Wednesday 22 December 2010

কার্পেট ব্যাপারীর জাহাজের খবর

আদিম যুগে যখন মানুষ বাড়িঘর তৈরি করতো তখন আমাদের পিতা আমাদের জন্য ঢাকা শহরের কোন এক কোনায় একটা মাথা গুজবার ঠাঁই তৈরি করেছিলেন। এখন মর্ডান যুগ, চারদিকে হাল ফ্যাশনের ফ্ল্যাট আর আমাদের বাড়িঘর নিতান্তই পুরানো। আমরা বুকে দীর্ঘশ্বাস চেপে একষ্ট ভাইবোনেরা মেনে নিয়েছি, সবার ভাগ্যে সব থাকে না। কিন্তু আমার মা জননী এই কষ্ট সহ্য করতে পারেন না। ওনার বান্ধবীদের নতুন চকচকা ঝকঝকা ফ্ল্যাট, কিচেন ক্যাবিনেট, টাইলস, স্লাইডিং ডোর আরো কতোকি। আর আমাদের প্রায় ছাল ওঠা মেঝে, ঘুনে ধরা দরজা। জননীর দীর্ঘ শ্বাসে প্রকম্পিত হয়ে আমি বললাম, ঠিকাছে টাইলস করাতো আপাততঃ সম্ভব নয়, তোমার ঘরটাকে পুরো কার্পেট করে নাও, তাহলে মেঝে দেখতে হবে না, তোমার বান্ধবীদের কাছেও প্রেষ্টিজ ঠিক থাকবে।

যে কথা সেই কাজ। বাসার বিল টিল দেয়া, খুচরো কাজের জন্য একজন আছেন। তাকে বললাম মা জননীর ঘরখানা মেঁপে দিতে। মাঁপা শেষ হলে আমি পিতাজি আর আমাদের বাহিনী রওয়ানা হলাম এলিফ্যান্ট রোড, বহুদিন পর। চার – পাঁচ দোকান ঘুরে কার্পেটের কোয়ালিটি আর দাম সম্বন্ধে যাচাই বাছাই সেরে এক দোকানে বসলাম অর্ডার করতে। কাগজ পত্র, টাকা পয়সার কাজ শেষ হওয়ার পর তখন চলছিলো কার্পেট কাটার পর্ব। দোকানদার মালিক অমায়িক ভদ্রলোক। মাশাল্লাহ আমার মতো কথা না বলে থাকতে পারেন না।

তিনি পিতাজিকে জিজ্ঞেস করলেন, অফিসের জন্যে?

পিতাজি মাথা নেড়ে না করলেন।

তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কি জন্যে?

পিতাজি বিরক্ত গলায় বাসার জন্যে।

আজকাল হয়তো টাইলসের যুগে লোকে এমন ওয়াল টু ওয়াল কার্পেট লাগান না। তাই কি উদ্দেশ্যে আমরা এই ভর দুপুরে ওনার কার্পেটের দোকানে হানা দিয়েছি তা জানতে ওনি বদ্ধপরিকর ছিলেন। আর ঐদিকে রোজায়, কারেন্ট ছাড়া গরমে আমার পিতাজি ছিলেন ত্যাক্ত বিরক্ত ও ক্লান্ত। পিতাজি ঘাড় আর মাথার ওপর দিয়ে আলোচনা সংক্ষেপ করতে যেয়ে করলেন সেই বিপত্তি।

পিতাজি কথা বলছেন না দেখে ফিরসে শুরু করলেন তিনি। উপায়নন্তর না দেখে আমাকে দেখিয়ে বললেন, মেয়ের বাসায় কার্পেট লাগায় দিচ্ছেন?

পিতাজি চরম বিরক্তের গলায় বললেন, মেয়ে থাকে বিদেশ, ওকে কার্পেট লাগায় দিবো আবার কি?

কিন্তু পিতাজি জানেন নাই, তিনি কি অধ্যায়ের সূচনা করলেন। কার হাতে বন্দুক দিলেন? তিনি এখন পিতাজিকে ছেড়ে আমাকে নিয়ে পড়লেন

তিনিঃ আপনে বিদেশ থাকেন

আমিঃ মাথা নেড়ে “হ্যা”

তিনিঃ কুন দেশ, লন্ডন না আমেরিকা

আমিঃ পিতাজির দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে, আস্তে বল্লাম, হল্যান্ড

তিনিঃ বিগলিত গলায় “মাশাল্লাহ” “মাশাল্লাহ”। কতোদিন আছেন?

আমিঃ প্রায় এক যুগ

তিনিঃ ঐখানের পাসপোর্ট আপনাদের?

আমিঃ মাথা নাড়ালাম আবার “হ্যা” সূচক

তিনিঃ আবার বিগলিত “মাশাল্লাহ” “মাশাল্লাহ”। জামাই বাবাজি কি করেন?

আমিঃ চাকরী।

তিনিঃ ছেলে মেয়ে কয়জন

আমিঃ এক মেয়ে

তিনিঃ কতো বয়স

আমিঃ সাত

তিনিঃ চরম দুঃখিত গলায়, আর একটা ছেলের দরকার না? মেয়ের বয়স সাত হয়ে গেলো, এইটা কি করছেন? এইটা কি ঠিক হইতেছে?

আমিঃ নিশ্চুপ

তিনিঃ ঈদ করতে আসছেন, বাবা মায়ের সাথে?

আমিঃ না, ঈদের আগেই চলে যাবো

তিনিঃ বিস্মিত, ঈষৎ ক্রোধিত, এইটা কি কইলেন আপনে, মুরুব্বীর সাথে ঈদ না কইরা মুরুব্বীর মনে কষ্ট দিয়া আপ্নে ঈদের আগেই চলে যাবেন। দেশে আসছেন, মা বাপের সাথে ঈদটা অন্তত করে যান।

আমিঃ নিশ্চুপ

তিনি এরপর অন্যদিকে মন দিলেন।

তিনিঃ বাবারে কার্পেট লাগায় দিচ্ছেন?

আমি টাশকিত, আকাশ থেকে ধপ্পর। আমরা কি সেই ছেলে মেয়ে যে বাবা মাকে কিছু করে দিবো? আমরা হলাম সেই ছেলে মেয়ে যারা বাবা মাকে দিয়ে যতো পারি করায় নিবো।

আমিঃ দ্রুত “ইধার উধার” না সূচক ঘাড় নাড়া দিলাম।

তিনি তখন আমাকে ক্ষান্ত দিয়া আবার পিতাজিকে নিয়ে পরিলেন।

তিনিঃ মুরুব্বী কি করেন?

পিতাজিঃ তিক্ত মুখে ব্যবসা

তিনিঃ কিসের ব্যবসা

পিতাজিঃ জাহাজের

তিনিঃ উৎসাহিত কন্ঠ “মাশাল্লাহ” “মাশাল্লাহ” কোথায় যায় জাহাজ, কিসের জাহাজ প্যসেঞ্জার না কার্গো?

পিতাজিঃ সংক্ষেপ কার্গো।

তিনিঃ উদ্বেলিত কন্ঠে, কতো ফুট বাই কতো ফুট?

পিতাজিঃ আছে

তিনিঃ কেমন দাম? কয়টা?

পিতাজিঃ আমারগুলা অনেক পুরান, চলে আর কী।

তিনিঃ উৎসাহিত গলায় মার্কেট রেট কতো?

পিতাজিঃ ………।

তিনিঃ নতুন বানাইলে কেমন খরচা পরব

পিতাজিঃ ………………।

তিনিঃ মাসে খরচা দিয়া কেমুন থাকে আপনার?

এসময় আমাদেরকে খবর দিলো কার্পেট প্যাকড হয়ে গাড়িতে উঠেছে। আমরাও উঠতে পারি

জীবনে অনেক সার্কাস এর সম্মুখীন হয়েছি এবং ভবিষ্যতেও হবো। কিন্তু বাগধারা মিলে যায় এমন সার্কাস খুব কমই কমন পরছে।

ডিং ডং

তানবীরা

২৩.১২.২০১০

No comments:

Post a Comment