Tuesday 19 October 2010

শুধুই গল্প নয়

আজকে ভাঙ্গা পেন্সিলের লেখা “দাস” পোষ্টটা পড়তে পড়তে বহুদিন আগে শোনা একটা গল্প মনে পরে গেলো। তখন গল্প হিসেবে শুনলেও এখন মনে হচ্ছে সবকিছু কেনো গল্পই হতে হবে? গল্পকে সত্যি করার দায়িত্বতো আমাদেরই। গতবছর হল্যান্ডে বাংলাদেশ সার্পোট গ্রুপের www.basug.nl রেমিট্যান্স বিষয়ের একদিনের একটি ওয়ার্কশপে আমি অংশগ্রহন করেছিলাম আরো অনেকের সাথে। ওয়ার্কশপের মূল বিষয় ছিল, আমরা প্রবাসীরা যে পয়সা দেশে পাঠাই সেটা কোন খাতে আমাদের পরিবার পরিজনরা ব্যবহার করছে সেটার প্রতি প্রবাসীদের সচেতনতা তৈরী করা। প্রয়োজনবোধে দেশে পরিবারকে শিক্ষিত ও সচেতন করা যে শুধু ভোগ বিলাসে পয়সা না খরচা করে বিনিয়োগ করার জন্য। ইনাফী INAFI (The International Network of Alternative Financial Institutions ) দেশে যারা রেমিট্যান্স ভোগ করেন এমন কিছু পরিবারের ওপর এবিষয়ে জরিপ চালিয়ে যে ডাটা কালেক্ট করে নিয়ে এসেছেন সেটির ফলাফল আমাদের ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ। প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের বেশির ভাগ অংশ যায় কাঁচা বাজার, বড় নার্সিং হোম, শপিং মল আর বিলাস বহুল যানবাহনে। বিনিয়োগের চেয়ে আমাদের রেমিট্যান্স ভোগে বেশি ব্যয় হয়।

বাসুগ একই সাথে আরো রেমিট্যান্স ব্যবহারকারী দেশের লোকদের আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা আমাদেরকে জানানোর জন্য, কিভাবে রেমিট্যান্সের উপযুক্ত ব্যবহার করে তারা আজ তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। এমনই একজন ছিলেন ফিলিপিনের। তার নামটা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না, কিছু পুরনো মেইল জিমেইল থেকে ডিলিট হয়ে গেছে। ভাবছি তার নামের চেয়েও তার কথাগুলো গুরুত্বপূর্ন সেগুলো স্মৃতি থেকে তুলে দেই। এশিয়ার ফিলিপিনের অবস্থা কিন্তু বাংলাদেশ থেকে খুব ভালো ছিলো না। ফিলিপিনের প্রচুর লোক বাইরে খাটেন। মধ্যপ্রাচ্যের গৃহকর্মীর কাজটি একেবারে ফিলিপিনো মেয়েদের জন্য বাধা ছিল এক সময়। যে ভদ্রমহিলা এখন নেদারল্যান্ডসে থাকেন, কাজ করেন তিনিও এসেছিলেন খুব দরিদ্র নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। কিন্তু তার পরিবারে কেউ একজন কখনো স্কুলে গিয়েছিলেন। এবং পরিবারের লোকদেরকে তিনি বোঝাতে সর্মথ হয়েছিলেন যে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু তাদের টাকা ছিলো না যে সবাই একসাথে পড়াশোনা করবেন।

তখন তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রথম জন প্রথম পড়াশুনা করবেন। তার পড়াশুনা শেষ হলে তিনি যখন অর্থ উপার্জন করবেন তিনি দ্বিতীয় জনকে পড়াশোনা করাবেন। দ্বিতীয়জন করাবেন তৃতীয়জনকে। পড়াশোনার জন্য যেহেতু বয়স কোন বাধা নয় তাই এভাবেই তারা এগিয়ে যাবেন। সবচেয়ে ছোট যে জন সে পড়াশোনার খরচ দিবেন দ্বিতীয় জেনারেশনের প্রথম জনকে। বাড়ির মেয়েদের প্রতি নির্দেশ ছিল গ্রাজুয়েশন শেষ করার আগে কেউ গর্ভধারন করতে পারবে না। এখন তিনি গর্বিতভাবে তার অভিজ্ঞতার কথা আমাদের জানালেন। দীর্ঘ আঠারো বছর তিনি তার পরিবারের পড়াশোনার জন্য টাকা পাঠিয়েছেন। এখন তিনি দায়িত্ব থেকে মুক্ত। কখনো কোন উৎসবে উপহার পাঠাতে ইচ্ছে হলে তিনি পাঠান নতুবা পাঠাননা। পরিবার এখন স্বয়ংসম্পূর্ন। তার টাকার আশায় আর কেউ নেই, এ চিন্তাটা তাকে মানসিক স্বস্ত্বিও দেয় যেটা তার আগে ছিলো না।

এধরনের কিছু কি আমাদের দেশে একেবারেই অসম্ভব? আমরাই কি কেউ শুরু করতে পারি না? বোঝাতে পারি না আমাদের আশে পাশের লোকজনদেরকে শিক্ষার গুরুত্ব? আমাদের অনেকের বাড়িতেই অল্পবয়সী গৃহকর্মী আছে, তাদের দিয়েই কি শুরু করতে পারি না? এরকম কোন ওয়ার্কশপে আমাদের দেশের কেউই হয়তো তার সাফল্যের গর্বিত উদাহরন অন্যদের জানাবেন। হয়তো এটা শুধুই আমার একটা আবেগতাড়িত ভাবনা কিন্তু সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করলো। কে জানে কোথাও যদি কোন দীপ জ্বলে?

তানবীরা
২০.১০.১০

No comments:

Post a Comment