Sunday 15 September 2019

অসহনীয় যানজটের নগর – ঢাকা


অসহনীয় যানজটের নগর – ঢাকা


পিচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি
তারসাথে এই মনটারে বেঁধে নিয়েছি
রঙ ভরা এই শহরে যতই দেখেছি
আরে গোলক ধাঁধার চক্করে ততই পড়েছি


ঢাকা নগরীর প্রধান কিংবা আপাতত একমাত্র সমস্যা কি কাউকে জিজ্ঞেস করলে, এক কথায় যার উত্তর মিলবে, “যানজট”।

বাংলাদেশের মানুষের স্বভাব হলো, চিপায় পরলে চিপার মধ্যে নিজেকে এডজাস্ট করে ফেলা, কেন চিপা হলো, কোথা থেকে চিপা এলো, কিভাবে চিপাকে ফিক্স করা যায়, তা না ভেবে, শুধু নিজেকে কিভাবে চিপার মধ্যে ভাল রাখা যায়, এই আমাদের ভাবনা।  

ধানমন্ডি থেকে লেক সাকার্স, শুক্রাবাদ থেকে আগারগাও, মোহাম্মদপুর থেকে হাতিরপুল, উত্তরা থেকে টঙ্গী, গুলশান টু বাড্ডা যেদিকেই যাবেন, দেখা যাবে, ঠ্যালায় করে রাস্তায় রাস্তায় সব্জি, মাছ বিক্রি হচ্ছে। বাজার করতে বাজারে যাওয়ার দরকার নেই, রাস্তায় আপনি এই অতি প্রয়োজনীয় কাজটি সেরে ফেলতে পারছেন। স্কুলের সামনে ভীড়ের কারণে দাঁড়ানোর উপায় না থাকলেও, থ্রী পিস থেকে পর্দা, চুড়ি থেকে ভুনা খিচুড়ীর ঠ্যালা আছে এবং তাতে প্রচুর কাস্টমারও আছে। অনেক রাস্তায়, রাস্তার দুপাশেই ঠ্যালা আছে।

একেতো গাড়ি চলারই রাস্তা নেই, তারমধ্যেই ঠ্যালা আর গ্রাহকের ভীড়, প্রতিদিন, প্রতিবেলা। ঠ্যালা ঘিরে মানুষের ভীড়, দামাদামি, বাছাবাছি সব চলছে হরদম, ওদিকে রিকশা, গাড়ি সব আটকে আছে, কখনও কখনও ধাক্কা লাগছে, মোটর সাইকেলের সাথে রিকশার, কিংবা রিকশা-গাড়ির সাথে মানুষের তবুও সবাই কি আশ্চর্য নির্বিকার। ইঞ্চি ইঞ্চি প্রেম থুক্কু ইঞ্চি ইঞ্চি জায়গার কি অপটিমাম ব্যবহার, ঢাকা শহরের ড্রাইভাররা ছাড়া আর কেউ এ ব্যাপারে এত দক্ষ কিনা আমার দারুন সন্দেহ আছে। একেতো এত মানুষের ভার বহনের জন্যে রিসোর্স/ইনফ্রাসট্রাকচার নিয়ে এই শহর তৈরী হয় নি তারপরও যা আছে তার কি অপরিনামদর্শী যথেচ্ছ ব্যবহার। জন্মের পর থেকেই ফুটপাত হকারদের দখলে দেখে আসছি তা নিয়ে আর বলার কিছু নেই, সেটা স্বতঃসিদ্ধ ধরেই নিলাম না হয়।    

রাস্তার পাশে যাদের দোকান আছে, তারা দোকানের সামনে রাস্তার মিনিমাম চার হাত জায়গা দখল করে রাখেন, কোকের কেইস সাজান, চিপসের প্যাকেট টানান, কলা ঝোলান, নইলে বেঞ্চ আছে বসে কিছু খান, মোদ্দা কথা, দোকানের বাইরের রাস্তার চার হাতও তারই দখলে থাকতে হবে। আমি দেখেছি, গাড়ি/মোটর সাইকেলের ধাক্কায় কিছু সরে টরে গেলে আবার এনে ঝেড়ে বিছিয়ে দেয়া হচ্ছে, কিন্তু দমবে না, যতই ভয়ের হোক না কেন। একেই সব অপ্রশস্ত রাস্তা ঢাকায়, তার প্রায় অর্ধেক আবার ব্যবহার হয় অন্য কাজে। প্রত্যেকে যানজটের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ কিন্তু প্রতিকারের চেষ্টায় কেউ নেই।


প্রতিদিন এত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, মর্মান্তিক সব কান্ড ঘটছে, সাধারণ মানুষ লিস্ট বদারড। ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহারে শহর জুড়ে মানুষের কি প্রচন্ড অনীহা। “পথচারী”কে জরিমানা করার নিয়ম কেন আসে না, বুঝতে পারি না। এত ভীড়ের মাঝে মানুষ বাচ্চার হাত ধরে নির্দ্বিধায় রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছে, সারাটা সময় চোখ মোবাইল স্ক্রীনে। পেছন থেকে গাড়ি হর্ণ দিয়েই যাচ্ছে, একবারও মোবাইল থেকে চোখ সরায় না, মধ্য রাস্তা ছেড়ে এক পাশে হাঁটে না। দুর্ঘটনা ঘটলে অবশ্যই ড্রাইভার দায়ী, দেখে চলার দায়িত্ব শুধুমাত্র ড্রাইভারদের ওপর।


এক সময় ঢাকাকে বলা হতো মসজিদের নগরী এখন অনায়াসে বলা যায়, “মার্কেটের নগরী”। জায়গায় জায়গায় অপরিকল্পিত ভাবে মার্কেট, রেস্টুরেন্ট, ক্লিনিক, স্কুল অফিস যার যার ইচ্ছে মতো। না সিটি করপোরেশান থেকে অনুমতি নেয়ার তোয়াক্কা বা রেওয়াজ আছে, না আছে কোন আরবান প্ল্যানিং। না আছে নিয়ম নীতির কোন বালাই। একটা ক্লিনিক করতে হলে মিনিমাম কয়টা গাড়ির পার্কিং থাকা উচিত, এম্বুলেন্স কোন রাস্তা দিয়ে আসবে ইত্যাদির কোন বালাই দূর দূরতক নেই। এন্ডহোভেন শহরটি আটাশি দশমিক সাতাশি স্কোয়ার কিলোমিটার, জনবসতি দুই লক্ষ একত্রিশ হাজার চারশো ছয় জন, পুরো শহরটিতে দুটো বিরাট শপিং মল আর নেইবারহুডে ছোট ছোট কিছু শপিং এরিয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্যে। ঢাকা হলো তিনশো ছয় দশমিক চার স্কোয়ার কিলোমিটার, জনসংখ্যা বাদ দেই, কতগুলো মার্কেট/শপিং সেন্টার/শপিং মল আছে ঢাকাতে কেউ বলতে পারবে? কোন হিসেব আছে কারো? 



শুধু রিকশাই যানজটের কারণ, এসবই কি যানজটের কারণ নয়? কয়দিন আগেই বাচ্চারা “নিরাপদ সড়ক চাই” নিয়ে এত হাঙ্গামা করার পর যদি এই পরিনতি থাকে তাহলে প্রভুই এই জাতির একমাত্র ভরসা।


বিঃদ্রঃ রাস্তা/ যানজট সংক্রান্ত কোন গান/কবিতা কেউ কি জানেন, তাহলে মন্তব্যের ঘরে একটু জানাবেন প্লিজ।  


তানবীরা
১১.০৯.২০১৯



No comments:

Post a Comment