Saturday 27 June 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – ৮ {জুন}

করোনা নিয়ে প্রিমিয়ে রুতে’র আপাতত শেষ ভাষণ

বুধবারে প্রিমিয়ে রুতে ভাষণ দেবেন শুনে অফিস শুদ্ধ আমাদের সবার টেনশান শুরু হয়ে গেলো। টিমে ঘুরে ফিরে এক কথাই হচ্ছে, এবার না বলে বসে, সবাই অফিসে যেতে পারো। ঘুম থেকে জেগে, বিছানার পাশ থেকে ল্যাপটপ টেনে নিয়ে কাজ শুরু করার যে অভ্যাস তৈরী হয়েছে আমাদের, করোনার পরে সবচেয়ে বিগেস্ট চ্যালেঞ্জ হবে, ঘুম থেকে উঠে, তৈরী হয়ে অফিস যাওয়া। কানের পাশ দিয়ে এবার গুলি গেছে, এবারও বাড়ি থেকেই কাজ বলেছে যদিও ডিস্কোথেক আর নাইট ক্লাব ছাড়া পহেলা জুলাই থেকে মোটামুটি সবকিছুই দেড় মিটার ডিসটেন্স আর ডিসইনফেকশনের শর্তের নীচে এনে খুলে দিয়েছে। যা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিলো তা শুরু হলো দু’মাস আগে থেকে। হোয়াট আ র‍্যাপিড চেঞ্জ। ধারনা করা যায়, সামার ভ্যাকেশানের পর থেকে করোনা ভ্যাকেশান ওভার হয়ে যাবে, জীবনযাত্রা ভ্যাক্সিন ছাড়াই আপন গতিতে ফিরে আসবে।

জিম থেকে আগেই মেইল এসেছে, পহেলা জুলাই থেকে প্রতিবার ম্যাক্সিমাম এক ঘন্টার জন্যে যেতে পারবো এবং সময়টা আগে রিজার্ভ করে নিতে হবে। তাই এইটুকু জানতাম এবারের স্পীচে অনেক স্বাধীনতার আভাস আসবে। প্রাথমিক স্কুল আর ডে কেয়ার আগেই খুলে দিয়েছিলো, এবার দিল মাধ্যমিক স্কুল, স্পোর্টস সব খুলে, দেড় মিটারের বাধ্যবাধকতা আর তাদেরও নেই, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় মিটার সোশ্যাল ডিসটেন্স এখনও বাধ্যতামূলক। মেঘ মহাখুশী, আবার স্কুলে যেতে পারবে।

করোনা ইনফেকশান, মৃত্যু, ইনটেনসিভ কেয়ার স্ট্যাবিল ছিলো কিন্তু এখন কার্ভ নীচের দিকে নেমেছে। এখন এমন দিনও আছে যেখানে কোন “করোনা মৃত্যু” নেই। সবাইকে এজন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে, সবার সহযোগিতা ছাড়া এটা কখনো সম্ভব ছিলো না। তিন মাসে এতটা উন্নতি কেউ আশা করে নি। ধারনা করা হয়েছিলো এক লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার জন করোনা আক্রান্ত হবে আর তার মধ্যে পঁয়ত্রিশ হাজার জনকে ইনটেনসিভ কেয়ারে আনতে হবে কিন্তু সবাই নিয়ম মেনে চলাতে তার আর দরকার হয় নি। কিন্তু এখন সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে যেনো, দ্বিতীয় ঢেউ না চলে আসে, আর তার জন্যে সবাইকে প্রস্তূত থাকতে হবে। জীবনযাত্রার প্রাথমিক সব নিয়মগুলো ঠিক থাকবে, সেগুলো বদলাবে না।

ইনডোরে একশো লোকের পার্টি এলাউড। আগে থেকে যদি রিজার্ভেশান আর কন্ট্রোল মীটিং করা হয় তাহলে যতজন ইচ্ছে ডাকা যাবে, কোন ম্যাক্সিমাম সংখ্যা নেই। কনসার্ট, ফাংশান ইত্যাদি সবই চলবে তবে দেড় মিটার ডিসটেন্সের বাধ্যবাধকতায়। চার্চ, সাংস্কৃতিক স্কুল, সাওনা, স্পোর্টস স্কুল সব চলতে পারে।

রিজার্ভেশান, চেক ইন্টারভিউ ছাড়া আড়াইশো জন মানুষ আউটডোরে জমায়েত হতে পারবে কিন্তু সেটা দাঁড়ানো জমায়েত হতে হবে, বসা নয়। এর আওতায় ওপেন এয়ার রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে এগুলো পরবে না। তবে বার্বিকিউ, খেলাধূলা, উৎসব, ওপেন এয়ার কনসার্ট এগুলো চলতে পারবে সেখানে ম্যাক্সিমাম সংখ্যার বাধ্যবাধকতা থাকবে না তবে দেড় মিটার ডিসটেন্সের বাধ্যবাধকতা থাকবে। দোকানপাট, যাদুঘর, লাইব্রেরী এসবই দেড় মিটার ডিসটেন্সের আওতায় নিয়ে রিএরেঞ্জ করা হয়েছে তাই এখানেও আর ম্যক্সিমাম মানুষের ব্যাপারটা থাকবে না, যতজন ইচ্ছে আসা যাওয়া করতে পারবে। চিড়িয়াখানা, ওপেন মার্কেট, সামার মেলা এসবও পহেলা জুলাই থেকে চালু করা যাবে। কিন্তু এগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রস্তূত হতে কমপক্ষে অন্তত ছয় সপ্তাহ সময় লাগবে তাই ধরে নেয়া হচ্ছে, আগষ্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে কিছু চালু হচ্ছে না।

পাব্লিক ট্রান্সপোর্টের ক্ষেত্রে মাস্ক বাধ্যতামূলক থাকছে তবে পহেলা জুলাই থেকে বসেও ট্রাভেল করা যাবে। যদিও জরুরী প্রয়োজন ছাড়া পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার না করার পরামর্শ এখনও থাকবে। রিজার্ভেশান আর চেক ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ট্যাক্সি, ট্যুরিং কার, ট্যাক্সি বাস সব কিছুই চালু হবে তবে সেখানেও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক থাকবে। নিজের গাড়িতেও অন্যকে লিফট দেয়া যাবে কিন্তু মাস্ক পরতে হবে। দুটো টেবলের মাঝে যদি আবরণ দেয়া হয় তাহলে রেস্টুরেন্টেরও আর দেড় মিটার ডিসটেন্স মানার প্রয়োজন নেই। যৌনকর্মী’রা পহেলা জুলাই থেকে তাদের পেশায় ফিরতে পারবেন।

দেড় মিটার ডিসটেন্সের আওতায় সব ধরনের ইনডোর-আউটডোর খেলাধূলার স্কুল, ছোটদের-বড়দের সবার জন্যে সব চালু হবে পহেলা জুলাই থেকে। গানের রিহার্সেল ইত্যাদিও চলতে পারে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানালেন, ইটালী, ফ্রান্স আর জার্মানীর সাথে নেদারল্যান্ডস ভ্যাক্সিন আবিস্কার আর সুলভ মূল্যে বাজারজাত করনের জন্যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পানির সাথে যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়ে বেঁচে থাকার ইতিহাস আছে নেদারল্যান্ডসের, সেই ইতিহাস বিফল হতে পারে না। আপাতত করোনা যুদ্ধে দু’মাস আগেই নেদারল্যান্ডস জয়ী হয়েছে, পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে যে কন্ট্রোল ফেজ আসার কথা ছিলো তা পহেলা জুলাই থেকেই এসে গেলো। চিয়ার্স।

Friday 19 June 2020

আকাশ কেন ডাকে মন ছুটে যায়


প্রায় এক বছর হয়ে গেছে প্রায় বাড়ি যাইনি। আমার বাড়ি, নিজের বাড়ি। যেখানে নিজের সবাই আছে, নিজস্বতা আছে, আর আছি আমার আমি। পা থেকে চটিটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার স্বাধীনতা আছে, চিৎকার করে কাঁদার সুযোগ আছে, হা হা করে হাসার উপলক্ষ্য আছে। কারণে এবং অকারণে বোনদের জড়িয়ে ধরে সারা বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়ার আনন্দ আছে। ভাইয়ের ওপর বিনা কারণে চেঁচানোর ফান্ডা আছে। আমার লাগানো মানিপ্ন্যান্টের লতা আছে, মায়ের হাতের বোগেনভিলিয়ার ঝাড় আছে। সারা ঘর জুড়ে মায়ের হাতের স্পর্শ আছে, ডাইনীং টেবলের ওপর রোজ ছাঁদ থেকে তুলে আনা তাজা পুঁদিনার ভর্তা আছে। তেমন কিছু হয়তো নেই উল্লেখ করার মতো আবার সব আছে।


বাসার জানালায় যেখানে বোগেনভেলিয়ার ঝাড় আছে, সেখানে হঠাৎ একদিন একটি পাখির বাসার দেখা পাওয়া গেলো। সবাই খুব উৎসাহী খুশি, যত্নআত্তি শুরু হলো। এলো আমফান, দেখা গেলো ঝড়ে নুইয়ে পরে বোগেনভেলিয়া টিকে গেলেও পাখির বাসাটা নেই, উড়ে গেছে। শুধু বাসা দেখে, ভেবে নেয়া সেই পাখি দুটোর জন্যে, তাদের ঝড়ে উড়ে যাওয়া বাসাটার জন্যে মন কেমন করে। টকটকে বোগেনভেলিয়া ফোটা সেই জানালাটায়, মনে মনে পাখিদের ডাক শুনতে আমি কতবার পায়ে পায়ে হেঁটে গেছি। অলস দুপুরে জানালায় দাঁড়িয়ে চা খেতে খেতে, রাস্তা দেখতে দেখতে আমি পাখি দুটোর সাথে এলোমেলো কত গল্প করেছি।

ভাইবোনের বাচ্চাগুলোর সাথে কচলাকচলি, জাপটাজাপটি মিস করি। মায়ের চুলের তেলের গন্ধ পাইনা আজ কতোদিন। আমার নিজের মেয়েটা রোজ কতো স্বপ্ন বুনে তার তুতো ভাইবোনদের নিয়ে সেগুলোতে রঙ মাখানো হলো না। ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে রবীন্দ্র সরোবরে এলোমেলো হাঁটা আর বটি কাবাব মিস করি। ধানমন্ডি পাঁচ নম্বরের মহুয়া চটপটি মিস করি, আট নম্বরের কোনের ঝালমুড়ি মিস করি, মুড়ি খেয়ে ঝালে পাগল হয়ে দোকানে ঢুকে কোক খাওয়া মিস করি। কোক খেতে খেতে আবার বীফরোল কিংবা চিকেন প্যাটিস সাথে চকলেট পেস্ট্রি মিস করি। এই গরমে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে বাবার কড়া উপদেশ মাখা ঠান্ডা বেলের শরবত মিস করি। মায়ের আদর মাখা ঠান্ডা ডাবের পানি মিস করি। হাঁতে আঁটে না এত বড় আমের বড়া খাওয়া মিস করি, কনুই গড়িয়ে আমের রস না পড়লে কি আম খাওয়া হয়! ভ্রাম্যমান আদালতের ভিডিওতে দেখা সেই স্টারের পঁচা ফালুদা খেতে মন কেমন করে, প্রিমিয়ামে মিষ্টি কিনতে গেলে, টেবলে বসিয়ে যে নতুন মিষ্টি টেস্ট করতে দেয় তার জন্যে মন কেমন করে, জিঞ্জিরার মোগলাই আর সপ্তডিঙ্গার হালিমের জন্যেও মন কেমন করে। সারা ঢাকায় আখের রস বিক্রি হয়, আমি বলেছি, আখের রস খাবো না, আখ খাবো, বলেছি এবং এত খাবারের ভীড়ে যথারীতি ভুলেও গেছি। কিন্তু আনোয়ার খুঁজে খুঁজে মিষ্টি আখ এনেছে, এনেছে বুন্দিয়া আর মেঘের জন্যে ডালপুরী।

একটানা বর্ষনের সাথে যুদ্ধ করে যে ক্লান্ত কাকটা নিরিবিলি জানালার সানশেডে আশ্রয় নিয়ে তার ডানা দিয়ে গা চুলকায় তাকে মিস করি। স্যাঁতস্যাঁতে ঢাকা মিস করি, ঘেমো ঢাকা মিস করি, হাস্নাহেনার গন্ধ মিস করি। ভয়াবহ জ্যামটার জন্যও আজকাল খারাপ লাগে। বসুন্ধরার এক টিকেটে দুজনের সিনেমা দেখা মিস করি। খোঁজ দ্যা সার্চ এর অনন্তকে মিস করি। আশেপাশের বাড়ির নাম না জানা সব ছেলেগুলোকে মিস করি। যাদের ফ্যাশন–ফ্যুশন, চুল-দাড়ি নিয়ে হাসাহাসি করে আমরা অনায়াসে সময় পার করে দিতে পারি। গোধূলি বেলায় ছাঁদের ওপর দাঁড়িয়ে বিদায় নিতে থাকা গোমড়া মুখো সূর্যটাকে মিস করি আর তার সাথে মিস করি নীড়ে ফেরার আনন্দে হুটোপুটি করতে থাকা আনন্দিত সেই পাখির ঝাঁকটাকে। শেষ পূর্নিমার মলিন কিন্তু বড় আপন চাঁদটাকে মিস করি। ঢাকার বাইরের ট্রিপে গাড়িতে আন্তাক্ষরী খেলা মিস করি, ভয়াবহ ডেঙ্গু মশার কামড় মিস করি। ফেরা হবে না হয়তো আরো একটি বছর এই প্রিয় জিনিসগুলোর কাছে।

Wednesday 17 June 2020

কথানদী

আঞ্চলিক চারটি লোক কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়েছে “কথানদী”। ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর তীর ঘেঁষা একটি গ্রামকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে এই কাহিনী। “আমিষ” এর পরিচালক ভাস্কর হাজারিকার প্রথম ছবি এটি।  The River of Fables) (2015) আমার দেখা দ্বিতীয় আসামিজ ছবি এটি। চারটি মায়ের কাহিনী সমগতিতে গড়ায় এই সিনেমায়। একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছিলো মনে, সিনেমা দেখতে বসে আর আগের মত কাঁদি না, ব্যথিত হই না, এখন জানি, এগুলো সিনেমা, মিথ্যে অভিনয়, সত্যি কিছু না। “কথানদী” সেই আত্মবিশ্বাস ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিলো। The Conjuring, এক, দুই, তিন দেখে ভয় না পাওয়া মানুষ আমি, এই সিনেমার শেষের পনের মিনিট দেখতে মিনিমাম পাঁচটা ব্রেক নিয়েছি। মনস্থির করতে পারছিলাম না, দেখবো কি দেখবো না, নাকি শুধু শুনে নেবো। শরীর ঘেমে গেলো। যেহেতু অনুমান করতে পারছিলাম তাই সাহস করতে পারছিলাম না। তবুও বলবো, এত নৃশংসতা এত ডিটেইলে পর্দায় না দেখালেই কি নয়! মানুষ মেরে ফেলা এত সোজা! হবে হয়ত, সবাই কি আমার মত এত দুর্বল চিত্তের যে দেখতে হবে ভেবেই দিশেহারা।

 

লোককাহিনী একটা সময়ের একটা গোত্রকে উপস্থাপন করে, সে যুক্তিকে ধরলে, আমাদের লোভ, আমাদের অজ্ঞতা, আমাদের কুসংস্কার কত জন্মজন্মান্তরের ব্যাপার সেটা দেখে বিস্মিত হই। আমাদের এই কোনটার মত মনুষ্যহীনতা আর নৃশংসতা পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া হয়ত টাফ হবে। মায়ের মনে কত লোভ থাকলে অজগর সাপের মনি পাওয়ার লোভে মেয়েকে অজগরের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। মেয়ে ঘর থেকে কান্না করে মা’কে ডাকছে আর মা বাইরে অপেক্ষা করছে, সোনা গয়নার। ঢেঁকিতে ফেলে সৎ মা কিশোরী মেয়ের মাথা কুঁটে ফেলেছে! কি করে সম্ভব। অথচ এই বয়সী মেয়ে আমার ঘরেও সারাবেলা নাচে, হাসে, ঘুরে বেড়ায়। কি নিষ্পাপ মুখগুলো। আবার সন্তানকে রক্ষা করার আকুলতায় চাচা শ্বশুরকে খুন করতে উদ্যত এক মা, সেই গল্পও আছে সিনেমাতে, আছে চালতা জন্ম দিয়ে, পরে মেয়েতে রুপান্তরিত হওয়ার লোকগাঁথাও।  

 

ভাস্কর হাজারিকা আর লেখক অরূপা কালিটা পাটানগিয়া লিখেছেন চিত্রনাট্য, “আঞ্চলিক ভাষা” ক্যাটাগরীতে ভারতের তেষট্রিতম জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে এই সিনেমা। এছাড়াও দু’হাজার পনের সালের এশিয়ান সিনেমা ফান্ড’স পোস্ট প্রডাকশান ফান্ড এওয়ার্ড জেতে। বুসান, গোথেনবার্গসহ বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছে এই সিনেমা। Potlocker এ আছে, চাইলে দেখে নিতে পারেন। 


তানবীরা

১৮/০৬/২০২০

আমার মন কেমন করে---


কারণে এবং অকারণে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি বিকল হয় তার নাম “মন”। আচ্ছা, “মন” কি কোন জিনিস? ধরা যায়? ছোঁয়া যায়? এম-আর-আই কিংবা সিটি স্ক্যান বা এক্সরে তে কখনও ধরা পড়ে? এর অস্ত্বিত্ব কোথায়? এটি শরীরের ঠিক কোন অংশে থাকে? এই ধরা যায় না, ছোঁয়া না জিনিসের প্রভাব জীবনে অপরিসীম। মন কেমন করা, মন খারাপ করা, এক এক সময় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। একলা লাগতে পারে, খাওয়ার রুচি কমে যায়, ঘুম আসে না, লোকজনের সঙ্গ ভাল লাগে না, বই-সিনেমাতে মন বসে না, মেজাজ ক্ষিপ্ত থাকে, ইত্যাদি আরো অনেক উপসর্গ, তখন এটাকে “বিষন্নতা” বলে। এটি একটি “রোগ”, জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি-কাশি কিংবা কোভিড নাইন্টিন এর মত এটি একটি অসুস্থতা, এতে লজ্জা বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এর চিকিৎসা আছে। মানুষ আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল ভাবতে পারে, পাগল ভাবতে পারে ইত্যাদি ভেবে নিজেকে কষ্ট দেবেন না। ক্যান্সার হলে কি কে কি ভাবছে ভেবে চিকিৎসায় পিছিয়ে যেতেন? ক্যান্সারে যেমন আপনাকে মারে, বিষন্নতাও আপনাকে ঠিক মৃত্যু মুখেই ঠেলে দিচ্ছে। এক্টিভ কিংবা প্যাসিভ ভাবে।

মানুষের দুটো স্বাস্থ্য থাকে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য। “মানসিক স্বাস্থ্য” শারীরিক স্বাস্থ্যের মতই ঠিক গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। অন্যান্য রোগের মত এরও প্রকার ভেদ আছে, প্রধানতঃ নয়টি ভাগে একে ভাগ করা হয়েছে, Major Depression, persistent depressive disorder, bipolar disorder, Seasonal Affective Disorder (SAD), Psychotic Depression, Peripartum (Postpartum) Depression, Premenstrual Dysphoric Disorder (PMDD), Situational Depression, Atypical Depression। যে জিনিসটি মানুষকে মৃত্যুর দরজায় নিয়ে যায় সেটি ফেলনা কিছুতেই হতে পারে না, তাই এই নিয়ে প্রচুর গবেষনা হয়েছে, হচ্ছে, এর মেডিকেশান আছে, কাউনসিলিং আছে।

কে আপনাকে “বিষন্নতা বিলাস” বলে ফোঁড়ন কাটলো সেটা আমলে না নিয়ে নিজের প্রতি মনোযোগী হন। সাধারণতঃ ডাক্তাররা বলেন, শারীরিক পরিশ্রম কিংবা ব্যায়াম, যোগ ব্যায়াম, মেডিটেশান ইত্যাদি বিষন্নতা “নিয়ন্ত্রণে” সাহায্য করে। তবে সেটা নিয়মিত হতে হবে, ইচ্ছে হলে করলাম নইলে না, সেটাতে কিন্তু হবে না। আর “নিয়ন্ত্রণে” সাহায্য করে মানে কিন্তু নিরাময় করে না তার জন্যে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন। আর ফেসবুকে বন্ধু খুঁজে এই সমস্যার সমাধান হবে না। এপেন্ডিসাইটিস হলে কি ফেসবুকে বন্ধু খুঁজতেন? এই যে লোকজন বলছে, আমার সাথে কথা বলুন, মোটেও সেই ফাঁদে পড়বেন না। নম্বর এক, সে কি জানে? আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে হবে, আপনার কি প্রয়োজন? কথা বললেই রোগ ভাল হয়ে যায়! তাহলে প্রফেশন্যালদের দরকার ছিলো? নম্বর দুই, আপনার কথা সবাইকে বলে বেড়িয়ে, স্ক্রিনশট দিয়ে বাকি বেঁচে থাকাটাও হারাম করে দেবে না যে সেটার কি গ্যারান্টি? তবে মোহিত কামাল বা সৈয়দা আনোয়ারা হক মার্কা নয়, আন্তরিক ও জ্ঞানী কাউকে পাশে চাই। রোগকে স্বীকৃতি দিন, সিরিয়াসলি নিন, চিকিৎসার সুযোগও তৈরী হবে।সাদামাটা চোখে মানসিক অবসাদ দেখা না গেলেও অনেক মৃত্যুরই এটি কারণ। নিজের যত্ন নিন।

বিষন্নতার কাছে আত্মসমর্পণ হলো, আত্মহত্যা।

তানবীরা
১৭/০৬/২০২০

Saturday 13 June 2020

মাটি (২০১৮)

পাওলি দাম ও আদিল হুসেন অভিনীত "মাটি" (২০১৮) দেখলাম। শৈবাল ব্যানার্জী আর লীলা গঙ্গোপাধ্যায় এর পরিচালনায় অসাধারণ এক কাহিনী, অঢেল ভালবাসা দিয়ে বানানো সিনেমা। দেশপ্রেম, বাংলাদেশকে আঁকা হয়েছে গভীর মমতায়। দেশ ছেড়ে না এলে জানতেই পারতাম না, দেশহীন থাকার কি বেদনা। অসাধারণ অভিনয় করেছেন সবাই।
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র মেঘলা চৌধুরী, ইতিহাসে মার্স্টাস, দেশভাগ নিয়ে পি-এইচ-ডি করছেন, এসব যদি নাও দেখাতো তাও গল্পটা সমান উপভোগ্য হত। প্রত্যেকটা মানুষ তার নাড়ী জানতে চায়। এখানে জন্ম হওয়া-বড় হওয়া আমাদের বাচ্চারা, দেশের জন্যে ব্যাকুল থাকে। আমরা একটা ইনফরমেশান দেয়ার আগে তারা সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ সব থেকে পঞ্চাশটা ইনফরমেশান আগেই জেনে বসে থাকে, কারণ একটাই, নাড়ীর প্রতি টান। তার জন্যে ইতিহাসবিদ হওয়াটা তত জরুরী কিছু না।
নিজেদের দখল হয়ে যাওয়া বাড়ি-ঘর দেখে, সেখানে বাস করা মানুষদের দেখে কি রকম প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেই রূপটি বেশ বাস্তবসম্মত ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে বিরাট জমিদার না দেখিয়ে সাধারণ মানুষ দেখালে, গল্পটায় দ্যা নেক্সট ডোর ভাবটা আরও বেশি আসতো। শুধু জমিদারি ছেড়ে গেলেই বুঝি মন কাঁদে, কুঁড়েঘরের জন্যে কি মন আকুল হয় না? কত সহজে মানুষের পতাকা বদলে যায়, পাসপোর্ট বদলে যায়, পরিচয় বদলে যায়। একদিন যেখানে নিজের বসবাস ছিলো, সেখানে ঢুকতে ভিসা/পারমিশানের দরকার পরে!
তবে, শ্রুতিকটু কিছু জিনিস উল্লেখ না করলেই নয়। সামহাও কোলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চাশ বছরেও এই জিনিসগুলো আপডেট করে উঠতে পারে নি। এই গ্লোবালাইজেশেনের যুগে সময় এসেছে তাদের ডাটা হালনাগাত করার। "বাংলাদেশ" এখনও তাদের অনেকের কাছে হরহামেশাই পূর্ববঙ্গ। একদিন এক বন্ধুকে জিজ্ঞেসও করলাম, আচ্ছা, এই "পূর্ববঙ্গ" দেশটা কোথায় গো? গুগল ম্যাপে দেখাতে পারো? কোথাও তো খুঁজে পাই না। ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে যারা জন্মেছি, আমাদের পুরো ছোটবেলাটা কেটেছে বাড়ির লোকদের মুখে, মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকা, তাদের প্রাণ নিয়ে দৌড়াদৌড়ির গল্প শুনে, তাদের কাছে এই জিনিসগুলো বড্ড সেনসিটিভ, লাগে অনেক।
ছবির সংলাপ নিয়ে আরও একটু গবেষনা করার প্রয়োজন ছিলো, যত্ন নেয়ার দরকার ছিলো তো বটেই। ছবির বাংলাদেশি চরিত্রদের দিয়ে যে সংলাপ গুলো বলানো হয়েছে তাতে ইচ্ছে করে এমফেসিস দিয়ে যেভাবে আঞ্চলিক বাংলা বলানো হয়েছে, ঢাকা কিংবা বাংলাদেশের কথ্য ভাষা মোটেও সেটা নয়। বিশেষ করে একজন ডেপুটি কমিশনার (কূটনীতিক) কখনোই তার ডিউটিতে, আইছেন, গেছেন এধরনের কথা বলেন বলে আমার জানা নেই। বাংলাদেশ মানেই, খাইছেন, বইছেন নয়। বরং খাইয়া যাও বা বইয়া যাও বললে রিয়েলিটির কাছাকাছি শোনাতো হয়ত। তাছাড়া তারা যে ধরনের ধনী পরিবারের গল্প দেখিয়েছেন সেখানে এই ধরনের ভাষায় কথা বলা খানিকটা এবসার্ড তো বটেই তাও সব বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মানুষদের মুখ দিয়ে।
ভাষা একটা চলমান প্রক্রিয়া, এটা বির্বতিত হয়, যেখানে ঠাকুর্দা বাংলা ভাষা রেখে গেছেন, আজও সেটা সেখানেই দাঁড়িয়ে নেই। যেটা পশ্চিমবাংলার লোকদের ভাষায় "বাঙাল" ভাষা তার অস্তিত্ব শহরে তেমন নেই বললেই চলে। তবে বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায় তার নিজস্ব ভাষা আছে, আর সেটা পৃথিবীর কোথায় নেই? আমাদের দেশের প্রচুর আর্টিস্ট কোলকাতায় কাজ করছেন তাদের ভাষা ও কথা এরকম হবার কথা নয়। সেটা যদি তারা না'ও ধরে থাকেন অন্তত ইউটিউবে বাংলাদেশের কয়টা নাটক দেখে নিতে পারতেন।
হিন্দী সিরিয়ালের বিয়ের মত, সোনার গয়না পরে বিয়েতে মেহেন্দী লাগায় না। ফুলের গয়না পরার রীতি। সাধারণতঃ বিয়েকে বাংলাদেশে বিয়ে/বিয়া বলে, শাদী বলে না। এরকম একটা টপিকে সিনেমা বানানোর জন্যে চোখ কটকট করার মত দুর্বল গ্রাউন্ড ওয়ার্ক। জামিল ভাইরা কি করে এই বাড়ির অধিকারী হলেন সেই রহস্যও অজানাই রইলো।
সিনেমার গান গুলো অপূর্ব।



সিনেমায় যুদ্ধজয়ের গল্প


https://m.bdnews24.com/bn/detail/glitz/1766751?fbclid=IwAR3tHZGqW4eeD0KXwtUZ96xcXhCmoj4SoAluqsXrPFo_OyKxXLUEJmCbf0U

এক সময়ে আরটিএল ফোরে বুধবার সন্ধ্যা ন’টা থেকে টিভি ফিল্ম দেখাতো, বেইজড অন ট্রু স্টোরি। বেশির ভাগই এমেরিকান গল্প, এমেরিকান চ্যানেল ছিলো তখন। গ্ল্যামারস “বোল্ড এন্ড বিউটিফুল” কিংবা মজাদার "ডেস্পারেট হাউজ ওয়াইভস" এর বাইরে সে ছিলো অন্য এক এমেরিকার গল্প। মৃত্যুর বিরুদ্ধে ক্যান্সার পেশেন্টের লড়াই, মেয়েকে হত্যা করেছে কোন প্রভাবশালীর ছেলে, ত্রিশ বছর ধরে সমস্ত সিস্টেমের বিরুদ্ধে মায়ের লড়াই, ঝড়ে জাহাজ ডুবে গেছে, একা দ্বীপে মাস মাস যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার লড়াই, কি নয়। সব লড়াইয়ে যে সবাই জয়ী হতো, সব সমস্যার সমাধান যে হতো তা কিন্তু নয়। আমি মুগ্ধ হয়ে গোগ্রাসে গিলতাম। আজও এ ধরনের সিনেমার আমি একনিষঠ দর্শক। আজকে যে সিনেমার গল্পগুলোর কথা বলবো, সেগুলো সেরকম কোন না কোন যুদ্ধের গল্প, সত্যি যুদ্ধ, সিনেমা সিনেমা যুদ্ধ।


দ্যা মার্শেন (২০১৫)
এটি অবশ্য এন্ডি উইয়ারের সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস অবলম্বনে, পরিচালক রিডলি স্কটের ছবি। অভিনয় করেছেন ম্যাট ড্যামোন। মার্স অর্থাৎ মঙ্গলগ্রহে অভিযান চলার সময় ঝড়ের মধ্যে পড়ে নভচারী-বিজ্ঞানীরা। তাদের মধ্যে একজন মার্ক ওয়াটনি। ঝড় এড়িয়ে মঙ্গলগ্রহ থেকে বেরিয়ে আসতে নভযানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় পড়েন ওয়াটনি। বায়োমনিটর অচল থাকায় তার সহকর্মীরা তাকে মৃত ভেবে ফেলে চলে যায়। তারপর শুরু হয় ওয়াটনির একা একা বেঁচে থাকার গল্প, চাষাবাদ করে সে মঙ্গলগ্রহে। পরে তার সহকর্মীরা যখন জানতে পারে সে বেঁচে আছে, এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। অন্যরকম সিনেমাপ্রেমীদের জন্য লোভনীয় সিনেমা।

হানড্রেড টোয়েন্টি সেভেন আওয়ার্স (২০১০)
সত্যি ঘটনা অবলম্বনে বৃটিশ পরিচালক ড্যানি বোয়েল বানিয়েছেন এই ছবি। ২০০৪ সালে র‍্যাস্টোন এর স্মৃতিকথা ‘বিটুইন আ রক অ্যান্ড আ হার্ড প্লেস’ ও তিনিই লিখেছিলেন সিমোন ব্যাফুই এর সঙ্গে। সেরা অভিনেতা আর সেরা ছবি-সহ ছয়টি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে এই ছবি। ২০০৩ সালে পর্বাতোরোহী অ্যারোন র‍্যাস্টোন ক্যানিয়নের ন্যাশনাল পার্কে ঘুরতে যায়। স্লট ক্যানিয়নের ভেতর দিয়ে ব্লুজোন ক্যানিয়নে ওঠার সময়, পিছলে পড়ে যেয়ে, আটকে যায় সেখানে। পাঁচ দিনে সে কি অবস্থায় ছিল নিজের ভিডিও রেকর্ডার দিয়ে রেকর্ড করে রাখে। সাহায্য পাওয়ার কোনো আশা ছিল না বলে নিজের হাত বারবার কেটে বের হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন এই পাঁচদিন। অবশেষে হাত কাটতে সফল হয় বের হয়ে আসেন। সাত মাইল হাঁটার পর অন্যদের সঙ্গে দেখা হয় যারা হেলিকপ্টার ডেকে তাকে চিকিৎসার জন্যে পাঠায়। অ্যারোনের চরিত্রে অভিনয় করেছে জেমস ফ্র্যাঙ্কো।

অ্যালাইভ (১৯৯৩)
১৯৭৪ সালে পিয়ার পল রিডের লেখা আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘দ্যা স্টোরি অফ দ্যা অ্যান্ডেস সারভাইভর্স’ এর ওপরে তৈরি করা এই সিনেমা। ফ্র্যাঙ্ক মার্শালের পরিচালনায় এই সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে, ব্রিটিশ কলোম্বিয়ার পার্সেল মাউনটেন্সে। স্টেলা মারিস কলেজের ‘ওল্ড ক্রিশ্চিয়ান রাগবি টিম’ ১৯৭২ সালের অক্টোবরের ১৩ তারিখ উরুগুয়ে এয়ারফোর্সের ৫৭১ ফ্লাইটে অ্যান্ডেসের ওপর দিয়ে চিলিতে ম্যাচ খেলতে যাচ্ছিলো। মেঘের কারণে পাহাড় দেখতে পায়নি পাইলট, পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে প্লেনের পাখা আর লেজ আলাদা হয়ে ভেঙে চূড়ায় পড়ে যায়। ছয় জন তখনই মারা যায় আর কেউ কেউ ধীরে ধীরে মারা যায়। উদ্ধারকারী প্লেন তাদের খুঁজে পায়নি। খাবার দাবার শেষ হয়ে এলে তারা তাদের সঙ্গীদের মৃতদেহগুলো যেগুলো পাহাড়ে বরফ চাপা দেয়া ছিল, সেগুলো তুলে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারও অনেকদিন পর সিদ্ধান্ত নেয় তিনজন পাহাড় থেকে হাঁটতে হাঁটতে শহরের দিকে যাওয়ার। শহরে যেয়ে যোগাযোগ করে প্লেন নিয়ে এসে বাকি সাথীদের রক্ষা করে। এ ঘটনার বিশ বছর পর, বেঁচে যাওয়া মানুষদের সাক্ষাৎকার নিয়ে আলাদা একটা প্রামাণ্যচিত্র মুক্তি দেওয়া হয়, যেটার নাম ‘অ্যালাইভ, টোয়েন্টি ইয়ারস লেইটার।’

 কন-টিকি (২০১২)
ইয়োশিম রোনিং আর এসপেন স্যান্ডবার্গের পরিচালনায় ১৯৪৭ সালের কন-টিকি অভিযানের ওপর এই সিনেমা। নরওয়ের সে সময়ের সবচেয়ে ব্যয় বহুল সিনেমা ছিল এটি। প্রথম নওরোজিয়ানের কোনো সিনেমা যেটি গোল্ডেন গ্লোব এবং অস্কারের জন্যে মনোনয়ন পায়। নওরোজিয়ান অভিযাত্রী থর হেয়ারডাল ১৯৪৭ সালে কাঠের তৈরি ভেলা আর পাঁচ জন সঙ্গী নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেয়। তিনি প্রমাণ করতে চাইছিলেন, প্রি-কলোম্বিয়ান টাইমে দক্ষিণ এমেরিকান মানুষেরা, প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে পলিনেশিয়ান দ্বীপে হয়ত বসতি গড়েছিলেন। ধার আর ডোনেশানের টাকায় সমুদ্র যাত্রার মূলধন যোগাড় করে তারা আট হাজার কিলোমিটারের স্মরণীয় একশো একদিন পার করে সেখানে পৌঁছান। থরের পরিবার মোটেই এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। প্রচণ্ড ঝড় ঝঞ্ঝাময় আবহাওয়া, উত্তাল সমুদ্রের ঘূর্নণ, হিংস্র তিমিকে পাশে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া, সত্যিই অভাবনীয়। কন-টিকি’র পরেও থর তার অভিযান থামান-নি। তিনি আরও অনেক সমুদ্র অভিযান চালিয়ে যান।

কাস্ট অ্যাওয়ে (২০০০)
একটি অনুসন্ধান, মানুষের বেঁচে থাকার এবং ভাগ্যের সক্ষমতার এমনকি একটি বড় ঘটনার সঙ্গে জীবনের সজ্জাও পরিবর্তন করতে পারে, চাক নোলানের কাস্ট অ্যাওয়ে এমনই এক গল্প বলে। চাক, ফেডেক্স এর ইঞ্জিনিয়ার যে তার জীবনের প্রায় পুরোটাই খরচা করেছে ট্রাবলশ্যুটিং এর কাজে। কেলিকে সে অসম্ভব ভালোবাসে কিন্তু কাজ পাগল চাক তাকে সেভাবে সময় দিতে পারে না। কিন্তু এক ক্রিসমাস ইভে বড় একটা অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে চলে যাওয়ার প্রাক্কালে চাক তাকে বিয়ের জন্যে প্রপোজ করে। সেদিনই প্লেন দুর্ঘটনায় চাককে তার ভাগ্য নিয়ে ফেলে এক দ্বীপে। তার দ্রুতগতির জীবনটি, কোনো মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া খুব আস্তে আস্তে চলতে শুরু করলো। চাক বেঁচে ফিরেছিলো, উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে একা, নিজের হাতে বানানো ভেলাটি ছিলো তার সম্বল। সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৪২৯ মিলিয়ন ডলার আয় করে টম হ্যাঙ্কস অভিনীত এই সিনেমা। এ ছাড়াও ৭৩তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডেসের জন্যে টম হ্যাঙ্কস মনোনীত হন।


Friday 5 June 2020

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – ৭ {জুন}

বাচ্চাদের ক্ষতির সম্ভাবনা কম তাই আট জুন থেকে প্রাইমারি স্কুল পুরোদমে তাদের প্রাত্যহিক ও স্বাভাবিক কার্যকর্ম শুরু করতে পারবে।
এখন ছুটির সময়। গোটা ইউরোপেই এটা ছুটির সীজন। সবার মনে ভাবনা ছুটিতে যেতে পারবো? বিশেষ করে এভাবে দিনের পর দিন অন্তরীন থাকার পর এখন সবার কাছে গরমের ছুটিই সবচেয়ে প্রার্থনীয় জিনিস। মার্ক রুতে জানিয়েছেন, হ্যাঁ ছুটিতে যাওয়া সম্ভব। যাদের বাচ্চাদের স্কুলের সাথে ছুটির প্রয়োজন নেই তারা হাই সীজনে না গেলেই ভাল, তাতে ভীড় এড়ানো সোজা হবে, ঝুঁকি কম । যারা অন্য দেশে ছুটি যেতে চাইছে, সেটা সে দেশের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। "ছুটি বুদ্ধিমত্তার সাথে হ্যান্ডেল করতে উপদেশ দেয়া হয়েছে"। ছুটি সম্বন্ধে ট্রাভেল এডভাইস ফলো করার জন্যে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মার্ক রুতে তার স্পিচ তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। ১. হল্যান্ডে ছুটি কাটানো। সেটা নিয়ে কোন বাধা নেই কিন্তু পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা যাবে না সেটা শুধুমাত্রই দরকারে ব্যবহার করা যাবে। বেসিক স্থাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
২. সেঙ্গুইন ইউরোপ, ইংল্যান্ড আর ক্যারাবীয়ান আইল্যান্ডসে ছুটি কাটানো। পনেরই জুন অব্ধি সব জায়গাতেই ট্রাভেলের ওপর অরেঞ্জ মার্ক দেয়া আছে। কেউ ট্রাভেল প্রেফার করছে না। ষোলই জুন থেকে হলুদ রঙ থাকবে, দায়িত্বশীলতার সাথে ট্রাভেল করো। এই হলুদ রঙের আওতায় সুইডেন আর ইংল্যান্ড পরবে না। বাকি নির্ভর করছে প্রত্যেক দেশের পরিস্থিতির ওপর। কারা ট্যুরিস্ট এলাও করবে আর কারা করবে না, সেটা প্রত্যেক দেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। অনেক দেশেই নেদারল্যান্ডসের টুরিস্ট ওয়েলকাম নয় এবং তাদের কেয়ারন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক। আপাতত বারোটি দেশে ছুটির এডভাইস দেয়া হয়েছে, জার্মানী, ইটালী, বেলজিয়াম, ক্রোয়াশিয়া আর বাকি ছ"ট ক্যারাবিয়ান দ্বীপ। পাঁচই জুলাইয়ের মধ্যে সুইটজারল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স আর অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডসের জন্যে তাদের বর্ডার ওপেন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। netherlandsworldwide.nl এ সব আপডেট দেয়া থাকবে। হলুদ মানে কিন্তু সবুজ নয়, সুতরাং পরিস্থিতি যেকোন মুহূর্তে বদলে যেতে পারে। আর বিদেশেও শরীর খারাপ হলে , পরীক্ষা করতে হবে, কেয়ারন্টিনে থাকতে হবে এবং নেদারল্যান্ডসের জি।জি।ডিতে যোগাযোগ করতে হবে।
৩. ইউরোপের বাইরে ছুটিতে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। কারণ সব জায়গায় পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে নেই। শুধুমাত্র অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যাতায়াত নিষিদ্ধ। আর ফেরত আসার পর দু সপ্তাহের হোম কেয়ারন্টিন বাধ্যতামূলক। নেদারল্যান্ডস স্টেপ বাই স্টেপ আগাতে চায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। ইউরোপের করোনা পরিস্থিতি সম্বন্ধে যত সহজে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, ইউরোপের বাইরেরটা সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না।
আর হ্যাঁ, নেদারল্যান্ডসের সমকক্ষ স্বাস্থ্যবিধির দেশ ই-ইউ আর সেঙ্গুইন ইউরোপ হতে পনেরই জুন থেকে ট্যুরিস্ট নেদারল্যান্ডসেও আসতে পারবে। তারমধ্যে সুইডেন আর ইংল্যান্ড পরবে না। ট্যুরিস্ট স্পটে যেনো ভীড় না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখা হবে, ক্রাউড ম্যানেজম্যান্ট এর দায়িত্বে থাকবে আর গেস্টদেরও রেস্টুরেন্ট, পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট, মিউজিয়াম ইত্যাদিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকবে।
বিমানে সবাই মিলে ট্রাভেল করা কতটা নিরাপদ? হ্যাঁ, সব বিমান কোম্পানীকেও তাদের স্বাস্থ্যবিধি দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক কোম্পানী স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়েই তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফ্লাইয়িং ন্যাশনাল নয় ইন্টারন্যাশনাল নিয়মের আওতায় পরবে।
ডেনমার্ক বলেছে তারা নেদারল্যান্ডসের ট্যুরিস্ট এক্সেপ্ট করবে না। নেদারল্যান্ডস কি তবে ডেনমার্কের ট্যুরিস্ট এক্সেপ্ট করবে? প্রিমিয়ে রুতে বলেছেন, অবশ্যই ডেনমার্কের ট্যুরিস্ট নেদারল্যান্ডসে স্বাগতম। ইংল্যান্ড আর সুইডেনের ট্যুরিস্ট এসে গেলে তাদেরকে কেয়ারন্টিনে থাকতে হবে, ঘুরে বেড়াতে পারবে না।

দেশবাসীর আচরনের প্রশংসা করে রুতে বলেছেন, পুলিশ নামিয়ে জনগনকে বাসায় রাখতে হয় নি, নিজ থেকেই সবাই বাসায় থেকেছে। যদিও আচরন বিধি ভঙের দায়ে জরিমানা করা হয়েছে কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় সেটা খুবই কম।

বাজারে রেশনিং উঠে গেছে। সবাই যার যার মত যতটা দরকার কিনতে পারছে।

০৪/০৬/২০২০

Thursday 4 June 2020

প্রাপক: জাস্টিন ট্রুডো (প্রিয়তমেষু)

প্রতিদিন কি ভাল হতে ইচ্ছে করে! থাকে না কিছুদিন, যেদিন কোন কাজে মন লাগে না। মেইল ভর্তি কিউরি থাকে, প্রশ্ন থাকে, ইস্যুস থাকে, খুলে পড়তে ইচ্ছে করে না, মনে হয়, মরুক সব, আমার কি। টিম মিটিং এর সব আপডেট কানের এপাশ থেকে ওপাশে ঘুরে যায়, কানে ঢোকে না, এটেনশান থাকে না, মাঝে মাঝে বস জিজ্ঞাসাও করে, আর ইউ দেয়ার!
কোন কিছু ভাল লাগে না, ক্লান্ত লাগে। কাজ করতে ইচ্ছে করে না, কথা বলতে ইচ্ছে করে না, বই পড়তে ইচ্ছে করে না, মা হতে ইচ্ছে করে না। সবকিছু ছেড়ে অচেনা অসীমে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, দুষ্ট হতে ইচ্ছে করে, স্বার্থপর হতে ইচ্ছে করে। কিন্তু হারাবো কোথায়! না, সেটাও জানি না। ইচ্ছেরাও তো ডানা মেলে ওড়া ভুলে গেছে।
শুক্রবার সপ্তাহের সবচেয়ে বেঈমান দিন, সিভিয়ার কনসেনট্রেশান প্রবলেম। সামনের দুদিন শনিবার-রবিবার এটাই কি এই চিত্ত চাঞ্চল্যের কারণ? সামনের আশাই মনের পেন্ডুলাম দুলিয়ে দেয়।
যেসব কথার কোন মানে হয় না, অর্থহীন সেসব কথা জড়ো করে বিশাল লম্বা একটা চিঠি লিখে ফেলতে ইচ্ছে করে না? মাঝে মাঝে সত্যিই করে না?
"এই বাস স্টপ, কেউ নেই, তুই ভেসে আসা গান
দলছুট পাখিদের, তুই হলি খোলা আসমান"

মার্ক রুতে

সফল ব্যবসায়ী ছিলেন তারপর দুই হাজার দুই থেকে সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদে আসীন, প্রভূত ক্ষমতা, ডুবে যাওয়া দলকে নেতৃত্ব দিয় সরাসরি সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, তারপর দুই হাজার দশ থেকে একটানা "প্রাইম মিনিস্টার" অফ দ্যা রয়্যাল নেদারল্যান্ডস, ডাচ ভাষায় "প্রিমিয়ে কিংবা প্রিমেই"। থাকেন একটি ফ্ল্যাটে, আমি জানি না, কোন দেশের ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যক্তি ফ্ল্যাটে থাকেন কি না। নেদারল্যান্ডসে মুম্বাইয়ের মত পাঁচ হাজার স্কোয়ার ফিট বা মিটারের ফ্ল্যাট আছে বলে শুনি নি কখনো। ডাচ সংবাদ মাধ্যমের ভাষায়, মডেস্ট এপার্টমেন্টে থাকেন প্রিমেই। নিজেও টিভিতে বলেছেন, আমার ফ্ল্যাট খুব বড় নয়।

যদিও তার একটা পুরনো "Saab" গাড়ি আছে যেটি তিনি শুধুমাত্র তাড়াহুড়ো থাকলে (সময় বাঁচাতে কখনো সখনো) ব্যবহার করেন বলে জানা যায়, নিয়মিত সাইকেলেই অফিস করেন তিনি ।

কোন রকম সরকারী প্রটোকল তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনে ব্যবহার করেন না। নিজের কফির দাম নিজেই দেন। দায়িত্ব পালনের সময় খরচ হওয়া যেকোন এমাউন্টের রিইমবার্স তিনি বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন। নাচতে ভালবাসেন আর যেকোন কনসার্টে কিংবা পাব্লিক ইভেন্টে আর সকলের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন, নিজের টার্নের অপেক্ষা করেন।

তিপান্ন বছর বয়সী মার্ক রুতে, ইউরোপীয়ান নেতাদের মধ্যে বলতে গেলে জনপ্রিয় ও সবচেয়ে বেশীদিন ধরে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে নিয়মানুবর্তীতা ও আইনের প্রতি আস্থা রাখেন এবং তা প্রতিদিন তার কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনে মেনে চলেন।

জীবনের বেশীর ভাগ সময় আমার নেদারল্যান্ডসে কেটে গেছে আর কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে ডাচ কোম্পানী ফিলিপ্সে। ব্যক্তি আমার পর্যবেক্ষণ বলে, "ক্ষমতার দম্ভ - হায়ার্কি - ফুটানি" জিনিসটা এদের জিনেই নেই। প্রাউড টু বি পার্ট অফ ডাচ সোসাইটি।

বাই উইকলি করোনা স্পীচে জর্জ ফ্লইয়েডের মৃত্যু নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি রুতে


জর্জ ফ্লইয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে আমস্টার্ডামের ডাম স্কোয়ারে বিক্ষোভে পুলিশের বাঁধা দেয়া নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রিমেই বলেন, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ গনতান্ত্রিক দেশের মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার। সেটা দেড় মিটার সোশ্যাল ডিসটেন্স মেইনটেইন করেও করা যায়। সোমবারে যা হয়েছে আমস্টার্ডামে তা মেনে নেয়া যায় না। এখন আমস্টার্ডাম আর রটারডামে প্রটেস্ট চলছে জর্জ ফ্লইয়েডের মৃত্যু আর ডাচ পুলিশের বিরুদ্ধে।

জর্জ ফ্লইয়েডের মৃত্যু নিয়ে মার্কিন সরকারের সাথে কোন যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে রুতে বলেন, না, তিনি যোগাযোগ করেন নি। আর এমন ঘটনা নেদারল্যান্ডসেও ঘটে, তিনি নিজেই জানেন। মানুষকে তার ভবিষ্যত দিয়ে বিবেচনা না করে, তার অতীত দিয়ে বিবেচনা করা হয়, মানুষকে তার সামনে থাকা জায়গা দিয়ে না দেখে ফেলে আসা দেশ, ধর্ম, বর্ণ, লিংগ ও অন্যান্য ক্রাইটেরিয়াতে ফেলে এই দেশেও বিবেচনা করা হয়।

সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেন, তিনি এই প্রটেস্টের মোর‍্যাল অনুভব করেছেন কি না? পুলিশ কেন তবে বাঁধা দিলো? জবাবে রুতে বলেছেন, তিনি মোর‍্যাল অনুভব করছেন কি না কিংবা তিনি একমত কি না, তিনি কি ভাবছেন, সেটা দিয়ে তো প্রটেস্ট চলতে পারে না। প্রটেস্ট হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, এখানে তার মতামত কেন জরুরী? তাহলে কি জনগন তার দল ভিভিডি কিংবা ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে না? কিন্তু তিনি অবশ্যই করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রটেস্ট চান, এই ব্যাপারে কোন নিগোশিয়েশান হবে না। খ্রোনিংগেনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রটেস্ট এর উদাহরণ রয়েছে। এখন প্যান্ডেমিক চলছে, সবাইকে সেটা অনুধাবন করতে হবে।

কেন এমেরিকাতে কোন প্রতিবাদলিপি পাঠানো হলো না তার জবাবে রুতে বলেন, তার কাছে নেদারল্যান্ডস অনেক জরুরী। নেদারল্যান্ডস এখনো রেসিসিজম, ডিস্ক্রিমিনেশানের উর্ধ্বে উঠতে পারে নি। এখানে মানুষকে আজও এই কারনগুলো নিয়ে সাফার করতে হচ্ছে। এই ঘটনা তো শুধু এমেরিকাতেই ঘটছে না, তাই না? তিনি জর্জ ফ্লইয়েডের মৃত্যুকে আনএক্সেপ্টবল বলেছেন কিন্তু তিনি এমেরিকার সরকারকে কি করে তার দেশ পরিচালনা করতে হবে এই নিয়ে কোন উপদেশ দেবেন না কারণ নেদারল্যান্ডস নিজে এই সমস্যাগুলোর উর্ধ্বে এখনও উঠতে পারে নি। নেদারল্যান্ডসের নিজের সিস্টেমে অনেক গলদ রয়ে গেছে আর তাই এখানেও মানুষ এসমস্ত কারণে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে। মানুষকে তাদের সম অধিকারের জন্যে রেসিজিমের বিরুদ্ধে আজও এই নেদারল্যান্ডসেই সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

নেদারল্যান্ডসের মানুষের প্রতিবাদে তার হাজার ভাগ সমর্থণ আছে কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি ভাঙা তিনি মেনে নেবেন না।

সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেন, তাহলে নেদারল্যান্ডসের এই সিস্টেম শোধরানোর ব্যাপারে তিনি বা তার সরকার কি করছেন? জবাবে রুতে বলেন, সর‍্যি, তাহলে আপনারা আমার কাজ ঠিক করে অনুসরণ করছেন না। আমি কত বার কত জায়গায় এই নিয়ে কথা বলেছি, তার ইয়ত্তা নেই। আমি আইনের পর আইন শোধরাতে পারি, জরিমানার ওপর জরিমানা দিতে পারি, নিয়ম কঠিন থেকে কঠিন করতে পারি কিন্তু দ্ব্যার্থ কন্ঠে বলতে চাই, নেদারল্যান্ডসে এই মনোভাব আনএক্সেপ্টবেল আর এই ধরনের মনোবৃত্তির মানুষ এই রাস্ট্রে কঠিন থেকে কঠিন সমস্যায় পরবে। কোন শুধরে যাওয়া পরিকল্পনায় এসব পরিবর্তন হয় না। দিনের পর দিন চর্চার মধ্যে দিয়ে পরিবর্তনের শুদ্ধতা আনতে হবে, আনতে হয়।

হ্যাটস অফ টু রুতে ওয়ান্স এগেইন।
04/06/2020