Wednesday 21 December 2022

স্মৃতি তুমি বেদনা

নিজের হাতে লাগানো কুমড়ো লতা কিংবা বেগুন ফুলে মায়া পড়ে কবে কোথায় বেড়াতে যেয়ে কিনে আনা লবনের চামচ, কফির মগের জন্য মন পুড়ে দশ বছরে একবার ভাঁজ খুলে দেখা হয়নি, সেই কলেজের প্রথম বছরে কেনা জামদানিটার জন্য মন হু হু করে মেয়ের জুডোর ড্রেস, সেই ছোট্ট গোলাপী বাথরোব সব ঝুলে আছে আলমিরায়, একরাশ মায়া মেখে বৃষ্টি ভিজে কাদা মাড়িয়ে গড়িয়াহাট থেকে কেনা শাড়িতে মায়া অসহ্য ভীড়-গরম উপেক্ষা করে গাউছিয়া থেকে কেনা ব্লাউজে মায়া নিজের শখে দুবাই এয়ারপোর্টে কিনে দেয়া মেয়ের ছোট হয়ে যাওয়া চুড়িতে মায়া পয়সা জমিয়ে জমিয়ে কেনা এত্ত সব সিডি, আর কোনদিন কোন কাজে লাগবে না জেনেও ফেলে দিতে কি নিদারুণ বুক ব্যথা প্রয়োজন ফুরায়, মায়া নয়। কত সহজে প্রতিদিন কত মানুষ চলে যায়, বেঁচে থাকাটাই কি একটা মায়া তবে? সাই-ফাই সিনেমায় দেখানো এলিয়নদের মত আমরাও কি কোন একটা ইল্যুশনের চক্করে ঘুরপাক খাচ্ছি?

স্বাধীনতা বনাম উচ্ছৃঙ্খলতা

এই বছরের মে মাসে জিন্স-টপস পরার কারণে নরসিংদী রেল স্টেশনে এক তরুণীকে মারধোর করে এক বোরকা পরা বেহেস্তী ভদ্রমহিলা। ঘটনার পর ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি। তরুণী জানিয়েছিলো, সে রেল স্টেশনের মারধোর আর গালি-গালাজের ট্রমা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আর একবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলড হয়ে ট্রমাটাইজড হওয়ার শক্তি তারমধ্যে নেই। যত শাদা চোখেই দেখি, এখানে কে স্বাধীন আর কে উচ্ছৃঙ্খল? পুরো পৃথিবীর সমাজবিজ্ঞান বলবে, বেহেস্তী ভদ্রমহিলা উচ্ছৃঙ্খল আর মেয়েটি নিরীহ। একজন মানুষের নিজের পোশাক নির্বাচন তার মৌলিক অধিকার। যেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর সমাজবিজ্ঞান সব ফেইল করে তার নাম বাংলাদেশ। একটি মেয়ে যে কারো ব্যাপারে নাক গলায় নাই, কারো ক্ষতি করে নাই, কাউকে নির্যাতন করে নাই, নিজের পোশাক পরে নিজের বন্ধুদের সাথে নিজের দিন শুরু করেছিলো সে উচ্ছৃঙ্খল আর বোরকার মত একটা অস্ত্র গায়ে চাপিয়ে আর একজনকে নির্যাতন করার মত এমপাওয়ারড ফিল করা কেউ হলো নিরীহ - স্বাধীন। একটা দেশের প্রশাসনে যারা কাজ করে তারা সে দেশের জনগনেরই অংশ, ভিন গ্রহ থেকে আসা কোন এলিয়েন নয়। এই মৌলবাদী সমাজ ব্যবস্থার অংশ হয়েও অন্তত এই ক্ষেত্রে প্রশাসন সিনেমার পুলিশের মত ক্যারিশমাটিক কাজ করছে। বোরকাওয়ালীকে ধরে জায়গা মত "স্বাধীনতা ও উচ্ছৃঙ্খলতা" ফিট করে দিয়েছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ পুলিশ এরকম সুবিচারের দৃষ্টান্ত রাখবে এই আশা রাখছি। বাঙালিকে "হাইকোর্ট দেখানো" এদেশের বিচার ব্যবস্থার রীতি, এ নিয়ে আক্ষেপ রইলো। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশকে ভালবাসা।

তিন সেটের সোফা

অবশেষে বাসায় দুইটা তিন সিটের সোফা কিনলাম। একমাত্র মেয়ে আমার, সারাদিন ভর আদারে,বাদারে যেখানেই ঘুরে বেড়াক, রাত হলেই খেয়েদেয়ে আমার কোলে মাথা দিয়ে টিভি দেখা তার ছোটকালের অভ্যাস। ছোট যখন ছিলো তখন ছিলো কিন্তু এখন বড় হইছে, এই গরমের কালে এত ঘষটাঘষটি করলে কষ্ট মেয়েরে বল্লাম, আলহামদুল্লিল্লাহ, এখন দুইটা তিন সিটের সোফা, একটায় তুমি শুবা আর একটায় আমি। বন্ধুদের সাথে গুলটি মেরে বাইরে থেকে এসে এই কথা শুনে মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভালোমন্দ কিছুই বললো না, আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। আমি খুবই বিরক্ত হলাম, কিন্তু কিছু কেয়ার করছিলাম না। এরপর ও রুমে চলে গেলো আমিও আমার কাজে গেলাম। একটু পর ক্ষিদে লাগলে জোরে জোরে ডাকলাম, কিন্তু কোনো উত্তর দিচ্ছিলো না। জিজ্ঞেস করলাম, কি হইছে? জবাব দেয় না। বললাম, এই মূহূর্তে নীচে এসে টেবিল লাগা, নইলে তোর একদিন কি আমার একদিন। মেয়ে নীচে নামলে খেয়াল করলাম চোখ লাল হয়ে গেছে মুহূর্তেই গলার রগ বেয়ে গেছে। “জরে জরে" নিঃশ্বাস নিচ্ছে। সাধারণত মাইর খাওয়ার সময় হইলে ও এরকম করে। পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি হইছে, ভাল থাকতে ভাল লাগে না? কিন্তু সে একদম টাচ ও করতে দিতে ইচ্ছুক না। বললাম, পিঠ সুড়সুড় করলে এমনেই বলো, এত ভ্যানতাড়ার দরকার নাই। তারপর হঠাৎ বলে, একমাত্র মেয়ে আমি তোমার, কেন আমি তোমার সাথে এক সোফায় শুইলে তোমার সমস্যা? একা একাই খাও তাহলে, আমি তোমার টেবল সাজিয়ে দেবো না। এই কথা শুনার পর আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতেছিলাম না। এত বড় বড় দুই সোফায়, দুইজন আলাদা শুয়ে টিভি দেখবো বলাতেই এই অবস্থা! তাও মায়ের সাথে এমন রিয়াক্ট। বললাম, এইটা নরম গলায়ও আইসা বলতে পারতা। এত তেজ দেখানোর কিছু নাই। আমার খাইয়া আমার পইড়া আমারেই কইবা ম্যাও! তেজ সামলায় রাইখো নাইলে মাইর একটাও মাটিতে পরবে না। সাথে চোখ রাঙাইয়া বল্লাম, আগের সোফাটা লাফাইয়া ভাঙছো, এখন বড় হইছো, সোফার সাথে ভদ্রতা বজায় রাখবা, ব্যবহার বংশের পরিচয়। আমার এই কথা শুনে মেয়ে থ। ওয়াদা করছে এমন বেয়াদপি আর করবে না কখনো। মনে পড়ে গেছে পাঁচ বছর আগে সে এমন বেয়াদপি করছিলো, তিন দিন তার খাওয়া দাওয়া খুবই বেসিক পর্যায়ে ছিলো। মনে মনে সে ভাবলো, মা হইছে উনিশ বছর, যা ছিলো তাই আছে, বদলায় নাই। বাপরে বাপ, বাঙালি মা এমন জল্লাদও হয়!!!!

ঈশ্বর ও শুড়িখানা

গলির মুখে যে পুরনো চার্চটা ঠিক তার উল্টো দিকেই হঠাৎ করে একদিন একটা বার খোলা হলো। চার্চে প্রতিদিন প্রার্থণার সময়, হে লর্ড, বার ধ্বংস করে দাও, বার ধ্বংস হোক বলা হতে লাগলো। সত্যি সত্যি কয়েকদিন পর আচমকা ঝড় হলো, প্রচন্ড বজ্রপাতসহ বৃষ্টি যাকে বলে। বজ্রপাত থেকে আগুন লেগে পুরো বার পুড়ে ছারখার। বারের মালিক যেয়ে চার্চ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দিলো। তার দৃঢ় বিশ্বাস, চার্চে প্রার্থণার কারণেই আগুন লেগেছে। আদালতে চার্চ কর্তৃপক্ষ তাদের সমস্ত দায় অস্বীকার করলো। বিচারক পড়লেন মহা ফাঁপড়ে, এই জীবনে প্রথম তিনি এমন সমস্যায় পড়লেন, একজন “বার” মালিক, ঈশ্বর, প্রার্থণার ওপর বিশ্বাস রাখছে অথচ পুরো “চার্চের" ইশ্বর আর তার শক্তির ওপর বিশ্বাস নাই!!!! (হোয়াটসএপ জোকের ভাষান্তর)

নারীর প্রতি সহিংসতা

প্রতি এগারো মিনিটে লিগ্যাল পার্টনার কিংবা পরিবার দ্বারা একটি মেয়ে খুন হয়, হ্যাঁ, এই পৃথিবীতেই হয়। বানিয়ে বলছি? আমি না পরিসংখ্যান বলছে অফিস থেকে মেইল করা হয়েছে, খালি চাকরি আর ক্যারিয়ার হলেই হবে না, কমিউনিটির জন্যেও কাজ করতে হবে। কি করা দরকার আর কি করা যায় এসব নিয়ে টিম করা হলো, বিভিন্ন চ্যারিটি অর্গানাইজেশানে যোগাযোগ করার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, “শেল্টার হোম” এর ভিক্টিম মহিলাদের “স্কিল ডেভেলাপমেন্ট” প্রজেক্ট করা হবে। কম্পিউটার ট্রেনিং, ইংরেজি শেখানো, হাতে কলমে সিম্পল ট্র্যানজেকশান বুকিং ইত্যাদি। ভবিষ্যতের সহকর্মী উঠিয়ে আনতে হবে ওদের মধ্যে থেকে। আত্মবিশ্বাস ফিরিয়া আনা দরকার ভিক্টিমদের। প্রজেক্ট ফাইন্যাল করে প্রেজেন্টেশান বানাতে গিয়ে আক্কেল গুড়ুম। নর্ডিক কান্ট্রি’স যাদেরকে পৃথিবীর বেহেস্ত বলা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতায় তারা ইউরোপেও সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছে!!!!!! গরীব, ভুখা বলে অবহেলিত ইস্ট ইউরোপীয়ানরা আছে সবচেয়ে নীচে!!!! অবশ্য লেডি ডায়না আর মেগান মার্কেল জানিয়েছে, নির্যাতন রাজবাড়িতেও চলে। আলোচনার মাঝেই রুমেনিয়ান ম্যানেজার গর্বের সাথে জানালো, ইন রুমেনিয়া নো বডি ক্যান টাচ আস, নো বডি। উই কন্ট্রোল এভ্রিথিং, হাউজ, শপিং, ওয়ার্ক। জীবনের প্রায় সবটা এই দেশে খরচ হয়ে গেলো, আগে জানা থাকলে রুমেনিয়াই চলে যেতাম।

বাঙালি চরিত

বাঙালি মানসিকতা ডিফাইন করতে পুরনো দিনের বাংলা সিনেমাগুলো আপনাকে যারপর নাই সাহায্য করবে। সিনেমা (প্রোডাক্ট) বানানোর আগে ব্যবসায়ীরা (প্রোডিউসার)রা ভাল মত মার্কেট রিসার্চ করেই মার্কেটে নামে। আর এই মার্কেট হলো “আমরা বা আমাদের মানসিকতা”। সেসময়ের দুই বাঙলার খুব কম মানুষই আছে যারা উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের সিনেমা দেখে নাই। কোন অজানা কারণে পুরো বাংলা জুড়ে ঐ দুজনকে ভাল ছেলে-মেয়ের রোল মডেল মানা হতো। অথচ বাঙালি বিয়ের আগে ছেলেমেয়ের প্রেম মানতে পারে না। কিন্তু এই দুজন বাবামায়ের অমতে প্রেম করে ব্যাড়াছ্যাড়া লাগানোর সিনেমাই করে গেছে। অদ্ভূদ। যাহোক, উল্লেখযোগ্য কিছু জিনিস, যা আপনার সিনেমা দেখাকে সহজ করবে, গরীব ভাল ছেলে মানে, ধূতি, চটি, পাঞ্জাবী বা শার্ট। বড়লোক মানেই মুখে পাইপ, সিল্কের হাউজকোট, থ্রি পিস স্যুট আর এর মাঝামাঝি যা আছে, প্যান্ট, পোলো, শার্ট সবই কম ভাল বা নন ভাল ছেলের পোশাক যার হাজার যোগ্যতা থাকলেও সুচিত্রার সাথে বিয়ে হবে না কারণ এরা আধুনিক। এরা ইংলিশ বলে, ফরেনে যায় বা আসে, টেনিস খেলে, ক্লাবে যায় এবং কাটা চামচে খায়। বিদেশ লোভী বাঙালি এভাবেই “খারাপ মানুষ” চিহ্নিত করে। ইংলিশ মিডিয়ামে বাচ্চা পড়ানোর জন্যে জীবন দিয়ে দেয়া বাঙালির সিনেমায় তাদের আদর্শ রোলেরা ইংলিশ বলে না বলে নেতিবাচক চরিত্ররা!!!!! আর ভাল মেয়ের চরিত্র? সবসময় শাড়ি পরবে, গরীব হলে সূতি, বড়লোক হলে নন সূতি। গৃহকর্ম সব জানবে আর খুবই ললিত সুরের বাঙলা গান গাইবে, রবীন্দ্র সংগীত হলেই পুরো জমে। প্রচুর দুঃখ জমিয়ে নীরব থাকবে আর কাঁদবে, মুখ খোলা নিষেধ। সালোয়ার কামিজ বা জিন্স মানেই হলো আধুনিক মেয়ে যারা কেক পেষ্ট্রি খায়, ববছাট চুল এবং এরাও একটু ইংলিশ ভিংলিশ বলে। টকাস টকাস কথা বলা মানেই নন কোয়ালিফাইড। এরা আর যাই হতে পারে “ভাল” মেয়ে হতেই পারে না, একজন মানবিক মানুষ হওয়ার সব গুনাবলীর সাথে জামা কাপড়ের সম্পর্ক অত্যন্ত সুগভীর। খানিকটা দুষ্টুমিষ্টি আধুনিক স্বভাবের কারণে সুর্দশন প্রতিভাবান নায়ক সৌমিত্র যিনি আবার একটু আধটু টুইষ্টও নাচতে জানতো, উত্তমকুমার বেঁচে থাকাকালীন বাঙালির সেকেন্ড চয়েজ হয়ে রইলো। উত্তমকুমারের পরে বিশ্বজিৎ তারপর প্রসেনজিৎ এখন শুধু জিৎ ও সিনেমা করছে। তিন জেনারেশন পরে ভাল – খারাপ চরিত্রের জামাকাপড়, সংলাপ ইত্যাদির ধরন এখন পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সমাজ আর আমাদের মানসিকতা? পশ্চিম বাঙলায় অন্তত ভাল ছেলেমেয়ে আর খারাপ ছেলেমেয়ের পোশাকের ধারনা বদলছে কিন্তু বাংলাদেশ???? কিছুদিন আগেই সিনহা হত্যা মামলায়, মামলার আসামী ওসি প্রদীপকে বাদ দিয়ে সবাই যেভাবে মামলার ভিক্টিম শিপ্রাকে নিয়ে পড়েছিলো, তাতে বলা যায়, বাংলাদেশ এখনও নিরাপদে ভিক্টোরিয়ান যুগেই পরে আছে, উত্তমকুমারের সাথে।

দ্যা রয়্যাল লাইফ - রানী জীবন - নারী জীবন

বিদ্রোহী রাজবধূ হিসেবে প্রয়াত লেডি ডায়না ইতিমধ্যে কয়েক জেনারেশানের চর্চার বিষয়। স্বামী, শাশুড়ি কেউ খুশি ছিলেন না তার ওপরে। সম্প্রতি তাতে যোগ হয়েছে মেগান মার্কেলের নাম। মেগানতো সংসার ভেঙে দেয়ার অপরাধে অপরাধী। রাজকীয় ঐতিহ্য ভেঙে স্বামী নিয়ে আলাদা সংসার পাতা ভাবা যায়! সম্প্রতি নেটফ্লিক্স এই বিতর্ক আরো উস্কে দিয়েছে। নেদারল্যান্ডসের রাজবধূ থেকে রানী'র সিংহাসনে বসা মাক্সিমা কিন্তু সবসময় আলোচনার আড়ালেই থেকে যান তার কারণ ১। প্রিন্স আলেকজান্ডার আর মাক্সিমার প্রেম হওয়ার পর যখন তাদের বিয়ের কথা উঠলো, জানা গেলো, উনিশো সত্তর সালে আর্জেন্টিনার সামরিক সরকারের কর্মকর্তা ছিলো মাক্সিমার বাবা। সামরিক জান্তার কর্মকর্তার মেয়েকে রাজবধূ করা প্রায় অসম্ভব। অনেক আলোচনার পর ডাচ পার্লামেন্ট জানালো, ঠিকাছে, প্রেম যখন হয়েই গেছে, বিয়ে তাহলে হোক কিন্তু মাক্সিমার বাবা, মেয়ের বিয়ের মূল অনুষ্ঠানে আসতে পারবে না। কারণ সেটি শুধু রাজার একান্ত ব্যাপার নয়, ডাচ জাতিরও ব্যাপার। তবে, মূল অনুষ্ঠানের পরের রাজকীয় নৈশভোজ ও অন্যান্য ক্লোজ ডোর অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন। এই শর্ত মেনে নিয়েই মাক্সিমা বিয়ে করেছেন। ইগিলি পিগিলি দেশের হেন কোন রাষ্ট্রদূত নেই যারা বিয়ের অনুষ্ঠানে যাননি, সারা পৃথিবী থেকে নানা দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, গায়ক, নায়ক সব উড়ে এসেছে বিয়ের দাওয়াতে কিন্তু মেয়ের বাবা ছিলেন, বাড়ির বাইরে। ২। আজ অব্ধি ডাচ দেশের কোন রাজকীয় অনুষ্ঠানে মাক্সিমার বাবা অংশগ্রহণ করেন নি। মেয়ে জামাইয়ের জন্মদিনে পুরো নেদারল্যান্ডস ছুটি থাকে কিন্তু জামাইয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শ্বশুর নেই। এমনকি নিজের কন্যা যেদিন নেদারল্যান্ডসের রানী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সেই অনুষ্ঠানেও তাঁর বাবা ছিলেন না। ৩। নেদারল্যান্ডসের রাজবধূ হওয়ার জন্যে মাক্সিমাকে বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে লাগাতার যেতে হয়েছে। এক একটি পরীক্ষায় তিনি কৃতকার্য হতেন আর রেডিও টিভি সেটি ফলাও করে প্রচার করতো, তিনি রাজবধূ হওয়ার জন্যে আর এক ধাপ আগালেন। প্রিন্স আলেকজান্ডারকে আর্জেন্টিনার জামাই হওয়ার জন্যে কোন পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো কিনা জানা নেই। কিন্তু মাক্সিমাকে, পোশাক, খাওয়া, ভাষা সব কিছুতেই নতুন করে অভ্যস্ত হতে হয়েছে। ৪। বিয়ের আগে তাকে মেডিক্যাল চেকাপের মধ্যে দিয়েও যেতে হয়েছে। রাজবাড়ির মেডিক্যাল টিম তাকে পরীক্ষা করে দেখেছে, সন্তান ধারনে তিনি সক্ষম কিনা, সেটি পজিটিভ হবার পরই রাজবাড়িতে তাঁর বিয়ের কথা পাকা হয়। রেডিও টিভিতে সেই নিউজও প্রচার হয়েছিলো। ৫। বিয়ের প্রায় সাথে সাথে তাকে গর্ভধারণ করতে হয় এবং আমাদের ক্রাউন প্রিন্সেস এমেলিয়ার জন্ম হয়। ঠাকুরবাড়ির ভবতারিনী থেকে মৃনালীনি হয়ে ওঠার গল্পের সাথে এই গল্পটার কিংবা বাস্তবতার পার্থক্য কোথায়? পুড়বে মেয়ে উড়বে ছাই, তবেই মেয়ের গুণ গাই।