আ-কি-হ = আমি কি হলামরে হইলো মুই কি হনুরে এই
রোগের মর্ডান ভার্সান। যাহাকে অন্তত জলিল ভাইয়ের ইংলিশে “সিকিং এটেনশন ডিসঅর্ডার”
ও বলা হইয়া থাকে। আমরা অনেকেই এই রোগে অল্প বিস্তর আক্রান্ত। আজিকে ইহার লক্ষন ও
প্রতিকার নিয়া আলোচনা করিবো প্রিয় পাঠকরা, ধৈর্য্য ধরিয়া বসুন, বিজ্ঞাপন বিরতিতেও
টিভির রিমোট ঘুরাইবেন না। যাহা মিস করিবেন তাহাই মিস হইয়া যাইবে। মিসকে মিসেস করিবার
আর সুযোগ পাইবেন না।
প্রাথমিক লক্ষনঃ ইনারা হার্ডকোর ফেবু ইউজার
হইয়া থাকেন। ঘন্টায় ঘন্টায় স্ট্যাটাস আপডেট করিয়া থাকেন। কি খাইয়া কি অনুভূতি হইলো,
ধরেন কোন দেশের শুটকী মাছ বিখ্যাত, সেই বিখ্যাত শুটকী পেটে পড়িবার পর শারীরিক ও
মানসিক অনুভূতি ইত্যাদি ইত্যাদি। ইহাছাড়াও আছে, পৃথিবীর কোন জাতের ও প্রকারের কূল
মিষ্টি কিংবা কাঁচামিঠা হয়, সবচেয়ে ভাল বেতফল পৃথিবীর কোন স্থানে জন্মে, স্থানভেদে
ইহাদের প্রকারভেদ ও স্বাদভেদ ইত্যাদি তথ্য তাহার বন্ধুতালিকা তথা সাবস্ক্রাইবারদের
জানাইয়া ধন্য করেন। কূল মুখে দিবা মাত্র যে অনুভূতি শরীর দ্বারা চালিত হইয়া
মস্তিকে প্রবাহিত হয় তাহাই হয় সেই মূহুর্তের স্ট্যাটাস মানে হোয়াটস অন ইউর মাইন্ড।
কূল আগে ভক্ষন করেন না স্ট্যাটাস মাথায় আগে সেট করা হয় তাহা জানিবার পদ্ধতি অবশ্য
এখনো জুকারবার্গ সেট করিয়া উঠিতে পারেন নাই। ইনারা ক্রিকেট খেলা, স্বাধীনতা দিবস, বিজয়
দিবস, ঈদ মোবারক, শুভ বিজয়াতেও মূল্যবানবানীসহ শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস দিয়া থাকেন।
বিখ্যাত ও ব্র্যান্ডেড জিনিস ছাড়া তাহারা
অন্যকিছু ভক্ষন করিয়া সময়, পয়সা ও শরীর কোনটাই নষ্ট করেন না। স্যালমন খাইবেনতো
নর্থ সীতে যেয়ে ছিপ ফেলিবেন, উট খাইবেনতো সৌদির মরুভূমিতে যাইয়া রাখাল সাজিবেন,
ফ্রান্সে যাইবেনতো লী মিউরিসে খাইবেন (Le Meurice), ইটালী যাইবেনতো ফরটুনাটো আল পানঠেওন (fortunato Al
Pantheon), নিউইয়র্কে যাইবেনতো
ফোর সীজন্সে খাইবেন। তাহারা আসন্ন শীতে কোন ব্র্যান্ডের জ্যাকেট কিনিবেন, জ্ঞান
অর্জনের জন্যে কতো টাকার কি কি বই কোথা হইতে খরিদ করেন, কোন বুটিকের শাড়ি পড়েন, কোন
তেলে তাহাদের কেশ এতো ঘন কালো রেশমি সবই জনসাধারনকে রীতিমতো জানাইয়া হেদায়েত করিয়া
থাকেন। যাহাতে অবার্চীনেরা তাহাদেরকে ফলো করিয়া নিজেদেরকে লাইনে আনিতে পারে।
বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তির
সাক্ষাত পাওয়ামাত্র ঝাপাইয়া পড়িয়া তাহার সহিত হাসিমুখে আর বিভিন্ন ইমারতকে জড়াইয়া
ধরিয়া কাত হইয়া ফটো তুলিয়া ফেবুতে পোষ্টাইয়া থাকেন। কোথায় কোথায় নাটকের কিংবা
চলচিত্রের শুটিং হইবে, কোন নেতানেত্রী বা উচ্চপদস্থ আমলা বিদেশ সফরে আসিতেছেন,
কিংবা বিডি দল কোথায় কখন ক্রিকেট খেলিবে তাহার খোঁজ পাইবা মাত্র অন্যসকল কিছু মাথায়
তুলিয়া দ্বিগবিদিক শূণ্য হইয়া সেইদিক পানে ছুটিবেন। ছবি তুলিয়া তুলিয়া ফেবু
ভাসাইয়া তাহা সর্বসাধারনকে জানাইয়া আত্মপ্রসাদ লাভ করিবেন। হে হে হে দেখ এই যে
আমিওওওওওওও। তাহাদের চিন্তা ভাবনা এইভাব নিয়া প্রকাশ হইবে যে, উহাই সর্বজনীন, ইহার
আগে পরে পৃথিবীতে আর কোন মতামত থাকিতে পারে না, তিনি যাহা ভাবিয়াছেন তাহাই ঠিক –
সঠিক – অত্যধিক। তিনিই সত্য তিনিই সর্বজনীন, তিনি তিনি তিনি, বাকি সব গুড়া গুড়া চিনি
তথা বানের পানি।
তাহারা সাধারনতঃ প্রেমিক প্রকৃতির হইয়া
থাকেন। দুনিয়ার তাবদ জিনিসের প্রতি নিঃস্বার্থ প্রেমানুভূতি থাকে তিনাদের। শিল্পপ্রেমিক
হইয়া থাকেন। শিল্পের বিভিন্নক্ষেত্র যেমন সঙ্গীত, ফটোগ্রাফি, চিত্রশিল্প, সাহিত্য
ইত্যাদি ভালবাসেন। ইহা ছাড়াও তাহারা পশুপ্রাণী, জলবায়ু, পুষ্প, মানবতা ইত্যাদির
প্রতিও নিখাঁদ প্রেম ধারন, লালন ও পালন করেন।
প্রতিকারঃ সাধারনতঃ নিরাময়ের অযোগ্য। দিনে
দিনে এই রোগের প্রকোপ বাড়িতে থাকে। অনলাইন মনষ্টার হইতে অফলাইন মনষ্টারে
রুপান্তরিত হন। ফেবুতে পাকনামি করিতে করিতে শেষে নিজের আশেপাশে শুরু করিয়া দেন। এক
সময় শিকল দিয়া বাঁধিয়া রাখিবার প্রয়োজন পড়ে, ইলেকট্রিক শকে কাজ হয় না, উলটা মেশিন
বিকল হইয়া যায়।
তানবীরা
০৪/০৯/২০১২