ভাইয়ের ছেলেটা জন্মে বড় হয়ে যাচ্ছে মাসে মাসে, তাকে এখনো ছুঁয়ে দেখা হলো না। বোনের মেয়েটা ফোনে আই-ডাই শব্দ করে তাকে ঠোঁট দিয়ে চেটে দেখা হলো না। মায়ের চুলের তেলের গন্ধ পাইনা আজ কতোদিন। আমার নিজের মেয়েটা রোজ কতো স্বপ্ন বুনে তার তুতো ভাইবোনদের নিয়ে সেগুলোতে রঙ মাখানো হলো না। ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে রবীন্দ্র সরোবরে এলোমেলো হাঁটা আর বটি কাবাব মিস করি। ধানমন্ডি পাঁচ নম্বরের মহুয়া চটপটি মিস করি, আট নম্বরের কোনের ঝালমুড়ি মিস করি, মুড়ি খেয়ে ঝালে পাগল হয়ে মেমোরীতে ঢুকে কোক খাওয়া মিস করি। কোক খেতে খেতে আবার বীফরোল কিংবা চিকেন প্যাটিস সাথে চকলেট পেস্ট্রি মিস করি। এই গরমে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে বাবার কড়া উপদেশ মাখা ঠান্ডা বেলের শরবত মিস করি। মায়ের আদর মাখা ঠান্ডা ডাবের পানি মিস করি।
একটানা বর্ষনের সাথে যুদ্ধ করে যে ক্লান্ত কাকটা নিরিবিলি জানালার সানশেডে আশ্রয় নিয়ে তার ডানা দিয়ে গা চুলকায় তাকে মিস করি। স্যাঁতস্যাঁতে ঢাকা মিস করি, ঘেমো ঢাকা মিস করি, হাস্নাহেনার গন্ধ মিস করি। ভয়াবহ জ্যামটার জন্যও আজকাল খারাপ লাগে। বসুন্ধরার এক টিকেটে দুজনের সিনেমা দেখা মিস করি। খোঁজ দ্যা সার্চ এর অনন্তকে মিস করি। আশে পাশের বাড়ির নাম না জানা সব ছেলেগুলোকে মিস করি। যাদের ফ্যাশন – ফ্যুশন নিয়ে, চুল-দাড়ি নিয়ে হাসাহাসি করে আমরা লোডশেডিং এর অসহ্য সময়গুলো সহজেই পার করে দিতে পারি। গোধূলি বেলায় ছাঁদের ওপর দাঁড়িয়ে বিদায় নিতে থাকা গোমড়া মুখো সূর্যটাকে মিস করি আর তার সাথে মিস করি নীড়ে ফেরার আনন্দে হুটোপুটি করতে থাকা আনন্দিত সেই পাখির ঝাঁকটাকে। শেষ পূর্নিমার মলিন কিন্তু বড় আপন চাঁদটাকে মিস করি। লোডশেডিং এর অন্ধকার সন্ধ্যায় অন্তাক্ষরী খেলা মিস করি, মশার কামড় মিস করি। ফেরা হবে না হয়তো আরো একটি বছর এই প্রিয় জিনিসগুলোর কাছে।
তানবীরা
০৫.০৭.২০১১
No comments:
Post a Comment