Sunday 6 September 2015

খেলারাম খেলে যা

শেষ পর্যন্ত পড়েই ফেললাম, সৈয়দ হকের বহুল আলোচিত উপন্যাস “খেলারাম খেলে যা”। রিসেন্ট দেখা মুভি “ফিফটি শেডস অফ গ্রে” এর কাছাকাছি বাংলা ভার্সন বলে  মনে হলো। বিভিন্ন মেয়েদের প্রতি কামের আকুতি ছাড়াও বাবর আলীর কিছু দার্শনিক ভাবনা এই উপন্যাসে উঠে এসেছে। তার কিছু কিছু আমি নীচে উল্লেখ করলাম।  কারো হাতে প্রচুর সময় থাকলে উপন্যাসটি পড়ে নিতে পারেন। সেরকম আহামরি কিছু নয়। যে সময় উপন্যাসটি লেখা হয়েছিলো, সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এধরনের চরিত্র কম থাকলেও আজকের বাংলাদেশ তথা সারা পৃথিবীতে এ ধরনের বাস্তব চরিত্র, বই, মুভি এতো আছে যে, না পড়লে খুব বিশেষ কিছু হারাবেন বলে আমার মনে হয় না। কারণ এ ধরনের কিছু কোথাও না কোথাও পড়েছেন কিংবা মুভিতে দেখেছেনই।


তুমি আছ অতীত ভবিষ্যত্যের মাঝখানে, আগেও যেখানে ছিলে, পরেও সেখানে থাকবে।

যা ভাল লাগে তা ধরে রাখা বোকামি। মানুষ ধরে রাখতে চায় বলেই দুঃখ পায়। আসলে সব কিছুই একটা স্রোতের মত। সুখ, ঐর্শ্বয, জীবন, আকাশ, বিশ্ব, মহাবিশ্ব, ছায়াপথ, তারকাপুঞ্জ, সব কিছু। সমস্ত কিছু মিলে আমার কাছে প্রবল শুভ্র জ্বলন্ত একটা মহাস্রোত মনে হয়। দুঃসহ কষ্ট হয় তখন। আমার জীবনে যদি একটা কোন কষ্ট থাকে তাহলে তা এই। এই মহাস্রোতের সম্মুখে আমি অসহায় তুচ্ছ, আমার অপেক্ষা সে রাখেন না। তুমি আমি এই শহর, মহানগর, সভ্যতা সব অর্থহীন বলে মনে হয়। আমি কি করলাম, তুমি কি করলে, ন্যায়-অন্যায় পাপ-পূণ্য, মনে হয় সবই এক, সব ঠিক আছে – কারণ সবই কত ক্ষুদ্র।

কিছু এসে যায় না, কে একজন তার নাম শেক্সপিয়র, সে হ্যামলেট লিখল কি না লিখল, তাও কিছু নয়। এই পৃথিবীর মত কত কোটি পৃথিবী আছে, কত কোটি হ্যামলেট লেখা হয়েছে, কত বিতোভন সোনাটা লিখেছে, কত বাস্তিলের পতন হয়েছে – কতটুকু জানি। এই পৃথিবী আদিতে ছিল উত্তপ্ত একটা পিন্ড, কোটি কোটি বছর পর একটা শীতল প্রাণহীন বস্তুপিন্ড হয়ে তা মহাশূণ্যে ঘুরতে থাকবে। তখন কোথায় তোমার বাবর আলী কোথায় জাহেদা, কোথায় সেক্সপীয়ারের হ্যামলেট আর জাপানের সামুরাই আকাশ ছোঁয়া দালান আর সমুদ্রে ভাসমান কুইন এলিজাবেথ।

মানুষ সেই জন্যেই বোধ হয় ঈশ্বরের কল্পনা করে। ঈশ্বরের ধারনা একটা সীমার আরোপ, একটা আকার প্রদানের প্রচেষ্টা মাত্র। এই অনন্তকে ধারন করতে পারি না বলেই নামে একটা ফ্রেম দিয়ে নিয়েছি।

মানুষ নিজেকে কতটা মানিয়ে নিতে পারে। তোমার কাছে যেটা অস্বাভাবিক, আরেক জনের কাছে সেটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক। তুমি যা বিশ্বাস কর, আরেকজন তা করে না। তুমি যাতে বাঁচ, আরেকজনের কাছে সেটাই মৃত্যু। আমি যেভাবে বাঁচতে চাই, আরেকজন সেভাবে চায় না। তুমি যা নাও আরেকজন তা ফেলে দেয়। সবই সত্য। কারণ সত্য মাত্রই আপেক্ষিক, এই মৃত্যু ছাড়া।

সৈয়দ শামসুল হক


No comments:

Post a Comment