Tuesday 7 February 2012

বইমেলা কড়চা – (এক) দুধের স্বাদ ঘোলে (রম্য)


বইমেলায় যেতে পারি না। কতো প্রিয়জনের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়, আনন্দিত, গর্বিত মুখখানা ছবিতে দেখি, সামনে থেকে দেখতে পারি না। আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারি না, বার্গার, হালিম খেতে পারি না। রোজ পত্রিকা পড়ে, ব্লগ পড়ে, ফেসবুকের স্ট্যাটাস আর নোট পড়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাই। পত্রিকার মারফত জানলাম বিশিষ্ট সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বঙ্গবন্ধুর হত্যার ওপর একটি বই লিখছেন। হঠাৎ তিনি মিসির আলি আর হিমুকে বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ওপর কেন পড়ে গেলেন ভাবতে যেয়ে মনে হল, নিউইয়র্কে শেখ হাসিনার ফুল পেয়ে তিনি হয়তো বিগলিত হয়েছেন। এর প্রতিদান স্বরূপ বঙ্গবন্ধুর হত্যার ওপর একটি উপন্যাস লিখবেন। হয়তো তারপর শেখ হাসিনা কিংবা তার পরিবারকে উৎসর্গ করলেও করতে পারেন।

কিন্তু এতো কঠিন বিষয় নিয়ে তিনি লিখবেন উপন্যাস!!! চাইলেই কি তিনি পারবেন? তারওতো আমার মতো সবকিছু সরলীকরন করে ফেলার বদভ্যাস আছে। একবার শুনলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বৎসরের ছুটি নিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ওপর পাঁচশ পৃষ্ঠার উপন্যাস লিখছেন। চারদিকে ঢাক ডোল। এটি নাকি মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি “মাষ্টারপীস” হবে। “জোস্ন্যা ও জননীর গল্প” পড়ে আমি যারপর নাই হতাশ হয়েছিলাম। একজন লেখক লেখার আগেই কি করে বুঝে ফেলেন তার বই কতো পৃষ্ঠা হবে তাও আশ্চর্য। মনের আনন্দে লিখার পর গুনা যায় কতো পৃষ্ঠা হলো। তাই ভাবছিলাম বঙ্গবন্ধুর হত্যা নিয়ে লেখা উপন্যাস “দেয়াল” কি রকম হতে পারে? কিছু এরকম হয়তো?

টেলিফোনে বঙ্গবন্ধু তার বিশ্বস্ত সেনা সদস্যের সাথে কথা বললেন। তাঁর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠলো। গভীর খারাপ ব্যাপার না হলে এধরনের ভাঁজ তাঁর কপালে দেখা যায় না। তিনি খক খক করে তিন বার কাশলেন। দেশের সার্বিক অশান্তি ভাবতে ভাবতে তাঁর ভীষন চায়ের তেষ্টা পেয়ে গেল। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, চা করে আনতে। বেগম ফজিলাতুন্নেসা রান্নাঘরে গেলেন। স্বামীর কাজের জন্য গৃহভৃত্যদের আর ডাকলেন না। কিন্তু চা বানাতে গিয়ে কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না। শেষে তরকারীর চামচটা উলটা করে ধরে তার ডাটা দিয়ে চিনি নাড়তে নাড়তে বঙ্গবন্ধুর হাতে চায়ের কাপটা দিলেন। চা মুখে দিয়েই বঙ্গবন্ধু মুখটা বিকৃত করে ফেললেন। কঠিন গলায় বললেন, এটা কি বানাইছো? চা না শরবত? এতো বছর হয়ে গেলো এখনো চা বানাইতে শিখো নাই? যাও আর এক কাপ নিয়ে আসো চিনি ছাড়া সাথে মুখের মিষ্টি কাটানোর জন্য জর্দা দেয়া একটা পানও নিয়ে এসো।

স্বামীর কথা শুনে মুখ কালো করে ফেললেন বেগম ফজিলাতুন্নেসা। বঙ্গবন্ধু সেটা খেয়াল করলেন না। তিনি গভীর ভাবনায় নিমগ্ন। বেগম ফজিলাতুন্নেসার খুব ইচ্ছে করছিল স্বামীর কপালে একটু হাত রাখতে। কিন্তু রাখলেন না, তাঁর স্বামী কাজের সময় এগুলো পছন্দ করেন না। মানুষটি বড় ভাল। তিনি অসম্ভব ভালবাসেন তাঁর স্বামীকে। কিন্তু তিনি কখনো স্বামীকে তা জানতে দেন না। বঙ্গবন্ধু তিক্ত গলায় বললেন, সামনে দাঁড়ায় আছ কেন, নিজের কাজে যাও। তিনি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে আস্তে আস্তে সামনে থেকে সরে গেলেন।


নীচে বাইরের বারান্দায় মেজর ডালিম পায়চারী করছেন। তিনি থু থু করে কয়েক দলা থু থু ফেললেন লনের ঘাসে। খুব সিগারেটের তেষ্টা পেয়েছে। পকেটে হাত দিয়ে দেখেন মাত্র দুটো ময়লা পাঁচ টাকার নোট যার মধ্যে একটি আবার মাঝখানে ছিড়া। আর দুটো গোল্ডলীফ সিগারেট আছে। সিগারেট ঠোঁটে ঝুলিয়ে দেখেন, লাইটার আনতে ভুলে গেছেন।

বঙ্গবন্ধুর গৃহভৃত্যকে বললেন, লাইটার দিতে,

ভৃত্য বললো, মাশাল্লাহ, আমি দিবো লাইটার!!!

এখন থেকে সিগারেট খাইলে লাইটার রশি দিয়ে গলার সাথে ঝুলায় রাখবেন মিয়া ভাই

মেজর ডালিম শীতল চোখে গৃহভৃত্যের দিকে তাকালেন। ভাবলেন যখন বাগে পাবো ...।। মনে মনে তিনবার গাল দিলেন, শালা, শালা, শালা। তিনবার গালি দিলে রাগ অনেক কমে যায়। তিন একটা ম্যাজিক সংখ্যা। পৃথিবীর মহান জিনিসের সবই তিন। আকাশ-পাতাল-পৃথিবী তিন। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত তিন। ছোটকাল-মধ্যকাল-বুড়াকাল তিন। পতি-পত্নী আর ও তিন।

মেজর ডালিমের বউ রুপবতী খুবই রুপবতী। কিন্তু মেয়েটি সাথে অসম্ভব বুদ্ধিমতী। রুপবতী মেয়েরা সাধারণতঃ বুদ্ধিমতী হয় না কিন্তু এ মেয়েটি তার ব্যাতিক্রম। প্রকৃতি মাঝে মাঝে অদ্ভূদ কিছু কাজ করে, যার ব্যাখা খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে। সে নিজেও রহস্যময়। প্রকৃতি নিজেও চায় না মানুষ তার সব রহস্য ভেদ করুক।

শেখ কামাল ছেলেটি এমনিতে দারুন করিতকর্মা আর স্মার্ট। কিন্তু এ মেয়েটির সামনে এলে সব কেমন যেন তার গুলিয়ে যায়। মায়াবতী এ মেয়েটিকে দেখার পর শেখ কামালের বুকটা কেমন যেন করে উঠল। হড়বড় করে অনেক কথা বলে ফেলেন যার আসলে কোন মানে হয় না। মেয়েটি যখন তার ডাগর কাজল চোখ দুটো তুলে তাকায়, তার সারা পৃথিবী তখন দুলতে থাকে। আজকাল তার মনে হতে লাগল, এই অসাধারণ মেয়েটিকে ছাড়া তার বেঁচে থাকা বৃথা... বারে বারে ঘুরে ফিরে মেয়েটিকে মনে পড়ে। নানা উছিলায় সে ঐ বাড়িতে ফোন করে, কখনো শুধু মেয়েটির কিন্নরী কন্ঠস্বর শুনে ফোন ছেড়ে দেয়, নিজে কোন কথা না বলে। মেয়েটি হ্যালো হ্যালো বলে জানতে চায় কে আছে ওপাশে, তারপর অবাক হয়ে ফোন ছেড়ে দেয়।

এই রাতটি যেন কেমন। দূরে অমঙ্গল আশঙ্কা করে কোথায় যেন দুটো বিড়াল কেঁদে উঠল। ভ্যাপসা গরম, প্রকৃতি নিস্তব্ধ। এমন সময় আততায়ীর রাইফেল গর্জে উঠলো ঠা ঠা ঠা। কেউ বাঁচাতে এলো না বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। প্রকৃতি কি এই নিঠুরতা ক্ষমা করবে? প্রকৃতি কখনো তার হিসাব অপূর্ন রাখে না।

***** পরিশেষে যে “দেয়াল” কিনবেন, পড়া হয়ে গেলে আমাকে দিয়েন, একটু মিলায়ে দেখবো আমার এই লেখাটার সাথে।*****

শুভরাত্রি

তানবীরা
০৭/০২/২০১২

No comments:

Post a Comment