Sunday, 26 February 2023
“পদ্ম পদ্য” – আফসানা কিশোয়ারের সাথে একটি অক্ষিপথ ভ্রমণ
আজকাল কবি হওয়া যত সোজা, মানুষ হওয়া ততো কঠিন। ধৈর্য্য, সহ্য, অধ্যবসায় দিয়ে এই কঠিন পরীক্ষা পার হওয়া প্রানীর সংখ্যা নিতান্ত কম। অবশ্য সেটা সবকালেই কম ছিলো। এই কমের একজন আফসানা কিশোয়ার লোচন, এত সেলফলেস মানুষ অন্তর্জালে অন্তত বিচরণ করে না। নিঃস্বার্থ, পরোপকারী এবং পরিশ্রমী “মানুষ লোচনের” কাছে “কবি লোচন” পরিচয় নিন্তাতই গৌন।
গরম গরম ভাজা জিলাপীর গা বেয়ে টসকে পরা রসের মত উপাদেয় সব লেখা, ভিডিও, মীম ইত্যাদির সাথে ভুবনমোহিনী হাসি মাখানো ছবি দিয়ে টাইমলাইন তার মাখামাখি। কোনদিন কোন লেখা টাইমলাইনে আসবে সেটা নির্ভর করে নিতান্তই কবির খেয়ালের ওপর। মন মেজাজ ঢাসু থাকলে আসবে কাঁচামিঠা আমড়া লেখা, যেদিন কবি প্রেমে বুঁদ সেদিন পাঠক পাবে অপু-বুবলি লেখা আর মাঝে মাঝে হৃদয় নিংড়ানো সেরকম পদ্মা নদীর মাঝি জীবনধর্মী লেখা। কবিতা পড়ি, দুষ্টুমি করি, খোঁচাই সব কিন্তু আদতে অপেক্ষা করি সেই জীবনধর্মী লেখাগুলোর। যেগুলো পড়ার পর আমার বুকের মধ্যিখানে মন যেখানে হৃদয় যেখানেতে শিরশির করে। বারবার পড়ি আর ভাবি এরকম অনুভূতি বা ভাবনার মধ্যে দিয়ে তো আমি অহরহ যাই কিন্তু আমি কেনো আমার ভাবনাটা ঠিক এরকম গুছিয়ে লিখতে পারি না? সেই সাত সকালে মোম গলার মত মাঝে মাঝে চোখও গলে আমার।
কথা অনেক হলো এখন কিছু কবিতার শুরুর অংশ পড়ে ফেলা যাক, আমার পছন্দের। শুরু করা যাক, কবির পছন্দের প্রেমের কবিতা দিয়ে,
যে কথার মানে নেই
সই, আমার জন্য যে শাড়িটা ড্রাইওয়াশ করে তুলে রেখেছো তা পাট ভেঙে তুমি এবার পরে ফেলো দ্বিধা ছাড়া। যে রিসোর্টে আমার জন্য গ্লাস সাজানো সেগুলোও অন্য কারও জন্যে ব্যবহার করতে পারো অনায়াসে। তুমি যে পথে হাঁটো সে পথে আমার হাঁটা নিয়তি তা আমি জানি। এ হাঁটাটা হবে একার। তুমি আমাকে প্রার্থনায় রাখো-সে শব্দ আমার কানে মৃতের শোকগাঁথা হয়ে ধরা দেয়। তোমার গ্রহে আমি থাকব, আমার সবটা জুড়ে তুমি-তবু স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা কখনো মুখোমুখি হবে না, তারা পালাবে ভিন্নপথে। তোমার আমার জন্যে কোন অপেক্ষা নেই, আমার আছে অভিমানের বিরহ। সব অনুভব একদিন সকাতরে কেঁদে ডুবে যাবে সাতশ পাঁচ নদীর জলে। আমার ফেরা হবে না তুমি ডাকলে না বলে।
অর্থহীন এই অভিমান করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার কিন্তু সবাই শুধু এত গুছিয়ে লিখতে পারে না।
কবিকে যারা ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন তাদের কাছে নীচের কবিতা নিতান্তই পরিচিত লাগবে। কবি এমনই, ভাণ-ভনিতা ছাড়া
তুমি একটা যাতা
আমি তোমারে হ্যাংলা হইয়া কলম কইরা বুক পকেটে রাখি নাই।
পোলাপাইন্যা ঢঙে মোবাইলের স্ক্রিনসেভারেও থুই নাই।
মানুষ ভালবাসলে শিমুলের তুলা উড়ার ছবিতে তার ফুল এদিক ওদিক ঘ্রাণ ছড়ায়
এই আলামত পাইলেই কেউ ভীরু হরিণ হইয়া আমাজনের জঙ্গলে পা বাড়ায়?
আমার নাম কি কলঙ্ক যে পাশে বইলেই কালি লাইগা যাইব?
আমারে যারা নিন্দা করে তারা তোমারে এমন কইরা মায়া দিব?
তারপর সাধারণ মানুষের একটি অসাধারণ দীর্ঘশ্বাস। এক নাম না জানা অচেনা কারো জন্যে ভর সন্ধ্যায় কার না বুক এমন হুহু করে
অপেক্ষা
কত কত মানুষ আত্মজীবনী লেখে, আমার তেমন কোনো ইচ্ছা জাগে না। ভালোবেসে ভালো না থাকার এক অফুরান আখ্যান আমার লেখার জন্য মন উথাল-পাথাল করে।
তারপর ভাবি, আমার কথা লিখে কি হবে? আমি কে যে আমার গল্প সাতকান্ড করে বয়ান করতে হবে?
তার চেয়ে তোমার শৈশবের পা যে পথে পড়েছে গুটিগুটি সে ধুলা, তোমার ভেঙে যাওয়া পেন্সিলের গুঁড়া, কাজলদানিতে সর্ষের তেল মেখে প্রদীপের উপর ধরে কাজল বানিয়ে টানা চোখে বসানো সন্ধ্যার অন্ধকার এ যদি অক্ষরে নামাতে পারতাম।
আমাদের সবার প্রতিদিন কত শত গল্প জমা হয় কিন্তু লেখা হয়ে ওঠে না।
হারিয়ে যাওয়ার গল্প
এ গল্প বহুবার বলেছি-যে ড্রেসটা খুব পছন্দের তার কোণা অবশ্যই রিকশা থেকে নামার সময় রিফুর অযোগ্য হয়ে ছিঁড়ে যাবে।
যে কানের দুল খুব মানায় তার পুশ খুলে দুলটা হারিয়ে যাবে জনারণ্যে। যে মানুষকে একদিন না দেখলে, কথা না বললে মন প্রাণ দেহ সব সাহারা মরুভূমি মনে হবে-সে দৈনন্দিন থেকে তো বটেই, এমন কি সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্লক করে দেবে।
এবার পড়বো কয়েকটা হৃদয় নিংড়ানো নির্যাসঃ
অগুনিত দিন তোমাকে দেখি না। স্ক্রিনে ক্বচিৎ এই দেখায় হয়তো কখনো দূরত্ব সামান্য কম মনে হয়। প্রতিদিন নানা শব্দে তোমার সাথে ভাব বিনিময় করি নিজের মাথার ভেতর। আমি যা ভাবি তার তিন ভাগের এক ভাগও প্রকাশ করতে পারি না। নিজেকে নিয়ে এক লবণ সমুদ্রে ডুবে থাকার ইচ্ছা হয়, যেন আমার ক্ষতেরা কোনোদিন বেঁচে থাকার এই জ্বলুনি না ভোলে।
তুমি জানো প্রিয় মানুষের গন্ধ স্পর্শ কেমন হয়? নিশ্চয়ই জানো। কিন্তু এর অভাববোধ তীব্র হলে কেমন লাগে টের পেয়েছো কখনো? আমি যখন মাতৃহারা হলাম, তখন মায়ের পুরনো শাড়ির তৈরি একটা কাঁথায় তাকে স্বপ্নের ভেতর স্পর্শ করতাম, আমার মস্তিস্ক বুঝাতো এর ভেতর আমি মায়ের গন্ধও পাচ্ছি।
প্রিয়,
আপনে যখন “শুভ সকাল” বলেন তখন আমার এই বৈদেশে রাত ঢলানি দিলেও দিব্য চোখে রোদ দেখতে পাই। ওয়েদার এপে গিয়া আমি ঢাকার হালচাল দেখি-আজ দেখলাম আপনার ঐখানে বৃষ্টি, আকাশ অন্ধকার। আপনে তো বর্ষা প্রিয় মানুষ-এমন দিনে একটু দেরিতে না হয় ব্যবসার চকে যান। বারান্দা দিয়ে হাত বাড়াইয়া জল ছুঁইয়া গরম চায়ের মগে টোস্ট ডুবায়ে আয়েশ করেন একদিন।
আপনার তো খালি রাগ আর রাগ-যা অবস্থা তাতে আপনের মিনিমাম এক সপ্তাহ আমার চোখের সামনে শুইয়া বইসা থাকা উচিত। আমি রান্ধুম বাড়ুম আপনে উদাস চোখে আমার দিকে তাকায়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও খাওন মুখে তুলবেন। প্রতি অক্তে স্নানের আগে আমি আপনের গায়ে প্রাচীন কায়দায় ওলিভ অয়েল মাসাজ কইরা দিব, আপনার ব্যথা বেদনা কিঞ্চিত হইলেও হ্রাস পাইবো।
কি চাই? বেঁচে থেকে সুস্থভাবে মরে যেতে চাই। কি অদ্ভূত মানুষের চাওয়া তাই না! এককালে চাইতাম অংক পরীক্ষায় অংকটা ঠিক হোক, তারপর চেয়েছি পাশে থাকা মানুষটা শব্দ করা ছাড়াই মনের কথা বুঝুক। মা হতে হতে মনে হয়েছে কন্যা আমাকে আকন্ঠ ভালবাসুক। এখন নিজের মাথার ভেতর নিজের সাথে বাস করতে করতে মনে হয় রঙবাজির দুনিয়া ধীরে সাদা কালো হয়ে যাওয়া ঠেকাতে চাই। গাছের মগডালে বসে নিচের যে দুনিয়া দেখি তার মিনিয়েচার চোখের মণিতে ভার্স্কয হয়ে বসে যাওয়া চাই না। চাই না মানুষ নামক বিচিত্র প্রাণীর মনের ভেতরটা পড়তে। মানুষকে বুঝতে পারার মতো কষ্ট মনে হয় আর কিছুতে নেই। আমি কি হাত তুলে প্রার্থনা করব কোনো নিদানের আশায়। না কি কবিতার হাত ধরে নিশিগন্ধা রাত পার হব বিড়াল পায়ে!
“পদ্ম পদ্য” নামটা আমার কাছে পরীমনির ছেলের গালের মত তুলতুলে নরম নরম লাগে। গাল টেপার মত করে বার বার অকারণেই বলি, বলতে ভাল লাগে তাই বলি।
বইটি জুড়ে আছে অসংখ্য “লিমেরিক”। প্রেমিক-প্রেমিকা বইটি অবশ্যই সংগ্রহ করবেন। যেকোন আবহাওয়ায় বা পরিস্থিতে পার্টনারকে মুগ্ধ করতে আপনাকে নিজেকে বেশি ভাবতে বা খাঁটতে হবে না। আপনাদের জন্যে খানিকটা “মুশকিল আসান” হচ্ছে এই “পদ্ম পদ্য”।
তানবীরা হোসেন ০২/১৯/২০২৩
Tuesday, 7 February 2023
প্রথমে পুরুষবাদ শেষে নারীবাদ
প্রথমে ব্লগে তারপর ফেসবুক আমলে জনপ্রিয় হওয়ার জন্যে প্রধান অস্ত্র থুক্কু বিষয় ছিলো "মুক্তিযুদ্ধ"। সেটা কচলাইয়া কচলাইয়া ঘি বের হওয়ার পর আসলো 'নাস্তিকতা, সেক্যুলারিজম' আর হালে জনপ্রিয় হলো 'নারীবাদ'
সম্ভবত বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে যত্রতত্র মানে ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে, রাস্তাঘাটে চুলকানি, ঘা, দাদের মলম মিলে তারপরও এ রোগের উপশম দেখি না
এক কালে খুব জনপ্রিয় বক্তব্য ছিলো, তসলিমা নাসরিন ধর্ম নিয়ে কিছুই জানেন না। কোরানের ঐ সূরার ততো নম্বর আয়াতের ব্যখ্যা জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, তিনি মুখস্থ বলতে পারেন নাই, তিনি ডাহা ফেইল। মজার ব্যাপার হলো, ধার্মিক হতে হলে কিছু জানতে হয় না, আয়াতে, সূরায় কি আছে না জেনে হুজুর বা দাদি কি কইছে সেইটা জানলেই চলে। কিন্তু নাস্তিক হতে হলে আপনাকে পল কার্জ, রিচার্ড ডকিন্স, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, আর্থার মিলার থেকে শুরু করে স্টিফেন হকিং সব মুখস্ত রাখতে হবে। আর সেইম গো'জ ফো হিয়ার। পুরুষবাদ হইলো, যেকোন নারী, বয়সে, টাকায়, পজিশন, পারিবারিক অবস্থায়, শিক্ষায় আপনার থেকে জ্ঞানী বা ভাল হোক না কেন তাকে দুইটা কষাইয়া গালি দিতে পারলেই হইলো। রাত দুপুরে গলায় দু পেগ ঢেলেও সেটা করা যায়, বিষয় না। কিন্তু নারীবাদী হইতে হইলে আপনাকে সিমোন দ্যা বিভোয়ার, বেল হুক্স, এঞ্জেলা ডেভিস, মালালা ইউসুফজাই, মিশেল ওবামা সব মুখস্থ রাখতে হবে।
নইলে, ইসলামের অসংগতি ধরালেই যেমন সুবিধাবাধীরা বলে, ঐটা "সাহি" ইসলাম না তেমনি পড়া না পারলেই বলবে আপনি সাহি নারীবাদী না।
"নেদারল্যান্ডস" পৃথিবীর মানচিত্রে যাকে খুঁজে পাওয়া ভার, অথচ পৃথিবীর প্রথম পাঁচটা দেশের মধ্যে যার প্রায় সবসময়ই অবস্থান। গত নির্বাচনে
নেদারল্যান্ডসের রাজনৈতিক দল ডি সিক্সটি সিক্স এর নেত্রী সিগ্রিড কাখ প্রাইম মিনিস্টার রুতেকে প্রায়ই হারিয়ে দিচ্ছিলো, নেদারল্যান্ডসের সমাজে নারীরা কিরকম বৈষম্যের স্বীকার হয় তার পরিসংখ্যান দিয়ে। এই নেদারল্যান্ডসেই একই কোম্পানীতে, এই কোয়ালিফিকেশান নিয়ে একই পজিশনে কাজ করে মেয়েরা পুরুষদের থেকে কম বেতন পায় শুধুই মেয়ে হওয়ার কারণে। করোনা কাল থেকে "ডমেস্টিক ভায়োলেন্স" এর দিক থেকে ইউরোপের প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে নেদারল্যান্ডস আছে।
বৈষম্যের স্বীকার হও ঠিকাছে, এক বালতি সমবেদনা কিন্তু মুখ খুললেই "নারীবাদী" গালি খাও।
পুরো পৃথিবী জুড়েই মেয়েরা রাঁধে, ঘর সামলায়, বাচ্চা সামলায়। প্রায় সমস্ত জাতির পুরুষদেরই মেয়েদের কাছে এই প্রত্যাশা। বাচ্চারা এটা দেখেই বড় হয়। তারওপর চোখের সামনে মায়ের নিগ্রহ, বোনের নিগ্রহ, ফুপু-খালার নিগ্রহ, নিজের জীবনের বিভীষিকা দেখে বড় হওয়া ছেলেমেয়েদের নারীবাদী হয়ে বেড়ে ওঠা কি আস্বাভাবিক? তার জন্যে তাকে আলাদা বই মুখস্থ করতে লাগবে? আর ভাববেন না, কাশেম বিন আবু বকরই পদ্দা করা গৃহকর্মা নিপুণা নারী পছন্দ করে। সেকুলার, নাস্তিক, মুক্তমনা সব লেখকরই পছন্দ এক।
অ-নারীবাদী মেয়েরা হবে এই ইট্টু লাজুক লাজুক, কথায় কথায় অভিমান করবে, গাল ফোলাবে, রাতে চড় মারলে সকালে সেই ফোলা গাল আর লাল চোখে এক হাতে আটা মাখবে, রুটি বানাবে, আরেক হাতে আলু কেটে ভাজি। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, গাল ফোলা কেন,কি হয়েছে? লজ্জায় দ্বিধায় মাটির সাথে মিশে যেয়ে বলবে, মাথা ব্যথা করছিলো, রাতে ঠিক করে ঘুম হয়নি তো তাই আমার চোখ আর সাথে গালও ফোলা। স্বামী চড় মেরেছে এই লজ্জা তার, বেদনার তো স্থানই নেই।
নারীবাদীদের আবার কোন ইমোশন থাকা জায়েজ না। তারা সব সময় আর্মির পোশাক গায়ে দিয়ে ঘুরবে, লোহার ব্রেকফাস্ট খাবে, স্টিলের লাঞ্চ। ফাল্গুনে খোঁপায় ফুল, কিংবা বৈশাখে হরেক রকম ভর্তায় টেবল সাজানো, নবৈচ নবৈচ। তাই কি তাদের মানায়? তাহলে তারা পুতুপুতু নারীবাদী, কোন কম্মের নয়।
বলাবাহুল্য, এসব ফরম্যাটই আবার ঠিক করে দিয়েছে, মোটামুটি জিরো লাইফস্কিল থাকা "পুরুষবাদী ঠাকুরেরা"। এর মধ্যে সাউথ এশিয়ার পুরুষেরা সব থেকে অকর্মণ্য পুরুষ, কোনো কাজই পারে না। নিজের আন্ডার গার্মেন্টস ধুতেও এদের হয় মা নয় বউ লাগে। এরা বাচ্চাকাল থেকে কোনো স্কিল শেখা ছাড়াই বড় হয় এই প্রাইড নিয়ে, যেহেতু তার একটা দন্ড আছে, তাই তার সাথে সম্পর্কিত নারীজাতীর সব সদস্য তার অধীন, তার খেদমতে নিয়োজিত থাকবে। নিজের স্ত্রী তো সেইমতে সবচেয়ে বড় ক্রীতদাসী। সুতরাং বউ কতোটা পড়বে, কতোক্ষণ- কোথায় জব করবে, কী পোষাক কতোটা টাইট-লুজ-খোলা পরবে, ফেসবুকে কি ছবি দিবে, ব্লগে কি বিষয়ে লিখবে, কার সাথে কতোটা হেসে কথা বলবে সেইটা সে ঠিক করে দিবে। সে কই জুয়া খেলে সেইটা ব্যাপার না। ইস্যু হইলো “নারী” কারণ তার এবং তার পরিবারের মান-সম্মান সব বউয়ের চাল-চলন আর পদ্দা পুশিদার ওপর নির্ভরশীল।
কথা হইলো, এই ভূখন্ডের পুরুষেরা ভৌগলিক অবস্থান বদলাতে পারে কিন্তু চিন্তা, চেতনা আর স্বভাব? তো, নারীবাদীদের গালি খাওয়া ঠেকায় কে!
Wednesday, 21 December 2022
স্মৃতি তুমি বেদনা
নিজের হাতে লাগানো কুমড়ো লতা কিংবা বেগুন ফুলে মায়া পড়ে
কবে কোথায় বেড়াতে যেয়ে কিনে আনা লবনের চামচ, কফির মগের জন্য মন পুড়ে
দশ বছরে একবার ভাঁজ খুলে দেখা হয়নি, সেই কলেজের প্রথম বছরে কেনা জামদানিটার জন্য মন হু হু করে
মেয়ের জুডোর ড্রেস, সেই ছোট্ট গোলাপী বাথরোব সব ঝুলে আছে আলমিরায়, একরাশ মায়া মেখে
বৃষ্টি ভিজে কাদা মাড়িয়ে গড়িয়াহাট থেকে কেনা শাড়িতে মায়া
অসহ্য ভীড়-গরম উপেক্ষা করে গাউছিয়া থেকে কেনা ব্লাউজে মায়া
নিজের শখে দুবাই এয়ারপোর্টে কিনে দেয়া মেয়ের ছোট হয়ে যাওয়া চুড়িতে মায়া
পয়সা জমিয়ে জমিয়ে কেনা এত্ত সব সিডি,
আর কোনদিন কোন কাজে লাগবে না জেনেও ফেলে দিতে কি নিদারুণ বুক ব্যথা
প্রয়োজন ফুরায়, মায়া নয়।
কত সহজে প্রতিদিন কত মানুষ চলে যায়,
বেঁচে থাকাটাই কি একটা মায়া তবে?
সাই-ফাই সিনেমায় দেখানো এলিয়নদের মত আমরাও কি কোন একটা ইল্যুশনের চক্করে ঘুরপাক খাচ্ছি?
স্বাধীনতা বনাম উচ্ছৃঙ্খলতা
এই বছরের মে মাসে জিন্স-টপস পরার কারণে নরসিংদী রেল স্টেশনে এক তরুণীকে মারধোর করে এক বোরকা পরা বেহেস্তী ভদ্রমহিলা। ঘটনার পর ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি। তরুণী জানিয়েছিলো, সে রেল স্টেশনের মারধোর আর গালি-গালাজের ট্রমা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আর একবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলড হয়ে ট্রমাটাইজড হওয়ার শক্তি তারমধ্যে নেই।
যত শাদা চোখেই দেখি, এখানে কে স্বাধীন আর কে উচ্ছৃঙ্খল? পুরো পৃথিবীর সমাজবিজ্ঞান বলবে, বেহেস্তী ভদ্রমহিলা উচ্ছৃঙ্খল আর মেয়েটি নিরীহ। একজন মানুষের নিজের পোশাক নির্বাচন তার মৌলিক অধিকার। যেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর সমাজবিজ্ঞান সব ফেইল করে তার নাম বাংলাদেশ। একটি মেয়ে যে কারো ব্যাপারে নাক গলায় নাই, কারো ক্ষতি করে নাই, কাউকে নির্যাতন করে নাই,
নিজের পোশাক পরে নিজের বন্ধুদের সাথে নিজের দিন শুরু করেছিলো সে উচ্ছৃঙ্খল আর বোরকার মত একটা অস্ত্র গায়ে চাপিয়ে আর একজনকে নির্যাতন করার মত এমপাওয়ারড ফিল করা কেউ হলো নিরীহ - স্বাধীন।
একটা দেশের প্রশাসনে যারা কাজ করে তারা সে দেশের জনগনেরই অংশ, ভিন গ্রহ থেকে আসা কোন এলিয়েন নয়। এই মৌলবাদী সমাজ ব্যবস্থার অংশ হয়েও অন্তত এই ক্ষেত্রে প্রশাসন সিনেমার পুলিশের মত ক্যারিশমাটিক কাজ করছে। বোরকাওয়ালীকে ধরে জায়গা মত "স্বাধীনতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা" ফিট করে দিয়েছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ পুলিশ এরকম সুবিচারের দৃষ্টান্ত রাখবে এই আশা রাখছি। বাঙালিকে "হাইকোর্ট দেখানো" এদেশের বিচার ব্যবস্থার রীতি, এ নিয়ে আক্ষেপ রইলো। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশকে ভালবাসা।
তিন সেটের সোফা
অবশেষে বাসায় দুইটা তিন সিটের সোফা কিনলাম। একমাত্র মেয়ে আমার, সারাদিন ভর আদারে,বাদারে যেখানেই ঘুরে বেড়াক, রাত হলেই খেয়েদেয়ে আমার কোলে মাথা দিয়ে টিভি দেখা তার ছোটকালের অভ্যাস। ছোট যখন ছিলো তখন ছিলো কিন্তু এখন বড় হইছে, এই গরমের কালে এত ঘষটাঘষটি করলে কষ্ট
মেয়েরে বল্লাম, আলহামদুল্লিল্লাহ, এখন দুইটা তিন সিটের সোফা, একটায় তুমি শুবা আর একটায় আমি। বন্ধুদের সাথে গুলটি মেরে বাইরে থেকে এসে এই কথা শুনে মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভালোমন্দ কিছুই বললো না, আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। আমি খুবই বিরক্ত হলাম, কিন্তু কিছু কেয়ার করছিলাম না। এরপর ও রুমে চলে গেলো আমিও আমার কাজে গেলাম।
একটু পর ক্ষিদে লাগলে জোরে জোরে ডাকলাম, কিন্তু কোনো উত্তর দিচ্ছিলো না। জিজ্ঞেস করলাম, কি হইছে? জবাব দেয় না। বললাম, এই মূহূর্তে নীচে এসে টেবিল লাগা, নইলে তোর একদিন কি আমার একদিন। মেয়ে নীচে নামলে খেয়াল করলাম চোখ লাল হয়ে গেছে মুহূর্তেই গলার রগ বেয়ে গেছে। “জরে জরে"
নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
সাধারণত মাইর খাওয়ার সময় হইলে ও এরকম করে। পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি হইছে, ভাল থাকতে ভাল লাগে না? কিন্তু সে একদম টাচ ও করতে দিতে ইচ্ছুক না। বললাম, পিঠ সুড়সুড় করলে এমনেই বলো, এত ভ্যানতাড়ার দরকার নাই।
তারপর হঠাৎ বলে, একমাত্র মেয়ে আমি তোমার, কেন আমি তোমার সাথে এক সোফায় শুইলে তোমার সমস্যা? একা একাই খাও তাহলে, আমি তোমার টেবল সাজিয়ে দেবো না। এই কথা শুনার পর আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতেছিলাম না।
এত বড় বড় দুই সোফায়, দুইজন আলাদা শুয়ে টিভি দেখবো বলাতেই এই অবস্থা! তাও মায়ের সাথে এমন রিয়াক্ট। বললাম, এইটা নরম গলায়ও আইসা বলতে পারতা। এত তেজ দেখানোর কিছু নাই। আমার খাইয়া আমার পইড়া আমারেই কইবা ম্যাও! তেজ সামলায় রাইখো নাইলে মাইর একটাও মাটিতে পরবে না। সাথে চোখ রাঙাইয়া বল্লাম, আগের সোফাটা লাফাইয়া ভাঙছো, এখন বড় হইছো, সোফার সাথে ভদ্রতা বজায় রাখবা, ব্যবহার বংশের পরিচয়।
আমার এই কথা শুনে মেয়ে থ। ওয়াদা করছে এমন বেয়াদপি আর করবে না কখনো। মনে পড়ে গেছে পাঁচ বছর আগে সে এমন বেয়াদপি করছিলো, তিন দিন তার খাওয়া দাওয়া খুবই বেসিক পর্যায়ে ছিলো। মনে মনে সে ভাবলো, মা হইছে উনিশ বছর, যা ছিলো তাই আছে, বদলায় নাই।
বাপরে বাপ, বাঙালি মা এমন জল্লাদও হয়!!!!
ঈশ্বর ও শুড়িখানা
গলির মুখে যে পুরনো চার্চটা ঠিক তার উল্টো দিকেই হঠাৎ করে একদিন একটা বার খোলা হলো।
চার্চে প্রতিদিন প্রার্থণার সময়, হে লর্ড, বার ধ্বংস করে দাও, বার ধ্বংস হোক বলা হতে লাগলো।
সত্যি সত্যি কয়েকদিন পর আচমকা ঝড় হলো, প্রচন্ড বজ্রপাতসহ বৃষ্টি যাকে বলে। বজ্রপাত থেকে আগুন লেগে পুরো বার পুড়ে ছারখার।
বারের মালিক যেয়ে চার্চ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিলো। তার দৃঢ় বিশ্বাস, চার্চে প্রার্থণার কারণেই আগুন লেগেছে।
আদালতে চার্চ কর্তৃপক্ষ তাদের সমস্ত দায় অস্বীকার করলো।
বিচারক পড়লেন মহা ফাঁপড়ে, এই জীবনে প্রথম তিনি এমন সমস্যায় পড়লেন, একজন “বার” মালিক, ঈশ্বর, প্রার্থণার ওপর বিশ্বাস রাখছে অথচ পুরো “চার্চের" ইশ্বর আর তার শক্তির ওপর বিশ্বাস নাই!!!!
(হোয়াটসএপ জোকের ভাষান্তর)
নারীর প্রতি সহিংসতা
প্রতি এগারো মিনিটে লিগ্যাল পার্টনার কিংবা পরিবার দ্বারা একটি মেয়ে খুন হয়, হ্যাঁ, এই পৃথিবীতেই হয়। বানিয়ে বলছি? আমি না পরিসংখ্যান বলছে
অফিস থেকে মেইল করা হয়েছে, খালি চাকরি আর ক্যারিয়ার হলেই হবে না, কমিউনিটির জন্যেও কাজ করতে হবে। কি করা দরকার আর কি করা যায় এসব নিয়ে টিম করা হলো, বিভিন্ন চ্যারিটি অর্গানাইজেশানে যোগাযোগ করার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, “শেল্টার হোম” এর ভিক্টিম মহিলাদের “স্কিল ডেভেলাপমেন্ট” প্রজেক্ট করা হবে। কম্পিউটার ট্রেনিং, ইংরেজি শেখানো, হাতে কলমে সিম্পল ট্র্যানজেকশান বুকিং ইত্যাদি। ভবিষ্যতের সহকর্মী উঠিয়ে আনতে হবে ওদের মধ্যে থেকে। আত্মবিশ্বাস ফিরিয়া আনা দরকার ভিক্টিমদের। প্রজেক্ট ফাইন্যাল করে প্রেজেন্টেশান বানাতে গিয়ে আক্কেল গুড়ুম।
নর্ডিক কান্ট্রি’স যাদেরকে পৃথিবীর বেহেস্ত বলা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতায় তারা ইউরোপেও সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছে!!!!!! গরীব, ভুখা বলে অবহেলিত ইস্ট ইউরোপীয়ানরা আছে সবচেয়ে নীচে!!!! অবশ্য লেডি ডায়না আর মেগান মার্কেল জানিয়েছে, নির্যাতন রাজবাড়িতেও চলে। আলোচনার মাঝেই রুমেনিয়ান ম্যানেজার গর্বের সাথে জানালো, ইন রুমেনিয়া নো বডি ক্যান টাচ আস, নো বডি। উই কন্ট্রোল এভ্রিথিং, হাউজ, শপিং, ওয়ার্ক। জীবনের প্রায় সবটা এই দেশে খরচ হয়ে গেলো, আগে জানা থাকলে রুমেনিয়াই চলে যেতাম।
Subscribe to:
Posts (Atom)