মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের শিক্ষামন্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভাইস চ্যান্সেলর, আইজিপি সহ অনেক মান্যবর ব্যক্তিত্বই সমানে মানব
জীবনে ধর্মীয় শিক্ষার অপার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছেন আজকাল। বলে যাচ্ছেন, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া – কোন শিক্ষা পূর্নাংগতা
পায় না। তারা কোন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পূর্নাংগ ধরে এই সিদ্ধান্তে
আসলেন জানতে ইচ্ছে করে।
সেন্ট্রাল ইউরোপ, মূল ইউরোপের ধনী শ্রেণি। এদিকের বেশীর ভাগ মানুষই
ধর্মহীন। এখানে কোন স্কুলে, চার্চে ধর্ম শিক্ষা দেয়া হয় না।
ক্রিসমাস, ইস্টারেও কেউ সাধারণতঃ চার্চে যায় না। অথচ, ইউরোকে মান ধরলে ডলারকে
পেছনে ফেলে দিয়ে চলছে এরা অনেকটা সময় ধরে। এরা নিজেরা তো ভাল আছেই, মারা যাবে
জেনেও সমানে শরনার্থীদের সাহায্য দেয়া থেকে শুরু করে এমন কোন মানব হিতকর কাজ নেই
যাতে এরা পিছিয়ে আছে। তাহলে কী ধরে নেবো অপূর্নাংগ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকেই এই
মানবিকতা, কর্ম দক্ষতা, পরোপোকারীতা’র মত মহৎ গুন গুলো উঠে আসছে। পূর্নাংগ শিক্ষা
ব্যবস্থা তাহলে স্বার্থপরতা শেখায়? দরকার হলে নিজে মরে ও অন্যকে মেরে দাও তাহলে
পরকালে তোমার অনন্ত জীবনের ইন্স্যুরেন্স হয়ে গেলো!
নেদারল্যান্ডসে প্রাইমারী স্কুলে বাচ্চাদের গার্জিয়ানদের নিয়ে কমিটি থাকে যারা স্কুলের
সাথে মিলে বাচ্চাদের ক্যাম্পিং, কার্নিভাল, ক্রিসমাস পার্টি এগুলোর আয়োজন করে
থাকে। ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে কোন প্রার্থণা বা ধর্মীয় উৎসব থাকে না স্কুলে। শুধুমাত্র স্কুল সাজানো হয়, যার মধ্যে আলোকসজ্জাটাই থাকে প্রধান আর সাথে ক্রিসমাস ট্রী। নভেম্বর – ডিসেম্বরে এখানে এত্তো ঘুটঘটি অন্ধকার যে
আলোকসজ্জাটাই এখানের প্রাণ থাকে। ক্রিসমাস পার্টির আয়োজন উপলক্ষ্যে বাচ্চারা নানা
ধরনের হাতের জিনিস বানায়, যেমন, ক্যান্ডেল স্ট্যান্ড পেইন্ট করে কিংবা মাগে আঁকে,
ওয়াল হ্যাঙ্গিং জাতীয় কিছু বানায়।
এগুলো ক্রিসমাস ফেয়ারে তারা বিক্রি করবে তাদেরই
বাবা মায়ের কাছে। প্রত্যেকটি প্রাইমারি স্কুলে দেখা যায় প্রায় আড়াইশো থেকে তিনশো ছাত্র ছাত্রী থাকে। ক্রিসমাস ফেয়ারে প্রায় প্রতিটি পরিবার তিন
থেকে পাঁচ টাকা স্কুলে খরচ করে, দেখা যায় হাজার ইউরোর মত টাকা উঠে যায়। আর সেই
টাকা দান করা হয়, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, সিরিয়া, কেনিয়া, মাদাগাস্কার বা অন্য কোন
দেশে। পুরো স্কুলের বাচ্চারা গর্ব নিয়ে হাসি হাসি মুখে সবাইকে জানায় এতো টাকা আমরা
ওদেরকে সাহায্য পাঠিয়েছি, আমাদের অনেক আছে, ওদের দরকার। জানি না এই শিক্ষা
পূর্নাংগ কীনা। পরের কারণে স্বার্থ দেয়ার এই শিক্ষা তারা চার বছর থেকে অনুশীলন করে
...
বাংলাদেশে
যারা সারাক্ষণ ধর্মীয় শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে যায়, আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি,
তাদের ছেলে মেয়ে পড়ে বিদেশের কনভেন্টে। বিয়ে করে বিদেশী, বাস করে বিদেশে। জানতে
ইচ্ছে করে, অন্যদের ছেলেমেয়েদের জন্যে যা প্রয়োজনীয় ভেবে দিনরাত উপদেশ দিয়ে যায়,
তারা নিজেদের ঘরের ব্যাপারে কী করে এতো উদাসীন থাকে? তাহলে কী তারা যা বলে তাতে নিজেরাই বিশ্বাস করে না? গরীব, অশিক্ষিত
ভোট ব্যাঙ্ক জনগনের জন্যে এক ব্যবস্থা আর নিজেদের জন্যে অন্য রকম?
No comments:
Post a Comment