Wednesday 28 December 2011

প্রভা তোমাকে অভিনন্দন

পৃথিবীতে সাধারণের বাইরে যেকোন ঘটনা ঘটলেই ব্লগ জগতে ঢেউ উঠে যায়। ঘটনার শাখা-প্রশাখা-বিশাখা-অন্তশাখা সব আদ্যোপান্ত বিশ্লেষনের ঝড় উঠে যায়। প্রত্যেকে তার বিদগ্ধ দৃষ্টি দিয়ে ফালা ফালা করে অন্তর্নিহিত ভাব দিয়ে লেখা লেখেন। কিন্তু প্রভা বিয়ে করেছেন এবং নিজে সেকথা পত্রিকা অফিসে ফোন করে সবাইকে জানিয়েছেন, এটি বেশ একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা কিন্তু এনিয়ে এখনো আমি কোন ফেসবুক নোট বা ব্লগ পড়িনি বলেই মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের আর্থিক-সামাজিক পরিবেশে একটি মেয়ের জীবনে যে ঝড় বয়ে গেলো তারপর তার এই ফিরে আসা আমার দৃষ্টিতে সমাজ পরিবর্তনের কিংবা অন্যায়ের বিরুদ্ধে হেরে না যাওয়ার একটি উজ্জল সংকেত। কারো কাছ থেকে সে একটা অভিনন্দন বা অভিবাদন পেলো না, আশ্চর্য।

আমি খুব নগন্য একজন মানুষ প্রভা, কিন্তু তুমি আমার অভিনন্দন জেনো। যে ঝড় ঠেলে, বাস্তবকে স্বীকার করে তুমি সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছো, তার জন্যে অভিনন্দন।

সামান্য কিংবা অসামান্য কারণে যে দেশে মেয়েরা টপাটপ আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেয়, সে দেশে তুমি নিজের ক্ষতি না করে, পড়াশোনা শেষ করার, নিজের পেশায়, জীবনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছো তাকে অভিনন্দন।

রাজীব কিংবা অপূর্ব যে নামেই তাকে ডাকো, তাদের বিশ্বাসঘাতকতায় ভেঙ্গে পড়োনি সেজন্য অভিনন্দন।

বিদেশে পালিয়ে যাওনি, নিজেকে সমাজ বা বন্ধু বিচ্ছিন্ন করোনি, তার জন্যে অভিনন্দন।
তোমার মানসিক শক্তি, মনোবল, সাহস, দৃঢ়তার প্রতি রইলো অভিনন্দন।

তোমার পরিবার, বন্ধু, শুভাকাঙ্খী যারা তোমার এই পথ চলার পথে নিদারুন সাহস জুগিয়ে গেছে, তোমাকে ভেঙ্গে পড়তে দেয়নি তাদেরকেও অভিনন্দন।

জঘন্য অপরাধ করা সত্বেও রাজীব সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের দ্বারা নিগৃহীত কিংবা শাস্তির আওতার বাইরেই থেকে গেলো দেখা সত্বেও তোমার এই পায়ে পায়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রতি রইলো শুভকামনা।

আশাকরছি তোমাকে দেখে অনেকেই সাহস পাবেন। যারা দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ঘৃন্য মানুষগুলোকে সমাজে জিতিয়ে দিয়ে যায়, তারা হয়তো কখনো তোমাকে ভাববে।

একটা দুর্ঘটনাই যে একটা মানুষের পূর্নাংগ জীবন নয় সেটা সবাইকে ভাবতে শিখানোর জন্যে তোমাকে অভিনন্দন। তবে হ্যা, স্বীকার করতেই হবে, সমাজে তোমার তারকাখ্যাতি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠার জন্যে, তুমি যতো দ্রুত এই সাহস সঞ্চয় করে নিজেকে গুছিয়ে আনতে পেরেছো একটা সাধারণ মেয়ের পক্ষে সেটা কখনোই সম্ভব নয়। তবে তোমরা শুরু করলে সে সাহস নিশ্চয় একদিন সমাজের সাধারণ ভাগে প্রবাহিত হবে। আনুশেহ শুনেছি ড্রাগ এডিক্ট্যাক্ট ছিলেন। তিনি তা স্বীকার করে এখন মাদকমুক্ত সমাজের জন্যে লড়াই করছেন। তোমার কাছে অনুরোধ, তুমিও এমন কিছু করো যাতে সমাজে যেসব মেয়েরা ধাক্কা সামলে আর উঠতে পারেনি, তারা আলোর মুখ দেখতে পায়। কিংবা তোমার মতো এমন ক্ষতির সম্মুখীন যাতে অন্যেরা আর না হয়। তোমার কাছ থেকে এটুকু আশা আমরাতো করতেই পারি।

একটা খটকা মনে থেকেই যায়, প্রভা তাড়াহুড়ো করেননিতো আবার? অপূর্বকে দেখিয়ে দেয়ার জন্যে আগ-পিছ না ভেবে আবার কোন আগুনে ঝাঁপাননিতো? প্রভার বিয়ের সমসাময়িকই পত্রিকাগুলোতে অপূর্ব আর তার বউয়ের ছবিসহ রিসেপশনের খবর ছাপা হচ্ছিলো তাই প্রশ্নটা মনে ঘুরে ফিরেই আসছে।

নতুন যুগল শান্ত-প্রভা’র নতুন দিনের প্রতি এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারকে অভিনন্দন।

তানবীরা
২৯/১২/২০১১

Monday 19 December 2011

পয়েন্ট অভ নো রিটার্ন


পয়েন্ট অভ নো রিটার্ন বলে পৃথিবীতে কোন পয়েন্ট নেই। যেকোন মোড় থেকে যেকোন মানুষ যেকোন মূহুর্তে আবার ফিরে আসতে পারে। কারণ সে জন্যই মানুষ মানুষ। অনেক সময় দেখা যায় রৌদ্রজ্জল দিনের সামান্য হালকা বাতাস, কোনে পরে থাকা অনেক দিনের ঝুল, ময়লা ধূলো এক নিমিষের মধ্যে উড়িয়ে নিয়ে যায়। যারা ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত থাকে তারা কি এটা ভাবে? তারা কি জানে ষড়যন্ত্র আজ হোক কাল হোক, হাজার বছর পরেই হোক, প্রকাশ হয়ে যায়। গোপন থাকে না? উইকিলিক্স থেকে প্রবাসী, পলাশী থেকে ইরাক এটাই প্রমান করলো বারে বারে, ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে যায়। মায়া ভালবাসা স্নেহ ভরা মুহূর্ত এই আকাশের তলায় কোথাও না কোথাও বেঁচে থাকে, জেগে থাকে। সাময়িকভাবে হয়তো ভুল বোঝাবুঝির ধূলোতে ষড়যন্ত্রের চক্রান্তে ঢাকা পরে, কিন্তু যেকোন ছুতোয় তা আবার বেরিয়ে এসে মনকে সিক্ত করে দেয়।

ষড়যন্ত্রকারী হয়তো ভাবে প্রকাশ হলেই কি? ক্ষতি যা হওয়ার তাতো হয়েই যায়, সেই ক্ষত, সেই ঘা কি পূরণ হয়? কখনো সব কি আর আগের মতো হয়? মীর জাফরকে শাস্তি দিলেই কি সিরাজদ্দৌলা ফিরে আসবে? মার্কিনীদের ইরাক ষড়যন্ত্র প্রকাশ কি, ইরাকীদের সার্বভৌম ফিরিয়ে দিবে? না, তা আর হবে না। সেটা ধ্রুব সত্যি। অনেকদিন ঝুল জমে থাকার একটা দাগ লেগে থাকে বটে, কোনাকেওতো ঝুলখানি জমিয়ে রাখার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। পুরোপরি পরিস্কার সেটা আর কখনোই হবে না। মানুষ কি আর সব ভুলে পাশে আসতে পারে? না, তা হয়তো পারে না। ঘা মরে গেলেও দাগ থেকে যায় আজীবন। বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব ব্যাপার। শরীরের ঘা’য়ের থেকে মনের ঘা অনেক কঠিন, অনেক তিক্ত। কিন্তু ঝুল সরে গিয়ে তাজা বাতাস আসার আনন্দ তাতে কিছুমাত্র ম্লান হয় না। এটাও পার্ট অভ গ্রোয়িং আপ। মনের দাগ নিয়েও সামনে তাকানো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার চোখের বালি উপন্যাসে, চুনিকে তার স্বামীর সাথে সহজ করবার জন্যে, চুনির শাশুড়ির দ্বারা তাকে বলিয়েছিলেন, “প্রথমে বাহিরে ভুলিবার চেষ্টা করো, তাহলে আসতে আসতে ভিতরেও ভুলিবে”।

কিন্তু মানুষ যখন অনুভব করতে পারে, তারা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিল, তাদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে যে ঘৃনাটা বের হয়, সেটা থাকে নিখাদ, নির্ভেজাল ঘৃনা। ষড়যন্ত্র সফল হওয়ার আনন্দ ক্ষণিকের, ভুল বোঝাবুঝিও ক্ষণিকের আর ঘৃনাটা হলো চিরস্থায়ী।

উৎসর্গঃ শিবানী রায় ব্যানার্জী

তানবীরা
১৯/১২/২০১১

Wednesday 14 December 2011

এ বিজয়ের উৎসবকে আমি ঘৃনা করি

বাংলাদেশে খুব ঘটা করে চল্লিশ বছরের বিজয় দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। টিভিতে, ফেসবুকে, ব্লগে, পত্রিকায় দেশপ্রেমের ঘনঘটার বাহার, মৌসুমী দেশপ্রেম আর বিজয়ের উল্লাসে মাতাল সুশীল সমাজ। কিন্তু আসলে “বিজয়” মানে কি? এক টুকরো ভূমিকে নিজের অধিকারে রেখে তাতে যা খুশি তাই করা? নাকি সেই ভূমিতে বসবাসকারি মানুষদের জীবনধারনের জন্যে সাধারণ নিম্নতম চাহিদাগুলোকে মিটানোর দায়িত্ব কাধে নেয়া? তাই যদি হয় তাহলে কি আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছে আজো? আর যদি আমরা সেই লক্ষ্যমাত্রায় না পৌঁছে থাকি তাহলে কিসের এই আনন্দ উৎসব? চল্লিশ কেন, চারশ বছরেই কেন উৎসব করতে হবে? যেই বিজয় নেই, তার আবার উৎসব কিসের? অনেক সময় গুরুজনেরা আফশোস করে বলেই ফেলেন, এর থেকে পাকিস্তান আমলই অনেক ভালো ছিল। এতো চোর ডাকাত ছিল না, শান্তিতে রাস্তাঘাটে চলতে পারতাম, ইত্যাদি। এই কি শেষ অব্ধি আমাদের বিজয়ের উপলব্ধি? এই নিরাশা, হতাশা, ক্রনিক মনোবেদনা?

স্বাধীনভাবে রাস্তায় চলার নিরাপত্তা নেই, কর্মস্থল থেকে জীবিত বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা নেই, বাড়ি ফিরলেও সে কখন ফিরবে তার কোন ঠিকানা নেই। অসহ্য যানজট, শেয়ার বাজারের লীলাখেলায়, হতাশায় সাধারণ মানুষের আত্মহত্যা, রাষ্ট্রপক্ষের লোকদের দ্বারা গুপ্তহত্যা। স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশ করলে দেশ থেকে নির্বাসিত হওয়া এইই কি আজ বিজয়ের রুপ?

হ্যাঁ আমি সেই মেয়েটির কথা বলছি
আমিই সেই মেয়েটি সেই মেয়ে
যার জন্মের সময় কোন শাঁখ বাজেনি
জন্ম থেকেই যে জ্যোতিষীর ছঁকে বন্দী
যার লগ্ন রাশি রাহু কেতুর
দিশা খোঁজা হয়েছে না, তার নিজের জন্য নয়
তার পিতার জন্যে আর ভাই এর জন্য
কিন্তু যার গর্ভ থেকে আমার জন্ম
সেই মায়ের কথা বলেনি কেউ ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে বলছি, হ্যাঁ আপনাকে, যখন জলপাই সরকার আপনাকে দেশে ফিরতে দিতে চায়নি, আটকে দিয়েছিলো বিদেশের মাটিতে, আপনি কেন বিশ্ব কাঁপালেন প্রতিবাদ করে? দেশে ফেরা আপনার নাগরিক অধিকার? বিরোধীদলীয়নেত্রী আপনাকেও বলছি, আপনার ছেলে বিদেশে মন খারাপ করে থাকে, দেশের ফেরার জন্যে সে ব্যাকুল, তাই আপনি ঘটা করে তার জন্মদিন পালন করে, ওয়েবকাষ্ট করেন, কেনো? আপনারা বড় মানুষ, আপনারা নিজেদের অধিকার সম্বন্ধে সচতেন, রাজ রাজা তাই? আর আমরা, যাদের দেশ ছাড়া আর কিছুই যে নেই? আমরা কি সব নর্দমার কীট? আমাদেরকে নর্দমার কীট মনে হলেও, দেশের আকাশ ছোঁয়ার জন্যে, আলো হাওয়ার স্পর্শ পাওয়ার জন্যে, আমরা ঠিক এমনই ব্যাকুল থাকি আপনাদের মতো। আমাদেরও ইচ্ছে করে পতাকা হাতে নিয়ে খালি পায়ে ছুঁটে যাই স্মৃতিসৌধে ।

কেনো মেয়েটিকে দেশে ফিরতে দেয়া হবে না? কি করেছে সে? তার যা সত্যি মনে হয়েছে, কোন সুশীলতার আশ্রয় না নিয়ে, অলংকরনবিহীনভাবে সে তার সব সত্যিকে প্রকাশ করেছে। এটা কি অপরাধ? সেতো আপনাদের যা ইচ্ছে করছে আপনারাও তাই করছেন, নয় কি? ঢাকাকে এককথায় জন্মদিনের কেকের মতো দুটুকরো করে দিলেন, জনমত উপেক্ষা করে শামীম ওসমানকে সমর্থন দিলেন, মেয়র লোকমানকে হত্যা করিয়ে দিলেন, কসবার গ্যাস নিয়ে যাচ্ছেন অন্যদিকে, স্থানীয় মতামত উপেক্ষা করে, পার্বত্য চট্রগ্রামের লোকদের সাথে বেঈমানী, টিপাইমুখি বাঁধ নিয়ে অস্পষ্টতা, ট্রানজিট নিয়ে ফাজলামি। এগুলো অপরাধ নয় তবে? সেই মেয়েটি কি এর থেকেও জাতি কিংবা জাতীয় স্বার্থের প্রতি বেশি হুমকি স্বরুপ? জাতির কি এরচেয়েও বেশি ক্ষতি হওয়ার আছে?

তার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে বাপ-বাপান্ত, নোংরা ঘাটাঘাটির চূড়ান্ত। কেন? সেকি কিছু লুকিয়েছে? না অস্বীকার করেছে? নাকি বে-আইনী কিছু করেছে? যারা আজকে সমাজের অত্যন্ত উঁচু প্রতিষ্ঠিত জায়গায় আছেন, সমাজকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের ব্যাক্তিগত জীবনের পঙ্কিলতা নেই? তাদের বেলায় চুপ কেন? একশ মেয়েকে রেপ করা আত্মস্বীকৃত অপরাধী, দুধর্ষ চাঁদাবাজ, সিরিয়াল কিলার, ফতোয়াবাজ সবার জায়গা হয় বাংলার মাটিতে শুধু এই নিরস্ত্র মেয়েটিকে ছাড়া? যারা বোমা মারে তারা থাকতে পারবে, বাংলা ভাই- ইংরেজি ভাই- আরবি ভাই থাকতে পারবে, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামী প্রাক্তন মন্ত্রী প্রকাশ্যে আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীকে হুমকি দিচ্ছেন আবার আসছি ক্ষমতায় বলে। কিন্তু থাকতে পারবে না এই মেয়েটি কারণ প্রকাশ্যে কিছু প্রচলিত নিয়ম ভেঙ্গেছে সে, লুকিয়ে ভাংগলে অবশ্য ঠিক ছিল। তাই কি?

আর ধন্য এই বাংগালী জাতি। এই মেয়েটির নাম ভাঙ্গিয়ে অর্থনৈতিক ফায়দা, রাজনৈতিক ফায়দা, সামাজিক ফায়দা থেকে এমন কোন ফায়দা নেই যা এদেশের মানুষেরা দেশ এবং বিদেশ থেকে ব্যাক্তিগতভাবে নেয়নি। কিন্তু কাজের শেষে তাকে কেউ আর মনে রাখেনি। ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে যত দূরে চোখ যায় তত দূরে। স্বাধীনতাবিরোধীদের বাঁচাতে দেশে মিছিল হয়, হরতাল হয় কিন্তু সেই মেয়েটির কথা কেউ বলে না। তাদের চেয়েও কি ক্ষতিকর এই মেয়েটি? পঞ্চাশে পৌঁছে গেছেন তিনি, দেশে আসার আঁকুতি নিয়ে দেন দরবার করতে করতে। কেঁদে মরছে একবার আমাকে আমার বাবার ভিটেয় পা রাখতে দাও

আমি ফিরব, ফিরব ভালবাসতে, হাসতে জীবনের সুতোয় আবার স্বপ্ন গাঁথতে
অপেক্ষা করো মতিঝিল, শান্তিনগর, অপেক্ষা করো ফেব্রুয়ারীর বইমেলা
আমি ফিরব।
মেঘ উড়ে যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, তাকে কফোঁটা জল দিয়ে দিচ্ছি চোখের,
যেন গোলপুকুর পাড়ের বাড়ির টিনের চালে বৃষ্টি হয়ে ঝরে।
শীতের পাখিরা যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, ওরা একটি করে পালক ফেলে আসবে
শাপলা পুকুরে, শীতালক্ষ্যায়, বঙ্গোপসাগরে।
ব্রক্ষপুত্র শোনো, আমি ফিরব।
শোনো শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, সীতাকুন্ড পাহাড় ---- আমি ফিরব।
যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন।

এতো নিস্তরংগ মানুষের হাহাকার নিয়ে যদি হয় বিজয়ের উৎসব, তাহলে সে উৎসবকে আমি ঘৃনা করি। নিরস্ত্র, ক্ষমতাহীন মানুষের ওপর ক্ষমতার অপব্যবহারের নাম যদি হয় বিজয় উৎসব তাকে আমি ঘৃনা করি। শীতের মৌসুমে সুশীলদের এই বিজয়ের নাটক নাটক খেলাকে আমি ঘৃনা করি।

তানবীরা
১৪/১২/২০১১

Monday 12 December 2011

যখন আকাশ ভাসিয়ে দিলো নবমীর চাঁদ


আমার তোলা নতুন ছবি আলো ছায়া আর চাঁদের খেলা দেখে কেউ কেউ জিজ্ঞেস করলেন, হঠাৎ কেনো পুরনো চাঁদ নতুন করে লাগলো ভালো? বিশেষ কারণ কি? বলি তাদের, বলবো আর কি আর দুঃখের কথা? বেড়াতে গেছিলাম কোথাও, কিন্তু পার্কিং লট ফুল, পার্কিং পাচ্ছি না। গোল গোল করে পার্কিং লটের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছি। তারপর ড্রাইভারকে বললাম, আমরা নেমে পাশের পেভমেন্টে দাঁড়াই। তুমি পার্ক করে আসো। কনকনে ঠান্ডার মধ্যে মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার তিতির ময়না পাখিটা কুটুর মুটুর গল্প করছে আমার সাথে।

এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে সে আমাকে বললো, আমার অনেক পা ব্যাথা করছে আম্মি কিন্তু আমি তোমার কোলে উঠতে চাচ্ছি না। জানো কেন?

কেন?

আমি জানি সারাদিন ঘুরে তুমিও অনেক টায়ার্ড তাই। হ্যা না আম্মি? তোমার তাহলে কষ্ট হবে।

আমি আমার তিতির ময়নার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি কিসের যেনো একটা ছায়া পড়েছে সেখানে। মাথা উঁচু করতেই দেখি এক ফালি চাঁদ উঁকি দিয়ে দেখছে আমার ময়না পাখিকে। দুষ্ট চাঁদের দুষ্টমিটুকু আমি ভাবলাম ক্যামেরা বন্দী করে নেই। তাই টুক করে ক্যামেরা তুলে প্রমান রাখলাম, “চাঁদ তুমি তখন আমার ময়নার মুখের দিকে কিন্তু ঠিক এভাবে তাকিয়ে ছিলে”।

যখন মেয়েটা পাশে থেকে এমন করে মায়াময় সব কথা কয়

সকল চিন্তা প্রার্থনার সকল সময় আমার

শূন্য মনে হয়

শূন্য মনে হয়

শূন্য মনে হয়

তানবীরা

১২/১২/২০১১

Thursday 8 December 2011

একটা কিচ্ছা

আমাদের চার তালার আন্টি মারা গেলেন ক্যান্সারে। চার দিনের মিলাদ হলো। হুজুর আসলেন তিনি মাশাল্লাহ একবার শুরু করলে থামেন না। হয়তো গান বাজনার ধাক্কায় হুজুররা সারা মাস কোন ঠাসা থাকেন বলে একবার প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পেলে শতরঞ্চি ধরে টান না মারা পর্যন্ত থামতে চান না। আমাদেরকে মুখ কালো আর গম্ভীর করে বিরাট লম্বা কাল কাটাইতে হয় মিলাদের পরের তেহারীর আশায়। চল্লিশার মিলাদে আমরা ভাইবোনেরা কেউ আর বিরিয়ানীর আশায়ও ওপরে যেতে রাজি না। সেই বয়সে পৌঁছে গেছি যে ঘাড় ত্যাড়া করে বাবা-মাকে অগ্রাহ্য করে ফেলতে পারি। আর জানি বাসার বাউন্ডারীর মধ্যে বিরিয়ানি রান্না হয়েছে যখন তখন কিছু না কিছু বাড়ি পর্যন্ত আসবেই।

আম্মি প্রথমে রাগ করে পরে অনুরোধ করে বলে ক্ষান্ত দিয়ে নিজে রেডি হতে লাগলেন। একজন শুধু আমাদের বাসায় বাবা মায়ের বাধ্য সন্তান। তো তিনি গেলেন আম্মির সাথে আম্মির মন আর বাড়ির মান রক্ষা করতে। সন্ধ্যা ছয়টায় যেয়ে রাত দশটায় তারা নীচে নামলেন ক্লান্ত বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে। নীচে নেমে আম্মি "ওনা"কে বোঝালেন, হুজুর যখন কথা বলছিল, তখন তুমি কেনো অন্যদের সাথে হাসছিলে, কথা বলছিলে? হুজুর ভাল ভাল কথা বলছিল, সেগুলো শুনতে হয়। তখন হাসা, কথা বলা বেয়াদপি, অভদ্রতা। প্রথমে হুজুরের অত্যাচার তারপর আম্মির হিতোপোদেশে দিশেহারা হয়ে বাড়ির আইডিয়াল সন্তান বলেই ফেললো, "আমি জানি ভালো কথা বলছিল হুজুর, কিন্তু ভালো কথা অনেকক্ষণ শুনতে ভালো লাগে না"। আচমকা বেমক্কা জবাব পেয়ে আম্মি একদম প্রস্তরবত মূর্তি।

এরপর এটা বাসায় বুলি হয়ে গেল। সবাই সবাইকে বলি, ভাল কথা বইল্লো না, শুনতে ভাল লাগে না।

স্টোরিয়া পোলস্কা (শেষ পর্ব)

পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ব ভাবলেও গড়িমসি করে বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে বেড়োতে বেড়োতে বারোটা বেজে গেলো। নাস্তার টাইম চলে গেলো তাই ব্রাঞ্চ করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। ব্রাঞ্চ করার জন্যে ট্রাম ধরে সিটি সেন্টারে গেলাম। বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবারের ছবি দেখে কোন রেষ্টুরেন্টে ঢুকবো তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। খাবার দাবার তুলনামূলকভাবে নেদারল্যান্ডসের থেকে বেশ সস্তা। একটি টার্কিস রেষ্টুরেন্টে শেষমেষ ঢোকা হলো। খেয়ে দেয়ে বের হয়ে আগে থেকেই ঠিক ছিল পুরনো ওয়ার্শাও দেখতে যাবো, কিন্তু ট্রাম খুঁজতে যেয়ে দেখলাম, ফাটাফাটি সামার সেল চলছে সেখানে। আর কি, ঢোকো দোকানে।
P1050135
পূর্ব ইউরোপের কাপড়ের ডিজাইন এবং ফ্রেবিক্স খুবই আলাদা পশ্চিম ইউরোপের চেয়ে। অনেক বেশি কালারফুল আর ডিজাইনগুলোর সাথে এশিয়ান ডিজাইনের অনেকটা মিল পাওয়া যায়। ভালো করে পরিপূর্ন শক্তি ব্যয় করে কাপড় জামা খুঁজে বের করার আপ্রাণ চেষ্টায় লেগে গেলাম। পুরো মল ছিন্নভিন্ন করে যখন বের হলাম তখন বিকেল প্রায় পাঁচটা। কফির পিপাসায় অর্ধমৃত। বাইরে বেড়িয়ে আইস কাপোচিনো খেয়ে গেলাম পুরনো শহর দেখতে। ভিসটুলা (Vistula) কিংবা ভিসলা (Wisla) নদীর পাড়ে রাজার বাড়ি দেখতে যাবো। নদীর পাড় এতো সুন্দর করে বাঁধানো, আর নদীর ওপরে আছে নয়নাভিরাম সব সেতু, নদীর পাড় ছেড়েই যেতে ইচ্ছে করছিলো না। P1050187
নদীর পাড় থেকে একটু উঁচুতে উঠে গেলেই বিশাল বিরাট রাজার বাড়ি যা এখন খাঁ খাঁ করছে। শুধু নিরাপত্তারক্ষী আর দর্শনার্থীদের ভীড়। একদিন এখানে নিশ্চয় কতো আলো ঝলমল করেছে। কতো নহবত বেজেছে। আজ সব ইতিহাস। P1050174
P1050205
রাজার বাড়ির সামনে বিরাট চত্বর। সেখানে এখন বিভিন্ন দোকান, রেষ্টুরেন্ট, কনসার্ট এর আয়োজন। পর্যটকদের ভীড়ে গম গম করছে এলাকা। বিকেলের নরম রোদে চারপাশের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, মন এমনিতেই তরল হয়ে যায়। পুরো এলাকা জুড়েই আছে সুন্দর সুন্দর ইমারাত। গীর্জা, সেনাবাহিনীর অফিস, বিভিন্ন রাজকীয় কাজের জন্য পূর্বে ব্যবহৃত হতো সে ধরনের বাড়িঘরগুলো। আস্তে সুস্থে হেটে বেড়ালাম ডাউন টাউনের কাসেল স্কোয়ারে। P1050230

P1050244

ঘুরতে ঘুরতে পড়বিতো পর মালির ঘাড়ের মতো যেয়ে পড়লাম এক ভারতীয় রেষ্টুরেন্টের সামনে। খাবার সময়তো হয়েই গেছিলো। আর কি পেট পূজা সেরে নিয়ে আবার ট্রাম ধরে ফিরলাম হোটেলে। হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে মেয়ের আবদার রাখতে বসলাম। প্রথমে লুডু তারপর তাস খেলতে। সাপলুডু খেলতে মেয়ের বিমলানন্দ। বারবার মই বেয়ে তিনি ফার্ষ্ট হয়ে যাচ্ছেন আর বাবা ঘর থেকে বেড়োতেই পারছেন না এক তুলে। পরে মায়ের সাথে রফা হলো বাবাকে বের হতে দেয়া হোক, এক উঠুক আর নাই উঠুক। মেয়ের আনন্দোজ্জ্বল চেহারা দেখে মনে মনে ভীষন কষ্ট পেতে লাগলাম। বাড়িতে কেনো সময় করে মেয়েকে নিয়ে খেলতে বসি না। এতো আনন্দ অবহেলায় ফেলে রেখে ফালতু কাজ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকি।
এরপর তাস খেলা। মেয়ের জন্যে আমি একটা খেলা আবিস্কার করেছি। স্পেডট্রামের কিডস সংস্করন। যেই বিভাগের তাস সেই বিভাগের বড়টা যে দিতে পারবে সেই পাবে সেই দান। যে বেশি দান পাবে সেই উইনার। আমি একটু উঠে অন্যদিকে গেছি, সেই সুযোগে ওনি তাসের ভাগ থেকে বড় বড় সব তাস ওনার কাছে নিয়ে রেখেছেন। আর আমাকে দিয়েছেন সব দুই তিন চার। আমি ষড়যন্ত্র টের পেয়ে জিজ্ঞেস করতেই ওনি হেসে গড়িয়ে পড়ছেন। টোমাকে হারতে হলো, মা আজকে। আমি বল্লাম হারতে হলে হারবো কিন্তু এটা কি কিছু জেতা হলো? খেলে জিতো। না তা হবে না। খেলা নেই ইমোশোন্যাল ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে হারাতে হবে। ঠিকাছে আমিই হেরে বাবা – মেয়ে তথা জগতের সব প্রাণীকে সুখী করে যাই।
পরদিনও একই অবস্থা। গড়িয়ে গড়িয়ে বারোটায় যেয়ে সিটি সেন্টারে পৌঁছলাম। আজকে মেয়ের পছন্দের ম্যাক হলো ব্রাঞ্চ। গাইড আর ম্যাপ দেখে ট্রাম বাস করে যেখানে পৌঁছলাম পরে আবিস্কার হলো সেটা ডাউন টাউন কাসেল স্কোয়ারের অন্যদিক। এপাশটাও দারুন। পুরনো দিনের রাজকীয় বিশাল সেসব আর্কিটেকচারের চার্মই আলাদা।
P1050282

P1050281

সেখানে বিস্তর ঘুরাঘুরি করে, কফি খেয়ে গেলাম শহরের একদম অন্যদিকে, ওয়ার্শাও এর দ্বিতীয় প্রাসাদ দেখতে। প্রাসাদ দেখে এবার খুবই হতাশ হলাম। এর থেকে আমাদের ধানমন্ডি লেকে সিড়ি নামিয়ে দেয়া সেই লাল গম্বুজের বাড়িটা অনেক পশ। তারপরও প্রাসাদের আশেপাশের বাগান, মাঠ, সেখানের কনসার্ট আর পরিবেশ মন খারাপ ভাবটা অনেকটাই পুষিয়ে দিলো। P1050314
P1050319
এবার সান্ধ্যভোজনের পালা। প্রত্যেক দেশেরই একটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয়। সব রেস্টুরেন্টের লোকেরা যে দেশে থাকবে সে দেশের অরিজিন্যাল স্বাদের সাথে মিলিয়ে খাবার তৈরি করে। কোন দেশের চায়নীজ যে সত্যিকারের চায়নীজ স্বাদের আজো ধরতে পারলাম না। আজকের ডিনার ঠিক হলো ইটালীয়ান। পোল্যান্ডের ইটালিয়ান খাবারের স্বাদ তবুও পরিচিতই মনে হলো। তারমধ্যে স্প্যাগাটি ইন কন ক্রীম সস উইথ চিকেন আর মাশরুমটা ছিল অসাধারণ। P1050353
পরদিন ঘুম থেকে ওঠে দেখলাম আজ মেঘের কোলে ওয়ার্শাও। তাই তাড়াহুড়ার চেষ্টাও করলাম না। সকালে নাস্তা না খেয়ে একবারে দুপুরের খাওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আগের দিন আসার সময় ভালো একটা গ্রীক গ্রীল রেস্টুরেন্ট সিলেক্ট করে এসেছি। কচ্ছপ গতিতে রেডি হয়ে গেলাম পেটপূজা দিতে। তারপর বিখ্যাত পোলিশ পোটারীর দোকানে। এতো সুন্দরের মাঝে গেলে হয় মন খারাপ। আর ভাবি কতো কিছু আজো দেখা আর জানার বাকি। আমাদের নকশী কাঁথার মতো ওদেরও নিজস্ব একটা প্যার্টান আছে পোটারী ডিজাইন করার। আগে শুধুই নীলে করতো। আজকাল
P1050390
P1050304
পোলিশরাও ফিউশন করছে তাই নীলের সাথে অন্য রঙ ব্যবহার করছে। যদিও প্রধান রঙ হিসেবে নীল থাকছে, বাকিগুলো সহকারী রঙ। আর ট্র্যাডিশন্যাল ডিজাইনের বাইরে অন্য ডিজাইনও নিচ্ছে। পোলিশ পোটারী সারা ইউরোপ জুড়েই খুব বিখ্যাত। ইউরোপের যেকোন ক্রীসমাস মার্কেটের অন্যতম প্রধান আকর্ষন থাকে পোলিশ পোটারী এবং অবশ্যই অন্য যেকোন হাতে বানানো জিনিসের মতো এটিরও বেশ দাম হয়। পোটারী দেখা শেষ হল পর কোনদিকে যাবো ভাবছি। বৃষ্টিতে কোন আরাম হচ্ছে না। তখন ঠিক করলাম, শহরের চারপাশ দেখবো। রুট দেখে চারটা বাসে কিংবা ট্রামে চড়ে শহরের চারপাশ দেখা যাক। এটি মেয়ের বাবার খুবই পছন্দের কাজ সবসময়। তো তাই হলো। P1050421
P1050131
উত্তর দক্ষিন পূর্ব পশ্চিম দেখা শেষ করে এসে আইসক্রীম পার্লার। আইসক্রীম খেয়ে গেলাম পোলিশ এম্বার দেখতে। পোল্যান্ডের বিখ্যাত পাথর, সমস্ত জুয়েলারী শপ ছেয়ে আছে এম্বারের গয়নায়। কি অদ্ভূদ তাদের কাটিং করেছে। কতো শত শেপে কেঁটে ডিজাইন করেছে। এবং অবশ্যই অনেক দামিতো বটেই। P1050388
সবশেষে আজ আমাদের পোল্যান্ডের লাষ্ট সাপার। আবার পোলিশ রেষ্টুরেন্ট। আবার কিছু ট্র্যাডিশনাল ডিস ট্রাই। তবে খাবার খুব ভালো। খেতে হলে যেতে হবে পোল্যান্ড। P1050402
কাল সকালে তাড়াতাড়ি উঠতেই হবে আজ বৃষ্টির জন্যে ক্যাথিড্র্যাল দেখতে যেতে পারিনি। আলসেমি আর গড়িমসিতে কাটলো দিনটি। সকালে ওঠে দেখলাম আবহাওয়া মোটামুটি চলে টাইপ। কিন্তু রাস্তায় বেড়িয়ে আক্কেল গুড়ুম। ইউরোপের প্রত্যেক দেশেই একটি “নো কার” ডে থাকে, কিংবা ম্যারাথন টাইপ কিছু থাকে যেদিন গাড়ি, বাস চলবে না। কোন পলিউশন হবে না। ওয়ার্শাও সেদিন সাইকেল রেসিং এর আয়োজন করেছে আর আমরা হাবার মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে। P1050412
পরে একে তাকে জিজ্ঞেস করে সিটি সেন্টার পর্যন্ত পৌঁছলাম। সেখানে যেয়ে দেখি কিছু দূর পাল্লার বাস যাচ্ছে। এদিকে সেদিক করে ভিলানোও ক্যাথিড্র্যাল পর্যন্ত পৌঁছেছি, কিন্তু আবার ফেরার তাড়া। নইলে নো কারের দিনে আমাদের নো ফ্লাইট হয়ে যাবে ফ্লাইট মিস করে। ক্যাথিড্র্যালটা বেশ সুন্দর ছিল যদিও মন ভরে দেখা হলো না। একে পৌঁছতে দেরী তার ওপর আবার সানডে প্রেয়ার এর ভীড়। যেকোন গরীব দেশের মতো ওয়ার্শাও এর লোকেরাও খুব ধর্ম ভীরু। কুসংস্কার দেখা গেলো এখানেও দানা বেঁধে আছে। কেউ মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে চার্চের বেদি পর্যন্ত যাচ্ছেনতো কেউ পয়সা দিয়ে হাই-টেক মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন। হাই-টেক মোমবাতিতে কয়েন দিলে এটি বাল্বের মতো জ্বলে। একটা নির্দিষ্ট সময় জ্বলে থাকে তারপর নিভে যায় তখন আবার অন্যজন কয়েন দিলে আবার জ্বলে। এগুলোকে ফিক্সড করে রাখা আছে সারি বেঁধে। ধর্মস্থান থেকে পয়সা কামাবার ফন্দীও ঠিক একই আমাদের মতো। P1050425
P1050428
বহু ঝুট ঝামেলা করে প্রায় নাকে মুখে দৌড়ে হোটেলে পৌঁছে স্যুটকেস নিয়ে ভোকাট্টা দৌড় নীচে। গাড়ি বন্ধ থাকলেও এয়ারপোর্টের ট্যাক্সি সার্ভিস চলছিল তাই রক্ষা। শেষ হলো সামার ভ্যাকেশন ২০১১। আবার সামনে রোদ ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা ..................
P1050227
তানবীরা
০৭/১২/২০১১

Friday 21 October 2011

ছাগুনয়া

G – O – A – T মানে ছাগু। ছাগু করে নাদু তাতে উৎপন্ন হয় ছাগুনয়া। কিছু কিছু ছাগু আছে যাদের পক্ষে কোনটা চুল আর কোনটা বাল তা আলাদা করা অসম্ভব। কিন্তু তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ডিগ্রী পকেটে রেখে, সওদাগরি অফিসের নরম গদি গরম করে, মোটা মাইনেতে নিজে ও পরিবারকে তাজা করে ভাবে, আমি বুঝি না বা জানি না পিরথিমিতে এমন কিছু আবার আছে নাকি? ছাগু যতো না তার নাদির গন্ধে মুগ্ধ তার চাইতে তার পরিবার আরো বেশি মুগ্ধ। ভাবে, ওগো মোর ছাগু, কি সুবাসিত তোমার হাগু। কিন্তু তাতে যে পিরথিমির পরিবেশ খারাপ হচ্ছে সেটা বোঝার মতো অনুভূতি তাদেরকে দিয়ে প্রকৃতি তাদেরকে পিরথিমিতে পাঠায় নাই। তারা আসে তাদের ছাগুত্ব দিয়ে পৃথিবীর গড়া জিনিসকে নষ্ট করতে। ছাগুনয়া জিন্দাবাদ। ছাগু ও ছাগুত্ব অমর হোক।

তানবীরা
২২.১০.২০১১


Thursday 13 October 2011

মৃত্যুর সাথে বসবাস

রুমকির অফিসে কাজ করতে করতে শরীরের একটু অস্বস্তিকর ম্যাজম্যাজানি অনুভূতির জন্যে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হঠাৎ ই, তেমন কোন বিরাট পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া। ডাক্তার সব শুনে কিছু চেকাপ লিখে দিলেন। আবার হসপিটালে যাও, চেকাপ করাও এই বিরক্তি নিয়ে অফিসের মাঝে হাসপাতালে যাওয়া। হাসপাতালে প্রথম চেকাপ হয়ে যাওয়ার পরে বিশেষজ্ঞ ডেকে নিয়ে বললেন, আমি আর একটু নিশ্চিত হতে চাই তাই তুমি আবার আসো, আরো কিছু পরীক্ষা করবো। তারপর আবারো তেমনই মন নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া, ভাবা পাবেনাতো কিছুই, ওষুধও দিবে না, মাঝ থেকে খোঁচাখুচি করা।

কিন্তু না, এবার বিনা মেঘে বজ্রপাত। এবার বলা হলো, তোমাকে শীগগীর ভর্তি করা হবে এবং অপারেশন করা হবে। তোমার শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ন অংগ প্রায় বিকল অবস্থায়। যতোদিন না তোমাকে অপারেশন করা হচ্ছে, তুমি যেকোন ধরনের অস্বস্তিতে এই স্প্রে ব্যবহার করবে দুবার আর অপেক্ষা করবে না, সাথে সাথে এম্বুলেন্স ডাকবে, জরুরি বিভাগে চলে আসবে। কোন ধরনের চান্স নিবে না বুঝলে, কোন ধরনের চান্স নিবে না। বিভিন্নভাবে তাকে বুঝানো হলো কোন ধরনের চান্স নেয়ার সময় তার এখন না। মাথায় পুরো আকাশটাই যেনো ভেঙ্গে পড়লো। কতো স্বপ্নে এখনো রঙ ভরা হয়নি, কতো সুখ কল্পনা রয়ে গেছে এখনো অধরা। এর মধ্যেই কি ঘন্টা বেজে গেলো? ছুটির সেই অমোঘ ঘন্টা যাকে এড়ানোর সাধ্য কোন জীবিত প্রাণীর নেই? এতো ছোট মানুষের জীবন? এতো অসহায় সে নিয়তির কাছে? এতোই ঠুনকো সব? ভাবছি দিনরাত ভর, যখন কাউকে বলে দেয়া হয়, তুমি আর তিন থেকে চার মাস বাঁচবে তার তখন কেমন অনুভূতি হয়? সে মানুষ কি করে তার প্রতিটি প্রহর কাটায়? সিনেমায় দেখেছি অবশ্য বহুবার এধরনের দৃশ্য কিন্তু কখনো সেভাবে অনুধাবন করিনি তখন অভিনেতা অভিনেত্রীর এক্সপ্রেশন কিংবা তার পরের দৃশ্য দেখার জন্যে ব্যাকুল ছিলাম হয়তো। কিন্তু যখন তার আর পর নেই ..................?

ঘুমের মধ্যে একটু শব্দ হলেই চমকে উঠি সব ঠিক আছেতো? স্প্রে এর দরকার নেইতো? একটু হাঁচি এলে কিংবা কাশি হলেও মনে হয়, জরুরী বিভাগের যাবার দরকার নাতো আবার। সব ঠিক আছেতো? কি হবে কিংবা কি হবে না? যখন থাকবো না তখনো ঠিক এভাবেই সূর্য উঠবে, এভাবেই পাখি গাইবে। এভাবেই ফুল তার গন্ধ ছড়াবে, প্রেমিক তৃষার্ত আদ্র চোখ নিয়ে প্রেমিকাকে বলবে, ভালোবাসি তোমায়। কারো থাকা না থাকায় জগতের একটি মুহূর্ত এদিক ওদিক হবে না, সব ঠিক একই নিয়মে চলবে, যেমন সবসময় চলে যায়।

সিড়ি দিয়ে নামতে গেলে সারাক্ষণ মনে হয় পা ঠিক জায়গায় পড়ছে না, আমি হড়কে পরে যাচ্ছি। বার বার মনে হয় গড়িয়ে যাচ্ছি নীচে। এরই নাম কি নার্ভাস ব্রেকডাউন? অনেক শুনেছি এই শব্দটা। এর লক্ষনই কি বা গুনাগুনই কি? সারারাত দুচোখের পাতা এক না হওয়া? চোখের পাতায় সূঁচকুমার রুপকথার গল্পের নায়কের মতো হাজার হাজার সূঁচ বিঁধে থাকে কিন্তু ঘুমের দেশে হারাতে পারি না, মিছেই চোখ বন্ধ করে থাকা। কিছুক্ষণের জন্যে ঘুমালেও সারা ইন্দ্রিয় জেগে থাকে। রাতের নিঃশব্দতা ভেঙ্গে কোথায় কুকুর ডাকলো, কার বাচ্চা ঘুমের মধ্যে অকারণে কেঁদে ওঠলো, কে উল্লাসে নিশি উদযাপন করে সোল্লাসে রাস্তা দিয়ে গান গেয়ে বাড়ি ফিরছে সব কান ভেদ করে মাথায় গিয়ে পৌঁছে। ঘুমের মধ্যে এই ঠান্ডা আবহাওয়াতেও গা ভিজে জবজবে হয়ে যায়। পেট মুঁচড়ে মুঁচড়ে কি যেন একটা গলার কাছে এসে আটকে থাকে। সেটা কি বমি না কান্না, নাকি কোন নাম না জানা ব্যাথা। উগড়ে গেলে আরাম হতো কিন্তু কিছু বের হচ্ছে না। আচ্ছা, কতো সময় লাগবে নার্ভের ওপর, নিজের ওপর আবার নিয়ন্ত্রন ফিরে পেতে, কে জানে?

দূর থেকে দেখে মনে হবে সব চলছে স্বাভাবিক নিয়মে, হয়তো তাই। সবকিছু করে যাচ্ছি যেনো দম দেয়া পুতুল। অথচ আবার কিছুই করছি না যেনো। ছোট একটা বাচ্চা ধাক্কা দিলে মনে হয় উড়ে পড়ে যাচ্ছি, শরীরে কোন শক্তিই অবশিষ্ট নেই আর। সারা শরীরে কেমন যেনো একটা কাঠ কাঠ অনুভূতি হয়ে আছে। কোন কিছুতেই সেইভাবে আর মন লাগাতে পারি না। চিন্তা সারাক্ষণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মনের মধ্যে একটা কিযেনো চলছে সারাক্ষণ। হঠাৎ কখনো হাসলে মনে হয়, “হোটো পে কার্জ রাক্ষা হ্যায়”। একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে জানি। আবার হয়তো কিছুই ঠিক হবে না, এর মধ্যেই অভ্যস্ত হয়ে যাবে রুমকি। এটাই হয়ে যাবে তার স্বাভাবিক জীবন।

তানবীরা
১৩.১০.২০১১

Monday 29 August 2011

মনের কষ্ট রইবে মনে উড়বে পাখি বনে বনে


What goes around comes around. প্রকৃতি তার কোন হিসাব অপূর্ন রাখে না। ইতিহাস তার সাক্ষী। ভালো সময়ের একটা খারাপ দিক হলো, একসময় সেটা শেষ হয়ে যায় আর খারাপ সময়ের ভালো দিক হলো, একসময় সেটাওশেষ হয়ে যায়। এদিন দিন নয় আরো দিন আছে, সেদিনকে আনতে হবে এদিনের কাছে :D
তানবীরা
২৯.০৮.২০১১