হাঁটছিল পিয়া আলতো পায়ে। কাঁধে বইয়ের ব্যাগ আর তাতে শেষ না হওয়া এসাইনমেন্টের বোঝা কিন্তু মন উড়ছে কোথাও, কোন সে দূরে। হঠাৎ ভাবলো, কি হবে এসব সারাক্ষণ ভেবে, ঢাকার যানজটের মতই কখনো সমাধান হবে না, এ সমস্যা হলো পড়াশোনা। এ এসাইনমেন্ট শেষ হলো সেটা ডিউ, এই এক্সাম শেষ হলো তো অন্যটা মাথার ওপর, পাশের ফ্ল্যাটের বেরসিক রমনীর নেড়ে দেয়া পেটিকোটের মত ঝুলছে। তার চেয়ে বরং কফি খাই এক কাপ।
নির্জনতা চাইছে মন খুব করে। কোলাহল ছাড়িয়ে কোনের দিকের নিরিবিলি টেবলটাই সে বেছে নিলো। কি খাবে? একটু অন্যরকম কিছু, যা রোজ খায় না। মেনু কার্ড দেখে অর্ডার করলো, লাটে
মাকিয়াতো, অনেকটা দুধ দেয়, কাপুচিনোর মডার্ন ভার্সণ, খেতে বেশ লাগে। আজকে নিজেকেই
নিজে ট্রিট দিচ্ছে সে। মাঝে মাঝে নিজের সাথে নিজের এই ডেট, নিজেকে যত্ন করতে,
ভালবাসতে আজকাল বেশ লাগে।
রোদ উঠেছে, শীতের এই রোদে কোন তাপ নেই, আছে সর্বাংগ জড়িয়ে
থাকা প্রেমিকের মিষ্টি ওম। পিঠে রোদের নরম সেই ছোঁয়া পিয়া’র মনকে অন্য কোন দিকে
টানতে চাইছে। ভার্সিটির এই করিডোর টা অসাধারণ। ভিক্টোরিয়ান মোজাইকের এই ডিজাইন
গুলোর দিকে সারাবেলা তাকিয়ে থাকলেও কোন ক্লান্তি আসে না। আজ তার ওপর বাড়তি পাওয়া এই আলো আধারি’র খেলা।
এ সময় ক্যাফেটারিয়াটা খুব ব্যস্ত থাকে। তার লাটে মাকিয়াতো
আসতে বেশ সময় নিচ্ছে। নিজের ভেতর ডুবে যাওয়ার এর চেয়ে ভাল সময় আর হয় না। বড় একটা
নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করলো, কোথাও কোন ছবি ভাসে কি? এক মিনিট, দু মিনিট, তিন
মিনিট – পাঁচ মিনিট --- না কোথাও কোন ছবি নেই। মন এখন স্থির, কোন চঞ্চলতা নেই
এখানে। এতোটা পথ পেরিয়ে আসতে তাকে অনেক নির্ঘুম রাত, অনেক চোখের জল ত্যাগ দিতে
হয়েছে। সেসব ভুলে যেতে চায়। কথা হলো, পেরেছে, মন কে স্থির করতে, এটাই সত্যি আর
বাকি সব মিথ্যে।
এলো লাটে মাকিয়াতো, চিনি মেশাবে নাকি মেশাবে না, ভাবতে
কিছুটা সময় নিলো। তারপর তাতে অল্প চিনি মেশাতে গিয়ে নিজের অজান্তেই হেসে ফেললো,
কেন এতো শাসন করে সারাবেলা নিজেকে সে? নিজের প্রতি কেন এতো কাঠিন্য? সে তো তার নিজের
কাছে কিছু ট্রিট পাওনা আছে। অনেকটা চিনি মিশিয়ে নিয়ে গরম লাটে মাকিয়াতো’র কাপে
আলতো ঠোঁট ছুঁয়ে, ব্যাগ থেকে সদ্য কেনা, দাউদ হায়দারের “ভালবাসার কবিতা” বইটি বের
করে তাতে চোখ বোলাতে লাগলো। মনটা ঝরঝরে, ফুরফুরে – ফিসফিস করে নিজেকে বললো,
চিয়ার্স পিয়া
No comments:
Post a Comment