Thursday 19 December 2019

ঝোড়ো যুবকের কবলে, এক সকালে


এই ঠান্ডা সকালে নীরার একদম বিছানার বুকের গরম ওম ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে না।
কিন্তু উপায় নেই গোলাম হোসেন, নীরার অফিস সমস্যা না, সমস্যা হলো মেয়ের স্কুল।
মা না উঠলে পৃথিবী ইধার থেকে উধার হয়ে গেলেও মেয়ে উঠবে না। যদিও এসব ভেবে
এলার্ম একটু এগিয়েই দিয়ে রাখে নীরা। বিছানায় গড়াতে গড়াতে রোজ ভাবে, আজ রাতে
ঠিক সময় মত শুয়ে পরবো, কিছুতেই দেরী করবো না, তাহলে এই ঘুম ঘুম কষ্টটা কমবে।
যদিও ভাবাই সার, মুভি, বই আর কিছু না হলে ফেবুতো আছেই, গুঁতোগুঁতি করে সেই দেরী
হবেই।


দেরী করে বের হওয়াতে আজ রাস্তা বেশ শুনশান। স্কুল আর অফিসের ভীড় শেষ।
শীতের কারণে সূর্য্যি মামা আপাতত পুবদিকে শুশ্বরকূলের বাড়ি বেড়াতে গেছে,
মার্চের আগে আর এমুখো হওয়ার তেমন কোন আশা নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকারে
আপনমনে সাইকেল চালাচ্ছে রোজকার মত, হঠাৎ কোথা থেকে দুর্বৃত্ত দমকা
হাওয়া এসে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। আচমকা আক্রমনে দিশেহারা নীরা,
সাইকেল নিয়ে প্রায় পরে যাচ্ছিলো বলে, কোন রকমে টাল সামলালো।
মুখ দিয়ে চিৎকার বেড়িয়েই যাচ্ছিলো, বদ বাতাস আমায় ছাড়ো। বাতাসের চোখ দেখে নীরা
হঠাৎ অনুভব করলো, চিৎকার করে কোন উপায় হবে না, কামুক বাতাসের সাথে তাকে লড়তে হবে।


কিন্তু উদ্দাম যুবক বাতাসের বুনো ছোঁয়ায় আদরে নীরা এই সাত সকালে গলে গলে যাচ্ছিলো।
যদিও সবার ছোঁয়া বাঁচাতে সে সর্বাংগ ভাল করে মুড়েই বের হয়েছিলো, কিন্তু গলার কাছে ওভারকোটের যেই বোতামদুটো খোলা রেখেছিলো, তাই দিয়ে বাতাস পেঁচিয়ে মুড়িয়ে নীচে নামছিলো। গলা ছুঁয়ে বুক, তারপর পেট, নাভি, আহ! বাতাসের উত্তপ্ত জীহবের শিহরণে সে প্রায় দিকহারা।  নীরা তার ভাল লাগা বাতাসকে কিছুতেই বুঝতে দিতে চাইছিলো না। দুষ্ট বাতাস, একা বাগে পেয়েছে নীরাকে আজ, সেই বা ছাড়বে কেন? আস্তে আস্তে তার জোর বাড়ছে, বাড়ছে বেগ, তাকে সামলাতে নীরাকেও তার বেগ ধরে রাখতে, ক্ষনিকে বাড়াতেও হচ্ছে। দুজনেই বুনো উত্তেজনায়, আদরে জড়াজড়ি, কাড়াকাড়ি, মাখামাখি, লেপ্টালেপ্টি।


অফিসে পৌঁছে নীরা যখন তার ওভারকোট খুললো, ঘেমে ভিজে সে জবজবে। এই শীতের সকালে
এতো ঘামের উৎস কি, কি করে বলবে সে কাউকে। ভাবতেই আরক্ত মুখে এদিক ওদিক তাকিয়ে
চোখ নীচু করে, ভালো লাগায়, লজ্জায় দু’হাতে নিজেই নিজের চোখ ঢেকে পালালো সে।

১৯/১২/২০১৯






Wednesday 18 December 2019


“মেঘমালা” যখন পড়াশোনা করে তখন বাসায় “কথা বলা” মোটামুটি নিষিদ্ধ। তিনি স্কুল থেকে ফিরে যতক্ষণ বাবা-মা না ফিরেছে টিভি, ল্যাপি, মোবাইলে ধর্ণা দিয়ে থাকেন। আমরা ফিরলে তবে শুরু হয়। আমি হাইপিচে কথা বলি, আগে ছিলো, কেন এত জোরে কথা বলছো? আর এখন, কেন কথা বলছো, কথা বলবে না। এই কথা বলছো'র ভেতর গান শোনা, টিভি দেখা, ফোন করা সব অন্তর্ভুক্ত। কোন শব্দ করা চলবে না। ফোন নিয়ে আমাকে সারাক্ষণ একতলা-দোতলা করতে হয় কিন্তু তাও চলবে না, আবার মা’কে পাশে বসে থাকতে হবে নইলে ওনার ঠান্ডা লাগে, একলা লাগে, হাত টিপে দাও, পা টিপে দাও সেসব তো আছেই।

বান্ধবীর সাথে ফোনে কথা হচ্ছিলো, দাদু, মা, নিজেরা আর ছেলেমেয়ে এ নশ্বর জীবনের সব বিষয় নিয়েই আলোচনা করতে করতে প্রথমে নিজেরা অনুতাপ করলাম, মায়েদের সাথে আরও ধৈর্য্য রাখা দরকার, এই যে খ্যাক করি, এটা ঠিক না। নিজেরাও তো আস্তে আস্তে মায়েদের দিকেই আগাচ্ছি। তারপর নিজেদের ছেলেমেয়ে যে খ্যাক খ্যাক করে আমাদের সাথে সেই আলোচনায় এসে সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম, “হোয়াট গোজ এরাউন্ড কামস এরাউন্ড”। আমি কইলাম, দোস্ত, আমি ক্যামনে এই ফমূর্লায় আছি! আমি কি সেই বয়সে মায়ের সাথে খ্যাক করার সাহস রাখছি!

লোড শেডিং এর দুপুর গুলোতে যখন বিছানায় গা ঠ্যাকানোর উপায় নেই, এক ফোটা বাতাস কোথাও নেই, তখন ঢাকার মধ্যবিত্ত পরিবারে আইপিএসজেনারেটর কিছু ছিলো না। আমি বারান্দায় হাঁটতাম আর কবিতা পড়তাম, ছোট দুই বোন এতই ছোট, কবিতা কিসের সেটা না বুঝলেও, আমার বিড়বিড়ানি থেকে তাদেরও আমার সাথে সাথে সেই কবিতা মুখস্থ। “অতন্দ্রিলা ঘুমোও নি জানি তাই চুপিচুপি গাঢ় রাত্রে শুয়ে বলি শোনো”। আম্মি এই গরমে কেমনে ঘুমাইতো কে জানে। বারান্দায় হাঁটতাম বটে কিন্তু নিঃশব্দে, একটা ফুলের টব নড়ার শব্দে ভদ্রমহিলার ঘুম ভাংগলে কবিতা দিয়ে শরবত বানিয়ে খাইয়ে দেবে। পুরা এ পাশের শব্দ ঐপাশে ক্যামনে যাইতো তাও আজও এক রহস্য। যাহোক, বান্ধবীরা আসতো, দুপুরে খেয়ে দেয়ে রুমে দরজা বন্ধ করে সেই নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফিচফিচি হাসি, শব্দ হলে, ঘুম ভাঙলে এসে শুরু হবে, স্কুল কি আড্ডা মারার জন্যে বন্ধ হইছে, বাসায় কাজ নেই, পড়া নেই, আমার সাথে বান্ধবীদেরও খবর হয়ে যেতো। এর সবই আজন্মের বন্ধুর জানা।

দোস্ত হাসতে হাসতে কয়, তোর সবই কামস এরাউন্ড, তোর গোজ এরাউন্ড নাই। ফোন ছেড়ে ভাবছি, জীবন যদি ঠেলে সেই পর্যন্ত নেয়, (কিছুতেই চাই না) নাতি-নাতনীর বেবি সিটিং করতে হয়, তাহলে ঐখানেও আমার একই হাসর হবে। ঐগুলাও টের পেয়ে যাবে, এইটা লুজ, এটারে টাইট দেয়া যায়,  দেখা যাবে, ঐগুলাও খ্যাক খ্যাক করবে আমার সাথে।

সবশেষে জাতিকে সৃজিত-মিথিলার বিয়ের শুভেচ্ছা। সম্ভবত, চিরাচরিত সূত্র মতে, সৃজিতের বয়স বেশি বলে এখানে মিডিয়া বয়সের ব্যাপারটা নিয়ে টানাটানি করে নাই। বাকি রইলো এখন ফেসবুকে জাতির বিবেকদের প্রতিক্রিয়া দেখার ইস্যুটি


#আজাইরা_পোস্ট

একদা বিষন্ন নিশি

পুরনো বন্ধু যখন ফোন করে, খুব খুব খুব কাতর কন্ঠে জানায়, এখনও অনেক মনে পড়ে, এখনও অনেক পাশে চায়, ভালবাসা মানেই তুই, খুব অসহায় লাগে নিশির। জীবন বদলে যায়, সামনে এগিয়ে যায় আমি বলবো না,  নিশির জীবনে সামনে পেছনে বলে  কিছু নেই। কিন্তু বদলে গেছে, অনেক অনেক বদলে গেছে সে, নিশির ভেতরে তার জন্যে মায়া আছে কিন্তু কোন উথাল পাথাল অনুভূতি আর নেই, যাকে সবাই "প্রেম" বলে। সহজাত হাই-হ্যালো তো সকল চেনা মানুষকেই সে বলে। অসাড়তা কি সেও বুঝতে পারে, তাই কি এত কাতর হয়? বারবার মুখ দিয়ে বলাতে চায়? 

বদলানো জীবনে অন্য মানুষের সাথে পরিচয় হয়, কাছাকাছি আসা হয়, পছন্দ হয়, ভাল লাগে, প্রেমও জাগে। গল্প,উপন্যাস বা সিনেমার মত একই জনের জন্যে হাজার বছর তার ভালবাসা অপেক্ষা করে না, থেমে থাকে না, তাহলে কি নিশি খুব বাজে কেউ? নাকি নিশি আর সবার মতই সাধারণ কেউ।  

আচ্ছা, বছরে নানা উপলক্ষ্যে দু-চারটা ফোন কল, কখনও দু-একটা জোক ফরোয়ার্ড, কিংবা নানারকম  শুভেচ্ছা বিনিময়, পহেলা বৈশাখ, ঈদ মুবারাক, ভাল আছো, শরীর ঠিকাছে, বাসায় সবাই ভাল, এ কি করে প্রেম হতে পারে? প্রেম তো একটা দৈন্দন্দিন ব্যাপার, এর মাঝে তো মানুষকে বাস করতে হয়, শরীরি কিংবা অশীরীরি কারো সাথে। সকালে বাসি মুখে চুমু খেতে হয়, সারাদিনে অগনিত বার জড়িয়ে ধরে গায়ের গন্ধ নিতে হয়, অলস দুপুরে কিংবা মন খারাপ করা বিকেলে  বুনো উত্তাল আদর খেলতে হয়। 


কিন্তু নিশি তার পুরানো বন্ধুকে মুখ ফুটে তার অসহায়ত্ব বলতে পারে না, আঘাত দিতে চায় না তাকে, কিন্তু চোখ গড়িয়ে অশ্রু পরে, তাজা, নিস্পাপ অশ্রু, সেটা হয়ত ভালবাসা কিন্তু প্রেম নয় কিছুতেই। 


১৮/১২/২০১৯