Wednesday 24 January 2018

দৃষ্টির সীমানায় না থাকলেই চেনা সব কিছু হারিয়ে যায়?

আপনি কাকে আপনার জীবনের কতটা ভাবলেন সেটা আসলে তত জরুরী কিছু নয়। কে আপনার সাথে কী রকম আচরন করলো, সেটার সাথে সমঝোতা করে নিলে, সুখ না হোক অন্তত স্বস্তি পাওয়া যায়।


লাইফ ইজ আ ওয়ান ওয়ে জার্ণি, নো চান্স টু টার্ণ ব্যাক। প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা, প্রত্যেকটা সম্পর্ক আলাদা। কোন নির্দিষ্ট প্রত্যশা রাখা ঠিক না। আঁকড়ে ধরার প্রবনতা থেকে মানুষ বার বার একই ভুল করে যায়। চিরন্তন বলে পৃথিবীতে কিছু নেই। সবকিছু বদলে যায়, বদলে যাওয়াই জীবন। আর সবচেয়ে বেশী বদলায় মানুষের মন, যদিও মানতে চাই না কিন্তু সত্য তাই।
যা কিছু হারিয়ে যায় তা ফিরে পাওয়া যায় না, সব শূন্যতাও কখনও পূর্ণ হবার নয়, হারানো সুর পিছু ডাকে বটে কিন্তু পিছু ডাকলে অমঙ্গল হয়, তাই শুধু সামনে তাকানো, গভীর অস্ত্বিত্বহীনতার দিকে তাকিয়ে তবুও দিন কেটে যায় – পাখির ডানায়
তবে এই হোক তীরে জাগুক প্লাবন
দিন হোক লাবন্য হৃদয়ে শ্রাবণ
ছুঁয়ে কান্নার রঙ ছুঁয়ে জোছনার ছায়া,
জানে কান্নার রঙ জানে জোছনার ছায়া।


মোবাইল থাকতে মোবাইলের মর্যাদা বোঝা যায় না। সম্পর্ক হারিয়ে গেলে বোঝা যায়, সেটা কতটা ছিলো।
দিনশেষে সম্পর্ক একটা গাছের মত, যার গোড়ায় দুজনকেই পানি দিতে হয়। গাছটার যত্ন নিতে হয়, তবেই গাছটা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে ডালপালা ছড়ায়।
সব সম্পর্ক কি তাই? লেন-দেন? না, কিছু সম্পর্ক আছে, বন আলো করে ফুটে থাকা নাম না জানা উজ্জল সেই ফুলটি’র মত। কেউ জল দেবে, আলো দেবে তার অপেক্ষায় সে নেই। সে নিজের আনন্দেই চারপাশ আলো করে ফুটে থাকে, সৌন্দর্য বিলায়, গন্ধ বিলায়। খুব কম, কিন্তু থাকে, কেউ কেউ অনেক দূর থেকেও কাছে থাকে।



Tuesday 2 January 2018

কুয়ো’র ব্যাঙ

কুয়ো’র ব্যাঙ ভাবে কুয়ো’টাই গোটা বিশ্ব। কিন্তু মাঝে মাঝে “নাস্তিক” বিজ্ঞানীদের আবিস্কার করা ইন্টারনেট দিয়ে ব্লগ, ফেসবুক, ইউটিউবে ঢুকে পরে। ব্যাঙের ধাঁ ধাঁ লেগে যায়। ওমা!!! কুয়ো’র বাইরেও আরো একটা গোটা পৃথিবী আছে! সে পৃথিবী’র ব্যাঙ গুলো নাকি অন্যরকম! বাপ-দাদাদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জন্ম থেকে মগজে ঢুকিয়ে দেয়া সে সব “বিশ্বাসের ভাইরাস” বাহিত গল্প গুলোকে ওরা বিশ্বাসতো করেই না বরং চ্যালেঞ্জ করে!।

কি আশ্চর্য! গল্প বিশ্বাস না করলেও ঐ ব্যাঙ গুলো দেখতে ঠিক সাধারণ আর সব ব্যাঙের মতই। জানা না থাকলে কেউ আলাদাই করতে পারবে না! কি অদ্ভূদ না? গায়ের রঙ, মাথা’র চুল, হাঁটা, চলা, বলা সব একদম ঠিক ঠিক সাধারণ। কেটে গেলে এদের গা থেকেও রক্ত পরে আর অবাক কান্ড হলো, এদের রক্তের রঙ ও লাল, দুঃখ পেলে এরাও কাঁদে, এদেরও পরিবার আছে, বাবা-মা আছে। এরা’ও প্রেমে পরে, প্রেমে প্রতারণাও করে, আজকাল শোনা যায়, টাকা পয়সা নিয়েও নাকি মানুষের সাথে নয়-ছয় করে। পুরো আর সাধারণ দশটা ব্যাঙেরা যা করে, এরাও তো তাই, তাহলে এরা নিজেদের আলাদা দাবী করে কেন? আহা! এসব কি এদের নাকি? এগুলো সব আমাদের করায়ত্ত্ব করা কলাকৌশল। ধর্মের আফিম গুলিয়ে দিয়ে যুগ যুগ ধরে এগুলো আমরা করে এসেছি, আমরাই করবো, এসব একান্তই আমাদের উত্তরাধিকার। তোরা করলে অন্য কিছু করবি বাপু যা এলিয়েন’রা করে সাধারণরা নয়। তোরা তো আসলে এলিয়েন’ই, এমন অদ্ভূদ কি ব্যাঙ হয়!

শান্তির বারতা প্রচার করতে যেয়ে যুগে যুগে ধর্ম বারবার অশান্তিই এনেছে, নিয়েছে প্রাণ। এদের হাতে নিহত হয়েছে ব্রুনো, হাইপেশিয়া, আর্কিমিডিস, সক্রেটিস, এরিস্ট্যাটল কিন্তু এদের কর্ম এখনও বর্তমান। এদের কাজ কে আজ অব্ধি কেউ ভুল প্রমাণ করতে পারে নি, পায় নি এদের মধ্যে কোন লোক ঠকানো কিংবা প্রতারণা’র প্রমাণ যদিও তাঁদেরও নিশ্চয় নিজস্ব আনন্দ-বেদনার কাব্য ছিলো। হায় সেলুকাস, দিনরাত “অবিশ্বাসী”দের গালাগালি করতে ঘরে বসে যেই মাধ্যম গুলো ব্যবহার করা হয় তার কোনটাই ধর্মের দান নয়, অবিশ্বাসীদের অবদান। মনের কুয়ো থেকে বের হতে পারলে ব্যাঙ জানতে পারতো, “অন্ধের কাছে দুধ কাঁচির মত বাঁকা হলেও, যার দৃষ্টি আছে তার কাছে দুধ দুধের মতই তরল।“  

কিন্তু এই এলিয়েনদের নিয়ে কুয়ো’র ব্যাঙদের যুগ যুগ ধরেই কৌতুহল অনেক। ওরা যখন ভুল বলছে, ভুল করছে, ওদের কথায় যখন কোন সত্যতা নেই তাহলে ইগনোর করে দেন ওদেরকে। জার্মানী’র যখন পাকা পায়খানা আর বদনা বেশি হয়ে গেছে, বাংলাদেশীদের না দিয়ে ওরা শান্তি পাচ্ছে না, তাহলে ওদেরকে ওখানেই যেতে দেন, সমস্যা কি আপনাদের? সৌদি যেয়ে তো আর পবিত্র ভূমি’র পবিত্রতা নষ্ট করছে না। পৃথিবীতে নিশ্চয়ই আরো বিষয় আছে যেগুলো বোকা, লোভী নাস্তিকদের কার্যকলাপ থেকে অনেক বেশি আকর্ষনীয় তো সেদিকেই মনোযোগ দিন না, সকাল বিকাল ঐ হতভাগাদের পিন্ডি না চটকিয়ে বুঝি আরাম হয় না? “একই ভাষায় কথা বললে, একই রকম ভাবতে’ও হবে, নইলেই কল্লা দিয়ে দিতে হবে?”

আর আছে এলিয়েনদের জ্ঞানের বহর পরিমাপ করার বিভিন্ন দাড়িপাল্লা। কলোনিয়াল মানসিকতায় ইংরেজি বলা হলো শিক্ষা দীক্ষা মাপার প্রধান ইউনিট। ভাল ইংরেজি বলতে পারে না মানে কিছুই জানে না। আমার জীবনে আমি যত গুলো বই পড়েছি, তার মধ্যে দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর এর লেখা, “সত্যের সন্ধানে” ও “সৃষ্টি’র রহস্য” মাইল ফলক, এত সহজ ভাষায়, এত অকাট্য যুক্তি, কজন ভাবতে পারেন আর লিখতে পারেন। কিন্তু আজকাল আমার মনে হয়, তিনি ইংরেজি বলায় ফ্লুয়েন্ট ছিলেন কি! নইলে তো তাঁরও খবর হ্যাজ হয়ে যেতো।

হায়রে ভজনালয়,
তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়! 

            মানুষেরে ঘৃণা করি
কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি!
মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কিতাব সেই মানুষেরে মেরে।
পূজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল! -মূর্খরা সব শোনো,
মানুষ এনেছে গ্রন্থ;- গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো ।