Wednesday 19 August 2020

“ব্লাইন্ড স্পট”

 

পশ্চিমাদের একটা সুন্দর জিনিস আছে, ভেতরে ভেতরে তারা যতই পাজি হোক, কাজগ-পত্রে “পলিটিক্যালি কারেক্ট” থাকবে। ভয়ংকর সব জিনিস তারা প্র্যাক্টিস করবে কিন্তু এর কারণ-বারণ সব উদাহরণ সহ সুন্দর করে নথিপত্রে দলিল করে রাখবে।

 

প্রিন্সেটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সামাজিক মনোবিদ এমিলি প্রোনিন তার আর দুই সহকর্মী ড্যানিয়েল লীন আর লী রোস “ব্লাইন্ড স্পট” শব্দটি তৈরী করেন। মস্তিস্কের ভেতরে তথ্যপ্রবাহ শুরু হওয়ার অনেক আগেই চাক্ষুষ তথ্য অপটিক নার্ভ দিয়ে চোখের দিকে ছুটতে শুরু করো। সোজা বাংলায় দাঁড়ায়, মাথা কাজ করার অনেক আগেই চোখ কাজ করতে শুরু করে। অপটিক স্নায়ুর একটি নির্দিষ্ট এলাকা রয়েছে যার কোনও গ্রহণ করার মত শক্তিসম্পন্ন কোষ নেই (যেখানে চোখের কাছে যেয়ে অপটিক স্নায়ুটি শেষ হয়ে যায়) এবং এর ফলস্বরূপ, সে আর তথ্য গ্রহণ করতে পারে না। যার ফলাফল হলো, “ব্লাইন্ড স্পট”।

 

“ব্লাইন্ড স্পট” অথবা “আনকশাস বায়াসেস” = “অবচেতন পক্ষপাত” হলো এক ধরনের মানসিক বৈকল্য যা প্রতিদিন যে লক্ষ লক্ষ তথ্য আমরা জানতে পাই তা দিয়ে আমাদের জ্ঞান বা অনুভূতি তৈরীতে সাহায্য করে। যেকোন ঘটনায় আমরা যখন কোন সিদ্ধান্ত নেই, সেখানে এর প্রভাব পরে।

 

একটিকে বলা হয়, “The halo effect”- প্রথম দর্শনের মুগ্ধতাকে আমলে নিয়ে যখন কারো সম্পর্কে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অন্যটি “The horns effect” – প্রথম দর্শনের বিরূপতাকে ভিত্তি করে যখন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অনেক সময় “কনর্ফামেশান বায়াসেস”, “হালো আর হর্ন” ইফেক্টকে আরো শক্তিশালী আর চাঙ্গা করে তোলে।    

”কনর্ফামেশান বায়াস” হলো যখন আমরা আমাদের বিশ্বাসকে সমর্থন করে এমন প্রমাণের সন্ধান করি এবং এর বিপক্ষের প্রমাণগুলোকে উপেক্ষা করি।

অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এমন তথ্য অনুসন্ধান করতে ভালবাসে যা তাদের বিশ্বাসকে নিশ্চিত করে এবং এমন তথ্য উপেক্ষা করে যেটা তার পছন্দের বিপক্ষে যায়।

যাকে আমরা সহজ ভাষায় “ভুল” বলি, বিজ্ঞান এটিকে “ব্লাইন্ড স্পট” বলে। আমাদের অচেতন মন, না জেনেই নব্বই ভাগ  সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতি সেকেন্ডে এগারো মিলিয়ন তথ্য দিয়ে আমাদের মাথা বোঝাই হয়, তাদের মধ্যে থেকে কেবল চল্লিশটি আমরা ব্যবহার করতে পারি। অতীতের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে আমরা অদ্ভূতভাবে সংক্ষিপ্ত রাস্তায় জ্ঞানগর্ভীয় অনুমানে পৌঁছাই। আমরা না জেনেই অবচেতন পক্ষপাত ঘটাই। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, আমাদের প্রায় শতকরা নব্বই ভাগ সিদ্ধান্তই আমাদের অবচেতন মনের দ্বারা নেওয়া হয়।  

Assume = ass – u – me

“ব্লাইন্ড স্পট” নিয়ে জীবন-যাপন আমাদেরকে একটি সুড়ঙ্গের মধ্যে আটকে ফেলতে পারে, একই দৃষ্টিকোণ, একই সিদ্ধান্ত, মানে হলো একই ফলাফল।

 

ফুটনোটঃ ওপরের তথ্যগুলো অফিসের পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইডের ভাষান্তর আর কিছু অন্তর্জাল থেকে নেয়া। এমন একটি দেশ আমি চিনি যার প্রায় পচাঁশি ভাগ মানুষ সিভিয়ার “ব্লাইন্ড স্পট” সিনড্রোমের পেশেন্ট। দেশটির নাম জানতে চাইবেন না, নাম বললে আর কল্লা থাকবে না।

 

১৯/০৮/২০২০

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – ১০ (আগস্ট)

 আঠারোই আগস্ট জানালেন প্রিমিয়ে মার্ক রুতে, দু সপ্তাহ আগের সাংবাদিক সম্মেলনের পর নেদারল্যান্ডসে করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সংক্রমনের হার আর হাসপাতালে ভর্তির হার দুটোই বেড়ে গেছে। এখনই যদি সর্তক না হই আবার সংকটে পরতে দেরী হবে না। আমরা কিছুতেই অর্থনৈতিকভাবে দ্বিতীয়বার এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চাই না। আজকে রাতেই আমাস্টার্ডামের মেয়র জনবহুল এলাকার জন্যে তাদের আলাদা নিয়ম নীতির ঘোষনা নিয়ে আসবেন। এই পরিস্থিতিতে কোথাও কোথাও এলাকা ভিত্তিক নীতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

দেশ জুড়ে যে নিয়মগুলো বলবৎ থাকবে তা হলোঃ

বাসায় নিজের বন্ধু, পরিবারের মধ্যে যেহেতু মানুষ “সোশ্যাল ডিসটেন্স” মেইনটেইন করছে না, হাত মেলানো, জড়িয়ে ধরা প্রভৃতি বন্ধ করছে না, দেখা যাচ্ছে বেশীর ভাগ সংক্রমনের উৎপত্তি এখানেই। তাই আপাতত বাসায় বড় গেটটুগেদার বন্ধ, রেস্টুরেন্টে বা বাইরে পার্টি হোক, বাসায় নয়। বাসায় ছয় জনের বেশি আপাতত গেস্ট ডাকা যাবে না। এর মধ্যে বারো বছর অব্ধি বাচ্চাদের ধরা হয় নি। দাওয়াত করার সময় জিজ্ঞেস করতে হবে, কারো কোন অসুস্থতা আছে কি না। জনগনের ওপর প্রিমিয়ের আস্থা আছে, পুলিশ দিয়ে তিনি কন্ট্রোল চেক করবেন না।

জন্মদিন, জুবলিয়াম, বিয়ের অনুষ্ঠান বাইরে করা যেতে পারে, তবে আগে রেজিস্ট্রেশান আর কন্ট্রোল চেক করে নিতে হবে। মেহমানদের প্রত্যেকের জন্যে আলাদা নির্দিষ্ট চেয়ার থাকতে হবে, একজনের চেয়ারে অন্যজন বসতে পারবে না। সবগুলো চেয়ার দেড় মিটারের সামাজিক দূরত্ব মেইনটেইন করে সেট করতে হবে। অনুষ্ঠানে “পোলোনাজ” ডান্স নিষেধ আর অভিনন্দন জানাতে হবে দূর থেকে। সব রেস্টুরেন্ট আর হল মালিকদের এ দিকে কঠোর দৃষ্টি রাখার জন্যে বলা হয়েছে।

“ওয়ার্কিং ফ্রম হোম” আপাতত পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বলবত থাকবে, এর কোন পরিবর্তন হবে না।

সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অবিশ্বাস্য প্রস্তূতি গ্রহণ করেছে দূরত্ব মেনে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাশ চালানোর। কোন বাচ্চা অসুস্থ হলে বাসায় থাকবে, পরিবারের কেউ “করোনা পজিটিভ” হলে সেই পরিবারের বাচ্চা বাসায় থাকবে। এর কোন ব্যাতায় হবে না। সংক্রমিতদের তৃতীয় স্তরটি হলো পনেরো থেকে উনিশ বছরের মধ্যে। কোন স্কুল থেকে যদি সংক্রমনের হার বাড়ে জিজিডি সেদিকে আলাদা নজর রাখবে। মার্চ থেকে জুন আমরা সবাই মিলে প্রমাণ করেছিলাম যে ভাইরাস আমরা নীচে নিয়ে আসতে পারি আর এখন আমাদের সবার প্রমাণ করতে হবে, ভাইরাস আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি।

শুধু বয়স্ক মানুষরাই যে অসুস্থ হচ্ছে তা নয়, বিশ-ত্রিশের মানুষরাও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আমরা লকডাউনে যেতে চাই না। গত সপ্তায় প্রায় চার হাজার মানুষ “পজিটিভ” এসেছে, আরআইভিএম ধারনা করছে তাহলে হয় প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসটি এই মুহূর্তে বিচরণ করছে। জিজিডি যখন পঞ্চাশ জনের একটি দলকে ফোন করে ট্রেস এন্ড ট্র্যাক করে এবং কেয়ারন্টিনে থাকতে বলে, তার ভেতরে চার-পাঁচ দিন চলে যায় বলে এই পন্থাটি তত কার্যকর হচ্ছে না। তবে কেয়ারন্টিনের সময় এখন চৌদ্দ দিনের বদলে দশ দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে। মানুষ নিজ থেকে কেয়ারন্টিন না মানলে তাদেরকে আলাদা বাধ্যতামূলক কেয়ারন্টিন সেন্টারে রাখার প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডি হুগো, পার্লামেন্ট যদিও এটাকে প্রচন্ড শক্তি প্রয়োগ হিসেবে আপাতত দেখছে তবে এর বিকল্প কি করা যায় তা নিয়ে পার্লামেন্ট এই সংশ্লিষ্ট অন্যদের সাথে আলোচনা করছে।

প্রথম সেপ্টেম্বর থেকে “করোনা এপ” চালু হবে। পাঁচ লক্ষেরও বেশি লোক এটি অলরেডি ইন্সটল করে ফেলেছে।


১৮/০৮/২০২০

Friday 14 August 2020

তাই বুঝতে হবে তোকে শুধু সত্যি-মিথ্যে ঝোঁকে






আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ যখন প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু করলো তখন প্রায় সব খেলাতেই অবধারিত ভাবে হারতো। আমি প্রায় কখনোই খেলা দেখতাম না, হারবে জানিই আর অনেক সময় খেলা শুরু না হতেই শেষ, সব আউট। দৈবাৎ কখনো জিতে যাচ্ছে ব্যাপার থাকলেই খেলা দেখতে বসতাম। ভাই, কাজিন, চাচা-মামা অন্যদের সাথে আমি-আমরাও গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিতাম, ছক্কা, চার ইত্যাদি ইত্যাদি। উত্তেজনায় নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস আমাদেরও ফুলতো, লাফালাফি করতাম, বাংলাদেশ তো আমাদেরও, এটাই ভাবতাম। কিন্তু কখনো বিজয় মিছিল, রঙ খেলায় আমাদের-আমার অংশ গ্রহণ ছিলো না, আমাদের পরিধি ছিলো, খেলা শেষ হলে পাড়ায় পাড়ায় মিছিল হবে সেটা বাসার বারান্দা কিংবা ছাদ থেকে দেখা, অন্যদিন বাসার বাইরে পা দেয়ার কোন পারমিশান থাকলেও সেসময় বিশেষ করে সব বন্ধ। পরদিন পেপারে দেখা যেতো বিশ্ববিদ্যাল ক্যাম্পাস গুলোতে মিছিল হয়েছে, টিএসসিতে রঙ খেলা হয়েছে এবং এই খবরের পাশে আলাদা বক্সে প্রায়শঃই দু’চারটে মেয়ের অসহায় মুখের ছবি যারা এই উপলক্ষ্যে নিজের ভাই-বন্ধুদের দ্বারা আপন ক্যাম্পাসে লাঞ্চিত হয়েছে।



দু’হাজার দশ সালে নেদারল্যান্ডস বিশ্বকাপে খেলছে, এই উপলক্ষ্যে হুইন্দাই টিভি কিছু শহরের সিটি সেন্টারে বড় বড় স্ক্রীন টানিয়ে দিলো সবাই একসাথে সিটি সেন্টারে দেখা হবে। নেদারল্যান্ডসের খেলা হলেই আমি আমার সাত বছরের মেয়ের হাত ধরে মেয়ের বাবা আরও বন্ধুদের সাথে খেলা দেখতে যাই। একবারও ভাবিনি, আমার বা মেয়ের বা পরিবারের কারো কিছু হতে পারে। পুলিশ ছিলো, মিউনিসিপ্যালটির লোকও ছিলো, এত গরমে আমাদের গায়ে পানি ছিটিয়ে ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছিল যাতে কেউ মাথা ঘুরে না পরে যায়। ব্রাজিল-নেদারল্যান্ডসের খেলার দিন প্রথম হাফে যখন ব্রাজিল তিন গোল অলরেডি দিয়ে ফেলেছে, পাঁচ-সাতটা ব্রাজিলিয়ান মেয়ে তাদের পতাকা নিয়ে নির্ভয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করে ভুভুজালা বাজাচ্ছিলো, দুঃখী মুখ করে ডাচেরা তাদের অভিনন্দন জানিয়েছিলো কিন্তু গায়ে হাত দেয় নি, বলে নি, লাফাস ক্যান।



সিগারেট-হুইস্কি শুধু ছেলেদের জন্যে বুঝি? লিভ টুগেদার করা কিংবা একা থাকা শুধুই ছেলেদের ব্যাপার? জিন্স-টি শার্ট ছেলেদেরই পোষাক? বাইরের পৃথিবী, বিশ্ব ভ্রমণ, ফটোগ্রাফি, ভিডিও, ইউটিউব সব পুরুষদের এখতিয়ারে? মেয়ে মানুষকে বুঝি মানায় না, না? প্রশাসন পরিকল্পিত ভাবে শিপ্রার ব্যক্তিগত ভিডিও, ছবি ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেড়েছে। ১.সিনহা খুনের মামলাকে জাস্টিফায়েড করে ২.নিজেদের আসন রক্ষা করতে ৩.পাব্লিক সেন্টিমেন্ট তাদের পক্ষে আনতে এবং ইট ওয়ার্কড। মেজর সিনহা হত্যার দাবী এখন পেছনে চলে গেছে, তৌহিদী জনতা এখন বিভক্ত, তারা ব্যস্ত "শিপ্রার কখন এবং কেন ওড়না পরা উচিত ছিলো“ এই নিয়ে। পরিকল্পনা করে মেয়েটাকে টার্গেট করা হয়েছে, সিফাত আর নূর নিয়ে কোন পোস্ট নেই। প্রশাসন এই দেশের মানুষের নাড়ি-নক্ষত্র রগেরগে জানে, তারা জানে, মুমিনকূল ওড়না নিয়ে যত ব্যস্ত, জাঙ্গিয়া, চাড্ডি কিংব হাফপ্যান্ট নিয়ে ঠিক ততটাই উদাসীন। "সাতান্ন ধারা“ কিংবা "আইসিটি এক্ট“ কি প্রশাসনের রত্নদের জন্যে প্রযোজ্য নয়? তাদের ইচ্ছে হলে প্রথমে কাউকে মেরে ফেলবে তারপর অন্যদের পাব্লিকলি ডিফেম করবে? সবই তাদের ক্ষমতার ওপর দেখছি। মদ খাওয়া, জীন্স পরা কি অপরাধ? খুন করা যায় সেজন্যে?



যৌথ পরিবারে বাবার সাথে তাস খেলতাম মাঝে মাঝে, তাতেই কতবার বৃহৎ পরিবার থেকে টিপ্পনী শুনেছি, কি দিনকাল আইলো, মাইয়ারা নাকি টাসটুস খ্যালে। স্বয়ং বাবা জড়িত ছিলেন বলে এটা আর উচ্চ পর্যায়ে যায় নি কিংবা একশান নেয়া হয় নি। দাবাও খেলতাম কিন্তু সেটা কেন যেনো লোকের সহ্যের মধ্যে পরতো। অথচ দুটো খেলাই বাসায় নিরিবিলি বসে ওয়ান টু ওয়ান কিংবা গ্রুপে নিরীহ খেলা। এই তো আমাদের মনোবৃত্তি, শুরুর শিক্ষাটা তো আসে সেখান থেকেই। সেসব কতদিন আগের কথা, এত বছরে বাংলাদেশ কি একচুল বদলেছে? না, একে বারেই না, বরং দিন দিন আরও রসাতলে গেছে, প্রত্যেকটি সেক্টরে। আসে ঘোড়ার ডিমের জিডিপির ঢসকিলা দিতে। জনগনের এই মনোবৃত্তির সুযোগ প্রশাসন নিচ্ছে এখন।



প্রবাসে যত যন্ত্রণাতেই থাকি, এই "ওড়না“ যন্ত্রণা নেই, তাই এই ওড়নার দেশকে আর আপন মনে হয় না, কখনো ফিরবো না এখানে।



("ওড়না“ শব্দটি প্রতীকি অর্থে ব্যবহৃত)





.
#stop_harassing_shipra

#journey_twentytwenty 

14/08/2020

Thursday 6 August 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – ৯ (আগস্ট)

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – ৯ (আগস্ট) 

 

নেদারল্যান্ডসের করোনা পরিস্থিতি আবার খারাপ হওয়াতে ছয়ই আগস্ট মার্ক রুতে টিভিতে এলেন নতুন করে আবার নিয়ম- নীতি নিয়ে কথা বলতে

বেসিক যে নিয়মগুলো দেয়া আছে সেগুলো পালনের কোন বিকল্প নেই। অনেক জায়গাতেই সেগুলো পালিত হচ্ছে না বলে পরিস্থিতি আবারও খারাপের দিকে যাচ্ছে। মিউজিয়াম, ট্যুরিস্টি প্লেস, রেস্টুরেন্ট আবারও বন্ধ হোক তা কেউই চায় না তাই সর্তক থাকার কোন বিকল্প নেই বলে আবারো সবাইকে জানালো হলো। ভাল লাগুক আর নাই লাগুক আপাতত এর কোন সমাধান কারো হাতে নেই।

দেখা যাচ্ছে, অনেক মানুষই টেস্ট করাচ্ছে না, সর্দি-কাশিতে বাড়ি থাকছে না, দেড় মিটারের সোশ্যাল ডিসটেন্স মানছে না তাতে আক্রান্তের সংখ্যা আবার বেড়ে চলছে।

দেখা যাচ্ছে, বার্থ ডে পার্টি, বাসায় ডিনার পার্টি, অফিসের পার্টি কিংবা অফিসের কাজের ক্ষেত্র ইত্যাদিতে দেড় মিটার সোশ্যাল ডিসটেন্স মানা হচ্ছে না আর তাতেই হু হু করে এটি চারদিকে এত ছড়িয়ে পরছে। কিছু কিছু উদাহরণে দেখা গেছে, মামা, খালা, চাচা, দাদু মিলে পার্টি করার পর সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাই অবাধ মেলামেশার সময় এখনো আসে নি বলে আবারও জানালো হলো। বিশেষ করে তরুণ  সমাজ বড্ড বেপোরোয়া চলছে, কোন নিয়ম নীতির ধার ধারছে না। তাদেরকে বিশেষ করে বলা হচ্ছে, এত বাড়াবাড়ি করলে, আবার সবাইকে ঘরে বন্দী থাকতে হবে। যারা নিয়ম নীতির ধার ধারছে না তাদের বলা হচ্ছে, বাবা-মা, দাদু-দাদীর কাছে না যেতে, তাদের থেকে দূরে থাকতে। তাদের নিজেদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। দায়িত্বশীল আচরন করার জন্যে আবারও সতর্ক করা হয়েছে।

যেসব জায়গায় ঝুঁকি বেশি সেখানের মেয়ররা চাইলে “মাস্ক” ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে পারে। সমুদ্র সৈকত আর সিটি সেন্টারে গাড়ি পার্কিং, ব্যস্ত মার্কেটের রাস্তা ওয়ান ওয়ে করে দেয়া, শৌখিন কিংবা নিয়মিত খেলাধূলার প্রতিযোগিতা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সুযোগ দেয়া, নাইট শপ আর রেস্টুরেন্ট বারোটার মধ্যে বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি সব স্থানীয় প্রশাসনের হাতে থাকবে। টিকিট কিনে ফুটবল দেখতে আসা দর্শকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রনও তাদের হাতেই থাকবে।   

হাই স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি তাদের ইন্ট্রোডাকশান ইভেন্ট অনলাইনে আয়োজন করবে। গ্রুপ এক্টিভিটি শুধুমাত্র ছোট ছোট গ্রুপের জন্যে আয়োজন করা যাবে। শরীর চর্চার স্কুল গুলোতে কঠোর শৃংখলার মধ্যে দিয়ে এক্টিভিটি আয়োজন করা হবে কিন্তু তাতে কোন এলকোহল থাকবে না, দেড় মিটার ডিসটেন্স আর রাত দশটার মধ্যে ছুটি। সেসবও আলাদা করে সিটি মেয়রের পারমিশান নিয়ে আয়োজন করতে হবে।

রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে এখন থেকে নাম আর কন্টাক্ট ডিটেলস দিয়ে আসতে হবে যাতে যেকোন দরকারে খুব তাড়াতাড়ি ট্রেস করা যায়। যদি দেখা যায়, কোন মিউজিয়াম, রেস্টুরেন্ট, এট্রাকশান পার্ক থেকে দ্রুত করোনা ছড়াচ্ছে তাহলে সেটিকে সর্বোচ্চ চৌদ্দ দিনের জন্যে বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। 

যেসব দেশে অরেঞ্জ আর রেড সাইন দেয়া আছে, সেখানে কেউ ভ্রমন করে ফিরে এলে, তাকে চৌদ্দ দিন কেয়ারন্টিনে থাকতে হবে। জি-জি-ডি থেকে ফোন করে তাদের খোঁজ খবর নেয়া হবে। প্রথমে স্কিপলে একটি টেস্ট বুথ বসানো হবে পরে অন্যান্য বিমান বন্দরে, যাতে ঐসব দেশ থেকে কেউ ফিরে এলে সাথে সাথে বিমান বন্দরেই টেস্ট করা যায়। সবাইকে এই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে কারণ ঐ সকল দেশে সংক্রমনের হার অনেক বেশি। সবাইকে শিওর হতে হবে যে স্যুটকেসে করে ভাইরাস নিয়ে এসে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না। টেস্টে করোনা পাওয়া যাক বা না যাক, তাদেরকে চৌদ্দ দিন কেয়ারন্টিন থাকতেই হবে।

সতেরোই আগস্ট থেকে তুইন্তে আর ড্রেনতে শহরে মোবাইল এপের মাধ্যমে করোনার রিপোর্ট করা যাবে আর প্রথম সেপ্টেম্বর থেকে পুরো নেদারল্যান্ডস থেকে করা যাবে। যারা করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলো তারা এপের মাধ্যমে সেটা জানাবে আর কেয়ারন্টিনে থাকবে। সাত দিন পর তাদের টেস্ট করা হবে এবং সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা হবে কেয়ারন্টিনের সময়টা আরও কমিয়ে আনা যায় কি না। বারোই আগস্ট থেকে ডিজিটাল পোর্ট ওপেন হচ্ছে যেখানে মানুষ সরাসরি তাদের স্বাস্থ্যের রিপোর্ট দেখতে পারবে। বড় কোন সমস্যার জন্যে অপেক্ষা করার আর দরকার নেই, সর্দি-কাশি সামান্য হলেও সাথে সাথে রিপোর্ট করতে বলা হচ্ছে। হট লাইন নম্বর ০৮০০ ১২০২। যাতে আক্রান্ত হওয়া, টেস্ট করা আর চিকিৎসা শুরু হওয়ার সময়টা আরও কমিয়ে আনা যায়।  

ভ্যাক্সিনের জন্যে চারদিকে আলোচনা হচ্ছে, আস্ট্রাজেনিকার সাথে চুক্তি হয়েছে ভ্যাক্সিন কেনার, আরও অন্য কোম্পানীর সাথে কথাবার্তা চলছে নতুন চুক্তি করার, ইউরোপীয়ান কমিশনের সাথে চুক্তি হয়েছে কিন্তু এখনও হাতে কিছু আসে নি।

 ০৬/০৮/২০২০

 

Wednesday 5 August 2020

শকুন্তলা দেবী – মা ও মেয়ের গল্প

ছোটভাই শান্ত’র কল্যানে দেখা হলো আনু মেননের লেখা ও পরিচালনায় হালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হওয়া “শকুন্তলা দেবী” সিনেমাটি। একাডেমিক এডুকেশান না থাকা একজন জিনিয়াস ম্যাথমেটিশিয়ান, লিজেন্ড যিনি পরে এস্ট্রলোজি এবং পলিটিক্সেও ইনভলবড ছিলেন। উনিশো আশি সালে মেদাক অধুনা তেলেঙ্গানা প্রদেশে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। মন মানসিকতায় অত্যন্ত আধুনিক তিনি উনিশো সাতাত্তর সালে সমকামীতার ওপর বই লিখে সমালোচিত হন। ভারতে তিনিই প্রথম সমকামীতা নিয়ে বই লিখেন। অঙ্কশাস্ত্র, জ্যোর্তিবিদ্যা, উপন্যাস সহ তার লেখা অসংখ্য বই আছে।

 

সিনেমা বানানোর সময় থেকে আজ অব্ধি প্রত্যেকটা রিভিউতে “শকুন্তলা দেবী” নিয়ে শুধু ওপরের এই কথা গুলোই উঠে আসছে। কিন্তু আমার কাছে পুরো সিনেমাটাই লেগেছে বেদনা বিধুর। এখানে ছিলো কত গুলো ভাঙাগড়া সম্পর্কের গল্প। শৈশব হারানো এক দুঃখিনী বালিকার নাম “শকুন্তলা দেবী”। অন্য আট দশটা মেয়ের মত সে স্কুলে যেতে পারেনি, খেলতে পারেনি, তার বাবা তাকে দিয়ে যত বেশি রোজগার করাতে পারে, রেখেছিলো সেই দশায়। একমাত্র সাথী, আদরের বিকলাঙ্গ বড় বোন “সারদা”কে অল্প বয়সে হারিয়ে সে পুরো একা। মায়ের সমর্থণ চেয়েছিলো বারেবারে কিন্তু মা তা দিতে ছিলেন অক্ষম। মায়ের অক্ষমতাকে মানতে পারেনি শকুন্তলা, দারুণ ক্ষোভে মায়ের পাশ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। প্রেমে ব্যর্থ, কারণ সে নির্ভেজাল প্রেম চেয়েছিলো, কারো প্রয়োজন হতেও চায়নি, কাউকে প্রয়োজনীয় বানাতেও চায় নি। যে মেয়েটি পাঁচ বছর বয়স থেকে রোজগার করে পরিবারকে চালাচ্ছে, তার কাছ থেকে অন্য কি আশা করা যায়?  

 

এরপর শকুন্তলা নিজে মা হলো। একাকী শকুন্তলা মাতৃত্বেই নিজেকে পূর্ণ করতে চাইলো। চললো ভাঙা-গড়ার খেলা। বারবার মেয়ের কাঠগড়ায় শকুন্তলা। আর সব মায়েদের মত সন্তানের কাছে নিজেকে সমপর্ণ করলো। সব স্যাক্রিফাইস মায়েদের কাছেই আশা করা হয়, মেয়েদের কাছেই আশা করা হয়। সমাজের ছকে বড় হওয়া সন্তানরাও তাই চায় যতদিন না তারা নিজেরা মা হয়, নিজেরদের পা সেই জুতোয় গলায়। প্রাণের চেয়ে প্রিয় ম্যাথ ছেড়ে দিলো শকুন্তলা, ছেড়ে দিলো আরও বাকি সব যা যা মেয়ে চায় না। কালের নিয়মে মেয়ে বড় হলো, মেয়ের প্রেম হলো, মেয়ে বিয়ে করে যখন স্বামীর সাথে চলে যাবে মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। সবর্স্ব দিয়ে মা চাইলো, মেয়েকে-জামাইকে কাছে রাখতে, পাশে রাখতে। শুরু হলো মা-মেয়ের যুদ্ধ। প্রথমে মা হারলো, মেয়ে জিতলো। কালের নিয়মে মেয়ে যখন মা হলো, তখন আবার ভুল বোঝাবোঝির অবসান।

 

ম্যাথের জিনিয়াসনেস, পার্টি, প্রোগ্রাম, অডিয়েন্সের তালি, এসব ছাপিয়ে আমার চোখে পড়েছে গিনিস বুক ওফ রেকর্ডসে “পৃথিবীর একমাত্র হিউম্যান কম্পিউটার” এর নিঃসঙ্গতা, আপনজন হারানো, আপনজনকে পাশে রাখার আকুতি। হতে পারে তিনি অনেক কিছুই নিজের টার্মস এন্ড কন্ডিশনে চেয়েছেন, কম্প্রোমাইজে চান নি, পাঁচ বছর থেকে খেটে খাওয়া একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষের জন্যে সেটাই অনেক বেশি স্বাভাবিক। ভিদ্যা বালান আমার সব সময়ের খুব পছন্দের অভিনেত্রী। তার কারণে “ডার্টি পিকচারে”র মত সিনেমাও অনায়াসে দেখা যায় আর “শকুন্তলা দেবী” তো বারবার দেখা যায়। ভিদ্যা বালান এই সিনেমার জন্যে পার্ফেক্ট চয়েস।


৫/০৮/২০২০