Sunday 11 April 2010

শুভ নববর্ষ ১৪১৭

বাংলা নতুন বছর উদযাপনের প্রতি আমার আগ্রহ অসীম। কেনো এই টান আমি নিজেও জানি না। এমনিতেই আমি পার্টি এ্যনিম্যাল কিন্তু বাংলা নতুন বছর নিয়ে আমার যেটা হয়, সেটা হলো উন্মাদনা। এ উন্মাদনা নিয়ে অনেক মজার এবং বেমজার ঘটনাও ঘটে।

একবার ঠিক করলাম রমনা বটমূলে সকাল ছয়টায় বর্ষবরন করতে যাবো। ঘুম থেকে উঠতে যদি না পারি তাই ভাবলাম রাতে ঘুমাবোই না। এমনিতেই পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে মাত্র কদিন আগে এখানে থেকে দেশে গিয়েছি, তাই না বলা গল্পের ঝুড়ি দুই প্রান্তেই অফুরন্ত। আমরা সারারাত ধরে সকালের শাড়ি চুড়ি সাজগোজ ঠিক করলাম, তারপর বসলাম হাতে মেহেদী দিতে। সাথে গান বাজনাতো আছেই। এ সময়টায় ঢাকায় বড্ড ঘন ঘন লোডশেডিং হয়। যত সম্ভব রাত তিনটার দিকে আবার কারেন্ট চলে গেলো। অনেক গরম তাই আমি ভাবলাম ঘরের লাগোয়া বারান্দায় একটু বসি, বাতাস আসবে। আমার ছোট দুবোন চার্জার নিয়ে রান্নাঘরে গেলো চা বানাতে।

আমি বারান্দায় বসে আছি, আমাদের রুমটা বাড়ির পেছনের দিকে। আমাদের ঠিক পাশের বাড়ির লোকরা তাদেরও সেই পেছনদিকের ঘরগুলোতে মেস করে ব্যচেলরদের ভাড়া দিয়েছেন। আমি অন্ধকারে দেখতে পাচ্ছি, জোনাকির মতো কিছু ওঠানামা করছে। অন্ধকার চোখে সয়ে গেলে বুঝলাম, সিগ্রেট। কারেন্ট নেই, ভ্যাপসা গরম, ঘুমানোর মতো কোন অবস্থা কারোই নেই। তারা স্যান্ডো গেঞ্জী গায়ে দিয়ে বাইরের খোলা হাওয়ায় ঘুরছেন। আমাকে অন্ধকারে তাদের দেখতে পাওয়ার কোন কারন নেই। যদিও আমি বারান্দার গ্রীলের ফাঁক দিয়ে নীচু হয়ে তাদের দেখতে পাচ্ছি। রাত নিঝুম তাই চারপাশের শব্দ পরিস্কার শোনা যায়।

তারা নিজেদের মধ্যে আমাদের নিয়ে আলোচোনা করছেনঃ

প্রথমজনঃ দ্যাশটার কি হইলো? রাইতের বাজে তিনটা মাইয়াগুলা এখনো গান বাজনা করতাছে?

দ্বিতীয়জনঃ অপসংস্কৃতি অপসংস্কৃতি, অশ্লীল

আরেকজনঃ (খুবই অভিজ্ঞতার সুরে) এইজন্যই মুরুব্বীরা আগেরদিনে কইতো বয়সকালে মাইয়াপুলার বিয়া দিতে হয়, বয়সকালে মাইয়াপুলার বিয়া না হইলে, এইগুলার মাতা নষ্ট হইয়া যায়, রাইতে বিরাইতে এইগুলা গান বাজনা করে।

অন্যরা সবাই তাদের মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে তার বেদবাক্য সায় দিচ্ছেন।

আমি কোন রকমে হাসি চেপে মাথা নীচু করে ঘরে এসে (যাতে তারা আমাকে দেখতে না পায়) আমার ভাই আর স্বামীকে আমাদের বয়সকালে বিয়ে না হওয়ার গপ্পোটা দিলাম। যতোবার নতুন বছর ঘুরে আসে, সবচেয়ে প্রথমে আমার এ নাম না জানা কজন লোকের বেদবাক্যি গুলো মনে পড়ে।

তারচেয়ে বড় আইরোনি হলো, সেদিন কি আমরা সূর্যোদয়ের সময়ে বটমূলে পৌঁছতে পেরেছিলাম? না ভাই না। সারারাত গুলতানি করে ভোরের দিকে সবাই এদিক সেদিক কাত। আমাদের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে আব্বু আমরা কি চলে গেছি না দেখতে এসে আমাদেরকে বেলা আটটায় ঘুম থেকে টেনে তুলেছিল
Cry

যাক আবার নতুন বছর আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। নতুন বছরের শুরু হবে কিছু নতুন চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্খা আর বেদনা নিয়ে। সুস্বাগতম হে নতুন তোমায়।

http://www.youtube.com/watch?v=-Uw2fhBiULc

তানবীরা
২৯শে চৈত্র ১৪১৬।

No comments:

Post a Comment