Wednesday 15 December 2010

তারানা হালিমের সাথে কিছু কথা

বাসুগ আয়োজিত "মাইগ্রেশন ও রেমিট্যান্স" শীর্ষক সেমিনারে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য মহিলা সাংসদ তারানা হালিম। তার সাথে একান্ত কথাবার্তার কিছুটা এখানে পাঠকদের জন্য তুলে দিলাম।

১. বাসুগের আজকের কার্যক্রম “ মাইগ্রেশন ও রেমিট্যান্স” সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।

আমার খুবই ভালো লাগছে এ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে দেখে। “রেমিট্যান্স” এর সুব্যবহার নিশ্চিত করা এবং এ সম্পর্কে জানা সবারই কতর্ব্য। দেশে প্রবাসীদের পাঠানো টাকা খরচ করে কিভাবে উৎপাদনশীলতা আরো বাড়ানো যায় সে নিয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। বাসুগের এই উদ্যেগকে তাই আমি স্বাগত জানাচ্ছি।

২. নেদারল্যান্ডস প্রবাসী বাংলাদেশীদের সর্ম্পকে বলুন।

প্রবাসী বাংলাদেশীদের আমার সবসময়ই বেশি ভালো লাগে। দেখা যায় দেশের বাইরে থেকেও অনেক বেশি তারাই বাংলা সংস্কৃতির চর্চা করেন, সংস্কৃতিটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করে। অনেক অতিথিপরায়ন ও আন্তরিক হন তারা।

৩।. মুক্তচিন্তা আর মুক্তভাষনের জন্য বাংলাদেশ কতোটুকু নিরাপদ?

আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে আমি “মুক্তচিন্তা” আর “মুক্তভাষনে”র জন্যে নিরাপদ বলবো। বিগত সরকারগুলোর সাথে এ সরকারের অনেক পার্থক্য আছে। এ সরকারের সময় প্রত্যেকে তার নিজের বক্তব্য প্রকাশের অধিকার আছে।

৪. আজকের এই অবাধ প্রচার মাধ্যমের যুগে, যেকোন কারনে ওয়েব সাইট ব্লক করা, কিংবা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া, কিংবা সত্যকে রুখতে বিভিন্নভাবে বাধা দিতে চেষ্টা করা কতোটুকু নৈতিক?

এ ধরনের কিছু হয়েছে এ সরকারের আমলে আমিতো স্মরন করতে পারছি না। অনেক পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে, সবাই যার যার মতো সংবাদ পরিবেশন করছেন, কাউকে বাধা দেয়া হয়েছে বলে জানি না।

তানবীরাঃ জ্বী বাঁধা দেয়া হয়েছে
তারানাঃ আপনি যদি স্পেসিফিক কিছু উল্লেখ করেন
তানবীরাঃ ইউটিউব আটকে দেয়া হয়েছিল
তারানাঃ দেশের সার্বভৌমত্ব কিংবা সুরক্ষার জন্য হুমকিস্বরূপ কিছু থাকলে সেটার জন্য হয়তো বাধা দেয়া হতে পারে কিন্তু এমনিতে ............
তানবীরাঃ কিন্তু সেটা কি নৈতিক? কোন না কোন সোর্স থেকে লোকে সংবাদতো ঠিকই পাচ্ছেন, আর দেশের সুরক্ষার ব্যাপারে জানার অধিকারতো জনগনের আছে
তারানাঃ জ্বী না, আমার মতে নৈতিক না কিন্তু অনেক সময় সেই সময় উদ্ভূদ পরিস্থিতির বিচারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

৫. বাংলাদেশে আজকে “নারী’র অবস্থান কি সন্তোষজনক?

নারীর ক্ষমতায়নের কথা যদি বলেন তাহলে হ্যা সন্তোষজনক। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রনালয়ে নারী মন্ত্রী আছেন। সংসদেও যথেষ্ঠ নারী সাংসদ আছেন। অনেক সরকারী গুরুত্বপূর্ন পদেই আজকাল নারীরা কাজ করছেন।

তানবীরাঃ ক্ষমতার বাইরে?
তারানাঃ এইতো সবে জাগরণের শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে সেটা আরো বাড়বে সে আশা রাখি। এখন নারীর ক্ষমতায়নের কথা শুরু হয়েছে, তবে সেটাকে আইন করে পঞ্চাশভাগে নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যতে যেকোন কিছুতে নারী পুরুষের সমান অংশগ্রহন নিশ্চত করতে হবে।

৬. জঙ্গীবাদের আশঙ্কা কি নারী উন্নতির অন্তরায় বলে আপনি মনে করেন?

অবশ্যই। তাদের উদ্দেশ্যই থাকে উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি। নারী পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই তবে তাদের সূত্রনুযায়ী নারীরা হয়তো বেশি তাদের শিকার।

৭. অভিনয়, আইন কিংবা রাজনীতি কোনটাকে আপনি বেশি উপভোগ করেন?

প্রত্যেকটা কাজের আলাদা আলাদা আনন্দ আছে আমার কাছে। অভিনয় আমার শখ, আইন আমার পেশা আর সংসদ আমার দেশের মানুষের কাছাকাছি থাকার, তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলার সবচেয়ে উত্তম জায়গা।

১০. একসময় আপনি ভালোও গানও করতেন, সেটি ছেড়ে দিলেন কেনো?

হাসতে হাসতে, সবাই তাই ভাবে কিন্তু গানটা আসলে আমার গাওয়া নয়। গানটি ছিল সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া। আমি শুধু লিপ্সিং করেছিলাম তাতে। আমার গলায় গান ......... তবে আমি ভালো নাচ করতাম। কিন্তু সংসারের এতো ব্যস্ততা, মা হিসেবে, আইনবিদ হিসেবে, রাজনীতি নিয়ে কিছুতো স্যাক্রিফাইস করতে হয়, তাই নাচটা ছেড়ে দিয়েছি।

১১. আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন।

ভবিষ্যতেও আমি দেশের মানুষের পাশে থাকতে চাই। নারীর সমঅধিকার নিয়ে, সমাজে নারীর অবস্থানকে আরো শক্ত করতে, তাদের মর্যাদা নিয়ে যে কাজ আমি করে যাচ্ছি সেটাকে পূর্নাংগ রূপ দিতে চাই। দেশের জন্য কিছু করব এটুকুই আমার চাওয়া।

১৪. আজকাল দেশে ধর্মের উগ্র চর্চা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। এটিকে কি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রতি হুমকিস্বরূপ মনে করছেন?

অবশ্যই হুমকিস্বরূপ। উগ্রমৌলবাদ কোন জাতির জন্য ভালো কিছু আনতে পারে না। তাই এ সময়েই এর মোকাবেলা করে একে বাঁধা দিয়ে, রুখে দিতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে জাতি আরো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। সরকার এ ব্যাপারে অনেক সচেতন। পুরনো হামলার অনেক জাল এখন খুলছে। যেমন ধরুন একুশে আগষ্টের গ্রেনেড হামলা। দেশের একজন মন্ত্রীর সাথে যদি জঙ্গী হামলার সরাসরি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে আর কিইবা বলার আছে।

১৫. ধর্মনিরপেক্ষ গনতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্বেও কবি “তাসলিমা নাসরিন” কেনো দেশে ফিরতে পারছেন না? একজন মানুষ তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আপনার মত জানতে চাই।

একজন মানুষকে তার দেশে ফিরতে বাঁধা দেয়া অবশ্যই অমানবিক কিন্তু আসলে আমি ঠিক জানি না তার অন্যদেশের নাগরিকত্বে কারনে দেশে ফিরতে তার আইনগত কোন বাঁধা আছে কি না কিংবা

তানবীরাঃ আইনগত বাধা থাকলে বাংলাদেশের যেসব কনস্যুলেট বাইরে আছেন তারা সেটার সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে পারেন নাকি এটাকে আমরা সরকারের সদিচ্ছার অভাব বলে দেখব
তারানাঃ আসলে তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন, এতো দ্রুত জাতিকে বড়ো একটা ঝাকি দিতে চেয়েছেন, এই একই কথাগুলো কিন্তু আমরাও বলছি, আমাদের উদ্দেশ্যও কিন্তু তাই, কিন্তু আমরা এগোচ্ছি ধীর লয়ে
তানবীরাঃ একজন লেখক কিভাবে লিখবেন সেটাকি তার নিজের স্বাধীনতা নয়
তারানাঃ আসলে তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না, একজন মানুষ হিসেবে এ ব্যাপারটা আমার কাছেও খুবই দুঃখজনক।

সময়ের সংক্ষিপ্ততার কারনে আমাদের আলাপচারিতা এখানেই শেষ করতে হলো।

তানবীরা
১৪.১১.২০০৯

No comments:

Post a Comment