Sunday 29 January 2017

ডাচ শিক্ষা ব্যবস্থায় গ্রেডিং

ডাচ শিক্ষা ব্যবস্থায়, প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় ব্যাপার গুলো নেই। আছে শুধু পাশ ফেইল। সেটা ও লেখে অত্যন্ত পরিশালীত ভাষায়। “ভাল” “যথেষ্ঠ” “যথেষ্ঠ নয়”। রেজাল্ট কার্ড হাতে নিয়ে পিতা মাতাদের একজনের সাথে আর একজনের তুলনা দেয়ার ব্যবস্থাটাও কম। রেজাল্ট হয় দু- তিন ধরে, প্রতিটি গার্জিয়ানের সাথে আলাদা এপয়ন্টমেন্টের মাধ্যেমে আলোচনা করে রেজাল্ট হাতে দেয়া হয়, তাই একজন গার্জিয়ানের সাথে আর একজন গার্জিয়ানের দেখা হওয়ারও সুযোগ হয় না। তার চেয়েও বড় হলো, বাচ্চারা সবাই ইউনিক, একজনের সাথে একজনের তুলনা হয় না, প্রত্যেকের মধ্যেই ভাল কিছু আছে সেটা সে বয়সেই তাদের শিখিয়ে দেয়া হয়। মেঘ কে কিছু বলতে গেলেই গলার রগ ফুলিয়ে বলবে, তুমি আমার সাথে অন্যের তুলনা করছো, জানো এটা কতো খারাপ?
প্রতিযোগিতাকে এখানে অসুস্থ মনে করা হয় বিধায় এটাকে অনুৎসাহী করা হয়।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই পাশ-ফেইল, বেশি নম্বরকম নম্বর, বই গেলানো নির্ভর এ  নিয়ে আমাদের সংস্কৃতির সাথে ওদের সংস্কৃতির যুদ্ধ ও হয়ে যায়।  
একবার মেঘলার ক্লাশে একজন ভারতীয় বাচ্চা পরীক্ষায় নম্বর একটু কম পাওয়াতে কাঁদছিলো। সাধারনতঃ বরাবর সে বেশ ভাল নম্বর পায়।
টিচার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছে, তুমি কাঁদছো কেন?
মেয়েটি বললো, আমি অন্যের চেয়ে নম্বর কম পেয়েছি, মা জানলে অনেক রাগ করবে।
টিচার আরো অবাক হয়ে বললো, কেন? কেন বকবে তোমাকে? কোন কোন বিষয় কি থাকতে পারে না যা তুমি অন্যদের থেকে কম জানতে পারো? সব যদি জানবেই তবে স্কুলে আসবে কেন? স্কুলে তো শিখতেই আসো, নাকি?
এমনও হয়েছে, এক ভারতীয় অভিভাবক স্কুলের টিচারকে বলেছে, তোমার ক্লাশে যা পড়ানো হয় সে সব তো আমার বাচ্চা সব জানে। তুমি ওকে ওপরের ক্লাশে দিয়ে দাও।
টিচার বিনয়ের সাথে বলেছে, তোমার বাচ্চা অনেক জানে বটে কিন্তু সব তো এখনও জানে না। তুমি ওকে আরামে আমার কাছে ছেড়ে দাও। ও কি জানে আর কি জানে না, সেটা আমি দেখে নেবো, সে জন্যে আমি আছি।
হাসতে হাসতে খেলতে খেলতে প্রাথমিক শিক্ষা বলতে যার গল্প ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি তার চাক্ষুস কিছুটা রুপ এখানে দেখতে পেয়েছি। একশ তিন জ্বর নিয়েও বাচ্চারা স্কুলে যেতে পাগল থাকে। নিজের মেয়েকেও ঔষধ সুদ্ধ স্কুলে দিয়ে এসেছি, টিচার বলেছে, বেশি খারাপ হলে আমি তোমাকে ফোন করে দেবো, এসে নিয়ে যেও।
স্পেন থেকে বেড়িয়ে এসেছি একবার, প্লেন থেকে নেমে বাড়ি এসেই মেঘ বললো, মা, এখন তো টিফিন পিরিয়ড, আমি স্কুলে চলে যাই?
সেই দিনটা ওর ছুটি নেয়া ছিলো স্কুল থেকে। ও বাড়ি থাকতে চাইলো না, আমি দুপুরে স্কুলে দিয়ে এলাম।
মেঘের ক্লাশে তিনটে গ্রুপ ছিলো। সবুজ, বেগুনি আর কমলা। আমরা আমাদের দেশীয় কায়দায় এগুলোকে মেধাবী, মাঝারি আর দুর্বল হিসেবে দেখার চেষ্টা করলে মেঘ আমাকে বললো, এরকম কোন ব্যাপার নয় মা।
সবুজ যারা তারা তাদের পড়া শেষ হয়ে গেলে, বেগুনিদের সাহায্য করবে। আর বেগুনি যারা তারা তাদের হাতের কাজ শেষ করে কমলা গ্রুপকে সাহায্য করবে। সবাই ভাল ক্লাশে, সবাই এক সাথে পড়বে, কিন্তু সবাই সবাইকে সাহায্য করবে। সবুজ যারা তারা তাদের পড়ার বাইরেও টিচার থেকে অন্য পড়া পাবে। ব্যাপারটা আদতে তাই, দুর্বল গ্রুপকে সবল গ্রুপ সাহায্য করবে কিন্তু ছোট বেলাতেই বাচ্চার ব্রেইনকে সুপারলেটিভ কিছু ঢুকিয়ে দিয়ে ওয়াশ করে দেয়া হয় নি। সবাইকে সমান সমান রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। যার যার ক্লাশ ওয়ার্ক আগে শেষ হয়ে যাবে সে এক্সর্টা পড়া পাবে মানে সবুজ গ্রুপ তাদের মেধানুযায়ী কিছুটা বেশিই পড়বে। অনেকটা স্বীকৃত মনটেসরি (Montessori) পদ্ধতি। কিন্তু সবুজ মানেই মেধাবী এই চিন্তাটা বাচ্চাদের মাথা থেকে সযতনে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

প্রাইমারি স্কুলে বাচ্চাদের কোন বই খাতা থাকে না বাড়ি থেকে ছোট একটা স্কুল ব্যাগে ওয়াটার বোটল, জুসের প্যাকেট, আর টিফিন বক্স নিয়ে যায়, নিয়ে আসে পড়ার উপাদান (Material) স্কুলেই থাকে, সেখানেই পড়ে, লিখে, সেখানেই জমা দিয়ে আসে ছোট ক্লাশে বেশীর ভাগই পাজল মেলানো, লেগো দিয়ে কিছু বানানো, ডুপ্লো, ছবি আঁকা, প্লে ডো দিয়ে বিভিন্ন কিছু তৈরী, রঙ করা, আপেলের সাথে আপেল দিয়ে, পিয়ারের সাথে পিয়ার দিয়ে গুনতে শেখানো, সারি শেখানো হয় টিচাররা বলে এ দিয়ে সূক্ষ্ণ ভাবে অঙ্ক শেখানো শুরু হয় প্রচুর পরিমানে রঙিন কাগজ সাথে কেঁচি, আঠা দিয়ে বাচ্চাদের দেয়া হয় ক্লাশে, এসো নিজে বানাই, যেটাকে কারু শিল্প বলি আমরা। প্রতি ক্লাশে বিশ থেকে পঁচিশটা বাচ্চা থাকে, আর দুজন টিচার। একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত আর একজন শিক্ষানবীশ, যে তার পড়াশোনার ব্যবহারিক পর্বটি তখন করছে। পাশ করে গেলে হয়ত এখানেই চাকরি হয়ে যেতে পারে।

কারু শিল্প ক্লাশের জন্যে মাঝে মাঝে পুরো দুপুরের পরিকল্পনা রাখা হয়। অনেক সময় বাবা মায়েদের কারু শিল্প দুপুরে সাহায্য করতে বলা হয়। বাচ্চারা আনন্দের সাথে দু হাতে, গায়ের এপ্রনে রঙ মেখে, আঠা মেখে পাখি, মুরগী, প্লেন, ফুল বানাতে থাকে। কোন বাচ্চার হাতের কাজ কতোটা পরিস্কার, সে কি ভাবছে, কোন দিকে ঝোঁক, কি দিয়ে খেলতে ভালবাসছে তা খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করে টিচাররা তা লিখে রাখে। এখানে বাচ্চাদের রিপোর্টের তিনটে ভাগ হয়, সামাজিক উন্নয়ন, মানসিক উন্নয়ন আর পড়াশোনা। ডাচ এডুকেশানে একজন মানুষের জন্যে এই তিনটা ভাগই অত্যন্ত জরুরীসামাজিক উন্নয়ন ভাগে থাকে বন্ধুদের প্রতি আচরণ, ক্লাশের অন্যদের সাহায্য ইত্যাদি, স্কুলের অন্যদের প্রতি ব্যবহার, মানসিক উন্নয়ন বিভাগে দেখে, বাচ্চার নিজের ভাল লাগা, মন্দ লাগা তার বয়সানুযায়ী হচ্ছে নাকি, তার হাসি, কান্না, রাগ আবেগ তার বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে উঠানামা করছে কি না, শারীরিক গঠন, উন্নয়ন সব দেখা হয় আর পড়াশোনাতে দেখা হয় তার মেধানু্যায়ী সে আশানুরূপ ফলাফল করছে কি না। সবুজ গ্রুপের সাথে কমলা গ্রুপের তুলনা নয়, কমলার মধ্যে তার কর্মক্ষমতা কেমন। এই বয়স থেকেই কোন বাচ্চা ভবিষ্যতে কি ধরনের পড়াশোনা, পেশায় যেতে পারে, সাফল্য আসবে কোন দিকে সেই দিকটি নির্নয় করা হয় বা দিক নির্দেশনা দেয়া বা ধরা হয়ে থাকে।

যদিও প্রাইমারী স্কুল শেষ হওয়ার আগে সরকারী ভাবে সারা দেশ জুড়ে একটি মেধা নির্নয় পরীক্ষা নেয়া হয়। সেই পরীক্ষার ফলাফল আর ক্লাশের পরীক্ষার ফলাফল দুটোকে তুলনা করে সেকেন্ডারী স্কুলের গ্রেড নির্নয় করা হয়। কেউ যদি কোন কারণে সরকারী পরীক্ষা রেজাল্ট খারাপ করেও ফেলে তাহলে স্কুলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে, সরকারী পরীক্ষার মার্কস নয় আবার উল্টোও হতে পারে। সেকেন্ডারী স্কুলে মেধাবী, মাঝারী, কম মেধাবী হিসেবেই ক্লাশ করানো হয়। তবে সেটা যে কোন সময় পরিবর্তন হতে পারে। মেধাবী হিসেবে কেউ গ্রেড পেয়ে লাগাতার পরীক্ষা খারাপ করলো তবে তাকে মাঝারী’তে নামিয়ে দিতে পারে। আবার মাঝারিতে ভাল রেজাল্ট করলে মেধাবীতে তুলে দিতে পারে। সব সময় বাচ্চার ক্যাপাবলিটাকেই দেখা হয়। এটা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্তই আসলে চলতে থাকে। পারছো না জায়গা ছেড়ে দাও, তুমিও কমর্ফোটেবল থাকো, অন্যেও সুযোগ পাক। হতাশা দিয়ে, বিষাদ দিয়ে জীবন গড়ো না। পড়াশোনায় হচ্ছে না, টেকনিক্যাল লাইনে দেখো, কিংবা আরো অন্য কিছু। এতো বড় জীবনটাকে, বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ করে দিও না।  

প্রাইমারীতে বাচ্চাদের স্কুল ব্যাগ এর একটি নমুনাঃ 


Wednesday 11 January 2017

সাম্প্রতিক বির্তকঃ নারীবাদী বনাম মানবতাবাদী

http://seralekha.com/news/%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%80-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%80



একটি গালি খাওয়ার পোস্ট

সাম্প্রতিক বির্তকঃ নারীবাদী বনাম মানবতাবাদী

বন্ধুরা ভিন্ন মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখবে এই আশাতেই আমার বক্তব্য লেখা আলোচনাযুক্তি আসবে, কিন্তু গালি, মনোমালিণ্য, বন্ধু বিচ্ছেদ প্রার্থণীয় নয় ব্যক্তিগত কোন আলোচনা কিংবা বিষয় ও এটি নয়, এটুকু বন্ধুরা বুঝে নেবে সেই আস্থা রাখছি

ছেলে বন্ধুরা ট্রল করছে, কোননারীবাদীদেখে নি যার মুখেমেকাপনেই কেন রে ভাই, মেকাপ করলে কি কালো কে কালো আর সাদা কে সাদা বলা বারণ? কোন শাস্ত্রে আছে সেটা? সুন্দর সাজলে, শাড়ি পরলে চলমান অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যাবে না? দুইয়ের মধ্যে বিরোধ কোন জায়গায়? পোশাক কি হবে, শাড়ি না জীন্স সেটা ব্যক্তিগত কমফোর্টের ব্যাপার, আবহাওয়া আর পরিবেশে ও ম্যাটার করে। নাগরিক অধিকার হিসেবে সচেতনতা কি পোশাক কিংবা মেকাপের ওপর নির্ভর করে নাকি? আর এ কথাই বা প্রতিষ্ঠিত হবার কারণ কি, যারা যারা নিজের অধিকার সর্ম্পকে সচেতন তারা আলাদা ধরনের মানুষ, তাদের পোশাক বা আচরন আলাদা হতে হবে!
প্রসঙ্গত একটা গ্রুপের আলোচনা মনে পরছে, কেউ একজন এ ধরনের একটা বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছিলো, উচ্চ পদে আসীন, প্রতিষ্ঠিত নারীদের হীরের গয়না, দামী শাড়ি এগুলো মানায় না। এগুলো ধনীর গৃহ বঁধূদেরই বেশি মানায়। সেখানেও প্রতিবাদ করেছিলাম, হীরের গয়না, আইফোন, বিজনেস ক্লাশে ভ্রমণ, পাঁচ তারা হোটেলের আয়েশ এগুলো যার যার ব্যক্তিগত অভিরুচি। কাকে কি মানাবে কিংবা কার কি প্রায়োরিটি জীবনে সেটা বাইরে থেকে ঠিক করে দেয়ার, কিংবা এ ধরনের প্রথা তৈরী করে দেয়ার আমরা কে? এই জাজমেন্টাল দৃষ্টি ভঙ্গীর পরিবর্তন আসার কি সময় আসে নি? মেয়েদের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হওয়া একটা আলাদা কিছু সেটা আর কতকাল একটা ব্র্যাকেটের মধ্যে থাকবে? হীরের গয়না’র শখ বা বিজনেস ক্লাশে ভ্রমণের শখ কেন ত্যাগ করতে হবে এই অপরাধে? কারো কাছে মনে হতেই পারে, আমার সামর্থ্য আছে আমি আরাম করে ভ্রমণ করবো, আই ওয়ার্কড ফোর ইট। আবার কেউ ভাবতে পারে না সে টাকায় আমি অনেক বিলাসী হোটেলে থাকবো, আমার সেটাই বেশি পছন্দ।

কাল বলেছি পাহাড়চূড়াই ভালো আজ হয়তো সমুদ্রটাই চাই
দুয়ের মধ্যে বিরোধ তো নেই কিছু মুঠোয় ভরি গোটা ভূবনটাই

মেয়ে বন্ধুরা ট্রল করছে, “মানবতাবাদী” শব্দটি নিয়ে। হ্যাঁ আমিও স্পষ্টই ভাবছি, “নারীদিবস”, “মেয়েদের মেধাতালিকা”, “মেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতা” “নারী প্রধানমন্ত্রী” “নারী লেখিকা” ইত্যাদি শব্দ গুলো কে পেছনে ফেলে সামনে তাকানোর সময় আমাদের এখন হয়েছে। “প্রধানমন্ত্রী” একটি পদ যা যোগ্যতা দিয়ে আয়ত্ব করতে হয়, এর মধ্যে নারী পুরুষের প্রসঙ্গ আশা খুবই অবান্তর। “স্টেফি গ্রাফ” একজন “স্টেফি গ্রাফ” কারণ তিনি খেলায় অন্য ধরনের হারিয়েই “স্টেফি গ্রাফ” হয়েছেন, নারী হওয়ার কারণে নয়।

তাহলে এখন প্রশ্ন, সমাজে কি নারী – পুরুষের কোন বৈষম্য নেই তবে?

কবিতায় ফিরি আবার,  

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে ?
মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন "মানুষ হইতে হবে" --- এই তার পণ

বৈষম্য কোথায় না আছে? সাহিত্য – সংস্কৃতি যাকে সমাজের দর্পন হিসেবে ধরা হয়, তাতে শরৎচন্দ্র থেকে বঙ্কিম, তারাশঙ্কর থেকে রবি ঠাকুর মেয়েদের সাজগোজ আর রান্নাবান্না, সেবাযত্ন, বড়ি আচারে’র ওপরই আলোকপাত করে গেছেন। এখনো সিনামের হিট গান মানে, মেয়েদের ট্রল করা। গাউছিয়া, বইমেলা, বৈশাখের উৎসব মানেই মেয়েদের হেনস্থা। তনু, খাদিজা, পূজা তো এই বৈষম্যেরই বলি। পুলিশ অফিসারের স্ত্রী হয়েও রক্ষা পায় নি “মিতু”। মেয়েটি যতই প্রগতিশীল চিন্তা ভাবনা রাখুক না কেন, এক সাথে চারজন ছেলে ঘিরে ধরলে কীভাবে আত্মরক্ষা করতে হবে সেই প্র্যাক্টিক্যাল শিক্ষাটাই এখন তার জন্যে জরুরী। শুভ সংবাদ হলো, অনেকেই এই ব্যাপারটা অনুধাবন করেছে এবং মেয়েরা এখন আকছার মার্শাল আর্টের ক্লাশ করছে। অত্যাচারের প্রতিবাদ হতে হবে শক্তি। কেউ এক ঘুষি মারলে তাকে তিন ঘুষি মেরে শুইয়ে দেয়ার মত শক্তি অর্জন করতে হবে।

প্রতিকূলতা মেয়েদেরই বেশি, সর্ব সমাজে। কারণ মেয়েদের গর্ভ ধারণ করতে হয়। নারী শরীরই নারীর প্রধান প্রতিকূলতা যা প্রকৃতি তাকে দিয়ে দিয়েছে। তার প্রতিবাদের ভাষাও অন্যরকম হতে হবে। এই বিজনেস ওয়ার্ল্ডে কেউ কাউকে পাশ দেয় না তাই কারো কাছ থেকে কোন সহানুভূতি কিংবা সাহায্যের আশা দূরাশা মাত্র। আবার এখানে কেউ কাউকে আটকেও রাখতে পারে না তাই ইচ্ছে থাকলে কারো সাহায্য ছাড়াও এগোনো সম্ভব। আমি “নারী” আমাকে পাশ দাও, কিংবা আমাকে অত্যাচার করো না, এ ধরনের কিছু আসলে কি কাজে এসেছে না আসে? নিজের যোগ্যতায় যারা সামনে এগোচ্ছে তারা জানে জায়গা তৈরী করে নিতে হয়। এর উদাহরণ হিসেবে বহু নারীর নাম নেয়া যায় আমাদের বাংলাদেশেই। “নারীবাদী” বলে নিজেকে আলাদা ট্যাগ না দিয়ে, বরং নিজেকে কাজে প্রমান করে দেয়াটাই হবে কাজের কাজ। “মেয়েদের” মধ্যে আমি প্রথম হওয়ার চেয়ে “সবার” মধ্যে আমি প্রথম হওয়াটাই আমার দৃষ্টিতে অন্তত শ্রেয়।

আমাদের সময় ঢাকা ভার্সিটিতে এটা খুবই প্রতিষ্ঠিত ছিল, দু’ একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে “ফার্স্ট ক্লাশ” মেয়েদের দখলে ছিলো কারণ মেয়েরা প্রচন্ড উচ্চাকাংখী ও পরিশ্রমী ছিলো যেটা ছেলেরা ছিলো না। তারা আড্ডা দিয়ে, মিছিল করে, মেয়েদের পেছনে বখাটেপনা করে সময় নষ্ট করতো।

তবে, আলোচনা খুবই দরকারী, সময়পোযোগীকিছুটা সামনে আমরা এগিয়েছি কিন্তু আরো সামনে আসতে হবে। এতো বাস্তব থেকে উদাহরণ টানে আজকাল সবাই। হ্যাঁ আমিও বলছি, বিয়ে করে মেয়েকেই শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে কেন? মেয়েকেই কেন ছেলের বাড়ির সাথে মানিয়ে নেয়ার স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে? সব দায় কেন মেয়ের ওপর বর্তায় বা বর্তাবে? এই আলোচনা, প্রতিবাদ, সচেতনতা তৈরীর চেষ্টা আমাদেরকে চালিয়ে যেতে হবে।

আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে!'

হায় কপাল আমার, এখানেও ছেলেকেই বলা হয়েছে নতুন সূর্য আনতে। সেই উদাহরণ টেনেই বলছি, জানি সমাজ একদিনে পরিবর্তন হয় না তাই লড়াই চলতেই থাকবে। বারবার বারবার কথাগুলো উচ্চারণ করতে হবে যাতে মানুষের চিরাচরিত চিন্তায়, প্রথায় আঘাত পরে, চেতনা হয়, বৈষম্য গুলো অনুধাবন করতে পারে, নজরে আসে। তবেই যদি কিছু হয়। সেই ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিংবা রাজা রামমোহন রায় তো আর নেই যারা আমাদের হয়ে লড়তে আসবেন। ঠাকুর বাড়ি ও নেই সমাজকে তোয়াক্কা না করে মেয়েদের – বউদের পড়াশোনা, গান বাজনা চর্চার সুযোগ দেবে। যদিও ঠাকুর বাড়ি কখনোই মূল সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে নি। তারা সকল থেকে আলাদা তাদের সমাজ গড়ে নিয়েছিলো

আজকের শ্লোগান হোক আবারো, মানুষ হওয়ার শ্লোগান।

আর নারী নয় আর পুরুষ নয়
পথে যখন নেমেছি তখন সকলই মানুষ হয়
হবেই হবে জয় একদিন নিশ্চয়

১১/০১/২০১৭