তুমি বড্ড ভাগ্যবান শুভঙ্কর।
হঠাৎ এতো উদাস কেনো নীরা?
শুধুমাত্র সৌভাগ্যবানরাই ছায়া
সুনিবিড়,
শান্তির নীড়ের গ্রামে জন্মানোর সুযোগ পায়।
“ যেখানে অবারিত সবুজের প্রান্ত ছুয়ে,
নির্ভয়ে নীলাকাশ রইবে নুয়ে”
নীল আকাশের নীচে অসীম প্রান্ত ধরে
দৌড়ে ফড়িং ধরবে, পুকুর বা নদীর অথৈ পানিতে অবাধ্য
ঝাপাঝাপি করে সাঁতার কাটবে।
মন উদাস হলে খেয়া নৌকায় বসে বাঁশি
বাজিয়ে চলে যাবে কোন গহীন প্রান্তরে, যেখানে গাছের লতা তাকে আড়াল করে রাখবে সারা পৃথিবীর নির্মমতা থেকে। হালকা লিলুয়া বাতাস লজ্জাবতী লতা হয়ে গা ছুঁয়ে
যাবে আর বাঁশির করুন সে সুর উন্মনা করে তুলবে না দেখা কোন কিশোরীর শিমূল তুলো
সম নরম হৃদয়কে।
আমি নিতান্ত শহুরে মেয়ে, বদ্ধ দেয়ালে কেটে গেছে জীবন। খোলা আকাশ দেখেছি, বাড়ির জানালা দিয়ে।
সবুজ পাতার সজীবতা ছুঁয়েছি টবে লাগানো গাছে। সাজানো গোছানো
সে জীবনে প্রকৃতির উদ্দামতার ছোঁয়া লাগেনি বললেই চলে ...
গ্রামকে পাগলের মত ভালবাসি আমি।
গ্রামের বৃষ্টি কী সুন্দর হয়, জানো
নীরা? একটানা মুষল ধারে ঝরে যেতেই থাকে। চারধারে যা ধূলো জমে থাকে তা কেটে প্রকৃতি
হয়ে যায় একদম সদ্য জন্মানো শিশুটির মত নিস্পাপ আর পবিত্র। সবুজ পাতা ছুঁয়ে টপ টপ
করে পরতে থাকে সেই জল। রাস্তা ঘাট জল কাঁদা মগ্ন। মাটি ছেড়ে উঠে আসে অদ্ভুত নাড়ি
ছেড়া এক সোঁদা গন্ধ।
গ্রামের ছেলেরা কী করে জানো? এক সাথে
সবাই ফুটবল খেলে। জল – কাঁদা মেখে খেলার সে কী উত্তেজনা। আমরাও খেলতাম মনসা পূজার
সময়। গোটা পরিবার পূজো উপলক্ষ্যে এক হতাম।
একবার মনসা পূজায় তোমাকে নিয়ে যাবো
আমাদের গ্রামের বাড়িতে। দোতলা বাড়ি, শান বাঁধানো পুকুর ঘাট। তোমার খুব ভাল লাগবে
দেখো। কাকিমা – জেঠিমাদের সাথে তুমি উনোনের ধারে থাকবে, পাট ভাঙ্গা শাড়ি আর হাত
রাঙা করে চুড়ি পরে। আমি ফুটবল খেলে সারা গায়ে কাঁদা মেখে এসে তোমাকে জড়িয়ে ধরবো
.........
উচ্ছসিত
শুভঙ্করের বন্য প্রতিশ্রুতিতে নীরা ভাল লাগায় মিশে গেলো। হারিয়ে গেলো সে না দেখা
সেই গ্রামের তেপান্তরের মাঠে, বৃষ্টি, কাঁদায়। যেখানে ঝপ ঝপ করে ঝরে পরা বৃষ্টির
জল পুকুরের বুকে মিলে মিশে লীন হয়ে যায়।
মধুর সে
দৃশ্য কল্পনায় বিভোর নীরা কোন জবাব দিতে পারলো না
এখনো আকাশ যখন সব কিছু হারানোর বেদনায় ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে থাকে ... দিন রাত
একটানা কান্নায় রাস্তা ঘাট সব প্লাবিত হয়ে যায়, নীরা জানালার গ্রীল, বারান্দার
গ্রীল ধরে অপেক্ষা করে থাকে ......
একজন বলেছিলো, গায়ে কাঁদা মেখে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরবে --- সে দিনের
অপেক্ষায় আমি আজও আছি
সে ভুলে গেছে ...।
সে ভুলে ভুলুক,
কোটি মন্বন্তরে আমি ভুলিব না,
আমি কভু ভুলিব না ।
তানবীরা
৩০/০৬/২০১৬
৩০/০৬/২০১৬
No comments:
Post a Comment