জ্যাকি স্রফের “হিরো” সিনেমা থেকে নাকি মিঠুন চক্রবর্তী’র
কোন সিনেমা থেকে আদব-কায়দা সম্পন্ন, দয়ালু, মানবিক ও মানবতায় ভরপুর, দারুন
রোমান্টিক গুন্ডার আবির্ভাব দেশে সেটা গবেষনা সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু আমরা
“রাম-লক্ষন”, “ওয়ান-টু-কা-ফোর-ফোর-টু-কা-ওয়ান, তেজাব, সাড়াক ইত্যাদি সিনেমায় দেখতে
পাই এরা গুন্ডা হলেও আসলে মহামানব, পঁচা বড়লোকের টাকা ছিনতাই, নেকলেস ছিনতাই,
ব্যাঙ্ক ডাকাতি ইত্যাদি করে সেগুলো নিয়ে যেয়ে বস্তির গরীব বাচ্চাদের মধ্যে কোকোলা
চকলেট কিনে বিলিয়ে দিয়ে মহান মানবতার সেবা করে। আর ভাববেন না, এরা
নিজেরা ইচ্ছে করে, শখ করে গুন্ডা হয়েছে, স্কুলের “এইম ইন লাইফ” রচনায় এদেরও কারো
ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট ইত্যাদি হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু জীবনের নির্মমতায় এরা
গুন্ডে হয়ে গিয়েছে। বাস্তবে যদিও আপনি বাড়িতে শুনে বড় হয়েছেন, আপনার বাবা, চাচা,
মামা পয়সার অভাবে, কলেজের অভাবে কিংবা অন্য কোন কারণে মার্স্টাস শেষ করতে পারেনি
তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বদলে মফস্বলের কলেজের শিক্ষক হয়েছে। কিংবা কবিতায় পড়েছেন,
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারে নি , অন্ধকার ছাপা খানায় কাজ করে কিন্তু এদের কথা
আলাদা। এদেরকে আপনি তাদের সাথে মেলাতে যাবেন না, প্লিজ। তবে দিনের শেষে এরা লাইনে
চলে আসে। এ ধারায় বাংলাদেশে কিংবদন্তী ছিলেন জনাব বাকের ভাই।
ইয়ে বলতে দ্বিধা নেই, সেই স্কুল-কলেজের লাইফে যখন মাত্র বোধ
হয় হয়েছে, অনুভব করতে পারলাম, ফুচকা খেতে যতই ভাল লাগুক, ফুচকাওয়ালাকে বিয়ে করে ফেলাটা ঠিক হবে না। তখন কিন্তু মনে মনে এরকম হ্যান্ডশাম, নাচ গান জানা, পরোপকারী গুন্ডার কথা ভাবতাম। আমাদের সময় ট্রেন্ড ছিলো ভিসিআরে সিনেমা দেখা, গ্রাম থেকে কেউ এলেই বায়না ধরতো,
মুভি দেখবে আর আমরাও তাদের পটিয়ে পটিয়ে আমাদের পছন্দের সিনেমা আনাতাম। তখনও মানবতা-মানবধিকার ইত্যাদি শব্দগুলো’র সাথে পরিচিতি
হই নি তাই জিতু আঙ্কেলকে খুব ভাল লাগতো। বারবার, প্রতিবার কাউকে পেলেই মাওয়ালী, জাস্টিস চৌধুরী
ইত্যাদি সিনেমা দেখতাম।
এছাড়া আছে শক্তি কাপুর, ডিপজল, আমজাদ খান, অমরেশপুরী, মিশা
সওদাগর টাইপের গুন্ডে। এরা মন্দ গুন্ডে, জন্ম থেকেই গুন্ডে, হাজার হাজার সুযোগ
সুবিধা থাকা’র পরেও এরা মানুষজনকে ক্যালাতে, ফেলাতে, ট্যালাতে ভালবাসে। দেখতে হয় বদখত,
শাবাব চৌধুরী টাইপের হ্যান্ডশাম হয় না, তবে এরাও টাকা দিয়ে মানুষের জীবনের দাম পরিশোধ
করে ফেলতে চায়। এরা সাধারণতঃ যে কোন আবহাওয়াতে স্যুট-টাই কিংবা সুপারম্যান টাইপের অদ্ভূদ জামা
কাপড় পরে কোন একটা বিটকেল চেম্বারে টেলিফোন নিয়ে বসে থাকে। আর সারাবেলা সারা পৃথিবীকে তছনছ করে দেয়ার
স্বপ্ন লালন করে, অধুনা – এভেঞ্জার্স – দ্যা ইনফিনিটি ওয়ারকেও উদাহরণ হিসেবে নিতে
পারেন। তবে এরা শেষ পর্যন্ত জেতে না, মার খায় ও একদম মরে যায়, বেঁচে উঠে আবার কি
করবে এর রিস্ক কেউ শেষ পর্যন্ত নেয় না তাই এদের মেরে দেয়া হয়। এরশাদ শিকদার এর
একটি উদাহরণ। তবে কেউ কেউ পালিয়ে হজ্ব করতে সৌদি চলে যায়, যেমন ইয়াবা বদি আবার সব ম্যানেজ
হয়ে গেলে ফিরে আসে।
আর এক শ্রেণী’র গুন্ডাকে ফিসফাস করে বলা হয়, সরকারী
গুন্ডা। কেউ গাড়ি চাপা পরলে সেই দৃশ্য কেউ
মোবাইল ফোনে তুলে রেখে সেই ভিডিও থানায় যেয়ে দেখালেও তারা আসামী চেনে না। একজন
সচেতেন নাগরিক নিজের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে এতদূর আগায়। তারপরও এদের ইয়াদদাশ
হামেশাই খোয়ী র্যাহতে হ্যায়। জনগনের করের টাকায় বেতন নেয়, ঘুষ নেয় কিন্তু তারপরও
তাদেরকে কি সেবা দেয় সেটা উচ্চারণ করে বলা যাবে না, বললে গর্দান থাকবে না। তবে
সিনেমায় এদের কোন রোল থাকে না, শুধু শেষ দৃশ্যে এদের উপস্থিতি মোটামুটি
অবশ্যম্ভাবী, তারা এসে ব্রিটিশ আমলের পিস্তল উঁচিয়ে ধরে বলে, “আইন নিজের হাতে তুলে
নেবেন না”, কারণ আইন তাদের মামা বাড়ির কাঁঠাল, আইন তাদের পকেটে থাকে, তাদের একান্ত
নিজস্ব সম্পত্তি। যখন ইচ্ছে তারা আইন তুলবে, ক্রসফায়ার করবে, পা কেটে দেবে, কাউকে
বাড়ি থেকে তুলে নেবে, অপরাধী কাউকে চিনবে না, কাউকে খুঁজে পাবে না তাদের এই রানীর
রাজত্ব্যে। এরা স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ফসল, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এরা
একই থাকে, কখনো পরিবর্তন হয় না কারণ রাষ্ট্র তাদের পরিবর্তন হওয়ার কোন সুযোগ দেয়
না।
আর এক শ্রেণী’র গুন্ডে অক্সিজেনের মত বিরাজ করে। এরা সবসময় পর্দার অন্তরালে থাকে, জন সম্মুখে এদের
কখনও দেখতে পাওয়া যায় না। এদেরকে ডন বা ভাই বলা হয়। এদের জীবন নিয়ে বই লেখা হয়, সিনেমা বানানো হয়। তবে মাঝে মাঝে বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা, খেলোয়ার, অভিনেতা
এদের সাথে তাদের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। এরা নিজেরা কখনো বাইরে আসে না, বরং এসব বড় মানুষরাই আমন্ত্রিত হয়ে তাদের
কাছে যায়।
২১/০৬/২০১৮