Sunday 29 July 2018

ঈশ্বর কেন এতটাই অবিবেচক

কিছুদিন আগে ফেসবুক জুড়ে একটি আহত শিশুর মুখ ঘুরে বেড়িয়েছে। আট বছরের নিতান্ত অবোধ যাকে বেঁচে থাকার জন্যে পরের বাড়িতে কাজ করতে হয়। আর সেই কাজ উপভোগ করা মানুষেরা তাকে কর্মে অপটুতার অভিযোগে নানা জায়গায় খুন্তি পুড়িয়ে ছ্যাকা দিয়েছে। নিজে মা হয়েছি পর থেকে শিশুদের কষ্ট বড্ড বুকে বাজে। প্রতিটি শিশুর মুখে নিজের সন্তানের প্রতিচ্ছবি দেখি। বাচ্চাটির আহত মুখ দেখে মন কিছু লিখতে চাইলেও হাত সরছিলো না। আজ সারা ফেসবুক জুড়ে ভাসছে কীর্তিকা পূর্ণা ত্রিপুরা’র মৃত মুখ। অবধারিত ভাবে একদল যুদ্ধ করছে পাহাড় আর সমতলের সাদৃশ্য ও পার্থক্য নিয়ে। আর নিরালায় বসে আমি ভাবছি মানুষ যে “ইশ্বর” এর কল্পনা করে তিনি কত পার্সেয়ালটি করতে পারে। তার অবিবেচনার কোন সীমা নেই।

আচ্ছা এই বাচ্চাগুলো যদি বাংলাদেশে না জন্মে নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, জার্মান, সুইডেন বা কানাডা জন্মাত তাহলে তাদের জীবনটা কেমন হত? এভাবেই কি মৃত্যু হত তাদের? বাবা-মা না থাকলে কি এই বয়সে গৃহ ভৃত্য হতে হত? না, হত না, এমনকি সে দেশের নাগরিক না হলেও শরনার্থী শিশুদের সাথেও তারা এত অমানবিক আচরণ করে না। শরনার্থী শিবিরেও শিশুদের জন্যে আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়। যিনি “ইশ্বর” হবেন তিনি কেন এতটাই এক চোখা হবেন! জন্মের ওপর তো মানুষের হাত নেই, যার জন্যে সে নিজে দায়ী নয় তার মূল্য কেন সে নিজের জীবন দিয়ে পরিশোধ করবে? বাংলাদেশেই যদি ওরা সাধারণ কলিম, ছলিম, মাংলু, প্রিয়াংশু’র ঘরে না জন্মে কোন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ঘরে জন্মাত, তবে তো তাদের জীবন তাহলে অন্য ধারায় বইত। নিজের অজান্তে মানুষ জন্মায়, কিন্তু সেই অজানা জন্মই তার গোটা জীবন নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে।  

নেই নেই করেও পৃথিবীর বহু প্রান্তর ঘোরা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি দেশেই দেখেছি মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা নানাভাবে সুসজ্জিত, সুরক্ষিত এবং প্রতিদিন নানাভাবে তাদের যত্ন নেয়া হচ্ছে। আস্তিক বা নাস্তিক যে কোন দেশেই হোক না কেন এই ব্যাপারটিতে কেউই পিছিয়ে নেই। সেখানে দশর্নাথী ছাড়াও আছে স্থানীয় মানুষ, সংখ্যায় খুব অল্প হলেও আছে, প্রায় প্রতিটি স্থানেই মোম জ্বলছে কিংবা পুড়ছে আগরবাতি বা ধূপকাঠি। অথচ দেখা যাবে ঠিক বাইরেই নানা কায়দায় ভিক্ষে করছে কিছু লোক। বিরাট জায়গা নিয়ে উপসনালয় বা কল্পিত ইশ্বরের স্থান আর ঠিক তার পাশেই খুব ছোট ছোট ফ্ল্যাটে বসবাস করছে অসংখ্য জীবন্ত মানুষ তাদের বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে। কল্পনার ইশ্বরের অস্তিত্ব মানুষের মন থেকে যে মায়া আদায় করতে পারে বেঁচে থাকা জীবন্ত মানুষ তা টানতে ব্যর্থ হয়। জলজ্যান্ত মানুষের বেদনা ততটা অন্যকে স্পর্শ করে না যতটা অদেখা ইশ্বরের প্রেম করে।  

মানুষ ধর মানুষ ভজ শোন বলি রে পাগল মন
মানুষের ভিতরে মানুষ করিতেছে বিরাজন।

বাংলাদেশ থেকে ফেরার পথে প্লেনে আমার মেয়ে প্রায়ই জিজ্ঞেস করত, অবাক হত, বাংলাদেশ আর নেদারল্যান্ডস কি একই গ্রহে? ওর ধারনা এক গ্রহে দুটো দেশের মধ্যে এত পার্থক্য কি করে হয় বা হবে। রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর অফিসের কলিগরা খুব কশাস গলায় জানতে চাইত, আমার পরিবারের কেউ সেই দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হয়েছে কি না। আমার বাসা থেকে দুর্ঘটনা স্থল কত দূরে। তারপর আর থাকতে পারত না, জিজ্ঞেস করেই ফেলত, এসব দেখার পর আমরা এত স্বাভাবিক কি করে থাকি? ওরাও ত মানুষ, আমরা কি করে আমাদের নিজের মানুষদের প্রতি এত নির্দয় আচরণ করতে পারি? তারা কি করে জানবে এসব নৃংশসতা আমাদের কতটা প্রাত্যহিক ব্যপার। আমরা কত সাধারণভাবে এগুলোকে রোজকার জীবনের অংশ হিসেবে ধরি তারপর নিজ নিজ জীবনে মনোনিবেশ করি। যার গেছে সে বুঝবে আমার/আমাদের কি? আমরা তো ভাল আছি, বৃষ্টি হচ্ছে তাই আজ একটু খিচুড়ি সাথে গরু ভুনা, ইলিশ ভাজা আর আঁচার। এরপর টিভিতে সিরিয়াল আর এসি চালিয়ে সুখের নিদ্রা। কোথায় কে খুন হচ্ছে, পাহাড়ে না সমতলে  সেই নিয়ে দুঃখ করার অবসর কোথা।

ধার্মিক মানুষেরা খুব সহজেই অন্য মানুষের প্রতি কঠোর ও নির্দয় আচরণ করতে পারে। তারা নির্দ্বিধায় তাদের কল্পনার ইশ্বরকে সন্তুষ্ট রাখতে জলজ্যান্ত মানুষের হৃদয় ভেঙে দিতে পারে, প্রাণ নিতে পারে। ধর্ম আনে বিরোধ, প্রেম ভেঙে যায়, ঘর পুড়ে যায়, দেশ ছাড়া হয় মানুষ আর কেউ কেউ হয় পৃথিবী ছাড়া। কি করা যাবে, কর্কশ বাস্তবতার থেকে কল্পনা সব সময়ই সুন্দর, মধুর।

কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায় 
কতটা পথ পেরোলে পাখি জিরোবে তার দায়
কতটা অপচয়ের পর মানুষ চেনা যায়

২৯/০৭/২০১৮



মনীষাই হতে পারে পরিবর্তনের প্রথম ধাপ

ভেনিস দেখে মুগ্ধ হওয়া আমি বরিশাল দেখে অভিভূত হয়েছিলাম। দূর্গাসাগর, সরকারী ডাক বাংলো, আরজ আলী মাতুব্বর পাঠাগার, জীবনানন্দ দাশের বাড়ি ধানসিড়ি, বিশ্ববিদ্যালয়, লাকুটিয়া রাজার বাড়ি, অক্সফোর্ড মিশন চার্চ কি নয়? পরলোকগত মেয়র হিরণ বরিশালকে ছবির মত সাজাতে চেষ্টা করেছিলো। তারপর? তারপর আর হয়ে ওঠে নি। যেমন কখনও হয়ে ওঠে না আমাদের দেশে।


বিএনপি নইলে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপি, মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে, বিকল্পের খোঁজে। বিকল্প শুধু চাইলেই হবে না তাকে সমথর্ণ ও করতে হবে। সেই পরিবর্তনের ডাক নিয়ে এসেছে ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী। যিনি এলাকায় গরীবের বন্ধু, বিপদের ত্রাতা নামে এই তরুন বয়সেই প্রসিদ্ধ। বিভিন্ন সময় এলাকায় বিভিন্ন মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনা করেছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে জেলও খেটেছে কিন্তু নিজের এলাকার মানুষদের ফেলে কখনও পিছু হঠে নি।


সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল শাখার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, ‘মনীষা চক্রবর্তীর বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচনা বা প্রশংসার দাবি রাখে, মনীষা শিক্ষিত, মার্জিত—এ কারণে তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে বাসদ জনপ্রিয়, নাকি জনপ্রিয় নয়—এর চেয়ে মনীষার নির্বাচনে দাঁড়ানোর সাহসকেই স্বাগত জানানো উচিত। তাঁর মাটির ব্যাংককেন্দ্রিক ধারণাও ইতিবাচক।’


মনীষাকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে জানি না কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। যেকোন ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনের পক্ষে আমি সবসময় সমথর্ণ জানাই। খুব ছোট বিন্দু থেকে সৃষ্টি হয়েছিল “গনজাগরণ মঞ্চ”। কিন্তু আজ বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে গেলে একে বাদ দেয়া কোন ভাবেই সম্ভব হবে না। কে বলতে পারে তেমনি হয়ত বরিশালের মেয়র নির্বাচন হতে পারে বাংলাদেশের সুস্থ রাজনীতি এর সূচনা কেন্দ্র। ন্যায়ের পক্ষে থাকুন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ুন। এ দেশ আমার-আপনার, নাগরিক দায়িত্ব ও অধিকার দুই নিয়েই সোচ্চার ও জাগ্রত হন। তরুণরাই এদেশের ইতিহাস বারবার বদলেছে আশাকরি এবারও তার ব্যাতয় হবে না।


জয় হোক তারুণ্যের, জয় হোক সততার। ভেরি বেস্ট ইউশেস ফো মনীষা।


তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে,.
এ আগুন ছড়িয়ে গেল সব খানে

২৭/০৭/২০১৮

সাসকিয়া নোর্ট

https://arts.bdnews24.com/?p=18946


সাসকিয়া নোর্টঃ আমার ধর্ষক যদি এখনও বেঁচে থাকতো তাহলে এই বইটি আমি লিখতাম না।

সাসকিয়া নোর্ট এর প্রথম উপন্যাস স্ট্রমবলি এক জোড়া সফল লেখক দম্পত্তি তাদের বিয়েকে কিভাবে ধ্বংসের রাস্তায় নিয়ে যায় সেই অভিজ্ঞতা বর্ননা করেছে। লেখক দম্পত্তি এইভা হুকে আর মারসেল ভান রোজমারেন তার সাথে কথা বলেছে তার সাফল্য, নেদারল্যান্ডসের মেরুকরন, মি টু, তার উপন্যাসের বিষয়বস্তু আর যৌন সহিংসতা নিয়ে।
ভাবা হচ্ছিলো কোন এক লেখক দম্পত্তি যেন সর্ব বিক্রিত উপন্যাসের লেখকের সাক্ষাতকার নেয় কারণ উপন্যাসটিও আবর্তিত হয়েছে একটি লেখক দম্পত্তিকে কেন্দ্র করে। উপন্যাসের কারেল ভান বোহেমেন আর সারা যোমার এর অকপট সংলাপে, তাদের সংসার, তাদের ঝগড়া, বিদ্বেষ, হিংস্রতা, বিরক্তি আসলে ছদ্মরুপে সাসকিয়ারই নিজের জীবন কথা।

তখন ফোল্কস ক্রান্ত আমাদের কথা ভাবলো।

সাসকিয়া’র সাথে আমাদের সম্পর্ক কেমন ছিলো?

বেশ কয়েক বছর আগে একদম শেষ মুহূর্তে আমরা ভান দ্যা ডাইকের “ওভার হার” কনসার্টের টিকেট কিনি। সেই টিকেট আনতে আমাদেরকে যেতে হয়েছিলে লাইস্টারপ্লাইনের ক্যাফে ওয়েবারে যেখানে সাসকিয়া তার পরিবারের সাথে বিয়ার পান করত। ওর ভাইয়ের ছেলে ইয়ান রুফ ও সেখানে ছিল। কথাবার্তা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমাদের মধ্যে ঝগড়া হল কারণ একজন অপরজনকে দোষ দিচ্ছিলো যে আমরা একে অপরের প্রতি যথেষ্ঠ ভদ্র ছিলাম না।

যখন আমরা প্রথম বারের মত এক সাথে ছুটি কাটাতে গেলাম, সমুদ্রতটে বসে এইভা প্রথমবারের মত সাসকিয়া নোর্ট এর “Koorts” বইটা পড়লো। তারপরেই হোটেলের সুইমিংপুলের কাছে রাখা বইয়ের তাক থেকে নিয়ে সে “De verbouwing en De eetclubবইটাও পড়লো।

  মারসেলের পড়া প্রথম বই অবশ্য  Stromboliযেসব দিনগুলোতে বাচ্চাদের দেখাশোনার করার  দায়িত্ব মারসেলের থাকতো তখন অবশ্য সে নেটফ্লিক্সে পুরো তিন সীজন ধরে “Nieuwe ­Buren” ধারাবাহিকটি টিভিতে দেখেছে।

সাসকিয়া নোর্ট ভোন্ডার পার্কে থাকে, বাচ্চারা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পর সে ওয়ার্দানের বড় বাড়িটি ছেড়ে চলে এসেছে। তার ভাষায়, “এলাকাটা খুব নিরিবিলি”। একজন প্রাক্তন মন্ত্রী তার প্রতিবেশি, যে মাঝে মধ্যে বাগানে বসে বিয়ার খায়।  ঘরে ঢুকতেই সাসকিয়া এইভাকে চুমু খেলো আর মারসেলের সাথে করমর্দন করলো।

সাসকিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী একজন শ্বেতাঙ্গিনী বাড়ি ঝলমলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।

সাসকিয়াঃ বের্খেন থেকে নিয়ে এসেছি।

নইলে আমি ভাবতেই পারি না কি করে একা সব সামলাবো।

ব্যক্তিগত সহকারীঃ তোমাদের কেক তৈরী।

সাসকিয়াঃ দেখেছো তো, এটাই বলছিলাম।

পুরো আড্ডাটার সময় সাসকিয়া দু বার ধূমপান করলো।

সাসকিয়া নোর্টঃ জন্ম উনিশো সাতষটি। নিউ পত্রিকার ভিভা এন আওডার্স পাতার সম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন। তারপর নিজেই ভিটি ওনেন, প্লেবয়। লিন্ডা পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবে লেখালেখি শুরু করেন, তার রোমাঞ্চকর গল্প গুলো শুরু থেকেই ভীষন ভাবে পাঠকের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়, যেমন, দুই হাজার তিন সালে লেখা তার কুস্ট গল্পটি। দুই হাজার আট সালে বিচ্ছেদ হওয়ার আগে পর্যন্ত স্বামী ও সন্তাদের নিয়ে বের্খেনে থাকতেন। তার নতুন উপন্যাস স্ট্রমবলি এক জোড়া লেখক দম্পত্তিকে নিয়ে। একজন মাদক ও ধূমপান আসক্ত স্বামীর কথা লেখা আছে যে স্ত্রী তার চেয়েও বেশি বিখ্যাত সেটা মেনে নিতে পারে না। দুজনে মিলে একটি প্রভাত পত্রিকায় খুব জনপ্রিয় একটি কলাম লিখতেন। যতদিন তাদের বিচ্ছেদ না হয়েছে।

সাসকিয়া মারসেল কে জিজ্ঞেস করলো, একজন পুরুষ হিসেবে একজন মেয়ে লেখকের বই পড়ে তোমার কি রকম অনুভূতি হয়েছিল?

এইভাঃ এটা কি মেয়েদের বই? এ কথাটা আমি খ্রিট অপ দ্যা বেইককে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম আর সে আমাকে বলেছিল, এটা একটা অর্থহীন কথা।

সাসকিয়াঃ এটা বাস্তবতা। ছেলেরা হেরমান ব্রুসেলসম্যান এর লেখা বই অনেক বেশি পড়ে তো? যেমন খাইপ।  মেয়েদের লেখা মানেই সাথে সাথে অনেকে ধরে নেন তেমন মানসম্পন্ন নয়, এটা খুব অদ্ভূত, ভেবে নেয় লেখা  ভাসা ভাসা হবে কিংবা খুব আবেগের ছড়াছড়ি থাকবে। আচ্ছা থাক, তুমি বলো কেমন লাগলো আমার লেখা? 

মারসেলঃ সত্যিই বলছি, প্রথমে ভাবি নি এই বই পড়ে আমি শেষ করতে পারবো কিন্তু পরে কি হলো তুমি বরং সেটাই শোন। কাউনসেলিং এর সেশানটা পড়ার সময় আমার মনে হয়েছিলো, আমাকে কি এসবও জানতে হবে? আর এই কথাটা আমার প্রচন্ড স্পষ্ট ভাবে লেখা শারীরিক মিলনের ঘটনাগুলো পড়ার সময়ও মনে হয়েছিলো। 

এইভাঃ তুমি তো বেশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর বই পড়ো, তোমার জন্যে এই বিষয়টা ততো আরামদায়ক ছিল না।
মারসেলঃ খুব বেশি পুরুষ লেখক পাওয়া যাবে না যারা “ইবিজায় নি:সঙ্গতা” নিয়ে বই লিখেছেন।

সাসকিয়াঃ হেঙ্ক ভান স্ট্রাটেন তো স্বামী-স্ত্রী’র বিচ্ছেদ নিয়ে বই লিখেছেন।

এইভাঃ স্ট্রমবলি উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্রটি একাকী অনেক ঘটনা প্রবাহকে ক্রমানুসারে সাজাতে যায়। তুমি  কি সচেতনভাবে তোমার নিজের জীবন থেকে আহরিত অভিজ্ঞতা, যৌন সহিংসতা, চৌদ্দ বছর বয়সে তোমার নিজের ধর্ষিতা হবার ঘটনা মানুষের জীবনে কি প্রভাব ফেলে তা তোমার পাঠকদের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে জানাতে চেয়েছো?

সাসকিয়াঃ কিছুটা তো বটেই। আমি জেনে বুঝেই স্ট্রমবলিতে লিখেছে, অনেক মিষ্টিভাবে লিখেছি যদিও সবই সত্যি। একটু দম ফেলার অবসর নিয়েছি তারপর আবার মজাদার দুপুরের খাবারের মত লিখেছি।  নিশ্চয় আমি জানতাম, ছাপার অক্ষরে এ ধরনের বাস্তবতা মেনে নেয়া অনেক কঠিন। কিন্তু তোমার তো একটা কারন লাগবে কাউকে সেখানে ভাসিয়ে নিয়ে আসতে এবং সেখানে নোঙর বাঁধাতে। দেখা গেলো সেটা ছিলো আমার ধর্ষনের ঘটনাটি। মি টু উদ্যেগের কারণে দেখা গেলো আমি আবার লিখতে শুরু করলাম, কারণ সেসব ব্যাপার গুলো কল্পনায় সামনে আসাতে আমি আবার উত্যক্ত বোধ করতে থাকলাম। অনেক মানুষ ভাবে কোন ফ্ল্যার্ট না করলে বা অপ্রাকৃতিক কোন ঘটনা না ঘটলে এমন কিছু ঘটে না, আর তখনই আমি ভাবলাম, এখনই সময় মানুষকে সত্য জানানোর। 

মারসেলঃ আর ঠিক এই মাসেই লিন্ডা’র টকশোতে আমি কাচিয়া স্কিউরমান আর সোপি হিলবার্ডের মত তারকাদের কাছ থেকে শুনলাম, তারা তাদের জীবনে এ ধরনের কোন পরিস্থিতির সামনে পরে নি। তারচেয়েও বড় কথা, কাচিয়া সবশেষে বললো যে তার কখনো মনেই হয় নি এমন কিছু হয় অথচ তার কিছু দিন আগেই জব গসকাল্কের নামে সে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে অপবাদ দিয়েছিলো। এটা তো তোমার জন্যে ভীষণ একটা পীড়াদায়ক অবস্থা, তাই না?  

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ, সেটা নিয়েও আমি আর একটা গল্প লিখেছি যেটাতে পরের দিকে লিন্ডার টক শোও আছে

মারসেলঃ কিন্তু, তোমার ঐ জায়গাতেই কষ্ট লাগে নি? তুমি ওদের সাথে একই স্টুডিওতে ছিলে, তোমার মনে হয় নি ওরা তোমার লেখা গল্পটাকে নিয়ে এসব কি করছে?

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ কিন্তু

মারসেলঃ সাতজন মেয়ে এক জায়গায় বসে কোন একটা বিষয়ে একমত হওয়া খুব কঠিন ব্যাপার তাই না?
সাসকিয়াঃ কিন্তু এখন এই নিয়ে লিন্ডাকে আক্রমণ করতে আমার আর ইচ্ছে করছে না। কিন্তু হ্যাঁ, টক শো গুলোতে এ ধরনের ঘটনা হরদমই ঘটে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে তো টক শো তে এ ধরনের লোকের সাথেও তোমাকে বসতে হয় যাদের সম্পর্কে তোমার তেমন ভাল ধারনা নেই, তাই না? এ ধরনের একটা ধাক্কা’র কিছু বিপরীত প্রতিক্রিয়া তো থাকবেই, কিছু কিছু মানুষ থাকবেই যারা তাদের জন্যে বরাদ্দ করা পাঁচ মিনিটে কিছু না কিছু এরকম বলবেই। এটা দুঃখজনক যে আমরা পরস্পরের মধ্যে এ ধরনের আলোচনা চালিয়ে যেতে পারি না। এমনকি সেখানে এমন আলোচনাও হয়েছে যে আমাকে আমার মন্তব্যের খানিকটা প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত। 

এইভাঃ দুঃখজনক যে এত দুঃখ বুকে চেপে যদি কেউ এতদিন পর ফিরে মুখ হলে তাকে বৈধভাবে সমাজের কাছ থেকে এসব প্রশ্নই শুনতে হবে, নিজেকে অবলা সাজিয়ো না, এসব কি আসলেই সত্যিই, ইত্যাদি ইত্যাদি।  
সাসকিয়া, ঠিক বলেছো, কিন্তু যদি মেয়েরা আমার বই থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে নিজেরা নিজেদের মুখ খুলে, তাহলেই আমি সার্থক, বাকি কিছু নিয়ে আমি ভাবি না

এইভা হুকে, জন্ম উনিশো উনআশিসাল, গ্লসি ইয়াকি পত্রিকা’র প্রধান সম্পাদক জ্যাজ পিয়ানিস্ট রব হুকের মেয়ে। গ্লসি ইয়াকির পর হ্যাত প্যারোল পত্রিকার জন্যে লেখালেখি করতেন। আর দুই হাজার পনের থেকে আছেন ফোল্কস ক্র্যান্তের ম্যাগাজিনের সাথে। দুই বাচ্চা আর তার বন্ধু সাংবাদিক মার্সেল ভান রোসমালেন প্রায়ই তার কলাম লেখালেখির মূল উপজীব্য হয়।  তারপর সেগুলো এক সাথে করে বই হয়। দ্যা ক্রুগ এন্ড দ্যা মান (২০১৪) এবং আলস হেত মার নিত অপ ওনস লাইক (২০১৭) তার রচিত বই সমূহ যা এই সাংবাদিক দম্পত্তি থেকে বাচ্চারা পেয়েছে। 

মার্সেলঃ আরটিএল বুলেভার্ডে টিভিতে ওলকে গুলসেন বলেছে, তোমার বই পড়া অনেকটা সোডা পান করার মত, এক চুমুকেই শেষ।  এটা কিন্তু প্রশংসা করে বলেছে। তারপর তারা কিছুক্ষণ তোমার ধর্ষণ নিয়ে আর কিছুক্ষণ তোমার প্রেম-প্রণয় নিয়ে আলোচনা করেছে। এটা আমার কাছে খুব অদ্ভূদ লেগেছে, তুমি শুরু করলে কিছু একটা দিয়ে তারপর তুমি অন্য কথায় চলে যেয়ে জিজ্ঞেস করছো, তোমার যৌন জীবন সম্বন্ধে!

সাসকিয়াঃ সেটা আমিও ভেবেছি। আমি অবশ্য সমস্ত প্রচারেই খুশি, কিন্তু আমিতো বই বিক্রি’র চেষ্টাতে বাধা দিতে যাবো না। বাস্তবতা হলো, এখন আমার বই কোনায় কোনায় বিক্রি হচ্ছে, সুতরাং চলুক।

মার্সেলঃ এ ধরনের প্রচারে তুমি বিব্রত বোধ করো না?

সাসকিয়াঃ আর না। আমি আমার জীবনে অনেকবার অনেক জিনিসের বিরোধিতা করেছি আর ভেবেছি – মানে বলতে চাইছি, আলোচনা হোক অসুবিধা নেই কিন্তু কিছু কিছু সময় সেটা মানুষের ওপর খুব আক্রমনাত্বক হয়ে যায়।  

মার্সেলঃ সেটা খুবই বিরক্তিকর লর্ড যীশু, লেখি তো আমিও কিন্তু তোমার বই বিক্রি হয় লক্ষ লক্ষ পিস

সাসকিয়াঃ নেদারল্যান্ডসে লেখালেখিকে দুই দ্বীপে বিচার করা হয়, হয় তুমি পেশাদার লেখক নয়  তা নয় যেকোন বইকেও সেভাবেই বিভক্ত করা হয়, হয় তুমি ভিপিআরও (ক্রিয়েটিভ, গভীর) নয় সে এসবিএস (চটুল)

মার্সেলঃ অবশেষে কিন্তু সব এসবিএস লেখকই ভিপিআরও লেখক হতে চায় তাতে বই বিক্রির সংখ্যার ওপর দারুন প্রভাব ফেলে

সাসকিয়াঃ কিন্তু তারা আরটিএল বুলেভার্ড টিভিতে আসতে চায় না

মার্সেলঃ তুমি কেন কখনও "দ্যা ওয়ার্ল্ড ড্রাইত ডোর" টক শো তে আসো না?

সাসকিয়াঃ আমার ব্যক্তিগত সহকারীকে ওরা জানিয়েছে, ওরা বই নিয়ে আর কোন শো করে না বাজে কথা অবশ্যই পরে অবশ্য তারা সত্যি কথা বলেছে, তাদের একটি পরিবার আছে, আর সেই পরিবারের লোকজনই শো তে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসে এই ব্যাখাটার অবশ্য আমি প্রশংসা করি, প্রত্যেকের নির্দিষ্ট  শ্রেণীর একটি দর্শক ও শ্রোতা দল থাকে

মার্সেলঃ কি বলে তারা? তোমাকে সেখানে মানায় না?

সাসকিয়াঃ নেদারল্যান্ডস এখন প্রচুর দূষিত, হয়ত আগের চেয়ে অনেক বেশি তুমি যদি বাইরের দেশের দিকে তাকাও, সেখানে খুব অন্যরকম যেমন, জেকে রোলিং এর কথাই ধরো, সে বাচ্চাদের বই লেখে, তারপর মানুষের প্লাস্টিক সার্জারী করে আবার রাতের বেলায় খুব গম্ভীর টক শোতে চলে যায় এটা এখানে চিন্তাই করা যায় না অথচ আমি বিভিন্ন রকম মানুষের সাথে মিশতে ভালবাসি, ডানপন্থী, বামপন্থী, জনপ্রিয়, অজনপ্রিয় সবার সাথে  আমার বন্ধুরাও সব তেমনি, জর্দান বারে যখন বসি প্রচন্ড বামপন্থী থেকে কঠোর ধূমায়িত ডানপন্থী সবাই আছে সে দলে আমরা যখন সবাই এক সাথে বসি তখন নিয়মিত আমাদের মধ্যে তর্ক আর বচসা হয়, কিন্তু সেটাইতো দরকার নেদারল্যান্ডসে এমন একটা ব্যাপার যে তোমাকে একটা কিছুর ভাবমূর্তি ধরে থাকতে হবে, আর একবার সেটা তৈরী হয়ে গেলে তুমি সেটা আর ভাঙতে পারবে না, শ্বাসরোধকারী পরিস্থিতি 

এইভাঃ তুমি তোমার বইয়ে কনি পালমানের কথা লিখেছো, যে তোমাকে আর ক্লুন কে বইমেলাতে বলেছে, কিছুই যারা করো নি, তারা বেরিয়ে যাও, এসব মনে পড়লে তোমার রাগ লাগে না?

সাসকিয়াঃ একদম না, ভাল লাগে এসব লিখে রাখতে আর কনি’র সাথে আমাকে যে কোন মূল্যে বন্ধুত্ব রাখতেই হবে এমন কোন ব্যাপার তো নেই।

এইভাঃ যারা তোমাকে কখনও কষ্ট দিয়েছে তাদেরকে তো তুমি আর কখনো পুরোপুরি ক্ষমা করতে পারবে না, তাই না?

সাসকিয়াঃ তা নয় কিন্তু মজার ব্যপার কি জানো যখন থেকে এসব নিয়ে আমি কম ভাবি, আমার নিন্দুকের সংখ্যাও কমে গেছে আর আমি নিজেও অনেক ভাল প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি।

এইভাঃ তারপরও you cry all the way to the bank, না?

সাসকিয়াঃ না, একদমই না। সব লেখকদের যা স্বপ্ন থাকে অবশ্যই আমি সে সবই অর্জন করেছি কিন্তু যখন তুমি তোমার খুব ব্যক্তিগত কথাগুলো লেখো তারপর নিশ্চয় তুমি হাফ মিলিয়ন ইউরো নিয়ে ইবিজা দ্বীপে ছুটিতে চলে যাবে না। তুমি তো চাইবে যতদূর সম্ভব বেশি লোকের কাছে পৌঁছতে। 

মার্সেলঃ এ জায়গাটায় অবশ্য অন্য সব লেখকদের সাথে তোমারও মিল আছে

মার্সেল ভান রোসমালেন উনিশো আটষট্টি সালে জন্মেছেন। এনআরসি, নেক্সট, দ্যা ভারা’তে কলাম লেখে, এইভা হুকের সঙ্গী। আর্নেমের ভিটেসে ক্লাবকে নিয়ে অনেক ধরনের বই লিখেছেন, প্রথম বইটি হলো “ইয়ে হেবট হ্যাত নিত ভান মাই (দুই হাজার ছয়)”, নিকো স্কেইপমাকার-বেকারের সাথে সম্মানিত করা হয়। এইচপি-দ্যা টাইড ম্যাগাজিনের মধ্যে দিয়ে তার সাংবাদিক জীবন শুরু হয়, যেখানে সে পিম ফোর টাওনের জন্যে প্রচারণা চালান (ওপ পাড মেত পিম, দুই হাজার দুই সালে)। দুই হাজার ছয় সালে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশ হয়। আমরা ঠিক জানি কে কতদূর যেতে পারে। তার মৃত বাবাকে নিয়ে লেখা উপন্যাস পরের বছর প্রকাশ হবে। খেলডারলান বিভাগের সরকারী কর্মকর্তা। যিনি পর্দার আড়ালেই ছিলেন।

মার্সেলঃ তুমি নিজে কি বই পড়ো?

সাসকিয়াঃ আমি মাত্র এলকে গিইউর্টস পড়ে শেষ করলাম, আমিও তোমার মত, একদম অবিকল মনে করি। সুন্দর করে লিখেছেনও। পড়ার তালিকায় আরও আছে টেস গেরিটসেন, খুব দ্রুতই সেটা পড়ে ফেলার ইচ্ছে, টমি ভিরনিগাস এর লেখা, দ্যা হাইলিগে রিতা ও আমার খুব ভাল লেগেছে পড়তে। এছাড়া আমার সত্যি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে লেখা বই, যৌনতা নিয়ে লেখা মনোবিজ্ঞানের বই ইত্যাদি পড়তে ভাল লাভে। এক সাথে গবেষনাও হয়ে যায়। লেখার সময় আমি কোন উপন্যাস পড়ি না, কারণ তাহলে হয়ত অবচেতন মনেই আমি তা অনুসরণ করে ফেলতে পারি।

 এইভাঃ তুমি কি নিজের যৌনতার কথা অনেকটা বাদ দিয়েছো এই বইতে? হয়ত ভেবেছো, আমার বাচ্চারা পরে এই বইটি পড়তে পারে।  

সাসকিয়াঃ সেটা আসলে আমি পরে ভেবেছি আমার মতে, লেখার সময় তো তুমি তোমার জীবনের যৌনতার অংশ বাদ দিতে পারো না যাদের কথা আমি লেখি তাদেরকে আমি আগের থেকেই বলে দেই।

এইভাঃ আর তারা তখন নিষেধ করে নি?

সাসকিয়াঃ না, আমি শুধু চেয়েছি তারা যেনো চমকে না যায়, অথবা আমি তাদের নাম অপব্যবহার করেছি এমন যেনো না ভাবে। দিনের শেষে এটিতো আমারই গল্প।

এইভাঃ কিন্তু তোমার গল্পের মধ্যে সব সময়ই অন্যদের গল্প এসে যায়। উদাহরণস্বরূপ তোমার ধর্ষকের কথাটাই ধরি, ও তোমার প্রতিবেশী ছিলো, তাই না? তুমি কি কখনো ভেবেছিলে, ওর কেমন লাগতে পারে?

সাসকিয়াঃ না ভাবিনি, কারণ ও মারা গেছে।

এইভাঃ তুমি কেমন করে জানলে?

সাসকিয়াঃ আমি বের্খেনে, আমার জন্মস্থানে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, সেখানে শুনে এসেছি। সাথে সাথে আমি ভেবেছি, ঠিক আছে, কর্মফল। কারণ সে বেশ অল্প বয়সে মারা গেছে, মধ্য ত্রিশের ছিলো বোধ হয়। ক্যান্সার হয়েছিলো। আমার কোন দুঃখও হয় নি।

মার্সেলঃ মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত ওর সাথে কি কোথাও দেখা হতো?

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ, ও আমার প্রতিবেশি'র ছেলে ছিলো, কোথাও না কোথাও তো দেখা হয়ে যেতো। ওকে দেখলে আমি উপেক্ষা করতাম, কিন্তু তবুও। যখন আমি শুনলাম ও মারা গেছে, আমি যেনো কিছু একটা থেকে মুক্তি পেলাম। সামান্য সময়ের জন্যে আমার মনে হয়েছিল, কোথাও তবু হয়ত সৃষ্টিকর্তা আছে। আমি সাথে সাথেই এই নিয়ে কথা বলতে শুরু করি নি, কিন্তু আমি  যা বলতে চাই তা বলার জন্যে নিজেকে মুক্ত অনুভব করছিলাম। সে বেঁচে থাকলে আমি আমার বইটাও লিখতাম না।

এইভাঃ বিশ্বাস করতে অদ্ভূত লাগে যে, তুমি তোমার ধর্ষককেও রক্ষা করেছো।

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ, খুবই অদ্ভূদ। আরও কিছু ব্যাপার এর সাথে জড়িয়ে আছে, যখন আমার সাথে একটা ঘটলো, এরকম ঘটনা আরও হয়েছে আমাদের গ্রাম বের্খেনে। গ্রামে এরকম কোন ঘটনা ঘটলে, সেটা নিয়ে সারাদিন মানুষ কথা বলতো। সবাই তার মতামত দিতে থাকতো, ছেলেটা করেছে, ছেলেটা  করে নি, মেয়েটাই বেশ্যা, মেয়েটা বেশ্যা না ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আমি কিছুতেই এই আলোচনার মধ্য মনি হতে চাই নি। আমি শুধু ভেবেছি, আমার বাবা পিটিয়ে ঐ ছেলেকে তক্তা করে ফেলবে আর আমার প্রতিবেশী ভাববে আমি একটা বেশ্যা, যার কোনটাই আমি চাচ্ছিলাম না, তাই আমি আমার মুখ বন্ধ রেখেছিলাম। ততদিন যতদিন ও বেঁচে ছিল, দেখা গেলো। যখন আমি মুখ খুললাম, আমার গ্রামের আরও মানুষ তাদের ঘটনা নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হতে শুরু করলো। দেখা গেলো, আমি শুদু একাই নির্যাতনের শিকার হই নি।

এইভাঃ এমন মানুষ ছিলো কি যারা তোমাকে দেখে বলেছে, ঐ যে ধর্ষিতা যায়?

সাসকিয়াঃ অবশ্যই ছিলো। এমন কি আমার পরিবার আর বন্ধুদের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ বলেছে। যদিও সেটা খুবই হাস্যকর, ধরো আমার যদি একটা পা থাকতো, তাহলে নিশ্চয় মানুষ আমার মুখের ওপর বলতো না, আমরা এক পা ওয়ালা সাসকিয়াকে চিনি। আমি ঠিক এই ভাবে আমার মাকে এই কথাটা বলেছি

এইভাঃ তোমার নিজের মা যদি তোমাকে এভাবে কথা বলে, তুমি তবে কোথায় যাবে?

সাসকিয়াঃ সেটাই, কিন্তু আমিও বুঝতে পারি, মানুষ এসবের প্রতীক্ষায় থাকে। আমিও অনেক সময় অন্য মানুষদের ঘটনা নিয়ে ভাবি, শুরু হলো আবার।   

মার্সেলঃ আর তোমার প্রাক্তন স্বামী কি বললো এই নিয়ে? তোমার বইয়ের কারেল সে নয় কিন্তু তবুও সে ও তো তোমার বইয়ে আছে। পাঠকরা তো ভাবছে, কি একটা অমানুষ সে।

সাসকিয়াঃ এই সপ্তাহে সে আমাকে ফোন করেছিলো, তখন এই নিয়ে কথা বলার সময় বললো, সে এই বইটা পড়বে না, হাহাহাহা

মার্সেলঃ কিন্তু এসবে তার অনুভূতি কি? সেই তো প্রথম ব্যক্তি যে নিজের টাকা খরচা করে তোমার বই বের করেছিলো
সাসকিয়াঃ নিজের টাকা খরচা করে মানে?

মার্সেলঃ বইটা লেখার জন্যে তুমি কাজ থেকে এক বছরের ছুটি নিয়েছিলে। সে পাশে না থাকলে তো আর এটা সম্ভব হতো না।

সাসকিয়াঃ সেটা সত্যি।

মার্সেলঃ কিন্তু সে তো এখন তোমার বইয়ে কোন ভাল চরিত্রে নেই। এ সম্বন্ধে তার অনুভূতি কি?

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ কিন্তু কারেল চরিত্রটি আমার প্রাক্তন স্বামী নয় কারেল একটি কল্পিত চরিত্র, অনেক পুরুষদের স্বভাবের মিশ্রণে এই চরিত্রটি এসেছে।  মানুষ যদি ধরে নেয় সেটা ও, তাহলে আমি তো সবাইকে নিবৃত্ত করতে পারবো না, কিন্তু সেটা সে নয়। স্ট্রমবলি একটি উপন্যাস, আত্মজীবনী নয়। আমি আমার প্রাক্তন স্বামীকে এ ব্যাপারে খুবই সম্মান করি, সে এটা খুব ভাল অনুভব করে আর আমাকে কোন ব্যাপারেই তাই সে আটকায় না। অথচ এই বইটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সে যুদ্ধের মধ্যে আছে এবং এখনও সে আগেই গ্রামেই বসবাস করছে।   

যখন থেকে আমি পরিচিত হতে থাকলাম, তখন সে প্রায়ই বলতো, আমি যেনো “তোন ফান রোয়েন” না হয়ে যাই। সে একজন চিত্রশিল্পী, সুতরাং কিছুটা পার্থক্য আছে, সে বুঝতে পারে লেখালেখি আমার বিষয়। আমার মেয়ে গায়িকা, মাঝে মাঝে আমি মেয়ের গানের কথা শুনে ভাবি, কি গাইছে এসব। কিন্তু হ্যাঁ, এটাই শিল্প আর শিল্পীকে তার জায়গায় স্বাধীন থাকতে হবে। তুমি আ। এম। হোলমান্সের নাম শুনেছো? সে ও একটি খুব ভাল বই লিখেছে, এইন ব্র্যান্ডবারে হিউলিক, সেখানে সে নির্দয় ভাবে নিজের বিয়ের গোপনতম দুঃখ সুখ সব লিখেছে। কিন্তু সেটা তে কাজ হয়, তুমি তোমার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারো। সাধারণভাবে ছেলেদেরকে মেয়েদের থেকে কম আক্রমণ করা হয়ে থাকে।   

এইভাঃ সেটা খুব সত্যি। মার্সেলের ওপর কখনও কেউ রাগ করে না কিন্তু আমার ওপর করে। তোমার কাছে এটার কি ব্যাখা আছে?

মার্সেলঃ তার কারণ, তুমি আমার চেয়ে ভদ্র। আমার ব্যাপারে ভাবে, ও তো এমনিতেই অভদ্র, থাক ছেড়ে দাও।

সাসকিয়াঃ একজন মেয়ে হিসেবে তুমি সমাজে অনেক কিছু সংযোজনের মাধ্যম, তাই তুমি শান্তভাবেও যদি কিছু লেখো হঠাত করে হয়ে যাও রাজদ্রোহিনী।

এইভাঃ গত বছর গুলোতে তুমি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের বিভিন্ন বির্তক গুলোতে একটি বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর হয়ে উঠেছো, বিশেষ করে টুইটারে তোমার একচ্ছত্র প্রভাব। এটা কি মিটু’র প্রভাব?

সাসকিয়াঃ অনেক বিষয়েই আমি ভাবিঃ একটু অপেক্ষা করি, আর একটু দেখি, কারণ আধ ঘন্টা পরেই দেখা যায় লোকের মতামত বদলে গেছে। আর এত মানুষ তীক্ষ্ণ ভাবে কর্কশ শব্দ করতে থাকে। কিন্তু এই বিষয়টি আমার অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি ঘটনা আর একবার যখন তুমি সাহস করে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে পেরেছো, তুমি আবারও পারবে। ইতিমধ্যে আমার ছেলে আমাকে একজন হিস্টিরিয়াগ্রস্ত নারীবাদী ভাবে আর ইচ্ছে করে আমাকে সারাক্ষণ সেক্সিট মন্তব্য করে অপদস্থ করতে থাকে। তার নারীবাদী বোন আর তাদের বান্ধবীদের সাথে বেশ্যাদের নিয়ে একবার আমরা খুব উত্তেজিত তর্কাতর্কি’র মধ্যে দিয়েও গেছি। হ্যাঁ, তোমার বিশ্বাস না হলেও এই শব্দটা এখনও এই পৃথিবীতে আছে। 

এইভাঃ জনসমুখেও তোমার ভাবমূর্তি সবসময় পুরোপুরি বির্তকিত। তোমার ভাইয়ের ছেলে ইয়ান রোজের সাথেও অবিরত তোমার বির্তক হচ্ছে, তুমি পুরোপুরি বামপন্থী আর সে ডানপন্থী।

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ, সেটা ঠিক কিন্তু আমি পুরোপুরি বামপন্থী নই। এটা নিয়ে আমি এখানে অনেক বেশি কথা বলতে চাই না, টুইটারে আমরা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করছিলাম যারা আমাদের টাকায় নিজেদের দাঁত পরিস্কার করতে চায়। আমি বোকা বোকা জিনিস সহ্য করতে পারি না, কিন্তু যেসব ঘটনা সত্য নয় আর সেটা আমি বলেও ফেলি, প্রয়োজন হলে প্রথমে ঘটনাটা যাচাই করো। আর এটা শুনেই যদি সে চিৎকার করতে থাকে যে আমি অজাচারী মারা যাওয়া এক মহিলা, তখন আমি ভাবি আমাদের যে বিষয়ে কথা হচ্ছে সেখানেই থাকা দরকার।
এইভাঃ অথচ তোমাদের পারিবারিক সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ, প্রত্যেক জন্মদিনে তোমরা এক সাথে টেবিলে বসে হাতে হাত ধরে সবাই গান করো, কোন একটা সাক্ষাতকারে তুমিই বলেছিলে সে কথা।

সাসকিয়াঃ সেই সাথে সমস্ত কিছু নিয়ে খুব ঝগড়াঝাটিও হয়। আমি ভাবি এটা সব জায়গায় যা হয় তারই চিহ্ন। মানুষ সব কিছু মেরুকরন করে তার বুদবুদে বসবাস করে, ডানপন্থীরা বামপন্থীদের থেকে অনেক বেশী করে।  

মার্সেলঃ সাক্ষাতকারের প্রথমেই আমি বলেছিলাম তুমি বিভিন্ন মতবাদের মানুষের সাথে ওঠাবসা করতে পছন্দ করো।

সাসকিয়াঃ হ্যাঁ তা করি কিন্তু সম্মানের সাথে মানুষকে অসম্মান করে নয়।

মার্সেলঃ সে তো সব সময়ই এটা করে যায়।

সাসকিয়াঃ আমার সাথে না।

এইভাঃ তুমি ওকে ফোন করেছো? বলেছো, এসব আমরা কি করছি?

সাসকিয়াঃ না, আমি কেন এটা করতে যাবো? কারণ আমি তো অপমানিতের দলে

এইভাঃ খুবই দুঃখজনক ঘটনা, বিশেষ করে জন্মদিনের উৎসব গুলোতে।

সাসকিয়াঃ এর বাইরেও আছে, মালিকপক্ষ ফোন করে জিজ্ঞেস করে ইয়ান রোজে আমার সম্পর্কে ঠিক কি হয়?

মার্সেলঃ সেটা তো তবে মালিক পক্ষের ভুল? আমার কাছে এটা প্রচন্ড বাড়াবাড়ি মনে হয়, তুমি তো সাসকিয়া নোর্ট? তুমি তো নিজেই ঠিক করবে কার সাথে কতটুকু সম্পর্ক রাখবে কি না রাখবে?

সাসকিয়াঃ আমার নিজেরও খুব খারাপ লাগে কিন্তু এভাবেই সব চলে।

এইভাঃ তুমি কি এর ওপরও একটা বই লিখবে? আমি অনুভব করতে পারছি, তুমি এটা নিয়ে বেশ কষ্ট পাচ্ছো।

সাসকিয়াঃ এটা আমার মাথায় আছে, এটা খুবই সত্যি। অন্যদিকে এটা তোমার পরিবার, তুমি একে যেকোন ভাবেই রক্ষা করতে চাও।

মার্সেলঃ উপসংহারঃ আজকে বুধবার দুপুরবেলা, এই সেই মুহূর্ত যখন বইয়ের দোকান গুলো সর্বোচ্চ বিক্রিত ষাটটি বইয়ের নাম ঘোষনা করবে। তুমি নিশ্চয় খুব উত্তেজনা অনুভব করছো।

সাসকিয়াঃ অবশ্যই, সে জন্যেই তো এত খাটাখাটুনি করা।

মার্সেলঃ বইমেলাতে আমিও অর্থ বিনিয়োগ করেছি। আমি দেখলাম তোমার বইয়ের মলাটের মত সবাই হলুদ হয়ে গেছে। আর তোমার বাবাকে দেখা যাচ্ছে ইয়ান সিবেলিঙ্কের মত।

সাসকিয়াঃ সেটা সত্যি, সত্তর বছর বয়সের পুরুষ মানুষ এখনও সৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে চলাফেরা করছেন। এটা আসলেই মজার, আমার আগের বই হাউডপাইনের মলাটটা ছিলো পুরো গোলাপী। আমি আমার প্রকাশককে বলেছিলাম তখন, আমি এখন ইবিজা যেয়ে দেখতে চাই, সমস্ত সমুদ্রতট কেমন গোলাপী হয়েছে। আর এ বছর পুরো হলুদ হয়ে থাকতে দেখবো।


তিন দিন পর স্ট্রমবলি তিন নম্বর হয়ে বাজারে এসেছে আর তারপরের সপ্তাহেই এক নম্বরে।