ছোটভাই শান্ত’র কল্যানে দেখা হলো আনু মেননের লেখা
ও পরিচালনায় হালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হওয়া “শকুন্তলা দেবী” সিনেমাটি। একাডেমিক
এডুকেশান না থাকা একজন জিনিয়াস ম্যাথমেটিশিয়ান, লিজেন্ড যিনি পরে এস্ট্রলোজি এবং
পলিটিক্সেও ইনভলবড ছিলেন। উনিশো আশি সালে মেদাক অধুনা তেলেঙ্গানা প্রদেশে তিনি
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে
নির্বাচন করেছিলেন। মন মানসিকতায় অত্যন্ত আধুনিক তিনি উনিশো সাতাত্তর সালে সমকামীতার
ওপর বই লিখে সমালোচিত হন। ভারতে তিনিই প্রথম সমকামীতা নিয়ে বই লিখেন। অঙ্কশাস্ত্র,
জ্যোর্তিবিদ্যা, উপন্যাস সহ তার লেখা অসংখ্য বই আছে।
সিনেমা বানানোর সময় থেকে আজ অব্ধি প্রত্যেকটা
রিভিউতে “শকুন্তলা দেবী” নিয়ে শুধু ওপরের এই কথা গুলোই উঠে আসছে। কিন্তু আমার কাছে
পুরো সিনেমাটাই লেগেছে বেদনা বিধুর। এখানে ছিলো কত গুলো ভাঙাগড়া সম্পর্কের গল্প। শৈশব
হারানো এক দুঃখিনী বালিকার নাম “শকুন্তলা দেবী”। অন্য আট দশটা মেয়ের মত সে স্কুলে
যেতে পারেনি, খেলতে পারেনি, তার বাবা তাকে দিয়ে যত বেশি রোজগার করাতে পারে, রেখেছিলো
সেই দশায়। একমাত্র সাথী, আদরের বিকলাঙ্গ বড় বোন “সারদা”কে অল্প বয়সে হারিয়ে সে
পুরো একা। মায়ের সমর্থণ চেয়েছিলো বারেবারে কিন্তু মা তা দিতে ছিলেন অক্ষম। মায়ের
অক্ষমতাকে মানতে পারেনি শকুন্তলা, দারুণ ক্ষোভে মায়ের পাশ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। প্রেমে
ব্যর্থ, কারণ সে নির্ভেজাল প্রেম চেয়েছিলো, কারো প্রয়োজন হতেও চায়নি, কাউকে
প্রয়োজনীয় বানাতেও চায় নি। যে মেয়েটি পাঁচ বছর বয়স থেকে রোজগার করে পরিবারকে
চালাচ্ছে, তার কাছ থেকে অন্য কি আশা করা যায়?
এরপর শকুন্তলা নিজে মা হলো। একাকী শকুন্তলা
মাতৃত্বেই নিজেকে পূর্ণ করতে চাইলো। চললো ভাঙা-গড়ার খেলা। বারবার মেয়ের কাঠগড়ায়
শকুন্তলা। আর সব মায়েদের মত সন্তানের কাছে নিজেকে সমপর্ণ করলো। সব স্যাক্রিফাইস
মায়েদের কাছেই আশা করা হয়, মেয়েদের কাছেই আশা করা হয়। সমাজের ছকে বড় হওয়া সন্তানরাও
তাই চায় যতদিন না তারা নিজেরা মা হয়, নিজেরদের পা সেই জুতোয় গলায়। প্রাণের চেয়ে
প্রিয় ম্যাথ ছেড়ে দিলো শকুন্তলা, ছেড়ে দিলো আরও বাকি সব যা যা মেয়ে চায় না। কালের
নিয়মে মেয়ে বড় হলো, মেয়ের প্রেম হলো, মেয়ে বিয়ে করে যখন স্বামীর সাথে চলে যাবে
মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। সবর্স্ব দিয়ে মা চাইলো, মেয়েকে-জামাইকে কাছে রাখতে,
পাশে রাখতে। শুরু হলো মা-মেয়ের যুদ্ধ। প্রথমে মা হারলো, মেয়ে জিতলো। কালের নিয়মে
মেয়ে যখন মা হলো, তখন আবার ভুল বোঝাবোঝির অবসান।
ম্যাথের জিনিয়াসনেস, পার্টি, প্রোগ্রাম,
অডিয়েন্সের তালি, এসব ছাপিয়ে আমার চোখে পড়েছে গিনিস বুক ওফ রেকর্ডসে “পৃথিবীর
একমাত্র হিউম্যান কম্পিউটার” এর নিঃসঙ্গতা, আপনজন হারানো, আপনজনকে পাশে রাখার
আকুতি। হতে পারে তিনি অনেক কিছুই নিজের টার্মস এন্ড কন্ডিশনে চেয়েছেন,
কম্প্রোমাইজে চান নি, পাঁচ বছর থেকে খেটে খাওয়া একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষের জন্যে
সেটাই অনেক বেশি স্বাভাবিক। ভিদ্যা বালান আমার সব সময়ের খুব পছন্দের অভিনেত্রী।
তার কারণে “ডার্টি পিকচারে”র মত সিনেমাও অনায়াসে দেখা যায় আর “শকুন্তলা দেবী” তো
বারবার দেখা যায়। ভিদ্যা বালান এই সিনেমার জন্যে পার্ফেক্ট চয়েস।
৫/০৮/২০২০
No comments:
Post a Comment