জীবনের বড়, খুব বড় একটা অংশ কেটে যায় লোকাচার পালন করতে
করতে। লোকে কি ভাববে সেটা ভাবতে ভাবতে নিজে কি চাই, সেটাই অনেক সময় ভুলে যাই। আসলে
উপমহাদেশের সংস্কৃতিটাই গড়ে উঠেছে এভাবে হাজার বছর ধরে, এর দেয়াল ভেঙেও ভাঙে না,
খসেও খসে না। কেউ এই অচলায়তনে আঘাত করতে চাইলেও, রক্ষনশীল’রা গেলো গেলো রব তুলে
হুলস্থুল করে তোলে।
আমাদের দেশে প্রায় অনেক স্কুলেই, স্কুল শুরুর আগে জাতীয়
সঙ্গীত গাওয়ানোর নিয়ম আছে, সেটা প্রায় রোজই। কেন? দেশপ্রেম জোর করে গেলানো’র
জিনিস? রোজ জাতীয় সংগীত গেয়ে আমরা খুব দেশ প্রেমিক জাতি তৈরী হয়েছি বুঝি! সিনেমা
হলে সিনেমা শুরু’র আগে জাতীয় পতাকা দেখানো, কেন? একবার কিছু শুরু হলে সেগুলো কি
স্বতঃসিদ্ধ হয়ে যেতে হয়? সময়ে কিছু বদলায় না? বদলানো উচিত নয়? পশ্চিমের দেশগুলোতে
জাতীয় পতাকা দিয়ে কত কি তৈরী হয়, ফ্রিজ ম্যাগনেট, কাপে, মগে, বাসনে কোথায় নেই
জাতীয় পতাকা? এমেরিকায় জাতীয় পতাকা ছাপা শর্টস আছে, বিচ স্যান্ডেল আছে, তোয়ালে
আছে। আমাদের দেশে ভাবা’ই যায় না। কেন এই লোক দেখানো দেশ প্রেম? এমেরিকানদের থেকে
আমরা বেশি দেশ প্রেমিক জাতি?
শহীদ মিনারে জুতো নিয়ে উঠলে, বসলে টিভিতে, পত্রিকায় হুল্লোড়
হতে থাকে, কেন? এমেরিকা,
ইউরোপে’র কোন দেশে স্বাধীনতা’র স্মৃতি স্তম্ভ, শহীদদের প্রতি
শ্রদ্ধা জানানোর মিনার, স্তম্ভ নেই? কোথাও তো জুতো খুলতে হয় না, তাহলে সেসব
শহীদদের অপমান হচ্ছে? এসব লোক দেখানো আচারের শেষ কবে কোথায় কে জানে। প্রাচীন
যুগে এসব লোকাচার এসেছিলো হয়ত আবহাওয়াকে কেন্দ্র করে। যার জন্যে গরমের দেশে জনপ্রিয়
ধর্ম গুলোতে ধর্মস্থান বা পবিত্র স্থানে জুতো খোলা’র ব্যাপারটা আবশ্যিক ছিলো। যেটা
শীতের দেশে আবার নেই। ঠিক যেমন খাদ্যভ্যাস গড়ে নিয়েছিলো মানুষ, যেখানে মাংস দুষ্প্রাপ্য
ছিলো সেখানকার মানুষেরা শাকাহারী আবার আরবের দিকে সব্জি দুষ্প্রাপ্য বিধায় তারা মাংসাহারী।
আর সেসবই মানুষের ওপর চাপানো হয়েছিলো “ধর্মে”র মোড়ক দিয়ে। সমস্ত উপমহাদেশ শিক্ষা, বিজ্ঞানে
প্রভূত উন্নতি করেছে, বিশেষ করে শেষের দুই দশককে তো এই ক্ষেত্রে রেনেসা ধরা যেতে পারে।
কিন্তু যেখানে ধর্মের নামটি আসে, সেখানেই সেই প্রাচীন অচলায়তন। যতটাই আগাই না কেন,
এই অচলায়তন ঠেলে আর সামনে আসতে পারে না। এই জায়গায় ফিরে যাই সেই শত বর্ষ পূর্বে।
স্বামী মারা গেলে মেয়েদের শাড়ি বদলাতে হবে, রঙ বদলাতে হবে,
গয়না পরা চলবে না, খাদ্যভাস ত্যাগ করতে
হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কেন, মরে গেলে স্বামীর প্রতি প্রেম বেড়ে যায় যে জীবন তাকেই
উৎসর্গ করে দিতে হবে? যদি অত্যাচারী স্বামী হয়ে থাকে যে বেঁচে থেকে অনেক কষ্ট
দিয়েছে স্ত্রী’কে? তার জন্যেও স্ত্রীকে বাকি জীবনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়ে মানুষকে
নিষ্ঠা দেখাতে হবে লোক নিন্দা’র ভয়ে?
আমি জানি আমার এই লেখার জন্যে হাজার খানা গালি জুটবে,
কিন্তু নিজের ভাবনা তো নিজের ভাবনাই। নিজের টাইম লাইনে অন্তত নিজের সাথে সৎ থাকা
যায়।
No comments:
Post a Comment