Saturday 31 October 2020

সমকালীন ডাচ কবিতা

https://www.banglatribune.com/literature/news/650046/%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%A8-%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%9A-%E0%A6%95%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BE?fbclid=IwAR2HaEkFv7jSbZFPuLwwwTyLNsWIt0kcdoeDB2o5P4lqzZOyn5FOXHQfQVI ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ নেদারল্যান্ডসের বার্নেফেল্ডে জন্মগ্রহণ করেন কবি ইয়েটসকে ইয়ানসেন (Tjitske Jansen)। ২০০৩ সালে তার প্রথম কবিতার বই ‘একবার বরফ পড়তেই হবে’ (Het moest maar eens gaan sneeuwen ) প্রকাশিত হয়। একই বছরে বইটির তিনটি মুদ্রণ ছাপা হয়, বিক্রি হয় সাড়ে বারো হাজার কপি—এখনো পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসে সবথেকে বেশি বিক্রি হওয়া কবিতার বই এটি। তিনি ২০০৭ সালে প্রকাশিত কবিতার বই ‘পরাবাস্তবতা’ (Koerikoeloem)-এর জন্য ‘আনা বাইন্স প্রাইস’ (Anna Bijns Prijs) পুরস্কার লাভ করেন। তারুণ্য এবং প্রেম তার কবিতার মূল উপজীব্য। *ফ্রাউ হোলে || ইয়েটসকে ইয়ানসেন মানুষ দেখার চেয়ে চাঁদ দেখতে বেশি ভাল লাগে আমার। মানুষ, ভীষণ ক্লান্ত করে আমাকে। এই আমন্ত্রণ, মিনতি, হাসি, ইচ্ছা, তাদের অজানা, জানতে চাওয়া বলার জন্যেই, তোমাকে ভালোবাসি বলা, কিংবা ভাবনা, জুতো পরে পায়ে কড়া নিয়ে হেঁটে যাওয়া, একজনের দিক থেকে অন্যজনের দিকে ছুটোছুটি, সুরে আর গয়নায় নিজেকে সাজিয়ে রাখা এই মানুষেরা। তার চেয়ে আমি চাঁদ দেখবো যে সবসময় একই রকম উদাসীন। বিশ্বস্ত। আমি আছি কালকে সন্ধ্যায়ও থাকবো এই কথাগুলো বলতে চাঁদের কোনো শব্দের দরকার নেই। হয়ত এক টুকরো মেঘ এসে ঢেকে দেবে, অথবা তুমি ভেতরে আছো তাই আমাকে দেখতে পাও না, কিংবা তুমি অর্থহীন কোনো গান শোনায় ব্যস্ত নাকি চোখের জলে চারপাশ ঝাপসা, ভাবছো তুমি একা আর তাই কাঁদছো, বোকা তুমি একা নও, আমি তো আছি পাশে, আগেরদিনও ছিলাম তোমার কাছে পরেরদিনও থাকবো পাশে। কাব্যগ্রন্থ : একবার বরফ পড়তেই হবে (Het moest maar eens gaan sneeuwen) ফ্রাউ হোলে : জার্মান রূপকথার একটি গল্প। ‘ফ্রাউ হোলে’, ‘মাদার হল’, ‘মাদার হালদা’ বা ‘ওল্ড মাদার ফ্রস্ট’ নামেও পরিচিত। ১৯৮০ সালের ১৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন সমকালীন নেদারল্যান্ডসের অন্যতম প্রধান কবি এস্টার নাওমি পারকুইন (Ester Naomi Perquin) । তিনি তিরাডে সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া সাপ্তাহিক দ্যা খ্রুনে আমস্টার্ডামার পত্রিকায় প্রতি সপ্তাহে কলাম লিখে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই ‘রুমালের অর্ধেকছড়ি’ (Servetten Halfstok)। এরপর ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কবিতার বই ‘অন্যদের পক্ষ থেকে’ (Namens de ander)। এই বইটি ২০১০ সালে প্রথমে ইয়ো পেটার্স পুজিপ্রাইস (Jo Peters Poëzieprijs) পুরস্কার এবং ২০১১ সালে ‘J.C. Bloem-poëzieprijs’ পুরস্কার লাভ করে। এস্টার নাওমি পারকুইন ২০১৭ সালে ‘পোয়েট লরিয়েট অফ দ্য ইউনাইটেড কিংডম’ নির্বাচিত হন। উদ্বেগ এবং ভয় এস্টার নাওমি পারকুইনের কবিতার উপজীব্য। ওভার দ্য মিনার || এস্টার নাওমি পারকুইন তুমি আরও কিছুক্ষণ থাকতে পারো, ধরো কাল নরম সূর্য উঠবে তোমার থাকার মতো খুব সুন্দর দিন হবে। হয়ত আমরা বৃষ্টিতে খেলতে যাবো। লেপের ওমে কফি খাবো, নরম নরম ডিম সেদ্ধ কিংবা রুটি-স্যামনের সাথে মিষ্টি বাজনা হয়ত কিছুই করবো না খিদে পেটে ইচ্ছে আর প্রশ্নের ভেতর। কিন্তু তুমি যেতেও পারো, যেমন আজই যেতে পারো। কাব্যগ্রন্থ : ‘রুমালের অর্ধেকছড়ি’ (Servetten Halfstok) ১৯৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন সমকালীন নেদারল্যান্ডসের আরেক জনপ্রিয় কবি হানাহ ফান বিন্সব্যার্খেন (Hannah van Binsbergen) ।২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই ‘রাগান্বিত নক্ষত্রপুঞ্জ’ (Kwaad gesternte) বইটির জন্য ২০১৭ সালে তিনি ‘VSB Poetry Prize’ পুরস্কার লাভ করেন—তিনিই এই পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে সবথেকে কনিষ্ঠ। অনুবাদেও হানাহ সিদ্ধহস্ত। তিনি রাশিয়ার ক্ষণজন্মা কবি নিকা তুরবিনার কবিতা ডাচ ভাষায় অনুবাদ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন, হানাহ অনূদিত গ্রন্থটির শিরোনাম ‘আমার জীবন একটি নকশার পাতা’ (Mijn leven is een schetsblad) । চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তার প্রথম উপন্যাস ‘হার্পি’ প্রকাশিত হয়েছে। হানাহ ফান বিন্সব্যার্খেনের কবিতায় কাজ, গোপনীয়তা, যৌন সহিংসতা, সন্ত্রাসী পেঁচা এবং কালো যাদু’র উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। তিনি নিজেও তার গোপনীয়তার প্রতি অনুরাগী, সম্ভবত সে কারণেই স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না। ডিজনি গার্লস || হানাহ ফান বিন্সব্যার্খেন সুন্দর মেয়ে হলেই সবসময় সুখে থাকে না। আমাদের মাঝেই কতজন আছে যারা কোনো স্পর্শ চায় না। ভয় আর বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার জন্যে সবাই একসাথে হয়েছি আর এক টুকরো মেঘ অনিমেষে এই ঘরে তাকিয়ে। গলায় হার আর আঙুলে আংটি, নিজেকে অবহেলা করে আর চায় অন্যেরাও তাকে অবহেলা করুক। কঠোর তিনি আর তার অসীম সহ্য ক্ষমতা, প্রমাণ করতে তিনি অনেক দূর যেতে পারেন কিন্তু আমরা জেনে গেছি তার শরীরের কোথাও চকচক ঝকঝক করছে যেখানে আমরা বা তিনি ভাবতে পারেন না না সে নয় না দুর্ঘটনাবশত তার ঘাড়ে নয় নাচের উঠোনে নয় চক্কর দেওয়া শকুনের মতো কিংবা কোনো খেলার অংশ হতে নয় গোপনীয়তা প্রতারিত হয় সেই উদাসীন হাতে নয় কখনো তার নিতম্বের ওপর আলো ফেলে সমস্ত আলো নিভিয়ে তাকে রক্ষা করতে নয় আমি সব খুঁজে দেখেছি, যে নরম ভালবাসা আমি চাইছি তা কোথাও নেই। কাব্যগ্রন্থ : ‘রাগান্বিত নক্ষত্রপুঞ্জ’ (Kwaad gesternte)

Tuesday 27 October 2020

সর্বতো মঙ্গল রুতে বিনোদহীন গাই

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – সাতাশে (অক্টোবর) সারা টুর্নামেন্টে ভাল খেলে, ফাইন্যালে যেয়ে বাই ডিফল্ট প্রতিবার হারা ওভারকনফিডেন্ট নেদারল্যান্ডসের জিনে আছে। আসেন দেখি কেমনে করে গোল খাইঃ আজকে বিশাল কোন সংবাদ সম্মেলন নয় শুধু সংক্ষেপে মূল জিনিসগুলো বলবো আর সর্বশেষ পরিস্থিতি সবাইকে জানাবো। চৌদ্দই অক্টোবর থেকে আমরা আংশিক লকডাউনে আছি এবং এখনও সময় আসেনি ঠিক করে বলার, আংশিক লকডাউন থেকে পূর্ণ লকডাউনে যাবো নাকি লকডাউন শিথিল করবো। সিদ্ধান্ত নিতে আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে। ভাইরাসকে যেমন তাড়াতে চাচ্ছি তেমনি অর্থনীতিও সচল রাখতে চাইছি। এই দুইটির সমতা করতে চাচ্ছি। আক্রান্তের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়ে চলছে। আমরা জিজিডি আর হাসপাতাল দুই জায়গারই পরীক্ষা পদ্ধতি আর চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করবো। আমাদের কাছে আরও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য থাকবে। যদি সংক্রমণ সংখ্যা আরো বাড়াবাড়ির দিকে না যায় তাহলে সামনের মংগলবারে আবার গতানুগতিক সংবাদ সম্মেলন হবে নইলে আরও আগে হবে। আবারো বলছি, সমস্ত পরিস্থিতির তথ্য আমাদের কাছে আছে এবং এখন সেটির হিসেব নিকেশ চলছে। পুরোপুরি লকডাউনে গেলে শুধু চিকিৎসা ব্যবস্থা নয়, অর্থনীতির কি অবস্থা হবে, মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক জীবনে এর কি প্রভাব পরবে সবকিছু নিয়েই মূল্যায়ন চলছে। স্বাস্থ্যকর্মী আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মানুষ ছাড়া সবাইকে বাড়িতে থাকতে হবে, মাঝে মধ্যে শুধু বাজার করার জন্যে বাইরে যেতে পারবে। তাই সবাইকে বারবার বলা হচ্ছে, নিয়মনীতি মেনে চলো, এতদূর যেতে বাধ্য করো না। ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ আমাদের নিজেদের হাতে। নিয়মনীতির দিকে কঠোর দৃষ্টিপাতের জন্যে আজকে দোকানমালিকদের সাথে কথা বলা হয়েছে। আপাতত সংক্রমণের মাত্রা এক দশমিক ছয়, যেকোন মূল্যে এটিকে একের নীচে নামিয়ে আনতে হবে। এখন লকডাউনে গেলে আপাতত হাসপাতালের ভীড় কমবে না তবে ভবিষ্যতের সংক্রমণের মাত্রা কমতে সাহায্য করবে। ক্যাবিনেট যা দরকার তাই করবে, কিন্তু সে পরিস্থিতি তৈরী করা কি ঠিক হবে? মার্চের ফলাফল থেকে আমরা জানি, আমরা চাইলে এই নিয়মগুলো পালনের মধ্যে দিয়েই আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি। স্বাস্থ্যকর্মীরা আর কুলাতে পারছে না, সংক্রমণ রোধ করতেই হবে। আমাদেরকে আবার জুন-জুলাইয়ের পরিস্থিতিতে ফেরত যেতে হবে যেখানে কম সংক্রমণের পরিস্থিতিতে সবাই স্বাভাবিক জীবনের দিকে ফিরছিলাম। কিন্তু সেটার জন্যে সময় লাগবে। অন্তত ডিসেম্বর পর্যন্ত আংশিক লকডাউনের কোন পরিবর্তন হবে না। সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীরা, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা, সাহায্যকারীরা নিজেরা অসুস্থ হচ্ছেন, কেউ কেউ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন, কেউ কেউ কেয়ারন্টিনে আছেন। অনেক রোগী, অপ্রতুল স্বাস্থ্যকর্মী সবকিছুকে দ্বিগুন ঝামেলাপূর্ণ করে তুলেছে। কিন্তু তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা যাবে না, ফ্রন্টলাইনের কর্মীদের সম্মান করতে হবে, পরিস্থিতি বুঝতে হবে। পাব্লিক ট্রান্সপোর্টের কর্মী থেকে পুলিশ সবাই আমাদের সেবা দিচ্ছে, যার যার দায়িত্ব পালন করছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা বাঞ্চনীয়। গত উইকএন্ডেও অনেক বাসায় পার্টি হয়েছে, বড় বড় পার্টি হয়েছে এই নিয়ে আপনার বক্তব্য শুনতে চাই মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট? দায়িত্বহীন, চরম দায়িত্বহীন কিন্তু আশার কথা হলো নেদারল্যান্ডসের পঁচিশটি শহরের মেয়র একসাথে বসে এই নিয়ে আলোচনা করেছে, কঠিন থেকে কঠিনতর ভাবে নিয়ম পালনের দিকে তারা দৃষ্টি রাখবে। কিছু কিছু হাসপাতালে তিল ধারনের ঠাই নেই, স্বাস্থ্যকর্মীরা কতদিন এভাবে সামলাতে পারবে মিনিস্টার ইয়ং? পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা আংশিক লকডাউনের ওপরও আরো কিছু নিয়মের কথা ভেবেছি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা তথা স্বাস্থ্যকর্মীদের আমাদের রক্ষা করতে হবে। মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট তেরোই অক্টোবর বলেছিলেন আজ জানাবেন, আজ আবার বলছেন সামনের মংগলবারে জানাবেন, আবার বলেছেন সব পরিস্থিতি আপনাদের জানা আছে, মূল্যায়ন চলছে, কিসের ভিত্তিতে বলছেন? তেরো তারিখে কি আপনি বা আপনারা সাতাশ তারিখের পরিস্থিতির হিসেব করে উঠতে পারেন নি? শুধু একটি বিষয়কে মাথায় রেখে হিসেব করা হচ্ছে না, সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হচ্ছে তাই পরিস্থিতি সারাক্ষণ যাচাই করা হচ্ছে। সামনেই উৎসবের দিন, সে নিয়ে কিছু ভেবেছেন? ডিসেম্বরের শুরুতেই সেন্ট মার্টিন আর সান্টা ক্লজের উৎসব, যদি পুরোপুরি লকডাউনে না যাই তবে তিনজন মেহমান নিয়ে প্রতিটি পরিবার উৎসব পালন করতে পারবে, আর পুরোপুরি লকডাউন হলে সেটিও সম্ভব হবে না। ক্রিসমাস নিয়ে এখনো ভাবি নি। ক্রিসমাস ভ্যাকেশান আর শীতকালীন খেলাধূলা নিয়ে কি ভাবছেন? খুব শীঘ্রই নেদারল্যান্ডসের ভেতরে ছুটি কাটানো কিংবা নেদারল্যান্ডসের বাইরে যাওয়া নিয়ে নিয়মগুলো জানিয়ে দেয়া হবে, আপাতত পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে যে ট্রাভেল এডভাইজ দেয়া আছে, সেগুলো অনুসরণের কথা সবাইকে বলা হচ্ছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত কোন রেস্টুরেন্ট কিংবা ক্যাফে খোলার কোন সম্ভাবনা আপাতত নেই।

Monday 26 October 2020

শাস্তি ছাড়া সন্তান বড় করার ১০ উপায়

https://bangla.bdnews24.com/kidz/article1819424.bdnews?fbclid=IwAR2-60O2CDNV2EcfToOFynvq8P0Dg7Dfpx01qML94qnyzmuXoNWXxECvH8c ‘রেইজিং আওয়ার চিল্ড্রেন, রেইজিং আওয়ারসেলভস’ নামে এ বইটি এখন পর্যন্ত উনিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বেস্ট সেলার এ বইয়ের লেখক নাওমি আলডর্ট। তিনি সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে শিশু-সন্তান বড় করা নিয়ে বিভিন্ন রকম সহায়তা ও নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। বাবা-মা আর সন্তানের সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে নাওমি আলডর্ট নিষ্ঠার সঙ্গে বিশ্বজুড়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা, বাবা-মায়ের আবেগ এসবই তার কাজের অন্তর্ভুক্ত। সন্তানকে শাসন করা তার কাজের পদ্ধতি নয়, বরং শাসন না করে একসঙ্গে কিভাবে শান্তিতে বসবাস করা যায় সেটাই তার গবেষণা ও কাজের মূল প্রতিপাদ্য। মা-বাবা আর শিশু-সন্তানদের সম্পর্ক নিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত লিখে যাচ্ছেন। নাওমি আলড্রটের মতে, বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় তুচ্ছ সব কারণে বাচ্চারা কিছু ভাঙে কিংবা দুষ্টুমি করে। কখনো নিজের মত হাসিখুশি খেলছে আবার কখনো রেগে গেছে কিংবা বিভ্রান্ত হচ্ছে। বাচ্চা যতটা কষ্টে থাকে ততটাই কঠিন আচরণ করে আর ততোটাই তার ভালবাসা আর বোঝাপড়ার দরকার হয়। অন্যভাবে বললে, বাচ্চাদের কোন আচরণই খারাপ নয়। আমরা এভাবে দেখতে পারি- যেসব আচরণ বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবে করে থাকে এই বাচ্চাটি সেটি করছে না। দায়িত্বহীন আচরণ থেকে বিরত রাখতে, নিয়মনিষ্ঠভাবে শিশুদের বড় করার জন্য আমরা যেসব শাস্তি দেই, চড় মারা কিংবা কথা না শোনার পরিণতিতে আলাদা রাখা, সেগুলোতে আমি আস্থা রাখি না শুনলে অনেক অভিভাবকই অবাক হন। আমাকে জিজ্ঞেস করে, তাহলে বাচ্চাদের আচার ব্যবহার শেখাবো কী করে? আমি বলি, বাচ্চারা তা-ই শেখে যা তারা দেখে। শিশুদের শেখানোর সবচেয়ে সোজা রাস্তা হলো, যা শেখাতে চাই নিজে সেভাবে আচরণ করা। সহানুভূতি আর উপলব্ধি। আমরা যদি মারি, শাস্তি দেই, চেঁচাই তবে শিশুরাও সেই উগ্রতাই শিখবে। তবে শিশুদের আলাদা করে রাখা অনেকটা ছেড়ে চলে যাওয়ার মতোই ঘটনা। শিশুরা কি করে তাদের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করবে সেটা শেখানোর পরিবর্তে তাদেরকে এই কথাই জানানো হয়, তাদের ভয়ের সময় যখন আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তখন আমরা তাদের পাশে নেই। কিন্তু আমি বেশির ভাগ সময়ই চাই, শিশুটির পাশে থেকে তাকে তার অনুভূতি নিজের মতো নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দিতে। এর মানে কখনোই এটা না যে, সন্তান বড় করার দায়িত্ব থেকে আমরা নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি কিংবা সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি। রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি নয়, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মারামারি নয়, কাপড়ে প্রস্রাব করা নয়, প্রতিবেশীর বাগানের টিউলিপ ছেঁড়া নয়, কুকুরকে ব্যথা দেওয়া নয়। এগুলো শাস্তি নয়, সীমারেখা। নিজেকে এখন প্রশ্ন করবে তো বাচ্চাকে কি করে শেখাবো ভদ্র আচরণ করতে, পরেরবার এ কাজগুলো না করতে? গবেষণা থেকে দেখে গেছে যে প্রকৃতপক্ষে শিশুকে শাস্তি দিলে তারা আরও বেশি অসদাচরণ করে। শাস্তি পেলে শিশুরা আরও উগ্র আর আত্মরক্ষামূলক আচরণ করে। এড্রেনালিনে হরমোনের প্রবাহ, যুদ্ধ, পালানো কিংবা বলিষ্ঠতা হরমোনের প্রদাহ বেড়ে যায় আর একইসঙ্গে যৌক্তিক ভাবনাকে ব্যাহত করে। কি কারণে তারা শাস্তি পেয়েছিলো শিশুরা সেটা দ্রুতই ভুলে যায়, এমনকি সপ্তাহজুড়ে শাস্তির অনুভূতির পরও এর পরিণাম ভুলে থাকে। যদি তারা কিছু শেখে সেটা হলো মিথ্যে কথা বলা, যাতে পরেরবার ধরা না খায়। ‘রেইজিং আওয়ার চিল্ড্রেন, রেইজিং আওয়ারসেলভস’ বইটির প্রচ্ছদ‘রেইজিং আওয়ার চিল্ড্রেন, রেইজিং আওয়ারসেলভস’ বইটির প্রচ্ছদশাস্তি সন্তানের সঙ্গে পিতামাতার দূরত্ব বাড়িয়ে তাদের ওপর পিতামাতার প্রভাব কমিয়ে দেয়। যেসব সন্তানরা বাবা-মায়ের কাছে সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং নিশ্চিত বোধ করে না তারা ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে পারে না, তাদের বুদ্ধিমত্তার মাত্রাও কমে যায়। সোজা কথা, একজন দায়িত্বশীল, বন্ধুপ্রতীম আর সুখি সন্তান তৈরি করতে শাস্তি কোন সাহায্য করে না। এ শুধু ভুল শিক্ষাই দেয়। এর বদলে যদি আমরা সীমারেখা তৈরি করে দিয়ে তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ থাকি এবং তাদের খুব কাছাকাছি থাকি, তাহলে শিশুরা আরও ভাল বুঝতে পারে। ওরা আমাদের শাসনের কাছে নত হবে না, তারা নিজেদেরকে দায়িত্বশীল ও প্রতিরোধী ভাবে, অন্যের ওপর তাদের প্রভাব দেখতে চায় এবং সবকিছুতে নিজেকে জড়াতে চায়। বাবা-মাকে দেখে শিশুরা যেহেতু শিখেছে কিভাবে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তারা নিজেরাও জানে কিভাবে আবেগকে আর আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তারা যেরকম সেভাবেই যেহেতু তাদেরকে গ্রহণ করা হয়েছে তারাও নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তার কারণ খুঁজতে উৎসাহী থাকে। ১. নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা এখান থেকেই শিশুরা নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। যখন রেগে থাকবেন তখন সেই বিষয় নিয়ে আলাপচারিতার দরকার নেই। শিশুর ওপর সেই মুহূর্তে অনেক রেগে থাকলে, একজন চমৎকার অভিভাবক হিসেবে আপনার কি করা উচিত? তাহলে তাই করুন। আর যদি না করতে পারেন, সেই পরিস্থিতিতে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার আগে খুব গভীর নিঃশ্বাস নিন। সন্তানকে শাস্তি দেওয়ার প্রবৃত্তি নিবৃত করুন। এটি সবসময় অপ্রয়োজনীয় ভুল থেকে রক্ষা করে। ২. অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন এড্রেনালিন হরমোন কিংবা যুদ্ধ, পালানো কিংবা বলিষ্ঠতা হরমোনের প্রাবল্যের কারণে যখন আপনার সন্তান খুব অস্থির তখন সে কিছু শিখতে পারবে না। তখন তাকে উপদেশ দেয়ার বদলে নিজের কাছে বসিয়ে নিজের উপস্থিতি দিয়ে তাকে তার কাজটি উপলব্ধি করতে দেয়া উচিত। আপনার মানসিক-পীড়িত শিশুর জন্য একটি সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করা হবে আপনার লক্ষ্য। নিরাপদে, নজর দিয়ে, সমাধানের মনোভাব নিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করাই একটি শিশুকে শিখতে সাহায্য করে। সবোর্পরি কিভাবে নিজের আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয় তা জানতে হবে। উত্তাল আবেগপূর্ণ মুহূর্তে ওদের সঙ্গে তর্ক না করার চেষ্টা করুন। পরে সে নিজেই এত ভালবাসবে এত কাছের ভাববে যে নিজে থেকেই আপনার কথা শোনার জন্যে তৈরি হয়ে যাবে। আর দয়া করে ‘চুপ করো’ এই জাতীয় কথাগুলো বলবেন না। কারণ, এ কথাগুলো অনুভূতিকে আহত করে। আর ‘মিথ্যা কথা বলো না’ এমন কথা আমাদের হৃদয়ের অনুভূতি ছিঁড়ে ফেলে। ৩. একটি শিশু কী করে শেখে সেটা ভাবার চেষ্টা করুন উদাহরণ হিসেবে দাঁত মাজার কথাই ধরা যাক। সন্তান শিশু থাকতেই শুরু করুন, তাকে সঙ্গে নিয়ে নিজের দাঁত মাজুন। ব্যাপারটা তার জন্য একটু একটু করে মজাদার করে তুলুন। তারপর ধীরে ধীরে তার ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিন এবং একদিন সে নিজেই করবে। ঠিক এই নিয়মেই সে ধন্যবাদ বলা শিখবে, নুয়ে পরা, নিজের জিনিস মনে রাখা, নিজের পোষা জীবকে খাওয়ানো, স্কুল থেকে দেওয়া বাড়ির কাজ করা এরকম আরও অনেক কিছুই যা আপনি ভাবতে পারেন। নিয়মানুবর্তিতা একটি অমূল্য ব্যাপার, কারণ এটি আপনার সন্তানকে প্রাথমিকভাবে দক্ষতা অর্জনে গঠন করবে, ঠিক যেমন বাড়ি তৈরি করতে গেলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে হয়। সন্তান জ্যাকেট ভুলে রেখে আসলে আপনি রাগ করতেই পারেন, কিন্তু শিশুর সঙ্গে চিৎকার চেঁচামিচি তাকে মনে রাখতে সাহায্য করবে না যতটা আপনার পাশে থাকা করবে। ৪. সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার সঙ্গে কথা বলুন যে কোন পরিস্থিতিতেই সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন, আর তার আরও ভাল করার ইচ্ছাকে উৎসাহ দিন। সব সময় মনে রাখুন, শিশুদের মন খারাপ থাকলে কিংবা আমাদের থেকে আলাদা থাকলে অন্যায় আচরণ করবেই। বুকে টেনে নিয়ে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি জানি তুমি রেগে আছো, আমাকে বলো, কি চাও’। মারবেন না তাকে। কিংবা ধরে বলুন, ‘আমি জানি তুমি আরও খেলতে চাইছো, কিন্তু এখন তোমার ঘুমের সময়।’ খুব ভালবাসা নিয়ে তাকিয়ে বলুন, আমি জানি এখন তোমার মন খারাপ। কাঁধে হাত দিয়ে বলুন, বিস্কুটের কথাটা আমাকে বলতে তুমি ভয় পাচ্ছো! ৫. নিয়ম-নীতি শেখান, তবে ব্যাখ্যা করে দিন কিছু নিয়ম মানা অবশ্যই দরকার, আর এর থেকে আপনি ওর অবস্থানও জানতে পারেন। যখন শিশুরা অনুভব করে আমরা তাদের বুঝতে পারছি তখন তাদের মধ্যেও আমাদের কথা মেনে নেওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়। ‘এত জেদের কিছু নেই, তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো আর রাগ করে আছো, কিন্তু সেটা তুমি তোমার ভাইকে গুছিয়ে বলো।’ ‘এখন ঘুমের সময়। আমি জানি তুমি অনেক লম্বা সময় ধরে খেলতে চাও।’ ‘তুমি চাও না বাবা-মা তোমাকে না বলুক, আমি তোমার কথা শুনেছি, কিন্তু জবাব হলো ‘না’। আমরা তো দুজন দুজনকে চুপ থাকো বলতে পারি না, এমনকি অনেক রাগ আর ক্ষুব্ধ হলেও না। ‘তুমি যত ভয়ই পাও, আমি চাই তুমি সবসময় আমাকে সত্যি কথাটাই বলো।’ ৬. খারাপ ব্যবহার একটি অভিব্যক্তি মাত্র, কারণ জানুন আপনার সন্তানের আচরণ কি ভয়ংকর? তাহলে তার ভেতরে ভয়ংকর কোন অনুভূতি খেলা করছে, তার আরও বেশি ঘুম দরকার। আপনার সঙ্গে অনেক বেশি সময় কাটানোর দরকার, বিশ্রাম দরকার, কান্না করার অনেক বেশি সুযোগ দরকার, আর এসবই ভেতরের আবেগকে সহজে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। মূল কারণটা অনুসন্ধান করুন, তাহলে খারাপ ব্যবহারগুলো এমনিই সমাধান হয়ে যাবে। ৭. হ্যাঁ বলুন যদি একটু আদর করে বলেন, আমরা যা বলবো, শিশুরা সব কথাই শুনবে। না এর পরিবর্তে হ্যাঁ বলার কায়দা খুঁজে বের করতে হবে, এমনকি আপনি যদি সীমারেখা তৈরিও করে রাখেন তবুও। হ্যাঁ এখন সময় হয়ে গেছে সব গোছানোর। হ্যাঁ আমি তোমাকে সাহায্য করবো। হ্যাঁ আমি তোমার খেলনাটাকে রেখে দিচ্ছি এখানে। হ্যাঁ ঠিক আছে, তুমি এখন নালিশ করতে পারো। হ্যাঁ আমরা তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারলে একটা গল্প বেশি পড়তে পারবো। হ্যাঁ আমরা অনেক মজা করতে পারবো। হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালবাসি এবং হ্যাঁ আমি তোমার অভিভাবক হতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত। হ্যাঁ, আপনার সন্তান ঠিক সেভাবেই আপনাকে উত্তর দেবে ঠিক যেমন আপনি তাকে বলছেন। ৮. প্রতিদিন সন্তানের সঙ্গে আর্দশ সময় কাটান মোবাইল বন্ধ করে, কম্পিউটার বন্ধ করে নিজের সন্তানকে একবার বলুন, পরের বিশ মিনিট শুধু আমরা দুজন গল্প করবো। কী করবো এখন আমরা দুজন? তাকেই ঠিক করতে দিন। পৃথিবীজুড়ে শিশুদের নাকাল হওয়ার তো শেষ নেই, কিন্তু এই বিশ মিনিটের জন্য তাকে প্রাধান্য দিন এবং তাকেই জিততে দিন। চাপা হাসি মনের তিক্ততা, বিদ্বেষ আর অশান্তি দূর করে। তাই তাকে আশ্বস্ত করুন নিরীহ খেলা ও হাসির মাধ্যমে। বালিশ দিয়ে মারামারি খেলুন, কুস্তি করুন, পাশাপাশি শুয়ে থাকুন। তাকে ছোটাছুটি করতে, চেঁচামিচি করতে, তার প্রিয় কাজগুলো করতে দিন। তার সব অনুভূতিগুলোকে আদর দিন। নিজের শতভাগ তাকে দিন। শিশুরা যখন জানবে, প্রতিদিন তাদের বাবা-মায়ের কাছে তারা একটা নির্দিষ্ট বিশেষ সময় পাবে খেলাধুলা করার জন্য, সেটা তাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে, তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সাহায্য করবে এবং সেটা তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করবে। ৯. ক্ষমা করতে জানতে হবে আপনি যদি সারাক্ষণ শুধু নিজের কথাই ভাবেন তবে আপনি কখনোই অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতো অভিভাবক হতে পারবেন না। ঠিক আপনার সন্তানের যখন খারাপ লাগে, সে যেমন ভাল ব্যবহার করে সেরকমই কিছু হবে। কিন্তু আপনি সবসময় সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করতে পারেন। আজই শুরু করুন। ১০. আলিঙ্গন করুন যখন সবকিছুতেই ব্যর্থতা আসে, আপনি শক্ত হয়ে সন্তানকে আলিঙ্গন করুন, তাকে আদর দিন। জুড়ে থাকা, ভালবাসা আর সংযোগের নামই তো অভিভাকত্ব।

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – তেইশে (অক্টোবর)

পুরো ইউরোপই করোনায় জর্জরিত তার মধ্যে নেদারল্যান্ডস ও আছে। প্রতিদিন প্রায় দশ হাজার করে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। কোন আশার আলো নেই। হাসপাতালের করোনা ডিপার্টমেন্টে আর জায়গা নেই, আইসিইউ ও প্রায় ভর্তি। স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পরেছে। রোগীদের এক শহর থেকে অন্য শহরে পাঠানো হচ্ছে। জার্মানীতে কিছু করোনা রোগী পাঠানো হয়েছে, জার্মানীকে অসংখ্য ধন্যবাদ প্রতিবেশীর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্যে। আমি প্রেসিডেন্টকে ফোন করে নেদারল্যান্ডসের জনগনের তরফ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। কিন্তু এই রেখাটিকে বদলাতে হবে। তেরো তারিখের পর মানুষজনের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে কিন্তু তার ফলাফল দেখার জন্যে আমাদেরকে আরও অপেক্ষা করতে হবে। লকডাউন চালু থাকবে নাকি শিথিল হবে না আরো কিছু যোগ করতে হবে এই নিয়ে আমি আর হুগো দ্যা ইয়ং সামনে কথা বলবো। রাজার পূর্ব পরিকল্পিত হেমন্তকালীন ছুটি নিয়ে সারাদেশে কথা হচ্ছে। রাজার ছুটি বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম। আবারও জানাচ্ছি, ভুল অনুমানের ওপর পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। রাজা নিজেও সেটা বুধবারে সবাইকে জানিয়েছে যেটাকে আমি সম্মান করি। ফ্রীডম অফ স্পীচ নিয়ে ফ্রান্সে যা ঘটে গেলো তা অমানুষিক। আমি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টে এমানুয়েল ম্যাক্রোর বুধবারের ভাষণের পর তার সাথে ফোনে কথা বলেছি। আমরা একবার নীরবতা পালন করেছি, সামনের মংগলবারে ক্যাবিনেটে স্যামুয়েল প্যাটির জন্যে আবার নীরবতা পালন করবো, আমরা ফ্রান্সের জনগনের পাশে আছি। প্রতিদিন দশ হাজার সংক্রমণ, আপনার ধারনায় ছিলো? সেপ্টেম্বরে দেয়া নিয়মগুলো যথেষ্ঠ ছিলো না প্লাস কম্পিউটার সিস্টেম আপডেটেড হয়েছে তাই আসলেই কি প্রতিদিন দশহাজার নাকি আগের হিসেবে এডজাস্টমেন্ট ঠিক ঠিক বলা যাচ্ছে না। নেদারল্যান্ডস কি আরো কঠিন লকডাউনের দিকে এগোচ্ছে? তেরোই অক্টোবরের ফলাফল এখনও ঠিকঠাক বোঝা যাচ্ছে না, এরপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন দিকে যাবো আমরা। ইউরোপের মধ্যে আমরাই প্রথম এত কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছি, আমাদের পর ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড আর বেলজিয়ামও কঠিন পদক্ষেপের দিকে এগিয়েছে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ব্যবহার অনেক কমেছে, রাস্তায় লোক সমাগমও কম। প্রতিটি পদক্ষেপের প্রচন্ড একটা অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে তবে যা দরকার হবে তাই করতে হবে। প্রায় প্রতিটি সাংবাদিক মার্ক রুতে কে জিজ্ঞেস করেছেন কিংবা বলেছেন, নেদারল্যান্ডস কি সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করছে না কিংবা দেরী করে ফেলছে না? বুধবারে রাজার ভাষণ দেয়ার পেছনে কি আপনার উপদেশ ছিলো? একদমই নয়, নিয়মের মধ্যে আছে, রাজা যদি চায় এবং সেরকম উল্লেখযোগ্য কারণ থাকে রাজা ভাষণ দিতে পারেন। রাজা তার ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে তার অনুভূতি থেকে, নিয়মের মধ্যে থেকেই ভাষণ দিয়েছেন। আপনি রাজ পরিবারের ছুটি এবং রাজ পরিবারের অন্যান্য নিয়মিত জিনিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, আপনি আর রাজা দুজনেই ভুল করলেন? তাহলে কি এটা দুই গুন ভুল হলো? আর রাজা বুধবারের ভাষণে কি আপনার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষমা চাইলেন? সরকারী প্লেন কেন সন্ধ্যা সময় নেদারল্যান্ডস থেকে গ্রীসে খালি উড়ে গেলো আবার ফেরত আসলো? প্রিন্সেস কেন তার দুদিন পর ফিরলেন? এর প্রতিটিই রাজপরিবারের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার মধ্যে পরে, আমি এর কোন জবাব দিতে অপারগ।

Tuesday 13 October 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – তেরোই (অক্টোবর)

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – তেরোই (অক্টোবর) আগামী চার সপ্তাহের জন্যে আংশিক লকডাউন, দুই সপ্তাহ পর আবার পর্যালোচনা করা হবে, পুরোপুরি লকডাউনে যাওয়া হবে নাকি খানিক শিথিল করা হবে। সংক্রমণ ঠেকাতে হবে, কোন উপায় নেই। সামনের বছরের প্রথম দিকে কোন একসময় হয়ত ভ্যাক্সিন আসবে কিন্তু ভ্যাক্সিন এলেই কি? ভ্যাক্সিন প্রথমে পাবে যারা বিপদসীমায় আছে তারা বলেছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো দ্যা ইয়ং। যদি এভাবেই সংক্রমণ বাড়তে থাকে তাহলে নভেম্বরের শেষের দিকে হাসপাতালের অন্যান্য যত সব নিয়মিত এপয়ন্টমেন্ট ক্যান্সেল করে দিতে হবে এর মানে হলো প্রত্যেক চার জন রোগীর তিন জনের এপয়ন্টমেন্ট বাতিল হবে। এটা ভেবেই অন্য অনেক রোগের রোগী আতঙ্কে অসুস্থ হচ্ছেন। যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের পাশে সাধ্যমত দাঁড়ানোর জন্যে ক্যাবিনেট একমত হয়েছে। আটটি নিয়ম নিয়ে কথা বলেছেন প্রিমিয়ে রুতে। “দেড় মিটার সামাজিক দূরত্বের” সাথে কোন আপোষ নেই। “শিক্ষা” প্রথম কারণ এটি সবচেয়ে জরুরী। আপাতত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে চলছে চলবে তাতে কোন কিছুর পরিবর্তন আসবে না। “রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, বার আর কফিশপ” আবার বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। টেকওয়ে চলতে পারে, কফিশপ থেকেও টেকওয়ে চলতে পারে। হোটেল তাদের নিজেদের মেহমানদের জন্যে রেস্টুরেন্ট খোলা রাখতে পারে। যেসমস্ত জায়গায় এলকোহল বিক্রি হয় সব সন্ধ্যা আটটার মধ্যে বন্ধ করে দিতে হবে। এবং সন্ধ্যা আটটার পর বাড়ির বাইরে এলকোহল নিয়ে বের হওয়া কিংবা পান করাও নিষেধ। কংগ্রেস সেন্টার, থিয়েটার, সব জায়গায় ত্রিশ জনের বেশি মানুষ যেতে পারবে না, ক্যাবিনেট শুধু মাত্র ব্যতিক্রম। মিছিল, চার্চ এসব ব্যতিক্রম। এক পরিবারের বাইরে বন্ধুদের গ্রুপ চারজনের বেশি জমায়েত করতে পারবে না, ভেতরেও না বাইরেও না। দেড় মিটারের সামাজিক দূরত্ব আর তেরো বছরের নীচে বাচ্চাদের ধরা হচ্ছে না। চারজন মানে চারজন এ নিয়ে কোন তর্ক নেই, আমরা কঠোরভাবে নজর রাখবো। বাসায় তিন জনের বেশি মেহমান ডাকা যাবে না। আগে জন্মদিন বা অনুষ্ঠানে প্রতি ঘন্টায় তিন জন করে ডাকা হচ্ছিলো সেটিও চলবে না। একদিনে তিন জনের বেশি মেহমান ডাকা যাবে না। তেরো বছরের ওপরে তিন জন ম্যাক্সিমাম। খেলাধূলায় কোন দর্শক থাকবে না। আঠারো বছর পর্যন্ত সবাই টীমে অনুশীলন করতে পারবে তবে বাথরুম, ক্যান্টিন, চেঞ্জ রুম বন্ধ থাকবে তাই শাওয়ার বাড়ি এসে নিতে হবে। ট্রাভেল আর মানুষের ভীড় এড়াতে আপাতত কোন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যাবে না। দেড় মিটার দূরত্বে জিম করা যাবে। গ্রুপ স্পোর্টও চারজন ম্যাক্স। সব ধরনের অনুষ্ঠান আপাতত বন্ধ, বার্বিকিউ, ওপেন এয়ার কনসার্ট, মেলা ইত্যাদি সব বন্ধ। মিউজিয়াম, এমিউজমেন্ট পার্ক, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি খোলা থাকবে আগের নিয়মে। সিটি সেন্ট্রামে সন্ধ্যায় আর কোন দোকান খোলা থাকবে না, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবাইকে দোকান বন্ধ করে দিতে হবে। সুপারমার্কেট আর ওষুধের দোকান ছাড়া সব আটটায় বন্ধ। সুপারমার্কেট রাত আটটার পর কোন এলকোহল বিক্রি করতে পারবে না। ট্রলি স্যানিটাইজ করা আর দেড় মিটার দূরত্ব মেইনটেইন করে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি লোক দোকানে ঢোকানো হলে সেই মুহুর্তে দোকান বন্ধ করে দেয়া হবে। হোম ওয়ার্কের ব্যাপারেও কঠোরতা দেখানো হবে। এই নিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠান আর ইউনিয়নের সাথে কথা বলছি। সামনে শরতের ছুটি আসছে। যারা দেশের বাইরে ছুটি কাটাতে চায় তাদের বলা হচ্ছে, বেশির ভাগ দেশই যেহেতু রেড জোনে আছে খুব দেখেশুনে ছুটিতে যেতে। আর যারা হল্যান্ডের মধ্যেই কোথাও ছুটি কাটাবে তাদের অনুরোধ করা হচ্ছে, যতদূর সম্ভব ভেতরে থাকতে, অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি কম করতে। তারপরও বাইরে গেলে, মাস্ক ব্যবহার আবশ্যক। আমরা মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার জন্যে আদালতের সাথে ব্যস্ত আছি, তারপর যেকোন পাব্লিক প্লেসে সাধারণ মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। এমনকি হাই স্কুলের সব ছাত্রছাত্রীও স্কুলের ভেতরের পাব্লিক প্লেস, যেমন ক্যান্টিন কিংবা লাইব্রেরিতে বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করবে। চার স্তরের ঝুঁকি মাথায় রেখে রোড ম্যাপ বানানো হয়েছে। আপাতত সেই রোড ম্যাপ ফলো করতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমি জানি পরিস্থিতি খুব হতাশাজনক কিন্তু আমরা কিছুতেই তা ফ্রন্টলাইনে কাজ করা মানুষের ওপর ঝেড়ে দিতে পারি না। স্বাস্থ্যকর্মী, দোকানে কাজ করা মানুষ, বাসের চালক সবার প্রতি সম্মানজনক আচরণ কাম্য। হাসপাতালের ভিজিটর পুরো বন্ধ করতে চাই না কিন্তু কম করতে চাই। যারা সেখানে তাদের শেষ দিন গুনছেন পরিবারের ভালবাসা তাদের দরকার আছে। চৌদ্দই অক্টোবর বুধবার রাত দশটা থেকে এসব নিয়ম কার্যকর হবে। সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছেন, ইউরোপের মধ্যে নেদারল্যান্ডস সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দিয়ে যাচ্ছে, এরমানে কি জার্মান, ডেনিশ কিংবা ইটালিয়ানরা যেভাবে নিয়মনীতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছে, ডাচেরা দেখায় নি? মার্ক রুতে বলতে বাধ্য হলেন, আক্রান্তের সংখ্যা তো তাই দেখাচ্ছে তবে এবার আমরা কঠোরতর ভাবে দৃষ্টি রাখবো। পঞ্চাশ হাজার পুলিশ আছে, সাথে আছে নেইবারহুড গার্ডস তারা সবাই টহল দেবে, নিয়মের ব্যতিক্রম দেখলেই জরিমানা করা হবে। নিয়মনীতিতে কি কোন ফাঁক ছিলো মিস্টার প্রেসিডেন্ট? ফাঁক খুঁজলে তো পাওয়া যাবেই। চলুন ফাঁক খোঁজার চেষ্টা বাদ দিয়ে আমরা নিয়মগুলো পালনে সচেষ্ট হই, নিয়ম তো নিজ থেকে কাজ করে না, কাজ আমাদের করতে হবে। আর যেখানে যেখানে ফাঁক আছে ধরিয়ে দিন, আমরা শোধরাই, বারবার বলা হচ্ছে, আমরা যেকোন কার্যকারী পরামর্শ, পদক্ষেপের জন্যে উন্মুক্ত। এই প্রথম মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট এত কঠোরভাবে সর্তকবানী উচ্চারণ করলেন। করোনা মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে ক্যাবিনেটের বাইরে এখন জনগনও সোচ্চার। সামনের বছর নির্বাচন। উইশ ইউ অল দ্যা ভেরি বেসট মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট। ১৪/১০/২০২০

করোনাকালে শিক্ষা

বাংলাদেশে এইচ-এস-সি পরীক্ষা বাতিল ঘোষনা করা হয়েছে, আগের ফলাফলের ভিত্তিতে এইচ-এস-সি মূল্যায়ন করা হবে, এই ঘোষনায় নানা মহলে নানা বির্তক এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ আর ট্রল চলছে। অন্যান্য কিছুর মত এবারও রাখাল ভাই এসাইনমেন্ট দিলো, করোনাকালে ইউরোপের প্রাথমিক-মাধ্যমিক- উচ্চশিক্ষা কিভাবে চলছে সে সম্পর্কে জানাও। এবারের এসাইনমেন্ট শুধু নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক নয়। তবে আমি শুধু মেইনস্ট্রিম নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছি। ইংরেজি-আরবি বা অন্যান্য মিডিয়ামের বিস্তারিত খুঁজিনি। ইন্টিলিজেন্ট লকডাউন শিথিলের প্রথম ধাপ হিসেবে প্রাথমিক স্কুলই প্রথম দফায় খুলে দেয়া হয়েছিলো। বাচ্চাদের সংক্রমনের আশঙ্কা কম এবং বাচ্চাদের থেকে বড়দের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে অর্ধেক বাচ্চা একদিন অপর অর্ধেক বাচ্চা অন্যদিন এই ব্যবস্থা প্রথম দিকে ছিলো। পরে সব বাচ্চাই প্রতিদিন স্কুলে গিয়েছে। এটা অবশ্য নেদারল্যান্ডসের নিজস্ব উদ্ভাবন ছিলো না। করোনা নিয়ন্ত্রণে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোর পদক্ষেপগুলো সুফল দিচ্ছিলো তাই নেদারল্যান্ডস তাদের অনুসরণ করেছে। আইসল্যান্ড ও ডেনমার্কের প্রচুর নিয়ম নেদারল্যান্ডস অনুসরণ করেছে। বাংলাদেশেও আমি এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা আমি পত্রিকায় পড়েছিলাম, প্রয়োগ করা হয়েছিলো কি না জানা হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষা গতানুগতিক চলেছে। তবে সমাপনী পরীক্ষা হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, "শিক্ষক, স্কুল নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য শিক্ষা কর্মীরা বর্তমানে বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া এবং বাড়িতে থাকা শিশুদের জন্য শিক্ষার আয়োজনে খুব ব্যস্ত। এজন্য বিদ্যালয়গুলোর শক্তি প্রয়োজন। সে কারণে শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এই বছর শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষা দিতে হবে না।" এছাড়া নেদারল্যান্ডসে প্রতিটি বাচ্চার দুই বছর থেকেই মানসিক-সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা'র ফলাফল আলাদা করে রেকর্ডে থাকে বলে, প্রাথমিক শিক্ষার শেষ ধাপে, স্কুলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত থাকে বিধায়, সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল আলাদা তেমন কোন প্রভাব রাখে না। স্কুলের রেজাল্টের সাথে সাধারণতঃ সমাপনী পরীক্ষার রেজাল্টের বিরাট কিছু পার্থক্যও থাকে না। অন্যান্য বছরের মত এ বছরও, স্কুলের গ্রেডিংই চূড়ান্ত ছিলো। https://www.rijksoverheid.nl/actueel/nieuws/2020/03/18/geen-eindtoets-in-groep-8-dit-jaar নেদারল্যান্ডসে মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক একই সাথে চলে। মার্চের তেরো তারিখ থেকে স্কুল বন্ধ দেয়ার পর আঠারো তারিখ থেকে অনলাইনে ক্লাশ শুরু হয়। ক্লাশ, ক্লাশটেস্ট অনলাইনেই চলে। জুনের দুই তারিখ থেকে স্কুল আবার শুরু করে, যারা খুব ভাল ছাত্র-ছাত্রী তারা চাইলে স্কুলে আসতে পারে নইলে অনলাইনে ক্লাশ করবে আর যারা মাঝারি তারা ক্লাশে আসবে এই নিয়মে। তারপর যথানিয়মে কিছু স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা হয় কিন্তু বেশির ভাগ স্কুলই পুরো স্কুল ইয়ারের সাবমিশান আর ক্লাশ টেস্টের ভিত্তিতে গ্রেডিং দিয়েছে। খুব কম স্কুলে এবার বার্ষিক পরীক্ষা হয়েছে। সরকারী পরীক্ষা হয়নি। মে মাসে সাধারণতঃ সরকারী পরীক্ষা হয়, সে সময়ে করোনার বাড়াবাড়িতে আগের ফলাফলের ভিত্তিতে গ্রেডিং দেয়া হয়েছে আর অনলাইন টেস্ট ও গ্রেডিং এর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি চলেছে। এক বন্ধু কন্যা, মেডিকেলে ভর্তি হয়ে বলেছে, আমাদের সবাই বলবে, "দ্যা করোনা ব্যাচ"। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাশ এবং পরীক্ষা চলেছে। বরাবরের মত, পরীক্ষার সময়সীমা নির্ধারন করে দেয়া ছিলো, আর স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন টেষ্টের মত নির্ধারিত কিছু নিয়ম ছিলো, এক পেইজ শেষ করে অন্য পেইজে যাবে আর তারপর ফেরত আর আগের পেইজে যেতে পারবে না। তারওপর প্রত্যেক স্টুডেন্ট পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে মোবাইল অন করে পাশে রাখতে বাধ্য ছিলো, পরীক্ষকরা র্যান্ডম ফোন করে, তাদের চেক করেছে। ইংল্যান্ডে জুন থেকে জুলাই স্কুলগুলো খোলা ছিল। কেয়ার ওয়ার্কারদের কাজের সুবিধার জন্য, তাদের বাচ্চারা স্কুলে যেতে পেরেছে। বাকিরা হোমস্কুলিং করেছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর স্কুল বন্ধ ছিল তারপর সেপ্টেম্বরে যথারীতি স্কুল খুলেছে। করোনার জন্য এ বছর কোন পাবলিক পরীক্ষা হয়নি। এ লেভেল, এএস লেভেল, এবং জি সি এসি পরীক্ষার্থীদেরকে একটা হিসাব কষে গ্রেড দিয়ে দেয়া হয়েছে। অফিস অফ কোয়ালিফিকেশনের কষা হিসেব ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদ করায় স্কুল প্রথমে যে হিসেব করেছিল সেই হিসাবকে গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে প্রায় সব ছাত্র-ছাত্রী ফলাফলে খুশি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ দায়িত্বে অনলাইনে ক্লাশ এবং পরীক্ষা চালু রেখেছে। সুইডেনে ষোল বছর বয়স পর্যন্ত স্কুল খোলা ছিলো। ষোলোর ওপরে অনলাইন ক্লাশ ছিলো। সুইডেন লকডাউনে না গেলেও সরকারী পরীক্ষা হয়নি। সাবমিশান, আগের বছরগুলোর পরীক্ষার ফলাফল এবং এ বছরের ক্লাশ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি অনলাইন ক্লাশ এবং পরীক্ষা চলেছে। নরওয়েতে করোনার প্রকোপ কমে এলে স্কুল খুলে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সরকারী পরীক্ষা হয়নি। শিক্ষামন্ত্রী গুড়ি মেলবি বলেছেন, সময় এবং শক্তি পরীক্ষার পেছনে ব্যয় করার চেয়ে স্কুলের ভাল শিক্ষা প্রদান আর সঠিক মূল্যায়নে মনোনিবেশ করা বেশি জরুরী। লিখিত, ব্যবহারিক বা মৌখিক পরীক্ষা না হলেও ছাত্র-ছাত্রীরা যথাসময়ে ডিপ্লোমা পাবে।" বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাশ এবং পরীক্ষা চালু রেখেছে। https://www.regjeringen.no/no/aktuelt/alle-eksamener-for-10.-trinn-og-alle-skriftlige-eksamener-for-videregaende-skole-er-avlyst/id2694883/?fbclid=IwAR1G5ZOBzqCqPJnbvoQ-YbzcLVrVVfWZCTPyVpoPIL51XebwZEATS37m2HI এখানে নতুন শিক্ষা বছর শুরু হয় সাধারণতঃ সেপ্টেম্বর থেকে। দুই হাজার বিশ-একুশ সেশনে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে ক্লাশ আর পরীক্ষা স্বাভাবিক গতিতে চলছে আপাতত। এখনও সরকারি পরীক্ষার সময় আসেনি, সেটা দুই হাজার একুশের মে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অন লাইন আর অফ লাইন মিলিয়ে ক্লাশ আর পরীক্ষা চলছে। রাখাল ভাইয়ের সৌজন্যে তাতা ফ্র্যাঙ্কের করোনা ডায়রীতে আর একটি সংযোজন। কৃতজ্ঞতাঃ আশেকা শীতু, শ্রীপর্না রায়, রতন সমাদ্দার, তানিশা তালুকদার আর শোহেইল মতাহির চৌধুরী। ১১/১০/২০২০

Friday 9 October 2020

জন্ম_হোক_যথা_তথা – পর্ব দুই (স্পটলাইট – বেগমগঞ্জ)

“রোজী” স্বামী পরিত্যাক্তা ভদ্রমহিলা, বাবার আশ্রিত, দুটো ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোন রকম মানবেতর জীবন যাপন। প্রায় ভাঙা একটি ঘরে থাকতো যেখানে সহজেই দুস্কৃতিকারী প্রবেশ করতে পারে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে, স্বামীর কথা শোনে নাই, গুনাহগার বান্দা, আল্লাহ কঠিন শাস্তি দিয়েছে। সামাজিক দৃষ্টিতে, মিডিয়ার আগ্রহ আর জনগনের প্রতিবাদ শেষ হওয়ার পথে, এখন শুরু হবে সামাজিক বয়কট। কোথাও এদের কেউ ডাকবে না, সবাই এড়িয়ে যাবে। খারাপ বাড়ি, খারাপ পরিবার। মেয়ের বিয়ে হওয়াও কঠিন হবে, হয়ত তিন জেনারেশান এই ঘটনা টানবে। আশপাশ দিয়ে যে যাবে, দেখাবে ঐ যে ঐ বাড়ি, ঐ মেয়ের মা ইত্যাদি ইত্যাদি। ছেলে হয়ত খানিকটা রেহাই পেতে পারে । একটা মানুষ কত ভীত ছিলো, বছর ধরে অত্যাচারিত হওয়ার পরও, নাগরিক টিভির সাথে কথা বলার সময় বার বার প্রধান আসামী দেলোয়ারের নাম এড়িয়ে গেছে। নাগরিক টিভির অসুস্থ সাংবাদিক, সস্তা রিকি লেক শো’য়ের মত বারবার জিজ্ঞেস করছে, শুধু এইই করেছে, আর কিছু করে নাই আপনার সাথে? খারাপ কিছু? এর চেয়ে খারাপ আর কি হতে পারে কে জানে? সাংবাদিকের ত্বরিত মানসিক চিকিৎসার দাবী জানিয়ে রাখছি। ফেড্রিকস্টাড আচ্ছা ফেড্রিক্সটাডে যদি এই বয়সী “রোজী” থাকতো দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তাহলে কেমন হতো? সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের মানিতে চলতো, একটা সরকারী ফ্ল্যাটে থাকতো, বসার ঘর, খাবার ঘর, তিনটে শোবার ঘর, ব্যালকনি আর সামনে একটু সবুজ মাঠ, মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট টু লিভ। লিডল কিংবা আলডিতে বাজার করতো, ফ্ল্যাট স্ক্রীণ টিভিতে নেটফ্লিক্স, বছরে দু’বার ভ্যাকেশান যেতো, টাকা কম তাই হয়ত ইউরোপের মধ্যেই ভ্যাকেশান করতো। চিকিৎসা প্রায় ফ্রী আর বাকি সব কিছুতে সাবসিডি। মাসের শেষে কিছু হাতে জমেও যেতো বৈকি। কান্দাহার যদি কান্দাহারে থাকতো “রোজী” তাহলে এতক্ষণে দোররা মেরে কিংবা পাথর মেরে তার ভবলীলা সাঙ্গ করে দেয়া হতো। দোষ-গুন, বিচার-আচার মানে সময় নষ্ট। সাথে রোজী’র মেয়েকেও হয়ত পুতে ফেলতো, কে জানে। "দ্যা স্টোনিং অফ সুরাইয়া এম" সিনেমাটা যারা দেখেছেন কিংবা বইটা যারা পড়েছেন, সবাই এই বাস্তবটা জানেন। কলেজ জীবনে শংকরের বই খুব পড়তাম। একটা বই ছিলো, “মুক্তির স্বাদ”। এমেরিকা প্রবাসীদের নিয়ে, বড় একটা অংশ ছিলো বাংলাদেশি প্রবাসীরা। শংকর লিখেছিলেন, অনেক পরিবারই এমেরিকা পাড়ি দিয়েছিলো, বাংলাদেশের ভাল পজিশান ছেড়ে, এমেরিকা যেয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভারী, দোকানে কাজ ইত্যাদি প্রভৃতি কারণে আবার দেশে ফেরত চলে আসতে চাইতো। স্বামীরা আসতে চাইলেও কোন স্ত্রীই আসতে চাইতো না। হাজার কষ্ট করেও এমেরিকাই পরে থাকতে চাইতো, সামাজিক মুক্তির কারণে। (স্মৃতি থেকে লিখছি) তখন সেই বয়সে না ছিলো প্রবাসের অভিজ্ঞতা আর না ছিলো কিছু নিয়ে ভাবার ক্ষমতা। আজ জানি, “মুক্তির স্বাদ” কি জিনিস। তাই আবারো বললাম, জন্ম যথা তথা হলেই ভাগ্য কাজ করবে নারে পাগলা, জীবন নিয়ন্ত্রণ করে নির্দিষ্ট ভূখন্ড, নাগরিকত্ব কিংবা পাসপোর্ট। এই যে বসনিয়া হয়ে লোকে ইউরোপ পাড়ি দিচ্ছে, তাদের দোষ দেই না বরং বলি, আজ জীবন খুঁজে পাবি, ছুটে ছুটে আয় ------- দেশে থেকে ইতরামি করার চেয়ে প্রবাসে এসে কাজ করা অনেক সম্মানের

নারী

ডিভোর্সডঃ স্বামী’র মন জুগিয়ে চলতে পারেনি। রেপডঃ কি জামাকাপড় পরা ছিলো? সন্তানহীন দম্পত্তিঃ সমস্যা মেয়েটিরই হবে। পুত্রসন্তানের জন্ম হয় নিঃ মায়ের গর্ভের দোষ, ছেলে জন্ম দিতে পারেনি। আত্মনির্ভর মেয়েঃ বেশ্যা। কুসন্তানঃ মায়ের দোষ, আদর দিয়ে নষ্ট করেছে। খেলাধূলায় আগ্রহঃ মেয়েদের আবার খেলাধূলা কি! ভবিষ্যতের কথা ভাবো। অবিবাহিত মেয়ে আবার গাড়ি চালায়ঃ পুরুষ চড়িয়ে বেড়ায়। নিজস্ব মতামত দেয়ঃ কি কর্তৃত্বপরায়ণ চল্লিশ অব্ধি বিয়ে করেনি? ঃ বেপরোয়া না দায়িত্ব নিতে অক্ষম? বিবাহিতঃ স্বামী যেভাবে খুশি হয় সেভাবেই চলো। স্বামীর পরকীয়া? বউয়ের দোষ, ঘরে শান্তি না পেলে পুরুষ কি করবে! বিধবাঃ সম্পত্তির লোভে স্বামীকে খুন করেছে। পুনঃবিবাহঃ স্বামী মরে গেছে কোন শোকই নেই দেখি! পারিবারিক নির্যাতনঃ মেয়েটা কি করে? শুধু শুধু কি আর হাত ওঠে গায়ে? সময় পেলে ভেবো, ভাবো ------------------এই পৃথিবীতে মেয়ে হওয়া কি এত সোজা! মেয়েদের নয় মানুষ হিসেবে মানুষকে সম্মান করো। সূত্রঃ ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত, ভাষান্তর এবং ইষ্যৎ পরিমার্জিত (তানবীরা)।

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – ৯ই (অক্টোবর)

পৃথিবীর মধ্যে এখন প্রতি বর্গমিটারে সবচেয়ে বেশি করোনাক্রান্ত মানুষ রয়েছে নেদারল্যান্ডসে। ফ্রান্স আর স্পেন সহ টপ থ্রিতে আছি আমরা। যদিও এ সপ্তাহে পাঁচ হাজার মানুষ আক্রান্ত হবে বলে ধারনা করা হয়েছিলো কিন্তু আসলে আক্রান্ত হয়েছে ছয় হাজার। হাসপাতাল আর আই-সি-ইউতে ভীড় বাড়ছে যেটি খুবই চিন্তার বিষয়। গত সপ্তাহে দেয়া বিধি নিষেধ কতটুকু কাজ করেছে, নতুন কোন বিধি নিষেধের দিকে যেতে হবে কিনা আমাদের সেটি বলার সময় এখনো আসে নি। আরও বাহাত্তর ঘন্টা অপেক্ষা করা হবে ফলাফল দেখার জন্যে। সামনের মঙ্গলবারে  সংসদ থেকে করোনা নিয়ে নতুন বিধি নিষেধ আসবে।  রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, স্পোর্টস, থিয়েটার ইত্যাদি নিয়ে নতুন বিধি নিষেধ আসবে। পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া এড়ানোর সর্বাত্বক চেষ্টা করা হবে। সবকিছু নির্ভর করছে এই সপ্তাহান্তে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার ওপর।  হাসপাতাল গুলোতে সবাই খুব পরিশ্রম করে চলেছে, প্রতিটি বিভাগে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের থেকে শুরু করে নার্সিং সবাই। আবারও বলছি এভাবে চললে, প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্ট তছনছ হয়ে যাবে, হার্ট কিংবা ক্যান্সার অপারেশান করোনা থেকে কম জরুরী কিছু নয়। এটা নিয়ে আমরা সবাই খুব ভীত আছি।  যদিও দেখা যাচ্ছে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়ার মত নিয়মগুলো মানুষ মেনে চলছে। সামনের সপ্তায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মেলনে, ব্রেক্সিট, ইউরোপের জলবায়ু, ইউরোপ - আফ্রিকার সম্পর্ক ইত্যাদির সাথে করোনা ও আলোচনায় থাকবে।  মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট বারবার আপনি বলেছেন, নেদারল্যান্ডস একটি গনতান্ত্রিক দেশ, এখন একটার পর একটা বিধি নিষেধ চাপিয়ে দিয়ে আপনি কি মানুষের অধিকার হরণ করছেন না? এখানে যেহেতু মানুষের জীবন মৃত্যুর প্রশ্ন, আমি নিয়ম নীতির বাইরে যেতে পারি না। আমার কোন চয়েজ নেই। আমাদের সতর্কতা আমাদের করোনা থেকে রক্ষা করবে, নিয়মনীতি নয়।  এই যে মানুষ আপনার কথা শুনছে না, আপনি কি মনে করেন না, ডাচেরা খুব একগুঁয়ে? আমি আমার দেশ আর জাতি নিয়ে অনেক গর্বিত, এখানেও আমার নিজস্ব চয়েজের কোন ব্যাপার নেই। মিনিস্টার প্রেসিডেন্ট মাস্ক ব্যবহার কেন আবশ্যিক করা হচ্ছে না? দেখুন, মাস্ক ব্যবহারে খানিকটা উপকার হয় বটে কিন্তু পুরোপুরি কোন কাজ হয় এটার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায় নি তাই এটাকে বাধ্যতামূলক এখনো করা হয় নি।  একজন সাংবাদিক জিজ্ঞস করলেন, নেদারল্যান্ডস মোস্ট ইফেক্টেড দেশ এই ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কি? প্রিমিয়ে হেসে বললেন, আমি চেষ্টা করছি, চেষ্টা করা ছাড়া আমার আর কোন বিকল্প নেই। মানুষ ভয় পাচ্ছে, কমপক্ষে দেড় বছর করোনা নিয়ে ভুগতে হবে? জানি না, আমি সত্যিই জানি না। রোড ম্যাপ আঁকা হয়েছে, ফলো করতে হবে। আমি কিছুতেই জানি না কখন এটি পুরোপুরি ওভার হবে। 

Friday 2 October 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – ২৮শে (সেপ্টেম্বর) সামনের তিন সপ্তাহের জন্যে পরীক্ষামূলক কড়া নিয়মনীতি

ওয়ার্ক ফ্রম হোম আর ঐচ্ছিক নয় এখন থেকে নিয়ম, রেস্টুরেন্ট - ক্যাফে সব দশটায় বন্ধ আর সব খেলাধূলা চলবে মাঠে দর্শকদের অনুপস্থিতিতে উইকএন্ডের আগে ভাবা হয়েছিলো শুধুমাত্র বড় শহরগুলোকে কড়া শৃংখলার মধ্যে আনা হবে, এখন গড়ে প্রতিদিন তিন হজার মানুষ করোনাক্রান্ত হচ্ছে, আজকের এই নিয়ম নীতির পরও ধারনা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার লোক করোনাক্রান্ত হবে। তাই উনত্রিশে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পুরো দেশকেই এই নিয়মের আওতায় আনা হচ্ছে। আমরা ক্রমাগত ভাইরাসের পেছনে পরে যাচ্ছি, আমাদের উদ্দেশ্য ভাইরাসকে পেছনে ফেলে দেয়া। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন, আজকের ডাটা অনুযায়ী প্রায় একশো হাজারের ওপর করোনাক্রান্ত রোগী, আরও সঠিক ভাবে বললে, প্রতি একশো সত্তর জনে একজন করোনাক্রান্ত। মানুষ নিয়মনীতি মেনে চলছে না, এই সংখ্যা শুধু তারই উদাহরণ মাত্র। এখন হয়ত গুরুতর মনে হচ্ছে না কিন্তু একমাস পর সেটা ঝড়ের মত মনে হতে পারে। গত সপ্তাহে গড়ে পঁচাশি জন আইসিইউতে ছিলো, এই সপ্তাহে আছে একশো বিয়াল্লিশ জন। আজকে যে নিয়মগুলো দেয়া হবে তারপরও আমরা জানি, মধ্য অক্টোবরে আইসিইউতে গুলোতে প্রায় চারশো রোগী থাকবে। আমি শুধু সংখ্যা বলছি আর সংখ্যার কোন চেহারা নেই কিন্তু এই সংখ্যার কারণেই অন্যান্য রোগের চিকিৎসা আটকে যাবে। চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পরলে সবাই সমস্যায় পরবো। নতুন নিয়মগুলো দিয়ে আমাদের লক্ষ্য, সংক্রমণ এক দশমিক চার থেকে একের নীচে নামিয়ে আনা। আজ থেকে যে পদক্ষেপটা শুরু হবে তার কার্যকারিতা জানার জন্যে আমাদের এক থেকে দেড় সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। সাংবাদিক জানতে চাইলেন তাহলে আপনি কি সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করে ফেলেন নি? স্বাস্থ্যমন্ত্রী দ্যা হুগো জানালেন, না, বরং সংক্রমণ ঠেকানোর জন্যে অগ্রীম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জার্মানী সহ অনেক দেশেই বলা হচ্ছে, ভেন্টিলেশান সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে, এই নিয়ে আপনারা কি ভাবছেন? স্কুল, বৃদ্ধাশ্রম, নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র সব জায়গার ভেন্টিলেশান সিস্টেম পরীক্ষা করা হচ্ছে, কি করে আরও ভাল করা যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হোম অফিস ম্যান্ডেটরি, তারপরও যদি অফিস করা হয় এবং অফিস থেকে সংক্রমণ হয় তাহলে সে অফিস চৌদ্দ দিনের জন্যে বন্ধ করে দেয়া হবে। চল্লিশ জনের বেশি বাইরে জমায়েত হওয়া যাবে না, ত্রিশজনের বেশি ভেতরে জমা হওয়া যাবে না। চার জনের বেশি একসাথে হয়ে আড্ডা দেয়া যাবে না, সেটা বাইরে চল্লিশ জনের পার্টিই হোক আর ভেতরে ত্রিশ জনের পার্টিই হোক। বাসায় তের বছরের বড় তিন জনের বেশি মেহমান ডাকা যাবে না। ব্যতিক্রম, ছাত্রছাত্রীরা, উপসনালয়, ডেমোনস্ট্রেশান আর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ব্যাপারে শহরের মেয়র সিদ্ধান্ত নেবেন ব্যতিক্রম হবে কি হবে না। যাদুঘর, এমিউজমেন্ট পার্ক এসব জায়গায় দেড় মিটার দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন কতজন ঢুকতে পারবে তবে সেটা আগে থেকে রিজার্ভ করতে হবে। দোকানের ব্যাপারে তাদের নিজেদের দেখতে হবে মানুষ যেনো দেড় মিটার দূরত্বের মধ্যে চলাচল করতে পারে। আপাতত অতিরিক্ত সংক্রমনের কারণে আমস্টার্ডাম, রোটারডাম আর ডেনহাগে দোকানে থাকার সময় মাস্ক বাধ্যতামূলক। কাস্টমাররা মাস্ক না পরলে দোকানদার ইচ্ছে করলে তার দোকানে নাও ঢুকতে দিতে পারে। এওটি এর কাছে মাস্কের ব্যাপারে আরও তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। সুপারমার্কেটদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দিনের মধ্যে দুবার আলাদা সময় নির্ধারণ করতে যখন শুধু বয়স্ক, অসুস্থ-দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষেরা বাজার সারবে, আমরা বুঝতে পারছি এটা কালকেই হয়ত সম্ভব নয় কিন্তু এটা করতে হবে, এটা দরকার। এবার ক্যাটারিং, আমি বলছি না তারা কিছু নিয়ম মানছে না বা ভুল করছে তারপরও এক-দেড়শো মানুষের সমাগম থেকে সংক্রমন হচ্ছে। কাল থেকে সব রেস্টুরেন্টে রাত ন'টার পর গেস্ট আসা বন্ধ আর দশটার মধ্যে সব বন্ধ করে দিতে হবে। রেস্টুরেন্টের থেকে এটা বেশি এলকোহলের জন্যে দরকার। খেলাধূলার জায়গায় ক্যান্টিন বন্ধ থাকবে এবং সমস্ত খেলাধূলায় বাইরের লোকের সমাগম বন্ধ থাকবে। আর রেস্টুরেন্টের মত, বডি ম্যাসাজ বা হেয়ার ড্রেসারের কাছে গেলেও এখন থেকে সব ডিটেলস লিখিত দিতে হবে। আমরা দেখছি এটি মিউনিসিপ্যালটির জন্যেও দরকার কিনা। আমরা জানি, এটি অনেকের জন্যেই খুব কঠিন একটি পরিস্থিতি, কিন্তু আপাতত এটিই বাস্তবতা, আমরা ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবিদের সাথে কথা বলবো, অর্থনৈতিক ভাবে কি করে ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়। নিয়মনীতি নিজ থেকে কাজ করবে না যদি আমরা এটি পালন না করি। ব্যবসায়ীদের যেমন দায়িত্ব থাকবে, ভোক্তাদেরও দায়িত্ব থাকবে নিয়ম মানার। এর অন্যথা হলে পুলিশ, মেয়র ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারে কিন্তু আমরা এত চাই না এত দূর কিছু আসুক। এই নিয়মগুলো সামনের তিন সপ্তাহের জন্যে প্রযোজ্য হবে। এটি একটি পরীক্ষামূলক মেয়াদ তারপর আবার নতুন নিয়ম আসবে। যদি পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক নয় তাহলে জাতীয় নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে আঞ্চলিক নিষেধাজ্ঞায় যাওয়া হবে আর ফলাফল নেতিবাচক হলে ইন্টিলিজেন্ট লক ডাউনের কাছাকাছি প্রসিডিউরে ফিরে যেতে হবে। মোদ্দা কথা, আমরা সবাই ভাল করছি কিন্তু ভাইরাস আমাদের চেয়েও ভাল করছে তাই আমাদের পন্থা পরিবর্তন করতে হবে।