Monday 7 March 2022

"মাইকেল কলিন্স"

রাশা আর ইউক্রেন যুদ্ধের চাপে বইপড়া কমে যাওয়াতে টিভি দেখা বেড়েছে। সিনেমা, সিরিজের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে বাছাবাছি করার টেন্ডেসিও বেড়েছে আমার। পড়ছি যেহেতু কম তাই বেশি ফ্যাক্টস এর ভিত্তি করে বানানো জিনিস দেখার চেষ্টা করি। একসময় প্রবাদ ছিলো, ব্রিটিশদের রাজত্বে সূর্য অস্ত যায় না। আধুনিকায়তনের চোটে অবশ্য সেসব এখন ফুটে গেছে। আয়ারল্যান্ড হলো ব্রিটিশ কলোনীর সবচেয়ে ভুক্তভোগী রাষ্ট্রের একটি। প্রায় সাতশো তেপান্ন বছর ব্রিটিশদের কব্জায় ছিলো। আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর নীল জর্দানের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় বানানো সিনেমা "মাইকেল কলিন্স" দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, বৃটিশ শাসনের সাফল্যের মূলমন্ত্র ছিলো প্রত্যেক দেশে একটি করে লর্ড ক্লাইভ নিয়োগ দেয়া। লর্ড ক্লাইভদের সাফল্য ছিলো সে দেশের মীর জাফরদের খুঁজে বের করা এবং সিরাজউদ্দোলাদের পরাজিত করে দেশের দখল নেয়া। মাইকেল কলিন্স ছিলো আয়ারল্যান্ডে নিযুক্ত ব্রিটিশদের লর্ড ক্লাইভ আর আইরিশ কর্নেল এডওয়ার্ড ব্রয় ছিলো মীর জাফর, আইরিশ প্রেসিডন্ট এমন ডি ভালেরা হলো সিরাজউদ্দোলা এবং দিনের পর দিন সেখানে যুদ্ধ চলতে থাকে। মাত্র একত্রিশ বছর বয়সে মাইকেল কলিন্স মারা যায়। বৃটিশ ও আইরিশ মিলিয়ে প্রায় হাফ মিলিয়ন মানুষ তার শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলো। আর্শ্চযের ব্যাপার হলো, মারা যাওয়ার আগে আয়ারল্যান্ডের রাজনীতি থেকে সে বন্দুক/যুদ্ধের অপসরনের চেষ্টা করেছিলো। ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে “গোল্ডেন লায়ন” জয়ী আর উনসত্তর একাডেমি এওয়ার্ডসে “বেস্ট অরিজিনাল স্কোর” আর “বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফী”র জন্যে নমিনেশান পাওয়া এই সিনেমাটা যাদের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ আছে দেখতে পারেন। টাইটানিকের পরে সর্বোচ্চ আয় করা মুভি আয়ারল্যান্ডের।

আমি যাই নির্বাসনে

আমার সুন্দরী কবি বন্ধু লোচন বন্ধুমহলে অত্যন্ত জনপ্রিয় নাম। যারা নিয়মিত লোচনের লেখা পড়েন তারা জানেন, লোচনের গদ্যের হাতও অসাধারণ যদিও লোচন নিজেকে কবি পরিচয় দিতেই ভালবাসে। ব্যাংকার হিসেবে ষোল বছরের কর্মজীবন, রাকিবের স্ত্রী, দীপিতার মা, জীবনের প্রতিটি কণাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা সদা হাসিখুশী আমুদে লোচন অভিমানে অতি সম্প্রতি দেশের মায়া ত্যাগ করে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছে। খুব কম সাহিত্যিকই আছে যার মনের ছায়া তার লেখাতে পড়ে না। কবির প্রেমের উচ্ছাসে যেমন লেখা হয় প্রেমের কবিতা, প্রেম ভেঙে গেলে তেমনি উঠে আসে ব্রেকাপ সঙ। প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে সাত সমুদ্দুর তের নদী পাড়ি দেয়া, করোনা, মহামারি, দুর্নীতি ইত্যাদির প্রভাব কবির কবিতায় পড়বে না, সেকি হয়! গল্প অনেক হলো, আসুন কয়েকটি কবিতার অল্প কিছু পংক্তি পড়ে নেয়া যাক। শুরু করি, “আমি যাই নির্বাসনে” কবিতাটি দিয়ে চোখের সামনে মানুষের উবে যাওয়া দেখেছি ব্যথায় কুঁকড়ে যাওয়া শিশুর আহাজারি অন্যায়, অনাচার ধর্ষণ, সব স্বাভাবিক জীবন যাপনের আবহে প্রতিদিন সয়েছি। কোনকিছু দিয়েই যখন পারছি না ঠেকাতে আপন প্রাণ স্বস্ত্বিতে বাঁচাতে, মস্তিকের উলটে যাওয়া রুখতে, নিজের মনের কোণে উচ্চারণ প্রকাশ্য গোপনে আমি যাই “নির্বাসনে”। খুব সহজ ভাষায় কঠিন কিন্তু সত্যিটা লেখা হয়েছে। বাংলাদেশের আজকের পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্যে এরচেয়ে বেশি লেখার প্রয়োজন আছে কি? তিনশো পয়ষট্টি দিনে খবরের কাগজের সব কলাম যেসব খবরে পূর্ণ থাকে তার সারমর্ম এই কয়েকটি লাইনেই আছে। কিছু কবিতা আছে মারাত্বক বিপদজনক বাস্তবতা নিয়ে, “জননীর সর্পখেলা” তার মধ্যে একটি জননী তার পোষা সাপ নিয়ে খেলা দেখাচ্ছিলেন মগজ খুলে রাখা এক জনপদে, পারিষদেরা বিনের আওয়াজে দুলছিলেন অর্হনিশ, কে সাপের কতভাবে প্রশংসা করতে পারে কবিতার বাকিটুকু আপনারা বইতে কিংবা কবির টাইমলাইনে পড়ে নেবেন। এবার একটু মিষ্টি প্রেম কিংবা অভিমানের কবিতা পড়ি, “উপেক্ষার এপিটাফ” এসো মৌনতায় বৃক্ষ হই প্রতি শব্দের শেষে দাঁড়িয়ে রই, ক্লেদ-ক্লান্তি সমারূঢ় সমাপতন স্পর্শের ভাষায় করি গ্রহণ। কতকাল এই ত্বকে কেউ আঙুল রাখেনি, কতকাল এই হাত কোনো অভিমান মাখেনি। এই হিমশীতল, বিষণ্ণ, নীরব প্রবাস নিয়ে আমাদের প্রত্যেকের আর্তনাদের খানিকটা আঁকা আছে কবির খাতায়, “বিষণ্ণতার ক্ষরণ” এ শহর এক চলমান মর্গ চারদিকে তুষারের আগ্রাসন এত ভারী পোশাকের নিচে নিজেকেও ছোঁয়া যায় না কোষে কোষে নীরবে ছড়ায় বিষণ্ণতার গভীর গোপন ক্ষরণ। আমরা যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তাদের জন্যে করোনা এক নিদারুণ যুদ্ধ। এত বড় মহামারী কাব্যে স্থান পাবে না, সেকি হয়! “করোনা করুক প্রাণসংহার” এমন এক সময় আমাদের দেখতে হচ্ছে যেখানে মানুষের প্রাণের চাইতে বানর মূল্যবান যেখানে মানুষের প্রাণের চাইতে বড় কে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান। এই তবে ভালো সুপারপাওয়ারের দেয়া উপহার, করোনা বিভেদ ভুলে করুক সবার প্রাণ সংহার। বোনাস একটি কবিতা রইলো সবার জন্যে, “রাষ্ট্রীয় সার্কাস” প্রতি লাশের নামে ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস আমার মরণে চাই না এমন রাষ্ট্রীয় সার্কাস!
শব্দের পর শব্দ গাঁথলেই কবিতা হয় না। ছন্দে-আনন্দে মিললেই না তবে কবিতার সার্থকতা। সাহিত্যের কাজই হলো সমসাময়িক বাস্তবতাকে তুলে ধরা, ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই দেয়া। কবিতাগুলো আজকের পরিস্থিতির আকাট্য দলিল। একাডেমিক প্রেস এন্ড পাবলিশার্স লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত হওয়া “আমি যাই নির্বাসনে” লোচনের এগারোতম কবিতার বই। বারো’তম বইটি এই ফাল্গুনেই আসছে। ভালবাসা অফুরান লোচন এবং সাফল্য এমনি পায়ে পায়ে ঘুরুক।

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন সেই মোতালেব

https://www.prothomalo.com/life/durporobash/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9C-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%AC?fbclid=IwAR2h97ls-CSDV_djALetA-ZdGO5z95Fai2RbFCdhb1tSgotVwwxjMLce__8 যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে শুধু খিদের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন মোতালেব। সাত বছরের শিশু রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিল; সেখান থেকে একটি এতিমখানায় আশ্রয় হয় তার। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের ওয়াইটার্স দম্পতি একটি শিশু দত্তক নেওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলেন। তাঁরা দত্তক নেন মোতালেবকে। সেই মোতালেব ওয়াইটার্সকে প্রিয়জনেরা এখন ‘মো’ বলেই ডাকেন। অতীতের দিকে তাকিয়ে মোতালেব বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস আমার জন্য স্বর্গ ছিল।’ দ্রুতই তিনি ডাচ্‌ জীবনের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। নেদারল্যান্ডসকেই নিজের দেশ ভাবতে থাকেন, স্কুলে যেতেন, সমবয়সীদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন, অন্য সবার মতো কাজ করতেন। পড়াশোনার পর ২০ বছর বয়সে তিনি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার শিকড়ের সন্ধান করা প্রয়োজন মনে করি এবং ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসি। বাংলাদেশে এসে আমি আমার রক্তের বন্ধনকে খুঁজে পেয়েছি—চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান “ইত্যাদি” ও হানিফ সংকেত এ ব্যাপারে আমাকে দারুণ সমর্থন জোগান।’ পরিবারকে খুঁজে পাওয়া, তাদের অসহায়ত্ব আর দারিদ্র্য দেখে মো বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্তে নেন। একসময়ের পথশিশুটিই এখন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি অনেক মেয়ের জীবন বদলে দিয়েছেন। বাংলাদেশের নারীদের উন্নতির জন্য তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর এর জন্য আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছেন মোতালেব। মোতালেব বলেন, ‘১৯৯৫ সালে আমরা বাংলাদেশের পটুয়াখালীতে প্রচুর টিউবওয়েল ও শৌচাগার স্থাপন করেছি এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত শিক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বরগুনা ও দশমিনাতেও আমরা এসব প্রকল্প সম্প্রসারণ করেছি। এর মধ্যে ২০০০ সালে বাউফলে একটি এতিমখানা স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে এখন ৪০টির মতো শিশু আছে। ২০০১ সালে বাউফলে একটি মা-শিশু ক্লিনিক এবং ২০১৩ সালে একটি জরায়ু ক্যানসার পরীক্ষার ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি মৃত স্ত্রীর স্মরণে ইনখ্রিড মেমোরিয়াল হসপিটাল নামে একটি হাসপাতাল তৈরি করেছি, সেখানে মেয়েদের প্রসবের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার আছে। সেখানে ছোট–বড় সব ধরনের অপারেশন করা হয়। দরকার হলে শহর থেকে সার্জন নিয়ে আসা হয়। আমরা ইতিমধ্যে কয়েক হাজার নারীকে জরায়ুর ক্যানসার থেকে বাঁচিয়েছি। কেননা, মা ছাড়া বাচ্চাদের তো কোনো সুন্দর ভবিষ্যৎ হতে পারে না।’ মোতালেব আরও বলেন, ‘২০০৪ সালে শাকসবজি, মাছ ও মুরগির খামার শুরু করেছি। অল্প জায়গায় কোন পদ্ধতিতে কাজ করলে বেশি সুফল পাওয়া যায়, সাধারণত সেই কৌশলগুলো আমরা গ্রামবাসীকে শেখাই। ধরুন, একটি পুকুরের চারপাশে নানা ধরনের ফলের গাছ কিংবা সবজির গাছ লাগাতে পারেন, পুকুরে মাছের চাষ করতে পারেন আর পুকুরের ওপরেই মাচা বানিয়ে ঘর তুলে সেখানে মুরগি পালন করতে পারেন। মুরগির বর্জ্যই হবে মাছের খাবার। তিন হাজার পরিবার আমাদের এ প্রকল্পে এখন কাজ করছে। এ ছাড়া বাউফল, দশমিনা, বাকেরগঞ্জ, বরগুনাতে ছয় হাজার পরিবারকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে।’ নারীদের অবস্থান ও কল্যাণে মোতালেবের প্রচেষ্টার জন্য গত ২২ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসের উডেনের রোটারি ক্লাব মোতালেবকে সম্মানিত করে। এ সময় রোটারি ক্লাব উডেনের গভর্নর লেনি খুইয়ার ইয়ানসেন, মেয়র হেলেগারস এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। মোতালেব বলেন, ‘অবশ্যই স্বীকৃতিটি অসাধারণ। সংস্থাটি আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বব্যাপী সমস্ত রোটারি ক্লাবের কাছে একটি প্রকল্প জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে আর সেই হাজার হাজার প্রার্থীর মধ্য থেকে নির্বাচিত ছয়জনের মধ্যে আমি একজন।’ এ জন্য মোতালেব চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে আনুষ্ঠানিক পুরস্কারও পাবেন। মোতালেবের স্ত্রী ইনখ্রিড ওয়াইটার্স ২০১৩ সালে স্তন ক্যানসারে মারা যান। তিনটি বাচ্চাকে লালনপালন করছেন তিনি। দুই মেয়ের বয়স যথাক্রমে ২০ ও ১৮, আর ছোট ছেলেটি ১৩ বছর বয়সের। নেদারল্যান্ডসের উডেন শহরে বসবাসরত মোতালেব পরিষ্কার বাংলায় কথা বলেন। বাচ্চাদের নিয়ে তিনি প্রায়ই দেশে আসেন। ঝাল কম দিয়ে প্রায়ই দেশি খাবার রান্না করেন। চীন থেকে নেদারল্যান্ডসে মোজাইক পণ্য আমদানির ব্যবসাসহ তিনটি ম্যাসাজ সেলুনের মালিক মোতালেব।