Monday 30 March 2020

অন্তর মম বিকশিত কর

করোনা”কে উপলক্ষ্য করে নানারকম ভিডিও, মীম ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। কিছু উপদেশমূলক, কিছু শিক্ষনীয়, কিছু ফান আর কিছু অবমাননাকর। আজকে একটা অবমাননাকর ভিডিওর কথা বলবো। একজন বেশ বয়স্ক মুরুব্বী শ্রেণীর ভদ্রমহিলা “করলা” নিয়ে অনেককিছু শুনছেন বলে এখন “করলা” খান না। ক্যামেরার পেছনে যে আছে তিনি বেশ হেসে হেসে তাকে দিয়ে এটি তিন-চার করে বলাচ্ছেন, ভদ্রমহিলা দেখছেন তাকে নিয়ে মজা হচ্ছে, ক্যামেরাও রেকর্ড হচ্ছে কিন্তু তিনি নিরুপায় তাই ইচ্ছে না থাকলেও হেসে হেসে একই কথা বলে যাচ্ছেন, সায় দিয়ে যাচ্ছেন।


এখানে আসলে একজন অসহায় মানুষ যাকে ঐ বাড়িতে হয়ত কাজ করে কিংবা সাহায্য নিয়ে থাকতে হবে তার নিরুপায়তাকে ভিডিও করা হয়েছে, এটা কোন ফান নয়, অন্তত আমি পাই নি। ঐ বয়সী মুরুব্বী আমার আপনার পরিবারে, আশেপাশে নিশ্চয় আছে, যারা করোনাকে “করলা” না ভাবলেও, করোনা নিয়ে আমার আর আপনার চেয়ে হয়ত কম জানে, কিংবা মনের ভুলে করোনাকে, “করোলা” বলেও ফেলেছে দু’চারবার। আপনি ঐটার ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপ করেন তো। কানের গোড়ায় ঠাটিয়ে দুটো দিয়ে রক্ত বের করে দেবে। আপনি ঐ ভদ্রমহিলার মেঝেতে বসা অবস্থানটাকে ভিডিও করেছেন, আপনি চেয়ারে বসেন সেই সুযোগটা নিয়েছেন, দ্যাটস ইট।


বাংলাদেশ সরকার “লকডাউন” ঘোষনা করার পর ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে পরিবারমুখী মানুষের ভীড়। সংকটে আপনজনের পাশে থাকার তাড়না তো চিরন্তন। প্রবাসীরাও হয়ত সেই প্রেষণা থেকেই বাড়ি ফিরেছিলেন। সারাজীবন পরিবারে জন্যে খেটেছেন, এই বিপদের দিনে তাদের কাছে ফিরবেন না তো ফিরবেন কোথায়? যাই হোক, মুহূর্তে সেই ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলো, সাথে বিভিন্ন টিকাটিপ্পনী। হ্যাঁ বটেই, পরিবার ছেড়ে তো থাকেই সেসব শ্রেণি পেশার লোক যাদের অবলীলায় গালি দেয়া যায়। আমরা যারা গালি দিতে পারি তারা মোটামুটি সবাই পরিবার নিয়েই বাস করি। সাথে সরকারের “কান্ডজ্ঞানহীনতা”র সমালোচনা। মানলাম সরকার কান্ডজ্ঞানহীন, সরকারের উচিৎ ছিলো প্রথমে দেশ জুড়ে “কার্ফিউ” ঘোষনা করে তারপর “লকডাউন” করা। কিন্তু আমি আর আপনিই কতটা দায়িত্বশীল? দেশ জুড়ে এই মহামারী মোকাবেলা করা কি সরকারের একার দায়িত্ব? আমার-আপনার কোন দায়িত্ব নেই? আমাদের দায়িত্ব কি শুধু ফেসবুকে সরকারের সমালোচনা করা আর জনগনকে গালি দেয়া? গালি দিয়ে বিপ্লব হয় না। বিপ্লব করতে হলে, মাঠে নামতে হয়, ঐ মানুষ গুলোর পাশে দাঁড়াতে হয়, তাদের কাঁধে কাঁধ রেখে, চোখে চোখ রেখে তাদের বেদনা জানতে আর বুঝতে হয়। আপনি যেতে পারতেন স্টেশনে, বোঝাতে পারতেন এতে কি ক্ষতি হতে পারে, নামতেন রাস্তায়, নামেন মাঠে, ঘাটে কিংবা বন্দরে -----



অভিজিত রায় খুন হওয়ার পর বিডি নিউজ থেকে প্রয়াত শ্রদ্ধেয় ডাঃ অজয় রায়ের একটি সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছিল, জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, বাবা আর ছেলে দুজনেই সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতেন, সেই লক্ষ্যে কাজ করেছেন, কে বেশি সফল? (স্মৃতি থেকে লিখছি, হুবহু না’ও হতে পারে)

অজয় রায় স্যার জবাব দিয়েছিলেন, অবশ্যই আমি, আমি লড়েছি রাজপথে। অভির যুদ্ধ ছিলো কলম দিয়ে। রাজপথে লড়াই করতে অনেক বেশি সাহস আর শক্তি লাগে, কলম সেই বিপ্লব আনতে পারে না।

আমিও স্যারের মত বলবো, মানুষকে ভালবাসলে রাস্তায় নামেন, গালি দিয়েন না। যদিও অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানি, ওয়েল কর্নসার্নড বলেই আমার বন্ধুরা এভাবে তাদের টেনশান প্রকাশ করেছে, কিন্তু একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলে হয়ত নিজেই অনুভব করবেন, দিজ মাইট নট বি দ্যা প্রপার ওয়ে।

এই যে ক্ষমতাসীন ভদ্রমহিলা, দুই মুরুব্বীকে কানে ধরিয়ে সর্গবে তার মোবাইলে তা ভিডিও করছেন। যা দেখে আমাদের সবার বিবেক নড়ে গেছে, ছিঃ ছিঃ করছি। এই ভদ্রমহিলা আকাশ থেকে টুপ করে বাংলাদেশে পরে নি। উনি আমাদের সমাজ ব্যবস্থার অংশ, আমাদের মানসিকতার প্রতিফলন। রিকশাচালক, গৃহকর্মীদের তুই তোকারি করা, গায়ে হাত তোলা, অবলীলায় মাটিতে বসানো, গালি দেয়া, আমাদের মানবিকতাবিহীন শ্রেণি বিন্যস্ত সমাজের তিনি একজন প্রতিনিধি মাত্র। আমাদের লুকানো মুখোশের একটি নির্লজ্জ প্রকাশ।

আগে নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করি, হয়ত দেখবো, চারপাশ খানিকটা এমনিই বদলে গেছে … বদলানো শুরু হয়েছে

Friday 27 March 2020

শেষ “করোনা”, শুরুতে খেল দিয়েছো খতম করে

শেষ “করোনা”, শুরুতে খেল দিয়েছো খতম করে
রোগ পাঠিয়ে এখন ফাইজলামি “করোনা”

চায়নীজরা প্রথমে সারা বিশ্বজুড়ে “করোনা” ছড়িয়েছে, এখন তারা গোটা পৃথিবীকে “মাস্ক”, “কিট”, “ট্রিটমেন্ট” এন্ড “টেকনোলোজী” সাপ্লাই ও সাপোর্ট দিচ্ছে। পুরাই “চায়নীজ ট্রিক”। একসময় ইউরোপীয়ানরা উপনিবেশ গড়েছে এখন চায়নীজরা রিভার্স খেলছে। “এশিয়ান ফ্লু” নিয়ে যেহেতু ইউরোপীয়ানদের অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান কম, এটা দিয়ে ইউরোপকে দখল করা ইজি হবে। বছর বছর চায়না যদি বানিজ্যের প্রসারে নতুন নতুন “ফ্লু” এদিকে সাপ্লাই দিয়ে মার্কেট দখলে রাখে, অবাক হবার কিছুই থাকবে না।
আমার ধারনা, জাপান আফশোস করতেছে, হাতের কাছ থেকে বানিজ্য ফস্কে গেলো, এরপর তারাও কোমর বেঁধে লাগবে, টয়োটা, মিটসুবিশি, লীন-মুডা ট্রেইনিং এর পর আর নতুন কি প্রোডাক্ট রপ্তানী করা যায়।

ভারতীয়রাও পিছিয়ে থাকবে না। আইটি সেক্টর তো পুরাই কব্জায় এখন মেডিক্যাল সেক্টর। স্পেশালিস্টরা অন সাইট আর সাধারণরা অফ সোর। ফ্লু হলে ব্যাঙ্গলোরে হেল্প লাইনে ভিডিও কল দিয়ে ট্রিটমেন্ট নেবো।

অর্থনীতি নতুন মোড় নেবে, এশিয়া নির্ভর ইউরোপ। তবে সবদিক দিয়ে আমরা ধরা। ইউরোপ যখন এশিয়াতে উপনিবেশ বানিয়েছিলো তখন ভুগেছে আমাদের পূর্বপুরুষ, এখন চায়নীজরা এসে ইউরোপকে ধরেছে এখন ভুগবো নিজেরা। গরীব যেদিকে যায়, সাগর শুকাইয়া যায়।

বাংলাদেশ অবশ্য সবসময়ই দুধভাত, তারা কোন প্রতিযোগিতায় বা ট্রেন্ডে বিশ্বাসী নয়। আন্তর্জাতিক অংগনের ক্রিকেট এক্সপিরিয়েন্স নেয়ার মত তাদের এই বিশ্বের বানিজ্যের ভাবগতিক বুঝতে বুঝতে কেটে যাবে আরও পঞ্চাশ বছর।

এমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠোঁট গোল গোল করে যখন বলেন, “চায়নীজ ভাইরাস”, খুবই কিউট লাগে, জাস্ট লাভিট।

করোনা প্রমাণ করলো, দিনের পর দিন অফিস, স্কুল, বাজার, সব বন্ধ থাকলেও জীবন চলে। সবকিছু অনলাইনেই সম্ভব। অফিস প্লেস হায়ার না করেও বিজনেস রান করা যাবে, এবং ভালই যাবে। স্কুল চলবে এবং শপিং ও। “কস্ট কাটিং” ইউরোপ এবার তাদের জীবন ব্যবস্থাকে আবার নতুন করে ঢেলে সাজাবে। ওয়েটিং ইগারলি টু মীট দ্যা নিউ চেঞ্জেস হুইচ আই উইল কল “আফটার করোনা ইফেক্ট” অর “করোনা ইনভেশান”। ইতিমধ্যে পলিসি মেকাররা হয়ত লেগে পরেছে। নদীর একূল ভেঙেছে ওকূল গড়া হচ্ছে। হাজার লোকের যেমন চাকুরী যাবে তেমনি শত লোক আবার ওভারটাইমও কাজ করবে, তাদের মরার সময় নেই, বাজারে আসবে নতুন পলিসি।

লেসন অফ করোনাঃ অল্প কিবা বেশি, সবভাবেই জীবন কেটে যায়। সব পরিস্থিতিই একসময় স্বাভাবিক লাগে। মানুষ মানিয়ে নেয়ার অদ্ভূত ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, আড্ডা, পার্টি, মুভি, রেস্টুরেন্ট এগুলো ছাড়া কি করে বাঁচবো? কিন্তু এই যে জামা-কাপড় ইস্ত্রি করার কোন তাড়া নেই, নেলপালিশ ম্যাচ করার টেনশান নেই, বেশ ভালই বেঁচে আছি। জানুয়ারী মাসে হলিডে বুক করার সময় বললাম, আগস্টের পর আর কোন হলিডে করি নি, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। এখন হলিডে ক্যান্সেল, আবার কবে হবে তার কোন সম্ভাব্য পরিকল্পনার ও সুযোগ আপাতত নেই, কিন্তু দিব্যি ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাস নিচ্ছি। আপাতত জুন পর্যন্ত সব বন্ধ তারপর কি হবে সেটা এখনো কেউ জানে না।

অবাক করার ব্যাপার বেশ ভালই কাটছে দিন, অফিস করছি, রান্না করছি, মুভি দেখছি, ফেবু করছি রোজদিন একই রুটিন তারপরও বেশ লাগছে। একটা অন্যরকম সময় পার করছি, চেনা জীবনের সাথে এর তেমন কোন মিল নেই। অনেকটা প্রেগন্যান্ট থাকার অনুভূতি, সাবধানে থাকতে হবে, এটা ধরো না, ওটা করো না টাইপ ব্যাপার। বিশ্বজুড়ে “হোম কেয়ারান্টিন” চলছে, এমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া। পরিবারের সবাই ধরতে গেলে একসাথে আছি কিন্তু যার যার বাসায়। ভিডিও কলে গল্পসল্প শেষ হয়ে গেলে শুরু হয় গানের আসর। কবে এমন রুপকথার দিন কাটিয়েছি!



ইহা একটি অতিশয় লেইম পোস্ট।

03/25/2020

Thursday 26 March 2020

“তবুও বৃষ্টি নামে”

নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ,
অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে- শেষ হইয়াও হইলো না শেষ..."
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
“তবুও বৃষ্টি নামে” নূরুন নাহার জুঁই যাকে আমরা ছোট করে ডাকি জুঁই, এর লেখা ছোট গল্প সংকলন। ওপরে উল্লেখ করা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার সার্থক রুপায়ন। ছোট জুঁইয়ের লেখা বইটির কলেবরও ছোট, প্রচ্ছদ, সূচী, উৎসর্গ সব মিলিয়ে মাত্র সাইত্রিশ পৃষ্ঠা। গল্প আছে মোট সাতটি। কেউ যদি ভাবেন, এক ঘন্টা কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করবেন, এক কাপ ধূমায়িত গরম পানীয় নিয়ে বসে যান, “বিফলে মূল্য ফেরত” গ্যারান্টি।
প্রতিটি গল্পেই টুইস্ট আছে। ঝরঝরে বর্ননা, গল্পের নির্মান, পড়তে কোথাও থামতে হবে না, ধাক্কা খেতে হবে না। ধাক্কা থাকবে প্রতিটি গল্পের শেষ লাইনটিতে। যেমন, বইয়ের দ্বিতীয় গল্পটি “পরিপ্রেক্ষিত” তাতে বাসে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুই পুরনো বন্ধুর দেখা হয়, যারা এখন সম্পর্কে “দেবর-ভাবি”। ক্লান্তি কাটিয়ে দুই বন্ধু জমে ওঠে ফেলে আসা দিনের গল্পে। এ পর্যন্ত পড়লে মনে হবে একটা জাস্ট গল্প পড়ছি, তারপর জুঁইয়ের ভাষায় লেখা শেষ বাক্যটি, “বাসায় ফিরে যখন ফাল্গুনী বরকে শোনাচ্ছিল দেবরের সাথে দেখা হবার গল্প, কিংবা রুদ্র ফোনে মার সাথে বলছিল ভাবীর সাথে দেখা হবার কথা, তখন দুজনের কেউ কি জানতো, ঠিক ঠিক বারো বছর আগে দুজনের কেউ একজন আর অল্প একটু সাহসী হলে আজকের গল্পটা হয়ত অন্যরকম হতো?” তখন আবার অন্য ভাবনা কি মাথায় আসে না? কল্পনা অনেকদূর ডানা মেলে দেয় না?
পাঠকের পছন্দের বিচারে আমার কাছে সবচেয়ে মিষ্টি লেগেছে সবচেয়ে কলেবরে ছোট গল্পটা “কথার গান”। আবারও সেই শেষ বাক্যটিই, “মানুষ যা চায়, তার সব কিছু যে এক জীবনে পাওয়া হয় না!”
অনেক অনেক ধন্যবাদ জুঁই, বইটি আমাকে উপহার পাঠানোর জন্যে। পড়ে ফেলেছি অনেক আগেই প্রায় এক নিঃশ্বাসে কিন্তু রিভিউ লিখতে দেরী হলো, চিরাচরিত সেই আলসেমী। রেগে যাবে না, সেই আশা ছিলো। ভালবাসা অফুরান তোমার জন্যে, তোমার উত্তরাত্তর সাফল্য কামনা করছি। আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশী পরিবারে তুমি নতুন সদস্য, নেদারল্যান্ডস বসবাস আনন্দদায়ক হোক।


সেই ছোটবেলায় যখন উইলামস্ট্রাট এর ফ্ল্যাটে পা রেখেছিলাম প্রায় প্রতিটি দিনই ছিলো বিভীষিকা। বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদু, বাড়ি থেকে দু'পা ফেললেই কাজিন, বন্ধু। এছাড়া আজকে ক্রিকেট তো কালকে ফুটবল, পরশু কনসার্ট তারপর দিন হরতাল। কি নেই, ভরপুর ছিলো জীবন। আর এখানে নিস্তব্ধতা, শুধু আমি আর আমি। কোথাও যাওয়ার নেই, করারও কিছু নেই। টিভি বলতে বিবিসি, সিএনএন, এমটিভি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি নয়তো ডিস্কোভারী। পেপার পড়ার কোন সুযোগ নেই, ফ্রীতে পেপার দিয়ে যায়, উল্টেপাল্টে ছবি দেখে রেখে দেই। ফ্ল্যাটের বাইরের পৃথিবীতে কি হচ্ছে তার কোন আঁচ ঐ ফ্ল্যাটের ভেতরে এসে লাগে না। বাইরের পৃথিবী বলতে ডাচ ক্লাশ। তখনও বাংলাদেশের কোন সংবাদপত্রের কোন ওয়েবসাইট নেই।

সেসময় কোথাও থেকে বেশ সস্তায় অনেক রঙ পেন্সিল কিনেছিলাম। প্রতিদিন একটু পর পর ঘড়ি দেখতাম, কতটা সময় গেলো, দিনটা কি শেষ হলো? সোমবার কি মংগলবারে গড়ালো? দেয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডারের তারিখগুলো দুপুরে এক কালার দিয়ে ক্রস করতাম, দুপুর কেটে গেলে সন্ধ্যায় আবার অন্য কালার দিয়ে ক্রস করতাম তারপর আবার রাত। বেশীর ভাগ দিন চারটা রঙের ক্রস থাকতো, একটা দিন কাটলো।

সেই থেকেই রঙ পেন্সিল অনেকটা সাথী। তবে এখন আর সময় নিয়ে এত ভাবতে হয় না। একাকীত্বও খানিকটা অভ্যাসের ব্যপার। সাঁতার শেখার মত, একবার পানি খেয়ে শিখে গেলে, তারপর ভেসে থাকা যায়। একা থাকা একবার অভ্যাস হয়ে গেলে, কিছুক্ষণ রঙ, কিছুক্ষণ বই সময় বেশ যায়, মন্দ না

কেয়ারন্টিনে থাকা অবস্থায় কি কি করতে পারেনঃ

যতবার হাত ধোবেন, সাথে দুটো করে বাসন ধুয়ে ফেলতে পারেন। সংসারে শান্তি বিরাজ করবে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন। ব্যস্ততায় সাধারণতঃ যাদেরকে ফোন করা হয় না, ফোন করে তাদের খোঁজ খবর নিলেন। আপনার যে বোর লাগছে সেটা ছাপিয়ে আপনি কত কেয়ারিং, “করোনার” দিনে খোঁজ নিচ্ছেন সেটাই ফুটে উঠবে।

যেই মুভিগুলো দেখি দেখি করে দেখা হয়ে উঠছিলো না, সেগুলো দেখে ফেলতে পারেন। “Contagion” অবশ্যই এই লিস্টে থাকতে হবে। আগে দেখা হয়ে থাকলে আবার দেখবেন। মুভি দেখা হয়ে গেলে রিভিউ দিয়ে অন্যান্যদের জানাবেন।
একাত্তরের দিনগুলির মত বায়োগ্রাফী লিখতে পারেন, “কেয়ারন্টিনের দিনগুলো”

নার্গিস কোফতা, মালাইচপ, চমচম, রসমালাই, কিংবা তিন লেয়ারের চকলেট কেক বানাতে পারেন উইথ ফ্রেশ ফ্রুট এন্ড ফ্রেশ ক্রীম। বানানোর পর সবচেয়ে জরুরী যে কাজ, ফটো তুলে ফেসবুকে দেয়া সেটা ভুলবেন না। মিষ্টি বানালে রসটা ফেলবেন না, তাতে কাঁচা আম, আপেল, আনারস কিংবা পিয়ার ফেলে বানিয়ে নিন মজাদার চাটনি।
“শার্লক হোমস অমনিবাস” কিংবা “মহাশ্বেতা দেবীর উপন্যাসসমগ্র” টাইপ বই পড়তে পারেন।
ইনবক্সের যেসব ম্যাসেজের উত্তর সময়াভাবে দেয়া হয় না সেগুলোর উত্তর দেয়া যেতে পারে। তবে “করোনা” সম্পর্কে কিছু বলতে ও শুনতে চান না সেটা উল্লেখ করে দেয়া ভাল।

স্কুল,অফিস, উইকএন্ড আড্ডা, পার্টির ভিড়ে পরিবারের সাথে সেভাবে সময় কাটানো হয় না। এই সুর্বণ সুযোগে রোজ রোজ ভাল ভাল লাঞ্চ আর ডিনারের আয়োজন করতে পারেন। বিন্দাস খাবেন কিন্তু ভুলেও ওজন মাপার যন্ত্রের ওপর দাঁড়াবেন না। “দুনিয়া কয়দিনের, আজকে করোনায় ধরলে কালকে দুইদিন” মনোবল থাকা বাঞ্ছনীয়। আজাইরা স্ট্রেস জীবনে যোগ করা কোন কাজের কথা নয়।

মাকরসা’র ঝুল, ঘরবাড়ি ঝেড়ে সাফা করে ফেলতে পারেন, সাথে জামা-কাপড়ের আলমারি। পুরানগুলো ফেলে দিয়ে অনলাইনে নতুন অর্ডার করাই আকলমন্দের পরিচয়।

আবহাওয়া চমৎকার, শশা, স্কোয়াশ, টমেটো, বেগুন লাগানো শুরু করা যেতে পারে।
নানারকম নেইল আর্টের এটাই সুযোগ। ডিজাইন সবার সাথে শেয়ার করে নিন।

লাস্ট বাট নট দ্যা লিস্ট, এরকম একটা লেইম পোস্ট লেখা যেতেই পারে।
বাই জো, পেনশন লাইফ কাটানোর ট্রেনিং হয়ে যাচ্ছে।

চলচ্চিত্রে “পুরানো চাল ভাতে বাড়ে” পন্থা



তুম হোতি তো ক্যায়সা হোতা
তুম ইয়ে কেহতি, তুম ওহ ক্যাহতি
তুমি ইস বাত পে হ্যায়রান হোতি
তুম উস বাত প্যায় কিতনি হাসতি
তুম হোতি তো এয়সা হোতা
তুম হোতি তো ভ্যায়সা হোতা


‘সিলসিলা’ সিনেমার বিখ্যাত এই গান গেয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন নিজেই। বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত সেই কালজয়ী উপন্যাসগুলো যদি আজ লেখা হতো, তাহলে কেমন হত? রবীন্দ্রনাথ চারুলতাকে কীভাবে শাড়ি পরাতেন, কোন আঙ্গিকে সাজাতেন? কিংবা ‘বৃন্দা’? রবীন্দ্রনাথ কি ‘চারুলতা’ই নাম দিতেন তার চরিত্রের নাকি চৈতি? না, সে আজ আর আমাদের জানার উপায় নেই কিন্তু ওপরের গানের থিমটির মতো কোলকাতায় বেশ ট্রেন্ড হয়েছে পুরানো উপন্যাসগুলোকে আজকের আলোকে চিত্রায়িত করার।
সিনেমাগুলো থেকে অবশ্য ধারণা করতে পারি আজ হলে উপন্যাসগুলো কেমন ভাবে লেখা হতো। ‘ভিজুয়ালাইজেশন’ চিরকালই একটি খুব শক্তিশালী মাধ্যম। নিজেদের কল্পনা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে অন্যদের কল্পনা উসকে দিতে এর জুড়ি নেই।
এই ট্রেন্ডটির প্রথম সিনেমাটি সম্ভবত ঋতুপর্ণা অভিনীত ‘চারুলতা’। রবীন্দ্রনাথের ‘নষ্টনীড়’কে আজকের প্রেক্ষাপটে চিত্রায়িত করা হয়েছে। মূল গল্পটি কিংবা ভাবটি একই শুধু বদলে গেছে নায়ক-নায়িকার সাজ পোশাক, সংলাপ, যোগ হয়েছে মোবাইল, ফেসবুক ইত্যাদি।
তবে সময়টা যেহেতু ২০১১, তাই চরিত্রগুলোও অন্যরকম। স্বামী বিক্রমের চরম উদাসীনতা থেকে মুক্তি পেতে ইন্টারনেটে নিজেকে খুঁজতে হন্যে চৈতি, তখনই প্রায় তল পাওয়ার মতো হাজির সঞ্জয়। মানে ‘অমল’। ইথারের তরঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্য। অগ্নিদেব চ্যাটার্জির পরিচালনা, সুদীপা মুখোপাধ্যায়ের চিত্রনাট্য, ঋতুপর্ণা, দিব্যেন্দু, অর্জুন এর অভিনয়ে এক অনবদ্য সিনেমা।
এরপর শংকরের উপন্যাস ‘চৌরঙ্গী’র আধুনিক চিত্রায়ণ সৃজিতের হাত ধরে ‘শাহজাহান রিজেন্সি’। এই ছবি আপাদমস্তক সৃজিতের ছবি। শঙ্করের গল্পের কেবল আদলটাই রয়েছে, বাকি চরিত্রদের নাম বদল করে তাঁদের পর্বগুলিকেও নিজের ছকে সাজিয়ে নিয়েছেন সৃজিত।
ছবির শুরুতেই ‘রুদ্র’ চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, এই ছবির সব চরিত্রেরই অদলবদল ঘটে গিয়েছে।
ছবির শেষের অংশটা সত্যিই অসাধারণ। ২০১৯-এর ক্রাইসিসগুলোকে চৌরঙ্গীর চরিত্রদের মুখ দিয়ে যথাযথভাবে বলানোর চেষ্টা করলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
তাৎক্ষণিকভাবে যে সংলাপটা সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে গেছে, ‘কাটা দাগ মিলিয়ে যায়, নাকি আরও একটি বড় দাগ এসে আগেরটাকে ছোট করে দেয়’।
গুমনামি সিনেমার মতো, ছোট একটি চরিত্রে, এই সিনেমাতেও সৃজিত নিজে অভিনয় করেছে। দুটো সিনেমায় অভিনয় দেখে মনে হয়েছে, সৃজিত ক্যামেরার পেছনেই অনায়াস, ক্যামেরার সামনের জায়গাটা হয়ত তার জন্যে নয়।
এই ট্রেন্ডের সম্ভবত সর্বশেষ সংযোজন হল অপর্ণা সেনের ‘ঘরে বাইরে আজ’৷ বৃন্দার চরিত্রে তুহিনা অসাধারণ। বৃন্দাকে কাঠগড়ায় তোলেননি পরিচালক। এই শতকের বৃন্দা সে! সব অর্থেই স্বাধীন। অভিনয় সাজ রুচি, সব মিলিয়ে অপর্ণার ‘বিমলা’ আর ছবির ‘বৃন্দা’ হয়ে উঠেছেন।
বৃন্দার মনস্তাত্বিক টানাপোড়েন বেশ সফলভাবে পরিচালকের নির্মাণে ধরা পড়েছে। উপন্যাসের চরিত্রগুলির আধুনিকীকরণের যে প্রচেষ্টা করেছেন পরিচালক, সে কাজে তাঁকে সফলই বলা যায়।
ছবির নিখিলেশ উদারনৈতিক চিন্তাধারায় পুষ্ট, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে একা দাঁড়াতে সে ভয় পায় না। আবার জনস্বার্থে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পে সে এগিয়ে আসে সমাজ সচেতন নাগরিক হিসেবে। সন্দীপের মতো বুলি আওড়ানো ‘ন্যাশনালিস্ট’-দের প্রতি তার প্রতিবাদী স্বর ছিল অব্যাহত।
সিনেমাপ্রেমীদের জন্যে সিনেমাগুলো ‘মাস্ট সি’। তাই স্পয়লার দিলাম না।

তওবা তওবা ঈশক ম্যায় কারিয়া

তওবা তওবা ঈশক ম্যায় কারিয়া

প্যানডেমিক এই সংকটের যুগে সবাই সবার খোঁজ খবর নিচ্ছে, সামাজিক দায়িত্ব ও মানবিকতা তো বটেই। নেদারল্যান্ডসের করোনা পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ, ইউরোপের মধ্যে ডেথ রেট বেশ ওপরে। প্রতিদিন এই মিছিলে কিছু সংখ্যা যোগ হয়েই যাচ্ছে।

আমাকে একজন বললো, নেদারল্যান্ডসে তো করোনা হিট, তোমার কি অবস্থা?
জবাব দিলাম, সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কি ভয়? হিট-রান এন্ড গন, এই নিয়তেই আছি।
জবাব এলো, তওবা করে নাও আগেভাগে
আমি বিস্ফোরিত নেত্রে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের ওপর দয়া করবো বলে ঠিক করলাম। কনভার্সেশানের ইতি টানার উদ্দেশ্যে একটা স্মাইলি দিয়ে উইন্ডো ক্লোজ করলাম।
কিছুক্ষণ পর দেখি লাল টিপ ভেসে উঠেছে, উইন্ডো খুলে দেখি,
হাসির কি হল?
চীনে বৌদ্ধরা কেউ কলেমা পড়ছে কেউ না বুঝে নামাজ পড়ছে। স্পেনে বাড়ি বাড়ি আযান দিচ্ছে। ইউরোপের আর কোন দেশে রাস্তায় কলেমা পড়ছে কোরাস এর সাথে। সো, সময় থাকতে তওবা করে নিও।

আমি বাক্যরহিত হয়ে এক লক্ষ একবারের মত মনে মনে আবারও বললাম, এদের জ্ঞান দাও প্রভু এদের ক্ষমা করো। তারপর পাঁচ কাউন্টে নিঃশ্বাস নিয়ে তিন কাউন্টে ছেড়ে কাম মাইন্ডে লিখলাম,

মক্কা-মদীনায় স্বয়ং আল্লাহর ঘরে যে করোনার ভয়ে নামাজ বন্ধ করে দিলো, বললো বাড়ি বসে নামাজ পরো। সেই শক্তিশালী করোনা স্পেনের রাস্তায় এসে কেমনে এত দুর্বল হলো যে আজান শুনেই বেহুঁশ হয়ে গেলো?
সার্চ করো নেটে। তোমার নেটওয়ার্ক তো বিশাল। পেয়ে যাবা... উইথ লটস অব ট্রল

তো তুমি বলছো, তওবা করলেই একাউন্ট ব্যালেন্স হয়ে যাবে? ডেবিট-ক্রেডিট সমান সমান? ঝামেলা থাকবে না আর কোনো?
অনুতাপের সাথে করলে অবশ্যই কবুল হবে

এত সোজা বেহেস্তে যাওয়া? এটা তাহলে মিস করা ঠিক হবে না। বাটপারি-চুরি যাই করি না কেন, এট দ্যা এন্ড অফ দ্যা ডে, প্রথমে তওবা তারপর সোজা বেহেস্ত
সত্যিকারের অনুতাপদগ্ধ তওবা মানেই তুমি নিউবর্ণ সোল, তা সে যে বয়সেই কর।
কুল, এখন যাই মুভি দেখি
হেদায়েত নসীব হোক তোমার.
*****

বাই দ্যা ওয়ে, এই কথোপকথন যার সাথে হয়েছে তিনি বাংলাদেশের ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা। এখন হেটার্সরা বলতেই পারে, মিরপুরে থাকে বলে কি তিনি নেদারল্যান্ডসের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারে না? না, মানে, নিশ্চয় পারে। মেঘু অকারণে ঘ্যানঘ্যান করলে আমি বলি, কেন আমাকে এটা বলছো? মেঘ জবাব দেয়, জাস্ট বলছি আর কি। আমিও তেমন জাস্ট বলছি আর কি।
কথা হচ্ছে কথা এটা না। মেঘ ছোট থাকতে, নানা গান বাজিয়ে ওকে ভাত খাওয়াতাম। বিবেক ওবেরয়, লারা দাত্তা, এশা দেওল আর জন আব্রাহামের একটা মুভি ছিলো “কাল”। ওটাতে একটা গান ছিলো, তওবা তওবা ইশক ম্যায় কারিয়া। গানটা কোথাও বাজলেই মেঘ আমাকে ডাকতো, মামি, তওবা তওবা। এই কনভার্সেশানের পর থেকে ননস্টপ এই গান আমার মাথায় বেজে চলছে।

ওয়েল, জোক্স আপার্ট, একজন কাউকে আপনি মারা যাবেন তাই তওবা করে ফেলেন জাতীয় কথা বলাকে আমি নিতান্তই অমানবিকতা বলে মনে করি। আর ধর্ম নিয়ে অতিরিক্ত কনসার্নড মানুষেরা, অন্যদের উপকার করার উসিলায়, এমন অমানবিক কাজ গুলো নিরন্তর করে যান।

Thursday 19 March 2020

জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার মত “রয়্যাল” ব্যাপারগুলো “ডাচ” সংস্কৃতিতে নেই। না দেয় রাজা না প্রিমে। এদের অবশ্য রয়্যাল কোন ব্যাপারই নেই। ম্যানেজার, ডিরেক্টর যে কারো ঘরে যখন ইচ্ছে যাওয়া যায়, কথা বলা যায়, করিডোরে কফি খাওয়া যায়, হায়ারাকি ব্যাপারটা এই সমাজে অনুপস্থিত। ছুটির দিনে রাজা যাবে বাড়ির পাশের পার্ক পরিস্কার করতে আর প্রিমে বের হবে সাইকেল নিয়ে।

কিন্তু “করোনা” বিশাল শক্তি রাখে, অসাধ্য সাধন করেছে নেদারল্যান্ডসে। প্রিমে রুতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষন দিয়েছেন। এগেইন ফলোয়িং দ্যা “ডাচ রিচুয়াল” যাহা বলিয়াছেন সত্য বলিয়াছেন, কোন মিথ্যা আশ্বাস দেন নাই, কোন সত্য গোপন করেন নাই। এরা মৃত্যুপথ যাত্রীকে বলে, “আর তিন সপ্তাহ বা ছয় সপ্তাহ আছো, মেক দ্যা বেস্ট আউট অফ ইট।“

প্রিমে রুতে বলেছেন, সামনের সময়ে নেদারল্যান্ডসের সত্তর শতাংশ মানুষ “করোনা” ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। এবং তাদের বেশীর ভাগই সেরে উঠবে নিজেদের “ইমুইন” সিস্টেম ইউজ করে। একবার আক্রান্ত হওয়ার পর “ইমুইন” স্ট্রং হলে পরের বার ভোগান্তি কম হবে। এর কোন ওয়ে আউট আপাতত তার কাছে নেই।

তিনি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শনুযায়ী কাজ করছেন। “লকডাউন” কোন সমাধান আপাতত নয়। “লকডাউন” নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্যে হতে পারে, ধরা যাক এক মাস, পুরো বছর জুড়ে তো “লকডাউন” চলবে না। তারপরও যদি পরিস্থিতি ডিমান্ড করে, প্রয়োজন হয়, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেয় তিনি তাই করবেন।

“অর্থনীতি” তছনছ হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। “মন্দা” এড়ানোর কোন উপায় নেই। তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের রক্ষায় ডাচ সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। সংসদে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে, সর্বোচ্চ ভর্তুকীর ব্যবস্থা করা হয়ত হবে।

অতএব, হে মানবজাতি, তোমরা এটা মেনে নাও, “করোনা” এখন থেকে আমাদের পার্ট অফ লাইফ। ডাচ প্রিমের এই সত্য ভাষণ, আমার ধারনা পৃথিবীর সবার জন্যে কম বেশি প্রযোজ্য। “করোনা” আচমকা আমাদের জীবনে এসে গেলেও হয়ত থাকবে স্থায়ীভাবে আমাদের সাথে। ভ্যাকসিন হয়ত চলে আসবে উইদিন নো টাইম। আমার ধারনা, ভ্যাকসিন দিয়েও বেশি উনিশ বিশ হয়ত হবে না। হেভি ভাইরালের সময় এন্টিবায়োটিক নিলেও, তিন সপ্তাহ ভোগায়। অনেক সময় তিন মাস ধরে, খুকখুক কাশিও চলে। তাই আজকে ভ্যাকসিন আসলেই কালকে থেকে আমরা সবাই সুখে থাকবো এই চিন্তা হয়ত কিছুটা অমূলক।

তবে এখানে হয়ত ম্যালথাসের তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রকৃতি কিছুটা খেলছে। বয়স্ক মানুষ যেখানে সেখানে মৃত্যুর হার বেশি। ইউরোপে বয়স্ক মানুষ অনেক বেশি, ইটালি এর একটা বড় উদাহরণ। আর অন্য রোগের সাথে “করোনা” যোগ হলে সেটা আরও মারাত্বক আকার ধারণ করে।

আপাততঃ পরিস্কার পরিচ্ছন্নত থাকা, স্বাস্থ্যকর খাওয়া দাওয়া করে নিজের ইমুইন সিস্টেম স্ট্রং রাখা ছাড়া বিরাট কিছু করার হয়ত নেই।

ফুটনোটঃ আমাদের বাসায় থাকা বিচ্ছুটা অস্থির হয়ে আছে, কেন তার “করোনা“ হচ্ছে না। সে যে স্ট্রং সেটা প্রমাণ করার সুযোগ পাচ্ছে না।
আমি বলেছি, ইচ্ছে করে ঠান্ডা লাগিয়ে আমার মাথার ওপর সারাদিন হ্যাঁচ্চো হ্যাঁচ্চো করলে আমি পুলিশে কল দিয়ে বলবো, এই করোনাকে নিয়ে যাও
গুটুর গুটুর হাসি দিয়ে বলে, আমি জানি, তুমি এটা করবে না।
যতসম্ভব রাগি চোখ-মুখ, গলা করে বললাম, কেন করবো না?
তিনি আদুরে গলায় বললেন, কারণ, তুমি অনেক বেশি আমাকে ভালবাসো।
আমি বললাম, তুমি শিওর?
তিনি বলেন, হু, আমি জানি
তিনি জানেন, কেইস ক্লোজড


অফিস থেকে ইনফরমাল মেইল দিয়েছে, “এভরিথিং উইল বি ফাইন”, সবাইকে সেজেগুজে সুন্দর ফটো তুলে সাইটে “আপ” করতে বলেছে সাথে বলেছে, অন্যদের ছবিতে লাইক ও কমেন্ট করতে। সুন্দর ও স্বাভাবিক দিন কাটাতে। মেইলটা পড়ে মনটা ভাল হয়ে গেলো, আই জাস্ট লাভ দিজ “ডাচ কালচার” আউট এন্ড আউট।

১৮/০৩/২০২০

Tuesday 10 March 2020

দুশমনি "করোনা" প্রিয়তম


সামনে যে বিশ্বমন্দা আসছে যা হয়ত বেশ ভয়াবহ রুপ নেবে তার নাম "করোনা"।

চীন সারা বিশ্বের প্রায় ষাট ভাগ কাঁচামালের যোগানদাতা। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানে, এশিয়া টু এমেরিকা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। প্রচুর প্রতিষ্ঠান কিউ ওয়ান টার্গেট রিচ করতে পারে নি। গত চার-পাঁচ সপ্তাহে পুরো বিজনেস ওয়ার্ল্ড যাকে বলে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। কিউ টু নিয়ে ফোরকাস্ট দিতে মোটামুটি সবাই ব্যর্থ। কেউ শব্দ করছে না। ইনক্লুডেড দ্যা মেডিক্যাল সেক্টর। দু হাজার উনিশের ফোরকাস্ট সব দু হাজার কুড়ি শুরু না হতেই তছনছ। কি হবে কেউ জানে না। বছর শুরু না হতেই আগের সব হিসাব উলটে পালটে গেলো।

এই সোমবার সকালে আমর্স্টাডাম এএইএক্স খোলা মাত্র প্রথম পয়ত্রিশ মিনিটে "শেল" এর স্টক পরেছে একুশ দশমিক তিন ভাগ। যদিও দুপুর হতে হতে এক তৃতীয়াংশ রিকভার হয়েছে। ডাচ প্রিমে মার্ক রুতে বলেছেন, "জনগনের স্বাস্থ্যই আমাদের প্রাধান্য। স্টক মার্কেট প্রত্যক্ষভাবে না পরোক্ষভাবে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখে। আমরা খুব নিবিড়ভাবে অর্থনীতি পর্যবেক্ষণ করছি"। যদিও করোনা ভাইরাসের কারণে শুরু হওয়া মন্দার গভীর প্রভাব ডাচ অর্থনীতিতে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।


ইউকে এয়ারলাইন্স "ফ্লাইবি" ব্যাঙ্কক্রাপ্ট ঘোষনা করেছে। এর কারণ কি ব্রেক্সিস্ট না করোনা সেটা জানা যায় নি। তবে আপাতত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বেকার সমস্যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাথা ব্যথা নয়। তবে একটি সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার আঁচ সব সেক্টরেই লাগবে, সেই অর্থে কেউই নিরাপদ নয়। "করোনা" হাতে না মারলেও দেখা যাচ্ছে শেষ বেলায় ভাতে মেরে দেবে।


যারা সাহসী, ইমিউনিটি ভাল, ছোট বাচ্চা নেই, ঘুরতে বেড়াতে ভাল বাসেন, তাদের এটাই সময়। কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ। এয়ারটিকিট, হোটেল, রেস্টুরেন্টে এখন বিস্তর অফার আর ডিসকাউন্ট চলছে। অর্থনীতি সচল রাখতে কিছু অবদান তো রাখতে হবে।


আশি বছরের ওপরে করোনায় মৃত্যুর হার শতকরা চৌদ্দ দশমিক আট, পঞ্চাশ বছরের নীচে মৃত্যুর হার বয়স ভেদে শূন্য দশমিক দুই থেকে শূন্য দশমিক চার। (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশান চার্ট টিল টুডে)


তারপরও পুরো ইটালী ছিন্নভিন্ন


“প্যানিক" হ্যাজ বিকাম আ প্রোডাক্ট এন্ড মিডিয়া ইজ সেলিং ইট লাইক এনিথিং।


আরে পকেটে টাকা না থাকলে দীর্ঘ জীবন দিয়ে কি লাভ হবে রে পাগলা।

এন্ডহোভেনে আজকে রেড এলার্ট দেয়া হয়েছে।

দুনিয়াজোড়া পোচুর গিয়ানজাম

Sunday 8 March 2020

আজকের বিষয়ঃ অর্থনীতি

আজকের বিষয়ঃ অর্থনীতি
সাইকেলকে সবাই “পরিবেশবান্ধব” বলে ঠিকাছে কিন্তু নিজে বাঁচলে তারপর তো পরিবেশ, জোরে বলেন, সত্যি বলছি, নাকি?
ইউরো এক্সিম ব্যাঙ্ক লিমিটেডের সিইও সঞ্জয় ঠাক্কার বলেছেন, একটা দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিতে এক সাইকেলই যথেষ্ঠ। গাড়ি কেনে না বলে গাড়ির লোনও নেয় না, গাড়ির বীমাও করায় না, না আছে তেলের খরচ না গাড়ি সার্ভিসিং কিংবা মেরামতের খরচ। আর পার্কিং এর পয়সা তো অনেক দূরের কথা।
আপনি বলবেন, সাইকেল চালালে স্বাস্থ্য ভাল থাকে, বিশ্বের জলবায়ুর জন্যেও ভাল! তাই? কি করে?
অর্থনীতিতে ভাল স্বাস্থ্যের লোকের কোন প্রয়োজন তো নেই। না তারা ধূমপাণ করে না ড্রাগ ব্যবহার করে। ডাক্তারের ও দরকার হয় না, হাসপাতালেও যায় না। জিডিপিতে তাদের কোন অবদান আছে? না, নেই।
অথচ প্রতিটি ম্যাকডোনান্ড রেস্টুরেন্ট তাদের নিজস্ব কর্মচারী বাদেই আরও অন্তত ত্রিশটি চাকুরীর ব্যবস্থা করে, দশ জন কার্ডিওলোজিস্ট, দশ জন দাঁতের ডাক্তার, দশ জন জিম ট্রেইনার।
আপনি নিজেই ভাবেন, সাইকেল চালাবেন না ম্যাকডোনাল্ড যাবেন --- বুদ্ধিমান হন – ঠিক রাস্তাটি বাছুন।
জোক্স আপার্টঃ সঞ্জয় ঠাক্কার ডাচ অর্থনীতি সম্পর্কে কিছুই জানে না। সাইকেল সম্বন্ধেও না। সাইকেলের দাম তিনশো ইউরো থেকে তিন হাজার ইউরোর ওপরে যায়। কত রকম সাইকেল তৈরীর কারখানা আছে, সাইকেল রিপায়েরের দোকান আছে, জাপান - চীনের সাথে সাইকেল তৈরীর কোলাবোরেশান আছে। সাইকেল এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উচ্চহারে বীমাও আছে। এখানে সাইকেল রাখতে গেলেও অনেক জায়গায় পয়সা দিতে হয়।
এছাড়া আছে সাইকেল নিয়ে এক্সেসারিজের দোকান। সাইকেলের গায়ে ফিট হবে সেরকম পানির বোতল, মাথায় পরার হেলমেট, সাইক্লিং করার জার্সি, জুতো কত কি।
প্রতি বছর কত সাইক্লিং টুর্নামেন্টের আয়োজন হয়। "ট্যুর দ্যা ফ্রান্স" নিয়ে কত মিলিয়ন ইউরোর বাজি খেলা হয়, তা যদি জানতে ঠাক্কার। এসব টুনার্মেন্টে কত ক্যাফে-রেস্টুরেন্ট কত হাজার ইউরোর ব্যবসা করে। কত হাজার লিটার শুধু বিয়ারই বিক্রি হয়। চল্লিশ-পঞ্চাশ কিলোমিটার সাইকেল করলে কে আর দুটো চিজ বার্গার কিংবা বিগ ম্যাক খেতে ভাবে! সাইকেল মেইনটেইনে খরচ কম বলে অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ অনেক বেশী। গাড়ির মত বেশি না হলেও সাইকেল চালাতেও খরচ হয়।
জেনারেলাইজ করার আগে জানার পরিধি আরও বাড়াও ঠাক্কারজী।
সূত্রঃ জোক হোয়াটসএপ, বাকি ব্যবচ্ছেদ আমার।

উইম্যান্স ডে

যারা যারা আমাকে “উইমেন্স ডে” নিয়ে লিখতে বলেছিলেন কিন্তু নানা কারণে লেখা হয়ে ওঠেনি তাদের জন্যে, আমার বন্ধুদের জন্যে আজকের এই লেখাঃ
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে, মেয়ের সাথে খিটমিট করা, বিছানাপত্তর ঝাড়া, নাস্তা-লাঞ্চ ঠিক করা, মেয়েকে স্কুলে পাঠানো, নিজে অফিস যাওয়া, অফিস থেকে ফিরে রান্না করা, ডিনার সার্ভ করা, বাড়িঘর গোছানো, আমার রোজ “ মাই ডে কাম উইমেন্স ডে”। এটা সাতই মার্চ যেমন থাকে, আটই মার্চও তেমনই থাকে এমনকি নয়ই মার্চেও এতে কোন পার্থক্য আসে না। মার্চ হয়ে জুলাই থেকে অক্টোবর কিংবা ডিসেম্বর কোনো কোয়ার্টারেও কোন আলাদা কিছু নেই। সর্দি-কাশি, জ্বরেও নেই। প্রতিদিনই আমার দিন।
এমনিতে প্রতিদিনই আমি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় পরি, চুল আঁচড়াই, নিজের পছন্দের ক্রীম-পার্ফিউম মাখি। প্রতিনিয়ত নেল পলিশ করি, কানের দুল, আংটি, চুড়ি চেঞ্জ করে পরি। নিজের যত্ন নেয়ার জন্যেও আলাদা কোন দিবস টিবসের অপেক্ষা করি না।
বাঙালি মেয়েদের পড়াশোনার ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি, সেটাকে নারী জাগরণের শুরু বলে ধরে নেই। সেটা সত্যিও বটে। মেয়েদের পড়াশোনার সাথে আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারও জড়িত ছিলো। তখন বাঙালি মেয়েদের শোভনীয় ভাবে ঘরের বাইরে বের হবার কোন পোষাক ছিলো না। ব্রাক্ষ্ম সভায় কিংবা স্কুলে যেতে নানা ধরনের পোষাক মেয়েরা নিজেরা ভেবে বের করে নিতো, শাড়ির ওপর বিরাট চাদর জড়ানো কিংবা বিরাট একটি জামার সাথে শাড়ির মিল দেয়ার চেষ্টা যা নিয়ে তখন যারা নারী জাগরণের বিপক্ষে ছিলেন তারা নিজেদের পত্রিকায় বিভিন্ন উপহাসমূলক লেখা বের করতেন, বিবিবাবু ইত্যাদি নাম দিতেন। মর্হষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় ছেলের বউ জ্ঞানদানন্দিনী ঠাকুর, শাড়ির সাথে ব্লাউজ, পেটিকোট মিলিয়ে আজকের এই শাড়ি পরার শোভন পদ্ধতি্টি আবিস্কার করেন তাও বিলাত-মুম্বাই ঘুরে। অনেকদিনের অনেকজনের চিন্তা ভাবনার ফসল আজকের এই শাড়ি পরার স্টাইল। শোভনীয় এবং খানিকটা সামাজিকভাবে গ্রাহ্য জামা কাপড় না থাকলে মেয়েরা বাইরে যেয়ে কাজ শুরু করবে কিভাবে!
পশ্চিমের মেয়েরাই কি বরাবর এ ধরনের পোষাক পরতেন? তাদের পোষাক কি বাইরে বের হয়ে কাজ করার মত স্বাধীন ছিলো? আজকে যে বিখ্যাত “শ্যানেল” ব্র্যান্ড আমরা ব্যবহার করি তার উদ্যোক্তা ফ্রেঞ্চ ডিজাইনার কোকো শ্যানেল উনিশো কুড়ি সালে আবার মেয়েদের কাপড়ের ডিজাইনে পকেট সিস্টেম ফিরিয়ে আনাতে বেশ সমালোচিত হয়ে বলেছিলেন, মেয়েদের উচিত এখন বাস্তববাদী হওয়া, স্বপ্নের প্রিন্স চার্মিং খোঁজা বন্ধ করে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী/প্রিন্সেস চার্মিং করে গড়ে তোলা।
আমার মতো আরও যারা আছেন, যাদের আনলিমিটেড এক্সপেন্ডিচার ক্রেডিট কার্ড হোল্ডার কোনো প্রিন্স চার্মিয়ের সাথে এখনো দেখা হয় নি, নিজের মত বাঁচেন, যার যার অক্ষি পথে নিজের নিজের প্রিন্সেস চার্মিং হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছেন তাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা।
যারা অবৈতনিক ক্লিশে ঘর-সংসার রোজ টেনে যাচ্ছেন তাদের লাল সালাম।
তবে এই শুভেচ্ছা, অভিনন্দন আর সালাম আটই মার্চের জন্যে নয়, সংগ্রাম যেমন প্রতিটি দিনের, প্রতিটি মুহূর্তের, অভিবাদন ও তাই প্রতিটি ন্যানো, মাইক্রো সেকেন্ডের।
লেটস সেলিব্রেট ইচ ডে এজ মাই ডে অর উইম্যান্স ডে।

মেঘের প্রথম ইন্টার্নী

ছোট্ট মেঘমালা অনেক দুষ্টমিষ্টি ছিলো। স্কুল থেকে ফিরে সারা বাড়ি ছুটোছুটি করতো। দুধ খেতে চাইতো না। কিন্তু মেঘমালার মা, মেঘের চেয়ে এক কাঠি আরও বেশি দুষ্ট ছিলো। ভেবে ভেবে এমন জায়গা বাসায় খুঁজে বের করলো, যেখানে বসে মেঘমালা বেশি নড়াচড়া করতে পারবে না। দুধ শেষ করবে তারপর উঠবে।
দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে মেঘমালা জানালা দিয়ে আকাশের েদিকে তাকিয়ে যথারীতি গভীর ভাবনায় ডুবে যেতো। নানা দার্শনিক ভাবনায় ডুবে থেকে মেঘমালা যথারীতি, দুধ ঠান্ডা করে বসে থাকতো। মেঘের মা এসে মেঘকে দুধ শেষ করার তাগাদা দিলে শুরু হতো নানা দার্শনিক গল্প। মামি জানো, এক এক দিন, এক এক গল্প।
একদিন মা তাড়া দিলো, এখনো দুধ শেষ করো নি, তাড়াতাড়ি শেষ করো, দুধ না খেলে বড় হবে কি করে?
দুঃখী মেঘমালা করুণ গলায় বললো, মামি জানো , বড় হওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার।
অনন্ত কৌতুহলী মামি জিজ্ঞেস করলো, কেন!
চার বছরের দুঃখী মেঘু বললো, রোজ ভোরে ঘুম থেকে উঠে অফিস যেতে হবে, সারাজীবন। তাহলে জীবনে আনন্দ বলতে আর কি থাকলো, বলো?
মেঘকে ঘুম থেকে জাগানো আর পাহাড় চড়া এক কথা। এই আনপ্লেজেন্ট দায়িত্ব প্রতি সপ্তাহে মা থেকে বাবা, আর বাবা থেকে মায়ে’তে শিফট হতে থাকে। নিরুপায় মা হুমকিও দেয় মাঝে মাঝে, তোকে পুলিশে দিয়ে দেবো, দেখি তখন কি করে বেলা আটটা অব্ধি ঘুমাস। সেই মেঘমালা নিজের মোবাইলে এলার্ম দিয়ে ভোরে উঠছে, গলায় কোম্পানীর ব্যাজ ঝুলিয়ে, নিজের হাতে লাঞ্চ বানিয়ে নিয়ে, মা’কে বিছানায় রেখেই অন্ধকার সকালে বাসের পেছনে ছুটছে। তাকে “ইন্টার্নি” করতে হচ্ছে, সাড়ে আটটায় ম্যানেজারের সামনে উপস্থিত থাকতে হয়, নোট নিতে হয় সারাদিনের কাজের।
ডিয়ার ডিয়ারেস্ট আমার হরিণ ছানা মেঘমালা, তুমি বড় হয়ে যাওয়াতে তুমি যেমন দুঃখী, মা’ও ঠিক ততটাই দুঃখী। বড় হলে মায়েদের কোল ঘেষে থাকা হরিণ ছানাগুলো হারিয়ে যায়, ছোট ছোট দু'হাত দিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে, সেই আধো বাধো শব্দে "মামি জানো" এর জায়গায় সেই ছোট হাতে আসে মোবাইল, তার সেই ছোট বিস্ময়কর পৃথিবীর স্বর্গীয় সব নতুন নতুন জিনিস আবিস্কারের ঘটনা গুলো তখন ট্রান্সফার হতে থাকে হোয়াটসএপ, স্ন্যাপচ্যাট, ইন্সটাগ্রামের বন্ধুদের কাছে, হরিণ ছানারা ছোট পৃথিবী থেকে পা দেয় বড় পৃথিবীতে। আর যেই মা হরিণ ছানার জন্যে বড়
পৃথিবী ত্যাগ করে নিজেকে বন্দী করে ফেলেছিলো ছোট পৃথিবীতে, সে পরে রয় একা ঘরের কোণে।
কিন্তু দু’সপ্তাহের জন্যে হলেও সকালে ওঠা নিয়ে তুমি ঢিট হয়েছো, এটা মন্দ না

Thursday 5 March 2020

ওয়াজের একাল - সেকাল

আর দশটা সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি ঘরের মেয়ের মত, আমিও নসিহত শুনে শুনেই বড় হয়েছি। এটা করলে মানুষ কি বলবে, ঐটা করা ধর্মে নিষেধ, আমাদের বংশের মেয়েরা এগুলো করে না আর তারমধ্যে সবচেয়ে নসিহত দ্যা গ্রেট ছিলো, এসব করলে তোর বিয়ে হবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই পাকনা কাল থেকেই নসিহত ব্যাপারটার প্রতি চরম একটা বিতৃষ্ণা আরও অনেক ফাজিল মেয়ের মত আমারও ছিলো, এখনও আছে।

লাইভ ওয়াজ শুনতে যাওয়ার ভাগ্য হয় নাই। হুজুররা শুনলে অবশ্য বলবে, বাম্ববার লাইভ কনসার্টে যেয়ে তো নাচতে পারছো টি-এস-সির মাঠে, পারো নাই শুধু আমাদের ভাল ভাল কথা শুনতে আসতে। তবে, নেভার দ্যা লেস, প্রতি শুক্রবার লাইভ খুতবা শুনেছি, মসজিদের মাইক দিয়ে দিকে দিকে খুতবা ছড়িয়ে দেয়া হতো। আর কোথাও মিলাদে গেলে আসল মিলাদের আগে হুজুদের বয়ান কিংবা নসিহত। তখনের বিষয় ছিলো, না খেতে পাওয়া মা ফাতেমা, মা আমেনা, বুররাকে চড়ে সাত আসমানে যাওয়া আর অবধারিত ভাবে জাহান্নামী নারীদের হাই হিল, ভ্যানিটি ব্যাগ আর নাভির নীচে শাড়ি। এই বিষয়ের মধ্যেই ঘুরপাক খেতো।

মা ফাতেমা’র না খেতে পাওয়ার কাহিনী বর্ননার সময় হুজুররা কিরকম আহাজারি করে কাঁদতো, শ্রোতামন্ডলীর অনেকেও শুনতে শুনতে জোরে জোরে আকুল কান্নায় ভেঙে পরতো, আমি আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকতাম, অজানা অচেনাদের জন্যে কান্নাকাটি করার মত মন কিছুতেই নরম হতো না, সামনেই কত অনাহারী দেখেছি এবং জেনে গেছি সেসব আমার ব্যাপার না। র‍্যাদার মন উচাটান থাকতো সদ্য গরু কেটে রান্না করা সুগন্ধি ছড়ানো তেহারী কখন খেতে পাবো সেই আশায়।

আমি অত্যন্ত মুগ্ধ বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি, বিশ্বায়নের যুগে ওয়াজ শিল্প ও পিছিয়ে নেই। হুজুররা বুঝে গেছে পাঁচশো সত্তর খ্রীস্টাব্দ নিয়ে এখন আর মানবজাতি বদার্ড না। মা ফাতেমা, মা আমেনা আর বুররাক দিয়ে বানিজ্য হবে না। বাংলাদেশের বাংলা সিনেমার গল্প আর প্রযুক্তি থেকে হুজুরদের চিন্তাধারা আধুনিক ও উন্নত। তারা তাদের শিল্পকে নবায়ন করেছেন আজকের প্রেক্ষাপটে। আজকের ওয়াজের বিষয়, মেয়েদের জীন্স, ডোনাল্ড ট্রাম্প, ফেসবুক, ভাইরাল, ইউটিউব, বেলগ্রেড এমনকি করোনা ভাইরাস। এভাবে চললে তো আরিফ জেবতিক ভাইয়ের ফেবু ক্যারিয়ার প্রায় হুমকির মুখে।

মানুষের ঈমান দুর্বল বলে তারা কোরান থেকে রেফারেন্স দেয়া বন্ধ করেছেন, তারা প্রতি কথায় রেফারেন্স টানেন, নাসা’র বিজ্ঞানীদের! কোন রেফারেন্সে মানুষ আস্থা রাখে সেই বাজার তাদের যাচাই করা হয়ে গেছে।

বানিজ্যে যারা মাত দিতে চান, ওয়াজের সালমান এফ রহমান কিংবা আব্দুস সোবাহান আবার আধুনিক হিন্দী সিনেমার চটুল গানের সুর নকল করে গানে গানে বয়ান দেন। কেউ কেউ আবার স্টেজে নেচেও দেখান। হুরপরীদের আশা ভরসা তারা করেন না। ঠিক যেমন হিরো হিরোইনরা আজকাল স্টান্ট ব্যবহার না করে নিজেরাই শট দেন, অনেকটা সেইরকম না? তারা জেনে গেছেন, আজকের এই মুহূর্তটাই সত্য। দিনের শেষে সবই টাকা, সবই বিনোদন। কোটি কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট এই শিল্পে, অতঃপর আমরা তার কোন অবদান অস্বীকার করবো!

নসিহতে বিতৃষ্ণা থাকা সত্বেও শিল্পের আধুনিকায়ন ও বাস্তবমুখীতায় আমি বিমোহিত ও মুগ্ধ।

০৪/০৩/২০২০