Thursday 7 April 2016

স্বপ্নিল বর্ণিল - ১





ছবিঃ রাকসিন্দা আফরিন
লেখাঃ তানবীরা তালুকদার...


সারা সপ্তাহ টি-টুয়েন্টির ক্রিকেট খেলোয়ারদের মত দারুন খাটুনিতে গেলো। শনিবারে সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালার পর্দা সরিয়েই আভা দেখলো আকাশটা অনেক দিন বাবার বাড়ি যেতে না পারা নতুন বউয়ের মত মুখ গোমড়া করে যেনো তার পানে তাকিয়ে আছে, প্রকৃতি বক সাদা চাদরে আপাদমস্তক ঢেকে নিজেকে সবার কাছ থেকে লুকিয়ে ফেলেছে। এই প্রেম হারিয়ে ফেলা বিষাদগ্রস্ত আবহাওয়া যেনো তাকে গ্রাস করে ফেলতে না পারে সেজন্য চট করে উঠে, মেয়েকে নিয়ে তৈরী হয়ে চলে গেলো মিউজিয়ামে, রাইক্স মিউজিয়ামে https://www.rijksmuseum.nl/nl/


রাইক্স মিউজিয়ামে এতো এতো দুর্লভ জিনিসের সংগ্রহ, ইমেলদা মার্কোসের জুয়েলারী সংগ্রহের কাছাকাছি হয়তো, কোনটা রেখে কোনটা দেখবে। আভার ছোট্ট পরী কিছুক্ষণ দেখে তো কিছুক্ষণ হরিণ ছানার মত ছুটে খেলে বেড়ায় মিউজিয়ামের বড় হলে। আভার শখ ফটোগ্রাফি। আর তার শখ পূরণ করার এতো উপাদান চারধারে ছড়িয়ে আছে যে সে ক্লিক করে করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। যেনো আলীবাবার সেই লুটেরা খাজানার সন্ধান পেয়েছে সে। পুরো পরিবার তারা চৌধুরী বাড়ির পূত্রবধূর রুপের সৌন্দর্‍্যে যেনো মুগ্ধ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে তারা মুগল দরবারের মত বিরাট একটি হলঘরে এসে উপস্থিত হলো যেখানে আভার ছোট্ট পরী অবাক বিস্ময়ে রেলিঙ ধরে সামনে তাকিয়ে আছে ... সেই দৃষ্টিতে ঝরে পড়ছে একরাশ নির্বাক মুগ্ধতা ...


নতুন বর্ষার ডাকে নেচে ওঠা সদা চঞ্চল ময়ূরীর মত পরীকে হঠাৎ এভাবে প্রতিমা নিশ্চল দাড়িয়ে থাকতে দেখে আভার মধ্যেও সে ঘোরের হাওয়া এসে ঢেউ দিয়ে গেলো, প্রায় ক্লিক ক্লিক খেলার সময় অনেক কম্পোজিশানকে নিয়েই আভার মাথায় বারাক হোসেন ওবামার মত নানারকম ভাবনা খেলা করে, ঘোর লাগে। সেসব লজ্জা পাওয়া কিশোরী প্রথম প্রেম ভাবনা গুলো কাউকে সে বলে উঠতে পারে না, নিজেকেই প্রবোধ দেয় এই বলে, কী অদ্ভুত সব কথা ভাবি আমি ...


পরীকে গোলগাল ঠাণ্ডা চাঁদের মতো থমকে থাকা বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনে হচ্ছিল, হয়ত আঠারশো শতাব্দীতে এখানে এভাবেই এই বয়সী কোন মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো ঠিক একই ভঙ্গিতে। সমুদ্রের নুড়ির মত এত্তো এত্তো বই দেখে সেও হঠাৎ ফ্রান্সে বোমা পড়া মানুষের মত অবাক হয়েছিল বই কী। হয়তো সেই মেয়েটি পড়তেই জানতো না। বইগুলো দেখে দেখে ভাবতো, আহা আমি যদি পড়তে জানতাম, কত্তো কী জানতে পেতাম, সারা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াতাম, কতো বড়ও হয়ে যেতাম। বইগুলো মেয়েটিক খুব টানতো। রোজ খেলার ফাঁকে ফাঁকে ছুটে এসে বই আর বই পড়ুয়াদের দেখে যেতো ...তারপর চোখের কোণে জমে যাওয়া অশ্রু টুকু হাতের চেটোতে আলগোছে মুছে নিয়ে আবার ফিরে ছুটে যেতো তার নিজের জগতে। যে জগতে হয়তো অনেক কিছু ছিলো শুধু কোন বই ছিলো না

পরীর দাপাদাপিতে আভার ধ্যান ভাঙলো। নিজের মনেই হাসলো কোথা থেকে কোথায় চলে গিয়েছিলো সে তারপর মনে সেই চির পরিচিত সুর আবার গুনগুনিয়ে এলো,


কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা মনে মনে।
মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে।
তেপান্তরের পাথার পেরোই রূপকথার,
পথ ভুলে যাই দূর পারে সেই চুপকথার,
পারুলবনের চম্পারে মোর হয় জানা মনে মনে

No comments:

Post a Comment