Wednesday 29 July 2020

কোভিড ১৯





লং পার্কিং পুরো সাইলেন্ট ছিলো। রাত তিনটায় আমাদের গাড়ি ঢুকলো, আমরা চারটে পর্যন্ত সেখানে ছিলাম আর কোন গাড়ি আসেনি এ সময় এর মধ্যে যদিও পার্কিং এ আরও গাড়ি দেখা যাচ্ছিলো যেগুলো আগেই পার্ক করা ছিলো। শাটলের জন্যে চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো, প্রায় এক ঘন্টা। শাটলের ড্রাইভার শুধু আমাদের ড্রপ করতেই এসেছে, আমরা ছাড়া শাটলে আর কেউ ছিলো না। শাটলে মাস্ক কম্পাসারি।
ভোর সাড়ে চারটায় শার্লোয় এয়ারপোর্টের পার্কিং প্রায় নিস্তব্ধ। আমাদের ছাড়া হয়ত আর জনা দশেক লোক ছিলো পুরো পার্কিং এ। এয়ারপোর্টে মাস্ক কম্পালসারি, হাত স্যানিটাইজ করে ঢুকতে হলো আর লেখা ছিলো গায়ের টেম্পারেচার আটত্রিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকল এয়ারপোর্টে ঢোকা নিষেধ। এয়ারপোর্টে প্রায় প্রতি পাঁচশো মিটার দূরত্বে হ্যান্ডস্যানিটাইজার রাখা আছে। জীবনে প্রথমবার দু মিনিটের মধ্যে সিকিউরিটি চেক আর লাগেজ ড্রপ ফিনিশ করে ভাবলাম হয়ত প্রাইভেট জেটে যাওয়ার আনন্দ পাবো, লোক নেই।
কফি নিয়ে বসলাম এয়ারপোর্ট রেস্টুরেন্টে, তাতে ফর্ম নিয়ে এলো। রেস্টুরেন্টের সব মেহমানদের তাদের ডিটেলস দিয়ে যেতে হবে, দিলাম ফর্ম ফিলাপ করে। বোর্ডিয়ের জন্যে কল করতে হেলেদুলে যাচ্ছিলাম, ভাবলাম কেউ তো নেই কিন্তু যেয়ে চক্ষু চড়ক গাছ। পুরো লাউঞ্জ ফুল। তবুও টেনশানের কিছু নেই, বোর্ডিং পাশে তো সিট নম্বর আছেই কিন্তু দাঁড়াতে হলো অনেকক্ষণ। একশো আশি সিটের প্লেনে একটি সিটও খালি ছিলো না।
মার্সাই এয়ারপোর্টে দেখলাম বায়োমেট্রিক পাসপোর্টের জন্যে আলাদা গেট করে দিয়েছে। আমার এই প্রথম অভিজ্ঞতা। পালে পাসপোর্ট স্ক্যান করলে একটা গেট খুলে যাবে, সেখানে ক্যামেরায় তাকালে, মুখ স্ক্যান হয়ে, মিলে গেলে পরের গেট খুলে যাবে, কারো সাথে কথার দরকার নেই, একা একা নিরিবিলি বেড়িয়ে যাও। পেছনের গেট আটকা, মুখ স্ক্যান হচ্ছে, মাস্ক থাকাতে এরর এলো, মাস্ক সরাতে ম্যাসেজ এলো টিভিতে, আবার স্ক্যান হয়ে পরের দরজা খুললো, ব্যাপারটা খানিকটা সাফোকেটিং, ক্লাস্টার ফোবিয়া যাদের আছে তাদের আরও ভয়াবহ হবে, আর সাথে ইমিগ্রেশানের কিছু লোকের চাকরি গেলো।

29/07/2020

Saturday 25 July 2020

অনিল বাগচীর একদিন


বহু প্রতীক্ষার পর দেখতে পেলাম মোরশেদুল ইসলামের পরিচালনায় হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসের চিত্রায়ন “অনিল বাগচীর একদিন” (২০১৫)। মোরশেদুল ইসলামের পরিচালনায় এর আগেও জাফর ইকবালের লেখা “আমার বন্ধু রাশেদ” (২০১১) আর মাহমুদুল হকের লেখা “খেলাঘর” (২০০৬) যুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসের চলচিত্রায়ন দেখেছিলাম। “খেলাঘর” দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম, অত কম ভায়োলেন্স দেখিয়ে অত গভীরভাবে যুদ্ধের ক্ষত আর বেদনা খুব কম সিনেমাই তুলে ধরতে পেরেছে। দুহাজার বারো সালে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত সার্ক চলচিত্র উৎসবে এই সিনেমার জন্যে মোরশেদুল ইসলাম শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার পান। কিন্তু অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়া “অনিল বাগচীর একদিন” আমাকে যারপর নাই হতাশ করেছে।

অত্যন্ত দুর্বল চিত্রনাট্য। অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিজেতা মোরশেদুল ইসলামকে এখানে খুঁজে পাওয়া ভার। অতো আবেগী আর বোকা বোকা কাজ দিয়ে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা অর্জন করেছে! একজন আত্মসচেতন নাগরিক হিসেবে একজন বলতেই পারে, আমি মিলিটিরির পাস নিয়ে ঢাকার বাইরে যাবো না। কিন্তু বাকি যা সব দেখানো হয়েছে, তা নিতান্ত জেনে বুঝে আত্মহত্যার সামিল, এতে না দেশের প্রতি কোন দায়িত্ব পালনের কিছু দেখানো হয়েছে না পরিবারের প্রতি। যার  নিজেকে রক্ষা করার কোন দায় নেই সে অন্যের পাশে কি দাঁড়াবে? আর আইয়ূব আলী চরিত্রটির মুখ দিয়ে সমানে অতি পরিচিত হুমায়ূনীয় যে সংলাপগুলো বের হয়েছে তা চলচিত্রটির ভাবগম্ভীরতার গুরুত্ব কমিয়েছে, চলচিত্রটির স্বার্থে সংলাপ গুলোর সম্পাদনা জরুরী ছিলো।

হ্যাঁ অনিল বাগচীকে এখানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেখানো হয় নি, যুদ্ধের সময়ে একজন মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু একটা তরতাজা যুবক যে যুদ্ধের সময়ও অফিস যাচ্ছে, কাজ করছে সে কি সত্যিই এতটা অসহায়? বাংলাদেশের সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রতিনিধিও সে করে না, কারণ এই সরল কোমলমতি মানুষেরা যথেষ্ঠ অসৎ, মিথ্যেবাদী ও ধান্ধাবাজ তাও সেই শায়েস্তা খাঁ’র আমল থেকেই। আমার কথা না, ইতিহাস সাক্ষী। 

সিনেমায় বেশ কয়েকটি চরিত্র ছিলো যেগুলোর পর্দা উপস্থিতি ছোট হলেও গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম। পরিচালক তাদের থেকে স্বতস্ফুর্ত অভিনয় আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। অত্যন্ত আরোপিত লেগেছে তাদের অভিনয়।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অসংখ্য ভাল সিনেমা ইতিমধ্যে তৈরী হয়েছে বাংলাদেশে, সে তুলনায় এটিকে আমার নিতান্ত দুর্বল চিত্রনাট্যের একটি ব্যর্থ প্রয়াস বলে মনে হয়। সিনেমাটি দেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্যে হৈ চৈ’কে অসংখ্য ধন্যবাদ।

২৬/০৭/২০২০

Tuesday 21 July 2020

এক নজরে কিছু চলচিত্রের চালচিত্র – দুই

বনফুলের “অর্জুন মন্ডল” গল্পের অর্জুন কাকার মত মহা উৎসাহী মানুষ আমি, তিনি পড়াশোনা করতেন আর আমি সিনেমা দেখি, কিন্তু উৎসাহ-উদ্দীপনা আমাদের সমান। সেই উৎসাহ থেকে সদ্য দেখা কিছু সিনেমার সিনোপসিস

মহানায়িকা (২০১৭)ঃ পরিচালক সৈকত ভকত তাঁর প্রথম ছবি ‘মহানায়িকা’-র নামভূমিকায় বেছে নিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে। ছবির নাম শুনেই মনে হতে পারে, এ ছবি সুচিত্রা সেনের বায়োপিক না হয়ে যায় না। কিন্তু পরিচালকের মতে, ‘মহানায়িকা’-র কেন্দ্রীয় চরিত্র শকুন্তলা-র সঙ্গে যেমন মিসেস সেনের জীবনের মিল রয়েছে, তেমনই এই চরিত্রের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যেতেই পারে মেরিলিন মনরো অথবা সোফিয়া লোরেনকেও। সিনেমাটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একদম টানটান ধরে রাখবে। অনেক সম্ভাব্য পরিনতির কথা মনে আসবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিনতি অন্যদিকে গড়ায়। স্পয়লার দিলাম না। এই ছবিতে ঋতুপর্ণার সঙ্গে অভিনয়ে রয়েছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত এবং সাহেব ভট্টাচার্য।

ঢাকাই ছবি আর কোলকাতার ছবির মধ্যে একটা আশ্চর্য মিল হলো, এই দুই জায়গাতেই প্রোডাকশন নায়িকাদের জামাকাপড়ের পেছনে বাজেট খুব কম রাখে। কোলকাতার সিনেমায় তাও শাড়িগুলো চলে যায় কিন্তু ওয়েস্টার্ন গুলো একেবারেই অচল। একেতো ঋতুপর্ণার স্বাস্থ্য মাশাল্লাহ দারুণ, খাতে-পিতে খান্দান কি তারমধ্যে এরকম কোয়ালিটির ওয়েস্টার্ন!। হিন্দী আর ইংরেজি সিনেমায় নায়িকাদের যেমন থাকে ফিগার তেমন দেয়া হয় ডিজাইনার আউটলেটের টপ ডিজাইনারের জামাকাপড়। চোখ তাতে এত অভ্যস্ত যে, এই পার্থক্যটা সহজেই ধরা পরে আর নিদারুণ দৃষ্টিকটু লাগে।

মায়ের বিয়ে (২০১৫)ঃ সমাজে বেড়ে চলেছে “সিংগেল মাদার”। মায়েরা যুদ্ধ করে, বাচ্চা বড় করে, বাচ্চা তার জীবন নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়, পেছনে থাকে মা তার একাকীত্ব নিয়ে। পরিচালক সুদেষ্ণা রায় আর অভিজিত্‍ গুহর ছবি ‘মায়ের বিয়ে’৷ আজকাল অনেক সন্তানই তাদের বাবা-মায়ের দ্বিতীয় পার্টনার খুঁজে পেতে, তাকে দ্বিতীয়বারের মত যুগল জীবনে প্রবেশ করতে উৎসাহ দিচ্ছে, পার্টনার খুঁজে পেতে সাহায্য করছে, এই কনসেপ্টের ওপর তৈরী করা এই সিনেমা। এই পরিচালকদ্বয়ের ছবিতে সবসময়ই থাকে কমিক রিলিফ৷ তারই মধ্যে সমাজ থেকে তুলে আনা নানা সিরিয়াস ইস্যু নিয়ে একটা মেসেজ তুলে ধরার চেষ্টাও থাকে৷ এবারও ফর্মুলা একই।


অসাধারণ একটা সিনেমার নাটকীয় সমাপ্তি হয় যেটির আদৌ কোন দরকার ছিলো না। “সুদক্ষিণার শাড়ি”র মত শেষের পনের মিনিট বাদ দিয়ে দিলে এটি উপভোগ্য একটি সিনেমা। মায়ের চরিত্রে শ্রীলেখা মিত্র, মেয়ের চরিত্রে সায়নি ঘোষ আরও অভিনয় করছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী৷


সত্যি হলেও গল্প (২০০৯)ঃ রুপসী বাংলা টিভির জন্যে বানানো সিনেমা, এতে অভিনয় করেছে ঋত্বিক চক্রবর্তী আর অপরাজিতা ঘোষদাস। এই সিনেমার মন্বত্বর সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে শ্রীপান্থর দায় বইখানি হতে। প্যারালাল সিনেমা দেখতে যারা ভালবাসেন তাদের ভাল লাগতে পারে এই সিনেমাটি। ঋত্বিক আর অপরাজিতা’র পরিমিত অভিনয় সিনেমাটিকে আরও শৈল্পিক করে তুলেছে।

জন্মদিন কথন ২০২০

বন্ধু ভান্দানা বলে, “যখন দেখবি সব কিছুর প্রতি জিরো টলারেন্স মনোভাব এসে গেছে, বুঝবি বয়স হয়ে গেছে”।

আমার মনে হয়, যখন ছোট ছিলাম তখন ভবিষ্যতের ভাবনায় বিভোর থাকতাম, এখন বাঁচি স্মৃতিতে, পুরনো দিনের কথা বেশি ভাবা মানেই বয়স হয়ে গেছে। এই করোনা কালে প্রায় সবাই ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছি, বাচ্চারা অনলাইন স্কুল, এই সুর্বন সুযোগে প্রচুর ভিডিও কল, আড্ডা, গান বাজনা হয়। এক ফাঁকে বাচ্চারা শুরু করে দুষ্টুমি। তাদের দুষ্টুমি নিয়ে কথা বলতে যেয়ে শুরু হয় নিজেদের কথা। আম্মি পাশ থেকে বলে, একদম তোদের ছোটবেলা, তোদের মত ঠিক এভাবে লেগে থাকে। বাচ্চারা তখন শুরু করে, দিদু বলেছে তুমি এরকম করতে, পাপা ওরকম করতো, বড়মা এটা বলতো, তুমি আর পাপা অনেক মারামারি করতে ইত্যাদি প্রভৃতি আরও কত কি। কপট ধমক দেই ওদের, দিদু আমাদের সম্বন্ধে কোন ভাল কথা বলে না? কিন্তু অন্তরে অন্তরে আমিও জানি, আমার মা’ও স্মৃতিতেই বাঁচে, আমরা কাছে নেই, স্মৃতিটুকু ছাড়া আর আছে কি মায়ের।

অসুবিধা হলো, মারামারি করেছি সেটা মনে আছে কিন্তু কি নিয়ে মারামারি করতাম, সেগুলো ওরা বললেও মনে করতে পারি না অতো। সকালে পেপার পড়া নিয়ে মাঝে মাঝে নাস্তার টেবলে একচোট হত। নিয়ম ছিলো আব্বু পড়ার পর যে আগে ধরবে সে আগে পড়বে। কিন্তু আমি আগে নিলেও ভাইয়া টান দিতো, ফলাফলে পেপার ছিড়তো। আর হতো ডাল ঘেটে দেয়া নিয়ে, মারামারিতে আমি অলোয়েজ হারতাম, প্রতিশোধ ছিলো, ভাইয়া শুধু ডালের ওপরের পানি খায়, আর কিছু খায় না, স্কুলে যাওয়ার আগে গরম গরম ডাল টেবলে রাখলে আমি তাড়াতাড়ি চামচ দিয়ে ডালের ওপর-নীচ ঘেটে দিতাম, ভাইয়ার ডাল খাওয়া বরবাদ, তখন আর একচোট মার খেতাম।

আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে সবকিছুর গ্রুপ আছে, স্কুল, কলেজ, ইউনি, পাড়া, আত্মীয়দের, কিসের গ্রুপ নেই। সারাদিন অফিসের কাজে যায়, প্রায় রোজই কিছু না কিছু ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত থাকি, তার মাঝেই রুটিন করে ফেবু স্ক্রল করি, সমস্যা হলো পুরনো কিছুই আর মনে করতে পারি না, চিনতেও পারি না। অন্য একটা জগত, অন্য কোন জনমের কথা মনে হয়। অনেকেরই চেহারা কিংবা নামও আর স্মৃতিতে নেই। কেউ যদি বলে ক্লাশমেট ছিলাম মেনে নেই, কোচিংমেট ছিলাম তাও সই, পাড়ামেট ছিলাম, তাও পসিবল, আমাকে চিনতো, বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেই। স্মৃতির ভান্ডার পুরোই শূন্য। দুই দশক অনেক সময়, মানুষ, শহর, জলবায়ু সব পরিবর্তন হয়ে যায়। খুঁজে পাওয়া কিংবা মেলানো আর সম্ভব না। আমি চিনতে না পারলেও আমাকে কেউ কেউ চিনতে পেরে 
বসুন্ধরা বা পিংক সিটিতে জিজ্ঞেস করে , ফেবুতে ম্যাসেজ দেয়, তুমি স্বাতী না? তাতেই আমি ধন্য অনুভব করি, ভাল লাগে, পুরোপুরি মুছে হয়ত যাই নি এখনো। দেশে থাকলে নিশ্চয়ই অনেকখানি মনে থাকতো, পরিযায়ী পাখিদের স্মৃতি কি তত তীক্ষ্ণ হয় না? অল্প কিছুদিনের ছুটিতে দেশে যাই, তার অর্ধেক যায় বিভিন্ন শপিং মলে, রেস্টুরেন্টে আর রাস্তায় জ্যামে। অনেকদিন থাকি না বলে আর হুট করে আশেপাশের সব বাসায় যাওয়া হয়ে ওঠে না।

আগে ঢাকা পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে গেট দিয়ে বাসায় ঢোকার এই সামান্যকটি মুহূর্তের মধ্যেই আশেপাশে বাসার দারোয়ানরা দেখতো, তারা জানতো কে এসেছে ফিরে, দু’দিন না যেতেই তাদের মারফত খবর আসতো, খালাম্মা আপনারে বাসায় আসতে বলছে। কালের গহীনে এখন অনেক খালাম্মাই মিলিয়ে গেছে, পরিচিত দারোয়ানরাও নেই, ছোট হয়ে এসেছে আমার চলাচলের পরিধিও।

কেয়ারন্টিন এতদিন খেলা খেলা লাগলেও এখন সাফোকেটিং। ইউ-এস, বাংলাদেশ সবদিকে ট্রাভেল বন্ধ। মন চাইলে কিংবা কোন কারণে কোথাও যেতে পারবো না এই অনুভূতিটা দমবন্ধ করা। যাই কিংবা না যাই সেটা অন্য জিনিস কিন্তু যেতে পারবে না সেটা অন্য অনুভূতি দেয়।


পরিযায়ী হওয়ার আর একটা বড় অসুবিধে হলো, চুল রুপালি হতে শুরু করলেও মন রয়ে গেছে, যেখানে ছেড়ে এসেছি সেখানেই। বায়োলজিক্যাল ঘড়ি হয়ত টিকটিক করছে কিন্তু মনের ঘড়ি রোজ আকাশ ছোঁয়। জীবনের হয়ত সবচেয়ে অন্যরকম বছরটা পার করলাম। জন্মদিন নিয়ে চিরদিনই আমি খুব উচ্ছসিত থাকি, এবছরও তার কিছু কমতি হয় নি। কিংবা জীবনের এই গোধূলি বেলায় এসেও সে উৎসাহ একটুও কমে নি। জুলাই মাসের প্রথম দিন থেকেই মন কেমন কেমন করতে থাকে। জন্মদিন উপলক্ষ্যে ফ্রান্সবাসীকে তাদের ন্যাশনাল ডে’তে অভিনন্দন। যারা যারা আমাকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছো, মেমোরি শেয়ার করেছো, অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে আবারো ধন্যবাদ।
ভাল থেকো পৃথিবী, ভাল আছি আমি, আমার সকল বন্ধুদের ভালবাসা আর সকল শত্রুদের সাধুবাদ।

যেদিন উড়ে যাবো সেদিনও এতটা মায়াই থাকবে এই পৃথিবীর জন্যে।