Wednesday, 12 April 2017

জার্নাল এপ্রিল 2017

“অপু বিশ্বাস” বাংলাদেশ চলচিত্রের একজন স্বনামধন্য নায়িকা। বাংলাদেশের সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে তিনি খুব সাহসী একটি “পেশা”কে নির্বাচন করেছন এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অর্থনৈতিক ভাবে, সামাজিক ভাবে, পারিবারিক ভাবে যথেষ্ঠ প্রিভিলেজড। প্রকৃতির রীতি মেনে জীবনে প্রেম আসে আর নানা কারণে সে প্রেম শেষ পর্যন্ত অনেকেরই তিক্ততায় গড়ায়। মানুষের জীবনে এটা এমন কিছু অভিনব ঘটনা ও নয়। তার সাথে তার স্বামীর মনোমালিন্য হতে পারে, বিবাহ বিচ্ছেদ ও সন্তানের অধিকারের দাবী নিয়ে মত পার্থক্য হওয়াটা ও খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। সে সব মত পার্থক্য কে মেটানোর জন্যে, “আইন” আছে, “আদালত” আছে, “সালিশ” আছে। টিভি চ্যানেল কবে থেকে স্বামী – স্ত্রী’র মনোমালিন্য মধ্যস্থতা করার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো?
                       
যে কীটস্য কীট তার ভালবাসার দাবী, সন্তানের কথা অস্বীকার করে, পাশে থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, কোন আত্ম মর্যাদা জ্ঞান থাকা মেয়ে কি করে তার পরিচয়ে তার আত্মজ কে বড় করতে পারে? ভুল করে যদি ভুল হয়েও যায়, ভুল তো ভুলই, প্রেমে মানুষের ভুল হয়ই। সেই ভুলের পরিচয় কে সারা জীবন টেনে বেড়ানোর জন্যে যে মেয়ে পাবলিকলি টিভিতে কান্নাকাটি করতে পারে তার জন্যে কোন প্রকার সমবেদনা বোধ করছি না। কোন কারণেই নয়। আইনের দরজায় না গিয়ে, টিভির দরজায় কেনো গেলেন অপু বিশ্বাস? আপনাকে যে অপমান করা হলো তার প্রতিকার না চেয়ে করুণা কেনো চাইলেন?  এ ধরনের নিম্ন শ্রেণী’র পশু যদি তার সন্তানের পরিচয় নিজেও দাবী করে, যে কোন আত্ম মর্যাদা সম্পন্ন মেয়ে তা সমযার্দায় অস্বীকার করত। অপু বিশ্বাস, আপনার সন্তানকে বড় করতে, মানুষ করতে – প্রতারক শাকিবের কি ভূমিকা থাকতে পারে? হাজার হাজার সিঙ্গেল মা তার সন্তানকে সফলতার সাথে পরম মমতায় যত্নে বড় করে যাচ্ছেন দেশে ও বিদেশে। আপনি তাদের গল্প জানেন?

আজ যদি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে, সামাজিক ভাবে অত্যাচারিত, অর্থনৈতিক ভাবে অপ্রতিষ্ঠিত, পারিবারিক সমর্থন ছাড়া   কোন মেয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পরে কান্নাকাটি করতো তাও এক ধরনের মমতা অনুভব করতাম কিন্তু “নো মের্সি” ফর “অপু বিশ্বাস”। প্রতিষ্ঠিত নারী’র নামের কলঙ্ক আপনি।

নূরা পাগলা পরছে “মঙ্গল শোভাযাত্রা” নিয়ে আর প্রধানমন্ত্রী “ভাস্কর্য” নিয়ে। পাতানো খেলা আবার জমে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু’র অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনা প্রধানমন্ত্রী’র হাতে পরে এতো দূর পিছিয়েছে যে, সেখান থেকে বাংলাদেশ আবার কবে সামনে হাঁটবে, আদৌ কি হাটঁতে পারবে কি, তা আজ অনিশ্চিত। ঐশ্বরিক কোন শক্তিতে আস্থা থাকলে, আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্যে প্রার্থণা করতাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। যে বিষ কাঁটা আপনি নিজ হাতে বোপন করে দিলেন, তার ফলাফল যেনো নিজে দেখে যেতে পারেন, সেই কামনা করি।

জোক অফ দ্যা ডে “খালেদা জিয়া বলেছেন, হাসিনা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করছে” – বেচারী, সোল এজেন্সী হাত ছাড়া হয়ে গেলো। ব্যবসায় ভাগীদার কার ভাল লাগে।


 12-04-2017

Sunday, 9 April 2017

বিশ্বের সবচেয়ে সুখী হলো ওলন্দাজ বাচ্চারা – তাদের সুখের আটটি গোপন কারণ

দু’হাজার তের সালে ইউনিসেফ উন্নত বিশ্বের বাচ্চাদের ওপর “Child Well Being in Rich Country Survey” নামে একটি সমীক্ষা চালায়। এই সমীক্ষায় ডাচ বাচ্চারা পৃথিবীর সুখী বাচ্চা দের তালিকায় এক নম্বরে উঠে আসে। সমীক্ষার পাঁচটি বিভাগের মধ্যে যে তিনটিতে তারা সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে এগিয়ে থাকে সেগুলো হলো - জীবনধারণে বস্তুগত সুযোগ-সুবিধা, পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধা এবং আচার-ব্যবহার ও জীবন যাত্রার ঝুঁকি। এরকম সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র জার্মান ইউনিসেফ-এরই নয়। ব্রিটেন চাইল্ড প্রোভার্টি একশন গ্রুপ, দি ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশান এবং ইউনিসেফ ইন্টারন্যাশনাল সবাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ডাচ শিশুরাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী শিশু।
প্রশ্ন আসতে পারে, কেন ডাচ বাচ্চারা এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বাচ্চা? আমি একজন প্রবাসী মা, এবং দীর্ঘদিন ধরে একটি ডাচ শহরতলীতে বাস করি। আমার পক্ষে ডাচ বাচ্চাদের সুখের পিছনে অন্তত: আটটি গোপন কারণ খুঁজে পাওয়াটা খুব কঠিন কিছু নয়।
১. ডাচ পিতা-মাতারা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের অন্তর্ভুক্ত :
পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বাচ্চাদের বাবা মায়েরা যে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের মধ্যে পড়বে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ কারা, এ নিয়ে জাতিসংঘের প্রথম প্রতিবেদনে “ডাচ’রা (১২ই সেপ্টেম্বর ২০১৩) পৃথিবীর চার নম্বর সুখী মানুষদের তালিকায় ছিলো। এই ‘সুখ সূচক’ নির্ধারণে সামাজিক অগ্রগ্রতিকে খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। এটা বুঝতে কারোই কষ্ট হবার কথা নয় যে, আসলে সুখী বাবা-মা মানেই সুখী বাচ্চাকাচ্চা।
২. ডাচ মায়েরা প্রকৃত সুখী মা :
ডাচ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সাংবাদিক এলেন ডা ব্রুন (Ellen de Bruin) এ বিষয়ের ওপর “ডাচ মহিলারা কখনোই বিষন্নতায় ভোগেন না,” নামে একটি বই লিখেছেন যেখানে তিনি বিষয়টি ব্যাখা করেছেন। তাঁর ভাষায়, “ব্যক্তিগত পছন্দের স্বাধিনতাই হলো মূল চাবিকাঠি। ডাচেরা তাদের পছন্দের জীবনসঙ্গী, ধর্ম এবং লিঙ্গ-বৈশিষ্ট্য বেছে নিতে পারে। আমরা সাধারণ ড্রাগস গুলি নিজেরাই বেছে নিয়ে ব্যবহার করতে পারি। এবং, বলার স্বাধীনতা আছে আমাদের। নেদারল্যান্ডস একটা খুবই মুক্তমনা দেশ।”
আমেরিকা এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নারীদের মত রুপ, আতিথিয়তা এবং চটকদারিতা ডাচ নারীদের অগ্রাধিকারের তালিকায় তেমন উপরের দিকে স্থান পায় না। তবে, সাধারণ ভাবে বললে বলতে হয়, ব্রাউন ডাচ নারীদের সম্বন্ধে কিছু অবিবেচনাপ্রসুত মন্তব্যও করেছেন। যেমন, তিনি বলেছেন, ডাচ নারীরা ফ্যাশনেবাল জামা কাপড় পরতে জানে না (বিশেষ করে যখন তারা সাইকেল চালিয়ে সব জায়গায় যায়), রাতের খাবারের সময় কেউ যদি তাদের বাড়িতে অপ্রত্যাশিত ভাবে উপস্থিত হয় তাহলে তাকে না খাইয়ে বিদায় করে দেয়, এবং তারা তাদের পুরুষদের ওপর বেশ কর্তৃত্বপরায়ণ।
ডাচ নারীরা চাকরী আর সংসারের কাজের মধ্যে একটি সুন্দর ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে বলে হয়ত তারা এতো সুখী। পৃথিবীর আর সব OECD দেশের বেশীর ভাগ নারীদের মত ডাচ নারীরাও তাদের কর্ম জীবন উপভোগ করে। ডাচ নারীদের আটশট্টি ভাগ পার্ট টাইম চাকুরী করে। মোটামুটি ভাবে বলতে গেলে, তাঁরা সপ্তাহে পঁচিশ ঘন্টা কাজ করেন।
লিসা ব্যালকিনস হুফফিংগন (Lisa Belkin’S Huffington) এর What Mothers Really Want: To Opt In Between (INFOGRAPHIC)” প্রতিবেদনে দেখা যায় একটি বিরাট সংখ্যক মা তাঁদের সংসার আর চাকুরীর মাঝে আদর্শ ভারসাম্য রেখে পার্ট টাইম কাজ করতে চান। আমেরিকাতে ২১২৭ জন মায়ের ওপর সমীক্ষা চালানো লিসা ব্যালকিনস হুফফিংগন এর মতে, যাদের বাড়িতে আঠারো বছরের নীচে সন্তান আছে তাদের শতকরা পয়ষট্টি ভাগ পার্ট টাইম চাকুরী করতে চায়, শতকরা নয় ভাগ ফুল টাইম চাকুরী করতে চায় আর শতকরা ছাব্বিশ ভাগ কাজ না করে ঘরে বসে থাকতে চায়।
৩. ডাচ বাবাদের পার্ট টাইম চাকুরীর মাধ্যমে সংসারে সাহায্য করা ও বাচ্চা প্রতিপালনে সমান সমান দায়িত্ব পালন করা :
“একুশ শতাব্দী’তে পার্ট টাইম চাকুরী” করা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদন ছেপেছিলো যেখানে ডাচ জনগোষ্ঠী’র পার্ট টাইম চাকুরী প্রীতি ব্যাপারটিকে উল্লেখযোগ্য ভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে ডাচ সরকার এ দেশের নাগরিক পার্ট টাইম চাকুরীজীবীদেরকে ফুল টাইম চাকুরীজীবিদের সমান সুযোগ ও মর্যাদা দিয়ে কর্ম জীবন ও ব্যক্তি জীবনের মধ্যে সামঞ্জস্য আনার রাস্তা পাকা করে দিয়েছে। প্রতি তিন জনে একজন বাবা এখন এই সুযোগটি নিচ্ছেন। তাঁদের নারী সহযোগীদের মত দিন দিন অনেক বাবা’ই সপ্তাহের তিন দিন বা চার দিন কাজ করে বাকি একদিন সন্তানদের সাথে কাটান। “বাবা দিবস (Papa day)” এখন শুধু মুখের কথা নয় বরং ডাচ জীবনের একটি অংশ। ডাচ বাবারা সন্তান লালন পালনে নিজের দায়িত্ব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন এবং নিজের ভূমিকাটি সযতনে পালন করেন।
৪. ডাচ বাচ্চাদের স্কুলে প্রতিযোগিতা করার চাপ না থাকার কারণে তাদের মানসিক পীড়ন খুব কম, এবং তাদের কোন বাড়ির কাজ থাকলেও খুব সামান্য থাকে তাই তাদের স্কুলের পরে খেলার সুযোগও পর্যাপ্ত :
ডাচ প্রাইমারি স্কুলে দশ বছরের নীচে বাচ্চাদের কোন বাড়ির কাজ থাকে না। তাদেরকে শুধু লিখতে ও পড়তে শেখাটাকে উপভোগ করতে উৎসাহিত করা হয়। বারো বছর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির সময় একটি বিশেষ পরীক্ষা নেয়া হয় বাচ্চাদের। এটাকে “CITO” পরীক্ষা বলা হয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বাচ্চাদের মেধা আর বুদ্ধিবৃত্তির একটা ধারনা নেয়া হয় । এটি দিয়ে আসলে নির্ধারন করা হয় ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোন ধরণের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় তারা ভাল করতে পারবে।
এই কারনে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরাও “SATs কিংবা “ACTs” পড়ার অমানুষিক মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়না কিংবা কেতাবী বিদ্যায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রতিযোগিতা’র মুখোমুখি হয় না। বেশীর ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্যে কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখিও তাদের হতে হয় না।
স্কুল নিয়ে ডাচ বাচ্চাদের এই আয়েশী আর সুখী মনোভাব আমাকে আমার বাড়ির কথা মনে করিয়ে দেয়। আমি এখনও স্পষ্ট মনে করতে পারি যেদিন আমি আমার হাই স্কুলের প্রথম ক্লাশ শুরু করি সেদিন থেকেই একটা “ভাল” কলেজ বাছাই করা নিয়ে বাড়ির ভেতর আর বাইরে থেকে ভীষণ চাপ শুরু হয়ে ছিলো আমার ওপর। যখন যদি ভাবি আমার ছেলেটা পড়াশোনার আনন্দের জন্য স্কুলে যেতে পারছে না, তাকে সারাক্ষণ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কৃতকার্য হওয়ার জন্যে চেষ্টা করতে হচ্ছে, তো তাহলে ভয়ে আমার ভেতরটা শুকিয়ে আসে।
৫. তারা সকালের নাস্তায় সাদা রুটির ওপর মাখন বা চকলেটের টুকরো এসব খেতে পায় প্রত্যেকদিন, যেটা কোনও সহজ কথা নয়ঃ
যখন জাতিসংঘ বললো ডাচ বাচ্চারা স্বাস্থ্যকর নাস্তা খায়, আমি খুব মজা পেয়েছিলাম। ডাচদের একটি গতানুগতিক সকালের নাস্তা মানে প্রায়শই সাদা পাউরুটি আর তার ওপর মাখন এবং চকলেট - তা আপনি বড় বা ছোট যে বয়সেরই হন না কেন। এক টুকরো রুটির সাথে কখনো পনির কিংবা চিকন বা এক টুকরো হ্যামই হলো ডাচদের দুপুরের খাবার, এবং সেটাকে আমার কাছে তেমন ভাল খাবার বলে মনে হয়নি।
জাতিসংঘের সমীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার উঠে এসেছে - ডাচ শিশু আর কিশোর-কিশোরীরা নিয়মিত পরিবারের সাথে সকালে নাস্তা করে। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে শিশু কিশোররা এত নিয়মিত ভাবে পরিবারের সাথে নাস্তা করে না। সকালের এই নাস্তা খাওয়ার সাথে যে শুধু স্কুলে ভাল করা আর আচরনের সমস্যা কমিয়ে আনার যোগ আছে তাই নয়, রোজ এভাবে একসাথে নাস্তা খাওয়ার কারণে পরিবারের সবার একসাথে অনেকটা সময় কাটানো হয়, ফলে পারিবারিক বন্ধন মজবুত হয় আর স্বতন্ত্র পরিচয়ে বেড়ে ওঠাটাও সহজ হয়।
৬. তাদের নিজেদের মতামত ব্যক্ত করার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে :
ডাচ বাচ্চাদের প্রতি মনযোগ দিয়ে নজর দেওয়া হয় এবং তাদের কথা সেভাবে শোনাও হয়। যে মুহূর্ত থেকে তারা নিজেদের বাক্য গুছিয়ে বলতে শেখে, সে মুহূর্ত থেকে তারা তাদের মতামত দিতে পারে আর তাদের বাবা মায়েরা সেটা মনোযোগ দিয়ে শোনেন।
৭. তাদের একটা দাদু-নানু দিবস থাকে :
সপ্তাহের কর্মব্যস্ত কোন দিনে আপনি যদি ডাচ বাচ্চাদের খেলার জায়গায় যান তাহলে আপনি সেখানে একজন নানু বা দাদুর দেখা পাবেন যিনি তাঁর নাতি নাতনীদের নিয়ে পার্কে গেছেন। অনেক ডাচ দিদু’রাই তাঁদের নাতি নাতনীদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে তাঁদের সন্তানদেরকে গর্বের সাথে সাহায্য করে থাকেন। দাদী-নানীদের থেকে সপ্তাহে একদিন সন্তানদের প্রতি যত্ন পাওয়াতে ডাচ বাবা মায়েরা তাদের কর্মজীবন আর ব্যক্তিজীবনের মাঝে সুন্দর একটা সমন্বয় ঘটাতে পারেন। দিদু’র সাহচর্য্য শিশুর নিজের আত্ম সম্মান গড়ে তুলতেও সাহায্য করে।
৮. ডাচ পরিবারদেরকে সংসার খরচের জন্যে ডাচ সরকার প্রতি মাসে টাকা দিয়ে থাকেঃ আমরা সবাই জানি বাচ্চা বড় করা খুবই খরচান্ত ব্যাপার হতে পারে। USDA এর মতে, ২০১২ সালে জন্ম নেয়া কোন বাচ্চা আঠারো হতে হতে, ২৪১.০৮০ ডলার খরচ হবে। কি বিশাল একটা অঙ্ক।
অর্থনৈতিক মন্দা বেড়ে যাওয়ার এই সময়ে যেখানে নানা রকম সরকারী সুবিধে কেটে দেয়া হচ্ছে তখনও ডাচ পরিবারগুলো ডাচ সরকার থেকে টাকা পাচ্ছে। বিশেষ করে বলতে হয়, ডাচ পরিবারগুলো বাচ্চাদের ভাতা (allouance), বাচ্চাদের জন্য সুবিধা বৃত্তি বা বেনিফিট স্টাইপেন্ড (যেটা বাবা মায়ের আয়ের ওপর নির্ভর করে), সম্মিলিত ছাড় বা কম্বিনেশান ডিসকাউন্ট (বাচ্চাদের ডে-কেয়ার ও অন্যান্য খরচ সামলানোর জন্যে করের একটা অংশ ফেরত পাওয়া) আর বাচ্চাদের যত্ন নেয়ার জন্য নিয়মিত ভাতা এসব পেতেই থাকবে। আপনাদের কথা জানি না কিন্তু আমি যদি আমার বাচ্চা বড় করার জন্যে টাকা পাই সেটা নিয়ে আমার কোন আপত্তি থাকবে না।
আমাদের বাস্তবতা অবশ্যই এরকম না যে আমরা একটি আদর্শ ডাচ পরিবারকে অনুসরন করবো। আমার স্বামী একজন উদ্যোক্তা, এবং তাঁর খন্ড কালীন চাকুরীর কোনও সুযোগ নেই। আর আমিও একজন বাড়িতে থাকা মা। যাইহোক, আমরা সুখী কারণ আমরা সেভাবেই জীবন যাপন করছি যেভাবে আমরা তা করতে চেয়েছিলাম। নেদারল্যান্ডসে বাস করার সুযোগ আমাদেরকে চিরায়ত ঐতিহ্যমন্ডিত পারিবারিক পরিবেশ উপভোগ করতে সাহায্য করেছে। আমার কোলের দুরন্ত দামাল ছেলেটার পেছনে সারাদিন দৌড়াতে থাকাটা যদিও আমার জন্যে অত্যন্ত ক্লান্তিকর, আমি সৃষ্টিকর্তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দেই সে সুযোগ তিনি আমাকে দিয়েছেন। এটাই ডাচ দেশে বসবাস করার প্রশান্তি।
রিনা মায়া কস্টা
ভাষান্তর
তানবীরা তালুকদার
৩০/০৩/২০১৭