউনের ঘোষনা দিয়েছে। করোনা শুরু হওয়ার পর এই প্রথম নেদারল্যান্ডস পুরোপুরি লকডাউনে যাচ্ছে। ডাচ’রা যেনো বেলজিয়ামে শপিং করতে না যায় সেজন্য বেলজিয়ান মন্ত্রীও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বড়লোকদের এই চক্করে,এই গরীব মায়ের “মেয়ের জন্মদিন” আয়োজনটা ভেসে গেলো। সংক্রমণ সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়েছে। আজ রাত থেকেই লকডাউন কার্যকর হবে যাতে কেনাকাটার জন্যে মানুষজন কাল দোকানে যেতে না পারে আর সংক্রমণ বেড়ে না যায়। এই শুনে কয়েকটি শহরে সাথে সাথে দোকান সন্ধ্যা ছয়টার পরিবর্তে নয়টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ড্রেন্টে তারমধ্যে অন্যতম। সকাল থেকে ডাচ মিডিয়াতে শুধু লকডাউনের চর্চা, হেয়ার সেলুনে ভীড় বেড়েছে, উটরেক্টের রাস্তায় বাড়তি পুলিশ দেয়া হয়েছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে। প্রিমিয়ে রুতেঃ এ বছরে অনেকে এত কিছু হারিয়েছে যে আমরা এবার সত্যি অনুভব করছি, একজনের কাছাকাছি অন্যজনের থাকা কত জরুরী। এক মিলিয়নের বেশী অন্যান্য অপারেশান এ বছর পেছাতে হয়েছে। করোনাক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ত্রিশ হাজার মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে যার মধ্যে ছয় হাজার আইসিইউ পেশেন্ট ছিলো, এই ছয় হাজার আইসিইউ পেশেন্টের মধ্যে আড়াই গুন মানুষ ছিলো যাদের বয়স পঞ্চাশের নীচে। আর আইসিইউতে সেবা না পেলে এই ছয় হাজার মানুষও মারা যেতো। দিনরাতের এই অক্লান্ত সেবা দানের জন্যে আবারও সব স্বাস্থ্য ও সেবাকর্মীকে ধন্যবাদ জানালেন জাতির পক্ষ থেকে। সব রকম স্কুল থেকে ইউনিভার্সিটি ষোলই ডিসেম্বর থেকে আঠারোই জানুয়ারী পর্যন্ত অনলাইনে চলবে। যেসব বাচ্চারা পড়াশোনায় দুর্বল, যাদের ফাইন্যাল ইয়ার, যাদের আলাদা সাহায্য দরকার তাদের জন্যে আলাদা ব্যবস্থা। পুলিশ, সেবা ও স্বাস্থ্যকর্মী, বাস-ট্রেনের চালক ইত্যাদি পেশা আর বিশেষ শিশু ছাড়া সবার জন্যে ডেকেয়ার বন্ধ থাকবে। বেকারী, সুপার মার্কেট, মাংসের দোকান, ঔষধের দোকান, ওপেন মার্কেট, লন্ড্রী, চশমার দোকান, মেডিক্যাল স্টোর এগুলো খোলা থাকবে। “নন এসেনসিয়াল” সব দোকান কাল থেকে বন্ধ। অনলাইন শপিং। বাকি ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেয়া হবে, যত বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, প্রণোদনাও ততো বেশিই দেয়া হবে। যারা কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে না, তাদেরকে এন ও ডব্লু এর আন্ডারে সাবসিডির আবেদন করতে বলা হয়েছে। হোটেল খোলা থাকলেও রুম সার্ভিস, আর রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। মিউজিয়াম, থিয়েটার, সিনেমা, চিড়িয়াখানা, হেয়ার সেলুন, নেল সেলুন, স্পা, ক্যাসিনো, সাওনা বন্ধ থাকবে। লাইব্রেরীতে বসে পড়া যাবে না তবে বই আনা-নেয়া করা যাবে। দাঁতের ডাক্তার, গাইনী আর ফিজিও খোলা থাকবে। ব্যাঙ্ক, মিউনিসিপ্যালটি অফিস আর মৃতদেহ সৎকার কেন্দ্র খোলা থাকবে। চব্বিশ, পঁচিশ আর ছাব্বিশে ডিসেম্বর তের বছরের ওপর তিন জন গেস্ট এলাউড। পরিবারের বাইরে দুজনের বেশি বাইরেও হাঁটা যাবে না তবে সেটাও দেড় মিটার দূরত্ব রাখতে হবে। খেলাধূলার স্কুল, জিম, সুইমিংপুল সহ সব ধরনের ইন্ডোর এক্টিভিটি বন্ধ থাকবে, আঠারো বছর পর্যন্ত দল বেঁধে আউটডোর স্পোর্টস চলতে পারে। আঠারোর ওপরে কোন টিম স্পোর্টস হবে না, ম্যক্সিমাম দুজন দেড় মিটার দূরত্বে প্র্যাক্টিস করতে পারে। কোন প্রতিযোগিতা, গ্রুপ লেসন চলবে না। মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত অদরকারী ট্রাভেল বাদ। যারা এই মুহূর্তে নেদারল্যান্ডসে আসতে চাইছে তাদের নিষেধ করা হচ্ছে। ইউরোপের বাইরে থেকে কেউ আসতে চাইলে "করোনা নেগেটিভ" সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। প্রিমিয়ে রুতে তার অফিসে বসে স্পীচ দিচ্ছিলেন,লকডাউনের বিরুদ্ধে বাইরে এত ডেমোনেস্ট্রেশান আর প্রটেষ্ট হচ্ছিলো যে আওয়াজ টিভির পর্দা কাঁপিয়ে দিচ্ছিলো। বারোই জানুয়ারী দুই হাজার একুশে আবার প্রেস কনফারেন্স হবে, প্রিমিয়ে রুতে আর ভাইস প্রিমিয়ে হুগো তখন নতুন ব্যবস্থা জানিয়ে দেবেন।

Thursday 10 December 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – আটই ডিসেম্বর

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – আটই ডিসেম্বর প্রিমিয়ে রুতে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে নেদারল্যান্ডসে দশ হাজার মানুষ মারা গেছে যেটি খুবই দুঃখজনক। যেহেতু সংক্রমনের হার নীচের দিকে যায়নি তাই ক্রিসমাসে আলাদা কিছু করা সম্ভব না, পার্শিয়াল লক ডাউন চলবে, বরং সংক্রমনের এই হার অব্যহত থাকলে ক্রিসমাসের আগে আরো স্ট্রিক্ট নিয়মনীতি আসতে পারে। হাঁচি, কাশি বা এধরনের যেকোন অসুস্থতায় বাসায় থাকবে, কুকুরের দেখাশোনা, কিংবা বাজার করা ইত্যাদির জন্যে হেল্প সেন্টারে যোগাযোগ করবে, সেগুলোর ব্যবস্থা করা হবে। আশা করা হয়েছিলো, মধ্য ডিসেম্বরের মধ্যে আইসিইউ রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন দশ জনে পৌঁছতে পারবো, সেটি হয়নি এখন আশা করছি মধ্য জানুয়ারীর মধ্যে হয়ত সেটা সম্ভব হবে, আমরা এক মাস আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে পিছিয়ে গেলাম। যদি মধ্যে জানুয়ারীর মধ্যে আমরা এই টার্গেটে পৌঁছতে পারি তবে ফুটবল স্টেডিয়াম, থিয়েটার, ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষা চালানো হবে। কত টুকু দূরে দাঁড়ালে কিংবা বসলে সংক্রমন নিয়ন্ত্রনে থাকবে, সেসব দেখা হবে। আস্তে আস্তে সব আবার নতুন স্বাভাবিক নিয়মে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। রেস্টুরেন্ট আর ক্যাফেকে আলাদা প্রনোদনা দেয়া হবে। সংক্রমনের হার নীচের দিকে নামলে রেস্টুরেন্ট খুললেও ক্যাফে আরো দেরীতে খুলবে, ক্যাফে থেকে সংক্রমন দ্রুত ছড়ায়। যুব সমাজের জন্যে আলাদা কম্পিটিশানের আয়োজন করা হবে, ফুটবল, সিনেমা, থিয়েটার প্রণোদনা পাবে। আঠারো থেকে সাতাশ বছরের জন্যে যদিও খেলাধূলার গ্রুপ প্র্যাক্টিস খুলে দেয়া হয়েছে। ভাইস প্রিমিয়ে হুগো দ্যা ইয়ং ছয়টি ভ্যাক্সিন কোম্পানীর সাথে চুক্তি করা হয়েছে, আর স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সকল সেক্টরের সাথে পরিকল্পনা ও চুক্তি করা হয়েছে, কিভাবে পুরো দেশকে ভ্যাক্সিনের আন্ডারে আনা যায় দেখা হচ্ছে। প্রচুর প্রস্তূতির মধ্যে রয়েছে সবাই। ইউরোপে “ফেয়ার পলিসি”র মাধ্যমে টিকার পরিমান ভাগ করা হবে। প্রথমে বায়োটেক থেক হাফ মিলিয়ন ভ্যাক্সিন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেহেতু প্রতিদিন অন্য জায়গায় সব পরিকল্পনা আর সংখ্যা পরিবর্তন হচ্ছে তাই আমাদের গুলোও সে অনুযায়ী পরিবর্তন করা হচ্ছে। প্রতিজনের জন্যে দুটো ভ্যাক্সিন । প্রথমে টিকা পাবে সকল ক্ষেত্রের স্বাস্থ্য ও সেবা কর্মীরা, হাসপাতাল, কেয়ার হোম, ওল্ড এজ হোম ইত্যাদি সব জায়গার সবাই। দ্বিতীয় পাবে ষাটোর্ধ্ব আর স্বাস্থ্য নিয়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষেরা তারপর অন্যেরা, ধারনা করা হচ্ছে সামনের বছরের গরমের ছুটি পর সবার ভ্যক্সিনেশান সম্পূর্ন হবে।

Wednesday 9 December 2020

রুবিক্স কিউব

আচ্ছা, উনিশো ছিয়াশি সালের তেসরা মে বেলা বারোটায় তুমি কি করছিলে? স্কুলে ছিলাম, ইংলিশ সেকেন্ড পেপার ক্লাশ ছিলো। টিফিন ব্রেকের আগে ইংলিশ ক্লাশ হতো। সেদিন কি বার ছিলো? দাঁড়াও, হুম, শনিবার ছিলো, তাহলে স্কুলে যাইনি, বাসায় ছিলাম। তখন কি শনিবারে স্কুল বন্ধ থাকতো? তাইতো! বৃহস্প্রতিবার হাফ আর শুক্রবারে ছুটি। তাহলে স্কুলে ছিলাম, ইংলিশ সেকেন্ড পেপার ক্লাশ ছিলো। ওকে, সেবছর রোজা কবে ছিলো? ওয়েট, দেখছি, ওহ, মে মাসে তো রোজা ছিলো। তাহলে স্কুল বন্ধ ছিলো। আর আমরা বাড়িই ছিলাম। ভাল কথা, দেখোতো ঈদ কবে ছিলো? গুগল বলছে, সৌদিতে তেরোই জুন। তবে রোজা ছিলো না, স্কুল খোলাই ছিলো। আমরা স্কুলেই গেছিলাম তাহলে আমি ইংলিশ সেকেন্ড পেপার ক্লাশেই ছিলাম। ০৫/১১/২০২০

Tuesday 8 December 2020

মনে করো যদি সব ছেড়ে হায়

ক্লোজ বন্ধু গ্রুপের মধ্যে নিশিই প্রথম মারা গেলো। এমনিতে যে নিশির সাথে খুব যোগাযোগ ছিলো তা নয়, গ্রুপ ম্যাসেজেই টুকটাক যা কথা হতো। কারণটা ওদের মধ্যে ছিলো না, ওরাতো মাঝে মাঝেই জমিয়ে আড্ডা দিতো, সংসার অন্তপ্রাণ নিশিরই সময় ছিলো না বন্ধুদের সাথে দেখা করার কিংবা অনলাইন আড্ডা দেবার। সংসার, সংসার, এই কাজ ঐ কাজ, ফিরিস্তি শুনতে বিরক্ত লাগতো, আর যেনো পৃথিবীতে কারো পরিবার নেই, পারিবারিক জীবন নেই। এরকম আদিখ্যেতা সহ্য করা যায়? ইরিটেশান এড়াতে অনেক সময়তো এড়িয়েই চলেছি আমি ওকে। তারপরও মনের মধ্যে কয়দিন খচখচানি লেগেই রইলো। কারণে অকারণে সাদাসিধে ভালো মানুষী মাখানো মুখটা মনে পরতো। একদিন সকালে ফেসবুক স্ক্রল করছি, দেখি নিশির বর খোকন ভাইয়ের প্রোফাইলে নতুন ছবি, তার পাশে ছিপছিপে সুন্দরী একটি মেয়ের মুখ, পাশাপাশি বসে দুজনেই গভীর আনন্দে হাসছে, নীচে তখনও একশো আটাত্তরটা মন্তব্য জমা হয়েছে, অভিনন্দনের বানে ভেসে যাচ্ছে দুজনে, অবাক হয়ে মন্তব্যগুলো পড়তে পড়তে কেনো জানি আমার দু চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়াতে লাগলো। আঙুলে গুনে দেখলাম মাত্র পাঁচটি মাসই পার হয়েছিলো, সময় কত দ্রুত যায় আর করোনা যেনো গতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভদ্রতার বশেও আমার আঙুলে তাদের জন্যে অভিনন্দন আসলো না, আমি এড়িয়ে গেলাম। অথচ খোকন ভাই নিজে নিয়ে খেতে পারে না বলে, অন্য লোকের রান্না খেতে পারে না বলে, নিশি বাবার বাড়ি যেয়েও দুটো দিন আরাম করে থাকতে পারতো না। এই আমাদের সাথে আড্ডাতেই, কচিৎ কখনোই তো আসতো, তাতেও মোবাইল বেজে উঠতেই, না খেয়ে দ্রুত পড়িমড়ি ছুট লাগিয়েছে বরের জন্যে। সকালটাই শুরু হলো ভাঙা মন নিয়ে, বসে বসে খোকন ভাইয়ের টাইম লাইন দেখছিলাম, নিশির সাথে এরকম কোন ফটো আছে কিনা খোঁজার চেষ্টা করলাম। খুঁজে পেলাম না, ক্যাজুয়ালি পাশাপাশি দাঁড়ানো দু একটা আছে বটে কিন্তু আমি জানি বরের সাথে ছবি তুলতে নিশি কি ভালোটাই না বাসতো। গ্রুপের আড্ডাতেও দেখেছি, নিশি ফটো তুলতে চাইলে, বয়স হয়েছে, এসব কি বলে খোকন ভাই এড়িয়ে যেতো। শুধু কি তাই, নিশি নিজের ছবি আপ্লোড করলেও বিরক্ত হতো। গ্রুপে আমরা ক্ষ্যাপাতাম, কি করে, বরের জন্মদিনে স্পেশাল কি কি করলি, ছবি দিলি না? খেতে না হয় নাই ডাকলি, দেখতে তো পেতাম, সবই গোপন নাকি? কাঁচুমাচু নিশির জবাব, খোকনের পছন্দ নয়রে তাই দেই না। ছবি তুলতেই তো চায় না, দেবো কি? খোকন ভাইয়ের ট্যাগ করা নাম ধরে তার নতুন পার্টনারের ইনফো দেখেতো রীতিমত ধাক্কা খেলাম আমি। বউ প্রকৌশলী, মাল্টি ন্যাশনালের সিনিয়ার কনসালটেন্ট। পেশাগত কারণে নানা জায়গায় ট্রাভেল, রেস্টুরেন্টে ডিনার ইত্যাদির প্রচুর ছবি তার টাইমলাইনে দেয়া আছে। ছেলেমেয়ে একটু বড় হওয়ার পর নিশিও শখ করলো অন্য সবার মত সে ও কিছু একটা করবে। এম-এ পাশ করেছে, তারও কিছু স্বপ্ন আশাতো ছিলো। সেটা শুনেই শ্বশুর-শাশুড়ি ভ্রু কুঁচকে ফেললো, তোমার বাচ্চাদের কে দেখবে? এ বয়সে আমরা কোন দায়িত্ব নিতে পারবো না। মেনিমুখো আপোষকামী নিশি সেবার বাবা-মায়ের দ্বারস্থ হয়েছিলো, মা, আমার বাচ্চাদের তুমি স্কুলের বাইরের টাইমটা দেখে রেখো, আমি ফেরার সময় নিয়ে যাবো। নিরীহ বাবা-মা, গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, শ্বশুর-শাশুড়ি যখন চায় না তখন থাকুক, কিসের অভাবে চাকুরী করবে, কি নেই নিশির? খোকন ভাইতো সরাসরি বলেই দিলো, সবতো চলছে ঠিকঠাক তবে কেন সংসারে অশান্তি ডেকে আনা? একজন মায়ের দায়িত্ব কি কম? একজন কর্মজীবি মা হওয়ার চেয়ে একজন সফল মা হওয়া অনেক সম্মানের। বরবারের মত নিশি আপোষ করে নিলো। ক’দিন পর আবার আমার ফেসবুকের হোমফীডে খোকন ভাই আর তার নতুন পার্টনারের ছবি ভেসে এলো। গার্লিক এন্ড জিঞ্জার রেস্টুরেন্টে খেতে গেছে পরিবারের সবাইকে নিয়ে, নানা রকম খাবারের ছবি সাথে আবার নিজেদের সেলফিও পোস্ট করেছে। আনমনে ভাবছিলাম, শ্বশুর-শাশুড়ি বাইরের খাবার পছন্দ করে না বলে, সারা জীবন হাত পুড়িয়ে রেঁধে গেলো মেয়েটা অথচ বাইরে খেতে কি পছন্দই না করতো। নানারকম কুজিনের প্রতি কি আগ্রহ, ইউটিউব দেখে দেখে সেসব ট্রাই করা। রেঁধেই প্রথমে শ্বশুরকে দিতো, খাইয়ে যে কি সুখ পেতো। অথচ আজ সবাই হাসিমুখে একসাথে রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে। সমুদ্রের প্রতি কি ফ্যাসিনেশান যে ছিলো মেয়েটার। ফেসবুকে কেউ সী-সাইডে বেড়াতে যাওয়ার ছবি আপ্লোড করলে, কত আবেগী মন্তব্য করতো। শ্বশুর-শাশুড়িকে কার কাছে রেখে যাবে, তাদের কে দেখবে করে সমুদ্রে যেতে পারলো না নিশি। পাগলী পুরোটা সময় সংসারের জন্যেই বাঁচলি নিজের জন্যে খানিকটা সময় বাঁচলি না কেন তুই? কোথাও থেকে দেখে কি আফশোস করছিস? সুযোগ পেলে বদলে বাঁচবি ভাবছিস? খাঁ খাঁ নির্জন দুপুরে জানালার পাশে লো ভলিউমে চিত্রা সিং এর গান বাজছিলো, বুকটা ভাঙা ভাঙা লাগছিলো, মনে করো যদি সব ছেড়ে হায় চলে যেতে হয় কখনো আমায় মনে রবে কি রজনী ভরে নয়ন দুটি ঘুমে জড়াতে নিশি রাতে কে গান শুনাতো। কান্না চাপতে চাপতে তাই খোকন ভাইকে আনফলো করে দিলাম। নিশি নেই, অম্ল মধুর স্মৃতিটুকু থাকুক, তাতে কাঁটা মেশাতে চাই না। তানবীরা ১২/০৯/২০২০

Saturday 5 December 2020

যখন আমি থাকবো নাকো

কয়েক বছর আগের কথা, নিশি পঞ্চাশে পা দেয়ার কিছুদিন পরই হঠাৎ অসুস্থ হলো, আট দিনের অসুস্থতায়, মারা গেলো। গ্রুপে ম্যাসেজ এলো, “শি ইজ নো মোর”, “রেস্ট ইন পিস” ইত্যাদি। দু মাস পর আমি নিশির বরকে ফোন করলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, ওকে যেহেতু কাজের জন্যে অনেক ট্রাভেল করতে হয়, ঘর আর চাকুরী সামলে বোধহয় একদম বিধ্বস্ত হয়ে গেছে বেচারা। মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত নিশিইতো সব দেখাশোনা করতো। সংসার, বাচ্চাদের পড়াশোনা, বয়স্ক শ্বশুর-শাশুড়ির দেখাশোনা, তাদের অসুস্থতা, আত্মীয়-স্বজন, লোক-লৌকিকতা, সবকিছু, সবকিছু, সবকিছু। সবসময় বলতে থাকতো, বাড়ি ছেড়ে বের হতে পারি নারে, আমাকে ছাড়া দুদন্ড চলে না। আমার বর তো চা-টাও বানিয়ে খেতে পারে না। সবাই সবকিছুর জন্যে আমাকেই ডেকে বেড়ায়। কিন্তু জানিসতো, এই যে সারাদিন বেগার খাটি তার জন্যে কারো কোন প্রশংসা পাই নারে, সবাই ভেবে নেয়, সবকিছু আমার দায়িত্ব। আমি নিশির বরকে ফোন করলাম, খোঁজ খবর নেয়ার জন্যে, কোন কিছুর দরকার আছে কি না? যদি আমি কোনভাবে কোন সাহায্য করতে পারি। ভাবলাম, হঠাৎ করে একসাথে এত দায়িত্ব, নিশির বর বেচারা বোধহয় একেবারে নাকানিচুবানি খাচ্ছে। বয়স্ক বাবা মা, বাচ্চা, অফিস ট্যুর, এ বয়সের একাকীত্ব, সব কি করে একা সামলাবে! মোবাইল একটানা বেজে গেলো, কেউ ধরলো না। এক ঘন্টা পর কলব্যাক করে ক্ষমা চাইলো সময়মত ফোন ধরতে পারেনি বলে। বললো, রোজ এক ঘন্টা করে টেনিস খেলা শুরু করেছে, বন্ধুদের সাথে আড্ডাও হয়ে যায়, সময়টা ভাল কাটে। চাকুরীতে ট্রান্সফার নিয়েছে, আগের মত আর এত ট্রাভেল করতে হয় না। জিজ্ঞেস করলাম, বাড়িতে সবাই ভাল আছে? বললো, রান্নার একজন লোক রেখে দিয়েছি, কিছু বাড়তি টাকা দেই, বাজারটাও সেই করে। বয়স্ক বাবা মায়ের দেখাশোনার জন্যে দিনরাতের আয়া রেখে দিয়েছি। বাচ্চারাও ভাল আছে, সব চলে যাচ্ছে, জীবন আবার আস্তে আস্তে স্বাভাবিক নিয়মে ফিরে আসছে। আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না, কোনরকমে দু-চারটে কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম। দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিলো। বারবার নিশির কথা মনে পড়ছিল, শাশুড়ির সামান্য অসুস্থতায় স্কুল পুর্নমিলনী বাদ দিয়ে দিলো, বাড়িতে মিস্ত্রি কাজ করছিলো তাই নিজের ভাতিজির বিয়েতে যায়নি। বন্ধুদের সাথে কত আড্ডা, সিনেমা, ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে দিয়েছে, কারণ বাচ্চাদের পরীক্ষা, রান্না করতে হবে, স্বামীর জন্যে এটা ওটা কত কি দরকারী কাজ। শুধু চাইতো, পরিবারের লোকেরা তার একটু প্রশংসা করুক, তার একটু মূল্য দিক, কিন্তু কখনোই সেটা সে পায়নি আজ মনে হচ্ছে নিশিকে ডেকে বলি, এই পৃথিবীতে কেউই অপরিহার্য নয়রে পাগলী। কারো জন্যে পৃথিবীতে কিছু আটকে থাকে না। আমি না থাকলে কি হবে এটা আমরা ভেবে নেই। হয়ত নিছক নিজেকে সান্ত্বনা দেয়া। সবসময় অন্যেদের গুরুত্ব দেয়ার জন্যে নিজেকে একটা কিছু দিয়ে বুঝিয়ে নেয়া। তুই নিজেই বুঝিয়েছিস সবাইকে, তোরটা পরে, তাদেরটা আগে। বাস্তব মেনে নেয়া কঠিন। তোর মৃত্যুর পর দুজন গৃহকর্মী এসেছে, বাড়ির সব কাজ ঠিক আগের মতই চলছে। আমাদের সম্মান, আমাদের মূল্য, আমাদেরকেইতো তৈরী করতে হবে, নয় কি? বাকিদের বলছি, জীবনকে উপভোগ করতে শেখো, আমাকে ছাড়া সংসার চলবে না ভাবনাটা বাদ দাও, দিনের শেষে সব চলে যায়। নিজেকে সময় দাও, নিজের জন্যে বাঁচো। বন্ধুদের সাথে বাইরে যাও, কথা বলো, আনন্দ করো। নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দাও, মাঝে মাঝে পছন্দের জিনিস নিয়ে সময় কাটাও। সবসময় অন্যের মাঝে নিজের সুখ খুঁজতে যেও না, তোমার নিজেরও সুখের দরকার আছে, নিজে সুখী না হলে অন্যকে কি করে সুখী করবে? সবার যেমন তোমাকে প্রয়োজন, নিজেকে সময় দেয়াও তোমার প্রয়োজন। যেসব মেয়েরা সমস্যায় আছে তাদের সাহায্য করো। চলো সবাই মিলে জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলি। সবার শেষে বলি, জীবন আনন্দময় মূলভাবঃ অন্তর্জাল

Thursday 3 December 2020

মূর্তি বনাম ভার্স্কয

আগে বিদেশ থেকে আত্মীয় আসবে শুনলে বিরক্ত হতাম। ভাবতাম, আমরা তো ভালোই আছি, আসবে এখন নাক উঁচু করে ডার্টি ডার্টি বলতে। তারা খাওয়ার টেবিলে বসে দেশ এবং বিদেশ নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করতো আর হাসি হাসি মুখ করে আমরা যথারীতি তাদের অপছন্দ করতাম। এখন কপালের ফেরে বাইরে থেকে তাদের দলে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করলাম। পৃথিবীর যত ক’টা শহরেই গেছি, ছোট কিংবা বড় প্রায় সব শহরেই ছোট-বড় তাদের শহরের কিংবা দেশের বিখ্যাত লেখক, শিল্পী, গায়ক, নায়ক, রাজনীতিবিদ, প্রেসিডেন্টের মূর্তি আছে। হ্যাঁ, আমিতো ফাইন আর্টস কিংবা ধর্মের ছাত্রী না, আমার কাছে মূর্তিও ভাস্কর্য এবং বেশ নয়নাভিরাম ভার্স্কয। রাধাকৃষ্ণ, গনেশ, নটরাজের কি সুন্দর সুন্দর চোখ কেড়ে নেয়া শৈল্পিক ভার্স্কয আছে, তাকিয়ে থাকার মত। গ্রীকদের কথা আর নাই টানলাম। আফ্রোদিতি থেকে লাওকুনের লাইমস্টোন, মার্বেলের তৈরী মূর্তি ছুঁয়ে দেখে না এরকম কম পর্যটকই আছে। শত শত স্যুভেনীওর বিক্রি হয়, মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা প্রতি বছর। ছোট ছোট চত্বরে পর্যটকরা জাস্ট মূর্তির সাথে ছবি তোলে আর বড় বড় চত্বরে ক্লান্ত পর্যটকরা দুদন্ড বসে, জিরায়, পানি বা খাবার খায়, অবশেষে ছবি তুলে বিদায় হয়। এর বাইরে মূর্তি বা ভাস্কর্যের কোন উপযোগিতা আছে বলে আমি দেখিনি, শুনিনি। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে, তাদের সুবিধার জন্যেও বিভিন্ন শহরে পৌরসভা নিজ দায়িত্ব ও খরচে এগুলো তৈরী ও রক্ষনাবেক্ষন করে, রাষ্ট্রের ব্যাপারও না। নরওয়ের ছোট শহর সিয়েন লেখক হেনরিক ইবসেনের স্ট্যাচু বানিয়ে রেখেছে বলেই জানলাম তিনি এই শহরে জন্মেছিলেন, অপূর্ব সুরের জাদুকর নিজে বধির ওলফগ্যাংগ আমাদিউজ মোর্জাট সালর্সবুর্গে জন্মেছেন সেটা শহরে তার মূর্তি দেখে জেনেছি, চার্লি চ্যাপলিন সুইজারল্যান্ডের কোর্সিয়ার সার ভেভেইতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, সেই শহরে তার মূর্তি দেখেই জেনেছিলাম। ইতিহাস জানানোর খুব সহজ উপায় হলো মূর্তি। এরকম একটা আনপ্রোডাক্টিভ খাতে যে দেশে সপ্তাহভর টকশো চলতে পারে, তাও দুই হাজার একুশের দোর গোড়ায় তাদের জন্যে মামুন মারুফের ভ্যাক্সিনের ফর্মূলাই ঠিকাছে। সামনের সপ্তাহ থেকে ইউকে টিকা দেয়া শুরু করবে বলছে, হুজুরের ফর্মূলাটা যেনো কি ছিলো? মিলায়া দেখা দরকার লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট, পনের বছর ক্ষমতায় থাকার পর বঙ্গবন্ধুর ভার্স্কয নিয়ে যদি এই অবস্থা হয়, সনাতন ধর্মালম্বীরা দেশে কি অবস্থায় আছে খুব সহজেই অনুমেয়। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, রোহিংগাদের মত আলাদা ভাসানচর তৈরী করা হোক। ******************************* মূর্তি বনাম ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে কচলাকচলি দেখি থামে নাই এখনো। "ভার্স্কয যে মূর্তি না" সুশীল সমাজের এটা প্রমাণের প্রাণপাত চেষ্টায় একটা পুরনো কৌতুক মনে পড়ে, হুজুর তার বউরে হাদিস শুনাইছিলো, রাত বারোটার পর চুরির মুরগী খাওয়া হালাল। সেই সূত্রানুসারে, মূর্তি হইলে ভাঙা জায়েজ? বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের কাছে যাহা মূর্তি, তাহাই ভাস্কর্য, উহাই স্ট্যাচু। কথা হইলো, হুজুর সমাজ রাস্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাইতে পারে কি না? বাংলাদেশের সংবিধানে মূর্তি ভাঙা পারমিটেড কিনা। স্মৃতি যদি ধোঁকা না দেয়, আমাদের ছোটবেলায় যা দুই-একটা নির্বাচন, প্রায় ঠিকঠাক টাইপ হয়েছিলো, একটা প্রবাদ বাক্যের মত ছিলো, নন মুসলিম ভোট সব নৌকায় যাবে, একমাত্র নৌকার দলীয় সংবিধানে “ধর্মনিরপেক্ষতা” শব্দটির উল্লেখ আছে। পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখা বঙ্গবন্ধু এ পরিস্থিতি হয়ত স্বপ্নেও ভাবেন নাই। হুজুরদের কেন জানানো হচ্ছে না, আইয়ামে জাহলিয়াতের যুগ পার হয়ে পৃথিবী এখন সামনে এগিয়ে গেছে। ধর্ম নিরপেক্ষ কিংবা ধর্মহীন লোকেরা উপসনালয় ভাঙে না কিংবা এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি হিংস্রতা দেখায় না। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের বাণী, “যত মত তত পথ” সভ্য সমাজে, একটা স্বীকৃত পন্থা। পরমতসহিষ্ণুতা সমাজে বাস করার প্রথম শর্ত, পছন্দ না হলেই কোপানো বা ভাঙা যায় না। হুজুররা যদি তাদের ইল্যুশান থেকে বের হতে না চায়, সেটাও ভালো, ভাসানচরের মত তাদের আলাদা একটা হৌটি আরব কিংবা হাক্কা বা হাদিনা তৈরী করে দেয়া হোক। সাথে উষ্ট্র আর তরবারীও দেয়া হোক, তাদের জগতে তারা সুখে শান্তিতে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলুক। শুধু বাইরে থেকে লক করে দিতে হবে, বের হতে পারবে না। বারো মাসে তের পার্বণের এই দেশে ইস্যুর অভাব নেই। মূর্তির সুরাহা হওয়ার আগেই শুরু হলো টিএসসি নিয়ে। দেশের বাইরে থেকে মেহমান এলে যারাই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর দেখেন, প্রায় প্রত্যেকেই বলেন, ঢাকার ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট পার্ট। নতুন নতুন হাইরাইজ তোলাতে বিশ্বাসী এমেরিকানরা প্রায় তিনগুন বেশি এক্সপেন্সিভ জানা সত্বেও, ইউরোপের পুরনো চার্চ, ক্যাসেল, কলোসিয়াম দেখার জন্যে প্রতি গরমে ভীড় করে। বিশ্বব্যাপি পুরনো ঐতিহ্য লোকে রক্ষা করে। প্রয়োজনে হাইরাইজ সহ নতুন স্ট্র্যাকচার আসবেই, সেটাকে ঐ জায়গাতেই হতে হবে? নতুন ভবনের জন্যে নতুন জায়গা নেই? ভাস্কর্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য কিংবা ভবন কোনটাই আমাদের হাতে নিরাপদ নয়, আমরা এমন কেনো?