Wednesday 28 December 2011

প্রভা তোমাকে অভিনন্দন

পৃথিবীতে সাধারণের বাইরে যেকোন ঘটনা ঘটলেই ব্লগ জগতে ঢেউ উঠে যায়। ঘটনার শাখা-প্রশাখা-বিশাখা-অন্তশাখা সব আদ্যোপান্ত বিশ্লেষনের ঝড় উঠে যায়। প্রত্যেকে তার বিদগ্ধ দৃষ্টি দিয়ে ফালা ফালা করে অন্তর্নিহিত ভাব দিয়ে লেখা লেখেন। কিন্তু প্রভা বিয়ে করেছেন এবং নিজে সেকথা পত্রিকা অফিসে ফোন করে সবাইকে জানিয়েছেন, এটি বেশ একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা কিন্তু এনিয়ে এখনো আমি কোন ফেসবুক নোট বা ব্লগ পড়িনি বলেই মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের আর্থিক-সামাজিক পরিবেশে একটি মেয়ের জীবনে যে ঝড় বয়ে গেলো তারপর তার এই ফিরে আসা আমার দৃষ্টিতে সমাজ পরিবর্তনের কিংবা অন্যায়ের বিরুদ্ধে হেরে না যাওয়ার একটি উজ্জল সংকেত। কারো কাছ থেকে সে একটা অভিনন্দন বা অভিবাদন পেলো না, আশ্চর্য।

আমি খুব নগন্য একজন মানুষ প্রভা, কিন্তু তুমি আমার অভিনন্দন জেনো। যে ঝড় ঠেলে, বাস্তবকে স্বীকার করে তুমি সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছো, তার জন্যে অভিনন্দন।

সামান্য কিংবা অসামান্য কারণে যে দেশে মেয়েরা টপাটপ আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেয়, সে দেশে তুমি নিজের ক্ষতি না করে, পড়াশোনা শেষ করার, নিজের পেশায়, জীবনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছো তাকে অভিনন্দন।

রাজীব কিংবা অপূর্ব যে নামেই তাকে ডাকো, তাদের বিশ্বাসঘাতকতায় ভেঙ্গে পড়োনি সেজন্য অভিনন্দন।

বিদেশে পালিয়ে যাওনি, নিজেকে সমাজ বা বন্ধু বিচ্ছিন্ন করোনি, তার জন্যে অভিনন্দন।
তোমার মানসিক শক্তি, মনোবল, সাহস, দৃঢ়তার প্রতি রইলো অভিনন্দন।

তোমার পরিবার, বন্ধু, শুভাকাঙ্খী যারা তোমার এই পথ চলার পথে নিদারুন সাহস জুগিয়ে গেছে, তোমাকে ভেঙ্গে পড়তে দেয়নি তাদেরকেও অভিনন্দন।

জঘন্য অপরাধ করা সত্বেও রাজীব সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের দ্বারা নিগৃহীত কিংবা শাস্তির আওতার বাইরেই থেকে গেলো দেখা সত্বেও তোমার এই পায়ে পায়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রতি রইলো শুভকামনা।

আশাকরছি তোমাকে দেখে অনেকেই সাহস পাবেন। যারা দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ঘৃন্য মানুষগুলোকে সমাজে জিতিয়ে দিয়ে যায়, তারা হয়তো কখনো তোমাকে ভাববে।

একটা দুর্ঘটনাই যে একটা মানুষের পূর্নাংগ জীবন নয় সেটা সবাইকে ভাবতে শিখানোর জন্যে তোমাকে অভিনন্দন। তবে হ্যা, স্বীকার করতেই হবে, সমাজে তোমার তারকাখ্যাতি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠার জন্যে, তুমি যতো দ্রুত এই সাহস সঞ্চয় করে নিজেকে গুছিয়ে আনতে পেরেছো একটা সাধারণ মেয়ের পক্ষে সেটা কখনোই সম্ভব নয়। তবে তোমরা শুরু করলে সে সাহস নিশ্চয় একদিন সমাজের সাধারণ ভাগে প্রবাহিত হবে। আনুশেহ শুনেছি ড্রাগ এডিক্ট্যাক্ট ছিলেন। তিনি তা স্বীকার করে এখন মাদকমুক্ত সমাজের জন্যে লড়াই করছেন। তোমার কাছে অনুরোধ, তুমিও এমন কিছু করো যাতে সমাজে যেসব মেয়েরা ধাক্কা সামলে আর উঠতে পারেনি, তারা আলোর মুখ দেখতে পায়। কিংবা তোমার মতো এমন ক্ষতির সম্মুখীন যাতে অন্যেরা আর না হয়। তোমার কাছ থেকে এটুকু আশা আমরাতো করতেই পারি।

একটা খটকা মনে থেকেই যায়, প্রভা তাড়াহুড়ো করেননিতো আবার? অপূর্বকে দেখিয়ে দেয়ার জন্যে আগ-পিছ না ভেবে আবার কোন আগুনে ঝাঁপাননিতো? প্রভার বিয়ের সমসাময়িকই পত্রিকাগুলোতে অপূর্ব আর তার বউয়ের ছবিসহ রিসেপশনের খবর ছাপা হচ্ছিলো তাই প্রশ্নটা মনে ঘুরে ফিরেই আসছে।

নতুন যুগল শান্ত-প্রভা’র নতুন দিনের প্রতি এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারকে অভিনন্দন।

তানবীরা
২৯/১২/২০১১

No comments:

Post a Comment