Monday 21 May 2018

আমাদের মা দিবসের গল্প

মেঘের জন্মদিনের পরে যে উৎসবটি আমাদের বাড়িতে মহা ধুমধাম করে পালন হয় সেটি হলো, মাদার’স ডে। কিছুটা প্যারালাল ও বলা চলে। বোঝা যাচ্ছে না? আচ্ছা, তাহলে বিস্তারিতই লিখি।
আমি যদি জন্মদিনের আগে মেঘ কে ধমক দেই, বলি, তুমি আমার কথা শোন না, তোমার জন্মদিনের পার্টি ক্যান্সেল, কেন আমি এত কষ্ট করতে যাবো? আজকাল, আমি উলটো ঝাড়ি শুনি, তাহলে মাদার’স ডেও ক্যান্সেল, তুমি আমার কোন কথাটা শোন, শুনি? তোমাকে গিফট দেই না আমি? স্পেশাল নাস্তা বানিয়ে বিছানায় নিয়ে দেই না? তুমিও তাহলে কিছু পাবে না আর।
তারপর সে সব ভুলে আমরা আবার বন্ধু হই। এক মাস ধরে বাসার বিভিন্ন জায়গায় আমার হাঁটা চলা বন্ধ, কারণ ওখানে আমার উপহার লুকানো আছে, আমি জিমে গেলে আমার জন্যে হাতে কার্ড বানানো হয় সাথে আরও নানা কিছু। লুকিয়ে ইউটিউব দেখা চলে, আমার জন্যে নতুন রেসিপি খোঁজা হয়, তবে এসবই কিন্তু সততার সাথে করা হয় না।
বন্ধুরা মিলে যায়, মায়েদের জন্যে উপহার কিনতে, মায়েদের জন্যে কিনতে গেলে নিজেদের জন্যে পছন্দ হয়ে যায়, (মা কি বেটি), যা টাকা নিয়ে যায় বাবার কাছ থেকে তার অর্ধেক দেখা যায় নিজের জন্যে কিনে আগেই নিয়ে নিয়েছে, বাকি অর্ধেক ও নিজের পছন্দের জিনিস কেনে, জানে ওটা মায়ের পছন্দ হবে না, ওকেই দিয়ে দেবে। এবার তাই বলে দিয়েছি, গিফট নিয়ে চোট্টামি করবি তো, যা যা পছন্দ হবে না, সব দোকানে ফেরত দিয়ে বদলে নেবো, তোকে কিন্তু দেবো না। ডাচ কায়দা মত সাথে ক্যাশ মেমো দিয়ে দিবি।
হেসে কুটিপাটি হয়ে বলেছে, না, না এবার তোমার পছন্দ মত উপহার দেবো মামি। ইউএসতে বড় মায়ের সাথে মেইল ও চালাচালি হল এই নিয়ে, আমাকে বলা হলো, সাজেশান দিতে, কি কি আমি চাই। কিন্তু কোনটা কেনা হলো সেটা আমাকে জানানো হয় নি। মেয়ের বাবা আবার এক ডিগ্রী বেশি চালাকি করতে এসে ধরা, তোমার গলার, হাতের আর আঙ্গুলের মাপ দাও। আমি বললাম, সাজেশানে গলা নেই, যাও ভাল করে চেক করো, এত স্মার্ট সাজারও কিছু নেই। বাবার বোকা-চালাকি’তে মেঘ আবার হেসে কুটিপাটি।
উপহার ছাড়াও এবারের মা দিবস অনেক অনেক অনেক স্পেশাল। আদুরে মেঘের স্পেশাল স্পেশাল খালামনিরা আসছে এবার মেঘের সাথে মা দিবস উদযাপন করতে। মেঘ সবার জন্যে আলাদা আলাদা ডিজাইনের কার্ড বানিয়েছে, চার দিন ধরে। প্রত্যেকটা কার্ডের ডিজাইন আলাদা হতে হবে, ইউনিক হতে হবে প্রতিটা কার্ডকে। আজ আমাদের বাড়ি তে চার চান লাগ গায়ে।
ধমক দিয়েছি আমার সোনা বাচ্চাকে, সারাদিন এগুলো নিয়ে বসে আছিস, গান প্র্যাক্টিস কখন করবি? বেচারী মেয়ে আমার ভয়ে, খালি গলায় গান গাইছে আর সাথে সাথে দু হাতে কাগজ কাটছে আর আঠা লাগাচ্ছে। কার্ড ডিজাইন করছে, আড়চোখে নজরও রাখছে, আমি দেখে ফেলছি কি না তার সারপ্রাইজ। তারপর ঠোঁট ফুলিয়ে বললো, তোমার জন্যে বছরে দু বার সব হয়, জন্মদিন আর মাদার’স ডে আর আমার শুধু জন্মদিন। কেন, একটা কিডস ডে থাকবে না? এটা খুব আনফেয়ার না মামি? আমিও খুব কনফিডেন্ট গলায় বললাম, রোজ ডে’ই তো কিডস ডে, তোকে তো আমি রোজ পেলে যাই, বছরে একটা দিন মাদার’স ডে, ঐটাই সবচেয়ে আনফেয়ার।
আমি জানি মেঘ, সামটাইমস, আ এম মীন টু ইউ এজ ইউ আর টু মি বাট ইউ বোথ নো, উই লাভ আস দ্যা মোস্ট
পৃথিবী’র সব মা’দেরকে মা দিবসের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। আর আফশোস হয় কেন কোন মা দিবসে আমি আমার মায়ের কাছে নেই, আমার মা আমার কাছে নেই। দূর থেকে উপহার দিয়ে কি সব আহ্লাদ মেটে? ছোটবেলায় তো জানতাম না, মা দিবস কি।
ভীষণ মিষ্টি এই দিনটি সব মা প্রাণ ভরে উপভোগ করুক, যেমন আমি বা আমরা অনেকেই করছি।
মঙ্গল হোক সকলের।

No comments:

Post a Comment