Thursday 21 September 2023

“জলের বানী”

“জলের বানী” আপনার চিন্তা আপনাকে নয় বরং আপনি আপনার চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করুন – ডঃ মাসারু ইমোটো কোন এক শীতের সকালে জানালায় বসে তুষারপাত দেখছিলেন ডঃ ইমোটো। প্রতিটি তুষার কনা মাটিতে পড়েই একটি আকার ধারন করে। একটির আকারের সাথে অন্যটির আকারের কোন মিল নেই। প্রতিটি তুষারকনা’র আকারই অনন্য। তারা কিভাবে “অনন্য” আকার নেয়, এটি বিবেচনা করে তিনি কৌতুহলী হয়ে ওঠেন, পানি’কে বরফ করলে তাদের মৌলিকুলের আকার কিরকম হবে তা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। তিনি নিজে একটি কাঠামো/তত্ত্ব নির্দিষ্ট করে পরীক্ষা শুরু করেন যা কয়েকমাস পরে সঠিক প্রমানিত হয়েছিলো। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা জানি, পানির নিজস্ব একটি বৈশিষ্ট্য আছে। ডঃ ইমোটো এটিকে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা করে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে দিয়েছেন, “পানির জীবনীশক্তি প্রাণবন্ত” । ঐতিহ্যগতভাবে চীনা চিকিৎসকরা “চিন্তাভাবনা”কে কম্পন হিসেবে দেখে। যাই ঘটুক না কেন, বিমূর্ত চিন্তাও অবশ্যই শরীরের মধ্যে অনুরণিত হবে। পদার্থবিদ্যার কোয়ান্টাম তত্ত্বেও আছে “এই পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই কম্পমান”। এবং ডঃ ইমোটোর পরীক্ষা প্রমাণ করেছে যে এই কম্পনগুলি জলেও অনুরণিত হয়। পরীক্ষার জন্যে ডঃ ইমোটো তার নিজস্ব জাপানী ভাষায় দুটো চিরকূট লেখেন, একটিতে লেখেন “প্রেম” অন্যটিতে “ঘৃণা। চিরকূট দুটোকে বোতলে আটকে দেন, লেখাটা ছিলো পানির দিকে মুখ করে। সারারাত তাদেরকে সেভাবে রাখা হলো। পরের দিন বোতলগুলোকে ডিপ ফ্রিজে রাখেন এবং তাদের ছবি তোলেন। “ভালোবাসা” লেবেলযুক্ত বোতলটির পানির মৌলিকূলগুলো চকচকে পরিস্কার একটি আকৃতি তৈরি করে আর “ঘৃণা” লেবেলযুক্ত বোতলটির পানি থেকে বিশৃঙ্খল একটি আকৃতি তৈরি হয়ে প্রমাণ করে যে, “পানি প্রকৃত পক্ষেই কম্পনের মাধ্যমে পরিবর্তন হতে পারে”। অবশ্যই ডঃ ইমোটো সেখানে থামেননি: তিনি তার পরীক্ষা চালিয়ে যান, বিভিন্ন শব্দ, সঙ্গীত এবং অন্যান্য পরীক্ষা বোতল শত শত বিষয় ভাইব্রেশনাল প্রভাব, এবং ফলাফল সব পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত. 'ইতিবাচক কম্পন' = সুন্দর স্বচ্ছ আকৃতি 'নেতিবাচক কম্পন' = বিকৃত অস্বচ্ছ আকৃতি আশার কথা হলো, নিজের চিন্তাভাবনাকে ইতিবাচক রাখার জন্যে নিজের ওপরেও আপনি এই পরীক্ষাটা করে দেখতে পারেনঃ ধরুন, আপনি নিজে আশি ভাগ আর পানি হলো বাকি বিশ ভাগ, আপনার নিজের ওপর কি প্রভাব পড়ছে? নিজের মস্তিকের কোষে? যদি নিজেকে ভালো বাসেন, নিজের প্রতি যত্নশীল থাকেন, সারাবেলা ইতিবাচক চিন্তাভাবনা রাখেন, এর প্রভাব আপনার মস্তিকের কোষে পড়ে ঠিক তেমনি এর বিপরীত প্রভাবটাও স্পষ্টই হবে। সারাদিনের বেশিটা সময় মানুষ নিজের সাথে কাটায়। নিজের প্রতি সদয় থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাতে অন্যের প্রতি আপনার কমনীয়তা আরো বাড়বে সাথে নিজের স্বাস্থ্য, শক্তি ও জীবনীশক্তি আরো উন্নত হবে। তথ্যসূত্রঃ http://www.masaru-emoto.net/english/water-crystal.html

Sunday 30 July 2023

রায়হান রাফি

পাইরেসি’র কারণে দেখে ফেললাম রায়হান রাফি’র সদ্য রিলিজ পাওয়া সিনেমা “সুড়ঙ্গ”। ধন্যবাদ, আমার “পাইরেট” বন্ধুদের মানে যারা আমাকে লিঙ্ক দাও আর কি তাদেরকে মীন করছি। বাংলাদেশের বাংলা সিনেমা অবশেষে কোলকাতার বাংলা সিনেমাকে পেছনে ফেলে দিয়েছে (নিঃসন্দেহে)। কোলকাতা আটকে গেছে ফেলুদা আর ব্যোমকেশে। কিন্তু “পাইরেসি” কোয়ালিটিতে কোলকাতা আর বাংলাদেশ সমান বাজে। “অর্ধাঙ্গিনী” আর “সুড়ঙ্গ” একই রকম বাজে কোয়ালিটির। এদিক থেকে হিন্দী পাইরেটসরা ভালো, এরা উন্নতমানের ডিভাইস ইউজ করে। দুই বাংলার পাইরেটসদেরই এই দিকে একটু বেশি পয়সা খরচা করা উচিৎ। ফ্রাইডে, পরান তারপর সুড়ঙ্গ, রায়হান রাফির ফ্যান হয়ে গেছি। অমিতাভ রেজা’র কনফিউশান মুভি থেকে অনেক বেশি ক্লিয়ার (বোধগম্য) ছবি বানায় এই ছেলে। সুড়ঙ্গ মুক্তি পাওয়ার পর অনেকগুলো সমালোচনার একটা বারবার রিপিট করেছে যেটা হলো, “রাফি, মেয়েদেরকে নেতিবাচক ভাবে দেখায় তার মুভিতে।“। আমার মতে কথাটা ঠিক না। রাফি বরং যা হয় তাই দেখানোর সাহস করেছে। অকারণে রঙচঙ দিয়ে “মেয়ে” মানেই দুর্বল তারে সিমপ্যাথি কার্ড খেলতে দাও, সেই ফাইজলামি করে নাই। তিনটি সিনেমাতেই এক জিনিস এসেছে, “কর্মহীন কিংবা রোজগারবিহীন মেয়ে”। প্রতিটি ঘটনাই বাস্তবে ঘটেছে তারপর সিনেমা হয়েছে, সে নিজের থেকে কাহিনী বানানোর কষ্টও করে নাই, রোজ এগুলো পত্রিকার পাতায় থাকে। “ফ্রাইডে”তে স্বামী মারা যাওয়ার পর, ভদ্রমহিলা যদি নিজে একটা কাজ খুঁজতো, স্বাবলম্বী হবার চেষ্টা করতো তাহলে বাড়িওয়ালার এবিউজ এড়াতে পারতো। তার মেয়ে মুনা’ও সেই গৃহবধূ, ফলাফল স্বামীর দ্বারা এবিউজড। পরিনতিতে বাড়িসুদ্ধ খুন। আমাদের দেশে স্টুডেন্ট লাইফে মেয়েদের তেমন কাজকর্ম করার রীতি নেই। ছেলেরা টুকটাক টিউশনি করে। কিন্তু সাজগোজ আর বায়না করার বয়সও সেটা। অনেক মধ্যবিত্ত বাবাই সেটা এফোর্ড করতে পারে না। অনেক মেয়েই তখন অন্য রাস্তা ধরে। “অনন্যা” চরিত্রটিও ঠিক তাই। একজন পায়ে সেধে জিনিসপত্র দিতে আসছে, সে নেবে না? ঐটুকু বয়সে কেউ পরে কি হবে সেটা ভাবে? অনন্যার মা স্বাবলম্বী হলে কিংবা অনন্যা নিজের পকেট মানি নিজে আর্ন করলে এই ঘটনাটা না’ও ঘটতে পারতো। ছোট বয়সের চঞ্চলতার মাশুল দিতে এখন কারাগারে বসে ফাঁসির দিন গুনছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ময়না’র বিয়ে হয়েছে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মাসুদের সাথে। নতুন বউয়ের হাজার শখ, তার বায়নায় হাবুডুবু মাসুদ যায় মালোশিয়া। অথচ মাসুদের আর ময়নার ঠিক করা দরকার ছিলো, ময়না’ও কাজ করবে এবং নিজের শখ নিজের টাকায় পূরণ করবে। ছুটির দিনে দুজন একসাথে বেড়াতে যাবে আনন্দ করবে। সব বোঝা একজনের কাঁধে না, ভাগাভাগি হবে। মেয়েরা স্বাবলম্বী হলে কি তবে সমস্যা কমে যায় বা শেষ হয়ে যায়? একদমই না। তবে সমস্যার ধরন পালটে যায়। খুন-খারাপি অন্তত এড়ানো যায়। ২৩শে জুন প্রথম আলো রিপোর্ট করেছে, প্রতি চল্লিশ মিনিটে ঢাকায় একটি করে ডিভোর্স হচ্ছে। ডিভোর্সের আবেদন সত্তর ভাগই আছে নারীর কাছ থেকে। ঢাকার বাইরেও একই চিত্র। এই নেতিবাচক খবরের ইতিবাচক দিক হলো, এখানের অর্ধেক স্বামী কিংবা স্ত্রী খুনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আগের মতো এভরি অল্টারনেট ডে’তে এখন পেপারে খবর আসে না, রাজধানীতে আবারো গৃহবধূ খুন। মেয়েরা স্বাবলম্বী হতে শুরু হওয়ায় বাংলাদেশ আছে আর এক সমস্যায়। স্বাবলম্বী মেয়েদের জন্যে এই সমাজ কাঠামো এখনও তৈরি না। আশা’র কথা শুরু যখন হয়েছে তখন কাঠামোও বদলাবে, অনেক সময় নেবে তবে বদলাবে। তানবীরা ৩০/০৭/২০২৩

এক মন্দ বউয়ের উপাখ্যান

এক মন্দ বউয়ের উপাখ্যান https://epaper.protidinerbangladesh.com/second-edition/2023-07-28/8/6130?fbclid=IwAR3GUPGteLqC4wxiN3NSpOJRcj0WgLL5q0OJTk7rMODVdRa-I-_WPco0fbo নিশি খুব রেগে আছে, সজীবও। একজনের মুখ লাল আর অন্যজনের কালো। ঘরে এসির খানিকটা ধাতব শব্দ আর ল্যাপটপে ইতস্তত টাইপের মৃদ্যু শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। দুজনেই ঘরের দুই কোনায় দুজনের ল্যাপটপ নিয়ে বসে অফিসের কাজ করছে, যদিও দুজনের কারোই এখন অফিসের কাজের কোন পরোয়া নেই। না এখন কাজ নিয়ে ভাবার এতটুকু আগ্রহ আছে তাদের। সজীব নিশির দিকে আবার তাকালো। ভাবছে, এত স্বার্থপর, নিষ্ঠুর কেমন করে হতে পারে নিশি। তার জানা মতে তার আশেপাশে নিশিই ছিলো সবচেয়ে নরম, কোমল, মায়াবতী মেয়ে কিন্তু দেখা যাচ্ছে তার জানায় ভুল ছিলো। সকালের আলোচনায় নিশির এক কথার জবাবই যথেষ্ঠ ছিলো নিশির নির্মম আসল চেহারাটা দেখার জন্যে। যদিও সজীবের তরফ থেকে এটি এমন কোন আলোচনাই ছিলো না যেখানে নিশি এক কথায় একটা জবাব দিতে পারে। সজীব এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না যে নিশি সত্যিই এটা বলেছে। ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য কয়েকদিন আগে। অপরিচিত একজন নিশিকে ফোন করে জানালো, নিশি’র বাবামা রিকশা থেকে পরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। আঘাত সেরকম মারাত্বক না হলেও গভীর। ডাক্তার তাদেরকে মাসখানেকের জন্যে নিয়মিত চিকিৎসা ও বিশ্রামের উপদেশ দিলেন। বয়সের কথা ভেবে ডাক্তার তাদের সেবা যত্নের দিকে প্রখর দৃষ্টি রাখার কথা জানালেন। নিশি তার বাবামায়ের একমাত্র সন্তান। যে মুহূর্তে নিশি বাবামায়ের দুর্ঘটনার কথা জেনেছে সেই মুহূর্তে সে অফিস থেকে অর্নিদিষ্টকালের ছুটি নিয়ে নিয়েছে। সজীবকে বলেছে, টুকটুকির খেয়াল রাখতে, বাড়ি সামলাতে, যেটা সজীব খুশী মন নিয়েই করেছে। নিশি দিনরাত এক করে বাবামায়ের সেবা করেছে, ডাক্তার, নার্স, বাজার, ঔষধ, ফিজিওথেরাপি সব। বাবামা কি খাবে সেই রান্না, বাড়ি এখন কিভাবে চলবে সেসব বন্দোবস্ত, সাহায্যের লোক ঠিক করা, জামাকাপড় কাঁচা কি নয়। স্বাভাবিকভাবেই, ঢাকার এই জ্যাম ঠ্যাঙ্গিয়ে সে এই কয়দিন এ বাড়ি আসেনি। তাই নিয়ে সজীবের কোন আপত্তিও ছিলো না। বরং সজীব খুশী হয়েছিলো এই দেখে, কিভাবে একা তার বউ এত কিছু সামলাতে পারে। কি সুন্দর করে নিশি তার বাবামায়ের সেবাযত্ন করছে। সবচেয়ে বেশি যেটা ভাল লেগেছে, ছোট বাচ্চাদের মত করে বাবামায়ের যত্ন করছে যেনো ওরাই নিশির সন্তান। এরই মধ্যে নিশি তার বাবামাকে আস্তে আস্তে রাজি করালো, তাদের বাসার কাছাকাছি বাসা নিয়ে চলে আসতে। প্রথমে তারা স্বাভাবিকভাবে প্রচন্ড আপত্তি করেছিলো, নিজের বাড়ি ছেড়ে এই বয়সে তারা কোথাও যাবে না, ভাড়া বাড়িতো নয়ই। একদিনতো রেগে বলে দিলো তোকে এসে আর আমাদের দেখাশোনাও করতে হবে না। বাসা বদলানোর পরও, এই অসুবিধা, সেই অসুবিধা দেখিয়ে নিশিকে প্রায়ই বকাঝকা করতো। তারপর একদিন পৃথিবীর নিয়মেই আস্তে আস্তে সবাই মানিয়ে নিতে লাগলো, জীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলো। আজ সজীব আর নিশি সকালে নাস্তা করছিলো। সজীব জিজ্ঞেস করলো, কিছু মনে না করো যদি, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। তুমি যেভাবে বলছো তাতে তো মনে হচ্ছে এতে মনে করার কিছু আছে, যাহোক, বলে ফেলো তো। যেভাবে নিজের বাবামায়ের সেবা করেছো তুমি, দেখাশোনা করছো তাদের, আমার বাবামায়ের জন্যেও কি তুমি তাই করবে? তাদের সাথে থেকে তাদেরকে নিজ সন্তানের আদর দেবে? পছন্দের খাবার রান্না করে খাওয়াবে তাদের? পাশে থাকবে তাদের তুমি? আমি জানি আমরা এখন তাদের থেকে আলাদা থাকছি কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যখন ওদের কোন বিপদ হবে, তুমি তাদেরকে কিছুতেই ফেলে দেবে না। পাশে থাকবেতো তাদের, নিশি? অবিশ্বাসের চোখে নিশি সজীবের দিকে তাকিয়ে রইলো। সত্যিই কি সজীব তাকে এই কথা জিজ্ঞেস করছে? মুহূর্তের ভগ্নাংশের মধ্যে নিশি জ্বলে উঠলো, শান্ত গলায় বললো, না, কখনোই না, আমার বাবামাকে আমি যেভাবে দেখাশোনা করেছি, সেভাবে আমি কখনোই তোমার বাবামায়ের দেখাশোনা করবো না সজীব। বলেই নিশি সজীবকে আর একটি কথা বলার কোন সুযোগ না দিয়ে অফিসে চলে গেলো। আর এখন, সারাদিন পর অফিস থেকে এসে নিজের ল্যাপটপ খুলে বসে পরেছে। সজীব, ভাবছিলো, সকালের রুক্ষন ব্যবহারের জন্যে সে অনুতপ্ত হবে, সেটা নিয়ে কথা বলবে কিন্তু তার তো কোন লক্ষনই নেই। এভাবে তো ছাড়া যায় না সিদ্ধান্ত নিয়ে সজীব নিজেই জিজ্ঞেস করলো, নিশি, সকালে ওভাবে কথা বললে কেন ? তুমি কি সত্যি সত্যিই বলছো যে তুমি আমার বাবামায়ের দেখাশোনা করবে না? আমার বাবামায়ের জন্যে আমি যেভাবে করেছি, তোমার বাবামায়ের জন্যে আমি সেভাবে করবো না। দ্বিগুন রাগে অংগার হয়ে গেলো সজীব। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে বললো, দয়া করে একটু খুলে বলবে, তোমার সমস্যাটা কি? তুমি এখন পক্ষপাত করছো না? এই যে সারাক্ষণ সাম্যতার কথা বলো, তোমার নিজের বাবামায়ের সাথে ব্যবহার আর আমার বাবামায়ের সাথে ব্যবহারের সাম্যতা এখন কোথায়, শুনি? সজীবের দিকে নিশি কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো, তারপর বললো, “পক্ষপাত? পক্ষপাত নিয়ে তুমি কথা বলছো? তোমার প্রশ্নটাই কি পক্ষপাতিত্বমূলক ছিলো না? তোমার বাবামায়ের যত্ন নেয়া বলতে তুমি কি বোঝাতে চাইছো, রান্না করা, ইত্যাদি ইত্যাদি আর সব? এরমধ্যে তুমি সমতা চাও? ঠিকাছে চলো, সমান সমান করি। যখন আমার বাবামায়ের দুর্ঘটনা ঘটলো, ওদের সাথে হাসপাতালে আমি ছিলাম, তুমি কোথায় ছিলে? তোমার মেয়ে নিয়ে বাসায়। ঠিকাছে আমিও তাই করবো, মেয়ে নিয়ে বাসায় থাকবো আর তুমি তাদের সাথে হাসপাতালে থাকবে। বাবামায়ের বাসায় যখন ছিলাম তাদের জন্যে রান্নাবান্না করেছি আর তুমি নিজের মেয়ের যত্নআত্তি করেছো। তুমিও যাও, তাদের জন্যে রান্নাবান্না করো, আমিও বাসায় থেকে আমাদের মেয়ের খেয়াল রাখবো। ছোট বাচ্চাদের মত তাদের দেখাশোনা করে, বাড়ির সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে আমি বাবামায়ের প্রতি আমার দায়িত্ব পালন করেছি আর সেসময় তুমি নিজের মেয়ের খেয়াল রেখে আমাকে সাহায্য করেছো। তুমিও তাদের সব কাজকর্ম সারো, গোছাও আমি আমাদের ঘর সংসার আর মেয়ের খেয়াল রেখে তোমাকে সাহায্য করে যাবো। বাবামায়ের দুর্ঘটনার পর থেকে সবাই আশা করে বসে আছে আমি আমার শ্বশুর শাশুড়ির জন্যেও একই দায়িত্ব করবো। না, আমি করবো না। আমি আমার বাবামায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব পালন করেছি, তোমার বাবামায়ের সন্তান তো তুমি, তাদের প্রতি দায়িত্ব তোমার, পালনও করবে তুমি। আর এটাই তো সমতা, নাকি? তোমার বাবামায়ের জন্যে রান্না তুমি করবে, ঘরদোর তুমি পরিস্কার করবে, জামাকাপড় তুমি ইস্ত্রি করবে, আমি না। আর তুমি যদি ভাবো, তুমি “পুরুষ মানুষ” এগুলো করলে লোকে কি ভাববে, সেটার জন্যে তুমি আমাকে অন্তত অসমতায় আসতে বাধ্য করো না। আর শেষবারের মত শুনে রাখো সজীব, দরকারে নিজের বাবামায়ের যত্ন নিজে না নিয়ে, বউ তোমার বাবামায়ের যত্ন করবে এই ভাবনাটা ছাড়ো। তুমি নিজে তোমার বাবামায়ের জন্যে কিছু না করে আশা করে আছো পরের বাড়ির মেয়ে সেটা করে দেবে। ওরা তোমার বাবামা, তুমি ওদের যত্ন করবে, আমি তোমাকে সাহায্য করবো যেমন তুমি আমায় করেছিলে। আশাকরছি, যথেষ্ঠ খুলে বলেছি, এর থেকে বেশি খুলে বলার কিছু আর নেই। সজীব চুপচাপ শুনে যাচ্ছিলো আর ভাবছিলো। নিজের ভুলটা সে নিজেই বুঝতে পারলো। অবাক হলো ভেবে, কতোটা স্বার্থপর সে, নিশির ওপর সে দুইজনের বাবামায়ের সেবাযত্নের ভার চাপিয়ে দিচ্ছিলো আর তার নিজের যে দায়িত্ব আছে সে কথা সে ভাবেইনি। ছোটবেলা থেকে সমাজের বিভিন্ন জায়গায় এই দেখে দেখে বড় হয়েছে সে বলে অনুভবই করেনি পুরুষেরা কতটা অলস আসলে। এখন সময় হয়েছে তার, নিশির কাছে ক্ষমা চাওয়ার। ভারতীয় লেখক আল্লাম ভাবানার লেখা থেকে ইষৎ পরিমার্জিত ভাষান্তর। তানবীরা হোসেন ০২/০৮/২০২৩ https://www.momspresso.com/parenting/ginger-thoughts/article/should-a-daughter-in-law-take-care-of-her-parents-in-law-an-honest-answer?fbclid=IwAR3mfyROMsZ2z8VS3EV9IF-DBqQ5b7FgrvIwoL2fBpBLnJwhiUZ2MCD8hzQ

ঐ রঙধনু থেকে কিছু কিছু রঙ এনে দাও না

জীবন মানেই জি-বাংলা, সমস্যা, ঝামেলা, দু:খ, আক্ষেপ, হতাশা, আনন্দ, হাসি নিয়েই আমাদের এইসব দিনরাত্রি। আসলে সুখী, পরিতৃপ্ত, শান্তির জীবন মানে কি? হতাশা, অনিশ্চয়তা,ব্যথা,দুঃখ-কষ্ট ছাড়া জীবনযাপন? আমরা অনেকেই ভাবি, এই ঝামেলাটুকু কাটিয়ে উঠলেই, “লিভিং হ্যাপিলি এভার আফটার”। আসলেই তাই হয়? একটি পূর্ণ জীবন যাপন করলে তবেই এই অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি আসে, “লাইফ ইজ নট আ বেড অফ রোজেজ”। হতাশা, গ্লানি, অবসাদ সব পরিপূর্ণ জীবনেরই অংগ। শারীরিক কিংবা মানসিক ব্যথা এড়িয়ে জীবন যাপন করার চেষ্টা খানিকটা অর্ধেক জীবনযাপন করারই শামিল। আমিও আর সবার মত জীবনের বিভিন্ন রঙ/স্তর দিয়ে যাবো এই চিন্তাটা না থাকলে বরং এটি মানসিক যন্ত্রণাকে বাড়িয়েই তোলে। তাহলে পরিপূর্ণ,সুখী জীবনের মূলমন্ত্র বা সূত্র কি? “এক্সেপটেন্স” খুব সাধারণস্য সাধারণ বাংলায় যাকে বলি আমরা “মানিয়ে নেয়া বা মেনে নেয়া”। জীবনে দুঃখ-কষ্ট, হতাশা, বেদনা আসবে, “পার্ট অফ লিভিং” ভেবে এর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করাই পরিপূর্ণ জীবনের যাদুমন্ত্র। সেদিন আলিয়া ভাটের একটা রিল দেখছিলাম, আলিয়া বলছে, “জীবন হচ্ছে, বেশিটা কষ্টের, হতাশার, হাহাকারের, দুঃখের আর অল্প কিছু সুখের মুহূর্তের সমষ্টি। আমরা সবাই আমাদের গভীর গোপনে, গহনে সেসব লুকিয়ে রেখে সারাদিন হাসিমুখে ঘুরি।“ ছোট বয়সেই মেয়েটার কি গভীর জীবনবোধ। নিজস্ব মূল্যবোধ, মেনে ও মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা, নমনীয়তা, শান্তিতে থাকার পথ প্রশস্ত করে। এটি আসলে প্রতিদিন অনুশীলণ করার মতো। অনুশীলণ করে করে নিজের মধ্যে অভ্যাস করে নিতে হবে, তবেই বেঁচে থাকার আনন্দ, স্বাধীনতা, “কোয়ালিটি অফ লাইফ” অনেক বেশি উপভোগ করতে পারা যাবে। (কিছুটা নিজের আর কিছুটা বইয়ের)

Thursday 25 May 2023

বেহুলার ভাসান - ৩ ইন্দুবালা-মৃনালিনী

কল্লোল লাহিড়ী'র লেখা "ইন্দুবালা ভাতের হোটেল" এর ইন্দুবালা কোন ঐতিহাসিক বাস্তব চরিত্র নয় বটে কিন্তু হাজার হাজার বাস্তব চরিত্রের প্রতিনিধি  "ইন্দুবালা"। ইউরোপের লন্ডন শহরেই অনেক "সিলেটি কন্যা" পাওয়া যাবে যারা বিয়ে করে লন্ডনে এসেছে আর কখনো সিলেট ফেরত যায়নি বা যেতে পারেনি। লন্ডনে এরকম অনেক ভারতীয় মেয়েও আছে বলে শুনেছি। স্বপ্ননগরী নিউইয়র্কেও সেই হাল। "ইন্দুবালা" মানে শুধু দেশভাগ নয়, "ইন্দুবালা" মানে শুধু হিন্দু-মুসলিম নয়, "ইন্দুবালা" মানে শুধু বাঙাল আর ঘটি নয়, "ইন্দুবালা" মানে শৈশব-কৈশোর হারানো, ভাষা হারানো, স্মৃতি হারানো, নিঃস্ব হওয়া, রিক্ত হওয়া পৃথিবী জোড়া হাজার হাজার মানুষ।  বাড়িঘর সরেজমিনে না দেখে, ছেলে সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর না নিয়ে, এমনকি পরিবারের মেজাজ মর্জি জানাও গুরুত্বপূর্ন ভাবেনি ইন্দুবালার বাবা। তাঁর কাছে প্রাধান্য পেয়েছে, কোলকাতার শহর, ছেলের দালান বাড়ি কোঠা, মাস গেলে ক'টা টাকার মাইনের নিরাপত্তা। অচেনাপুরী দৈত্যপুরীতে মেয়েকে রেখে এসেছেন আর কখনো কোনদিন চোখের দেখাও দেখতে পাননি। তবে ইন্দুবালা সৌভাগ্যবতী আর সাহসী, তিনি সব প্রতিকূলতার মাঝেও বেঁচে ছিলেন, আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন এবং প্রবল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও খুন হয়ে যান নি।   বহু ইন্দুবালাই আছেন দেশ জুড়ে, বিদেশ জুড়ে, পৃথিবী জুড়ে, বাবার বাড়ি বা তার নিজের কৈশোরের বাড়ি আর কখনো চোখে দেখেনি, এমনকি বাবা শ্বশুরবাড়ি এলে বাবাকেও দেখতে পায়নি। কোলকাতার বিখ্যাত "ঠাকুরবাড়ি"র কথা ধরা যাক। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী ভবতারিণী কিংবা মৃণালিনী দেবী আর কখনো ফিরে বাপের বাড়ি যায়নি এমনকি তার বাবা তাকে দু'একবার দেখতে এলেও সেটিকে ঠাকুরবাড়িতে বিশেষ প্রীতির চোখে দেখা হতো না (ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলঃ চিত্রা দেব)। তো ভবতারিণী'র কি কখনো যশোরের সেই গ্রামের জন্যে মন কেমন করেনি? মা'কে দেখতে, ঠাকুমা দেখতে প্রাণ উথালপাথাল হয়নি? ভবতাতিনী কি ইন্দুবালা নন? নিজের নামটি পর্যন্ত তাঁর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিলো।  হুমায়ূন আহমেদ তাঁর নাটক "অয়োময়"তে দেখিয়েছেন, জমিদার বাড়ির বউদের বাপের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার নিয়ম নেই, সে যতোই জমিদার কন্যা হোক না কেন। বড় ঘর, বড় বংশ, টাকা পয়সা, মার্সিডিজ, ক্যাডিলাকের চটকে মেয়ের বাবা'রা মেয়ের মুখটা হারিয়ে ফেলেন। মেয়ের সুখ নিশ্চিত করতে গিয়ে মেয়ের জীবন বিপন্ন করে ফেলেন। সামাজিক প্রতিপত্তির কাছে হারিয়ে যায় মেয়ের নিরাপত্তা, মেয়ের আনন্দ।  ভারতবর্ষের ইতিহাস কন্যা বিসর্জনের ইতিহাস। ভারতবর্ষের ইতিহাস কন্যা ত্যাগের ইতিহাস। ভারতবর্ষের ইতিহাস কন্যা খুনের ইতিহাস। যুগে যুগেই বিভিন্ন রীতিতে, বিভিন্ন কায়দায়।   

Thursday 18 May 2023

বেহুলার ভাসান - ২

মনির আর রীমা ১৯৮৯ সাল, আমাদের পড়ন্ত কৈশোরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিলো, “শারমিন রীমা” হত্যাকান্ড। ৯ই এপ্রিল খুন হয় রীমা। সেসময়ের ঢাকা শহরে বিখ্যাত যেকজন গাইনী ডাক্তার ছিলেন তার মধ্যে ডাঃ মেহেরুন্নিসা ছিলেন অন্যতম আর ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ আবুল কাশেমের একমাত্র ছেলে মনির হোসেন। সর্বদিক থেকে হাই প্রোফাইল কেইস ছিলো, কি নেই এতে? পারিবারিক পরিচয়, বেশুমার টাকা, গ্ল্যামারাস নারী, প্রায় বলিউড মুভির ঘটনার মতোই। রোজ সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় তিন কলাম জুড়ে নানা ছবি সহ সংবাদ। সাধারণ পরিবারের মেয়ে বা বউ হলে হয়তো বড় জোর ভেতরের পাতায় ছবি ছাড়া একদিনের এক কলামের সংবাদ হতো “রাজধানীতে গৃহবধূ খুন”। তবে অনেক টাকা আর ক্ষমতা সত্বেও ছেলের মা পাবলিক অপিনিয়নের কাছে পরাজিত হয়ে বলেছিলেন, “আমার ছেলে যদি দোষী হয়, তবে তার ফাঁসি হোক”। বিচারে অবশ্য মনিরের ফাঁসিই হয়েছিলো। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সমাজ, সংসার, আদালতে শুধু একপক্ষকে টানা হ্যাঁচড়া করা হয় অন্যপক্ষকে ছেড়ে দেয়া হয় সিনেমার শেষ দৃশ্যর মত “কান্নাকাটি” করার জন্যে। বাস্তবতা হলো, সব ঘটনায় দুইটা পক্ষ থাকে, শুধু যে ছুরি মারে সেই দায়ী? ছুরি মারার ক্ষেত্র যারা প্রস্তুত করে তাদের কেন কোন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে না? রীমার পরিবারের কাছে সমাজের প্রশ্নঃ ১। মেয়েপক্ষ ছেলের পড়াশোনা যাচাই বাছাই করার কোন চেষ্টা করেনি। “এমেরিকা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এসেছে” ছেলে পক্ষের এই কথায় ঈমান রেখেছে। সার্টিফিকেট কিংবা ইউনিভার্সিটি কোনটাই নেড়েচেড়ে দেখতে যায় নি। ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ের বিয়ে দিয়েছে নন ম্যাট্রিক ছেলের সাথে। ২। মনিরের বন্ধু সার্কেল, লাইফ স্টাইল সম্পর্কে কোন খোঁজ নেয়নি। সেটা করলেও পড়াশোনা কিংবা স্বভাবচরিত্রের ব্যাপারটা উঠে আসতো। ৩। ছেলের নিজের ক্যারিয়ার চাকুরী-ব্যবসা নিয়েও তারা মাথা ঘামায় নি। সম্ভবতঃ ছেলের মা-বাবার ক্যারিয়ারই মেয়েপক্ষের জন্যে যথেষ্ট ছিলো। ৪। ছেলের অন্য সম্পর্ক, প্রেম ভালোবাসা ইত্যাদি নিয়েও খোঁজ নেয়া বাহুল্য মনে করেছে। ৫। বিয়ের তিন মাসের মাথায় ছেলেমেয়ের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে, তাও যে সে ঝগড়া না, ছেলে, মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে তারপরও, ছেলে আর “করবে না” বলাতে তারা ছেলেকে বিশ্বাস করে মেয়েকে ছেলের সাথে দিয়ে দিয়েছে। ৬। মেয়েকে ছেলের গার্জেনের সাথে ছেলের বাড়িতে দেয় নি, এই ঝগড়াঝাটির উত্তাল মুহূর্তে একা বেড়াতে নিয়ে যেতে দিয়ে দিয়েছে। মনির বুদ্ধিমান হলে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়েই “রীমা”কে শেষ করতে পারতো। আলাদা খুনের প্রয়োজন ছিলো না। ৭। যে ছেলে এতো ছোট বয়স থেকে বিভিন্ন নারীতে আসক্ত, বিয়ের তিন মাসের মধ্যে নতুন বউ রেখে পুরান বান্ধবী/বান্ধবীদের কাছে ছোটে, সে “আর যাবে না” বলাতে রীমার পরিবার সেটাও বিশ্বাস করেছে। কি করে এটা সম্ভব? তিন মাস যে এক বউতে কাটাতে পারে নাই, সে সারা জীবন কাটাবে কি করে? এই ঘটনার সবচেয়ে ট্র্যাজিক পয়েন্ট আমার কাছে যেটা লাগে, “রীমাকে তার মায়ের বাড়ি থেকে, মায়ের কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে দুই দিনের মধ্যে মেরে ফেলেছে”। শারমিন রীমার বাবা ছিলেন সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমেদ যিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। যে ভদ্রলোক একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন জাতি সত্ত্বার স্বপ্ন দেখার মত দূরদৃষ্টি রাখতেন তাঁর পরিবার এতোটা অদূরদর্শী হয় কি করে! মেয়েকে মরার জন্যে ঠেলে দিয়ে, মারা যাওয়ার পর পুরো পরিবার নিয়ে সবাই কাঁদতে বসে আর আইনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবী করে যেনো আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়। কেমনে? সব মায়েরা একই কাজ করে ভিন্ন ফলাফল আশা করে কোন মিরাকলের ভরসায়? মনিরের থেকে প্রায় দেড় গুন বয়সী বড় তিন সন্তানের জননী খুকুকে বিয়ে করে মনির যদি ডাঃ মেহেরুন্নিসার সম্মানের হানি করে ফেলে তাই তিনি তার “সোশ্যাল অনার” বাঁচাতে “মধ্যবিত্তের মেয়ে রীমা”কে বলির পাঁঠা বানিয়েছেন। “সোশ্যাল অনারে”র স্বীকার এখানে মনির আর রীমা’র দুটো জীবন। ***প্রায় পুরো লেখাটা স্মৃতি থেকে লিখছি, কিছু তথ্যের ভুল ভ্রান্তি হয়তো থাকতে পারে।***

Sunday 7 May 2023

জন লেনন ভাবান্তরঃ তানবীরা

পাঁচ বছর বয়স থেকে মায়ের কাছে শুনে আসছি, “সুখী” হওয়াটাই জীবনের মূল কথা। যখন স্কুলে গেলাম, আমাকে জিজ্ঞেস করলো, বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও? আমি বললাম, “সুখী” স্কুল আমাকে বললো, তুমি আমাদের প্রশ্নটা বোঝনি। আর আমি বললাম, তোমরা জীবন বোঝনি। “When I was 5 years old, my mother always told me that happiness was the key to life. When I went to school, they asked me what I wanted to be when I grew up. I wrote down ‘happy’. They told me I didn’t understand the assignment, and I told them they didn’t understand life.”

(দ্যা ওয়ার উইল এন্ড) --- মূলঃ মাহমুদ দারবিশ ভাষান্তরঃ তানবীরা হোসেন

তারপর একদিন যুদ্ধ থেমে যাবে। নেতারা নিজেদের মধ্যে হাত মেলাবেন। বৃদ্ধা মা তার মৃত ছেলের পথ চেয়ে অপেক্ষায় বসে রইবেন। প্রেমময় স্বামীর প্রতীক্ষায় রাত জাগবে মায়াবতী স্ত্রী। বীর বাবার পদধ্বনির জন্যে প্রহর গুনবে তাঁর সন্তানরা। কে বিক্রি করেছে আমার মাতৃভূমি, জানি না আমি কিন্তু কারা এর মূল্য দিয়েছে, সেটা দেখেছি।

বেহুলার ভাসান - ১

আমের রাজ্যের রাজকুমারী হীরাকুমারী, যিনি “হীরাবাই” নামেও পরিচিত, রাজস্থানের রাজপুত ঘরানার রাজা ভারমালের জ্যেষ্ঠ কন্যা। এটি পড়লে কেউ তাকে চিনতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। যদি বলি মোগল সম্রাট আকবরের স্ত্রী “যোধাবাই” তাহলে অনেকেই চিনবেন কিন্তু সত্যিই তিনি “যোধাবাই” নামে পরিচিত ছিলেন কিনা তা নিয়ে খোদ ঐতিহাসিকদেরই সন্দেহ আছে। ষোলশ শতাব্দীতে রাজনৈতিক সমঝোতার অঙ্গ হিসেবে হিন্দু রাজপুত রাজকন্যা যোধার সাথে মুসলমান মোঘল সম্রাট আকবরের বিয়ে হয়। বলা বাহুল্য, যোধার চরম আপত্তি ও অমতেই এই বিয়ে হয়। মহান সম্রাট আকবর সম্পর্কে ভিনসেন্ট স্মিথের মত আকবেরর উচ্চ প্রংশসাকারী যিনি “ Akbar- the great Mughal” রচনা করেছেন, তিনি কি লিখেছেন পড়ি, “ আকবর উচ্চতায় ছিলেন গড়পড়তা এবং বাম পায়ের কারনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। তার মাথা ডান কাঁধের উপর ঝুঁকে থাকত। তার নাক ছিল ছোট ও সামনের হাড় ছিল মোটা। তার নাসিকা গহ্বর দেখলে মনে হত তিনি রেগে আছেন। অর্ধেক মটর দানার সাইজের সমান একটি আঁচিল ছিল যা ঠোঁট ও নাসিকা গহ্বরের সাথে যুক্ত। সে দেখতে কালো ছিল।” জাহাঙ্গীর লিখেছেন, “আকবর নেশাগ্রস্ত অথবা সর্তকাবস্থায় তাকে শেখ বলে ডাকতেন।“ এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে আঁকবর একজন নেশাগ্রস্থ ছিলেন। আকবরের সহচর ইয়াকুবা লিখেছেন, আকবর এতই মদ পান করতেন যে মাঝে মাঝে অভ্যাগত অতিথিদের সাথে কথা বলতে বলতে তিনি ঘুমিয়ে পড়তেন। তিনি মাঝে মাঝে তাড়ি (তালের রস দিয়ে তৈরী নেশা জাতীয় পানিয়) পান করতেন। যখন তিনি অতিরিক্ত পান করতেন তখন তিনি উম্মাদের মত আচরণ করতেন। “মহান আকবরের শিক্ষাগত যোগ্যতা” জাহাঙ্গীর লিখেছেন আকবর মাঝে মাঝে বিদ্বানদের মত আচরণ করতেন কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তিনি ছিলেন অক্ষর জ্ঞানহীন। আবুল ফজল আইন-ই- আকবরে লিখেছেনঃ ” শাহেন শাহ্ আকবরের ঘরের সামনেই একটা শুঁড়িখানা স্থাপন করা হয়। সেখানে অসংখ্য বণিতা জড়ো হত যা গণনা করা কঠিন হয়ে পড়ত। সভাসদগন মাঝে মাঝে নর্তকীদের বাড়ীতে নিয়ে যেতেন। কিন্তু যদি কেউ কোন কুমারীকে তার বাড়ীতে নিয়ে যেতে চাইতেন তাহলে তাকে অবশ্যই আকবরে কাছ থেকে অনুমতি নিতে হত। কখনো কখনো যুবকদের মাঝে হাতাহাতি শুরু হয়ে যেত। একবার আকবর নিজেই কয়েকজন বনিতাকে ডাকলেন এবং তাদের জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের মধ্যে কে কুমারিত্ব ছেদন করতে চাও।” এখন কথা হচ্ছে, কীভাবে এতগুলো বণিতা একই সময়ে জড়ো হবে? অবশ্যই সেসকল ভাগ্যহীন নারীরা ছিল হিন্দু পরিবারের যারা যুদ্ধাবন্দী অথবা তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের হত্যা করে সহায় সম্পত্তি লুট করা হয়েছে এবং আশ্র্য়হীন তাদের বন্দী করা হয়েছে। কারন ধারণা করা হয় মুসলিম রমণীদের পর্দার আড়ালে রাখা হতো এবং আকবর তার গৌরবজ্বল শাসনামলে সারাজীবন অসংখ্য হত্যা ও নারী অপহরণ করে ছিলেন। আকবরের শাসনামলে মিনা বাজার খুবই জনপ্রিয় ছিল যেখানে প্রতি নববর্ষ রাতে বিভিন্ন পরিবারের নারীদের হয় ফুসলিয়ে, প্রতারনা করে অথবা জোরপূর্বক জাঁহাপনার সম্মুখে হাজির করা হতো বেছে বেছে নেওয়ার জন্য। এ সমস্ত রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছে, আকবরের পয়সা খাওয়া তার পছন্দের পরগাছা ইতিহাসবিদের লেখা থেকে, কোন নিন্দুকের লেখা মিথ্যা অপবাদ নয় এগুলো। আবুল ফজল আকবরের হেরেম সম্পর্কে বর্ননা করেছেন, “সেখানে ৫০০০ নারী ছিল এবং প্রতিটি নারীর আলাদা থাকার ঘর ছিল” এছাড়াও আকবরের ৩৬ জনেরও বেশী স্ত্রী ছিল। তবে তার স্ত্রীদের মধ্যে সবচাইতে আলোচিত হলেন যোধাবাঈ। সম্রাট আকবরকে নিয়ে অনেক লেখাজোকা থাকলেও রাজকন্যা এবং মুঘল সম্রাজ্ঞী হীরাবাঈ মতান্তরে যোধাবাঈকে নিয়ে তথ্য পাবেন খুব সামান্য। তবে জানা যায়, নয়নকাড়া সুশ্রী হীরাবাঈ নিরামিষভোজী ছিলেন, রাজবাড়ির রাজ রঁসুই ঘরের খাবার তিনি খেতেন না, তাঁর রসুইঘর ছিলো আলাদা। রাজপ্রাসাদেই তাঁর আলাদা পূজা ঘর ছিলো। তিনি পড়াশোনা জানতেন, গানের তালিম ছিলো, নিখুঁতভাবে তলোয়ার চালানো, ঘোড়া চালানো জানতেন। মানসিকভাবে দু’জন প্রায় ভিনগ্রহের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও মদ্যপ, লুটেরা, চরিত্রহীন আকবর বাদশাহের কাছে রাজা ভাগলব তার মেয়ের বিয়ে দিতে কুন্ঠা করেননি। এটাকে কি বলা যায়? সতীদাহ না অনার কিলিং? লর্ড কর্নওয়ালিস, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায় লর্ড বেন্টিকের সাথে মিলে সরাসরি আগুনে “পুড়িয়ে মারা” বন্ধ করতে পেরেছেন কিন্তু “বাঁচিয়ে রেখে মেরে ফেলা”র প্রতিকার কে করতে পেরেছে? খুব নির্মোহ চোখে দেখলে “যোধা”র কি জীবনের ঝুঁকি ছিলো না এই বিয়েতে? বাবা কি মেয়েকে জীবনের ঝুঁকিতে ফেলে দেননি? ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন জীবনাচার, ভিন্ন খাদ্যভাসে মানিয়ে নেয়া এতোই সহজ? রাজনীতির কূটকৌশল না থাকলে প্রাণে বাঁচতেন যোধাবাঈ? যুগ যুগ ধরে পুরো ভারতবর্ষ জুড়ে ঘটে চলা এই “অনার কিলিং” এর কাহিনী লিখতে শুরু করলে, কত সহস্র আরব্য রজনী লেখা যাবে? তানবীরা হোসেন ০৪/০৩/২০২৩

Sunday 26 February 2023

“পদ্ম পদ্য” – আফসানা কিশোয়ারের সাথে একটি অক্ষিপথ ভ্রমণ

আজকাল কবি হওয়া যত সোজা, মানুষ হওয়া ততো কঠিন। ধৈর্য্য, সহ্য, অধ্যবসায় দিয়ে এই কঠিন পরীক্ষা পার হওয়া প্রানীর সংখ্যা নিতান্ত কম। অবশ্য সেটা সবকালেই কম ছিলো। এই কমের একজন আফসানা কিশোয়ার লোচন, এত সেলফলেস মানুষ অন্তর্জালে অন্তত বিচরণ করে না। নিঃস্বার্থ, পরোপকারী এবং পরিশ্রমী “মানুষ লোচনের” কাছে “কবি লোচন” পরিচয় নিন্তাতই গৌন। গরম গরম ভাজা জিলাপীর গা বেয়ে টসকে পরা রসের মত উপাদেয় সব লেখা, ভিডিও, মীম ইত্যাদির সাথে ভুবনমোহিনী হাসি মাখানো ছবি দিয়ে টাইমলাইন তার মাখামাখি। কোনদিন কোন লেখা টাইমলাইনে আসবে সেটা নির্ভর করে নিতান্তই কবির খেয়ালের ওপর। মন মেজাজ ঢাসু থাকলে আসবে কাঁচামিঠা আমড়া লেখা, যেদিন কবি প্রেমে বুঁদ সেদিন পাঠক পাবে অপু-বুবলি লেখা আর মাঝে মাঝে হৃদয় নিংড়ানো সেরকম পদ্মা নদীর মাঝি জীবনধর্মী লেখা। কবিতা পড়ি, দুষ্টুমি করি, খোঁচাই সব কিন্তু আদতে অপেক্ষা করি সেই জীবনধর্মী লেখাগুলোর। যেগুলো পড়ার পর আমার বুকের মধ্যিখানে মন যেখানে হৃদয় যেখানেতে শিরশির করে। বারবার পড়ি আর ভাবি এরকম অনুভূতি বা ভাবনার মধ্যে দিয়ে তো আমি অহরহ যাই কিন্তু আমি কেনো আমার ভাবনাটা ঠিক এরকম গুছিয়ে লিখতে পারি না? সেই সাত সকালে মোম গলার মত মাঝে মাঝে চোখও গলে আমার। কথা অনেক হলো এখন কিছু কবিতার শুরুর অংশ পড়ে ফেলা যাক, আমার পছন্দের। শুরু করা যাক, কবির পছন্দের প্রেমের কবিতা দিয়ে, যে কথার মানে নেই সই, আমার জন্য যে শাড়িটা ড্রাইওয়াশ করে তুলে রেখেছো তা পাট ভেঙে তুমি এবার পরে ফেলো দ্বিধা ছাড়া। যে রিসোর্টে আমার জন্য গ্লাস সাজানো সেগুলোও অন্য কারও জন্যে ব্যবহার করতে পারো অনায়াসে। তুমি যে পথে হাঁটো সে পথে আমার হাঁটা নিয়তি তা আমি জানি। এ হাঁটাটা হবে একার। তুমি আমাকে প্রার্থনায় রাখো-সে শব্দ আমার কানে মৃতের শোকগাঁথা হয়ে ধরা দেয়। তোমার গ্রহে আমি থাকব, আমার সবটা জুড়ে তুমি-তবু স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা কখনো মুখোমুখি হবে না, তারা পালাবে ভিন্নপথে। তোমার আমার জন্যে কোন অপেক্ষা নেই, আমার আছে অভিমানের বিরহ। সব অনুভব একদিন সকাতরে কেঁদে ডুবে যাবে সাতশ পাঁচ নদীর জলে। আমার ফেরা হবে না তুমি ডাকলে না বলে। অর্থহীন এই অভিমান করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার কিন্তু সবাই শুধু এত গুছিয়ে লিখতে পারে না। কবিকে যারা ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন তাদের কাছে নীচের কবিতা নিতান্তই পরিচিত লাগবে। কবি এমনই, ভাণ-ভনিতা ছাড়া তুমি একটা যাতা আমি তোমারে হ্যাংলা হইয়া কলম কইরা বুক পকেটে রাখি নাই। পোলাপাইন্যা ঢঙে মোবাইলের স্ক্রিনসেভারেও থুই নাই। মানুষ ভালবাসলে শিমুলের তুলা উড়ার ছবিতে তার ফুল এদিক ওদিক ঘ্রাণ ছড়ায় এই আলামত পাইলেই কেউ ভীরু হরিণ হইয়া আমাজনের জঙ্গলে পা বাড়ায়? আমার নাম কি কলঙ্ক যে পাশে বইলেই কালি লাইগা যাইব? আমারে যারা নিন্দা করে তারা তোমারে এমন কইরা মায়া দিব? তারপর সাধারণ মানুষের একটি অসাধারণ দীর্ঘশ্বাস। এক নাম না জানা অচেনা কারো জন্যে ভর সন্ধ্যায় কার না বুক এমন হুহু করে অপেক্ষা কত কত মানুষ আত্মজীবনী লেখে, আমার তেমন কোনো ইচ্ছা জাগে না। ভালোবেসে ভালো না থাকার এক অফুরান আখ্যান আমার লেখার জন্য মন উথাল-পাথাল করে। তারপর ভাবি, আমার কথা লিখে কি হবে? আমি কে যে আমার গল্প সাতকান্ড করে বয়ান করতে হবে? তার চেয়ে তোমার শৈশবের পা যে পথে পড়েছে গুটিগুটি সে ধুলা, তোমার ভেঙে যাওয়া পেন্সিলের গুঁড়া, কাজলদানিতে সর্ষের তেল মেখে প্রদীপের উপর ধরে কাজল বানিয়ে টানা চোখে বসানো সন্ধ্যার অন্ধকার এ যদি অক্ষরে নামাতে পারতাম। আমাদের সবার প্রতিদিন কত শত গল্প জমা হয় কিন্তু লেখা হয়ে ওঠে না। হারিয়ে যাওয়ার গল্প এ গল্প বহুবার বলেছি-যে ড্রেসটা খুব পছন্দের তার কোণা অবশ্যই রিকশা থেকে নামার সময় রিফুর অযোগ্য হয়ে ছিঁড়ে যাবে। যে কানের দুল খুব মানায় তার পুশ খুলে দুলটা হারিয়ে যাবে জনারণ্যে। যে মানুষকে একদিন না দেখলে, কথা না বললে মন প্রাণ দেহ সব সাহারা মরুভূমি মনে হবে-সে দৈনন্দিন থেকে তো বটেই, এমন কি সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্লক করে দেবে। এবার পড়বো কয়েকটা হৃদয় নিংড়ানো নির্যাসঃ অগুনিত দিন তোমাকে দেখি না। স্ক্রিনে ক্বচিৎ এই দেখায় হয়তো কখনো দূরত্ব সামান্য কম মনে হয়। প্রতিদিন নানা শব্দে তোমার সাথে ভাব বিনিময় করি নিজের মাথার ভেতর। আমি যা ভাবি তার তিন ভাগের এক ভাগও প্রকাশ করতে পারি না। নিজেকে নিয়ে এক লবণ সমুদ্রে ডুবে থাকার ইচ্ছা হয়, যেন আমার ক্ষতেরা কোনোদিন বেঁচে থাকার এই জ্বলুনি না ভোলে। তুমি জানো প্রিয় মানুষের গন্ধ স্পর্শ কেমন হয়? নিশ্চয়ই জানো। কিন্তু এর অভাববোধ তীব্র হলে কেমন লাগে টের পেয়েছো কখনো? আমি যখন মাতৃহারা হলাম, তখন মায়ের পুরনো শাড়ির তৈরি একটা কাঁথায় তাকে স্বপ্নের ভেতর স্পর্শ করতাম, আমার মস্তিস্ক বুঝাতো এর ভেতর আমি মায়ের গন্ধও পাচ্ছি। প্রিয়, আপনে যখন “শুভ সকাল” বলেন তখন আমার এই বৈদেশে রাত ঢলানি দিলেও দিব্য চোখে রোদ দেখতে পাই। ওয়েদার এপে গিয়া আমি ঢাকার হালচাল দেখি-আজ দেখলাম আপনার ঐখানে বৃষ্টি, আকাশ অন্ধকার। আপনে তো বর্ষা প্রিয় মানুষ-এমন দিনে একটু দেরিতে না হয় ব্যবসার চকে যান। বারান্দা দিয়ে হাত বাড়াইয়া জল ছুঁইয়া গরম চায়ের মগে টোস্ট ডুবায়ে আয়েশ করেন একদিন। আপনার তো খালি রাগ আর রাগ-যা অবস্থা তাতে আপনের মিনিমাম এক সপ্তাহ আমার চোখের সামনে শুইয়া বইসা থাকা উচিত। আমি রান্ধুম বাড়ুম আপনে উদাস চোখে আমার দিকে তাকায়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও খাওন মুখে তুলবেন। প্রতি অক্তে স্নানের আগে আমি আপনের গায়ে প্রাচীন কায়দায় ওলিভ অয়েল মাসাজ কইরা দিব, আপনার ব্যথা বেদনা কিঞ্চিত হইলেও হ্রাস পাইবো। কি চাই? বেঁচে থেকে সুস্থভাবে মরে যেতে চাই। কি অদ্ভূত মানুষের চাওয়া তাই না! এককালে চাইতাম অংক পরীক্ষায় অংকটা ঠিক হোক, তারপর চেয়েছি পাশে থাকা মানুষটা শব্দ করা ছাড়াই মনের কথা বুঝুক। মা হতে হতে মনে হয়েছে কন্যা আমাকে আকন্ঠ ভালবাসুক। এখন নিজের মাথার ভেতর নিজের সাথে বাস করতে করতে মনে হয় রঙবাজির দুনিয়া ধীরে সাদা কালো হয়ে যাওয়া ঠেকাতে চাই। গাছের মগডালে বসে নিচের যে দুনিয়া দেখি তার মিনিয়েচার চোখের মণিতে ভার্স্কয হয়ে বসে যাওয়া চাই না। চাই না মানুষ নামক বিচিত্র প্রাণীর মনের ভেতরটা পড়তে। মানুষকে বুঝতে পারার মতো কষ্ট মনে হয় আর কিছুতে নেই। আমি কি হাত তুলে প্রার্থনা করব কোনো নিদানের আশায়। না কি কবিতার হাত ধরে নিশিগন্ধা রাত পার হব বিড়াল পায়ে! “পদ্ম পদ্য” নামটা আমার কাছে পরীমনির ছেলের গালের মত তুলতুলে নরম নরম লাগে। গাল টেপার মত করে বার বার অকারণেই বলি, বলতে ভাল লাগে তাই বলি। বইটি জুড়ে আছে অসংখ্য “লিমেরিক”। প্রেমিক-প্রেমিকা বইটি অবশ্যই সংগ্রহ করবেন। যেকোন আবহাওয়ায় বা পরিস্থিতে পার্টনারকে মুগ্ধ করতে আপনাকে নিজেকে বেশি ভাবতে বা খাঁটতে হবে না। আপনাদের জন্যে খানিকটা “মুশকিল আসান” হচ্ছে এই “পদ্ম পদ্য”। তানবীরা হোসেন ০২/১৯/২০২৩

Tuesday 7 February 2023

প্রথমে পুরুষবাদ শেষে নারীবাদ

প্রথমে ব্লগে তারপর ফেসবুক আমলে জনপ্রিয় হওয়ার জন্যে প্রধান অস্ত্র থুক্কু বিষয় ছিলো "মুক্তিযুদ্ধ"। সেটা কচলাইয়া কচলাইয়া ঘি বের হওয়ার পর আসলো 'নাস্তিকতা, সেক্যুলারিজম' আর হালে জনপ্রিয় হলো 'নারীবাদ' সম্ভবত বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে যত্রতত্র মানে ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে, রাস্তাঘাটে চুলকানি, ঘা, দাদের মলম মিলে তারপরও এ রোগের উপশম দেখি না এক কালে খুব জনপ্রিয় বক্তব্য ছিলো, তসলিমা নাসরিন ধর্ম নিয়ে কিছুই জানেন না। কোরানের ঐ সূরার ততো নম্বর আয়াতের ব্যখ্যা জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, তিনি মুখস্থ বলতে পারেন নাই, তিনি ডাহা ফেইল। মজার ব্যাপার হলো, ধার্মিক হতে হলে কিছু জানতে হয় না, আয়াতে, সূরায় কি আছে না জেনে হুজুর বা দাদি কি কইছে সেইটা জানলেই চলে। কিন্তু নাস্তিক হতে হলে আপনাকে পল কার্জ, রিচার্ড ডকিন্স, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, আর্থার মিলার থেকে শুরু করে স্টিফেন হকিং সব মুখস্ত রাখতে হবে। আর সেইম গো'জ ফো হিয়ার। পুরুষবাদ হইলো, যেকোন নারী, বয়সে, টাকায়, পজিশন, পারিবারিক অবস্থায়, শিক্ষায় আপনার থেকে জ্ঞানী বা ভাল হোক না কেন তাকে দুইটা কষাইয়া গালি দিতে পারলেই হইলো। রাত দুপুরে গলায় দু পেগ ঢেলেও সেটা করা যায়, বিষয় না। কিন্তু নারীবাদী হইতে হইলে আপনাকে সিমোন দ্যা বিভোয়ার, বেল হুক্স, এঞ্জেলা ডেভিস, মালালা ইউসুফজাই, মিশেল ওবামা সব মুখস্থ রাখতে হবে। নইলে, ইসলামের অসংগতি ধরালেই যেমন সুবিধাবাধীরা বলে, ঐটা "সাহি" ইসলাম না তেমনি পড়া না পারলেই বলবে আপনি সাহি নারীবাদী না। "নেদারল্যান্ডস" পৃথিবীর মানচিত্রে যাকে খুঁজে পাওয়া ভার, অথচ পৃথিবীর প্রথম পাঁচটা দেশের মধ্যে যার প্রায় সবসময়ই অবস্থান। গত নির্বাচনে নেদারল্যান্ডসের রাজনৈতিক দল ডি সিক্সটি সিক্স এর নেত্রী সিগ্রিড কাখ প্রাইম মিনিস্টার রুতেকে প্রায়ই হারিয়ে দিচ্ছিলো, নেদারল্যান্ডসের সমাজে নারীরা কিরকম বৈষম্যের স্বীকার হয় তার পরিসংখ্যান দিয়ে। এই নেদারল্যান্ডসেই একই কোম্পানীতে, এই কোয়ালিফিকেশান নিয়ে একই পজিশনে কাজ করে মেয়েরা পুরুষদের থেকে কম বেতন পায় শুধুই মেয়ে হওয়ার কারণে। করোনা কাল থেকে "ডমেস্টিক ভায়োলেন্স" এর দিক থেকে ইউরোপের প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে নেদারল্যান্ডস আছে। বৈষম্যের স্বীকার হও ঠিকাছে, এক বালতি সমবেদনা কিন্তু মুখ খুললেই "নারীবাদী" গালি খাও। পুরো পৃথিবী জুড়েই মেয়েরা রাঁধে, ঘর সামলায়, বাচ্চা সামলায়। প্রায় সমস্ত জাতির পুরুষদেরই মেয়েদের কাছে এই প্রত্যাশা। বাচ্চারা এটা দেখেই বড় হয়। তারওপর চোখের সামনে মায়ের নিগ্রহ, বোনের নিগ্রহ, ফুপু-খালার নিগ্রহ, নিজের জীবনের বিভীষিকা দেখে বড় হওয়া ছেলেমেয়েদের নারীবাদী হয়ে বেড়ে ওঠা কি আস্বাভাবিক? তার জন্যে তাকে আলাদা বই মুখস্থ করতে লাগবে? আর ভাববেন না, কাশেম বিন আবু বকরই পদ্দা করা গৃহকর্মা নিপুণা নারী পছন্দ করে। সেকুলার, নাস্তিক, মুক্তমনা সব লেখকরই পছন্দ এক। অ-নারীবাদী মেয়েরা হবে এই ইট্টু লাজুক লাজুক, কথায় কথায় অভিমান করবে, গাল ফোলাবে, রাতে চড় মারলে সকালে সেই ফোলা গাল আর লাল চোখে এক হাতে আটা মাখবে, রুটি বানাবে, আরেক হাতে আলু কেটে ভাজি। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, গাল ফোলা কেন,কি হয়েছে? লজ্জায় দ্বিধায় মাটির সাথে মিশে যেয়ে বলবে, মাথা ব্যথা করছিলো, রাতে ঠিক করে ঘুম হয়নি তো তাই আমার চোখ আর সাথে গালও ফোলা। স্বামী চড় মেরেছে এই লজ্জা তার, বেদনার তো স্থানই নেই। নারীবাদীদের আবার কোন ইমোশন থাকা জায়েজ না। তারা সব সময় আর্মির পোশাক গায়ে দিয়ে ঘুরবে, লোহার ব্রেকফাস্ট খাবে, স্টিলের লাঞ্চ। ফাল্গুনে খোঁপায় ফুল, কিংবা বৈশাখে হরেক রকম ভর্তায় টেবল সাজানো, নবৈচ নবৈচ। তাই কি তাদের মানায়? তাহলে তারা পুতুপুতু নারীবাদী, কোন কম্মের নয়। বলাবাহুল্য, এসব ফরম্যাটই আবার ঠিক করে দিয়েছে, মোটামুটি জিরো লাইফস্কিল থাকা "পুরুষবাদী ঠাকুরেরা"। এর মধ্যে সাউথ এশিয়ার পুরুষেরা সব থেকে অকর্মণ্য পুরুষ, কোনো কাজই পারে না। নিজের আন্ডার গার্মেন্টস ধুতেও এদের হয় মা নয় বউ লাগে। এরা বাচ্চাকাল থেকে কোনো স্কিল শেখা ছাড়াই বড় হয় এই প্রাইড নিয়ে, যেহেতু তার একটা দন্ড আছে, তাই তার সাথে সম্পর্কিত নারীজাতীর সব সদস্য তার অধীন, তার খেদমতে নিয়োজিত থাকবে। নিজের স্ত্রী তো সেইমতে সবচেয়ে বড় ক্রীতদাসী। সুতরাং বউ কতোটা পড়বে, কতোক্ষণ- কোথায় জব করবে, কী পোষাক কতোটা টাইট-লুজ-খোলা পরবে, ফেসবুকে কি ছবি দিবে, ব্লগে কি বিষয়ে লিখবে, কার সাথে কতোটা হেসে কথা বলবে সেইটা সে ঠিক করে দিবে। সে কই জুয়া খেলে সেইটা ব্যাপার না। ইস্যু হইলো “নারী” কারণ তার এবং তার পরিবারের মান-সম্মান সব বউয়ের চাল-চলন আর পদ্দা পুশিদার ওপর নির্ভরশীল। কথা হইলো, এই ভূখন্ডের পুরুষেরা ভৌগলিক অবস্থান বদলাতে পারে কিন্তু চিন্তা, চেতনা আর স্বভাব? তো, নারীবাদীদের গালি খাওয়া ঠেকায় কে!