Monday 24 September 2012

কৃষ্ণে করলে লীলা




মের্থে নামে একটি স্কুল পড়ুয়া মেয়ে ফেসবুকে তার ষোল বছরের জন্মদিন উদযাপন করার জন্যে ২১শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার ইভেন্ট ক্রিয়েট করে তার বন্ধুদের দাওয়াত করেছিল। বেচারী মেয়েটি ভুলে গেছিলো তার ইভেন্টে “প্রাইভেট অপশন”টা ক্লিক করতে। এর ফলশ্রুতিতে ২৪০০০ হাজার ডাচ নাগরিক নিজেদেরকে তারা মের্থের সুইট সিক্সটিন উৎসবে নিজেদেরকে দাওয়ার করে নিয়েছেন। যার মধ্যে থেকে ২৪০০ বলেছেন তারা সে উৎসবে যোগ দিবেনই। জন্মদিন উৎসবের নাম হয়ে গেলো সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া সিনেমার নামানুসারে “প্রোজেক্ট এক্স”। এতে ভয় পেয়ে মের্থে তার বাবা মাকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেলো জন্মদিন উদযাপন করার জন্যে। পুলিশকেও খবর দেয়া হয়েছিল। পুলিশ বললেন, তখন তাদের কিছু করার নেই, ভানুর মতো মোঁচে তা দিয়ে বসে রইলেন “দেখি না কি করে”। ফলশ্রুতিতে যা হওয়ার তাই হলো। “হারেন” নামের উচ্চবিত্তদের বসবাসের গ্রামটিতে যেখানে সর্বসাকুল্যে চারহাজার মানুষের বাস সেখানে এক সন্ধ্যায় তিন হাজার বাউন্ডুলে যেয়ে উপস্থিত হলো। 


পুলিশ বাধা দিয়েও তখন কুলাতে পারছিল না। ৮৪ বছরের এক বৃদ্ধের বাগান নষ্ট করছিলেন কিছু তরুন উল্লাসে, তাতে বাঁধা দেয়াতে সেই বৃদ্ধকে তার বাড়িতে মেরে রক্তাক্ত করে আহত করে রেখে গেছেন তারা। জায়গায় জায়গায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে, সাইকেল ভেঙ্গে, দোকান - সুপার মার্কেট ভেঙ্গে, লুটপাট করে তাদের আনন্দ উল্লাস উদযাপন করেন তারা। সিনেমার পুলিশের মতো ডাচ পুলিশও এখানে শেষ দৃশ্যে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেন। অনেকেই সমালোচনা করছেন প্রথমেই কেনো সেই গ্রামের মেয়র তৎক্ষনাত ব্যবস্থা নেয়া যায়, এমন কোন আইন বলবৎ করলেন না, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করলেন না। প্রশাসনের প্রাথমিক নিশ্চুপতা আর গ্রাম জুড়ে তরুন্দের সীমাহীন তান্ডব এখন “টক অফ দ্যা কান্ট্রি”। তান্ডবকারী ত্রিশ জন আহত অবস্থায় নিজেদেরকে হাসপাতালে এডমিট করিয়েছেন। প্রকৃত আহতদের সংখ্যা জানা নেই। বিশ জনের মতো তরুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ এখন সবাইকে বলছেন যাদের কাছে তান্ডবের যতো ছবি, ভিডিও আছে তা জমা দিতে পুলিশের কাছে, তা দেখে দেখে অপরাধী সনাক্ত করা হবে। আর সবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানাতে বলছেন পৌরসভা।





এধরনের একটা ঘটনা তৃতীয় বিশ্বে ঘটলেও ঘটতে পারে। সেখানে ছেলেমেয়েদের জীবনে আনন্দের অভাব। 
স্কুলে, কলেজে, হাসপাতালে, লাইব্রেরীতে যে পরিমান সুযোগ সুবিধা এখানে দেয়া হয় তাদের, আমাদের দেশের বিত্তশালী পরিবারের বাচ্চারাও তা চোখে দেখে না। এখানে যে পরিমান পকেটমানি তরুন তরুনীরা শুক্রবার – শনিবার পাবে খরচা করে, শুধুমাত্র বিয়ার খেয়ে, তা দিয়ে অনায়াসে বাংলাদেশের মতো এধরনের দেশে চার-পাঁচজনের একটা পরিবার মাস কাটাতে পারেন। তাহলে কিসের জন্যে, কি না পাওয়ার বেদনায়, কি কারণে এই উন্মাদনা? শুধুই তাৎক্ষনিক কিছু এক্সাইটমেন্ট? তাইই যদি হয়, বলবো, আমাদের দিকে নেতিবাচক দৃষ্টি দেয়া তাহলে পশ্চিমাদের এখন বন্ধ করতে হবে। এতো নিয়ম নীতির বেড়াছেড়া দিয়েও যখন তারা তাদের সন্তানদের এই তৈরী করেছেন তাহলে প্রযুক্তি, পয়সা, প্রার্চুয্য সবকিছুর অভাবে থেকেও আমাদের সন্তানেরা আরো উন্নত আচরন শিখেছে। কারো জন্মদিনের উৎসবের দিনে নিরাপত্তার অভাবে বাবা মাকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার কারণ হয়তো আমাদের গরীব দেশে এখনো ঘটেনি। আমাদের দেশে কোন বাড়িতে বিয়ে হলে পাড়াময় সবাই জানে। এই ধরনের “প্রোজেক্ট এক্স” উৎসবের তান্ডব শুরু হলেতো গুষ্টিশুদ্ধ বিয়ে বন্ধ করে মেয়ে নিয়ে বাবা মাকে পালিয়ে যেতে হতো। সব কথায় আমাদের দুর্নীতি, আমাদের দেশ, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তর আলোচনা আর সমালোচনা। সুযোগ পেলে তারা যে কি করবেন তাতো বোঝাই যায়। ইজতেমায় কিংবা ঈদে আমাদের রেলে চড়া যাত্রীদের ছবি ছাপিয়ে দিয়ে মজা করেন তারা। গরীবের সবটাই দোষ আর মজা। তাইতো কইতে হয়, কৃষ্ণে করলে সবটাই ভগবানের লীলা  



http://www.bdnews24.com/bangla/details.php?cid=4&id=198219

তানবীরা
২৪.০৯.২০১২

No comments:

Post a Comment