Friday 30 October 2009

আজন্ম লালিত সাধ

জন্মের সাধ আমি সুশীল হবো
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে
ব্র্যান্ডেড ঘড়ি আর সৌরভে
সুরভিত আলোকিত হয়ে
কেতাদূরস্ত ভাষায়
মহাজ্ঞানী মনীষীদের উদ্ধৃতিসহ
প্রান ভরে শান্তির কথা কব।

রাত বেড়ে গেলে সুশীল সাইটে লগ অফ হয়ে
নিজের মুখোশটা খুলে পাশে রেখে শুয়ে
চিত হয়ে কাত হয়ে নানা ভঙ্গীমায়
গরম ছবির নরম আবর্তনে
নিজের শরীর মনের জ্বালা জুড়াবো।
রাস্তার পাশে হঠাৎ কেঁদে ওঠা
ভিখিরীর ছেলের কর্কশ শব্দে
রাতের রোমান্টিকতার ছন্দ কাটে
দারোয়ান ডেকে কান্নার শব্দকে
বহু দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে
সুখ নিদ্রা যাবো।

সকালে শেভ করে
আবার ব্র্যান্ডেড কাপড়ে আবৃত হয়ে
সুশীল সেজে নতুন বিষয়ের সন্ধানে
তাজা খবরের কাগজএ চোখ রাখা
হঠাৎ নাকে দুর্গন্ধ আসতেই কপাল
কুঁচকে ভিখিরীর ছেলেকে দেখে হেঁকে দেয়া
যারা মানবেতর জীবন যাপন করছে
তাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে
শুধুই দিনরাত মানবতার কথা কবো
জন্মের সাধ আমি সুশীল হবো।

তানবীরা
০৬.১০.০৯

Thursday 29 October 2009

একটি জিজ্ঞাসা

আজকে আমাদের সময় একটি সংবাদ ছাপিয়েছে, http://www.amadershomoy.com/content/2009/10/29/news0878.htm

নিম্নবর্ণের হিন্দু হওয়ায় সমাজের সবার সাথে "দলিত"রা মিশতে পারতো না। মন্দিরে প্রবেশও নিষেধ ছিল। একশত বছর পর আজকে তারা মন্দিরে প্রবেশের সুযোগ পেলো।

এই খবরটি পড়ে কেউ কেনো আক্রান্ত বোধ করছেন না ? হিন্দু হিসেবে নাহোক, মুসলমান হিসেবে নহোক মানুষ হিসেবেতো আমরা আক্রান্ত বোধ করতে পারি। নাকি নিম্নবর্ণের মানুষদের জন্য আক্রান্ত হওয়ার কিছু নেই ?

তাহলে কি আক্রান্ত হতে হয় শুধু ভার্চুয়াল লাইফে? ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড পরিস্কার রাখতে হবে, প্রকৃত পৃথিবী যেমন ইচ্ছে তেমন থাকুক।

তাইতো বলি ধর্মানুভূতি আজ "গরীবের সুন্দরী যুবতী বিধবা"। মওকামতো আক্রান্ত।

তানবীরা
২৯.১০.০৯

Wednesday 28 October 2009

একজন বর্ণবাদিনীর "দিওয়ালী" উৎসব

এন্ডহোভেন শহরটা ফিলিপসীয় কারনে বেশ ভারতীয় অধ্যুষিত। "ভারত" বললেই হয়তো বাংলাদেশীরা ভাবেন "কোলকাতা"। কিন্তু ভারত আসলে তার বাইরেও অনেক বিস্তৃত। এখানে বাঙ্গালীরা নন বেংগলীদের তুলনায় সংখ্যায় নিতান্ত নগন্য। বাংগালীদের উৎসব মানে "স্বরস্বতী পূজা" আর "দুর্গা পূজা"। আর পৃথিবী জোড়া হিন্দুৎসব মানে "হোলি" - "দিওয়ালী"। একসাথে থাকার কারনে আমার ঈদ উৎসবের তুলনায় অনেক বেশি হোলি - দিওয়ালী পালন করা হয়। এর আর একটা উল্লেখযোগ্য কারণও আছে, আমি আর আমার স্বামী দুজনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বিপুল উৎসাহ অনুভব করি। আমি নাচ করি, নাটক করি, আমার স্বামী গান করেন, নাটক লিখেন ও অভিনয় করেন। আর এই উৎসবগুলো শিল্পচর্চার একটি অনবদ্য সুযোগ।

আগে শুধু পার্ফম করার দাওয়াত হতো তাই অনুষ্ঠান করতে যেতাম। কিন্তু আজকাল অনুষ্ঠান করাতে হয়। বাচ্চাদের নাচ শেখাও তারপর বাচ্চার মায়েদের। বাংলার মিষ্টি বানানো শেখাও সাথে নাটকতো আছেই। এইমাত্র গত সপ্তাহে "দিওয়ালী" উদযাপন হলো আমাদের শহরে। এবার আমার আগ্রহে সবাই মিলে বাংলা নাচ হলো "সোহাগ চাঁদ বদনী ধ্বনি, নাচোতো দেখি", বাংলা নাচের জন্য সবাইকে "বাংলা" স্টাইলে শাড়ি পড়া শিখাতে হলো। তার সাথে বাংলার সন্দেশ বানানো শেখালাম সবাইকে। এতোকিছু একসাথে করি কিন্তু কখনো ওদের পূজার ঘরে পা দিতে পারি না কিংবা তাদের মূল "খাবার" রান্না হয় যে জায়গাটুকুতে সেখানে ঢোকা আমাদের নিষেধ।

তবে মজার ব্যাপার হলো এই, এযে শুধু আমার জন্য নিষেধ তা কিন্তু নয়। একজন "কোলকাতা"র হিন্দুও ঠিক আমার মতোই সমান অচ্ছুৎ। আমার ধারনা বাংলাদেশের হিন্দুদেরকেতো গুনবেই না সমগোত্রীয় হিসেবে। মাছ খাওয়া, মাংস খাওয়া যেকোন লোকই অচ্ছুৎ তাদের কাছে। আমার যেসব দেশি ভাই - বোনেরা আমাকে "বর্ণবাদিনী" হিসেবে প্রমান করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন, আমার মাথার দাম ঘোষনা করার অবস্থায় আছেন, তাদের জন্য বিনম্র চ্যালেঞ্জ। একবার কোন একজন "দক্ষিনী" কিংবা "গুজরাটী" কিংবা "কাশ্মিরী" ব্রাক্ষনের বাড়িতে আপনি পূজার ঘরে পা রেখে আসুন, কিংবা তাদের নিজেদের খাবারের জায়গায় বসে খেয়ে আসুন। আমি মাথা এমনিতেই পেতে দিবো। তাদের বাড়ির বাইরের ঘরে বসে খাবারের কথা বলছি না কিন্তু তাদের মূল খাবারের জায়গায় যেয়ে বসুনতো।

বর্ণবাদের সংজ্ঞা হয়তো তখন পালটে দিবেন .................

তানবীরা
২৮.১০.০৯

Sunday 18 October 2009

বৃত্তের বাইরে

বৃত্তের বাইরে

জন্মের পর থেকেই কি মানুষের জীবন একটা বৃত্তের মধ্যে আবর্তিত হয়? জন্ম হওয়া মাত্র মানুষের গায়ে একটা ট্যাগ লাগে, “ছেলে না কি মেয়ে”? “শিশু” কিংবা মানুষের পরিবর্তে ছেলেতে - মেয়েতে বিভক্ত হই আমরা। জীবনের পরবর্তী সকল কার্যক্রম যেমন, নামকরণ, আচার, বিধি সবই ঐ ট্যাগকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে।

কালো, বাদামী না ফর্সা? সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষেরা এই বর্ণের দ্বারা শাসক কিংবা শোষিতের দলে বিভক্ত হন। কোন কোন বর্ণের লোকেরা অল্প পরিশ্রমে অধিক সুখের অধিকারী হন। আবার কোন কোন বর্ণের লোকেরা, শুধুমাত্র এই কারনেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। বর্ণের বিদ্বেষ যে শুধু ভিন্ন বর্ণের লোকদের মধ্যেই থাকে তা কিন্তু নয়। একজন বাদামী বর্ণীয় লোক অতি সহজেই তার থেকে একটু বেশি বাদামী বর্ণের লোকটিকে কি অবহেলার চোখে দেখে থাকেন না?

তারপর থাকে ধর্মের বিভাজন। যারা ধর্ম পালন করেন তারা “আস্তিক” আর যারা পালন করেন না তারা “নাস্তিক” নামে অভিহিত হন। যদিও আমার কাছে এই শব্দদুটো আলাদা কোন বিশেষ গুরুত্ব বহন করে না। “Ball” এর নাম যদি “Pen” হতো তাহলে আমরা “Pen” নামেই হয়তো “Ball”কে অভিহিত করতাম। এই আমি যদি “তানবীরা” নাম না নিয়ে “তনুশ্রী” কিংবা “তামারা” নামের হতাম, আমার স্বভাব, চেহারা, নাক চোখের কি কিছু পরিবর্তন থাকতো তাতে? একজন আস্তিক আর নাস্তিকের প্রতিদিনের “প্রার্থনা”র দশমিনিটটুকু বাদ দিলে তাদের প্রাত্যহিক কাজের মাঝে আর কি পার্থক্য থাকে?

আজকাল মাথায় “হিজাব” এর ব্যবহার বেড়ে গেছে পৃথিবী জুড়ে। বেড়ে গেছে দাড়ি আর দাড়িতে মেহেন্দী। ছোটবেলার সেই বিদায় সম্ভাষন “খোদা হাফেজ” আজ বদলে গেছে “আল্লা হাফেজে”। তরুন প্রজন্ম আজ “হালাল” মাংসের পিছনে দৌড়ায়। এনিয়ে কথা বললে পাপিষ্ঠা “নাস্তিক”। আবারো বৃত্তে ফেলে দেয়া।

মানুষে মানুষে দাগ টেনে দিয়ে তাকে উঁচু - নীচু, আমিষী - নিরামিষীর ছকে ফেলে দেয়া। অন্য বর্ণের কেউ পূজা ঘরে ঢুকলে পরে সব গোবর ছুঁইয়ে দিয়ে শুদ্ধ করা। জ্যান্ত মানুষের চেয়ে একটি অবোধ প্রানীর বজ্য পদার্থকে অনেক বেশি পবিত্র মনে করা। চিরকাল ধরে চলে আসা এই অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে কেউ কটুক্তি করলে, তাকে আনন্দের সাথে সাম্প্রদায়িকতার লেবাসে মুড়ে দেয়া।

নিরাপত্তা কোথায় আছে? ঝড় ঝঞ্ঝা ভূমিকম্পের বাইরে এই পৃথিবীর কোন খন্ডটি মুক্ত? কোথায় মানুষ মানুষকে হত্যা করে না? যে নিরাপত্তার নাম করে আমরা দেশ ত্যাগ করি, ভিন্নদেশে যাই, কতোটুকু স্বাগতম আমরা সেখানে?

এই “ট্যাগিং” কি এক ধরনের মৌলবাদ কিংবা “সাম্প্রদায়িকতা” নয়? তাই আজ একটা পরিচয় চাইছি, বৃত্তের বাইরের একটা পরিচয়। লিঙ্গের কারনে “নারী” পরিচয় চাই না। মেয়েদের ওপরে হওয়া অসামঞ্জস্যের প্রতিবাদ করলে “নারীবাদী” উপাধি চাই না। “হালাল” এর নামে ভেদাভেদ চাই না, চাই না “নাস্তিক” উপাধি। জাতপাতের বিরুদ্ধে কথা বললে “সাম্প্রদায়িকতার” অভিযুক্তিও চাই না। মুক্তভাবে নিজের মত প্রকাশের স্থান চাই। করজোড় প্রার্থনা রাখি সবার কাছে আজ থেকে বৃত্তের বাইরে একটি পরিচয়ের সূচনা হোক। আমাকে দিয়েই নাহয় হোক।

তানবীরা
১৮.১০.২০০৯

Monday 12 October 2009

একযে ছিল সোনার কন্যা মেঘবরন কেশ

প্রবাস জীবনে অবসর মুহূর্ত বলতে গেলে হাতে গোনা যায়। সেই দুষ্প্রাপ্য অবসর মুহূর্তের বেশির ভাগ সময়ই যায় মুখে বই গুঁজে। বাবা - মা দুজনেরই এক অবস্থা। দরকারে অদরকারে শেলফে বই রাখি আবার বের করি। অনেক সময় দরকারেও বই টানতে হয় বইকি। বাংলা - ইংলিশ - ডাচ ডিকশনারী, রেফারেন্সের জন্য বই খুঁজতে হয়, অনুষ্ঠানের স্ক্রীপ্ট বানাতে বই খোঁজ়ো। কিছু কিছু বই আছে বন্ধুদের, পরিচিতদের, আলাপে সালাপে গল্পে তাদের বই বের হয়। আমার ছয় বছরের মেয়ে সেগুলো দেখে প্রতিনিয়ত।

এখন মেয়ের স্কুলে শরৎকালীন ছুটি চলছে। মেয়েকে বলা হয়েছে, নিজে নিজে কিছু করো। আমার সোনার ময়না বই বানিয়েছে। নিজে নিজে কাগজ স্ট্যাপল করে তাতে এ থেকে জ়েড পর্যন্ত লিখেছে। ছোট ছোট শব্দ লিখেছে, লেখার পাশে ছবি এঁকেছে। তারপর সেই বই আমার হাতে এনে দিয়ে বলেছে, এটা রেখে দাওতো আম্মি। আমি বুঝতে পারিনি, বলেছি তোমার বইয়ের পাশে রেখে দাও। তখন ঝুটি নাড়িয়ে বলেছে, “আম্মি এটা আমার বই, আমি বানিয়েছি, তোমার বইয়ের সাথে রেখে দাও। তুমি পড়তে পারবে, যখন অন্যেরা আসবে তারাও পড়তে পারবে। সবাইকে বলবে এটা আমার বইযে, আমিযে বানিয়েছি।“

ময়না পাখা, খেলায় খেলায় যে কাজের শুরু তুমি করেছো তা যেনো পূর্নতা পায়, সার্থক হোক তোমার এই আশা, সেই কামনা রাখছি।

তানবীরা
২৮.১০.০৯