Saturday 27 February 2021

“পাভা কাধাইগাল” ---- "রামপ্রাসাদ কি তেহরভি" --- দ্যা সিনার

তামিল ভাষার চারটি বাছাই করা নৃতাত্ত্বিক গল্প নিয়ে নেটফ্লিক্সের সিনেমা “পাভা কাধাইগাল” দেখলাম। পরিচালনায় ছিলেন সুধা কঙ্গারা, গৌতম মেনন, ভেত্রীমরণ এবং ভিগনেশ শিভান। দেখতে দেখতে আসামিজ পরিচালক ভাস্কর হাজারিকার “কথানদী” সিনেমাটির কথা মনে পড়লো। গল্প বলার ভঙ্গীটা অনেকটা একই রকম। ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে চারটি মেয়ের গল্প কিন্তু কোথায় যেনো আবার একই সূতায় গাঁথা। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পিতামাতার হাতে চারটি মেয়ের অপমৃত্যু ঘটে। যাকে সহজ ইংরেজিতে বলা হয় “অনার কিলিং”। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, যে দেশের স্বাতী মোহন মঙ্গলে পা রেখেছে সেই দেশেই আজও এই পরিস্থিতি বর্তমান। ইন্ডিয়া টুডের জান্নি কে পাঁচের মধ্যে সিনেমাটিকে তিন দিয়েছেন এবং বলেছেন "পাভা কাধাইগাল” আমাদের বর্ণ-ভিত্তিক, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা এবং অনার কিলিং এর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়, যদিও ছবিটি কোনও সমাধান দেয় না তবে সমাজে যে অন্যায় কাজ হয়ে চলেছে তার প্রমাণ দেয়। বিহাইন্ডউডস পাঁচের মধ্যে সিনেমাটিকে তিন দিয়ে লিখেছে, "নেটফ্লিক্সের প্রথম তামিল নৃবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সঠিক জায়গাগুলোতে আঘাত করেছে এবং দর্শকদেরও তাদের পাপের জন্য একটি আয়না রাখা উচিত।" দ্য নিউজ মিনিটের সওম্য রাজেন্দ্রন পাঁচের মধ্যে সাড়ে তিন দিয়ে বলেছেন, “পাভা কাধাইগাল একটি হিংস্র বর্ণবাদী সমাজের এক অবজ্ঞাপূর্ণ চেহারা উপস্থাপন করেছে, এ প্রসংগটি পর্দায় খুব কমই উপস্থাপন করা হয়েছে, নারী দেহের সাথে কীভাবে জাতি, লিঙ্গ, সম্মান জড়িত তা দেখাতেও এটি সফল।
আর একটি সিনেমা দেখলাম, অভিনেত্রী সীমা পাওয়ারের চিত্রনাট্য আর পরিচালনায় “রামপ্রাসাদ কি তেহরভি”। নাসিরুদ্দিন শাহ অলটাইম ফেভারিট আর সাথে আছে অন্য ফেভারিট কঙ্কনা সেনশর্মা। তারকাবহুল সিনেমা যদিও বাকিদের কথা লিখলাম না। ভারতীয় উপমহাদেশের যেকোন কাস্ট এন্ড ক্রিডে আপনি বিলঙ করেন না কেন, এই সিনেমায় আপনি নিজের, সমাজের, পরিবারের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাবেনই। দুই হাজার উনিশ সালে “মুম্বাই ফিল্ম ফেস্টিভালে” এই সিনেমার প্রিমিয়ার হয়েছিলো। ফিল্ম কম্পেনিয়নের প্রধান সম্পাদক অনুপমা চোপড়া লিখেছেন, “এখানে কোনও ভিলেন নেই। মানুষের বোঝাপড়া, সম্পর্কের ভাঙচুর আর তারপরও আমাদের সুখী হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।“
আড়ম্বরহীন নিরিবিলি বস্তুনিষ্ঠ সিনেমা দেখতে যারা ভালবাসেন তারা মিস করবেন না যেনো। বন্ধুর কুপরামর্শে দেখলাম নেটফ্লিক্সের সিরিয়াল “The Sinner”। IMBD রেট ৭.৯/১০। আমেরিকান এনথোলজি ড্রামা টেলিভিশন সিরিজ যা ইউএসএ নেটওয়ার্কের জন্য ডেরেক সিমন্ডস বানিয়েছেন। এনথোলজি সিরিজ দেখায়, সাধারণ মানুষেরা কিভাবে এবং কেন নির্মম অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বেস্ট মিনিসিরিজ অফ টেলিভিশনের জন্যে দুই হাজার আঠারোতে গোল্ডেন গ্লোব এওয়ার্ড নমিনেশান পেয়েছিলো। এছাড়া আরও তেরটি বিভিন্ন এওয়ার্ডের জন্যে নমিনেশান পেয়েছে। মোট তিনটি সিজন, তিনটি ভিন্ন ক্রাইমের ওপর করা হয়েছে। প্রতিটি সিরিজে প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের আটটি এপিসোড আছে। ফোর্থ সিজনের কাজ চলছে। শুরু হয়েছিলো Petra Hammesfahr এর “দ্যা সিনার” উপন্যাসকে ভিত্তি করে,সত্যি ঘটনা নয়। তিনটিতেই ডিটেক্টিভ হ্যারি এমব্রসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন উইলাম জেমস পুলম্যান যিনি বিল পুলম্যান হিসেবেই বেশি পরিচিত। রিচার্ড গেরের মত এপিলিং দেখতে এই ভদ্রলোকের মা ডাচ। সিরিজ দেখতে দেখতে বিলে মুগ্ধ না হওয়া অসাধ্য। যারা ডার্ক থীম ভালবাসেন তাদের জন্য “নট টু মিস”। ব্যক্তিগতভাবে আমি দুই নম্বর সিজনটা বেশি এঞ্জয় করেছি। আর ক্রাইম থ্রিলার যে শুধু বই আর সিরিজে থাকে না তার প্রমাণ হলো, কিছুদিন আগে গুলশানের ঝিলিককে হত্যার পর, এক্সিডেন্ট সাজিয়ে লাশ দেখানোর নাটক কিংবা বাবুল আক্তারের নাটক। সিরিজের থেকে কম রোমাঞ্চকর কি? হ্যাপি ওয়াচিং

Tuesday 23 February 2021

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – তেইশে ফেব্রুয়ারী

গত বছর সাতাশে ফেব্রুয়ারি নেদারল্যান্ডসে প্রথম অফিসিয়াল করোনা পেশেন্ট পাওয়া যায়। “স্বাভাবিক জীবন” কথাটা এখন ব্র্যাকেটে বন্দী। লকডাউন–কার্ফিউ এর পর কতদূর কি করা এখন স্বাভাবিক জীবন হবে? হাসপাতালে ভীড় কমেনি, কমেনি সংক্রমণের হারও। যদিও সংক্রমণ দশ হাজার থেকে চার হাজারে নেমেছে কিন্তু এখনো এক দশমিকের ওপর যার মধ্যে ক্ল্যাসিক করোনার চেয়ে ব্রিটিশ করোনার হার বেশী। এই স্থবির জীবন আর কতদিন? শুধু অর্থনৈতিক ভাবে নয়, সাংস্কৃতিক ও মানসিকভাবেও ছোটবড় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আর তাই ঝুঁকি নিয়েই সামনের দিকে এগোনোর কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু বাসায় দিনে একজনের বেশি মেহমান আর কার্ফিউর নিয়ম আপাতত পনেরই মার্চ পর্যন্ত চালু থাকবে। মাস্ক পরা, দেড় মিটার ডিসট্যান্স, বাসা থেকে কাজ এগুলোর সাথে কোন আপোষ নয়। এতবার বলার পরেও দেখা যায়, চারজনের মধ্যে একজন করোনা পজিটিভ মানুষ তবু কুকুরকে নিয়ে হাঁটতে বের হচ্ছে কিংবা সুপারমার্কেটে বাজার করতে যাচ্ছে। আট তারিখের প্রেস কনফারেন্সে পনের মার্চের পরের নিয়মগুলো জানিয়ে দেয়া হবে। প্রিমিয়ে রুতেঃ সমস্ত বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু ছাত্রদের পড়াশোনার জন্যে নয়, সামাজিক ও সংবেদনশীল অনুভবের জন্যেও জরুরি। পহেলা মার্চ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে অন্তত একদিন স্কুলে যাবে যতটা সম্ভব দায়িত্বশীলতার সাথে। তেসরা মার্চ থেকে চুল কাটার সেলুন, ম্যাসাজ পার্লার, নেইল সেলুন, বিউটি সেলুন, ড্রাইভিং স্কুল ইত্যাদি সব খুলতে পারে, শুধু যৌনকর্মীরা এর আওতায় পরবে না। তেসরা মার্চ থেকে দোকান খোলা যাবে, যেখানে শুধুমাত্র তারাই কেনাকাটা করতে যেতে পারবে, যারা অন্তত চার ঘন্টা আগে এপয়ন্টমেন্ট নিয়েছে। প্রতি ফ্লোরে মাত্র দুইজন প্রবেশ করতে পারবে। দিনে ছয়বার দশ মিনিট ম্যাক্সিমাম একজন ক্রেতা কোন দোকানে অবস্থান করতে পারবে। মাস্ক আর দেড় মিটারের বাধ্যবাধকতা তো থাকছেই। কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ নয় তবে তেসরা মার্চ থেকে সাতাশ বছর বয়স পর্যন্ত সবাই যার যার নিজের টিম আর ক্লাবের সাথে বাইরে খেলাধূলা করতে পারবে। ভাইস প্রিমিয়ে হুগো দ্যা ইয়ংঃ যতদিন না যথেষ্ঠ মানুষকে ভ্যাক্সিন দেয়া হচ্ছে ততদিন নিয়ম পালন আর সাবধানতার কোন ব্যাতায় নেই। আবার সবকিছু বন্ধ করে দেয়ার জন্যে বাধ্য হওয়ার চেয়ে আস্তে আস্তে খুলে দেয়ার দিকে যাওয়ার জন্যেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। এক মিলিয়ন মানুষকে ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছে। ভ্যাক্সিনের প্রাপ্যতার ওপর নির্ভর করে মধ্যে মার্চের মধ্যে দুই মিলিয়ন আর মার্চের শেষের মধ্যে তিন মিলিয়ন মানুষকে ভ্যাক্সিন দেয়া হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে অনেক বেশি ভ্যাক্সিন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে, কোভিড নিয়ে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণের হার কমে এসেছে, বয়স্কদের সংক্রমণের হারও অনেক কম। বসন্তের মধ্যে ঝুঁকিতে থাকা, গরমের মধ্যে বয়স্ক আর শরৎ এর মধ্যে সবাইকে ভ্যাক্সিন দেয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তারপর কি হবে সেটা এখনও পরিস্কার নয় তবে সেটার জন্যেও প্রস্তূতি নেয়া হবে। সাংবাদিকঃ প্রিমিয়ে রুতে, আপনি এই প্রেস কনফারেন্সগুলো আপনার নির্বাচনের ক্যাম্পিং হিসেবে ব্যবহার করছে না তো? প্রিমিয়ে রুতেঃ তাহলে ষোলই মার্চ প্রেস কনফারেন্স রাখতাম, আটই মার্চ নয়।

Saturday 20 February 2021

“Beyond Rangoon” নো স্পয়লার

সামরিক জান্তা কিংবা সামরিক শাসন আর বার্মা কিংবা অধুনা মায়ানমার একে অপরের অন্য নাম।
(উনিশো পচানব্বই) সিনেমাটি যদিও সাহিত্যের চিত্ররূপ কিন্তু ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতার সত্যতার চিত্রায়ন এটি। এলেক্স ল্যাস্কারের চিত্রনাট্য, জন বুরম্যানের পরিচালনা সাথে প্যাট্রিসিয়া আর্কেটে আর ইউ উং কো এর দূর্দান্ত অভিনয় আপনাকে কিছুক্ষণের জন্যে নিজের বাস্তবতা থেকে দূরে রাখবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নৃশংসতা আর ভয়াবহতা কিছুটা উপলব্ধি করা যায় এই সিনেমাতেও। মায়ানমারের বাস্তবতায় এবং ইতিহাসে এই ছবিটির অনেক প্রভাব আছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সমগ্র ইউরোপে সিনেমাটি কয়েক সপ্তাহ চালানোর পরে, বার্মিজ সামরিক জান্তা নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী অং সান সু চিকে (ছবিতে চিত্রিত) কঠোর গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছিলো। প্রখ্যাত গণতন্ত্র নেতা বিবিসির সাথে তার প্রথম সাক্ষাত্কারে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের তার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। কয়েক বছর পরে সু চিকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তবে উনিশো আটাশির গণহত্যার ঘটনা ও সামরিক শাসকদের নিষ্ঠুরতার একটি "অদৃশ্য" ট্র্যাজেডির প্রতি বিশ্ব মনোযোগ বাড়াতে সহায়তা করেছিলো এই সিনেমা। দ্য নিউইয়র্কের সমালোচক ছবিটিকে "নির্ভীক মাস্টারপিস" বলে অভিহিত করেছিলেন, আর্কেটের অভিনয়ের প্রশংসা এবং বার্মার রাজনৈতিক দমনকে পরিস্ফুট করে তোলার স্বীকৃতি দিয়ে রজার এবার্ট ছবিটিকে চারের মধ্যে তিন দিয়েছিলেন। ছবিটি শুধুমাত্র ফ্রান্সে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে, বাকি বিশ্বে অর্থনৈতিক সফলতার মুখ দেখেনি, এরজন্যে অবশ্য পরিচালক, বার্মিজ সরকার আর মালোয়শিয়ান সরকারের হস্তক্ষেপকে দায়ী করেছেন। চলচ্চিত্র সমালোচক তুলিও কেজিচ চলচ্চিত্রটির তুলনা রোসেলিনির ক্লাসিকের সাথে তুলনা করেছেন। উনিশো পচানব্বই সালের কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে চলচ্চিত্রটি একটি অফিসিয়াল সিলেকশন ছিল। অং সান সূ চীকে পুরো সিনেমায় মায়ানমারের গনতন্ত্রের একমাত্র আশার আলো হিসেবে দেখানো হয়েছে। সিনেমাটির বেশিরভাগ অংশের চিত্রায়ন হয়েছে মালোশিয়ায়। অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্য। জন বুরম্যান নৈসর্গিক ও জঙ্গলের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার জন্য আলাদা একটি বিশেষ ভিজ্যুয়াল অনুভূতি রাখেন, এর প্রমাণ "দ্য এমেরাল্ড ফরেস্ট"। নৌকায় এবং পায়ে হেঁটে থাই সীমান্ত পথে যাত্রা করার ফলে, তিনি ইরাবতী নদীর এমন একটি বাষ্পীয় দৃশ্যের সৃষ্টি করেছেন যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মানুষের সন্ত্রাস মিলেমিশে একাকার। সিনেমাটি আমাজন প্রাইম আর অন্যান্য ফ্রী ওয়েবসাইটেও আছে।

Friday 19 February 2021

নৌকা ছাড়া অন্য কোন যান নেই যে শহরে

https://bangla.bdnews24.com/kidz/article1860906.bdnews?fbclid=IwAR1P4hSksnJUyYTbjq0LGpHY08YpOEidWTTB602Kx2aE0yits5thTU3yxu0 নেদারল্যান্ডসের ভেনিস বলে বিখ্যাত “খিটহর্ণ” আসলে একটা সাধারণ ছোট গ্রাম ছিলো। ছাব্বিশো ত্রিশ জন বসবাসকারী নিয়ে ওভারাইজেল প্রভিন্সের এই শহরটির কথা অনেকেই আগে জানতো না। উনিশো আটান্ন সালে বের্ট হান্সট্রা “ফানফেয়ার” সিনেমার শুটিং করেন এখানে। সিনেমাটি খুবই জনপ্রিয় হয়, প্রায় দুই দশমিক ছয় মিলিয়ন মানুষ এই সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখেন। সাথে সাথে “খিটহর্ণ” এর নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। পর্যটন হয়ে যায় আয়ের প্রধান উৎস। বিদেশ থেকেও পর্যটক আসা শুরু হয়, বিশেষ করে প্রতিবেশি জার্মানী আর বেলজিয়াম। এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি গ্রাম ছিলো। বারোশো ত্রিশ সালে ভূমধ্যসাগর থেকে আগত শরনার্থী আর ফ্ল্যাজলেট্যান্টদের (নেদারল্যান্ডসের ছোট একটি গ্রামের অধিবাসী যাদের পেশা ছিলো মাছ ধরা আর কাঁদামাটি দিয়ে রাস্তা বানানো) দ্বারা এই গ্রামটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে তারা বুনো ছাগলের অনেক শিং পেয়েছিল এবং তাদের বন্দোবস্তের নাম হয় খেয়েনহর্ন। পরে এটি খেইথর্ন নামকরণ করা হয়, যা শেষ পর্যন্ত আবার খিটহর্ণ হয়ে যায়। গ্রামে রাখা অস্ত্রের ভান্ডারে এখনো ছাগলের শিংগুলো দেখা যায়। খিটহর্নের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় এর খনন কাজের মধ্যে। এগারশো সত্তর সালে নেদারল্যান্ডসে প্রচন্ড বন্যা হয়েছিলো, তাতে প্রায় সমস্ত নেদারল্যান্ডস তলিয়ে যায়। তার প্রায় একশো বছর পর একশোজন মানুষ এই অঞ্চলে বাস করতে শুরু করে। এই জায়গাটিকে বসবাসের উপযোগী করার জন্যে মাটি খননকারীরা তাদের পছন্দের জায়গার একদম তলদেশ থেকে ঘাসের চাপড়া তুলে তুলে ঘাস সরিয়ে মাটিগুলোকে আলাদা পাত্রে নিয়ে মাখতেন তারপর গর্তে ফেলে দিতেন শুকানোর জন্যে। পরে সেখান থেকে টুকরো টুকরো চাপড়া কেটে নেয়া হতো। ঘাসের চাপড়া খননের ফলে পুকুর এবং হ্রদ তৈরি হয়েছে। চাপড়াগুলো পরিবহনের জন্য খালের পর খাল খনন করা হয়েছিল। তাতে গ্রাম জুড়ে খন্ড খন্ড দ্বীপ তৈরি হয়। দ্বীপগুলিতে অনেক বাড়ি নির্মিত হয়েছিল। সেই দ্বীপগুলোতে কেবলমাত্র সেতুর মাধ্যমে পৌঁছানো যায়। যদিও এরমধ্যে একশো ছিয়াত্তরটির বেশি সেতু ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। যদিও শুরুর দিকে এটি ক্যাথলিক প্রধান গ্রাম ছিলো কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বিংশ শতাব্দী থেকে প্রথাগত ধর্মে অবিশ্বাসীদের সংখ্যাই এখানে এখন বেশি। খিটহর্নে ব্যবহৃত বৃহত্তম জাহাজটি ছিল খিটারসে বক যা প্রায় বারো মিটারের বেশি লম্বা আর এর মধ্যে কেবিনও ছিলো। প্রচুর পরিমানে খড়, গবাদিপশু ইত্যাদি পরিবহনের জন্যে এটি ব্যবহৃত হতো। কৃষকরা এগুলো ভাড়া নিতো, অনেকসময় পুরো বছর জুড়ে বিভিন্ন কাজের জন্যে ভাড়া হিসেবে বক ব্যবহার করা হতো। খিটহর্ণের সৌর্ন্দয বেশ কয়েকজন চিত্রশিল্পীকে আকৃষ্ট করেছে। দ্যা হাগেস বা লারেন্সে স্কুল, কর্নেলিস ফ্রেডেনবার্গ, ডব্লিউ.বি. থোলেন এবং জি.এফ ফান স্কাগেনের ছাত্র ছিলেন তারা। ছবি আঁকার জন্যে বেশ কয়েক সপ্তাহ তারা গ্রামে অবস্থান করেছিলেন। চিত্রশিল্পী পিট জুইয়ার্স খিটহর্নে স্থায়ী হয়েছিলেন। চিত্রশিল্পী হেন্দ্রিক ব্রোয়ার খিটহর্নে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আজকাল খিটহর্ন নেদারল্যান্ডসের জনপ্রিয় অবকাশ ও পর্যটন কেন্দ্রের একটি। বিদেশিরা ছাড়াও প্রচুর ডাচবাসীই নিরিবিলি ছুটি কাটাতে চলে যান। সেজন্যে গড়ে উঠেছে, হোটেল, ভ্যাকেশান ভিলা, ক্যাফে অনেক কিছু। পায়ে হেঁটেই গ্রামটা পুরো দেখা যায়। মনোরোম প্রাকৃতিক দৃশ্যকে আরো মনোরোম করেছে বিভিন্ন আকারের সুদৃশ্য সব উইন্ডমিল আর সেতুর উপস্থিতি। বিভিন্ন রকমের বোট ট্রিপের ব্যবস্থা আছে যা পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। আর আছে ভাজা মাছ খাবার জন্যে হরেক রকম মাছ ভাজার দোকান। ফিশ এন্ড চিপ্স না খেলে খিটহর্ণ ট্রিপটাইতো মিছে। সব যে খিটহর্নের খালেরই মাছ, তা নয়, বাইরে থেকেও আসে। এর বাইরেও ন্যাশনাল পার্ক, যাদুঘর আরও কত কি আছে এখানে। গ্রামের মধ্যে গাড়ি, বাস, ট্রেন কিছুই চলে না তাই সবাইকে গ্রামের বাইরে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে গ্রামে ঢুকতে হয়। কিছু কিছু জায়গায় সাইকেল চলতে পারে নইলে সবাই পায়ে হেঁটে কিংবা নৌকায় করে চলাচল করে। তানবীরা হোসেন ১৬/০২/২০২১

Wednesday 3 February 2021

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – দুই ফেব্রুয়ারী

প্রিমিয়ে মার্ক রুতে আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার কোন রাস্তা এখনও পাইনি। আমাদের অনিশ্চয়তা, কি করা যাবে আর করা যাবে না, স্বাভাবিক জীবনের দিকে কিভাবে কতটুকু পৌঁছতে পারবো তাই নিয়ে আজ আপনাদের সাথে কথা বলবো। অনেক বেশি মানুষ ভ্যাক্সিন নিলে, নিজেদের পরীক্ষা করালে এবং নিয়ম মেনে চললে কি কি হতে পারে সেটাই বলছি এখন। সংক্রমনের হার কমেছে, হাসপাতালে করোনা রোগীর ভীড়ও কিছু কমেছে। কিন্তু তৃতীয় ঢেউ এড়ানোর কোন উপায় নেই কারণ বৃটিশ করোনা ভাইরাস। এই মূর্হুতে যত নতুন রোগী আছে তাদের দুই তৃতীয়াংশ ব্রিটিশ করোনায় আক্রান্ত। বিজ্ঞানীদের মতে পুরনো ক্ল্যাসিক ভাইরাসের চেয়ে ব্রিটিশ ভাইরাস দেড়গুন বেশি সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে। পুরনো ভাইরাসের সংক্রমণ কমলেও ব্রিটিশ ভাইরাসের সংক্রমণের হার প্রতি সপ্তাহে দুই গুন বেড়েছে। সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা সবাই সম্মত হয়েছি, লকডাউন দুসরা মার্চ পর্যন্ত আপাতত চলবে। তেইশে ফেব্রুয়ারি আবার সংবাদ সম্মেলন করে তখনকার অবস্থা জানানো হবে। তবে কিছু জিনিস আমরা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাচ্চাদের থেকে করোনা ছড়ানোর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে আটই ফেব্রুয়ারি থেকে প্রাইমারি স্কুল আর ডে-কেয়ার খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেড় মিলিয়ন শিশু প্রাইমারি স্কুলে যায় আর চারশো পঞ্চাশ হাজার বাচ্চা ডে কেয়ারে যাচ্ছে। তবে যদি কোন বাচ্চার কোভিড ধরা পরে, ক্লাশের সব বাচ্চা, টিচারসহ সবাই কেয়ারন্টিনে থাকবে। পাঁচ দিন পর সবাইকে পরীক্ষা করাতে হবে। জরুরী দরকার ছাড়া বাচ্চাদের আপাতত ডে-কেয়ারে পাঠানোর অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। মাধ্যমিক স্কুল পহেলা মার্চের আগে খোলা হবে না। “ক্লিক এন্ড কালেক্ট” পদ্ধতিতে দোকান খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। দশই ফেব্রুয়ারি থেকে সব দোকান থেকেই অনলাইন বা টেলিফোনে পন্য অর্ডার করে নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পিকাপ পয়েন্ট থেকে নিয়ে আসা যাবে। অর্ডার আর পিকাপের মধ্যে মিনিমাম চার ঘন্টা সময়ের ব্যবধান থাকতে হবে, যাতে শপিং ফো ফান না হয় আর পিকাপ করতে একজনই শুধু যেতে পারবে। দোকান বন্ধ থাকবে। যে দোকান এই নিয়মের ব্যাতায় করবে সে দোকান বন্ধ করে দেয়া হবে। দশই ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে চারটায় কার্ফিউ শেষ হবে।
সাংবাদিকঃ আপনি বলছেন ব্রিটিশ করোনা দেড়গুন দ্রুত ছড়ায় তার ওপর আবার নিয়ম শিথিল করছেন, এভাবে তৃতীয় ঢেউ ঠেকানো সম্ভব? প্রিমিয়ে রুতেঃ আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, সপ্তাহান্তের সব স্ট্যাটাস্টিক্স নিয়ে আবার সামনের সপ্তাহে আলোচনা হবে। নিয়মনীতি দরকার হলে আবার পরিবর্তন হতে পারে, হওয়াটাই স্বাভাবিক। আরো কঠিন হবে? সেটা এখন জানি না, যা প্রয়োজন তাই করতে হবে। সাংবাদিক ভ্যাক্সিন দেয়ার হিসেব নিয়ে যে ভুল হলো? তার দায় কার? ভাইস প্রেসিডেন্ট হুগো দ্যা ইয়ংঃ যেহেতু আমি সব কিছুর দায়িত্বে আছি, তাহলে ভুল আমার। তারপরেও কি আপনি ভাবছেন এই পদের জন্যে আপনি সঠিক মানুষ? হ্যাঁ, এখনো এই দায়িত্বের জন্যে আমিই সঠিক মানুষ। পরিস্থিতি বিবেচনায় বোঝা যাচ্ছে রেস্টুরেন্ট, বার, ক্যাফে, নাইট ক্লাব এগুলো সহসা খোলা হবে না? গত বছরের গরমের ছুটির থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। আমরা খুব তাড়াহুড়া করেছিলাম, তাড়াতাড়ি করা ঠিক হয়নি। প্রিমিয়ে রুতে আপনি কি ভাবছেন এই বছরের মধ্যে সবাইকে ভ্যাক্সিন দেয়া শেষ করতে পারবেন? আশা করছি। নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না? কি করে পারবো? সব কি আমাদের হাতে? ভ্যাক্সিনের ফ্যাক্টরীতে কিংবা গুদামে দুর্ঘটনা ঘটলে, কিংবা পরিবহনের সময় দুর্ঘটনা ঘটলে সেগুলো কি করে নিশ্চিত করবো? দশই ফেব্রুয়ারী কার্ফিউ তুলে নেয়ার কথা ছিলো, আটই ফেব্রুয়ারী সিদ্ধান্ত নেয়া হলো তেসরা মার্চ পর্যন্ত কার্ফিউ থাকবে। 02/02/2021

উইলাম বিল্ডারডাইক এবং তার কবিতা

https://cjmb.net/%e0%a6%89%e0%a6%87%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%a1%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%a1%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%95-%e0%a6%8f%e0%a6%ac%e0%a6%82-%e0%a6%a4%e0%a6%be/?fbclid=IwAR2X8R5GoKN208lZ7GYnbWYskoopfcX-GSMrywNYgafoGyizWjWUtvBqh9E কবি উইলাম বিল্ডারডাইক ১৭৫৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুর জন্য আকুলতা এবং আকাঙ্ক্ষা তাকে সারাজীবন হতাশ করেছে—তার কবিতাতেও সেসব মূর্ত হয়েছে। ছয় বছর বয়সে দুর্ঘটনায় এই পায়ে সমস্যা তৈরি হয়, এরপর চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতায় বাড়ির বাইরে বেশি বের হতে পারেননি—সেজন্য বাইরের জগৎ এবং বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। দশ বছরেরও বেশি সময় বেশিরভাগ বাড়িতেই পার করেছেন। এই দীর্ঘ অবসর যেন তার হাত দিয়ে কল্পিত জ্ঞানের এক ভিন্ন জগতের ভিত্তি স্থাপন করিয়েছিলো। ডাচ সাহিত্যে যার প্রভাব অনস্বীকার্য। ১৭৭৬ সালে তৎকালীন ডাচ কবি সমাজ তাকে ‘শ্রম থেকে শিল্প’ স্বর্ণপদক দিয়ে ‘রাজ্য সরকারের ওপর কবিতার প্রভাব’ সম্মানে ভূষিত করেন। নিজেকে পুরোপুরি কবিতায় নিবেদিত করায় বাবার আকাঙ্ক্ষার ডাক্তার হওয়া হয়নি। ১৭৮০ সালে ভর্তি হন লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে আইন নিয়ে দুই বছর পড়াশোনা করেন পরে ডেনহাগের আদালতে আইনজীবি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৭৯৫ সালে ফরাসি সেনাবাহিনীর আক্রমণে বাটাভিয়ান রাজ্যের সূচনা হয়, কিন্তু বিল্ডারডাইক তা মেনে নেননি এবং এর বিরুদ্ধে কথা বলেন, ফলশ্রুতিতে তিনি দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। আইনজীবী হিসেবে তিনি সবসময়ই দুর্বলদের পক্ষ নিয়েছেন। নিজের বিশ্বাসকে অস্বীকার না করে তিনি নির্যাতিত দেশপ্রেমিকদেরও রক্ষা করেছিলেন। নির্বাসনেও তার জীবন ছিলো দুর্দশাগ্রস্ত। ১৮০৬ সালে পঞ্চাশ বছর বয়সে তিনি নিজ দেশে ফিরে আসার সুযোগ পান। তিনি ১৮৩১ সালের ১৮ ডিসেম্বর পঁচাত্তর বছর বয়সে মারা যান। বন্যা ঘুম থেকে কখন উঠবে তুমি? ‘ওঠো, আমার সোনা, ওঠো! বাঁধ ভেঙে গেছে, ঘরের ভেতর জলের মাতলামি যে কোনো মুহূর্তে উছলে উঠতে পারে’— ‘ওহ মা, আমি নরম গদিতে এত আরাম করে শুয়ে আছি, আর স্বপ্নে আমি আনন্দে কী শক্তিশালী ছিলাম। না, আমাকে জাগিয়ে দিও না’। আয় আমার সোনা আমার বুকে আয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্রোতের মধ্য দিয়ে তোকে নিয়ে আমি বয়ে যাবো। ‘ওহ মা, আমাকে আমার গরম বিছানায় শুতে দাওতো ধারণায় আমার এখনও অনেক কিছু করার আছে, আবার! তুমি যাওতো, নিজের জীবন বাঁচাও!’— বৃথা! অবোধ শিশুটির অবুঝ কথা। সে কী করবে? তার হৃদয় কি সন্তানকে ছেড়ে যাবে? না, কাঁদতে কাঁদতে কাঁপতে কাঁপতে, সে তার সাথে মারা যায়। দুর্যোগের ঘোরে মা, কিন্তু বিশ্বস্ত! আহ, আমরা পাশে আছি তোমার দীর্ঘশ্বাসের ধারণায়, তোমার কোমলতার ভারে। তবে কী, বিশ্ব তরঙ্গ যখন দিগদিগন্তে প্রসারিত, সেখানে মাতৃসত্তার অনলস প্রচেষ্টা পরিত্রাণের জন্য কিছু করে না! পাপী তুমি, নিজেকে জানো। জলের স্রোত, দুর্নীতির স্রোত; তোমার অলসতা থেকে উত্থান! তবে না, তুমি নিচু হও, বৃথা ছায়ায় খুশী হও, ঈশ্বরের ভালবাসা বৃথা কাঁদে।—নিজের রক্তে মাখানো মাথা তোমার! জীবন আমার আমার শৈশব, যৌবন এবং বিকশিত হওয়া, একের পর এক পোকামাকড়ের ঘটনা; আমার বিবর্ণ জীবন, এক নিরর্থক বাতাস; আমার বার্ধক্যটিও কাটছে আরও ভালো দিনের প্রত্যাশায়, হৃদয়ের যন্ত্রণা যা মন এবং মজ্জাকে গ্রাস করে আছে। এখন? আজীবন আকাঙ্ক্ষার পরে মৃত্যুর অপেক্ষায়! রাত্রি তুমি আমাকে নীরবে গাড়ি উপহার পাঠাও! মুক্তিদাতা, এসো! যে বিরক্তিকর শৃঙ্খলগুলো আমায় ধরে রেখেছে , মুক্ত করো— আহ! কী নরম তোমার হাত আর স্নিগ্ধ তোমার মন। দীর্ঘ দিন মধ্যাহ্নের ভয়াবহ আগুন আমি বহন করেছিলাম রক্ত ও হৃদয় জ্বলেপুড়ে এবং একাকি কবরের জন্য হাঁপিয়ে গেছিলো। আহ, শক্ত জোয়াল থেকে বাঁকা শরীরকে সে মুক্তি দিয়েছে, শুকনো হাতকে জীবনের স্যুটবুট থেকে দূরে সরিয়ে ফেলো! জীবন কী?—ক্লেশ।—কী আনন্দ! জেগে থাকা স্বপ্ন।— উল্লাস?—স্ব-প্রতারণা, এবং অন্ধ উন্মাদ।— ‘আমি চেষ্টা করেছি’ ঝড়ের উৎসটি প্রবাহিত হতে দেখেছি; তার ভেতর থেকে, জলাবদ্ধভাবে অতীত যাত্রা। এখন বিশ্রাম নিচ্ছে আর প্রবাহিত হচ্ছে না। তার শিরা, বিচ্ছিন্ন, শুকিয়ে গেছে, গুবরে পোকা, ক্রেস্ট তার রক্তমাখা। হে পরিত্রাণের ঈশ্বর, তাকিয়ে আছি তোমার দিকে; অনুগ্রহ করে তাকাও, এবং আমার স্বার্থপরতা গ্রহণ করো। শরাব হালকা হৃদয় প্রথমে নেশা তৈরী করে, তারপর একটি ম্যাগপি আরও পরে শূকর; কিন্তু মনে একদিন অহংকার হয়, প্রতিটি ফোঁটা রক্ত মানুষের তরে, এই পদক সরাও! আমার থেকে দূরে! উগ্রতার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। সকাল সন্ধ্যে খোলা গোলাপ, পাতায় সমৃদ্ধ, এখনও বন্ধ বোতামটি বলছে, চুপিচুপি একই গলায়— চেয়ে দেখো, মোটা কুৎসিত জিনিসগুলো দেখো, কত গৌরবময় এবং সুন্দর যেনো আমার প্রিয়তমের শয্যা প্রর্দশন। বোতামটি চুপচাপ বসে তা শুনছিলো কিন্তু বিকেলে সে প্রতিশোধ নিতে এসেছিল, তার হৃদয় খুলে পুরো বিবর্ণ গোলাপ। আশা এবং উচ্ছৃঙ্খল আনন্দ! দেখো তোমার ছবি আর মানুষের ভাগ্য