Wednesday 21 December 2022

তিন সেটের সোফা

অবশেষে বাসায় দুইটা তিন সিটের সোফা কিনলাম। একমাত্র মেয়ে আমার, সারাদিন ভর আদারে,বাদারে যেখানেই ঘুরে বেড়াক, রাত হলেই খেয়েদেয়ে আমার কোলে মাথা দিয়ে টিভি দেখা তার ছোটকালের অভ্যাস। ছোট যখন ছিলো তখন ছিলো কিন্তু এখন বড় হইছে, এই গরমের কালে এত ঘষটাঘষটি করলে কষ্ট মেয়েরে বল্লাম, আলহামদুল্লিল্লাহ, এখন দুইটা তিন সিটের সোফা, একটায় তুমি শুবা আর একটায় আমি। বন্ধুদের সাথে গুলটি মেরে বাইরে থেকে এসে এই কথা শুনে মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভালোমন্দ কিছুই বললো না, আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। আমি খুবই বিরক্ত হলাম, কিন্তু কিছু কেয়ার করছিলাম না। এরপর ও রুমে চলে গেলো আমিও আমার কাজে গেলাম। একটু পর ক্ষিদে লাগলে জোরে জোরে ডাকলাম, কিন্তু কোনো উত্তর দিচ্ছিলো না। জিজ্ঞেস করলাম, কি হইছে? জবাব দেয় না। বললাম, এই মূহূর্তে নীচে এসে টেবিল লাগা, নইলে তোর একদিন কি আমার একদিন। মেয়ে নীচে নামলে খেয়াল করলাম চোখ লাল হয়ে গেছে মুহূর্তেই গলার রগ বেয়ে গেছে। “জরে জরে" নিঃশ্বাস নিচ্ছে। সাধারণত মাইর খাওয়ার সময় হইলে ও এরকম করে। পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি হইছে, ভাল থাকতে ভাল লাগে না? কিন্তু সে একদম টাচ ও করতে দিতে ইচ্ছুক না। বললাম, পিঠ সুড়সুড় করলে এমনেই বলো, এত ভ্যানতাড়ার দরকার নাই। তারপর হঠাৎ বলে, একমাত্র মেয়ে আমি তোমার, কেন আমি তোমার সাথে এক সোফায় শুইলে তোমার সমস্যা? একা একাই খাও তাহলে, আমি তোমার টেবল সাজিয়ে দেবো না। এই কথা শুনার পর আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতেছিলাম না। এত বড় বড় দুই সোফায়, দুইজন আলাদা শুয়ে টিভি দেখবো বলাতেই এই অবস্থা! তাও মায়ের সাথে এমন রিয়াক্ট। বললাম, এইটা নরম গলায়ও আইসা বলতে পারতা। এত তেজ দেখানোর কিছু নাই। আমার খাইয়া আমার পইড়া আমারেই কইবা ম্যাও! তেজ সামলায় রাইখো নাইলে মাইর একটাও মাটিতে পরবে না। সাথে চোখ রাঙাইয়া বল্লাম, আগের সোফাটা লাফাইয়া ভাঙছো, এখন বড় হইছো, সোফার সাথে ভদ্রতা বজায় রাখবা, ব্যবহার বংশের পরিচয়। আমার এই কথা শুনে মেয়ে থ। ওয়াদা করছে এমন বেয়াদপি আর করবে না কখনো। মনে পড়ে গেছে পাঁচ বছর আগে সে এমন বেয়াদপি করছিলো, তিন দিন তার খাওয়া দাওয়া খুবই বেসিক পর্যায়ে ছিলো। মনে মনে সে ভাবলো, মা হইছে উনিশ বছর, যা ছিলো তাই আছে, বদলায় নাই। বাপরে বাপ, বাঙালি মা এমন জল্লাদও হয়!!!!

No comments:

Post a Comment