Friday 30 August 2019

সেলুলয়েডে বন্দি কিছু অমূল্যগাথা

https://www.bhorerkagoj.com/2019/07/25/%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%A1%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%9B%E0%A7%81-%E0%A6%85%E0%A6%AE%E0%A7%82/?fbclid=IwAR3lBVScI6uixR4vGjk3nJXHzDFWPRD5Z7Fkc5-F2z-KRoxIMxxVKemrNyQ

দস্যু বনহুর তারপর মাসুদ রানা অনেকদিন পড়েছি, তখন স্কুলের ওপর ক্লাসে পড়ি, আর একটুখানি ডিঙোলেই কলেজ, কড়াকড়ি বাঁধাবাঁধি নিয়মের জীবন থেকে মুক্তি, পাখা মেলে আকাশে উড়বো সেই স্বপ্নে দিন-রাত্রি বিভোর। তখন আমি খুব উপন্যাসে মজে আছি, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, আশাপূর্ণা দেবী, শংকর ছেড়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু, বুদ্ধদেব গুহ আর সমরেশ মজুমদার কাজ করেন ক্রেজের মতো। ঠিক সেই সময় হাতে এসে পড়ে ছোটগল্প সংকলন ‘শালগিরার ডাকে’, শুরু করার পর আর হাত থেকে নামিয়ে রাখতে পারছি না। একটানে পড়ে যাচ্ছি, আবার মনে হয় ঠিক করে হয়ত বুঝে উঠতে পারিনি, আবার পেছন থেকে পড়ছি। পড়ছিলাম নাকি আমিও সেই আদিবাসীদের সাথে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। জীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি কাটিয়েছেন আদিবাসীদের সাথে, ভৌগোলিক পরিবেশ-পরিস্থিতি, অবস্থান, পার্থিব জীবনযাপন প্রণালীসমূহ নিয়ে তাঁর দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি স্থান পেয়েছে তাঁর কলমে। সেসকল কারণে তাঁর লেখা হয়েছে ঐতিহাসিক দলিল। ইতিহাসের সমান্তরাল তিনি রচনা করেছেন জনবৃত্ত অন্বেষণের বিকল্প ইতিহাস। উল্লেখযোগ্য কারণেই তাঁর লেখায় নারী চরিত্রগুলো গুরুত্ব পেয়েছে অনেক বেশি। আদিবাসী নারীদের মধ্যে প্রতিবাদের প্রবণতা অনেক বেশি। আদিবাসীদের বঞ্চনা ও বিভিন্ন সমস্যার কথা স্থান পেয়েছে তাঁর গল্পগুলোতে। শুরু হলো তাঁর সাথে ভ্রমণ, ছোটগল্প দিয়ে শুরু করে উপন্যাসে-


উনিশ ছাব্বিশ সালের চৌদ্দই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করে বিশিষ্ট সাহিত্যিক বাবা মনীষ ঘটক আর খ্যাতনামা চিত্রপরিচালক কাকা ঋত্বিক ঘটকের সাথে সাংস্কৃতিক আবহমণ্ডলে বড় হয়েছেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে তখন পুরুষদের দোর্দণ্ড প্রতাপ আর তাদের সাথে লড়াই করে যাচ্ছিলেন আশাপূর্ণা দেবী, বেগম সুফিয়া কামাল, নবনীতা দেব সেন আর তার সাথে যোগ হলো আরো একটি দৃঢ় নাম মহাশ্বেতা দেবী। চৌদ্দ জানুয়ারি উনিশ ছাব্বিশ সালে প্রতিভাময়ী এই লেখিকার জন্ম হয় বাংলাদেশের ঢাকায়। মহাশ্বেতা দেবী আজীবন সংগ্রামী চিন্তা চর্চা করেছেন এবং দেশ ও মানুষ সর্বপ্রকার শোষণমুক্ত হবে সেই লক্ষ্যে সাহিত্য রচনা করেছেন। তিনি মনে করতেন সাহিত্যে শুধু হৃদয়-গ্রাহ্যতা নয়, মস্তিষ্ক-গ্রাহ্যতাও চাই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে দুটি কবিতা উপহার দিয়েছিল। লেখালেখির বিষয় নির্বাচন, বস্তুনিষ্ঠতা আর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তার সংবেদনশীলতা ছিল কিংবদন্তি পর্যায়ের। তাঁর প্রথম দিকে লেখা উপন্যাস ‘তিমির লগন’ ও ‘রূপরেখা’তে চরিত্রগুলো যেহেতু কোনো সামাজিক গুরুত্ব বহন করে না, উপন্যাসগুলো আর দশটা উপন্যাসের মতোই, পাঠককে যেহেতু আলাদা কোনো বার্তা দেয় না, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, এই উপন্যাস দুটো তিনি আর ছাপাবেন না। নিজের সাহিত্যকর্মের নিজেই ছিলেন কঠিন সমালোচক, সমাজ সচেতনতা, ইতিহাস নির্ভরতা, লেখনীর মাধ্যমে সমাজকে বিশেষ একটি বার্তা দেয়া, বস্তুনিষ্ঠতা তার লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দেয়।


তার লেখায় সমাজের প্রান্তজনের কথা এসেছে বারবার। গভীর সামাজিক ও মানবিক তাৎপর্য থাকার কারণে তাঁর লেখাগুলো পেয়েছে আলাদা স্থান। ‘হাজার চুরাশির মা’ তাঁর সবচেয়ে আলোচিত উপন্যাস হলেও ‘কবি বন্দ্যঘটি গাঞির জীবন ও মৃত্যু’ উপন্যাসটি একটি ব্যতিক্রমী উপন্যাস এবং আদিবাসী জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাসের শুরুও এ উপন্যাস থেকেই বলা যায়। মহাশ্বেতা দেবী দীর্ঘ জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন যে জনমানুষের সাথে, তাদের বড় একটি অংশ হলো প্রান্তিক দলিত জনগোষ্ঠীর গোত্রভুক্ত। তিনি বাংলা সাহিত্যে সর্বাধিক আদিবাসী জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাস রচনা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। জীবনকেন্দ্রিক উপন্যাসের ইতিহাস থেকে চরিত্র নির্মাণ করেছেন। আদিবাসী সংগ্রামের এবং ভারতীয় সংগ্রামের ইতিহাস থেকে বিপ্লবী এবং বীরের চরিত্র নিয়ে আসেন। যা বাংলা সাহিত্যের সংগ্রামী চরিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করে। এহেন ক্ষুরধার লেখার জন্য সবার নজরে এসেছেন তিনি বারবার। তার লেখা গল্পকে নাট্যরূপ দিয়ে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে, হয়েছে দেশে-বিদেশে পুরস্কার জিতে নেয়া দুর্ধর্ষ কিছু কালজয়ী সিনেমা।


‘লায়লি আসমানের আয়না’ ছোটগল্পটি অবলম্বনে উনিশ আটষট্টি সালে পরিচালক হারনাম সিং রাওউয়ালি তৈরি করেন ‘সাংঘার্শ’। সাঞ্জীব কুমারের প্রথম ছবি, এছাড়াও ছবিটিতে আরো অভিনয় করেছেন, দীলিপ কুমার, বৈজয়ন্তীমালা। নওশাদের সংগীত পরিচালনায় এই ছবিটিকে আজো বলিউডের ক্লাসিক হিসেবে ধরা হয়। গ্রামে আসা ধনী পথচারীদের কালি মাতার চরণে খুন করে চলা পণ্ডিতের সাথে তার পুত্রের দ্বন্দ্ব নিয়ে শুরু হয় এই সিনেমা। ব্রিটিশ ভারতে ফকির এবং সাধুদের দাপট ছিল রীতিমতো বিস্ময়কর। কোম্পানির শাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়েই তারা তাদের লুটতরাজ এবং হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে গিয়েছে পরাধীন ভারতবর্ষের বুকে। বিশেষ করে বেনারসে ফকির এবং সেখানকার সাধু-সন্তদের মধ্যবর্তী বিরোধ ছিল ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। নানা পুরস্কার জিতে নেয়া এই সিনেমাটি দিলীপকুমার প্রেমীদের পছন্দের তালিকায় আজো প্রথমদিকে অবস্থান করে।


কল্পনা লাজমীর পরিচালনায় তার গল্প থেকে উনিশ তিরানব্বই সালে তৈরি হয় ‘রুদালি’। ভূপেন হাজারিকার সংগীত পরিচালনায়, গুলজারের লেখা আর আশা ভোসলের গাওয়া, ‘বিতেনা বিতেনা র?্যয়না’ আজো সংগীত প্রেমীদের কানে কানে গুঞ্জে। রাজস্থানের এক হতভাগী মেয়ের জীবন নিয়ে লেখা এই গল্পটি, পিতৃহীনা শনিচরীকে তার মাও ফেলে চলে যায় এক নাটকের লোকের সাথে। গ্রামে যত অঘটন ঘটে তার জন্য গ্রামসুদ্ধ সব লোক শনিচরীকে দায়ী করে। উঁচু শ্রেণির কেউ মারা গেলে, বাইরে বসে বিলাপ করে বাড়ির মেয়েরা কাঁদতে পারে না, সামাজিক কারণে তখন নীচু জাত থেকে কান্নাকাটি করার জন্য মেয়ে ভাড়া করে আনা হয়। ভিখনী সেরকম একজন, তার সাথে পরিচয়ের পরে, নানা ঘাতে প্রতিঘাতে, শনিচরীও একজন পেশাদার রুদালিতে পরিণত হয়, রুদালিকে তার পেশা হিসেবে গ্রহণ করে। অসংখ্য পুরস্কার জেতা এই সিনেমাটির কথা মনে হয় কোনো সিনেমাপ্রেমীই আজো ভোলেননি।


উনিশ আটানব্বই সালে গোবিন্দ নিহলানি তাঁর উপন্যাস ‘হাজার চুরাশির মা’ অবলম্বনে তৈরি করেন ‘হাজার চৌরাশি কি মা’। সত্তর দশকের কলকাতায় চারু মজুমদারের ইশতেহারের ডাকে নকশালবাড়ি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল অন্যান্য অনেক তরুণের মতো কলেজপড়ুয়া ব্রতী। সুজাতা খুব ঠাণ্ডা স্বভাবের, ধর্মপ্রাণা, সংসারী, হিন্দু, বাঙালি রমণী, যিনি স্বামী আর ছেলে নিয়ে আরো অনেকের মতো খানিকটা নীরব অহংকারে ভোগেন। ব্রতীকে নিয়ে বাবা-মা দুজনেই খুশি, তার কলেজের পড়াশোনার খবর রাখেন। নিরিবিলি এই বাড়িটিতে একদিন টেলিফোন বাজে ঝনঝন শব্দ করে, লেখাপড়ায় ভালো, আদরের সন্তান ব্রতী নয় বরং হাজার চুরাশি নম্বর লাশের দায়িত্ব বুঝে নিতে বলা হয় তার মা, সুজাতাকে। ব্রতী মারা যাওয়ার পর সুজাতা ছেলে কোথায় যেতো, কাদের সাথে মিশতো সেসব খুঁজতে শুরু করেন। ছেলের আদর্শ জানার পর সিদ্ধান্ত নেন এই সংগ্রামে তিনি নিজে যুক্ত হওয়ার। কলকাতায় ষাট থেকে আশির দশকের মধ্যে বামপন্থি নকশালদের আন্দোলনে পুলিশি অত্যাচার এবং গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছিল এরকম অসংখ্য তরুণ। গুমোট এই পরিস্থিতির বেদনাবহুল প্রেক্ষাপট পরিষ্কারভাবেই ধরা পড়েছিল এই সিনেমাটিতে। প্রায় আঠারো বছর পর সেলুলয়েডের জগতে ফিরে শোকাহত সেই মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জয়া বচ্চন। ‘হাজার চৌরাশি কা মা’ সেবার অগণিত পুরস্কারের সাথে আরো পেয়েছিল সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।


দীর্ঘ লেখনি জীবনে মহাশ্বেতা দেবী বর্ণ প্রথা নিয়ে লিখেছেন অনেক। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ছিল তার লেখার প্রধান উপজীব্য। তেমনি আরেকটি গল্প ‘বায়েন’ অবলম্বনে মারাঠি নির্মাতা চিত্রা পালেকার নির্মাণ করেন ‘মাটি মায়’ সিনেমাটি। দুহাজার সাত সালে নন্দিতা দাসের অনবদ্য অভিনয়ে ফুটে ওঠে সমাজের চাকচিক্যের আড়ালের অন্ধকার দিকটি। বাবা মারা গেলে পরিবারে আর কোনো পুরুষ না থাকায় পরিবারের দীর্ঘ সময়ের প্রথা বজায় রাখতেই গোরখোদকের পেশা বেছে নিতে হয় নিম্ন বর্ণের মেয়ে চান্দিকে। কিন্তু সবকিছু বদলে যায়, যখন চান্দির কোলে আসে সন্তান। লাশের কবর খুঁড়তে হাত কাঁপে চান্দির, ছোট শিশুদের মৃতদেহগুলোকে দেখে গা শিউরে ওঠে তার। এদিকে নিজের কাজ ছেড়ে দেয়ার আকাক্সক্ষা পোষণ করায় চান্দির ওপর নেমে আসে গ্রামবাসীর অত্যাচার। মৃত শিশুদের সে দুধপান করাচ্ছে, এমন অপবাদ জুটে যায় তার নামে। ‘ডাইনি’ আখ্যা দিয়ে তার ওপর চালানো হয় নির্মম অত্যাচার। এমনকি তার স্বামী নারসুও তাকে বুঝতে ব্যর্থ হয়, তার কষ্ট, নৈতিকতা কিছুই সে অনুধাবন করতে পারে না। নন্দিতা দাসের প্রথম মারাঠি সিনেমা এটি যাতে তিনি মহারাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার গ্রহণ করেন। আর সিনেমাটি দেশে ও বিদেশে নানা পুরস্কার অর্জন করে।


মহাশ্বেতা দেবীর ‘চোলি কে পিছে’ ছোট গল্প থেকে আর একটি অবিস্মরণীয় সৃষ্টি ‘গাঙ্গোর’। দুহাজার দশ সালে ইতালীয় পরিচালক ইতালো স্পিনেলি পরিচালনা করেন এই ছবিটি, ছবিটি বহু ভাষায় অনুবাদ করে দেখানো হয়েছে। ভারতের পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে এই চলচ্চিত্রটি বাংলা, সাঁওতালি ও ইংরেজি ভাষায় দৃশ্যায়ন করা হয়। পরে এটি ইতালীয় ভাষায় ভাষান্তর করা হয়। পঞ্চম রোম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হলে, দর্শকবৃন্দ দাঁড়িয়ে চলচ্চিত্রটির কলাকুশলীদের অভ্যর্থনা জানান। উপেন একজন অভিজ্ঞ চিত্র সাংবাদিক, সে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার একটি অনুন্নত অঞ্চলে আসে, সেখানকার দরিদ্র নারীদের ওপর সহিংসতা সম্পর্কে প্রতিবেদন লিখতে। গাঙ্গোর তার সন্তানকে দুধপান করাচ্ছিল এমন সময় উপেন সেখানে এসে পড়ে। উপেন তার প্রতিবেদনে ব্যবহার করার জন্য গাঙ্গোরের সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে। ছবিটির কথা গ্রামবাসী জানতে পারলে তারা গাঙ্গোরকে গ্রাম থেকে বের করে দেয়। পুলিশ তাকে জোর করে থানায় নিয়ে যায় ও সেখানে তার গণধর্ষণ হয়। এদিকে, উপেন তার মূঢ়তা উপলব্ধি করে এবং তীব্র নিপীড়িত সহিংসতার মধ্য দিয়ে তার খোঁজে পুরুলিয়া ফিরে যায়। কিন্তু গাঙ্গোর সেখানে ছিল না। উপেন, আরো জোর দিয়ে গাঙ্গোরকে খুঁজতে থাকে, একদিন তাকে খুঁজে পায়; কিন্তু ততদিনে গাঙ্গোরের ঠাঁই হয়েছে পতিতালয়ে। গাঙ্গোর এবার নিজে তার ব্লাউজটি খুলে নিয়ে উপেনকে ছবি তুলতে অনুরোধ করে, জানায় যে, পুলিশ ধর্ষণের সময় তার শরীরকে কীভাবে জন্তুর মতো উপভোগ করেছিল। ঘটনাটি গণমাধ্যমের মনোযোগে আসে এবং গাঙ্গোরের মামলাটি আদালত পর্যন্ত পৌঁছায়। এই মামলার শুনানির দিন, সমাজকর্মী মেধার নেতৃত্বাধীন আদিবাসী নারীদের একটি দল পুলিশের নির্মমতার বিরুদ্ধে আদালত প্রাঙ্গণে তারা তাদের ব্লাউজ খুলে প্রতিবাদ জানায়। নারীর প্রতি পুরুষ সমাজের নৃশংসতার এই গল্পটি, সেই দগদগে ঘায়ের কথা মনে করিয়ে পীড়া দেয় এই সিনেমাটিতে। অন্যান্য পুরস্কারের সাথে তেরতম সিনেম্যানিলা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে, এটি ফিলিপিনো পরিচালক লিনো ব্রোকার পর সবচাইতে বেশি পুরস্কার জয় করে।


ভারতকে অগ্রসরবর্তী একটি দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলেও মহাশ্বেতা দেবী এই পরিচয়কে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। সারা ভারত জুড়ে নারীদের প্রতি অত্যাচার আর ধর্ষণের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাগুলো তাকে নাড়া দিত বারবারই। তার লেখা উপন্যাস, গল্প, তা থেকে বানানো সিনেমা প্রত্যেকটিই সারা পৃথিবী থেকে অসংখ্য সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করেছে। বাংলা ভাষা, ভারতের অন্যান্য ভাষা, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক খুব কম পুরস্কার আছে যেটা তিনি পাননি এবং আনন্দের কথা হলো বেশির ভাগই তিনি পেয়েছেন তার জীবদ্দশায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (বাংলায়), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার, র?্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, ভারতের চতুর্থ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান যথাক্রমে পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভূষণ লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান বঙ্গবিভূষণে ভূষিত করেছিল।

দুহাজার ষোল সালের তেইশে জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মহাশ্বেতা দেবী কলকাতার বেল ভিউ ক্লিনিকে ভর্তি হন, আটাশে জুলাই একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে তাঁর মৃত্যু ঘটে।

তানবীরা তালুকদার
১০/০৭/২০১৯