Tuesday 29 May 2012

আপা একটু তাকান, প্লিইজ লাগে


৩০মে তারিখের বাংলাদেশনিউজ২৪ এর জাতীয় থ্রেড এর নীচে নিম্নোক্ত এই লিঙ্কগুলো পেলাম।
আবারো পুলিশের হাতে সাংবাদিক নির্যাতিত http://www.bangladeshnews24.com/2012/05/29/38679.htm
পুলিশের বিরুদ্ধে বিচারপ্রার্থী নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ, প্রতিবাদকারীকে লাঠিপেটা
বরিশালে গৃহবধূর শ্লীলতাহানির চেষ্টা, এএসাই বরখাস্ত
চরফ্যাশনে পুলিশ দস্যু বন্ধুক যুদ্ধে পাঁচ দস্যু নিহত
যেভাবে পুলিশ শুরু করেছে তাতে কি দেশে গুন্ডা বদমাইশের আদৌ আর প্রয়োজন আছে? গুন্ডা বদমাইশরা লজ্জা পাচ্ছে পুলিশের পারফর্মেন্স দেখে। তারাতো পুলিশের কাছে হেরে যাচ্ছে। মানুষতো পুলিশ শব্দের সাথে গুন্ডা বদমাইশ শব্দার্থ গুলিয়ে ফেলছে।
“খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে
এখন পালটে হবে,
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো পুলিশ এলো পাশে”
ক্ষমতার দাপট কি জনগন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে আপা। প্লিইইজ লাগে আপনার উর্দি পরা পোষা গুন্ডার দলকে একটু থামান। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি কিছুই বুঝতে চাই না। কর দিচ্ছি জানে খাটা পয়সা থেকে তার বদলে নিরাপত্তা চাই শুধু নিরাপত্তা। বাড়ি থেকে বের হয়ে বাইরে গেলে সুস্থ শরীর বেঁচে ঘরে ফেরার নিরাপত্তা। যাকে ইচ্ছে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যাকে ইচ্ছে গুম। যাকে ইচ্ছে মেরে ফেলে দিচ্ছে। সাংবাদিক থেকে কূটনীতিক। কোন সভ্য সমাজের অঙ্গ কি আমরা? জঙ্গল হয়ে যাচ্ছে। একশ বছর আপনারাই ক্ষমতায় থাকেন। আপনারা কিংবা কোন দল ক্ষমতায় থাকে তা দিয়ে সাধারণ জনগনের জীবনের চার আনা লাভ কিংবা পরিবর্তন হয় না। শুধু কতোগুলো স্থাপনার নাম পরিবর্তন সূরা দোয়া কালামের মতো আমাদের মুখস্থ রাখতে হয়। তাও সই, গত চল্লিশ বছর তাই করেছি, ভবিষ্যতেও করবো। শুধু আমাদেরকে প্রাণে মেরেন না। যা নেয়ার নেন আমাদের প্রাণ ভিক্ষা দেন। আমাদের সম্মান ভিক্ষা দেন।


Friday 11 May 2012

বইমেলা কড়চা – (চার) মালাইয়ের স্বাদ পনিরে


ঢাকায় বইমেলা চলার সময় খুব নষ্টালজিক অনুভব করছিলাম। সেই নষ্টালজিয়া কাটানোর জন্যে ফান করে স্যাটায়ার লেখায় হাত দিয়েছিলাম। আমার সমস্ত শখের কাজের মতো যথারীতি এটিও অসম্পূর্ণ আর আধ খ্যাচড়া রয়ে গেলো। এ বছরের মতো এ পর্বটিই আমার এই সিরিজের শেষ লেখা। নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরীন আমার এ পর্বের লেখিকা। তার প্রকাশিতব্য বই কেমন হতে পারে তা নিয়ে আমার আজকের কল্পনা। তসলিমা নাসরীনের উপন্যাস প্রায় প্রত্যেক বইমেলাতেই বের হয় এবং যথারীতি পালাক্রমে বাংলাদেশ ও কোলকাতায় নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। বই নিষিদ্ধ ঘোষনার এ রীতি এশিয়া ছাড়া আর কোথাও আছে কি না, আমার জানা নেই। আমার ব্যক্তিগত ধারনা তিনিও নির্বাসনে বসে একটি পাশবিক আনন্দ উপভোগ করেন, বই নিষিদ্ধের এই হুল্লোড় থেকে। বেছে বেছে কখনো কখনো অকারণে এমন জিনিসই লিখে পাঠান, যাতে বইটা যেকোন মূল্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। অক্ষম মানুষের হতাশ প্রতিশোধ নেয়া। আমি তসলিমার নির্বাচিত কলাম, কবিতার একজন মুগ্ধ পাঠক। আমি জানি অসংখ্য ভক্ত তার আছে, তারা যেনো আমার এ লেখাটিকে একান্তই স্যাটায়ার হিসেবে নেন, এ প্রার্থনা থাকবে।

তসলিমা প্রসংগে লিখতে যেয়ে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত একটি মতামত এখানে উল্লেখ না করে পারছি না। তিনি যথেষ্ট একজন শক্ত মানুষ, অন্যদের প্রেরণা দেন, পথ দেখান। কিন্তু সব ব্যক্তিগত ঘটনাকে জনসম্মুখে (পাবলিক) তুলে ধরেন। ব্যাপারটা কতোটা নৈতিক? যৌনজীবনকে প্রত্যক সমাজেই ব্যক্তির একান্ত ব্যাপার বলে ধরা হয়। তিনি নিজের সম্মতিতে, স্বইচ্ছায় কারো সাথে ব্যক্তিগত সময় উপভোগ করার পর, লাঞ্চিত নন, উপভোগ করার পর তিনি তা নিয়ে বই লিখে সারা পৃথিবীর মানুষকে সেটা ঢোল পিটিয়ে জানাবেন, কেনো? তিনি কি তার সঙ্গীকে এজন্য সংগ দেন যে এরপর মতের অমিল হতে পারবে না? মতের অমিল হলেই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার লিখে তাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করা হবে? আমার মাঝে মাঝে মনে হয় প্রচন্ড হতাশায় তিনি যা করে চলেছেন, প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে তা আসলে এক ধরনের অসুস্থতা। যাক এ আলোচনা। আসুন আমরা প্রকাশিতব্য বইয়ের কল্পনায় যাই। ধরা যাক তসলিমার এই বইটির নার ঙ।

আমার ভীষন মন খারাপ ক্লান্ত লাগছে। রিকশা করে যাচ্ছি। হঠাৎ বসুন্ধরার কাছে গিয়ে মনে হলো, কিছু টুকিটাকি জিনিস নেয়া দরকার বাসার জন্যে। আমি কিছু বাসন কোসন, ঘর সাজানোর টুকিটাকি কিনে হাটছি এখন কিছু সিডি কিনবো। হঠাৎ “এ” র সাথে দেখা। আমি দেখতে পাইনি, সেই আমাকে দেখেছে। দেখে হাত নেড়ে কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, আমি কেমন আছি। আমি বল্লাম ভালোই। এর আগে “এ”র সাথে আমার বার কয়েক পত্রিকা অফিসের সাহিত্য আড্ডায় দেখা হয়েছিল। সুঠাম দেহের এ ছেলেটির কথাবার্তা বেশ আধুনিক আর মননসম্পন্ন মনে হয়েছে। আমাকে বললো, চলুন কোথাও বসে একটু চা খাই। আমি সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম। এমন টেনশনের মূহুর্তে একটু সুন্দর সংগ পাওয়ার লোভটা আর সামলাতে পারলাম না। কথায় কথায় জীবনানন্দ দাশের কবিতার আলোচনা উঠল। জানলাম তার কাছে কিছু দুস্প্রাপ্য পেপারকাটিং আছে জীবনানন্দ দাশের কবিতার ওপরে। কবিতা আমার সারা জীবনের ভালবাসা। সে যখন আমাকে তার বাসায় পরদিন দুপুরে নিমন্ত্রন করলো, আমি না করার কথা ভাবলামই না। সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম। আমার মাথায় তখন শুধু পেপার কাটিং ভাসছে। অন্যকোন সম্ভাবনার কথাই মনে আসলো না।

পরদিন দুপুরে আমি গেলাম তার বাসায় জীবনানন্দের কবিতার ওপরের আলোচনা দেখতে। “এ” আমাকে তেহারি আর কোক খেতে দিল। মাথার ওপরে ফ্যান ঘুরছে আর আমরা দুজন মুখোমুখি বসে কবিতা নিয়ে আলোচনা করছি। বাসায় আর কেউ নেই। হঠাৎ “এ” তার সোফা থেকে উঠে আমার পাশে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসলো। আমি ব্যাপারটা না বোঝার ভান করে এড়িয়ে আর একটু সরে বসার চেষ্টা করলাম। “এ” সেটাকে তুচ্ছ করে আমার কোমড় জড়িয়ে আমাকে ওর দিকে ফেরানোর চেষ্টা করতে লাগলো। আমি সরার জন্যে জায়গা খুঁজছি। কিন্তু এর মধ্যেই “এ” এর তার ঠোঁট দিয়ে আমার ঠোঁট চেপে আমাকে চুমু খেতে শুরু করে দিলো। আমি প্রানপনে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলাম। হঠাৎ অনুভব করলাম তার হাত আমার প্যান্টের বেল্টের ওপর। শক্তিতে আমি তার সাথে পেড়ে উঠছি না। সে আমাকে মেঝেতে ফেলে দিল, আর একহাতে টেনে আমার শার্ট খুলে ফেলল। আমি প্রায় জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে রইলাম। আধ ঘন্টা কিংবা তারো কিছু সময় পড়ে যখন আমার চেতনা ফিরল তখন দেখি আমরা পাশাপাশি শুয়ে আছি, দুজনেই বিবস্ত্র।

আমি অপমানের জ্বালা মনে নিয়ে, কাপড় গুছিয়ে, একরাশ ঘৃনা ছড়িয়ে দিয়ে তার ওপর জ্বলতে জ্বলতে বাড়ি ফিরলাম। মানুষকে কিভাবে বিশ্বাস করবো। সামনে দেখা হলে যে শ্রদ্ধা বিণয়ে গলে পড়তো, একা পেয়ে সেই কিনা এ চেহারা? পুরুষ জাতটাই বিশ্বাসঘাতক। মন থেকে আস্তে আস্তে সমস্ত পুরুষদের প্রতিই শ্রদ্ধা চলে যেতে লাগলো। সারা সন্ধ্যে বসে একটা সাপ্তাহিকের জন্যে কলাম লিখার চেষ্টা করলাম। কাটলাম লিখলাম আবার কাটলাম। কাটাকুটি করতে করতে মনে যা আসে তাই লিখে রেডি করলাম, সকালেই আসবে নিতে তাদের পিয়নটা। পরের দিন আবার রাঙামাটি যেতে হবে, কবিতা পড়ার উৎসব আছে, সেজন্যও কিছু প্রস্তূতির প্রয়োজন। ভোর চারটার দিকে ঘুমোলাম। দুপুর বারোটায় উঠে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে পত্রিকা আর খাবার নিয়ে বসেছি। বিকেলে একটা মাইক্রোবাসে রওয়ানা হবো আমরা কিছু কবি একসাথে। চারজনকে আগে থেকেই চিনি। দুজনের কবিতা পড়েছি আলাপ হয়নি এখনো। পুরো গ্রুপে আমি একাই মেয়ে। এখনো কিছু গোছগাছ হয়নি। খেয়ে যাবো কাপড় গোছাতে। শাড়ি নিবো কিনা জানি না। আজকাল শাড়ির চেয়ে বেশি প্যান্টেই স্বচ্ছন্দবোধ করি। কিন্তু কবিতা পড়তে গেলে শাড়ির একটা আবেদেন বাঙ্গালী সমাজে কাজ করে ভেবে ঠিক করলাম শুধু সে সময়টুকুর জন্যে একটা শাড়ি নিয়ে যাবো।

সন্ধ্যায় মাইক্রোবাসে চড়ে রওয়ানা হলাম আমরা সবাই। সবাই বেশ ছুটির মুডে আছেন। গাড়িতে বেশ হাই ভলিউমে রবীন্দ্র সংগীত বাজছে চিন্ময়ের গলায়। মাঝে দু একবার থেকে আমরা সবাই ধূমপান করলাম, চা খেলাম। চা খেতে খেতে অপরিচিত কবিদের সাথে পরিচয় আর আলাপ হলো। একজন আমার কবিতা নিয়ে খুব গদগদ। একটু রুক্ষ চুলের, গাল ভাঙ্গা চেহারার হলেও চোখ দুটো তার বেশ মায়া মায়া। আমার লেখা বেশ পড়ে বোঝা যায়। আমার লেখার ভঙ্গী আর পাঠকের পতিক্রিয়া নিয়ে আমরা গাড়িতেও অনেক আলোচনা করতে করতে আমরা সকাল আটটার দিকে রাঙামাটি গিয়ে পৌঁছালাম। নাস্তা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে আমরা একটু মেঠো পথে হাটতে বেড়োলাম। আবৃত্তি উৎসবের আয়োজকরা ভীষন ভালো করে সবকিছুর বন্দোবস্ত করে রেখেছিল যাতে আমাদের শহুরে লোকদের কোন সমস্যাই না হয়। ইট পাথর বাদ দিয়ে প্রকৃতির কাছে আসলে মনটা হু হু করতে থাকে। কি যেনো নাই এমন একটা একাকীত্ববোধ তাড়া করে ফিরে। হারানো দিনে ফিরে যাই। কাউকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছিলো তখন। এমন সুন্দর মেঠো পথে হাটতে হয় কারো কোমড় জড়িয়ে নিদেন পক্ষে হাতে হাত রেখে। কিন্তু আমার এমন কে আছে? যেই কাছে এসে কোন না কোন উদ্দেশ্য এসেছে। শুধু আমাকে ভালোবাসে কেউতো আসেনি।

সন্ধ্যায় আবৃত্তির উৎসব চমৎকার হলো। আমি পাহাড়ি ফুল খোঁপায় গুঁজে অন্যদের সাথে আড্ডায় মজে আছি। তারপর একে একে সবাই বিদায় নিতে আরম্ভ করলো। সেই রুক্ষ চুলের গাল ভাঙ্গা আমার পাশে এসে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো খাবেন না? আমি বল্লাম, হ্যা, এইতো যাই। সে বলল চলুন একসাথেই যাই। আমিও রাজি হলাম। টুকটাক গল্প হতে হতে খাওয়া দাওয়া হতে লাগলো। আমি হঠাৎ বললাম একটু ড্রিঙ্কস থাকলে মন্দ হতো না। গাল ভাঙ্গা লাজুক হেসে আস্তে বললো, আমার কাছে আছে খানিকটা। এখানে আনলেতো সবাই এক নিমিষে উড়িয়ে দিবে। আপনি রুমে যান আমি ওখানে নিয়ে আসছি। বোতল নিয়ে একটু পর সে রুমে এলে, আমরা অনেকক্ষণ নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে গ্লাসে চুমুক দিচ্ছিলাম। হালকা হালকা নেশা হচ্ছিল। গাল ভাঙ্গা তার ব্যর্থ প্রেমের গল্প বলছিলো। কি করে তার হৃদয় ভেঙ্গে দিয়ে তার বাল্যকালের সখী তারই ধনী এক ব্যবসায়ী বন্ধুকে বিয়ে করে সুখে ঘরকন্না করছে। তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। এ প্রথম আমি কোন ছেলেকে তার হারানোসঙ্গীর জন্যে কাঁদতে দেখলাম। আমার মনটা করুণায় ভরে গেলো তার জন্যে। আলতো করে তার গালে হাত দিতেই সে আমার পায়ের পাতায় চুমু খেতে লাগলো। হঠাৎ করে আপনি থেকে তুমিতে, আমাকে জড়িয়ে বলতে লাগলো, আমি তোমার মধ্যে অনেককিছু খুঁজে পেয়েছি। তুমিই আমার আসল প্রিয়া।

নিজের একাকীত্বের সাথে ছিল সেদিনের সে অপমানের জ্বালা। আমিও সে পরিবেশে নিজে উন্মাদ হয়ে উঠলাম। মাতালের মতো তার সাথে শরীরের খেলায় আমিও মেতে উঠলাম। কোন প্রতিশোধের নেশা আমাকে পেয়ে বসেছিল কে জানে। নিজের ইচ্ছেমতো তার দেহটাকে আমি ব্যবহার করলাম। কথা ছিল আমি তার পরদিনই ঢাকা চলে আসবো। কিন্তু সবাই চলে আসলেও আমি আর গাল ভাঙ্গা রয়ে গেলাম। আমাদের মধ্যে অনেক কথা, ভালবাসা, ওয়াদা আদান প্রদান হলো। কোনভাবে আরো তিনদিনের ছুটি ম্যানেজ করে আমরা যেনো সেখানে মধুচন্দ্রিমা যাপন করলাম। সে আমাকে কথা দিলো, সবসময় আমার পাশে থাকবে, কোন বিপদে কোন কারণেই আমাকে ছেড়ে সে যাবে না। দুজন দুজনের সাথে ভালবাসার চুক্তিবদ্ধ হয়ে আমরা অবশেষে বাসে করে ঢাকা ফিরলাম। আমি খুবই আনন্দিত, কাণায় কানায় পূর্ণ। এতোদিনে কাউকে আমার নিজের করে পেয়েছি। সন্ধ্যা হয়ে গেলো এখনো গাল ভাঙ্গার ফোন না পেয়ে আমি অবাক। এতোক্ষণ ফোন না করাটা কেমন যেনো একটু দৃষ্টিকটু লাগলো আমার কাছে। সকালে আমরা দুজন বাস থেকে নেমে যার যার বাসায় গেলাম আর সন্ধ্যে পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কথা হবে না। পরে ভাবলাম, হয়তো ক্লান্ত এখনো ঘুমিয়ে আছে, আমিই ফোন করে খোঁজ নেই। ফোন ধরলো এক অল্প বয়সী মেয়ে। আমি জিজ্ঞেস করলাম তিনি কোথায়? মেয়ে বললো সে তার মেয়েকে নিয়ে ছাঁদে খেলছে। আমার মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো। নিজেকে অতি কষ্টে সামলে নিয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম, আর আপনি? মেয়েটি বললো, তিনি আমার স্বামী। মাথা ঘুরে গেলো আমার আমি টাল সামলাতে না পেরে মেঝেতে পড়ে গেলাম।

রাঙামাটির পর থেকে নিজেকে আমি কাজে ডুবিয়ে দিলাম। সকাল থেকে সন্ধ্যে হাসপাতাল তারপর বাকি সময়টুকু লেখালেখি। গাল ভাঙ্গাও কোন অদৃশ্যকারণে আমার সাথে আর যোগাযোগ করেনি। আমিও করিনি তার সাথে। হঠাৎ একদিন আবার “এ” এর সাথে দেখা। আমার বাসায় এলো সন্ধ্যেবেলা আমার খোঁজ নিতে। প্রথমে বিরক্ত তারপর অবাক আমার খোঁজ নেয়া মানে? সে বললো, বেশ অনেকদিন কোথাও আমি যাই না, কেমন আছি, কি হয়েছে, জানার জন্যে সে উৎসুক তাই বাড়ির ঠিকানা যোগাড় করে বাড়িতে চলে এসেছে। প্রথমটায় রেগে গেলেও পরের দিকে আমার ভালোই লাগছিল। চা খেতে খেতে আমরা আবার সাহিত্য আলোচনায় ডুবে গেলাম। এরপর থেকে মাঝে মাঝে সন্ধ্যেবেলা “এ” আমার বাড়িতে আসতে লাগলো। দুজন চা খাই, সাহিত্য নিয়ে, সিনেমা নিয়ে, অন্যান্য লেখক বন্ধুদের নিয়ে আলোচনা করি। একদিন বারান্দায় দুজন বৃষ্টি দেখতে দেখতে চা খাচ্ছি। হঠাৎ “এ” আমার হাত ধরে তারদিকে আকর্ষন করে কাতর গলায় মিনতি করে বললো, কাল দুপুরে আমার বাড়ি আসবে একবার? আমার অনেকদিনের উপোষী শরীর এ কাতর আবেদন উপেক্ষা করতে পারলো না। এরপর থেকে আমি মাঝে সাঝেই “এ” এর বাড়ি যাই। দুজনে একসাথে অনেক আনন্দ করি। শুধু আনন্দ দেই না, আমিও নেই। আমার ভাল লাগে “এ” এর সংগ।

এদিকে আমাকে নিয়ে সমালোচনা বাড়তেই থাকলো কিছু কিছু পত্রিকায়। আমিও রক্ত মাংসের মানুষ। বিরক্ত আমারো লাগে। আমি “এ”কে প্রায়ই বলি সে এবং তার অন্য কবি বন্ধুরা কেন কোন প্রতিবাদ লিখে পাঠায় না। “এ” এড়িয়ে যায়। বলে কি দরকার এতো ঝুট ঝামেলা বাড়িয়ে। তুমি কেনো আরো একটু মোলায়েম করে লিখো না। এতো তর্কে যাওয়ার দরকারই বা কি তোমার? সত্যি যখন একদিন আমি ঝামেলায় পড়লাম, “এ”কে ফোন করি, সে ফোন তুলে না। একবার, দুবার, দশবার। ফোন বেজে যায় কেউ তুলে না। মেইল করি নো রিপ্লাই। আমিও নাছোড়বান্দা, ফোন করেই যাচ্ছি। একদিন ফোনে পেয়ে গেলাম। বললাম, কিরে আসিস না কেনোরে তুই? সে আমাকে উলটো বললো, আমি যেনো ক্ষমা চেয়ে পত্রিকায় বিবৃতি দেই। আপোষ করে নেই। সবকিছু নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি ঠিক নয়। আমি হতভম্ব। এই তাহলে পাশে থাকা। নির্বাক আমি আস্তে আস্তে ফোন ছেড়ে দিলাম।

তানবীরা
১২/০৫/২০১২


Thursday 3 May 2012

জীবন থেকে নেয়া (টুকরো টাকরা সুখের গল্প )


ঢাকা গেলে যা দেখি তাই খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। মাঝে মাঝে নিউমার্কেট আর গাওছিয়া যাই শুধু খাওয়ার জন্যে। কিছুই কিনি না, এ দোকান ও দোকান ঘুরি তারপর খাই, আবার খাই। হালিম, মোরগ পোলাও, শিক কাবাব, জিলাপি যা পাই তাই। একদিন কি কি অনেককিছু খেয়ে শপিং শেষ করে বেড়োতে যাবো আজিমপুরের সাইডের গেট দিয়ে, দেখি ওমা ঐখানের গেটের পাশের ছোট দোকানটায় কোণ আইসক্রীম বিক্রি হচ্ছে, সেটা খাওয়া হয়নি। বল্লাম পাশের লোককে। তিনি মহা বিরক্ত হলেন। প্রবাসীরা আমরা দেশে এলে অতিরিক্ত সচেতন থাকি। কোথায় কে আমাদের টাকা ছিনিয়ে নিয়ে উড়ে যায় সেই দুশ্চিন্তায়। আর এ ভদ্রলোকের সাথে এ ঘটনা বেশ কয়েকবার হওয়াতে তিনি মহাসতর্ক। তিনি তিক্ত গলায় বললেন, রাত বাজে নয়টা, এখন সব টাকা আমি গুছিয়ে ফেলেছি, কে কোথায় কি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কোনদিক থেকে দেখবে, গুঁতা দিবে, আইসক্রীম খেতে হবে না, চলো বাসায়। আমি বল্লাম অসম্ভব আইসক্রীম না খেলে আমি আজ রাতেই মারা যাবো। আইসক্রীম আমাকে এখন খেতেই হবে। তিনি বুঝলেন আমি আজ রাতে আইসক্রীম না খেয়ে যাবো না। দোকানে যেয়ে বললাম, আইসক্রীম দেন। আর উনি দুই পকেট সাফ সুতরো করে ঝেড়ে যা খুচরো ছিল দোকানদারের তাকের ওপর রাখলেন। দোকানদার অসীম ধৈর্য্য সহকারে সেগুলো গুনে দেখলেন মাত্র সাতাশ টাকা। বিরক্ত গলায় বললেন, আইসক্রীম পঁয়ত্রিশ টেকা। আপনেতো মাত্র সাতাইশ টেকা দিলেন। তিনি বললেন ভাই, আপনাকে পঁয়ত্রিশ টাকার কোণ দিতে হবে না। আপনি সাতাশ টাকার কোণই দেন। আপনার মেশিন, আপনার স্বাধীনতা। আপনি জোরে চাপ দিয়েন না। অল্পচাপে যতোটুকু পড়বে, ততোটুকুই চলবে। চাইলে আপনে আরো কম দেন, পঁচিশ টাকার দেন। রাত নয়টায় দোকান বন্ধের সময় কোন উটকো চাপে পড়লো ভেবে দোকানদার কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর মেশিন চেপে কোণ দিয়েই দিলেন। আজ প্রায় সাত আট বছর আগের কথা। কিন্তু এখনো সেই রাতের কথা ভাবলে, দোকানদার ভদ্রলোকের প্রথমে হতভম্ব তারপর গম্ভীর মুখখানা মনে পড়লে অজান্তেই হেসে ফেলি। কি বিপদে না ফেলেছিলাম তাকে।
আমি রান্না করতে থাকলে, কাজ করতে থাকলে মেঘ খুবই নিঃসংগবোধ থাকে। ঘুরে ঘুরে বলে মা, আমি কি করবো? আমার খুব একা লাগছে। আমি মাঝে মাঝে আমার সাথে কাজ করতে ডাকি। আলু খুলে দেয়া তার প্রিয় কাজ, পেঁয়াজ খুলতে বেশি পছন্দ করে না। সালাদ বানায়। টেবল থেকে প্লেট গ্লাস এনে রিঞ্জ করে ডিশ ওয়াসারে ঢুকায়। একদিন নিজে নিজে ডিম ভাজতে চাইলো। সব নিজে করবে, আমি যেনো না ধরি। করলো একা একা সব। গরম প্যানে তেল দেয়া থেকে শুরু করে সব। এখন এক যন্ত্রনা হয়েছে, রোজ ডে কেয়ার থেকে ফিরেই বলবে, আমি আজকে ডিম ভাজা আর ভাত খাবো। আমি একা একা ডিম ভাজি মামা? এখানে ডাক্তার সপ্তাহে তিনটের বেশি ডিম খেতে না করে। ডিম ভাজা শিখে এখন নিত্য অশান্তি।
P1070365
মেঘ সপ্তাহে একদিন ক্ল্যাসিক্যাল ব্যালেট শিখতে যায়। ব্যালেট আমাদের দেশের নাচের কায়দা থেকে পুরোই আলাদা। তারপরও এখানে বৈশাখী কিংবা বিজয়া, স্বরস্বতী পূজার অনুষ্ঠানে নাচের ডাক আসলে বাংলা কিংবা কখনো কখনো হোলি দিওয়ালিতে হিন্দী নাচ শেখানোর চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে চেষ্টা কিছুটা উতরায়। এবার মনে হলো কিছুটা উতরেছে। মেঘের নৃত্যকান্ড
399022_210082155768338_209920182451202_325958_292986166_n
ডাচ বাচ্চাদের জন্য সাঁতার জানা বাধ্যতামূলক। সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচের দেশের লোকদের প্রতিনিয়ত পানির সাথে লড়াই করে এক সময় বেঁচে থাকতে হতো। এতোদিন সরকার অনুদান দিতেন স্কুল থেকে বাচ্চাদের সাঁতারে নিয়ে যাওয়া হতো। এখন সরকার অর্থনৈতিক মন্দার ভাব ধরে ক-স-ট কাটিং করছেন সবকিছুতে। সাঁতার শিখতে হবে তবে স্কুল আওয়ারে আর নয়, অবশ্যই সরকারি পয়সায় নয়। বাবা – মাকে নিজের পয়সায় স্কুলে টাইমের বাইরে করাতে হবে। মেঘ বেসিক সাতার আগেই শিখেছিলো। চৌদ্দ তারিখে নৃত্য দিয়ে পনেরো তারিখে বেসিক প্লাস সাঁতারের পরীক্ষা দিয়ে ডিপ্লোমা নিয়ে আসলো। এখন রেস ক্যু টিমের সাঁতারে যাচ্ছে। কাপড় টাপড় পড়ে সাঁতার করে, কেউ ডুবে গেলে কি করে টেনে আনবে, ঝড় বৃষ্টিতে কি করে সাহায্য করবে অন্যদেরকে, সে ক্লাশ করছে। ভাবি ঘরে বসে বসে টিভি দেখবে, নড়বে না চড়বে না, থাক। সাঁতারের উছিলায় নড়ুক চড়ুক।
P1070446
P1070402
নেদারল্যান্ডস মানেই সাইকেল। দেড় কোটি জনগনের এক কোটি সত্তর লক্ষ সাইকেল। বাচ্চারা একটু বড় হলে সাইকেল নিয়ে বের হয়। ট্রাফিক আইন জানা থাকা নিতান্ত জরুরী। স্কুলে প্রথমে থিওরি শিখায় ক্লাশ টুতে। তারপর টিচাররা সাথে নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে হেঁটে প্র্যাক্টিকাল করায়। হাটার বেসিক রুল জানার পর সাইকেল। এরপর ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত ধাপে ধাপে প্র্যাক্টিস করানোর পর আসে পরীক্ষা। স্কুলে সাইকেল নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে ডিপ্লোমা নিতে হয়। ষোল তারিখে ময়না পাখি সাইকেল ডিপ্লোমা পেলো। এক নৃত্য ছাড়া কোনটাতেই মা-বাবা সাহায্য করিনি। তারপরো সে নিজে নিজে সব করে এসে মাকে জিজ্ঞেস করলো, আমি কি তোমাকে একটু প্রাউড করেছি মামা?
P1070458
অনেক কষ্টাকষ্টির দিনের মধ্যে এগুলো হলো এক টুকরো সুখের ছায়া, বন্ধুদের ছাড়া আর কার সাথে ভাগ করবো এগুলো?
তানবীরা
০২/০৫/২০১২