Thursday 25 May 2023

বেহুলার ভাসান - ৩ ইন্দুবালা-মৃনালিনী

কল্লোল লাহিড়ী'র লেখা "ইন্দুবালা ভাতের হোটেল" এর ইন্দুবালা কোন ঐতিহাসিক বাস্তব চরিত্র নয় বটে কিন্তু হাজার হাজার বাস্তব চরিত্রের প্রতিনিধি  "ইন্দুবালা"। ইউরোপের লন্ডন শহরেই অনেক "সিলেটি কন্যা" পাওয়া যাবে যারা বিয়ে করে লন্ডনে এসেছে আর কখনো সিলেট ফেরত যায়নি বা যেতে পারেনি। লন্ডনে এরকম অনেক ভারতীয় মেয়েও আছে বলে শুনেছি। স্বপ্ননগরী নিউইয়র্কেও সেই হাল। "ইন্দুবালা" মানে শুধু দেশভাগ নয়, "ইন্দুবালা" মানে শুধু হিন্দু-মুসলিম নয়, "ইন্দুবালা" মানে শুধু বাঙাল আর ঘটি নয়, "ইন্দুবালা" মানে শৈশব-কৈশোর হারানো, ভাষা হারানো, স্মৃতি হারানো, নিঃস্ব হওয়া, রিক্ত হওয়া পৃথিবী জোড়া হাজার হাজার মানুষ।  বাড়িঘর সরেজমিনে না দেখে, ছেলে সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর না নিয়ে, এমনকি পরিবারের মেজাজ মর্জি জানাও গুরুত্বপূর্ন ভাবেনি ইন্দুবালার বাবা। তাঁর কাছে প্রাধান্য পেয়েছে, কোলকাতার শহর, ছেলের দালান বাড়ি কোঠা, মাস গেলে ক'টা টাকার মাইনের নিরাপত্তা। অচেনাপুরী দৈত্যপুরীতে মেয়েকে রেখে এসেছেন আর কখনো কোনদিন চোখের দেখাও দেখতে পাননি। তবে ইন্দুবালা সৌভাগ্যবতী আর সাহসী, তিনি সব প্রতিকূলতার মাঝেও বেঁচে ছিলেন, আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন এবং প্রবল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও খুন হয়ে যান নি।   বহু ইন্দুবালাই আছেন দেশ জুড়ে, বিদেশ জুড়ে, পৃথিবী জুড়ে, বাবার বাড়ি বা তার নিজের কৈশোরের বাড়ি আর কখনো চোখে দেখেনি, এমনকি বাবা শ্বশুরবাড়ি এলে বাবাকেও দেখতে পায়নি। কোলকাতার বিখ্যাত "ঠাকুরবাড়ি"র কথা ধরা যাক। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী ভবতারিণী কিংবা মৃণালিনী দেবী আর কখনো ফিরে বাপের বাড়ি যায়নি এমনকি তার বাবা তাকে দু'একবার দেখতে এলেও সেটিকে ঠাকুরবাড়িতে বিশেষ প্রীতির চোখে দেখা হতো না (ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলঃ চিত্রা দেব)। তো ভবতারিণী'র কি কখনো যশোরের সেই গ্রামের জন্যে মন কেমন করেনি? মা'কে দেখতে, ঠাকুমা দেখতে প্রাণ উথালপাথাল হয়নি? ভবতাতিনী কি ইন্দুবালা নন? নিজের নামটি পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিলো।  হুমায়ূন আহমেদ তাঁর নাটক "অয়োময়"তে দেখিয়েছেন, জমিদার বাড়ির বউদের বাপের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার নিয়ম নেই, সে যতোই জমিদার কন্যা হোক না কেন। বড় ঘর, বড় বংশ, টাকা পয়সা, মার্সিডিজ, ক্যাডিলাকের চটকে মেয়ের বাবা'রা মেয়ের মুখটা হারিয়ে ফেলেন। মেয়ের সুখ নিশ্চিত করতে গিয়ে মেয়ের জীবন বিপন্ন করে ফেলেন। সামাজিক প্রতিপত্তির কাছে হারিয়ে যায় মেয়ের নিরাপত্তা, মেয়ের আনন্দ।  ভারতবর্ষের ইতিহাস কন্যা বিসর্জনের ইতিহাস। ভারতবর্ষের ইতিহাস কন্যা ত্যাগের ইতিহাস। ভারতবর্ষের ইতিহাস কন্যা খুনের ইতিহাস। যুগে যুগেই বিভিন্ন রীতিতে, বিভিন্ন কায়দায়।   

Thursday 18 May 2023

বেহুলার ভাসান - ২

মনির আর রীমা ১৯৮৯ সাল, আমাদের পড়ন্ত কৈশোরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিলো, “শারমিন রীমা” হত্যাকান্ড। ৯ই এপ্রিল খুন হয় রীমা। সেসময়ের ঢাকা শহরে বিখ্যাত যেকজন গাইনী ডাক্তার ছিলেন তার মধ্যে ডাঃ মেহেরুন্নিসা ছিলেন অন্যতম আর ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ আবুল কাশেমের একমাত্র ছেলে মনির হোসেন। সর্বদিক থেকে হাই প্রোফাইল কেইস ছিলো, কি নেই এতে? পারিবারিক পরিচয়, বেশুমার টাকা, গ্ল্যামারাস নারী, প্রায় বলিউড মুভির ঘটনার মতোই। রোজ সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় তিন কলাম জুড়ে নানা ছবি সহ সংবাদ। সাধারণ পরিবারের মেয়ে বা বউ হলে হয়তো বড় জোর ভেতরের পাতায় ছবি ছাড়া একদিনের এক কলামের সংবাদ হতো “রাজধানীতে গৃহবধূ খুন”। তবে অনেক টাকা আর ক্ষমতা সত্বেও ছেলের মা পাবলিক অপিনিয়নের কাছে পরাজিত হয়ে বলেছিলেন, “আমার ছেলে যদি দোষী হয়, তবে তার ফাঁসি হোক”। বিচারে অবশ্য মনিরের ফাঁসিই হয়েছিলো। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সমাজ, সংসার, আদালতে শুধু একপক্ষকে টানা হ্যাঁচড়া করা হয় অন্যপক্ষকে ছেড়ে দেয়া হয় সিনেমার শেষ দৃশ্যর মত “কান্নাকাটি” করার জন্যে। বাস্তবতা হলো, সব ঘটনায় দুইটা পক্ষ থাকে, শুধু যে ছুরি মারে সেই দায়ী? ছুরি মারার ক্ষেত্র যারা প্রস্তুত করে তাদের কেন কোন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে না? রীমার পরিবারের কাছে সমাজের প্রশ্নঃ ১। মেয়েপক্ষ ছেলের পড়াশোনা যাচাই বাছাই করার কোন চেষ্টা করেনি। “এমেরিকা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এসেছে” ছেলে পক্ষের এই কথায় ঈমান রেখেছে। সার্টিফিকেট কিংবা ইউনিভার্সিটি কোনটাই নেড়েচেড়ে দেখতে যায় নি। ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ের বিয়ে দিয়েছে নন ম্যাট্রিক ছেলের সাথে। ২। মনিরের বন্ধু সার্কেল, লাইফ স্টাইল সম্পর্কে কোন খোঁজ নেয়নি। সেটা করলেও পড়াশোনা কিংবা স্বভাবচরিত্রের ব্যাপারটা উঠে আসতো। ৩। ছেলের নিজের ক্যারিয়ার চাকুরী-ব্যবসা নিয়েও তারা মাথা ঘামায় নি। সম্ভবতঃ ছেলের মা-বাবার ক্যারিয়ারই মেয়েপক্ষের জন্যে যথেষ্ট ছিলো। ৪। ছেলের অন্য সম্পর্ক, প্রেম ভালোবাসা ইত্যাদি নিয়েও খোঁজ নেয়া বাহুল্য মনে করেছে। ৫। বিয়ের তিন মাসের মাথায় ছেলেমেয়ের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে, তাও যে সে ঝগড়া না, ছেলে, মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে তারপরও, ছেলে আর “করবে না” বলাতে তারা ছেলেকে বিশ্বাস করে মেয়েকে ছেলের সাথে দিয়ে দিয়েছে। ৬। মেয়েকে ছেলের গার্জেনের সাথে ছেলের বাড়িতে দেয় নি, এই ঝগড়াঝাটির উত্তাল মুহূর্তে একা বেড়াতে নিয়ে যেতে দিয়ে দিয়েছে। মনির বুদ্ধিমান হলে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়েই “রীমা”কে শেষ করতে পারতো। আলাদা খুনের প্রয়োজন ছিলো না। ৭। যে ছেলে এতো ছোট বয়স থেকে বিভিন্ন নারীতে আসক্ত, বিয়ের তিন মাসের মধ্যে নতুন বউ রেখে পুরান বান্ধবী/বান্ধবীদের কাছে ছোটে, সে “আর যাবে না” বলাতে রীমার পরিবার সেটাও বিশ্বাস করেছে। কি করে এটা সম্ভব? তিন মাস যে এক বউতে কাটাতে পারে নাই, সে সারা জীবন কাটাবে কি করে? এই ঘটনার সবচেয়ে ট্র্যাজিক পয়েন্ট আমার কাছে যেটা লাগে, “রীমাকে তার মায়ের বাড়ি থেকে, মায়ের কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে দুই দিনের মধ্যে মেরে ফেলেছে”। শারমিন রীমার বাবা ছিলেন সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদ যিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। যে ভদ্রলোক একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন জাতি সত্ত্বার স্বপ্ন দেখার মত দূরদৃষ্টি রাখতেন তাঁর পরিবার এতোটা অদূরদর্শী হয় কি করে! মেয়েকে মরার জন্যে ঠেলে দিয়ে, মারা যাওয়ার পর পুরো পরিবার নিয়ে সবাই কাঁদতে বসে আর আইনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবী করে যেনো আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়। কেমনে? সব মায়েরা একই কাজ করে ভিন্ন ফলাফল আশা করে কোন মিরাকলের ভরসায়? মনিরের থেকে প্রায় দেড় গুন বয়সী বড় তিন সন্তানের জননী খুকুকে বিয়ে করে মনির যদি ডাঃ মেহেরুন্নিসার সম্মানের হানি করে ফেলে তাই তিনি তার “সোশ্যাল অনার” বাঁচাতে “মধ্যবিত্তের মেয়ে রীমা”কে বলির পাঁঠা বানিয়েছেন। “সোশ্যাল অনারে”র স্বীকার এখানে মনির আর রীমা’র দুটো জীবন। ***প্রায় পুরো লেখাটা স্মৃতি থেকে লিখছি, কিছু তথ্যের ভুল ভ্রান্তি হয়তো থাকতে পারে।***

Sunday 7 May 2023

জন লেনন ভাবান্তরঃ তানবীরা

পাঁচ বছর বয়স থেকে মায়ের কাছে শুনে আসছি, “সুখী” হওয়াটাই জীবনের মূল কথা। যখন স্কুলে গেলাম, আমাকে জিজ্ঞেস করলো, বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও? আমি বললাম, “সুখী” স্কুল আমাকে বললো, তুমি আমাদের প্রশ্নটা বোঝনি। আর আমি বললাম, তোমরা জীবন বোঝনি। “When I was 5 years old, my mother always told me that happiness was the key to life. When I went to school, they asked me what I wanted to be when I grew up. I wrote down ‘happy’. They told me I didn’t understand the assignment, and I told them they didn’t understand life.”

(দ্যা ওয়ার উইল এন্ড) --- মূলঃ মাহমুদ দারবিশ ভাষান্তরঃ তানবীরা হোসেন

তারপর একদিন যুদ্ধ থেমে যাবে। নেতারা নিজেদের মধ্যে হাত মেলাবেন। বৃদ্ধা মা তার মৃত ছেলের পথ চেয়ে অপেক্ষায় বসে রইবেন। প্রেমময় স্বামীর প্রতীক্ষায় রাত জাগবে মায়াবতী স্ত্রী। বীর বাবার পদধ্বনির জন্যে প্রহর গুনবে তাঁর সন্তানরা। কে বিক্রি করেছে আমার মাতৃভূমি, জানি না আমি কিন্তু কারা এর মূল্য দিয়েছে, সেটা দেখেছি।

বেহুলার ভাসান - ১

আমের রাজ্যের রাজকুমারী হীরাকুমারী, যিনি “হীরাবাই” নামেও পরিচিত, রাজস্থানের রাজপুত ঘরানার রাজা ভারমালের জ্যেষ্ঠ কন্যা। এটি পড়লে কেউ তাকে চিনতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। যদি বলি মোগল সম্রাট আকবরের স্ত্রী “যোধাবাই” তাহলে অনেকেই চিনবেন কিন্তু সত্যিই তিনি “যোধাবাই” নামে পরিচিত ছিলেন কিনা তা নিয়ে খোদ ঐতিহাসিকদেরই সন্দেহ আছে। ষোলশ শতাব্দীতে রাজনৈতিক সমঝোতার অঙ্গ হিসেবে হিন্দু রাজপুত রাজকন্যা যোধার সাথে মুসলমান মোঘল সম্রাট আকবরের বিয়ে হয়। বলা বাহুল্য, যোধার চরম আপত্তি ও অমতেই এই বিয়ে হয়। মহান সম্রাট আকবর সম্পর্কে ভিনসেন্ট স্মিথের মত আকবেরর উচ্চ প্রংশসাকারী যিনি “ Akbar- the great Mughal” রচনা করেছেন, তিনি কি লিখেছেন পড়ি, “ আকবর উচ্চতায় ছিলেন গড়পড়তা এবং বাম পায়ের কারনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। তার মাথা ডান কাঁধের উপর ঝুঁকে থাকত। তার নাক ছিল ছোট ও সামনের হাড় ছিল মোটা। তার নাসিকা গহ্বর দেখলে মনে হত তিনি রেগে আছেন। অর্ধেক মটর দানার সাইজের সমান একটি আঁচিল ছিল যা ঠোঁট ও নাসিকা গহ্বরের সাথে যুক্ত। সে দেখতে কালো ছিল।” জাহাঙ্গীর লিখেছেন, “আকবর নেশাগ্রস্ত অথবা সর্তকাবস্থায় তাকে শেখ বলে ডাকতেন।“ এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে আঁকবর একজন নেশাগ্রস্থ ছিলেন। আকবরের সহচর ইয়াকুবা লিখেছেন, আকবর এতই মদ পান করতেন যে মাঝে মাঝে অভ্যাগত অতিথিদের সাথে কথা বলতে বলতে তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন। তিনি মাঝে মাঝে তাড়ি (তালের রস দিয়ে তৈরী নেশা জাতীয় পানিয়) পান করতেন। যখন তিনি অতিরিক্ত পান করতেন তখন তিনি উম্মাদের মত আচরণ করতেন। “মহান আকবরের শিক্ষাগত যোগ্যতা” জাহাঙ্গীর লিখেছেন আকবর মাঝে মাঝে বিদ্বানদের মত আচরণ করতেন কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তিনি ছিলেন অক্ষর জ্ঞানহীন। আবুল ফজল আইন-ই- আকবরে লিখেছেনঃ ” শাহেন শাহ্ আকবরের ঘরের সামনেই একটা শুঁড়িখানা স্থাপন করা হয়। সেখানে অসংখ্য বণিতা জড়ো হত যা গণনা করা কঠিন হয়ে পড়ত। সভাসদগন মাঝে মাঝে নর্তকীদের বাড়ীতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু যদি কেউ কোন কুমারীকে তার বাড়ীতে নিয়ে যেতে চাইতেন তাহলে তাকে অবশ্যই আকবরে কাছ থেকে অনুমতি নিতে হত। কখনো কখনো যুবকদের মাঝে হাতাহাতি শুরু হয়ে যেত। একবার আকবর নিজেই কয়েকজন বনিতাকে ডাকলেন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের মধ্যে কে কুমারিত্ব ছেদন করতে চাও।” এখন কথা হচ্ছে, কীভাবে এতগুলো বণিতা একই সময়ে জড়ো হবে? অবশ্যই সেসকল ভাগ্যহীন নারীরা ছিল হিন্দু পরিবারের যারা যুদ্ধাবন্দী অথবা তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হত্যা করে সহায় সম্পত্তি লুট করা হয়েছে এবং আশ্র্য়হীন তাদের বন্দী করা হয়েছে। কারন ধারণা করা হয় মুসলিম রমণীদের পর্দার আড়ালে রাখা হতো এবং আকবর তার গৌরবজ্বল শাসনামলে সারাজীবন অসংখ্য হত্যা ও নারী অপহরণ করে ছিলেন। আকবরের শাসনামলে মিনা বাজার খুবই জনপ্রিয় ছিল যেখানে প্রতি নববর্ষ রাতে বিভিন্ন পরিবারের নারীদের হয় ফুসলিয়ে, প্রতারনা করে অথবা জোরপূর্বক জাঁহাপনার সম্মুখে হাজির করা হতো বেছে বেছে নেওয়ার জন্য। এ সমস্ত রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছে, আকবরের পয়সা খাওয়া তার পছন্দের পরগাছা ইতিহাসবিদের লেখা থেকে, কোন নিন্দুকের লেখা মিথ্যা অপবাদ নয় এগুলো। আবুল ফজল আকবরের হেরেম সম্পর্কে বর্ননা করেছেন, “সেখানে ৫০০০ নারী ছিল এবং প্রতিটি নারীর আলাদা থাকার ঘর ছিল” এছাড়াও আকবরের ৩৬ জনেরও বেশী স্ত্রী ছিল। তবে তার স্ত্রীদের মধ্যে সবচাইতে আলোচিত হলেন যোধাবাঈ। সম্রাট আকবরকে নিয়ে অনেক লেখাজোকা থাকলেও রাজকন্যা এবং মুঘল সম্রাজ্ঞী হীরাবাঈ মতান্তরে যোধাবাঈকে নিয়ে তথ্য পাবেন খুব সামান্য। তবে জানা যায়, নয়নকাড়া সুশ্রী হীরাবাঈ নিরামিষভোজী ছিলেন, রাজবাড়ির রাজ রঁসুই ঘরের খাবার তিনি খেতেন না, তাঁর রসুইঘর ছিলো আলাদা। রাজপ্রাসাদেই তাঁর আলাদা পূজা ঘর ছিলো। তিনি পড়াশোনা জানতেন, গানের তালিম ছিলো, নিখুঁতভাবে তলোয়ার চালানো, ঘোড়া চালানো জানতেন। মানসিকভাবে দু’জন প্রায় ভিনগ্রহের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও মদ্যপ, লুটেরা, চরিত্রহীন আকবর বাদশাহের কাছে রাজা ভাগলব তার মেয়ের বিয়ে দিতে কুন্ঠা করেননি। এটাকে কি বলা যায়? সতীদাহ না অনার কিলিং? লর্ড কর্নওয়ালিস, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায় লর্ড বেন্টিকের সাথে মিলে সরাসরি আগুনে “পুড়িয়ে মারা” বন্ধ করতে পেরেছেন কিন্তু “বাঁচিয়ে রেখে মেরে ফেলা”র প্রতিকার কে করতে পেরেছে? খুব নির্মোহ চোখে দেখলে “যোধা”র কি জীবনের ঝুঁকি ছিলো না এই বিয়েতে? বাবা কি মেয়েকে জীবনের ঝুঁকিতে ফেলে দেননি? ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন জীবনাচার, ভিন্ন খাদ্যভাসে মানিয়ে নেয়া এতোই সহজ? রাজনীতির কূটকৌশল না থাকলে প্রাণে বাঁচতেন যোধাবাঈ? যুগ যুগ ধরে পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে ঘটে চলা এই “অনার কিলিং” এর কাহিনী লিখতে শুরু করলে, কত সহস্র আরব্য রজনী লেখা যাবে? তানবীরা হোসেন ০৪/০৩/২০২৩