Thursday 23 December 2021

মেয়েদের কি কোনো নিজের পক্ষ আছে???

যেসব শিশুরা উনিশ অতিক্রম করেনি তারা খেললো মহিলা ফুটবল! তারপরও বলি, নামে কিবা আসে যায়। ভারতকে হারিয়ে আবারো সাফ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। অভিনন্দন আমাদের বাঘিনীদের। আর সবার মত কৌতুহলবশতঃ আমিও তাদের নিয়ে লেখা খবরগুলো পড়ছি। বেশীরভাগ মেয়েদের পরিবারই প্রথমে ফুটবল খেলতে সম্মতি দেয়নি। মেয়ে আবার খেলাধূলা তাও পুতুল নয়, রান্নাবাটি নয়, ঠ্যাঙ দেখিয়ে ফুটবল!!!! মানসম্মান কই থাকে??? মেয়েরা কি তবে শুধু ফুটবলের বাঁধা অতিক্রম করেছে? না মেয়ে হওয়ার কারণে কিংবা বাংলাদেশের ভূখন্ডে জন্মানোর কারণে, প্রথমে পরিবার, তারপর সমাজ আর সবশেষে ফুটবলের যুদ্ধে জয়ী হয়েছে। বাচ্চা যদি স্কুলে ইনডিসিপ্লিনড থাকে, পড়াশোনায় অমনোযোগী থাকে, প্রথমেই তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করে, বাড়িতে সবাই কেমন আছে। অফিসে কাজে ভুল হলে, ডিপ্রেসড কিংবা মুড অফ যেকোন কারণেই জিজ্ঞেস করা হয়, বাসায় সব ঠিকাছে? এই যে ইউরোপ কিংবা পশ্চিম নিয়ে প্রাচ্যে মীথ প্রচলিত আছে, বাচ্চা আঠারো হলে বাবা-মা তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয় কিংবা বাবা-মা বুড়ো হলে বাচ্চারা তাদের ওল্ড হোমে পাঠিয়ে দেয়, মাদার্স ডে আর ফাদার্স ডে ছাড়া তাদের দেখতে যায় না, সেই ইউরোপে প্রত্যেক ইস্যুতেই প্রথমেই পরিবারকে খোঁজা হয়। যেকোন ইন্সটিটিউট পরিবারকে মূল ধরে তারপরে সামনে আগায়। আচ্ছা, মানুষ ঠিক কতটা সফল, শিক্ষিত, স্বাবলম্বী হলে তার পরিবার দরকার হয় না? কতটা পরিপূর্ণ হলে একটা ভাল গান শুনলে প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছে করবে না? জ্বরে কঁকিয়ে উঠলে কাউকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করবে না? ফুলের গন্ধে মন উচাটন হবে না কিংবা আঙুল কাটলে রক্ত বের হবে না? কে বলতে পারেন? প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশে দু/চারটে “বউ” খুনের সংবাদ থাকবে। যেগুলো সংবাদপত্রের পাতায় ঠায় পায় আর কি। সবই কি আর ঠায় পায়? তবে আলোচনা আর প্রতিবাদ হয় শুধুমাত্র হাই প্রোফাইল খুন গুলো নিয়ে। এখানেও শুরু হয় ভিক্টিম ব্লেমিং, খুন হয়ে যাওয়া মেয়েগুলোকেও কেউ ছেড়ে দেয় না। ইউনিভার্সিটি পড়তো, ডাক্তার ছিলো, অতো টাকা বেতনে চাকুরী করতো তারপরও সব মেনে নিয়ে সংসারে কেন ছিলো? কি দরকার ছিলো ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। সিরিয়াসলি??? বাংলাদেশে একটা সিঙ্গেল মেয়েকে বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া দেয়? এছাড়া, প্রায় প্রতিনিয়ত কি এই খবরও আসে না, পুরো পরিবারশুদ্ধ বাড়ির ভেতরে গলা কেটে রেখে গেছে? প্রাইমমিনিস্টার কি বলেননি, বাড়ির ভেতরে তিনি নিরাপত্তা দিতে পারবেন না? ইউরোপ যে এত সিকিওর বলি, বন্ধুভাবাপন্ন পুলিশ আছে, সোশাল সার্ভিস আছে তারপরেও ক’টা মেয়ে পরিবারের সমর্থণ ছাড়া ডিভোর্সে আগায়? লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যে মেয়েগুলো খুন হয়, তাদের বয়স সব ত্রিশের নীচে। নিতান্ত জীবন সম্বন্ধে অনভিজ্ঞ বাচ্চা। একা থাকার মত এত মানসিক চাপ নিতে পারে না। যারা একা থাকে তাদের বেশীর ভাগই ত্রিশের ওপরে। জীবনের তিক্ততা খেয়ে খানিকটা শক্ত হয়ে গেছে। জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে পরিবারের সমর্থণ আর পাশে থাকা জরুরী আর এরকম ভলনারেবল সিচুয়েশানেতো আরও বেশী জরুরী। ইলমা’র খুনের পরে একটা আলোচনা অনেকেই করছেন, মেয়ের পরিবার কোথায় ছিলো? মেয়ের প্রতি তাদের দায়িত্ব ছিলো না? আলোচনা অন্তত শুরু হয়েছে, ইলমার আত্মত্যাগের ইতিবাচক দিক, এই কথাটি অসংখ্যবার আমি বিভিন্ন খুনের সংবাদের নীচে মন্তব্যে লিখেছি, লিখে যাবো। এসব ব্যক্তিগত বিষয় নয়, এগুলোর জন্য সামাজিক আন্দোলন দরকার। সমাজ পরিবর্তনশীল তাই সামাজিক দাবীগুলোও পরিবর্তিত হবে। ***বিয়েতে, মেয়েকে স্বামী/শ্বশুর বাড়ির হাতে তুলে দিলাম, এই সংলাপ/মানসিকতা পুরোপুরি বন্ধ হতে হবে। আপনার সন্তানকে আপনি যত ভালবাসবেন ততটা অন্যকেউ বাসবে না। তাই নাটক বন্ধ করেন। ***ডিভোর্স হলে শুধু কাবিনের টাকা দিয়ে মেয়ে বিদায় বন্ধ করুন, মেয়ের যতটুকু অধিকার আছে তা নিশ্চিত করুন। সংসার গড়ে তুলতে মেয়ের ভূমিকা, ত্যাগ কিছুই কম থাকে না। *** সম্পত্তিতে ছেলে-মেয়ের সমান অধিকার নিশ্চিত করুন। ভবিষ্যতে মেয়ে খুন হলে, টিভির সামনে যখন মেয়ের মা-বাবা কাঁদবে, আমার মেয়েকে এভাবে অত্যাচার করছে, ঐভাবে অত্যাচার করছে তখন মেয়ের বাবা-মা’কেও যদি খুনের মদতদাতা হিসেবে পুলিশ গ্রেফতার করে তাহলে খুনের রেট নিসন্দেহে কমবে। বাংলাদশে খুব কম খুনের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে মেয়ের মা-বাবা জানতো না, মেয়ে অত্যাচারিত ও নিগৃহীত হচ্ছিলো এবং তারা কিছুই করে নাই। চট্রগ্রামে খুন হওয়া মিতুর পুলিশ বাবাও জানতো, মেয়ে বিপদে আছে। পরিশেষে, বাবা-মা’য়েদের প্রতি মিনতিঃ সন্তানের দায়িত্ব নিন,পাশে থাকুন। মেয়েকে মারলেই অত্যাচার হয় না, অত্যাচার আরও অনেক ধরনের হয়। সেগুলোও বোঝার চেষ্টা করুন। আর অত্যাচারই লাগবে কেন? মেয়ের যদি সংসারে/স্বামীর সাথে মন না লাগে, তালাকের জন্যে এই কারণটাই যথেষ্ঠ নয়? অসুখী হয়ে পুরোটা জীবন তাকে কাটাতে হবে? “মানুষ কি বলে তার থেকে ভাল থাকা জরুরী আর বিয়ে টিকিয়ে রাখার চেয়ে বেঁচে থাকা জরুরী”।

Friday 10 December 2021

তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে বলায় যারা বগল বাজিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের একাউন্টে দশ পয়েন্ট যোগ হল বলে তাদের জন্যে পরদিনই দুঃসংবাদ। মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে বৃটেন, কানাডা আর এমেরিকা ছয় জন বাঘা বাঘা সিনিয়র খাস সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার তাদের দেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। বিএনপি আর জাপা’র একাউন্টে আবার ছয় ইন্টু দশ ইক্যুয়ালটু ষাট পয়েন্ট যোগ হলো। কারণ তাদের শাসনামালে বাংলাদেশের কোন খাস সরকারী কর্মকর্তারা এরকম নিষেধাজ্ঞার কবলে পরে নাই। অবশ্য এটিকেও জাস্টিফাই করার জন্যে “কোয়াড”কে টানার চেষ্টা করে যাচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু ক’দিন আগে বাইডেনের “ডেমোক্রেসি সাম্মিট” এও বাংলাদেশকে কেন ডাকা হয়নি তা নিয়ে এখনো জাস্টিফিকেশান আসেনি। যেকোন ইস্যুতে জাস্টিফায়েড লীগারদের একটাই যুক্তি থাকে, জাতীয় পার্টি আর বিএনপির তুলনায় যেহেতু আওয়ামী লীগ ভাল করছে, জনগনের এতেই তুষ্ট থাকা উচিৎ, এরচেয়ে ভাল কিছু আশা করা ঠিক না। কিন্তু ভোট চাওয়ার সময় তারা সেটা বলে না। তখন তারা ঢাকাকে লস এঞ্জেলস আর সিলেটকে ম্যানচেষ্টার বানিয়ে দেয়ার ওয়াদা দেয়। বারো বছর ক্ষমতায় থেকেও যখন তাদের ব্যারোমিটার বদলায় নাই তাহলে আমি সাজেস্ট করি, ক্রিকেট - ফুটবল খেলার প্লেয়ার, কোচ যেমন বিদেশ থেকে আনা হয়, তেমনি বিদেশ থেকে সৎ, দক্ষ পলিটিশিয়ানস এজ ট্রেনার বাংলাদেশে আনা হোক। তারা বাংলাদেশে এক্সপার্ট এন্ড ফেয়ার প্রশাসনের একজাম্পল সেট করুক। জনগনের চয়েস লিস্ট এলাবোরেট হওয়া এখন সময়ের দাবী, নতুন ব্যারোমিটার তৈরী হোক, লেবার পার্টি নাকি কনজার্ভেটিভ, পিভিডিএ না ভিভিডি। নইলে “রাজনীতি আর দুঃশাসনের দুষ্ট চক্র” থেকে এই দেশ, এই জাতি কখনো মুক্তি পাবে না। জেনারেশান বাই জেনারেশান আমরা এসব অসৎ রাজনীতিবিদদের অপশাসন আর তারপর সেটাকে জাস্টিফায়েড লীগ দিয়ে প্রমোট করার ভুক্তভোগী থেকেই যাবো। আর বস্তাপচা ডায়লগতো আছেই, “বিকল্প নেই”। বিকল্প না থাকলে দেশ আর জাতির অস্তিত্বের প্রয়োজনেই সুচিন্তিতভাবে সুস্থ বিকল্প তৈরী করা হোক। বিকল্প নাই বলে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে দেশে প্রতিরোধ, প্রতিবাদ নেই আর এর ফল হলো, বিদেশীরা ধরে ধরে এখন সাইজ করে দেবে।

Thursday 9 December 2021

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – টুয়েন্টি সিক্সথ নভেম্বর টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান

প্রিমিয়ে রুতেঃ চৌদ্দই ডিসেম্বর দুই হাজার বিশে প্রথমবারের মত নেদারল্যান্ডসে লকডাউন হয়েছিলো, এই বছরের সাথে গত বছরের পার্থক্য হলো, বেশীর ভাগ মানুষরেই এবছর ভ্যাক্সিন দেয়া। যার ভ্যাক্সিন দেয়া আছে তার করোনার কারণে ইনটেন্সিভ কেয়ারে আসার সম্ভাবনা শতকরা পঁচিশ ভাগ কম। আগামী তিন সপ্তাহের জন্যে এই নিয়মগুলো থাকবে তারপর অবস্থা বুঝে আবার বিবেচনা করা হবে। সামনের চৌদ্দই ডিসেম্বর আবার আপনাদের সাথে পর্ববর্তী করনীয় নিয়ে কথা হবে। বারোই নভেম্বর থেকে দেয়া সব নিয়মগুলো বলবৎ থাকবে আজকের গুলো তার ওপর দিয়ে প্রযোজ্য হবে। আটাশে নভেম্বর রোববার থেকে সামনের তিন সপ্তাহ, সন্ধ্যা পাঁচটা থেকে সকাল পাঁচটা পর্যন্ত সমস্ত কিছু বন্ধ থাকবে। সুপারমার্কেট, ওষুধের দোকান সন্ধ্যা আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। গাড়ির তেলের দোকান আর চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো খোলা থাকবে তাদের স্বাভাবিক সময়সূচী অনুযায়ী। প্রফেশনাল টুর্নামেন্টগুলো চলবে তবে দর্শকবিহীন। ক্ষতিগ্রস্ত বিভাগগুলোকে সমস্ত রকম সহযোগিতা দেয়া হবে। আর বিশেষজ্ঞদের সাথে সব সম্ভাবনা দেখা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এরকম বন্ধ করে দেয়ার পরিস্থিতি কি করে এড়ানো যায়। যেখানে যেখানে বসার স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে সেখানেও, মাস্ক আর দেড় মিটারের সামাজিক দূরত্ব বাধ্যতামূলক করা হলো। নির্দিষ্ট ধারন ক্ষমতার এক তৃতীয়াংশ মানুষ আসতে পারবে। আর দোকানে কিংবা যেসব জায়গায় মানুষ চলাচল করে সেখানে প্রতি পাঁচ বর্গমিটারে একজন মানুষ থাকবে। যতদূর সম্ভব ভ্রমণ না করাই শ্রেয়। চারজনের বেশী কোথাও অতিথি না হওয়া, এক বাসায় আতিথেয়তা নেয়ার পর সেদিনই অন্য আর এক বাসায় না যাওয়া। অন্য বাসায় যাওয়ার আগে সেলফ টেস্ট করিয়ে নেয়া। কিংবা একদিনে দুইবার অতিথি আসার আগে হোস্ট আগে সেলফ টেস্ট করে নেয়া। অফিসে দেড় মিটারের সামাজিক দূরত্ব আবশ্যিক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। এমন নয় যে সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না, তবে স্কুল বন্ধ করে দিলে বাচ্চাদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা এত প্রবল আকার ধারণ করে এবং সামাজিক জীবনের এর প্রভাব এত মারাত্বক পরে যে যতদূর পারা যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে রাখার চেষ্টা করা হবে। হাঁটার সময় বাচ্চাদের মাস্ক পরতে হবে। গার্জেনদের বলছি, বাচ্চাদের পৌঁছে দেয়ার দরকার নেই, তারা একাই স্কুলে আসুক। প্রাইমারি স্কুলের গ্রুপ সিক্স থেকে শুরু করে প্রত্যেক ক্লাশের টিচার আর ছাত্রদের সপ্তাহে দু’দিন সেলফ টেস্ট করা বাধ্যতামূলক। শিক্ষার সাথে যুক্ত প্রত্যেকটি মানুষকে তাদের আন্তরিকতা আর সদয়তার জন্যে পুরো জাতির পক্ষ থেকে আবারও আমার আন্তরিক ধন্যবাদ রইলো। সর্ত্তোধ্ব মানুষদের সাথে বাচ্চাদের যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাচ্চাদের মাধ্যমে দাদা-দাদী, নানা-নানী অসুস্থ হচ্ছেন সেদিকটিতে তীব্র দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। দেখা করার চেয়ে বেশি ভিডিওকল করার জন্যে অনুরোধ করছি। সিন্টারক্লাশ পালন করার আগেও প্রত্যেককে সেলফ টেস্ট করার অনুরোধ করছি। নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে, গতকাল নেদারল্যান্ডসের অনেক বিল্ডিংই কমলা রঙে রাঙা হয়েছিলো। করোনার কারণে পারিবারিক সহিংসতা অনেক বেড়ে গেছে, নারীরা তার শিকার আর বাচ্চারা অনিরাপদ। তাদেরকে সাহায্য করো। অনেকেই একাকীত্বে ভুগছেন। একাকী বয়স্ক মানুষদের পাশে দাঁড়াও এবং তাদের সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করো। খুব কঠিন সময় যাচ্ছে আমরা জানি তারপরও পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা ধরে রাখতে হবে। হুগো দ্যা ইয়ংঃ আটাশি দশমিক পাঁচ ভাগ মানুষের ভ্যাক্সিন নেয়া হয়ে গেছে। তারপরও গত এক সপ্তাহ ধরে বাইশ হাজারেরও বেশী মানুষ প্রতিদিন সংক্রমিত হচ্ছে। ছাব্বিশো মানুষ করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে যাদের মধ্যে পাঁচশো আটাশ জন ইনটেনসিভ কেয়ারে। তবে হাসপাতালে আসা শতকরা পঞ্চাশ জন আর ইনটেন্সিভ কেয়ারে থাকা শতকরা সত্তর জন ভ্যাক্সিন না নেয়া মানুষ। যে এক দশমিক দুই মিলিয়ন মানুষ এখনো ভ্যাক্সিন নেয়নি এই শীতের শেষে তারাও করোনপ্রুফ হয়ে যাবে, হয় তারা ভ্যাক্সিন নেবে নয় করোনায় ভুগে। ভ্যাক্সিন দেয়ার পরও এত অল্প সময়ে এত মানুষ সংক্রমিত হবে এটা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিলো। ভাইরাস বা করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আগে থেকে আর আশাবাদী হতে চাই না, বারবারই সংক্রমনের গতি প্রকৃতি আমাদের নিরাশ করছে। আমরা যত চেষ্টাই করি না কেন দেখা যাচ্ছে এই শীতের পরেও ভাইরাস আমাদের মধ্যে থেকে যাবে, হয়ত অন্য কোন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে, পুরোপুরি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। তানবীরা হোসেন ১২/০৯/২০২১

আসপিয়া

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম আর সামাজিক মাধ্যমে দেখছিলাম শৈশবে বাবা হারানো, গ্রামবাসীর বাড়িতে আশ্রিত থেকে বড় হওয়া আসপিয়া। পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় বরিশাল বিভাগে মেধা তালিকায় পঞ্চম হয়েছে। তারপর একে একে ডিঙিয়ে এসেছে পরীক্ষার বাকি সবকটি ধাপ। কিন্তু ভূমিহীন, অন্যের জমিতে আশ্রিত হওয়ায় তার চাকরি হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কর্মকর্তারা। খবরটা বুকের মধ্যে বিরাট ধাক্কা দিলো। ছোটবেলায় দাদুর মুখে গল্প শুনেছি, অমুক-তমুক অনেক পড়াশোনা করেছে কিন্তু জায়গাজমি নাই তাই ইংরেজ/পাকিস্তান সরকার চাকুরী দিচ্ছিলো না। তখন স্থায়ী ঠিকানার জায়গায় অন্যের বাড়ির নাম, প্রয়োজনে অনুমতি সাপেক্ষে বাবার নামও বদলে চাকুরীর ফর্ম পূরণ করা হতো। বিজয়ের পঞ্চাশ বছরের প্রাক্কালে আমরা কি এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি প্রিয় স্বদেশ? বারবার ইচ্ছে হচ্ছিলো মেয়েটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলি, আমারতো ঠিকানা আছে কিন্তু তোমার মত এত ধাপ পেরিয়ে এত দূর আসতে পারিনি। সম্ভব হলে আমার ঠিকানাই না হয় তুমি নিয়ে নাও। তবুও লড়াই চালিয়ে যাও, থেমে যেও না। আসপিয়ার জন্যে এক বুক ভালবাসা। আসপিয়া হারতে পারে না, আসপিয়া হারলে হেরে যাবে বাংলাদেশ। বিজয়ের মাসে আমি আসপিয়ার বিজয় দেখতে যাই। তাতে মুরাদের মত অপরাধীকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার নির্লজ্জ অন্যায় ভুলে যাবো। দশ মুরাদের চেয়ে এক আসপিয়া অনেক দামী একটি আনন্দ সংবাদের প্রত্যাশায়

Tuesday 30 November 2021

বিশ্ব বদলে দেওয়া যত ডাচ আবিষ্কার

https://bangla.bdnews24.com/kidz/article1977178.bdnews বিশ্ব বদলে দেয়া ডাচ আবিস্কারসমূহ বিশ্ব মানচিত্রে বলতে গেলে যার অবস্থান খুঁজে পাওয়া দুস্কর, মাত্র বেয়াল্লিশ হাজার ছয়শো উনাশি বর্গ কিলোমিটারের দেশ নেদারল্যান্ডস এবং জনসংখ্যা মাত্র এক কোটি সত্তর লক্ষ। কিন্তু তাদের আবিস্কারের ইতিহাস বিশাল। "God created the earth, but the Dutch created the Netherlands", সমুদ্র থেকে বাঁধ দিয়ে দেশকে রক্ষা করা, সমুদ্রের লোনা পানি বাঁধের ভেতরে এসে মিঠে পানিতে রুপান্তরিত হয়ে যাওয়ার গল্পতো এখন পুরনো। বাঁধের প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশ সহ বহু দেশ অনেক উপকৃত হয়েছে এবং এখনো এই নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের কিছু কিছু আবিস্কার বিশ্ববাসীর জীবনকে কতভাবে বদলে দিয়েছে আজকে আমি সে গল্পটি লিখবো। ওয়াইফাইঃ ইন্টারনেট ছাড়া আধুনিক পৃথিবী অচল। একুশ শতাব্দীর মাইলফলক আবিস্কার। ইন্টারনেটকে ঘরে ঘরে সহজলভ্য, ব্যবহারপোযোগী ও সায়শ্রী মূল্য এনে দিয়েছে ওয়াইফাই (WIFI). চব্বিশ ঘন্টা অনলাইন, টিভি, ফোন, মোবাইল, ট্যাব একটা বাড়িতে কত ডিভাইস আর সবই চলছে ওয়াইফাইতে। উনিশো নব্বই সালে নেটওয়ার্ক বিজ্ঞানী ভিক্টর হেইস আর কেইস লিঙ্কস প্রথমে ওয়েভল্যানের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন যা পরে নিউখেইনে এসে ওয়াইফাইয়ে রুপান্তর হয়। বিজ্ঞানী ভিক্টর হেইসকে “ফাদার অফ ওয়াই-ফাই” উপাধি দেয়া হয় আর কেইস লিঙ্ককে বলা হয় “ইন্টারনেটের অগ্রদূত”। হাই ফিডেলিটি আর ওয়ারল্যাস শব্দ দুটো থেকে “ওয়াইফাই” নামটির উৎপত্তি। আজকে আমরা ওয়াইফাইয়ের যে রুপটি দেখছি সেটি এসেছে অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি সিএসআইআরও এর দ্বারা উনিশো সাতানব্বই সালে। এটি ইলেকট্রো ম্যগনেটিভ ওয়েভ বা রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে। এর নাম কিন্তু প্রথমে Wifi ছিলো না, এটি “কে 802.11” নামে পরিচিত ছিলো। একটি সুন্দর নামের জন্যে ব্র্যান্ড তৈরী করা সংস্থা ইন্টারব্র্যান্ডকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো যারা এই ওয়াইফাই নামটি নিয়ে এসেছিলো। উনিশো নিরানব্বই সালের আগষ্টে প্রথম ওয়াইফাই নামটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। সম্ভবত আমার এই লেখাটা আপনি এখন ওয়াইফাইয়ের সাহায্যেই পড়ছেন। ব্লু টুথঃ ওয়াইফাইয়ের পরে অন্তর্জালে মোটামুটি সবচেয়ে পরিচিত শব্দ ব্লু টুথ। ডাচ ইঞ্জিনিয়ার ডঃ ইয়াপ হার্টসেন উনিশো নব্বই সালে ডিভাইসের মধ্যে ওয়্যারলেস সংযোগের ধারণাটি প্রবর্তন করেন। তখন তিনি সুইডিশ টেলিকমুউনিকেশান কোম্পানী এরিকসনে কাজ করতেন। উনিশো নব্বই সালে ডঃ ইয়াপ হার্টসেন ইউরোপীয় পেটেন্ট অফিস কর্তৃক ইউরোপীয় আবিষ্কারক পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। "ব্লুটুথ" নামটি ড্যানিশ রাজা হ্যারাল্ড ব্লোট্যান্ডের উপনামের একটি ইংরেজী ভাষান্তর। দশম শতাব্দীতে, ডেনমার্কের দ্বিতীয় রাজা ডেনমার্ক এবং নরওয়ের জনগণকে একত্রিত করার জন্য স্ক্যান্ডিনেভিয়ান প্রবাদে বিখ্যাত ছিলেন। ব্লুটুথ স্ট্যান্ডার্ড তৈরিতে, এরিকসন মোবাইল টেকনোলজি টিম বিশ্বাস করেছিলো যে তারা আসলে পিসি এবং মোবাইল শিল্পকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে অনুরূপ কিছু করছে। তাই এই নামটিই প্রাধান্য পেলো। লোগোটি একটি ভাইকিং শিলালিপি, যা বাইন্ড রুন নামে পরিচিত, যেটি রাজার দুটি আদ্যক্ষর একসাথে যোগ করেছে। ডঃ ইয়াপ হার্টসেনের নামে দুই শতাধিক পেটেন্ট রয়েছে, এমেরিকার “ন্যাশনাল ইনভেন্টরস হল অফ ফেমে” টমাস এডিসন, হেনরি ফোর্ড, রাইট ভাই এবং স্টিভ জবস সহ অন্যান্যদের সাথে তার নামও অন্তর্ভুক্ত। ব্যাক্তি জীবনে এতটাই সাধাসাধি ইয়াপ যে ড্রেন্টের মিডিয়ামার্কেটের ব্লু টুথ ডিপার্টমেন্টে দাঁড়িয়েও কেউ জানে না পাশেই এর জনক থাকেন। ডঃ ইয়াপ হার্টসেন ডাচ পত্রিকা আলখেমেইনে ডাগব্লাদকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ব্লু টুথ আবিস্কার নিঃসন্দেহে আমার জীবনের মাইলফলক কিন্তু আমি নিজেকে টমাস আলভা এডিসনের সমকক্ষ মনে করি না। আর এই সাদাসাদি সাইকেলে চড়া জীবন আবার খুব প্রিয়, খ্যাত হয়ে বিড়ম্বনায় পরতে চাই না। স্লট ডিজিটাল কোডিং সিস্টেমঃ খ্রোনিংখেনে জন্ম নেয়া ডাচ ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার রোমকে ইয়ান বের্নহার্ড স্লট উনিশো পচানব্বই সালে একটি ডেটা শেয়ারিং টেকনিক আবিস্কার করেছেন যা দিয়ে একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল মুভি ফাইলকে পাঁচশো বারো কিলোবাইটে রুপান্তর করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। ইয়ান স্লট যখন তার আবিস্কারকে জনসম্মুখে নিয়ে আসার জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজে পেয়ে কন্ট্রাক্ট সাইন করবেন বলে সব ঠিক হয়েছে ঠিক তার একদিন আগে এগারোই জুলাই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। সম্পূর্ণ সোর্স কোডটি পুনরুদ্ধার করা হয়নি, প্রযুক্তি ও দাবীটিও আর পুনরুৎপাদন কিংবা যাচাই/পরীক্ষা করা হয়নি। এসডিসিএস ডিজিটাল স্টোরেজের জন্য একটি নতুন বর্ণমালা যা বাইনারি কোড ব্যবহার করে নি, কিন্তু অনেক বেশি কার্যকর পদ্ধতি। এসডিসিএস এর প্রযুক্তি খুব সহজ। একটি টেক্সট সীমিত সংখ্যক অক্ষর নিয়ে গঠিত, তেমনি একটি সিনেমাতে সীমিত পরিমাণে রং এবং শব্দ থাকে। সেই সমস্ত মৌলিক তথ্য পাঁচটি অ্যালগরিদমে পাঁচটি মেমরি স্টোরে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। চলচ্চিত্রের জন্য, প্রতিটি অ্যালগরিদমের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য চুয়াত্তর এমবি। এটি মোট তিনশো সত্তর এমবি। প্রযুক্তিটি শুরু করার জন্য, শুধুমাত্র একটি সঠিক ভিত্তির প্রয়োজন ছিল। একটি বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠার জন্য, একটি চলচ্চিত্রের প্রতিটি ছবির জন্য, স্লট একটি একক কোড গণনা করে। এই কোডগুলির সংযোজন আবার একটি একক কোডে পরিণত হবে। সিনেমার দৈর্ঘ্য বা বইয়ের আকার নির্বিশেষে চূড়ান্ত কোডটির ভিত্তি দৈর্ঘ্যে এক কিলোবাইট হবে। কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক রুল পাইপার এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের সংকোচনের সম্ভাবনা নিয়ে মানুষের সংশয়ের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “প্রত্যেকেই এটি সম্পর্কে ভুল ধারনা করে। এটি সংকোচনের বিষয় নয়। প্রযুক্তিটিকে অ্যাডোব-পোস্টস্ক্রিপ্টের ধারণার সাথে তুলনা করা যেতে পারে, যেখানে প্রেরক এবং প্রাপক জানেন যে কোন ধরণের ডেটা রেসিপি স্থানান্তর করা যেতে পারে, প্রকৃতপক্ষে ডেটা নিজেই প্রেরণ না করে।" ক্যাসেট-সিডি-লেজার ডিস্ক-ডিভিডিঃ শুধু মিউজিক সিস্টেম বানিয়ে ফিলিপ্স হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি, মিউজিক সিস্টেম ব্যবহার করার জন্যে যা যা আনুষাঙ্গিক জিনিস প্রয়োজন তাও বানিয়েছে ফিলিপ্স। লু ওটেন্স আর তার টিমের দ্বারা উনিশো তেষট্টি সালে বেলজিয়ামের হ্যাসেল্টে শুরু হয়েছিলো ক্যাসেটের উৎপাদন। এমেরিকান পদার্থবিদ জেমস রাসেল উনিশো পয়ষট্টি সালে মার্কিন শক্তি বিভাগের ব্যাটেল মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট দ্বারা পরিচালিত প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় এটি নিয়ে চিন্তা করেছিলেন। অপটিক্যাল ডিজিটাল রেকর্ডিং (ওডিআর) নামে পরিচিত তার ধারণা ছিল রেকর্ডিং এবং প্লেব্যাক করার জন্য লেজার ব্যবহার করে আলোক সংবেদনশীল ফিল্মে তথ্য সংরক্ষণ করা। উনিশো চুয়াত্তর সালে, ওডিআর তার কাজের জন্য, রাসেলকে আএর এন্ড ডি হানড্রেড পুরস্কারে সম্মানিত করে। উনিশো আশি সালের মধ্যে তিনি প্রথম ডিস্ক প্লেয়ার তৈরি করেছিলেন। উনিশো বিরাশি সালের অক্টোবরে ফিলিপ্স প্রথম অডিও সিডি রিলিজ করে। এই যুগান্তকারী উদ্ভাবনের জন্যে দুই হাজার নয় সালে ফিলিপস IEEE মাইলফলক পুরস্কার পেয়েছিল। দুই হাজার পনের সালের জানুয়ারিতে, সিডি ফিলিপ্সের সবচেয়ে মূল্যবান আবিস্কার হিসাবে পুরস্কৃত হয়েছিল, যা আইন্ডভেনস ডাগব্ল্যাডের পাঠক এবং ওমরুপ ব্রাবান্টের শ্রোতাদের পাশাপাশি ফিলিপস রিসার্চ কর্মীদের ভোট দ্বারা নির্বাচিত হয়েছিলো। জনগণ এবং রিসার্চ ফেলো উভয়ই বিজয়ী হিসাবে সিডিকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বসম্মত ছিলেন। প্রতিফলনের নীতি অনুসরণ করে ফিলিপ্স একটি ভিডিওডিস্ক তৈরি করেছিলো, উনিশো বাহাত্তর সালে এমসিএ’র সাথে মিলিত হয়ে তাদের প্রযুক্তিটিকে একত্রিত করে তারা এটি বাজারে আনে। ভিসিআর চালু হওয়ার দুই বছর পর, উনিশো আটাত্তর সালে এগারোই ডিসেম্বর জর্জিয়ার আটলান্টা বাজারে লেজারডিস্ক প্রথম পাওয়া যায়। সিডি’র উন্নত বিবর্তিত প্রক্রিয়া হলো ডিভিডি। এটা আসলে কোনো একক ব্যক্তির অবদান নয়, বরং অনেক মানুষ এবং অনেক কোম্পানির অবদান। এটির দুটি গঠন প্রক্রিয়া ছিলো। এমএমসিডি ফর্ম্যাটটি ফিলিপ্স ও সনি দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছিল। এত গবেষণা-আলোচনা যে নাটল্যাবে হয়েছে সেখানে গেছি কতবার, কত ট্রেনিং এ। ছোটবেলায় ক্যাসেট তারপর সিডি। আমাদের ঘরে ঘরে যেসব ব্যবহার করেছি তার জন্ম হয়েছিলো এই স্থানে। কত মানুষের জীবন গড়ে দিয়েছে, আনন্দ-বেদনার কাব্য রচিত হয়েছে এই ঘরগুলোতে হাঁটতে হাঁটতে যখন ভাবতাম গা কেমন শিরশির করে উঠতো। দ্যা আই টেস্টঃ যারা যারা চোখের ডাক্তারের কাছে গিয়েছি চোখ পরীক্ষার জন্যে, ছোট অক্ষর – বড় অক্ষর সব পড়তে হয়েছে। আর এভাবে চোখ পরীক্ষার এই পদ্ধতিটি আবিস্কার করেছেন ডাচ চক্ষু বিশেষজ্ঞ হ্যারমান স্ন্যালেন। আঠারশো বাষট্টি সালে “ভিজ্যুয়াল একুইটি” নির্ধারন করার জন্যে যে চার্টটি তিনি প্রণয়ন করেন তাকে “স্ন্যালেন চার্ট”ও বলা হয়, যা খুব দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায় এবং চোখ পরীক্ষার সাবর্জনীন মানদন্ডে পরিনত হয়। এই আবিস্কারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি যাকে স্ন্যালেন “অপটোটাইপস” বলেছিলেন, বিশেষভাবে ডিজাইন করা পাঁচ বাই পাঁচের অক্ষরগুলো। স্ট্যান্ডার্ড ফন্ট ব্যবহার না করে এগুলো ব্যবহার করলে অনেকটা নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা যায়। সাধারণ দৃষ্টিশক্তিকে অপটোটাইপ অক্ষরের একটি লাইন সঠিকভাবে পড়তে ব্যবহার করা হয়েছিলো যাতে পাঁচ মিনিটের চাপ যুক্ত করা হয়েছিলো এবং এক মিনিটের চাপ আলাদা করা হয়েছিলো (D); V= d/D.। স্ন্যালেন চার্ট আবিস্কারের পর অন্য যেকোনো পোস্টারের থেকে সবচেয়ে বেশি কপি খোদ যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয়েছে। একুশ শতাব্দীতেও বিশ্বব্যাপী চিকিৎসাক্ষেত্রে মানদন্ড হিসাবে রয়ে গেছে। অনেক অনেক ভারী ভারী তত্ত্ব নিয়ে এতক্ষণ আলোচনা হলো, এবার অন্যকিছুঃ গাজরঃ গাজরের রঙ কেন কমলা? এর সাথে কি নেদারল্যান্ডসের রাজ পরিবার যাদের “হাউজ অফ অরানিয়া” কিংবা “কমলা বাড়ি” বলা হয় তাদের কোন যোগাযোগ আছে? চিরকালই কি গাজর কমলা রঙের ছিলো? জবাব হলো, না, গাজর আসলে কমলা রঙের ছিলো না। এমেরিকার মত জায়ান্ট দেশের পরই কৃষিকাজে পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থানে আছে নেদারল্যান্ডসের মত আয়তনে পুঁচকে একটি দেশ। কথিত আছে, সতেরশো সালের দিকে যখন ডাচল্যান্ড স্প্যানিশ কলোনী ছিলো তখন কমলা রাজপুত্র উইলিয়াম ফ্রেডেরিক, যে কিনা নেদারল্যান্ডসকে উদ্ধার করে, সংগঠিত করার জন্যে ডাচ বিদ্রোহের নায়কও ছিলো, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ডাচ কৃষকেরা সাদা, বেগুনী গাজরের পরিবর্তে কমলা গাজরের পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করে। কমলা গাজর স্বাদ ও পুষ্টিগুনে পৃথিবীব্যাপী দারুণ সমাদৃত হয় এবং ডাচ রাজ পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় এর ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হয়। যদিও জনপ্রিয় এই গল্পটি জেনেটিসিস্টদের দ্বারা মূলত বাতিল হয়ে গেছে। গবেষকরা প্রথমবারের মতো গাজরের জিনোম সম্পূর্ণরূপে ম্যাপ করে দেখেন যে, মিউটেশনের ফলে রোমান সাম্রাজ্যের দিনগুলিতে কমলা গাজর প্রথম দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে গাজর প্রকৃতপক্ষে তাদের কমলা রঙের জন্য ডাচ কৃষকদের দ্বারা চাষাবাদ করা হয়েছিল, কিন্তু পরিবেশবিদ ক্লাস ভ্রিডলিং ভক্সক্রান্টকে বলেছিলেন যে 'কমলা গাজর আগেও ছিল তার ভাল প্রমাণ রয়েছে।' যারা জানেন না তারা জেনে নিন, গাজর অনেক অনেক রঙে এসেছে - লাল, বেগুনি, সাদা এবং কালো। তবে কমলা গাজরের সাথে কমলা রাজপরিবারের যে ক্ষীণ একটা সম্পর্ক আছে সেটা ইতিহাসে জাজ্বল্যমান। সাবমেরিনঃ যুদ্ধ কিংবা সীমান্ত পাহারায় সাবমেরিন আজ একটি অতি পরিচিত নাম। ডাচ বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলী কর্নেলিস ইয়াকোবসজন ড্রেবল ষোলশ কুড়ি সালে পানির নীচে চলার উপযোগী ও কার্যকারী সাবমেরিন প্রথম ডিজাইন করেছিলেন। তিনি তখন বৃটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীতে কাজ করছিলেন, তিনি চামড়া ঢাকা কাঠের ফ্রেমের চলাচল যোগ্য সাবমেরিন তৈরি করেছিলেন। এর প্রথম পরীক্ষামূলক ভ্রমণ টেমস নদীতে হয়েছিলো। ষোলশ বিশ থেকে ষোলশ চব্বিশের মধ্যে ড্রেবেল আরও দুটি সাবমেরিন সফলভাবে তৈরি ও পরীক্ষা করে, প্রতিটি আগেরটির চেয়ে বড়। চূড়ান্ত (তৃতীয়) মডেলটিতে ছয়টি ওয়ার ছিল এবং ষোল জন যাত্রী বহন করতে পারে। এই মডেলটি রাজা প্রথম জেমস এবং কয়েক হাজার লন্ডনবাসীর কাছে প্রদর্শিত হয়েছিল। সাবমেরিনটি তিন ঘন্টার জন্য পানিতে নিমজ্জিত ছিল এবং ওয়েস্টমিনস্টার থেকে গ্রিনউইচ যেতে ও আসতে পারতো, বারো থেকে পনের ফুট (চার থেকে পাঁচ মিটার) গভীরতায় ভ্রমণ করতে পারে। ড্রেবেল এমনকি রাজা জেমসকেও এই সাবমেরিনে টেমসের তলদেশে একটি পরীক্ষামূলক ডাইভে নিয়ে যান, যার ফলে রাজা জেমস হলো প্রথম রাজা যিনি পানির নিচে ভ্রমণ করেন। এই সাবমেরিনটি টেমস-এ বহুবার পরীক্ষা করা হয়েছিল কিন্তু নৌপ্রধানকে এটি যথেষ্ট আকৃষ্ট করতে পারেনি আর তাই এটি কখনও যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়নি। দ্যা স্টক মার্কেটঃ বিশ্বব্যাপী কিপ্টে হিসেবে বেনিয়া ডাচদের খানিকটা নাম আছে। এরমধ্যে প্রচলিত ও জনপ্রিয় হলো “গোয়িং ডাচ”, যার মানে, একসাথে সবাই খেতে গেলেও যার যার খরচ সে নিজে পরিশোধ করবে। এই কিপ্টে ডাচেরাই স্টক মার্কেট চালু করে পৃথিবীশুদ্ধ বানিজ্যের ধারনা পরিবর্তন করে দিলো। আধুনিক বিশ্বে এর মাধ্যমে এখন হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য বদলে যায়। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দীর্ঘ বাণিজ্য-ভিত্তিক সমুদ্রযাত্রার অর্থায়নের উপায় হিসাবে, ডাচ আইনপ্রণেতা এবং ব্যবসায়ীরা ষোলশ দুই সালে প্রথম শেয়ার বাজার উদ্ভাবন করেছিলেন। সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে প্রত্যেককে সমুদ্রযাত্রায় বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। মূলধন বাড়াতে কোম্পানিটি স্টক বিক্রি করার এবং বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপর ষোলশ এগারো সালে, আমস্টারডাম স্টক এক্সচেঞ্জ তৈরি করা হয়েছিল। বহু বছর ধরে, ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করা এক্সচেঞ্জে একমাত্র ব্যবসায়িক কার্যকলাপ ছিল। স্টক মার্কেটের ব্যাপক প্রসার ষোলশ দশকের নেদারল্যান্ডসের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করেছিল। শুধু স্টক মার্কেট নয়, উনিশো আটাশি সালে “ফেয়ার ট্রেড লেবেল”ও বাজারে নিয়ে আসে দুইজন ডাচ। এই সার্টিফিকেট পাওয়া পন্যগুলো বাইরের বাজারে সব ভোক্তাদের কাছে ন্যায্য দামে পৌঁছাতে পারে। এটি গ্রাহক ও উৎপাদক উভয়ের মাঝেই এই বিশ্বাস ও সাম্যতার প্রতীক। দ্যা অলিম্পিক ফ্লেইমঃ উনিশো আটাইশ সালে, স্থপতি ইয়ান উইলস আমস্টারডামের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে কাজ করছিলেন। তিনি একটি লম্বা টাওয়ারের নকশা করেছিলেন যেটি থেকে ধোঁয়া বের হয়েছিল। উইলস আগুনের শিখার চেয়ে ধোঁয়ার প্রতি বেশি মনোযোগী ছিলেন কারণ এটি দিনের বেলা আরও দৃশ্যমান হবে। তারপর থেকে, আগুন অলিম্পিকের একটি ঐতিহ্যগত অংশ হয়ে ওঠে, যদিও উনিশো ছত্রিশ সাল বার্লিন গেমস পর্যন্ত ক্রীড়াবিদরা এই ফ্লেইমটি বহন করেন নি। বহুল আলোচিত ডাচ আবিস্কারের মধ্যে আরো আছে মাইক্রোস্কোপ, টেলিস্কোপ, ম্যান মেইড আইল্যান্ড, ফায়ার হোস, স্পীড ক্যামেরা ইত্যাদি। অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং নিয়ম মানা ডাচ জাতি খুব বেড়াতে ভালবাসে। আড়ম্বরহীন স্বভাবের ডাচদের পৃথিবীর খুব কম কোনা আছে যেখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সামান্য সুযোগ পেলেই পিঠে ব্যাকপ্যাক কিংবা ক্যারাভান নিয়ে বেড়িয়ে পরেছে। দুই হাজার আঠারো সালে ওইসিডি প্রকাশিত “উন্নততর জীবন সূচক” ক্যাটাগরিতে নেদারল্যান্ডস “ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্সে” বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকারী রাষ্ট্র। কাজের আর বিশ্রামের এরকম সমন্বয় পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া ভার। তানবীরা হোসেন ০১/১১/২০২১

Thursday 25 November 2021

বুক রিভিউ – প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ

সেমিটিক ধর্মের ধারনা আর সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে পাঠা মৌলবাদী আরিফের সাথে কথাকথিত যুক্তিবাদী সাজিদের তর্ক হয়। কথাকথিত যুক্তিবাদী সাজিদ সারারাত আরিফের যুক্তিগুলো ভাবে। বইআনুসারে এত অকাট্য সব যুক্তি ছিলো যে তাতে মানসিকভাবে পরাস্ত সাজিদ সকালেই শক্ত ভাবে ঈমান আনে, এবং আর কোনদিন পথচ্যুত হয় না। বইয়ের শুরুটি হয় এভাবে। সৃষ্টিকর্তার সন্ধান পেতে বা তার কাছাকাছি যেতে মুনী, ঋষি, দরবেশ, আউলিয়ার কথাতো বাদ, স্বয়ং নবী মুহাম্মদ (সাঃ)কে পনের বছর হেরা পর্বতের গুহায় সাধনা করতে হয়েছিল। আর সাজিদ তার সন্ধান পেয়ে যায় মাত্র এক সন্ধ্যায়, ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না? হ্যাতেরে খানিকটা মুফাসসিল ইসলামের মত লাগে না? সুবিধামত এদিকে আর ওদিকে। লেখক তার বইয়ে আনন্দাশ্রু গোপন করেন নাই, তিনি লিখেছেন, “ জানিস, এক সময় যুবকেরা হিমু হতে চাইতো। হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে, মরুভূমিতে গর্ত খুঁড়ে জ্যোস্না দেখার স্বপ্ন দেখতো। দেখিস, এমন একদিন আসবে, যেদিন যুবকেরা সাজিদ হতে চাইবে। ঠিক তোর মত।“ কথা বিফলে যায় নাই, পাঠা থেকে রাম পাঠায় পুরো উপমহাদেশ সয়লাব। আসেন বই থেকে এবার দুইটা জ্ঞানের কথা শুনি ---- স্রষ্টা কেন মন্দ কাজের দায় নেবেন না? আল্লাহতায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে হাত-পা-চোখ-নাক, কান, মুখ, মস্তিস্ক এসব দিয়ে দিয়েছেন। সাথে দিয়েছেন একটি স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি। এখন এসব ব্যবহার করে সে যদি কোন ভাল কাজ করে, তবে তার ক্রেডিট স্রষ্টাও পাবেন কারণ যন্ত্রগুলো আল্টিমেটলি তার দান। আর এসব ব্যবহার করে মানুষ যদি কোন খারাপ কাজ করে তার দায় সম্পূর্নই মানুষের, জিনিস আল্লাহর দান হলেও এখন আর তিনি দায়ভার নেবেন না। কারণ তারে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছিলো ভাল কাজ করতে, করে নাই সেটার দায় তার। এবার আসি একটি সাম্প্রদায়িক আয়াত এবং আয়াতটি হলোঃ “হে বিশ্বাসীরা! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।“ লেখকের মতে এর আসল মানে হলো, “ হে বিশ্বাসীরা! তোমরা অমুসলিমদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করো না।“ কারণ একজন অভিভাবক হলো সে-ই, যে আমাদের যাবতীয় গোপন খবর জানবে, আমাদের শক্তি, আমাদের কৌশল, আমাদের দুর্বলতা জানবে। অমুসলিমরা আমাদের সিক্রেট জানলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন, এমেরিকা, রাশিয়া বা চীনের কাছে তার সামরিক শক্তির কথা ফাঁস করে না। তো, কনক্লশান টানলে বোঝা যায়, অমুসলিমদের সাথে মুসলিমদের বন্ধুত্ব হবে এমেরিকার সাথে চীনের মত। হুম, উদাহরণ তো আছেই সামনে, সুজলা সুফলা "সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি"র বাংলাদেশ। স্রষ্টা যদি দয়ালুই হবেন তাহলে জাহান্নাম কেন? বাঁচার উপকরণ, অর্থ্যাৎ লাইফ জ্যাকেট তোমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছি। এখন তুমি তোমার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে জ্যাকেটটি গ্রহণ করে প্রাণে বাঁচবে নাকি ডিনাই করে মৃত্যুকে বরণ করবে সেটা সম্পূর্ণ তোমার ব্যাপার। আমি ধরে নিচ্ছি পাঠা এখানে পবিত্র কোরানকে লাইফ জ্যাকেটের সাথে তুলনা করছে। আরজ আলী মাতুব্বরের মত আমি এখনো বুঝছি না, আমি সব কথা পালন করলে, স্রষ্টার দয়ালু হওয়ার অপশান কোথায়? আর কথা না শুনলে যদি শাস্তিই দেন তাহলে তিনি মানুষের চেয়ে উর্ধ্বে এই ধারনায় কি করে আসেন? রক্ত মাংসের মানুষের মতই তার অনুভূতি আর আচরণ, নয় কি? হুমায়ূন আজাদ, আরজ আলী মাতুব্বর, অভিজিৎ রায় এদের সাথে বাস্তবে পাঠাটার আই মিন লেখকের দেখা হইলে খাইতো দুইটা থাবড়া তাই সেদিক দিয়ে সে হাঁটে নাই। বাংলা সিনেমার আদলে স্বপ্ন দৃশ্য তৈরী কইরা সেই জ্যাম্বস গ্রুপের স্টাইলে ফাইট দিছে তাদের সাথে। তবে বাস্তবে তাদের সংস্পর্শে আসতে পারলে হয়ত এই বই অন্যভাবে লেখা হতো কিংবা আদৌ হতো না, অবশ্য তারা এই পাঠাকে তাদের সাথে কথা বলার যোগ্য ভাবতেন কিনা সেটা আলাদা তর্ক। পুরো বইটা পড়ে অবশ্য আমি একটা লাইনও খুঁজে পাইনি যেখানে পাঠাটা নতুন কিছু বলছে যেটা শুক্রবার শুক্রবার মসজিদের খুতবায় হুজুররা আগে বলে নাই যাহোক পরিশেষে বলি, এদের জ্ঞান দাও প্রভু এদের পাঠা আই মিন ক্ষমা করো।

Tuesday 16 November 2021

“রেহানা মরিয়ম নূর”

“রেহানা মরিয়ম নূর” অনেকে বলছেন “ওভাররেটেড” আবার অনেকে বলছেন “মাস্টারপিস”। আমি বলবো, খুবই বাস্তবধর্মী একটি স্ক্রিপ্ট এবং অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের। মেকিং খানিকটা ইরানী ছবিগুলোর সমতূল্য। বাংলাদেশে পড়াশোনা করা অনেক মেয়েই শিক্ষক বা হুজুরদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যারা ফিজিক্যালি হয়নি তারাও ভারবাল এবিউজের স্বীকার হয়েছে। এধরনের বাস্তব সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলচিত্র নির্মাতারা নিরাপদ স্ক্রিপ্টে কাজ করেন। সেদিক দিকে সাদের এই চেষ্টা সাহসী ও প্রশংসনীয়। সেট, সংলাপ, পোশাক সময়টিকে প্রচন্ডভাবে উপস্থাপন করে, কিছুই আরোপিত লাগেনি। রেহানা সারাক্ষণ মাথায় কাপড় দেয়া, বোরকা টাইপ পরা, যেটা অধুনা বাংলাদেশকেই উপস্থাপন করেছে। দু’একটা জিনিস না লিখলেই নয়, এনি যখন জিজ্ঞেস করলো, “ম্যাম আপনার সাথেতো কিছু হয় নাই, আপনি কেন এমন করতেছেন।“ এই কথাটি জিজ্ঞেস করলো ঘরের ভেতর, পরের দৃশ্য বারান্দায় এনিকে জড়িয়ে রেখেছে রেহানা। সম্ভবত প্রশ্ন করেছে রাতে আর জড়িয়ে ধরা দিনে। খাপছাড়া। পুরো সিনেমাটায় একটা ব্লু ফিল্টার দেয়া। এ দিয়ে পরিচালক বা চিত্রগ্রাহক কি বোঝাতে চেয়েছেন তারাই জানেন। দিন না রাত, আশেপাশে রঙ, ড্রেসের রঙ কিছুই ঠিক করে বোঝা যায়নি যেটি সিনেমাটার মান কমিয়েছে। আর ক্যামেরার কোন লং শট নেই বললেই চলে, টিভি নাটকের মত অভিনেতা অভিনেত্রীদের মুখে মুখে সেটে সেটে ক্যাম ধরা, সিনেমার ওয়াইড এংগেল ব্যাপারটা খানিকটা মিসিং। কাহিনী নিয়ে অনেকেই লিখেছেন আমি আর সেগুলোতে গেলাম না। একটা জিনিস খুবই চোখে লাগার মত, “রেহানা” চরিত্রটিকে যথেষ্ঠ সাহসী, আপোষহীন আর জেদী দেখানো হয়েছে। বাস্তবে এ ধরনের মানুষ খুব ঠান্ডা মাথার হয়, রেহানা চরিত্রটিকে এখানে কোথাও কুল দেখানো হয়নি। সিনেমার শেষ দৃশ্যটি, নিজের মেয়ের সাথে যা ব্যবহার দেখানো হলো, তাও একজন ডাক্তার, প্রফেশনাল মা চরিত্রের কাছ থেকে, এটি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। ইউরোপে হলে, চাইল্ড এবিউজের চার্জ লাগতো গায়ে। এর বাইরেও, বাচ্চা মেয়েটির কষ্ট মা বুঝলো না, তাকে কিভাবে সান্ত্বনা দিতে হবে, মা জানে না, জানবে না! হইচইতে সৃজিতের সিরিজ “রেক্কা”তে বাঁধনের অভিনয় দেখেছিলাম আগে। নায়িকা হিসেবে সুন্দর সুন্দর ছবিতো দেখেছিই। এই সিনেমার গল্প আর ডিরেকশান দুটোই ভাল, বাঁধন শক্তিশালী অভিনেত্রী আর অভিনয়ও করেছে ভাল। এর বাইরে ব্যক্তি বাঁধনকেও আমার খুব পছন্দ। বাংলাদেশে বসবাসকারী মিডিয়াকর্মী হিসেবে তিনি যথেষ্ঠ বোল্ড। নুসরাত ফারিয়া টাইপ অভিনেত্রীরা যেখানে শুক্রবারে এক ঢং অন্যবারে অন্য ঢং করে সেখানে তিনি বেশ নিজের মত করে গুছিয়ে, ভনিতা ছাড়া নিজের জীবন যাপন করছেন। অনেকেই অবশ্য পরে বদলে গেছেন, আশাকরছি বাঁধন এরকমই থাকবেন, বদলাবেন না। নিজের কাজটাকে ভালবাসবেন, বিশ্বাস করবেন, সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে জনগনের সাথে প্রতারণা করবেন না।
তানবীরা হোসেন ১৬/১১/২০২১

চোখবন্ধ অন্ধ সময়

ঝরঝরে বাংলায় লেখা বন্ধু লেখক শামীর রুনার প্রথম উপন্যাস “চোখবন্ধ অন্ধ সময়” পড়লাম। রুনার লেখার সাথে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। মাঝে মাঝেই টাইমলাইনে এঁকে দেয় স্মৃতি জাগানিয়া, ব্যথা জাগানিয়া কিছু তুলি রেখা যা পড়লে ফেলে আসা শৈশব কৈশোরের জন্য মন উথালপাথাল করে। উপন্যাসটি আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরেছে। সামাজিক পরিস্থিতি, মানুষের মানসিকতা, রাজনীতি, দাম্পত্য সম্পর্কের টানাপোড়েন, সমকামিতা সবই উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। দুই প্রান্তের দুই নারীর জীবন সংগ্রাম এই উপন্যাসের উপজীব্য। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অঞ্জলি যে বিয়ের পরে হয়ে যায় রেহানা। সাথে আসে হিজাব। তারপর স্বামীর অনুমতিতে চাকুরী, সংসারের বাইরে যাতে যেতে না পারে সেজন্য চাই বাচ্চা। পরিচিত লাগছে না? দ্যা স্টোরি নেক্সট ডোর। সেখানেই কি থামে? না, কখনোই না, বউ কার সাথে কথা বলবে, কার সাথে বন্ধুত্ব করবে, কোন আত্মীয়ের বাসায় কতটুকু বেড়াতে যাবে সব ঠিক করে দেয় শাশুড়ি আর বর। এ পর্যন্ত ঠিক ছিলো। কিন্তু উপন্যাসে অঞ্জলি যখন শিকল ভাঙতে চাইলো, তখন অঞ্জলির মা এগিয়ে এলো যেটা আমার কাছে খুব বাস্তব লাগেনি। বেশির ভাগ মেয়েই পরিবারের সমর্থন পায় না, মানিয়ে নে, কি করবি, এটাই জীবন, এরকমই সব, এসব কথার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে খুন পর্যন্ত হয়ে যায়। এছাড়াও, বন্ধু সুমন সাহায্য করতে এগিয়ে আসে যে কিনা সমকামী, সেটাও আমার কাছে খানিকটা লেখকের “ইজি এস্কেপ” মনে হয়েছে। সমকামী না হয়ে, বিপদে বন্ধুর সাথে আগের দিনের হৃদ্যতা ফিরে আসতে পারতো কিংবা ধরা যাক প্রেম হতে পারতো। তবে লেখক যেহেতু একটা নির্দিষ্ট সময়কে ফ্রেমবন্দী করতে চেয়েছেন, মুক্তচিন্তার মানুষদের ওপর হামলা ও হত্যাকে সাহিত্যের পাতায় স্থান দিয়েছেন তাই হয়ত পটভূমিটি এভাবে সাজিয়েছে। উপন্যাসের দ্বিতীয় চরিত্র মনীষাকে আমার কাছে অঞ্জলির চেয়েও শক্তিশালী মনে হয়েছে। দরিদ্র সনাতন ধর্মালম্বী নিতান্ত কিশোরী মেয়েটিকে, দূর গ্রামের এক মতলবী পাত্রের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। পণ নেবে না কিন্তু তাদের ধান্ধা অন্য। যে ধরনের সামাজিক পরিস্থিতি থেকে, ধর্মীয় চাপ অগ্রাহ্য করে, নিতান্ত শঙ্কা শঙ্কূল অজানার পথে পা বাড়িয়েছে সে, সেখানে ইতিবাচক পরিস্থিতি খুব কমই হয়, লেখককে ধন্যবাদ মনীষাকে আলোর দিকে ধরে রাখার জন্যে। ধর্মের নামে এই পীড়ন আর কতদিন? শেকল ভেঙে মনীষারা বাইরে আসুক, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, নিজের অস্তিত্ব নিজে তৈরি করুক। নারীরা শিক্ষায়, কর্মে যতদূর এগিয়েছে, তাদেরকে সেভাবে গ্রহণ করার মানসিকতায় পুরুষেরা সেভাবে আগায়নি। সমাজও স্বাধীন মতামতের মেয়েদের গ্রহণ করতে এখনো প্রস্তূত হয়নি। বাড়ি থেকে মেয়েকে অফিস করতে যেতে দেয়, এইতো অনেক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, পুরুষের পাশে বসে কাজ করে মানেই অনেক আধুনিক। স্বাধীনতার এই সংঘর্ষ এক সময় অনিবার্য। ভেঙেচুরেই প্যাটার্ন তৈরি হয় আর হবে। অঞ্জলি আর মনীষাদের প্রতি অনুরোধ এই প্রতিবাদ যেনো তারা থামিয়ে না দেয়, তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি না লড়ি মা কেমনে সমাজ বদলাবে তোমার মেয়েরা লড়লেই মা গো রাত পোহাবে তবে। লেখার শুরুতে বলেছিলাম, রুনার কাব্যিক গদ্যের কথা, বই থেকে দুটো লাইন তুলে না দিয়ে পারছি না, “ মুহূর্তে বাঁচি আর সেসব মুহূর্ত জড়ো করে একটি জীবন গড়ি। পরের দিন আচমকা সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। মুহূর্তের বাঁচার জীবন মুহূর্তে থেমে যেতে পারে বৈকি!” কিছু মুদ্রন প্রমাদ আছে, সামনের সংস্করণে আশা করি শুধরে যাবে। চৈতন্য থেকে প্রকাশিত এই উপন্যাসটি যারা পড়তে আগ্রহী (প্রবাসীরা) শুদ্ধস্বরের সাইটে গিয়েও পড়তে পারেন। সেখানেও ধারাবাহিকভাবে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছে। আমি সেখানেই প্রথম পড়তে শুরু করি। একবার শুরু করলে গল্পই আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে, আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।
তানবীরা হোসেন ১১/০২/২০২১

Monday 15 November 2021

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – সেকেন্ড নভেম্বর টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান

প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতেঃ আমি জানি ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছে, আজকের এই সংবাদ সম্মেলন খুব আনন্দের কিছু নয়। প্রতিদিন যারা নিউজ ফলো করছে তারা ইতিমধ্যে জানে, সংক্রমণ এবং হাসপাতালে ভর্তি দুটোর হারই অনেক বেড়েছে, দুঃখিত এ সময়ে আমাদেরকেও আরও কিছু সাবধানতা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। দুঃখজনক যে করোনার সাথে সম্পর্কিত সবকিছুই পরস্পরের মধ্যে বাদানুবাদে চলে যাচ্ছে। আজকের দিনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে সমাজে দুটো প্রতিপক্ষ তৈরী না হয়। বাস্তবতা হলো, কিছু কিছু মানুষ আছে যারা সব সময়ই সব নিয়মের বিরোধিতা করে। সাবধানী মানুষরা চায় কড়া নিয়মকানুন আর বেশীরভাগ মানুষ মাঝামাঝি কিছু একটা যায়। আসলে প্রত্যেকে নিজের অবস্থান থেকে সবকিছু বিবেচনা করে, সেটা অবশ্য যৌক্তিক। সব কিছুই আপেক্ষিক, তুমি কি বুড়ো না যুবক, বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ আছে কি নেই, শহরে ফ্ল্যাটে থাকো না গ্রামে বাড়িতে, পার্মানেন্ট চাকরি না ব্যবসা, ছাত্র না কর্মজীবি, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা আছে কি নেই এবং করোনার টিকা নিয়েছো কি নাও নি। অন্যান্য দেশের মত আমরাও এই কারণগুলো নিয়ে যুদ্ধ করছি। বাস্তবতা হলো, যত দিন যাচ্ছে তত নতুন ভাবে এই ঢেউয়ের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সমস্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবার মন্ত্রীসভায় আমাদের একটি নতুন পরিকল্পনা বের করতে হয়। সত্যি কথা বলতে, এটিও একটি যুদ্ধ। আমরা এমন একটি দেশে বাস করি যেখানে প্রত্যেকে নিজের মতামত দিতে পারে, নিজের পছন্দে চলতে পারে, কাউকে বাদ দেয়া সম্ভব না। অন্যদিকে করোনা এমন একটি বিষয় যেটা শুধুমাত্র একতাবদ্ধ হয়েই মোকাবেলা করা যায়। সেখানে, স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রণালয়, পরিকল্পনামন্ত্রণালয়, সমাজসেবামন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়, শহরের মেয়র প্রত্যেকের মতামতকে সমন্বয় করতে হয়। প্রত্যেকটি বিভাগই সমান গুরুত্বপূর্ণ আর কাউকে পূর্ণ অগ্রাধিকার দেয়া যায় না। এখন নতুন নিয়মগুলো নিয়ে কথা বলছি, যেসব নিয়ম চালু আছে সেগুলো থাকবে আর তার সাথে যোগ হবে, ভ্যাক্সিন নেয়া থাকলেও যদি সিমটম দেখা দেয় তবে পরীক্ষা করবে। পজিটিভ হলে বাড়িতে থাকবে এবং জিজিডির এডভাইস মেনে চলবে। ছয়ই নভেম্বর থেকে সবাইকে রেস্টুরেন্ট, জিম, ক্যান্টিন, স্টেডিয়াম, কনফারেন্স, সিনেমা, থিয়েটার, যাদুঘর, কালচারাল ক্লাব আর উৎসবগুলোতে করোনা/ভ্যাক্সিনের প্রমাণ দেখাতে হবে। ছয় তারিখ থেকে স্টেশান, এয়ারপোর্ট, সরকারী অফিস, হাসপাতাল, লাইব্রেরী, দোকান, নার্সিং হোম, কেয়ার হোম সব জায়গাতেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতেও হাঁটাহাঁটি করার সময়, ক্যান্টিনে বসে গল্প করার সময় মাস্ক পরতে হবে। বিউটিশিয়ান, মাসাজ, ফিজিওথেরাপিস্ট সবার জন্যে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হলো। যৌনকর্মীরা শুধু এর বাইরে থাকবে। যেখানে যেখানে করোনা/ভ্যাক্সিনের প্রমাণ দেখাতে হবে, সেখানে মাস্ক পরতে হবে না। সব নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের, জরিমানা বা শাস্তি দেয়া সবচেয়ে শেষ পদক্ষেপ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো দ্যা ইয়ংঃ ভ্যাক্সিন নিয়ে কথা বলতে গেলে আজকাল কেউ কেউ হুমকিও দিচ্ছে কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখনই এই সংক্রমণের গতি থামানো না গেলে ডিসেম্বরে এখনের চেয়ে ডবল মানুষ আইসিইউতে শয্যাশয়ী থাকবে। কিন্তু আমরা চাই করোনা রোগী ছাড়াও অন্য রোগীদেরও সমান স্বাস্থ্য সেবা দিতে। তাই সর্তক হয়ে পা ফেলতে হবে। রেস্টুরেন্ট, ক্যাফের মালিকরা তাদের কর্মচারীদের কাছে করোনা/ভ্যাক্সিন সার্টিফিকেট চাইতে পারে। অন্যান্য কর্মস্থলে এটি আসতে পারে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও আমরা এটি চালু করার কথা ভাবছি। যেসব শহর আর গ্রামে ভ্যাক্সিন নেয়ার পার্সেন্টেজ কম আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি সেখানে এটিকে বাধ্যতামূলক করা না হলেও তার কাছাকাছি করা হবে যাতে বেশি মানুষ ভ্যাক্সিন নেয় এবং সংক্রমণ কমে আসে। হাসপাতালে এখন যারা ভর্তি আছে তাদের প্রায় সবাই ভ্যাক্সিন না নেয়া মানুষেরা। বারোই নভেম্বরে ক্যাবিনেটে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ডিসেম্বর থেকে আশির বেশি বয়স, অসুস্থ আর দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বুস্টার ডোজ দেয়া হবে। তারপর সত্তর, ষাট, স্বাস্থ্যকর্মীরা পাবে। এদের সবার হয়ে গেলে অন্যরাও নিতে পারবে। যারা যারা এখনো ভ্যাক্সিন নিতে ভয় পাচ্ছেন, তারা যেকোন প্রশ্নের উত্তরের জন্যে জিজিডি অফিসের ভেতরে চলে যেতে পারেন, ওয়েবসাইটে তথ্য আছে পড়ে দেখতে পারেন। যারা ভাবছেন, ভ্যাক্সিন নিলে তাদের প্রজননশীলতা নষ্ট হতে পারে তাদেরকে বলছি, এটি মোটেও সত্য নয়, এসব অসত্য ধারনার মধ্যে নিজেকে আর আটকে রাখবেন না, আরও ভাবুন। অন্যদের জন্যে নয়, নিজের জন্যে, সমাজের জন্য ভাবুন। সময় এখনো পেরিয়ে যায় নি। সাংবাদিকঃ ক্যাবিনেটে প্রথমে আলোচনা হয়েছিলো, যারা এখনো ভ্যাক্সিন নেয়নি শুধুমাত্র তাদের জন্যে আলাদা বিধি নিষেধ আসবে কিন্তু এখন আপনি সবার জন্যেই বিধি নিষেধ নিয়ে এসেছেন, ব্যাপারটা কি ঠিক হলো? প্রিমিয়ে রুতেঃ যারা ভ্যাক্সিন নিয়েছে তাদের শুধু কিউ আর কোড দেখালেই হবে আর যারা ভ্যাক্সিন নেয়নি তাদের প্রতিবার পরীক্ষা করিয়ে রেজাল্ট দেখাতে হবে, সুতরাং তাদের ব্যাপারটা কঠিনই থাকবে। সামনের দিনগুলোতে আইসিইউ’র অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে নিয়মের ধরন হয়ত আবারো বদলে দেয়া হতে পারে। সাংবাদিকঃ কিউ আর কোড সবসময় সঠিক নিশ্চয়তা দিতে পারে না। ভ্যাক্সিন নেয়া মানুষেরওতো করোনা হচ্ছে। হুগো দ্যা ইয়ংঃ সেটা সত্যি। তবে ইউরোপে যেহেতু কিউ আর কোড সেন্ট্রাল, তাই কেউ কোভিড পজিটিভ হলেই আমরা তার কিউ আর কোড ফিরিয়ে নিতে পারি না। সাংবাদিকঃ আপনি চান মানুষেরা শরীরচর্চা করুক আবার জিমে যেতে প্রত্যেকবার করোনা টেস্ট করতে হবে বলছেন, অনেক ঝামেলা না? হুগো দ্যা ইয়ংঃ সামান্য একটু ঝামেলার বিনিময়ে সব শরীরচর্চার সুযোগ খোলা রাখা হয়েছে। আর হাসপাতালের আইসিইউতে যাওয়ার চেয়ে অনেক কম ঝামেলাতো এটা বটেই। সাংবাদিকঃ অন্যভাবে মানুষকে ভ্যাক্সিন নিতে বাধ্য করছেন, এইতো? হুগো দ্যা ইয়ংঃ ইটালী-ফ্রান্সে যেমন মানুষকে চাকুরী থেকে বিদায় করে দিচ্ছে আমরা সেরকম কোন কিছুই করছি না।
তানবীরা হোসেন ১৬/১১/২০২১

Sunday 14 November 2021

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – বারোই নভেম্বর টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান

প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতেঃ ষোল হাজার তিনশো চৌষট্টি নতুন সংক্রমণ এই মুহূর্তে, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে নেদারল্যান্ডসের সর্বোচ্চ সংক্রমণ রেকর্ড। তাও যারা শুধু টেস্ট করিয়েছেন, সবাই টেস্ট করায় না, তাই ধরে নেয়া যায়, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ভাগ্যিস বেশির ভাগ মানুষই ভ্যাক্সিন নেয়া তারপরও হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর ভিড়ে আবারও হার্ট, হাঁটু ইত্যাদি অপারেশানগুলো দ্বিতীয়বার তৃতীয়বারের মত পেছাতে হচ্ছে। সামনের তিন সপ্তাহের জন্যে আমরা পার্শিয়াল লক ডাউনে যাবো, এই নিয়মগুলো সবার জন্যে প্রযোজ্য হবে, ভ্যাক্সিন নেয়া কিংবা না নেয়া সবাই এর আওতায় পরবে। কারণ ভ্যাক্সিন কখনোই শতভাগ প্রতিরক্ষা দিতে পারে না। ক্যাবিনেট থ্রিজি করোনা নেগেটিভ টেস্ট, ভ্যাক্সিন সার্টিফিকেট এবং করোনা থেকে সুস্থ হওয়া মানুষজন থেকে টুজিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে শুধু ভ্যাক্সিন সার্টিফিকেট এবং করোনা থেকে সুস্থ হওয়া মানুষজন বাইরের ইভেন্টগুলোতে আসতে পারবে। কাল থেকে বাসায় তের বছরের বেশি চারজনের বেশি মেহমান ডাকা যাবে না। হোম অফিস। যেখানে করোনা সার্টিফিকেট আবশ্যিক নয়, দেড় মিটারের সামাজিক দূরত্ব বাধ্যতামূলক। স্পোর্টসক্লাব, পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর আওতায় পরবে না। এসেনশিয়াল দোকান আর রেস্টুরেন্ট ছাড়া সবকিছু ছয়টায় বন্ধ করে দিতে হবে। এসেনশিয়াল দোকান আর রেস্টুরেন্ট আটটায় বন্ধ করে দিতে হবে। তবে রেস্টুরেন্টে টেকওয়ে চলতে পারে। থিয়েটার, সিনেমা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেখানে বসার জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে সেখানে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা বন্ধের নিয়ম প্রযোজ্য নয়। তবে বারোশো পঞ্চাশ জনের বেশি মানুষ এক জায়গায় বসতে পারবে না। খেলাধূলা সব চলতে পারে তবে দর্শকবিহীন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি ক্লাশে পচাত্তর জনের বেশি বসতে পারবে না। তবে এই নিয়ম পরীক্ষা জন্যে না। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাই সাবসিডি খুব শীঘ্রই আবার শুরু করা হবে। ডিসেম্বরের তিন তারিখে আবার কথা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো দ্যা ইয়ংঃ নট এসেনশিয়াল দোকানগুলোতে করোনা সার্টিফিকেট দেখানোর কথা ভাবা হচ্ছে। কর্ম প্রতিষ্ঠানেও করোনা সার্টিফিকেট দেখানো বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এতে করে যারা ভ্যাক্সিন নেয়নি তারা হয়তো ভ্যাক্সিন নেবে আর তাতে সুরক্ষা শক্তিশালী হবে। যদি অবস্থা অনেক খারাপ হয় যে অনলাইন স্কুলিং শুরু করতে হয় তাহলে হাইস্কুলেও হয়ত করোনা সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হবে। যেসব অনুষ্ঠান আর জায়গায় মানুষ খুব কাছাকাছি আসে সেখানে আমরা টুজি বাস্তবায়ন করবো। যারা টুজির বাইরে তাদের হাসপাতালে যাওয়ার সম্ভাবনা সাইত্রিশ ভাগ আর আইসিইউতে যাওয়ার সম্ভাবনা তেত্রিশ ভাগ। তবে নির্দিষ্ট বসার জায়গা থাকলে কর্ম প্রতিষ্ঠান করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ সার্টিফিকেটে দেখানোর মাধ্যমে মানুষকে কাজে আসার সুযোগ দিতে পারে। সাংবাদিকঃ সংক্রমণ ঠিক কত টুকু নীচে নামলে পার্শিয়াল লক ডাউন তুলে নেয়া হবে? প্রিমিয়ে রুতেঃ এটা ঠিক একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার ওপর নির্ভর করে না। এই মূহুর্তে পুনঃ সংক্রমণ (রিপ্রডাকশান) হার শতকরা বিশ ভাগ। এটি এবং অন্যান্য পরিসস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার ওপর আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। সাংবাদিকঃ এক কোটি আঠারো লক্ষ মানুষের জন্যে তিনশো চল্লিশটি আইসিইউ খুব সামান্য নয়? দেড় বছরেও কেন চিকিৎসাক্ষেত্র প্রসারিত হলো না? হুগো দ্যা ইয়ংঃ আসলে চিকিৎসাক্ষেত্র অনেকটাই প্রসারিত করা হয়েছে। এখন সমস্যা হলো, কোভিডের পাশাপাশি অন্য চিকিৎসাগুলোও চলতে হবে, সেখানেও মানুষ দরকার আর সমস্যা হচ্ছে সে জায়গাটায়। সাংবাদিকঃ আপনারা বারবার ভাইরাসকে বাধা দেয়ার কথা বলছেন, সেটা কখন আর কিভাবে? হুগো দ্যা ইয়ংঃ বড় বড় গ্রুপ থেকে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়াবে, বেশি মেলামেশা থেকে সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ে, এটিকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছি, এটাকেই বাধা দেয়া মনে করছি। সেজন্যে টুজি স্ট্যান্ডার্ড প্রয়োগ করছি। সাংবাদিকঃ প্রিমিয়ে রুতে আপনি বলছেন, কর্ম প্রতিষ্ঠানে টুজি বাধ্যতামূলক করা হবে, আপনি নেদারল্যান্ডসের সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা, তার মানে কি সব সরকারী কর্মচারীদের টুজির আওতায় আনা হবে? প্রিমিয়ে রুতেঃ এ নিয়ে আলোচনা চলছে, আলোচনা হবে তবে আমি এর পক্ষে, খুবই পক্ষে। সাংবাদিকঃ যদি তারা এতে রাজী না হয়? প্রিমিয়ে রুতেঃ তাহলে তাকে বাসা থেকে কাজ করতে বলা হতে পারে, কিংবা অত্যন্ত প্রয়োজন না থাকলে অফিসে আসতে নিষেধ করা হতে পারে। সাংবাদিকঃ অনেককেই চাকুরী থেকে বিদায় জানানো হচ্ছে, এটি কি সে ধরনের কিছু পরিকল্পনা? প্রিমিয়ে রুতেঃ না, অবশ্যই না, চাকুরী থেকে বিদায় জানানোর কিছু নেই এর মধ্যে, কিছুতেই না। সাংবাদিকঃ গত বছর শুনেছিলাম ভ্যাক্সিন এলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এবছর আবার বলছেন, ভ্যাক্সিনই সব সমাধান নয়। এর শেষ কোথায় তবে? হুগো দ্যা ইয়ংঃ গত বছরের সাথে এবছরের পার্থক্য হলো, আজ বারোই নভেম্বরে যতজন পেশেন্ট আইসিইউতে আছে, গত বছর বারোই নভেম্বরেও ঠিক ততজন পেশেন্টই আইসিইউতে ছিলো। তবে গত বছর আর সব চিকিৎসা বন্ধ ছিলো, এ বছর সে চিকিৎসাগুলো হচ্ছে। আর একটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হলো, গত বছর এসময় কড়া লকডাউন চলছিলো, এ বছর অনেক নিয়ম খুব শিথিল। সংক্রমণ সামনের বছরও থাকবে তবে এবারের চেয়ে কম। আমাদের লক্ষ্য প্রতিবছর সংক্রমণ কমিয়ে আনা। দেড় মিলিয়ন মানুষ যারা আজও ভ্যাক্সিন নেয়নি তারা নিজেদের জন্যে এবং অন্যদের ঝুঁকি বহন করছে। সাংবাদিকঃ চুল কাটার দোকান কিংবা রেস্টুরেন্ট এগুলো সন্ধ্যা বেলায় খোলা থাকলে কি সমস্যা? ভাইরাসের জন্যে সকাল সন্ধ্যা কতটা জরুরী? প্রিমিয়ে রুতেঃ যোগাযোগ খানিকটা নিয়ন্ত্রণের জন্যে এটি করা। আশাকরি মানুষ বুঝবে। সবাই যদি প্রাথমিক নিয়মগুলো মেনে চলতো তাহলেতো এটিরও দরকার পড়তো না। সাংবাদিকঃ ফাইজারের টিকা শিশুদের জন্য অনুমোদন পেয়েছে, নেদারল্যান্ডস এই নিয়ে কি ভাবছে? হুগো দ্যা ইয়ংঃ বারো বছরের নীচে দুর্বল স্বাস্থ্যের শিশু যারা তাদের ভ্যাক্সিনের কি করা যায় আলোচনা চলছে। আমি বারো বছরের নীচের শিশুদের ভ্যাক্সিন দেয়ার পক্ষে নই যদিও এই পরিস্থিতিতে কিচুই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। সাংবাদিকঃ করোনা সহসা আমাদের থেকে যাবে না, এই সত্যটা বলে দেয়াই কি সততা নয়? হুগো দ্যা ইয়ংঃ আমি কখনো বলিনি শীতের পর করোনা চলে যাবে। আমাদের প্রতিদিন করোনার সাথে কি করে ভাল করে থাকা যাবে সেটা শিখতে হচ্ছে। প্রতি শীতেই করোনা কি রূপে আমাদের কাছে ফিরে আসবে সেটাও আমরা জানি না। আমাদের সেটার জন্যে প্রস্তূতি নিতে হবে। সাংবাদিকঃ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি যেসব উপদেশ দেয় আর আপনারা এখানে এসে যেগুলো আমাদের বলেন দুটোর মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে কিন্তু। হুগো দ্যা ইয়ংঃ অবশ্যই। আমাদেরকে শুধু দুর্যোগ ব্যবস্থপনা কমিটি উপদেশ দেয় না, উপদেশ আমরা অন্য জায়গা থেকেও পাই, সমস্ত উপদেশের ওপর ভিত্তি করে ক্যাবিনেটে যে সিদ্ধান্ত হয় সেটাই আমরা এখানে এসে সবাইকে জানাই। সাংবাদিকঃ এসব নিয়মগুলো যারা ভ্যাক্সিন নিয়েছে তাদের প্রতি অন্যায় নয়? হুগো দ্যা ইয়ংঃ দেখো, অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে এলে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে, ভ্যাক্সিন দিয়েছে কি দেয়নি তার ওপর সেটা নির্ভর করবে না।
https://www.prothomalo.com/world/europe/%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%B2%E0%A6%95%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%89%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A7%81%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%A7-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1%E0%A6%B8-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%B6-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A7%8B%E0%A6%AD%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%98%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7-- তানবীরা হোসেন ১৫/১১/২০২১

Friday 12 November 2021

পূর্ব পশ্চিম

পূর্বে যদি কোন মানুষের “সিজোফ্রেনিয়া” র লক্ষণ দেখা দেয় তাকে বলবে “জ্বীনের আছড় হইছে” । ওঝা’র কাছে নেবে, হুজুর আনবে, ঝাড়াবে, পেটাবে, বেঁধে রাখবে কিন্তু কখনো “মন বৈকল্য” হয়েছে ভেবে ডাক্তার দেখাবে না। পশ্চিমে “সিজোফ্রেনিয়া” র লক্ষণ দেখা দিলে তাকে ডাক্তার দেখাবে, দরকারে কড়া ডোজের ওষুধ দিয়ে হাসপাতালের কেয়ারে রাখবে। বিনা অনুমতিতে কোন “জ্বীন” এখানে কাউকে ধরে না, মজার কথা হলো আরব দেশগুলোতেও “জ্বীন আছড়” করে না। কারো যদি “এপিলেপসি” থাকে তাহলে তাকে পাড়াময় নাম দেবে “মৃগী রোগী” বলে। খিঁচুনি হলে নাকে “জুতো” ধরে রাখবে। অথচ এটি স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাজনিত একটি রোগ। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে এই রোগটি বিশেষভাবে চোখে পড়ে, নিম্ন আয়ের দেশে। তবে পশ্চিমে বিরল হলেও এটি আছে। এখানে অ্যান্টি-এপিলেপটিক ওষুধ ব্যবহার করে রোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে, প্রয়োজনে অপারেশান করে। অনেক সময় রোগীকে ড্রাইভিং, সুইমিং ইত্যাদিতে বারন করে দেয়া হয়। যতদিন সম্পূর্ন সুস্থ না হয় ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করে না। “ইন্টারসেক্স” জটিলতা নিয়ে বাচ্চারা জন্ম নিলে তাদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করে ঠিক করা হয় না। বাবা-মায়ের নিয়তি বলে তুলে দেয় হাতে, নাম হয় “তৃতীয় লিংগ” । বাবা-মায়েরা তাদের রাস্তায় ফেলে দিয়ে নিজেদের নাক-কান রক্ষা করে, শুরু হয় মানব সন্তানদের মানবেতর জীবন যাপন। অথচ পশ্চিমে সাথে সাথে ‘normalising’ সার্জারি করে সেটি ঠিক করে বাবা মায়ের হাতে দেয়া হয়। তারপরও দরকারে হরমোন চিকিৎসা ইত্যাদি দেয়া হয়। পূর্বে বাচ্চারা মিথ্যে কথা বললে, খেলতে গিয়ে অন্যের জিনিস নিয়ে এলে যাকে বলে চুরি করলে, এরোগেন্ট আচরন করলে, বাচ্চাকে বখা কিংবা খারাপ বাচ্চা কনক্লুশেন টেনে মাইর দিয়ে সোজা করে ফেলা হয়। পরিবারময়, পাড়াময় মানসিক নির্যাতন করে জনমের মত অপরাধী বানিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। পশ্চিমে এগুলোকে অস্বাভাবিক আচরণ বলে ডায়গোনসিস করা হয় এবং ছোট থেকে ছোট বয়সেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এই সিমটমগুলোকে এডিডি, এডিএইচডি ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত করে এর চিকিৎসা/কাউন্সেলিং করা হয়। পশ্চিমের ডাক্তারের মতে, শিশু নিরাপদ বোধ করছে না তাই মিথ্যে বলছে। বাচ্চার মিথ্যে বলার জন্য বাচ্চা নয় দায়ী বাচ্চার বাবা-মা কিংবা পরিবেশ। পিতামাতার কাজের প্রতিক্রিয়া হলো বাচ্চার আচরণ। সম্প্রতি বহুল আলোচিত সিনেমা “রেহানা মরিয়ম নূর” নিয়ে অনেক রিভিউ পড়লাম। আমি মনে করতে পারছি না, কোন রিভিউতে “চাইল্ড এবিউজ” ব্যাপারটি উঠে এসেছিলো কিনা। সবাই প্রতিবাদী রেহানা নিয়ে কথা বলছে, কিন্তু এটা দ্যা সেইম টাইম, সে নিজের বাচ্চার প্রতি এবিউজিভ আচরণ করছে যেটা নিয়ে কেউ কথা বলছে না। বিশেষ করে, সিনেমার শেষ দৃশ্যটি একদম অগ্রহণযোগ্য। আমার দৃষ্টিতে তার কারণ, সম্ভবত, এ ধরনের আচরণকে আমাদের দেশে খুব সাধারণ হিসেবে ধরা হয়, দেখা হয়, এবিউজ ভাবাই হয় না। তাই সাদ এটি সানন্দে তার ওয়ার্ল্ড ক্লাশ সিনেমায় ঢুকিয়েছেন আর দর্শকরা সেটি স্বাভাবিক ধরে নিয়ে দেখছেন। পশ্চিমারা বাহাবা দিচ্ছে। তাই বলছিলাম কি, মনোবিজ্ঞান একটি পরিপূর্ণ বিজ্ঞান আর মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যর মতই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে স্বীকার করুন, সহমর্মিতা গড়ে তুলুন। ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সুস্থতা নিজের জন্যে দরকার, সমাজের জন্যেও দরকার। আজকের বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে আরও অনেক বেশী দরকার।
তানবীরা হোসেন ১২/১১/২০২১

Monday 1 November 2021

শাহরুখ আর আমাদের জাজমেন্ট

গত একুশ দিনের আলোচ্য আলোচনা শেষে কবি বুঝতে পারলো, আরিয়ানকে স্কুলে দেয়ার পর থেকে শাহরুখের কাজ করা ঠিক হয় নাই। আরিয়ানকে প্রতিদিন স্কুলে আনা নেওয়া করা থেকে শুরু করে টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের খেলার মাঠে উঁকি দিয়ে দিয়ে দেখা দরকার ছিলো, ছেলে কার সাথে মিশছে, কার সাথে খেলছে। আরিয়ান বাসায় ফিরলে, তাকে খাওয়ানো, পড়ানো ইত্যাদিও শাহরুখের করা দরকার ছিলো। আসলে বাচ্চা জন্মের পর বাবামায়ের আর কাজ করাই ঠিক না। যাহোক, ছেলেমেয়ের বন্ধু বাবামায়ের ঠিক করে দেয়া দরকার। ছেলেমেয়ে বাবামায়ের সম্পত্তি, তারা কার সাথে কতটা বন্ধুত্ব করবে, বাইরে কার সাথে মাঠে খেলবে, টিভিতে কি দেখবে, কোন বিষয় পড়বে সব বাবামায়ের এখতিয়ারে পরে, তাদের নিজেদের নয়। ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়, দিনরাত আরিয়ানকে গার্ড দেয়া প্রয়োজন ছিলো, একা ছেড়ে দেয়া ঠিক হয় নাই। ইউনি ভর্তি অন্য পোলাপাইনকে বাবামা কেমনে পাহারা দেয় সেটা শাহরুখ শেখে নাই। ওহ! গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, তেইশ বছর বয়সী ছেলে হোয়াটসএপে কার সাথে চ্যাট করে, প্রতি রাতে শাহরুখের সেগুলো বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া অবশ্যই দরকার ছিলো। যাদের ছেলেমেয়ে ড্রাগ খায় না তারা সবাই দিনরাত বাচ্চা কোলে করে বসে থাকে বলেই খায় না। অমিতাভের ছেলে খায় নাই, রাকেশের ছেলে খায় নাই, জ্যাকির ছেলে খায় নাই। শাহরুখ কোলে রাখে নাই, ব্যস, আরিয়ান খেয়ে ফেলছে। আর একটি উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট, ছেলেকে এত স্বাচ্ছন্দ্যে বড় করা ঠিক হয় নাই। পকেটে কোটি কোটি ডলার রেখেও শাহরুখের উচিৎ ছিলো, ছেলেকে চোর বাজার কিংবা ক্রফোর্ড মার্কেটের জামা কাপড় পরানো, ডাল-রুটি খাওয়ানো তাহলেই ছেলে মানুষ হতো। আম্বানী, টাটা, রকফেলার কিংবা বিল গেটস তাই করে। পকেটের টাকা খরচা করে ছেলেমেয়েকে খাওয়ালে হয় "নষ্ট করা", না খাওয়ালে হয় "কিপ্টামি", কই যাইতাম। সুশান্ত রাজপুত সিং এর মৃত্যুর জন্যেও শাহরুখ দায়ী। অন্যের ছেলেকে যারা মেরে ফেলে নিজের ছেলের সাথে তাদের এইই হয়। কর্মফল, কর্মফল। কর্মফলের হিসাব অবশ্য আমি বুঝি নাই, সুশান্তকে শাহরুখ মারছে তাহলে শাহরুখ জেলে না গিয়ে আরিয়ান কেন জেলে? আরিয়ানতো কিছু করে নাই। ঘটনা যাই হোক, সিদ্ধান্ত হলো, আরিয়ান জেলে যাওয়াতে নায়ক হিসেবে শাহরুখের সমস্ত পরিশ্রম, মানুষ হিসেবে সব অর্জন জলাঞ্জলি গেলো, নাক-কানতো কাটা গেছে সেটা বলাই বাহুল্য। সিরিয়াসলি!!!!!! যারা দিনরাত এই রায়গুলো নির্দ্বিধায় লিখতে থাকে, তাদের সংসার যেয়ে দেখে আসতে ইচ্ছে করে, কত "পার্ফেক্ট" তাদের জীবন। তারা রাতে কি কি দিয়ে ভাত খায়? স্বামীর থেকে কম বিখ্যাত হওয়ার কারণে গৌরী অবশ্য কম ডলা খাচ্ছে, ডলা বেশীর ভাগ সময় মায়ের ওপর দিয়েই যায়। একটা এক্সেপশান। অবশ্য চার দেয়ালের ভেতরে কি হচ্ছে সেটাতো জানি না, শাহরুখ হয়ত গৌরীকে ধুচ্ছে, সন্তানের দায়িত্ব মায়ের, সারাক্ষণ সাজগোজ নিয়ে পরে ছিলে, সব তোমার দোষ। এছাড়া গৌরীর পরিবারও গৌরীকে ঝাড়বে, আছোতো খালি মেকাপ আর পার্টি নিয়ে, ছেলের খোঁজ নিছো? যারা দিনরাত নিজের জাজমেন্ট দিতে ব্যস্ত তাদের যদি মনুষ্যত্ব থাকতো তাহলে শাহরুখের বুকের কাছে কান পেতে দেখতো, কোন কষ্টে সে নিজেকে সব থেকে সরিয়ে ফেলেছে। হায় কপাল, তার এতদিনের অর্জনে আপনার মত কেউ জাজমেন্ট দেয়। বাস্তবতা হলো, শাহরুখ আজকে শাহরুখ হয়েছে বলেই আরিয়ানকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়া সরব। বাংলাদেশে ড্রাগের কেসে কত ছেলে আন্দর-বাহির খেলছে, আপনি কার খবর জানেন? ২৮/১০/২০২১

"সর্দার উধাম সিং" -- প্রাসঙ্গিক কথকতা

সুজিত সরকারের পরিচালনায় ভিকি কৌশাল অভিনীত অধুনা বহুল আলোচিত ইতিহাসভিত্তিক সিনেমা "সর্দার উধাম সিং" দেখলাম। ইতিহাস বইয়ে ঠাই পাওয়া কুখ্যাত "জালিওয়ানওয়ালাবাগ" হত্যাকান্ডের ওপর ভিত্তি করে এই সিনেমা। একদিনে দুই হাজার মানুষকে হত্যা করার কালো ব্রিটিশ ইতিহাস। একশো সৈন্য আর দুইটি সাজোয়া গাড়ি নিয়ে বৃটিশরা এই হত্যাযজ্ঞ চালায়। সিনেমাটি নিয়ে অনেক রিভিউ অলরেডি লেখা হয়ে গেছে, আমি রিভিউ নয়, লিখতে বসছি অন্য কিছু। ঠান্ডা মাথার এই হত্যা দৃশ্য দেখে গুগল করছিলাম, কারা এতোটা নৃশংস, কি করে পারলো! পেলাম কিছু চমকপ্রদ তথ্য, আমার ধারনা, আমার মতো অনেকেই হয়ত এ সম্পর্কে বিশদ জানে না। বৃটিশ কর্মকর্তাদের আদেশে এই হাজার হাজার মানুষের ওপর যারা গুলি চালিয়েছিলো, সব সৈন্য ছিলো গোর্খা। গোর্খারা আসত মূলত নেপালের চারটি সম্প্রদায় থেকে। গুরুঙ, মাগার, রাইস ও লিম্বুস। প্রথম দুটোর বাস ছিল মধ্য নেপালে আর শেষের দুটোর পূর্ব নেপালে। নেপালের ৭৫টি জেলার একটির নাম গোর্খা জেলা। অধিকাংশ গোর্খা সৈনিক হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হয়। এদেরকে বলে, ‘Mercenary Soldier’। মার্সেনারি সোলজার হলো তারা যারা কোনো প্রকার রাজনৈতিক কারণ ছাড়া কোনো রাষ্ট্র বা জাতির পক্ষে লড়ে। অর্থাৎ, ভাড়াটে সৈন্য। গোর্খারা মূলত ব্রিটেন ও ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সার্ভিস দিয়ে থাকে। সিঙ্গাপুরের পুলিশ ফোর্সেও গোর্খাদের নিয়োগ করা হচ্ছে। ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৮১৪ সালে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখন ভারত শাসন করছে। কোম্পানির তৎকালীন গভর্নর জেনারেল স্যার ডেভিড অক্টারলোনির খেয়াল হলো নেপাল সাম্রাজ্য আক্রমণের। তিনি তার প্রশিক্ষিত, চৌকস ২২,০০০ সেনাকে সেদিকে অগ্রসর করলেন। বিরোধী পক্ষে তেমন ভারী অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত সেনাদল নেই। প্রায় বিনাযুদ্ধেই ব্রিটিশ সেনাদলের জয় হবে এমনটাই ভেবেছিলেন অক্টারলোনি। কিন্তু ময়দানে হিসেব এত সহজে মিলল না। বাইশ হাজার চৌকস সেনার নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিল স্থানীয় ১২০০০ গোর্খালী। উচ্চতাও বেশি নয় এদের। ৫ ফুট ২ ইঞ্চি থেকে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। গোর্খাদের একটি জাতীয় অস্ত্র আছে। একে তারা ‘কুকরি' বা ‘খুকরি' বলে ডাকে। কুকরি হচ্ছে প্রায় ১৮ ইঞ্চির একটি বাঁকানো ছোরা। কাঠ কাটা থেকে শুরু করে যুদ্ধ প্রায় সবক্ষেত্রেই কুকরি ব্যবহার করা হয়। এই কুকরি দিয়েই গোর্খালীরা ব্রিটিশ সৈন্যদের নাস্তানাবুদ করেছিল। কুকরিকে নিয়ে একটি মিথ প্রচলিত আছে। গোর্খার খাপ থেকে কুকরি বের হলে তাকে রক্তপান করিয়ে তবেই ওটাকে আবার খাপবদ্ধ করা যাবে। শত্রুর রক্ত না পেলে বাহকের নিজের রক্তেই রঞ্জিত করতে হবে তাকে। যুদ্ধে ব্রিটিশদের জয় হলেও গভর্নর জেনারেল গোর্খালীদের অসীম সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি যেচে তাদের প্রস্তাব দিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে সার্ভিস দেওয়ার। টানা দুই বছরের যুদ্ধের অবসান হলো একটি চুক্তির মাধ্যমে। এটি Treaty of Sugauli নামে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। এ চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে গোর্খারা পাকাপাকিভাবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। “If a man says he is not afraid of dying, he is either lying or is a Gurkha” ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক পাঁচ তারকা সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ গোর্খা সৈন্যদের ব্যাপারে এ মন্তব্য করেছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ফিল্ড মার্শাল খেতাব অর্জনকারী দুজন অফিসারের একজন। ভারতের মতো বহুজাতিক রাষ্ট্রে প্রায়ই গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সক্রিয় দেখা যায়। সেরকম ঘটনাগুলোতে ইন্ডিয়ান জেনারেল ও নীতিনির্ধারকগণ গোর্খা রেজিমেন্টগুলোর ব্যবহারই সবচেয়ে নিরাপদ বলে মনে করেন। চীন ও পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধেও ভারত প্রতিবারই গোর্খাদের এগিয়ে দিয়েছে। ১৮৫৭ থেকে এ পর্যন্ত গোর্খা ব্রিগেড মোট ২৬টি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদক ‘দ্য ভিক্টোরিয়া ক্রস’ লাভ করেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নিয়োগপ্রাপ্ত গোর্খাদের ট্রেনিং হয় ভারতের হিমাচল প্রদেশের সাবাথু অঞ্চলে। ভারতেও বীরত্বের পদক প্রাপ্তির দিক থেকে পিছিয়ে নেই গোর্খারা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সামরিক পদক পরম বীর চক্র (Param Vir Chakra) পেয়েছেন এপর্যন্ত ২১ জন যার মধ্যে তিনজন গোর্খা রেজিমেন্টের। গোর্খা ড্রেসকোডের আবশ্যিক অংশ গোর্খা হ্যাট। বিখ্যাত ‘গোর্খা হ্যাট'। মাথার ডানদিকে খানিকটা বাঁকা করে পরা হয় টুপিটি। গোর্খারা একটি মটোতে বিশ্বাস করে– ‘কাথার হন্নু ভান্ডা মারনু রামরো।' ----- ‘It is better to die than to be a coward.’ সিনেমানুসারে গোলাগুলির পর বৃটিশ গোর্খা সৈন্যরা জায়গাটি ছেড়ে চলে গেলে, হতাহতদের মধ্যে থেকে আহতদের রক্ষা করতে সর্দার উধাম সিংকে যতটা তৎপর দেখা গেছে অন্যদের ঠিক ততোটা নয়, আরও মানুষ যদি তৎপর হতো তাহলে কি আরও কিছু প্রাণ বাঁচতো? তানবীরা হোসেন ০১/১১/২০২১

Sunday 17 October 2021

জ্বলো বাংলা জ্বলো

দূর্গাপূজায় আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, খাওয়াদাওয়া বাড়িটা একদম গমগম করতে থাকে। আজ কি হচ্ছে জানতে বাড়িতে ফোন করলো সুইডেন প্রবাসী সুধীর। বরাবরের মত বছরকায় একবার পিসি এসেছে বাপের বাড়ি ছেলেপুলে নিয়ে, কিন্তু বাড়ি বেশ নিঃশব্দ। প্রতিবেশীদের আনাগোনা নেই, নেই ঢাকের শব্দ, হাসির হুল্লোড় কিংবা সন্দেশ-বাতাসা নিয়ে হুটোপুটির আওয়াজ। বরং ফিসফিস কেমন যেনো আতংকে সবাই। পিসিকে জিজ্ঞেস করলো, আদরযত্ন হচ্ছে না পিসিমনি? এত মনমরা কেন? ভাইপো’র আদরের ডাকে পিসি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না, কেঁদেই ফেললো, চারদিকে কি হচ্ছে, শুনছিসতো সুধীর। নিজের জন্যে ভয় পাই না, ভয় পাই ছেলেমেয়েদের নিয়ে। কি হবে আমাদের এই দেশে? সুধীর কি বলে পিসিকে সান্ত্বনা দেবে, কোন আশার বাণী খুঁজে পেলো না। দেশের এই পরিস্থিতি, পুরো পরিবার ওখানে, আতংকে সুধীরের এই প্রবাসের পূজোর মন নষ্ট হয়ে গেলো। পিসির বাড়ির কত স্মৃতি। আদর করে কোলে বসিয়ে কৈ মাছ বেছে বেছে তাকে খাইয়ে দিয়েছে। পিসতুতো ভাই সমীরের সাথে কথা বললো ম্যসেঞ্জারে। কিছু টুকটাক পার্সোন্যাল ইনফরমেশান নিলো। একটা সেমিনারের দাওয়ার পাঠানোর চেষ্টা করবে বললো সুধীর। ছয় মাস পর সমীর সুইডেনের কুপে বাজার করতে যেয়ে দেখে তাদের পাড়ার কাসেম আলীও সেখানে। এই প্রবাসে পরিচিত মুখ দেখে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কুশলাদি বিনিময় করলো। অনেক কথা, শেষই হচ্ছে না। সমীরকে আবার দুপুর তিনটা থেকে রেস্টুরেন্টে যেতে হবে, এ সপ্তাহে তার শিফট শুরু হবে তিনটা থেকে। সমীর বললো, কাসেম ভাই, আপনার বাসার ঠিকানা দেন, ছুটির দিনে আমি চলে আসবো, জমিয়ে আড্ডা দেবো। কাসেম একটু চুপ থেকে বললো, তুমি আমাকে আর কাসেম ভাই বলো না। এখন আমার নাম, কমলেশ সাহা, তুমি এখন থেকে আমাকে কমল দাদা বলে ডাকবা। আর্শ্চয হয়ে সমীর বললো, এটা কি করে সম্ভব? কেন? কি ঘটনা। এদিক ওদিক দেখে নিয়ে কাসেম গলা খুব নামিয়ে বললো, সেই দূর্গাপূজার কথা মনে আছে তোমার? ঐ যে কয়েকজন হিন্দু খুন হলো, মেয়েরা নির্যাতিত হলো, গ্রামের পর গ্রাম লুটপাট করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হলো? ম্লান হেসে সমীর বললো, মনে রেখেই আর কি কাসেম ভাই? কেউ তো আটকাতে এগিয়ে এলো না। কাসেম, আমরা কি করতাম কও? আমাদের কথা কেউ কি শুনতো? যাক, যা বলছিলাম, এরপর কিছু হিন্দু বাংলাদেশ ছেড়ে ইউরোপের নানাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে চলে গেলো। আমাদেরতো জানোই সংসারের অবস্থা। আব্বায় কইলো, হিন্দু কোটায় তুইও চইলা যা, আল্লাহর যা মর্জি। দালাল ধইরা আমার নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম হিন্দু পরিচয় দিয়া পাসপোর্ট বানাইয়া, আমিও সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলাম, এখন কেইস কোর্টে আছে, দেশের যা পরিস্থিতি আশাকরি শীঘ্রই স্টে অর্ডার পাইয়া যামু। সমীর বললো, তোমরা না সবাই, শুক্রবার শুক্রবার জুম্মায়, হিন্দুদের কাফির বলে গালাগালি করতে, বেদাত বলে গালি দিতে, এখন এসব, হুজুর জানে? কাসেম খিকখিক হেসে বললো, আব্বা হুজুরের সাথে আলাপ করার পরই আমাকে কইলো। আর আসার দিন হুজুরও কইলো, আমার কাগজপত্র সেট হইয়া গেলেই, হুজুরের ছেলের জন্যে চেষ্টা করতে। বিপদে মিথ্যা কথা কওয়া জায়েজ আছে, আল্লাহ মাফ কইরা দেয়। আচ্ছা, আজকে যাই, আমাকেও কাজে যেতে হবে। বাসায় কিন্তু আইসো হতভম্ব হয়ে সমীর কাসেমের চলে যাওয়া দেখতে থাকলো। ১৭/১০/২০২১

Tuesday 5 October 2021

22nd July

বাইশে জুলাই, দুই হাজার এগারো, নরওয়েতে সন্ত্রাসী হামলায় উনসত্তর জন বাচ্চা আর আটজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ নিহত হয় আর আহত হয় দুশোর ওপরে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে জরুরী মীটিং ডাকেন তৎকালীন প্রাইম মিনিস্টার ইয়েন্স স্টুলতেনবার্গ, তাদের জিজ্ঞেস করেন, এটা কি করে হতে পারে?! আগে থেকে কেউ কিছু জানতে পারেনি? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জবাব দিয়েছে, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি কিন্তু সব ঠেকানো হয়ত সম্ভব নয়। প্রাইম মিনিস্টার ইয়েন্স স্টুলতেনবার্গঃ কেন ঠেকানো সম্ভব হলো না সেটার ওপর আমি পরিপূর্ণ তদন্ত এবং তার রিপোর্ট চাই। মনক্ষুন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রাইম মিনিস্টার ইয়েন্স স্টুলতেনবার্গঃ শুধুমাত্র এর মাধ্যমেই আমরা পরের বারের বিপদগুলো অতিক্রম করতে পারবো। গতবার নরওয়ে ঘুরে এত ভাল লেগেছিলো, এ বছরের গরমের ছুটিতেও দশ দিন নরওয়ে ছিলাম বন্ধুর বাড়ি। প্রচুর পাব্লিক ট্রান্সপোর্টে ঘুরেছি। বারবার আমি আর মেঘ বলেছি, বাস ড্রাইভাররা কি আন্তরিক আর ভদ্র। ইউরোপ যদি ভদ্র হয় তাহলে নর্ডিক হলো সভ্য, ওয়ান স্টেপ এহেড। সাতাত্তর জন মানুষ তাও এলিট ক্লাশের, যাদেরকে দিন দুপুরে ঠান্ডা মাথায় খুন করে দিয়েছে, সেই খুনীর মানবাধিকার রক্ষায় প্রশাসন থেকে আদালত যে পরিমান তৎপর, তখন বলতে ইচ্ছে হয়, ইটস কিলিং। হ্যাভ মার্সি অন দিজ সেভেনটি সেভেন ফ্যামিলিজ। জনগনকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রাইম মিনিস্টার ইয়েন্স স্টুলতেনবার্গকে ট্রায়ালের সম্মুখীন হতে হয়। এত গোলা বারুদ দেশের ভেতরে আসলো, তিনি কি করে জানলেন না ইত্যাদি নিয়ে তাকেও জবাবদিহি করতে হয়েছে। প্রাইম মিনিস্টার ইয়েন্স স্টুলতেনবার্গ যখন নিহতদের পরিবারদেরকে ডেকে তাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থণা করছিলেন, তখন কান্না থামানো দুঃস্কর ছিলো। “আমি পারিনি, ব্যর্থ হয়েছি” বলা খুব সহজ ব্যাপার নয়। নওরোজিয়ান সাংবাদিক ও লেখক Åsne Seierstad এর লেখা বই, “One of Us: The Story of a Massacre in Norway — and Its Aftermath” এর ওপর ভিত্তি করে পল গ্রীনগ্রাস চিত্রনাট্য তৈরী এবং সিনেমাটি পরিচালনা করেন। সিনেমাটিকে খুব কমই সিনেমা মনে হয়েছে। ক্যাপ্টেন ফিলিপ্স, ব্লাডি সানডে, ওমেঘ যারা দেখেছেন তারা জানেন পল গ্রীনগ্রাস কি করে বাস্তবতাকে তার সিনেমায় ফুটিয়ে তুলতে পারেন। এন্ডার্স ড্যানিয়েলসন ব্রেইভিকের চরিত্রে অনন্য অভিনয় করেছেন। সিনেমার সবচেয়ে বলিষ্ঠ চরিত্র ছিলো, গেইর লিপেস্টাড। একজন কর্তব্যনিষ্ঠ ইউরোপীয়ানের ভূমিকাটি তিনি সততার সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভেতরে প্রচুর ঘৃণা, সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে তার অবস্থান, তা সত্বেও পেশাগত দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন, ব্যক্তিগত অনুভূতিকে সেখানে প্রশয় দেননি। যদিও এই কারণে তার সন্তানকে স্কুল থেকে রেস্ট্রিকটেড করে দেয়া হয়েছে যেটা মেনে নিয়েই তিনি তার দায়িত্বটুকু শেষ অব্ধি পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনের শেষে তিনি তার ক্লায়েন্টের সাথে হাত মেলাতে পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। উতোয়া সামার ক্যাম্পিং এ যেয়ে হাইস্কুলের উনসত্তরটা বাচ্চার মৃত্যু, মেনে নেয়া অসম্ভব, নরওয়েবাসী কোন প্রাণে সহ্য করেছে কে জানে। সন্ত্রাসীরা চায় ভিন্ন মতালম্বীদের মৃত্যু, তারা শুধু মতবাদ দেখে, জলজ্যান্ত মানুষ দেখে না। সন্ত্রাস নিপাত যাক মানবতা মুক্তি পাক দুই হাজার আঠারতে রিলিজড এই সিনেমাটি আগ্রহীরা নেটফ্লিক্সে দেখে নিতে পারেন।
তানবীরা হোসেন ০৪/১০/২০২১

Friday 24 September 2021

নারীর প্রতি সহিংসতা - রুপালী পর্দায়

নারীর প্রতি সহিংসতা - রুপালী পর্দায় পুরুষতান্ত্রিক এই পৃথিবীতে “নারীর প্রতি সহিংসতা” একটি বৈশ্বিক বিষয়। আর এই সহিংসতার সিংহভাগ ঘটে পরিবারে, যার গাল ভরা ইংরেজি টার্ম হলো “ডমেস্টিক ভায়োলেন্স”। পৃথিবীর খুব কম জায়গা হয়তো আছে যেখানে নারীরা নিজ পরিবারেই সহিংসতার শিকার হন না। প্রায় সারা বিশ্ব জুড়েই “ডমেস্টিক ভায়োলেন্স” থেকে নারীদের রক্ষার্থে কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে পশ্চিমে সহিংসতা কিছুটা কমেছে বটে, পুরোপুরি মুছে কিন্তু যায়নি। ভারতবর্ষ, আরববিশ্ব কিংবা প্রাচ্যের কথাতো বলাই বাহুল্য। নারী নির্যাতনকে সেখানে সামাজিক, পারিবারিক অধিকার হিসেবে দেখা হয়। বেশীরভাগ সময় প্রাচ্যের সামাজিক পরিবেশও কাজ করে নারীর বিপক্ষে। গুগল করলে বিশ্বের যেকোন দেশের পরিসংখ্যান বলে দেবে এই হার কি মারাত্বক। করোনার সময় লকডাউনে বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছে “পারিবারিক সহিংসতার উর্ধ্বগতি”। খবরের কাগজের পাতা থেকে বইয়ের মলাট বেয়ে রূপালী পর্দায় সেসবের কিছু ঝলক কখনো উঠে আসে বইকি। এই লেখায় উল্লেখ করা প্রায় সবগুলো সিরিজ ও সিনেমা সত্য ঘটনার ওপরে ভিত্তি করে নির্মিত। এপল টিভির তৈরী করা সিরিজ “তেহরান” বেশ জনপ্রিয়। কাহিনী মূলতঃ ইস্রায়েল আর ইরানের ভেতরের দ্বন্দ্ব। দু দেশই দু দেশের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চায় আর তার জন্যে শক্তিশালী গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও যন্ত্রপাতি কিংবা প্রযুক্তি দু দেশেরই আছে। কোন দেশের গোয়েন্দা কতটা দক্ষতার সাথে অন্যের নেটওয়ার্কে ঢুকে যেতে পারে তার ওপর ভিত্তি করে এই গল্প। পেশাগত জীবনের জন্যে তাদের পারিবারিক জীবনে কি মূল্য দিতে হয় সেটিও দেখানো হয়েছে। এই ইতিহাস যেহেতু জানা, গল্প আর মেকিং যাকে বলে দূর্দান্ত। রাজনৈতিক আর সামাজিকতা বাদেও দুই দেশের নাগরিকরা কীভাবে নিজেদের মূল্যায়ন করে সেই ব্যাপারেও খানিকটা দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, “তেহরান” নাম হলেও এই সিরিজের শ্যুটিং ইরানে করা হয়নি। শ্যুটিং করা হয়েছে গ্রীসের রাজধানী এথেন্সে। যদিও “তেহরান” সিরিজটা ইসরায়েলিদের নির্মিত, তবুও তারা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছে পুরো সিরিজ জুড়েই। অবশ্য নিজেদের বানানো গল্পে কতটুকুই বা নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব! পুরো সিরিজ জুড়ে ছিলো টান টান উত্তেজনা। ইস্রায়েলি অভিনেত্রী নিভ সুলতান যিনি সিরিজে “তামর” চরিত্রটি করেছেন তার “ত্রুটিবিহীন" কাজের জন্য বিশ্বে পরিচিত। সিরিজটি মূলত পার্সিয়ান এবং হিব্রু ভাষায় নির্মিত তবে এপল কিনে নিয়ে এতে ইংলিশ সাবটাইটেল যোগ করেছে। দ্বিতীয় সিজনের কাজ চলছে। তবে মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার ওপর কিংবা বলা চলে চলমান সন্ত্রাসী হামলাগুলোর মূল কারণ অনুসন্ধানে আজ অব্ধি সবচেয়ে ভাল সিরিজ, নেটফ্লিক্সের তৈরী “খেলাফত”। এটি অবশ্য সত্যি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে বানানো, বেথনাল গ্রীন ট্রিও, লন্ডনেরর হাই স্কুলে পড়া তিন উঠতি বয়সী কিশোরীদের গল্প, দুই হাজার পনেরোর ফেব্রুয়ারীতে যারা ইসলামিক স্টেট তৈরী করার পরিকল্পনাকারী জিহাদীদের খপ্পরে পরে। স্কুল বালিকা সুলেইকা আর লিসাকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গীরা হামলা করতে চায়। সুইডিশ গোয়েন্দা ফাতিমা, সিরিয়ান বংশোদ্ভূত সুইডিশ নারী পারভিন যে ইসলামিক স্টেটে জঙ্গী স্বামীর গৃহে অনেকটা বন্দী আছে তাকে কাজে লাগিয়ে তাদের রক্ষা করা সহ, হামলা আটকাতে চায়, যার বিনিময়ে পারভিনকে সুইডেনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সওদা হয়। পারভিন কি ফিরতে পেরেছিলো সুইডেন? উইলিয়াম বেরমানের তৈরী সুইডিশ টিভির প্রযোজনায় এই সিরিজটিতে উঠে এসেছে, ইসলামী উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা, নারীর অধিকার এবং মানবাধিকার। এসটিভিত প্লে লিস্টে এটিই আজ অব্ধি সবচেয়ে বেশি দেখা অনুষ্ঠান। ইসলামিক স্টেট দেখাতে এটার শ্যুটিং করা হয়েছে জর্ডানে। মুসলিম বিশ্বে নারীর প্রতি সহিংসতার একটি প্রামান্য দলিল হিসেবেও এই সিরিজটির ভূমিকা অসীম। নারীর ওপর সহিংসতায় মুসলিম তথা এশিয়ানদের কেউ বেট করতে পারবে না। সত্য ঘটনা অবলম্বনে ফরাসী-ইরানিয়ান সাংবাদিক ফ্রিদো সাহেবজামের লেখা উপন্যাস “লা ফেমে লাপিডে” প্রকাশিত হয়েছে উনিশো নব্বই সালে যা ইরানে আজও নিষিদ্ধ। এই উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে দুইহাজার আট সালে পার্সিয়ান ভাষায় বানানো সিনেমা, “দ্য স্টোনিং অফ সুরাইয়া এম" পরিচালনা করেছেন ইরানিয়ান বংশোদ্ভুত আমেরিকান সাইরাস নৌরাস্তা। টরেন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এটি “ডিরেক্টরস চয়েস” এওয়ার্ড জেতে। জীবনে দাগ কেটে যাবে এমন এক সিনেমার নাম “দ্য স্টোনিং অফ সুরাইয়া এম"। নামেই সিনেমার ঘটনা কিছুটা আন্দাজ করা যায়। সুরাইয়ার অত্যাচারী স্বামী আলী, গ্রামের চৌদ্দ বছর বয়সী এক মেয়েকে বিয়ে করতে মনস্থ করে। সুরাইয়াকে তালাক দিয়ে নিজের পথ থেকে সরাতে সে গ্রামের মৌলভীদের সাহায্য নিয়ে একটি ষড়যন্ত্রের নাটক রচনা করে। সুরাইয়া মারা গেলে, দুই পুত্রের খরচ দেয়ার হাত থেকে আলী বেঁচে যাবে তাই সুরাইয়াকে অপবাদ দিয়ে গ্রাম্য সালিশে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করা হয়। ইরানী বংশোদ্ভূত এমেরিকান অভিনেত্রী মোজহান মার্নো সুরাইয়ার ভূমিকায় অভিনয় করেছে। শেষ দৃশ্যে মাটিতে অর্ধেক পোতা সুরাইয়াকে পাথর মারার সেই রক্তাক্ত দৃশ্য সহ্য করা কঠিন। “তেহরান”র হাইটেক চমকধামক আর লীডিং নারী চরিত্র দেখে “দ্য স্টোনিং অফ সুরাইয়া এম" এর সময় থেকে ইরানের বাস্তবতা পরিবর্তন হয়েছে মনে করা হবে বিরাট ভুল। সাতচল্লিশ বছর বয়সী ইরানী চলচ্চিত্র পরিচালক বাবাক খোরামদিন, লন্ডনে থাকতেন তিনি, পশ্চিম তেহরানের একবাতান নামে একটি এলাকায় তার টুকরো করা দেহ পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার বাবা-মা জানিয়েছে তারা তাকে হত্যার পর মৃতদেহ খণ্ড-বিখণ্ড করে আবর্জনার স্তূপে ফেলে দিয়েছিলেন। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক এবং ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভির সম্পাদক জ্যাসন ব্রডস্কি দ্য ডেইলি মেইলকে বলেন, ‘ইরানে পারিবারিক সহিংসতার যে সুদীর্ঘ প্যাটার্ন আমরা দেখে আসছি, আমার ধারণা, বাবাক খোরামদিনের ভয়ঙ্কর মৃত্যু সেটির স্রেফ একটি সাম্প্রতিকতম উদাহরণ।’ তিনি বলেন, ‘সমকামিতার দায়ে পরিবারের হাতে খুন হওয়া আলি ফাজেলি মনফারেদের মর্মান্তিক মৃত্যুসংবাদের রেশ ধরেই আমরা বাবাকের মৃত্যুর কথা জানলাম। গত বছর অনার কিলিংয়ের নামে বাবার হাতে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে খুন হওয়া ১৪ বছর বয়সী কিশোরী রোমিনা আশরাফির ঘটনাও মনে আছে আমাদের। ব্রডস্কি বলেন, দুই হাজার বিশ সালে ইরানে একটি শিশু সুরক্ষা আইন পাস হওয়া সত্ত্বেও অনার কিলিং ও পারিবারিক সহিংসতা বন্ধ হয়নি। ইরানের এই বিষয়ের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর দেওয়া উচিত।‘ মনে দাগ কাটার মত আরও একটি সিনেমা “নট উইথআউট মাই ডটার”। বেটি মাহমুদি’র নিজের জীবনের ভয়ংকর সব অভিজ্ঞতা, ইরান থেকে পালিয়ে আসার ওপর ভিত্তি করে লেখা বই “নট উইথআউট মাই ডটার” এর চিত্ররূপ এই সিনেমা। উনিশো একানব্বই সালে তৈরী এই সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে এমেরিকা, তুরস্ক আর ইস্রায়েলে। মেয়েদের জীবন একটা অদ্ভূত চক্রের মধ্যে ঘোরে। এমেরিকা হোক আর তুরস্ক কিংবা বাংলাদেশ, কত শিক্ষিত, কত বড় চাকুরী করে, পেশাগত জীবনে কত সফল কিছুই যায় আসে না, ধোঁকা তারা খাবেই। ধোঁকাবাজ প্রেমিকের হাতে পরা নারীদের যেনো অনেকটা নিয়তি। তারওপর হলো এশিয়ান আবার মুসলমান, ধোঁকাবাজিতো কোই ইন লোগো সে শিখে। কোরানে হাত রেখে মিথ্যে শপথ করে এমেরিকান বউকে ইরানে এনে মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার জন্যে অত্যাচার করাকে মাহমুদির পরিবারের কেউ অন্যায় ভাবছেই না! এমনকি ইরানী সমাজের সবাইও সেটা স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে! পুরো সিনেমায় ইরানে অবস্থিত এমেরিকান কনস্যুলেটের ভূমিকাটাই স্পষ্ট হলো না। হাজার হাজার এমেরিকান নারী সেখানে অত্যাচারিত হচ্ছে জেনেও তারা ইরানী ল মেনে মুখে আঙুল চুষছে। তাহলে ইরানে কনস্যুলেট রাখার দরকার কি! ভিসা দিয়ে ইরানী পুরুষদের এমেরিকায় পাঠিয়ে এমেরিকান নারীদের বিপদে ফেলাই এই কনস্যুলেটের উদ্দেশ্যে! বন্দীদশা থেকে উদ্ধার পাওয়ার আশায় বেটিকে দিনের পর দিন মাহমুদি পরিবারের সাথে অভিনয় করতে হয়েছে। তাদের বিশ্বাস জয়ের কি প্রাণান্ত চেষ্টা। মেয়ের জন্মদিনে কেক কাটার সময় বেটি “বিসমিল্লাহ” বলেছে, তাতে শাশুড়ি খুবই আনন্দিত দৃষ্টিতে পুত্রের দিকে তাকিয়েছে, আর পুত্র গর্বিত চোখের নীরব ভাষায় মা’কে নিশ্চিত করেছে, আমি পেরেছি মা, কাফির বউকে মুসলমান করতে পেরেছি। ব্রায়ান গিলবার্টের পরিচালনায় ইংলিশ ও পার্সি ভাষায় বানানো এই সিনেমায় স্যালি ফ্রিল্ড ও স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত বৃটিশ-এমেরিকান অভিনেতা আলফ্রেড মলিনা অসাধারণ অভিনয় করেছে। কৃষ্ণা ভামসির পরিচালনায় কারিশমা কাপুর আর নানা পাটেকার অভিনীত “শক্তিঃ দ্যা পাওয়ার”কে অনেকে “নট উইথআউট মাই ডটার” এর হিন্দি রিমেক বলে কিন্তু দুটো সিনেমার মধ্যে মিল খুব সামান্যই। “শক্তি” মোটা দাগের হিন্দী সিনেমাই যেখানে সবকিছু বড্ড “লার্জার দ্যান লাইফ”। “নট উইথআউট মাই ডটার” দেখতে দেখতে বহুদিন আগে দেখা বাঙালি লেখক সুস্মিতা ব্যানার্জীর “কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ” বইটির কথা মনে পড়ে গেলো। প্রায় একই কাহিনী তবে এবার ইরানে নয় আফগানিস্তানে, মেয়ে এমেরিকান নয় বাঙালি কিন্তু তার শেষ রক্ষা হয়নি, তিনি খুন হন। দুই হাজার তিন সালে উজ্জল চক্রবর্তী পরিচালনায় “এস্কেপ ফ্রম তালিবান”, সুস্মিতা ব্যানার্জীর চরিত্রটি করেন মনীষা কৈরালা। সুস্মিতা স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে ভারতে এসে আবার সোশ্যাল ওয়ার্ক করার জন্যে আফগানিস্তানে যেয়ে স্বামীর সাথেই বসবাস করতে থাকেন। মাঝ রাতে তাকে তুলে নিয়ে বিশটি বুলেট দিয়ে তার শরীর ঝাঝরা করে দেয়া হয়, যদিও তালিবান এই হত্যার দায় অস্বীকার করেছে। সুস্মিতার বাড়ি থেকে খুনীরা শুধু সুস্মিতাকেই ধরে নিয়ে যায় বাড়ির আর কারো গায়ে আঁচরটি অব্ধি লাগেনি। পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রসারে, মেয়েরা শিক্ষিত, স্বাবলম্বী হচ্ছে, এসময়ে মানসিকভাবে মেয়েরা যতটা পরিনত, অগ্রগামী, পুরুষেরা ঠিক ততোটা এখনো হয়ে ওঠেনি, তাই সংঘাত হয়ে উঠেছে অনিবার্য। হাজার ট্যাবু ভেঙে অনেক মেয়েই বায়োগ্রাফি লিখছেন, সেগুলো নিয়ে সিনেমা হচ্ছে, সারা পৃথিবী দেখছে, শিউরে উঠছে, আইন তৈরী হচ্ছে কিন্তু অবস্থার কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। তনু, নুসরাত থেকে মুনিয়া কিংবা হালের পরীমনি জীবিত কিংবা মৃত সবাই এ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার শিকার। সুরাইয়া থেকে বেটি কিংবা সুস্মিতা খুন কিংবা খুনের হাত থেকে নিতান্ত ভাগ্যের জোরে বেঁচে যাওয়া, এখানে নাম না উল্লেখ করা অসংখ্য নারীরা প্রমাণ করে দুই হাজার একুশেও বাস্তবতা বদলায়নি। তানবীরা হোসেন ০২/০৮/২০২১

Thursday 23 September 2021

মিথ ও বাস্তবতা

মিথ: ----- মেয়েরা সাধারণত: রাতের অন্ধকারে অপরিচিত লোকদের দ্বারা ধর্ষিতা হয়; সুতরাং মেয়েদের রাতের অন্ধকারে একাকী বের হওয়া ঠিক নয়। বাস্তবতা : ---------- মাত্র ১০% ধর্ষণ সম্পাদিত হয় অপিরিচিত লোকের মাধ্যমে। ৯০% ধর্ষণ ঘটে পরিচিত পুরুষের মাধ্যমে। সেই ৯০% পুরুষকে আবার মেয়েরা নিরাপদ মনে করতো, তাদের প্রিয়জন,বন্ধু, সহকর্মী, প্রতিবেশী, গ্রাহক বা তাদের ভুতপূর্ব স্বামী বা প্রেমিক। এই ধর্ষণ ঘটে তার নিজের বাড়িতে, কাজের জায়গায় অথবা এমন কোনো জায়গায় যেখানে মেয়ে নিরাপদ বোধ করে। * মিথ : ------ একমাত্র আকর্ষণীয়া, যুবতী ও যারা খুব ‘খোলামেলা’ পোশাক পরে তারাই শুধুমাত্র ধর্ষিতা হয় বাস্তবতা : --------- যে কোনো বয়সের,যে কোনো ধর্ম বর্ণের, যে কোনো সংস্কৃতির, যে কোনো সময়ে যে কেউ নিগৃহীত হতে পারে। ভিকটিমের পোশাকের সাথে ধর্ষণের কোনো সম্পর্ক নেই। * মিথ: ------- যৌন সংসর্গের সময় মেয়েদের আচরণ থাকে বাধামূলক ও ‘না’ বোধক আর এই ‘আপত্তি’ ও ‘না’-কে পুরুষ ‘হ্যাঁ’ ভাবাই উচিত। বাস্তবতা: ---------- যে কারো যে কোনো সময় ‘না’ বলা তাদের মৌলিক অধিকার। এমনকি যৌন কর্মের যে কোনো পর্যায়ে ‘না’ মানে ‘না’। এই ‘না’ কে অবজ্ঞা মানেই ধর্ষণ। * মিথ : ------- যদি দুজন ব্যাক্তি আগে পরষ্পর সেক্স করে থাকে, মানে হলো এরা দুজন সবসময়ই সেক্স করতে পারবে। বাস্তবতা: ------------ আগে যা-ই হোক না কেনো, প্রতিবারই তাদের উভয়ের সম্মতি আবশ্যক। যে কোনো এক পক্ষের যে কোনো অসম্মতি মানেই ‘না’। * মিথ: --------- অ্যালকোহল, ড্রাগ, মানসিক চাপ বা ডিপ্রেশন মানুষকে ধর্ষকে পরিণত করে। বাস্তবতা: ----------- অ্যালকোহল বা ড্রাগ কখনোই কাউকে ধর্ষক বানায় না। এমনকি ডিপ্রেশন বা মানসিক চাপও ধর্ষণের জন্য ফ্যাক্টর না। ধর্ষণের জন্য কোনো অজুহাত অগ্রহণযোগ্য। * মিথ: --------- কোনো মেয়ে স্বেচ্ছায় প্রচুর অ্যালকোহল বা ড্রাগ সেবন করার পর ধর্ষিতা হলে তার অভিযোগ করা ঠিক না। বাস্তবতা: ---------- যে কোনো পর্যায়ে পার্টনারের সম্মতি আবশ্যক। সঙ্গী অ্যালকোহল বা ড্রাগের কারণে অচৈতন্য হলে তার সাথে সেক্স ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। * মিথ: -------- ধর্ষণের সময় কেবল শারীরিক বল প্রয়োগ ও ভিকটিম শারীরিক ক্ষত বিক্ষত থাকবে্। বাস্তবতা: ----------- ধর্ষণে যে শুধুমাত্র বহিরাঙ্গে দৃশ্যমান ইনজুরি থাকবে এমন নয়। অভ্যন্তরীণ ইনজুরি হতে পারে। কখনো ধর্ষক অস্ত্র বা অন্য কিছুর ভয় দেখিয়ে বিনা ইনজুরিতে সেক্স করতে পারে। ধর্ষক যদি ভিকটিমের নড়াচড়া না করার বা ঘুমন্ত থাকার,অচৈতন্য থাকার বা কথা না বলতে পারার সুযোগ নেয়, এ সবই ধর্ষণ। * মিথ: -------- ছেলেরা একবার উত্তেজিত হলো আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না,তাকে সেক্স করতেই হবে। বাস্তবতা: ---------- পুরুষ চাইলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ধর্ষণ যৌন তৃপ্তি নয়, সহিংস অপরাধ। * মিথ: -------- অনেক নারী পুরুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ আনে মিডিয়ার নজর কাড়ার জন্য। বাস্তবতা: ------------- পৃথিবীতে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ বিরল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিকটিম সামাজিক কারণে পুলিশের কাছে যায় না আবার অনেক ক্ষেত্রেই আদালতে প্রমাণ জটিল হয়ে পড়ে। * মিথ: ------- যে সমস্ত পুরুষ ছোটবেলায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয় তারা বড় হয়ে নিজেরাই শিকারী হয়। বাস্তবতা: ---------- এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ধর্ষকদের পক্ষে যে কোনো যুক্তিই অচল। * মিথ: ------- পুরুষ কখনো ধর্ষিত হয় না বা মেয়েরা কখনো যৌন অপরাধ করে না। বাস্তবতা: ---------- যদিও বিশাল সংখ্যক অপরাধ মেয়ে ও শিশুর বিরুদ্ধে করা হয়। সামান্য সংখ্যক পুরুষও নারী কর্তৃক যৌন নির্যাতিত হয়।* ---------------------------------------- *একটি বিদেশি ওয়েবসাইট অবলম্বনে
--

যৌনতা কি শুধুই শারীরিক?

"যৌনতা” মানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদা। এই চাহিদা সমাজে অন্যতম একটা ভূমিকা রাখে, জানো কেন? এটা যার তার সাথে হয় না। এর মূল উপাদান হলো প্রেম – ভালবাসা। যে মেয়েটি প্রেমিক পুরুষের সাথে সাত রকম ভাবে খেলে, তার সঙ্গীর সব খেলায় তাল দেয়, অজানা-অচেনা স্পর্শে, কিংবা অনাকাঙ্খিত স্পর্শে সেইই আবার গুটিয়ে যায়, নিজেকে অশুচি অনুভব করে। আচ্ছা, এটা কি শুধু মানুষের বেলায়? না তো, পশু-পাখিরাও তো কাউকে পছন্দ করে, নির্বাচন করে, তার সাথে সময় কাটায়, তারপর খেলায় লিপ্ত হয়। শরীর থেকে শরীরে যা প্রবেশ করে তার নাম অনুভূতি, প্রেম, মায়া। প্রাচীন যুগে আদিম নর-নারীরা কি সবাই সবার সাথে শুয়ে বেড়াতো? ইতিহাস কিন্তু তা বলে না, প্রেম-মায়ার বড় ভূমিকা ছিলো বলেই, বিয়ে এসেছে, সঙ্গী প্রথাটি এসেছে, পরিবার সৃষ্টি হয়েছে, তার থেকে সমাজ, রাষ্ট্র। এখনও যেখানে "সভ্যতা" নামের জীবানু পৌঁছে যায় নি, তারা কি প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে শোয়? ডকুমেন্টরী, সিনেমা, বই কিন্তু উলটো কথা বলে। টারজানের সাথে তো নোরা ছিলো, তারা শ্রেণীহীন, মুক্ত পৃথিবীর সদস্য। তাদের যার সাথে “মন” মজে তার সাথেই শোয়। প্রেম এই খেলার মূল উপাদান বলে, যেখানে প্রেম আছে সেখানে এর নাম “লাভ মেকিং” আর যেখানে নেই তার নাম “রেপ”। ***** মুসলিম ধর্মে বিয়ের আগে ছেলেমেয়ে মেলামেশা নিষিদ্ধ। কবুল বলার পর তাদেরকে সাধারণতঃ একঘরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। দুটো অচেনা-অজানা ছেলেমেয়ে যারা নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ, স্বপ্ন, লক্ষ্য, গন্তব্য একসাথে বিনিময় করে নাই তারা শরীর বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে জীবন শুরু করে। প্রাকৃতিক স্বাভাবিক সংকোচ থেকে সাধারণতঃ মেয়েরা এখানে প্যাসিভ থাকে আর জোর কিংবা এক্টিভ রোলটা পুরুষের থাকে। সামাজিকভাবে ছেলেরা এটা দেখে বড় হয় বলে, “বল” খাটানোকেই পৌরুষত্ব ভাবে। অথচ উলটো ব্যাপারটা স্বাভাবিক ছিলো না? দুটো মানুষের মধ্যে তাদের ভাল লাগা-মন্দ লাগা বিনিময়ের পর সিদ্ধান্ত নেয়া, এই কি সেই, যাকে খুঁজেছিলাম? যে জীবনটা উলটো দিক থেকে শুরু হয় সেটি কি করে স্বাভাবিক চলতে পারে? জোর খাটানো দিয়ে যে জীবনের শুরু, তাতে জোর করাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়, তাই নয়?

Thursday 16 September 2021

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – চৌদ্দই সেপ্টেম্বর টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান

লাইফ উইথাউট সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং প্রিমিয়ে রুতেঃ ১.৫ মিটারের সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং দিয়ে উইকিপেডিয়াতে জায়গা করে নেয়া নেদারল্যান্ডস পঁচিশে সেপ্টেম্বর থেকে এটি তুলে নিচ্ছে। হিপ হিপ হুড়ড়ে। তবে থিয়েটার, কনসার্ট, মুভি, মেলা, স্টেডিয়াম, রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ইত্যাদিতে ঢুকতে তের বছর থেকে সবাইকে করোনা সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। চৌদ্দ বছরের ওপর থেকে আইডি কার্ড দেখাতে হবে। কোন অনুষ্ঠান যদি একদিনের বেশী হয় তাহলে অনুষ্ঠানের সবাইকে পরদিন থেকে প্রতিদিন সবাইকে করোনা টেস্ট করাতে হবে। আপাতত এগুলোর ব্যয় সরকার বহন করবে। প্রতি মিউনিসিপ্যালটিতে এজন্য বরাদ্দ পাঠানো হয়েছে। রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ইত্যাদিতে যতজন আর যখন ইচ্ছে যেতে পারে তবে রাত বারোটা থেকে সকাল ছয়টা এগুলো বন্ধ থাকবে। মুভি, মেলা, কনসার্ট, থিয়েটার যেখানে নির্দিষ্ট বসার জায়গা আছে, সেখানে হলের পুরো ধারন ক্ষমতার সমান দর্শক থাকতে পারবে। যেখানে বসার জায়গা নির্দিষ্ট নয় সেখানে মূল ধারন ক্ষমতার পচাত্তর ভাগ মানুষ যেতে পারবে, তারপরও সবাইকে সাবধান থাকতে বলা হচ্ছে। মেলা, খেলাধূলা ইত্যাদি বাইরের সব বিনোদন সম্পূর্ণ বিধিনিষেধ মুক্ত। ট্রেন, ট্রাম, বাস, ট্যাক্সিতে মাস্ক পরতে হবে, সিকিউরিটি পার হওয়ার পর এয়ারপোর্টে মাস্ক বাধ্যতামূলক। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান আর চার্চে করোনা সার্টিফিকেট লাগবে না। এটি সম্পূর্ণ চার্চের ওপর নির্ভর করে, সরকার সেখানে কিছু বাধ্যবাধকতা দেয়ার এখতিয়ার রাখে না। শিক্ষাক্ষেত্রঃ ম্যাক্সিমাম পচাত্তর জনের বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না। মাস্ক আর বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক। প্রাইমারি স্কুলে একজন করোনা পজিটিভ হলে পুরো ক্লাশকে আর কেয়ারন্টিন যেতে হবে না, শুধু যারা পজিটিভ তারা গেলেই চলবে। পয়লা নভেম্বর আবার দেখা হবে প্রেস কনফারেন্সে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো দ্যা ইয়ংঃ ভ্যাক্সিন নেয়া কিংবা না নেয়া ব্যক্তির ইচ্ছের ওপর নির্ভরশীল থাকবে, ভ্যাক্সিন নিতে কাউকে বাধ্য করা হবে না। যারা ভ্যাক্সিন নেয়নি তাদেরকে কোথাও যেতে হলে প্রত্যেক বার করোনা পরীক্ষা করাতে হবে আর এটি তারা বিনামূল্যে করাতে পারবে। তবে ভ্যাক্সিন নেয়ার জন্যে আমি অনুরোধ করবো, শতকরা পচানব্বই জন ভ্যাক্সিন নেয়া মানুষ হাসপাতাল ছাড়া সারভাইভ করতে পারে আর সাতানব্বই জন আইসিইউ ছাড়া সারভাইভ করতে পারে। হাসপাতালে আসা বেশীর ভাগ মানুষই যারা এখনও ভ্যাক্সিন নেয়নি। যত বেশী মানুষ ভ্যাক্সিন নেবে ততো আমরা সব নিয়ম শিথিল করতে পারবো, কারণ ভ্যাক্সিন নেয়া থাকলে অন্যদের সংক্রমণ করার সুযোগ কম থাকে। অফিসে জিজ্ঞেস করতে পারে, তুমি ভ্যাক্সিন নিয়েছো কিনা। তবে জবাব দেয়া না দেয়া কর্মীর ইচ্ছা। কিন্তু নিজেদের অফিস নিরাপদ রাখতে বা সংক্রমণ এড়াতে অফিস বলতে পারে, ভ্যাক্সিন নেয়ার কথা। কিংবা টেস্ট করার কথা। তবে কেউ কাউকে বাধ্য করতে পারবে না। যারা স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছে তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রযোজ্য। দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষজন যাদের ইম্যুয়ন যথেষ্ঠ নয়, তারা নিজেদের ডাক্তারদের থেকে অক্টোবর মাসে তৃতীয় টিকা নেবার চিঠি পাবে। দুইশো থেকে চারশো হাজার মানুষ এর আওতায় পরবে। যেহেতু সাধারণ ভ্যাক্সিনটি বৃদ্ধ, অসুস্থ এমনকি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের জন্যেও অনেক কার্যকর তাই আপাতত বুস্টার ডোজ কাউকে অফার করা হচ্ছে না। কিন্তু প্রয়োজন হলে আমরা তৈরিই আছি। সাংবাদিকঃ একদিকে বলছেন নিয়ম শিথিল করছেন অন্যদিকে বলছেন কফি খেতে গেলেও করোনা সার্টিফিকেট লাগবে। কেন? প্রিমিয়ে রুতেঃ আনফরচুনেটলি ইয়েস, দেড় মিটার দূরত্বের বাধ্যবাধকতা যেহেতু তুলে নিয়েছে, সবাই নিরাপদ আছে এটা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। সাংবাদিকঃ কি করে সেসব নিশ্চিত করা হবে? প্রিমিয়ে রুতেঃ প্রতিটি মিউনিসিপ্যালটিকে এজন্য আলাদা টাকা দেয়া হয়েছে, তারা পুলিশ বা চেকার নিয়োগ করবে যারা রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে এসবে যেয়ে চেক করবে এবং যারা নিয়ম মানেনি তাদের জরিমানা করবে। সাংবাদিকঃ ফ্রান্সে পনেরশো টাকা জরিমানা ধরা হয়েছে আমাদের কত টাকা জরিমানা? প্রিমিয়ে রুতেঃ সেটা এখনও ঠিক হয়নি, আমার মনে নেই, তবে আলোচনা চলছে। শুধু জরিমানা নয় দরকার হলে ক্যাফে বন্ধও করে দেয়া হতে পারে। সাংবাদিকঃ নাইট ক্লাবস সব রাত বারোটায় বন্ধ করে দিতে বলেছেন? আপনি কি গত বছর নাইটক্লাবে গেছেন? সেখানে কি হয়? আর যদি রাত বারোটায় বন্ধ করেই দেন তাহলে মানুষ বাসায় যেয়ে পার্টি করবে, তাহলে লাভটা কি হলো? সংক্রমণতো ওখানেও হতে পারে? প্রিমিয়ে রুতেঃ আমাদেরকে প্রতিটি পা খুব গুনে গুনে ফেলতে হবে। ছাব্বিশে জুনের শিক্ষা আমাদের মনে রাখতে হবে। সাংবাদিকঃ আপনি ভাবছেন বারোটায় নাইট ক্লাব থেকে এসে মানুষ সব শুয়ে পরবে? প্রিমিয়ে রুতেঃ আমি কিছুই ভাবছি না, আমি শুধু বলতে চাই, সবাইকেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। সাংবাদিকঃ ভাইরাসের কি ঘড়ি আছে? সাংবাদিকঃ বাসায় পার্টি চলতে পারবে, মেলা, কনসার্ট চলতে পারবে শুধু ক্যাফেতে বসে রাত বারোটার পর ড্রিঙ্ক করা যাবে না? আমরা কি তাহলে ড্রাগ প্রমোট করতে চাইছি? প্রিমিয়ে রুতেঃ আমরা শুধু ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে চাইছি। সাংবাদিকঃ ডান্স ফিস্ট কেন বন্ধ করলেন? এত প্রটেস্ট হচ্ছে সেটা দেখেছেন? করোনা নিয়ে আপনাদের ওপর জনগনের আস্থা খুবই কম। হুগো দ্যা ইয়ংঃ ওএমটি’র উপদেশানুসারে বন্ধ করেছি, নাইট লাইফ থেকে যেহেতু সংক্রমণ বেশী হয়, সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সবাইকে। সাংবাদিকঃ ঠিক কখন এসব থেকে আমরা বের হতে পারবো? সংক্রমণ কোন হারে এলে নিজেদের স্ট্যাবল ভাববো? হুগো দ্যা ইয়ংঃ চল্লিশ জন হাসপাতালে, দশ জন আইসিইউতে সাতদিন কিংবা তারপরেও যদি এটাই কন্টিনিউ করে তাহলে আমরা আরও অনেক শিথিলতার দিকে যাবো বা যেতে পারবো। আমরা কিছুতেই আগের পরিস্থিতি বা লকডাউনে ফিরে যেতে চাই না।

Sunday 12 September 2021

দ্যা করোনা ডায়রী অফ তাতা ফ্র্যাঙ্ক – তেরই আগষ্ট টুয়েন্টিটুয়েন্টি ওয়ান

প্রিমিয়ে রুতেঃ ছাব্বিশে জুন অনেক নিয়মনীতি শিথিল করার পর গ্রীস্মের শুরুতে সংক্রমণের যেরকম উর্ধ্বগতি ছিলো তা ছিলো বিস্ময়কর। তারপরও আমরা সবাই নিয়মনীতির বাইরে খানিকটা করোনাবিহীন একটি সুন্দর গ্রীস্ম উপভোগ করতে পেরেছি। এই পুরোটা সময় আমাদের জন্যে ছিলো শিক্ষনীয়। এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন, হেমন্ত কেমন যাবে আমাদের? দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেশ অনুযায়ী আমরা আস্তে আস্তে একটি একটি করে নিয়ম শিথিল করবো। যদিও আমরা জানি প্রতিটি পদক্ষেপই ঝুঁকিপূর্ণ, আর বিশেষ করে সেটি শিক্ষার্থী ও ক্যাটারিং ব্যবসায়ীদের জন্যে খুবই বেদনাদায়ক। প্রায় এক মিলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দেড় বছর ধরে অনলাইন ক্লাশ করছে তাতে অনেকেই পড়ায় পিছিয়ে গেছে, রেজাল্ট খারাপ করছে ইত্যাদি। এছাড়াও নিঃসঙ্গতা থেকে অনেক বেশী মানসিক সমস্যায় ভুগছে তারা। তাই শিক্ষাঙ্গনে ত্রিশে আগষ্ট থেকে সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ থাকছে না। তবে পচাত্তর জনের বেশী একসাথে হতে পারবে না। সবাই সপ্তাহে দুবার নিজেরা করোনা পরীক্ষা করবে, মাস্ক পরবে এবং রুমে প্রচুর বাতাস খেলা করার সুযোগ থাকতে হবে, হাইজিন মেইনটেইন করতে হবে। তবে বিশে সেপ্টেম্বর থেকে সমস্ত নেদারল্যান্ডস থেকে দেড় মিটার সামাজিক দূরত্বের বাধ্যবাধকতা উঠে যাচ্ছে, পাব্লিক ট্রান্সপোর্টে আর মাস্ক পরতে হবে না, ওয়ার্ক ফ্রম হোমও আর দরকার নেই। ইউনিভার্সিটিগুলোয় শিথিলতা দেয়ার প্রতিক্রিয়া কি হয়, সংক্রমণের হার কতটুকু বাড়ে সেটা দেখে শুক্রবার সতেরই সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে। তবে যেখানে সবচেয়ে বেশী সংক্রমণ হয়, ডিস্কোথেক আর নাইট ক্লাবস তখনও বন্ধই থাকবে। উৎসব, সিনেমা, থিয়েটার, কনসার্ট, কংগ্রেস, স্টেডিয়াম ইত্যাদিতে পচাত্তর জনের ওপরে হলে ভ্যাক্সিন/অনুমতিপত্র বাধ্যতামূলক। ক্যাটারিং সার্ভিস সহ অন্যান্য যেসব ব্যবসায়ীরা করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তারা পয়লা অক্টোবর পর্যন্ত সরকারী অনুদান পাবে। আর উৎসব আয়োজনকারীদের জন্যে বিশে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আপাতত অনুদান বরাদ্দ আছে। আর ডিস্কোথেক আর নাইট ক্লাবসের অনুদান চলমান থাকবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো দ্যা ইয়ংঃ সমস্ত জনসংখ্যা থেকে এক দশমিক আট মিলিয়ন মানুষের এখনো কোন ইম্যুনিটি তৈরি হয়নি। তারা করোনাক্রান্ত ও হয়নি তারা ভ্যাক্সিন ও নেয়নি। আমরা ভয় পাচ্ছি হেমন্তে তাদের থেকে হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হতে পারে এবং খুব বাজে ভাবে অসুস্থ হতে পারে। হয়ত তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে আর যদি হাজার হাজার মানুষ একই সময় অসুস্থ হয় তাহলে আবার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, হাসপাতালের সাধারণ রুটিন, ডিসিপ্লিন ভেঙে পড়বে। তাই যারা যারা এখনো ভ্যাক্সিন নেয়নি তাদের বলছি, দ্রুত ভ্যাক্সিন নিয়ে নিতে। আর জিজিডিতে ভ্যাক্সিন নিতে গিয়ে যারা ঝগড়া ও মারামারি করেছে, আমি স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষ হয়ে তাদের আন্তরিক নিন্দা জানাচ্ছি। সাংবাদিকঃ যদি কোন রেস্টুরেন্ট মালিক বলে, ভ্যাক্সিন না থাকলে আমি রিজার্ভেশান নেবো না, তাহলে কি হবে? প্রিমিয়ে রুতেঃ নেদারল্যান্ডসের আইন অনুযায়ী এরকম একজন একজনকে বলতে পারে না, সেটা বেআইনী হবে তারপরও আমি বলবো, যারা যারা এখনো ভ্যাক্সিন নেয়নি তারা যেনো দ্রুত ভ্যাক্সিন নিয়ে নেয়, অনেক জায়গায় প্রবেশ করতেই ভ্যাক্সিনেশান সার্টিফিকেটের দরকার হবে। সাংবাদিকঃ বিশে সেপ্টেম্বর থেকে ঠিক কোথায় কোথায় প্রবেশ করতে করোনা চেক বাধ্যতামূলক? প্রিমিয়ে রুতেঃ রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, উৎসব, স্টেডিয়াম, মেলা, সিনেমা ও থিয়েটার, ভেতরে এবং বাইরে। সাংবাদিকঃ পয়লা সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মত নেদারল্যান্ডসে উৎসব পালিত হচ্ছে যেখানে প্রায় একশো হাজারেরও বেশী মানুষের পদচারণা হবে সেটি কি নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিক নয়? প্রিমিয়ে রুতেঃ নিয়ম মানলে সাংঘর্ষিক কেন হবে? ওখানে সবাই বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করবে। ভ্যাক্সিন সার্টিফিকেট দেখালে ধারন ক্ষমতার দুই তৃতীয়াংশ মানুষ আসতে পারবে আর সার্টিফিকেটের বাধ্যবাধকতা না থাকলে এক তৃতীয়াংশ। সাংবাদিকঃ অনেক শিক্ষকই ভয় পাচ্ছেন ক্লাশে ভ্যাক্সিন নেয়নি এমন ছাত্র ছাত্রীও থাকবে, সেক্ষেত্রে সংক্রমণ অনেক তাড়াতাড়ি ছড়াবে হুগো দ্যা ইয়ংঃ সুখবর হলো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে কথা বলে চুক্তি করে নিয়েছে, যারা যারা এখনো ভ্যাক্সিন নেয়নি তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসেই ভ্যাক্সিন নিতে পারবে। ভ্যাক্সিন নিতে তাকে কোথাও যেতে হবে না, স্বাস্থ্যকর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে ভ্যাক্সিন দিয়ে যাবে। সাংবাদিকঃ কিছু কিছু মানুষের ভ্যাক্সিন নেয়ার থেকে সমস্যা হচ্ছে, বা নেয়াতে সমস্যা আছে, ইম্যুইন সিস্টেমও ভাল না তাদের সম্পর্কে কি ভেবেছেন? হুগো দ্যা ইয়ংঃ তাদের জন্য বুস্টার ডোজের কথা ভাবা হচ্ছে যদিও সেটি ডাক্তারের প্রেসক্রিপশানুযায়ী হবে তাতে হয়ত তাদের ইম্যুইন সিস্টেম খানিকটা ডেভেলাপ করবে। তাছাড়া সবসময় কিছু মানুষ থাকবেই বিভিন্ন কারণে যাদের ভ্যাক্সিন দেয়া যাবে না, দুর্বল, অন্য কিছু সমস্যা, তাদের ব্যাপারে কি করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। তানবীরা হোসেন ১১/০৯/২০২১

Sunday 22 August 2021

Skater Girl

ছবিটির ট্রেলার প্রকাশ হওয়ার পর, উল্রিক রাইনহার্ড এবং ভারতের শীর্ষ স্কেটবোর্ডার আশা গন্ডের উত্থানের গল্পের সাথে নেটিজেনরা ছবিটির মিল খুঁজে পান। জার্মান নাগরিক উল্রিক রাইনহার্ড নিজেও বলেছেন এই সিনেমা তার জীবনকে ভিত্তি করে বানানো হয়েছে এবং স্কাইপ কলে এবং সামনাসামনি মাকিজানি বোনদের সাথে তার আলোচনাও হয়েছে। তাদের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের অঙ্গীকারও হয়েছিলো। মধ্য প্রদেশের জানবার প্রদেশের আশা গন্ড বলছেন এই ছবি বানানোর জন্যে তার কোন অনুমতি নেয়া হয়নি যদিও তারা তার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। পরিচালক মাকিজানি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, "চলচ্চিত্রটি কারো বায়োপিক বা প্রামাণ্যচিত্র নয়। এটি গন্ড বা রাইনহার্ডের গল্প নয়, এটি আমাদের গবেষণার সময় ভারত জুড়ে শত শত মেয়ে এবং স্কেটারের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। স্কেটবোর্ডারদের সাথে প্রযোজকদের এই নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। দুই হাজার বিশ সালের প্রথমদিকে শুটিং শেষ হলেও মানজারি মাকিজানির পরিচালনায় এগারোই জুন দুই হাজার একুশে মুক্তি পেয়েছে “Skater Girl”, এর চিত্রনাট্য লিখেছেন ভিনাতি আর মানজারি মাকিজানি দুইবোন। সারা ভারতে স্কেটবোর্ডিংয়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির গল্পটি তারা সামনে আনতে চেয়েছেন এবং তার সাথে খেলাধুলায় অংশগ্রহণকারী মেয়েদেরকে পারিবারিকভাবে প্রতিরোধের বিষয়টি, সংস্কৃতির সংঘাত ইত্যাদি খুব নির্দিষ্ট বিষয়গুলিও স্পর্শ করেছেন। প্রতিরোধ, পরিবর্তন এবং সম্ভাবনা, তিনটি বিষয়ই সিনেমাটি উঠে আসলেও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, মেয়েদের ওপর সামাজিক চাপটিকে, বিশেষ করে সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রেরনার মতো দরিদ্র মেয়েদের পরিস্থিতিকে। সিনেমায় দেখা স্কেটপার্কটি "স্কেটার গার্ল" সিনেমার জন্য নির্মিত হয়েছে। প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে পাঁচ মাসে চৌদ্দ হাজার পাঁচশো স্কয়ার ফুটের এই পার্কটি নির্মাণ করা হয় এবং এটি এখনও আছে, এটি ভারতের অন্যতম বড় স্কেট পার্ক, ক্ষেমপুর, রাজস্থানের প্রথম স্কেটপার্ক। এলাকার শিশুরা, পেশাদার স্কেটাররা অনুশীলন এবং প্রতিযোগিতার জন্য এটি ব্যবহার করে। "স্কেটার গার্ল" শুধু স্কেটবোর্ডিংয়ের জন্য একটি আবেগীয় গল্প নয়, স্কেটবোর্ডিংকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাস্তবেও এটি সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছে। দেশ, কাল, স্থান, পাত্র ভেদ করলেও কিভাবে যেনো মায়েদের যুদ্ধগুলো খানিকটা একই হয়। কোন কোন সৌভাগ্যবতী মা সেই যুদ্ধে জয়ী হয় আর বাকিরা জীবনভর যুদ্ধ করেই চলে। মেয়ে স্কেটিং করলে পরিবারের অসম্মান হবে তাই বাবা স্কুলে পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেবে। পড়াশোনার দরকার নেই, মেয়ের চাওয়া-পাওয়ার কোন মূল্য নেই, যারা একবেলা খেতে দেবে না, সেই মানুষদের কাছে তার ঠুনকো পাগড়ীর মূল্য মেয়ের আনন্দের চেয়ে বেশী। মেয়ের চাওয়ার কাছে মা হার মানেন, বারবার। সিনেমা দেখতে দেখতে বারবার ভাবছিলাম, তালিবান কি শুধু আফগানিস্তানেই থাকে? মুখে দাঁড়ি আর মাথায় পাগড়ি থাকলেই কি তালিবান? এই সমাজে হাজার হাজার তালিবান আছে যারা ভাবে, মেয়েরা বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে যাওয়া মানে উচ্ছৃঙ্খলতা, স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্বাবলম্বী মেয়ের তার স্বোপার্জিত আয় খরচ করা অনুচিৎ। স্বামী বেকার হোক কিংবা জুয়ারী, সংসারের সমস্ত অশান্তিতে স্ত্রীকেই স্বামীর মন বুঝে চলতে হয়। স্ত্রী-সন্তানের ওপর স্বামী যত অত্যাচারই করুক, তারপরও পরিবারই বলবে, একহাতে তালি বাজে না। সিনেমায় দেখতে পাই, “মেয়ের সাফল্যে আনন্দে হাততালি দিতে গিয়ে মা, বাবার দিকে চোখ পড়তেই থেমে যায়”। আসলে তালিবান ভারতবর্ষের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে আছে, চিন্তায়, চেতনায় আর মননে। চলচ্চিত্র নির্মাতারা গবেষণা, লেখালেখি এবং রাজস্থানের কিশোর -কিশোরীদের সাক্ষাৎ করে প্রেরণা এবং অঙ্কুশের চরিত্রগুলি যথাসম্ভব বাস্তবভাবে লেখার জন্য এক বছরেরও বেশি সময় ব্যয় করেছেন। ক্ষেমপুরের চৌত্রিশজন স্কেটারসহ পুরো ভারতের পঞ্চান্নজন স্কেটার এই চলচিত্রটিতে অভিনয় করেছেন যদিও তিন হাজারের বেশি বাচ্চার অডিশন নেয়া হয়েছিলো। স্কেট পার্কটি নির্মাণের সময় উৎসুক স্থানীয় বাচ্চারা ভীড় জমাতো সেটি দেখতে তাদেরকে তখনই স্কেটবোর্ডের ট্রেনিং দেয়া শুরু হয় এবং পরবর্তীতে অভিনয়েরও সুযোগ দেয়া হয়। র‍্যাচেল সঞ্চিতা গুপ্ত প্রেরণার চরিত্রে আর সাফিন প্যাটেল অঙ্কুশের চরিত্রে অভিনয় করেছে, পনের বছর বয়সী র‍্যাচেল এর আগে আঘাতিত নামে একটি শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছে কিন্তু সাফিনের এটিই প্রথম ছবি। রজার এবার্ট, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ফার্স্ট পোস্ট, মেটাক্রিটিক, গার্ডিয়ানসহ বহু নামী মিডিয়া এই সিনেমার পজিটিভ রিভিউ প্রকাশ করেছে। অর্ধেক পৃথিবী জুড়ে গরমের ছুটি চলছে, খুব আহামরি না হলেও সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, টাইম আউট মুভি হিসেবে এটি দেখে নেয়া যেতেই পারে। সময় নষ্ট মনে হবে না তার নিশ্চয়তা দিতেই পারি। তানবীরা হোসেন ২২/০৮/২০২১