Monday 11 April 2016

জার্ণাল এপ্রিল ২০১৬ (২)

ইউরোপে কিংবা এমেরিকাতে যত বাংলাদেশী বসবাস করেন তাদের সত্তর থেকে আশির ভাগই কখনো না কখনো, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থণা করে সেখানে স্থায়ী হয়েছেন। দেশে কিংবা বিদেশে এই ব্যাপারটি ছিলো “ওপেন সিক্রেট”। বলা বাহুল্য সে সব রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থণার আবেদন গুলোর সিংহ ভাগই মিথ্যে ছিলো। তখন বাংলাদেশের বিদগ্ধ বুদ্ধিজীবিগনের এ নিয়ে কোন সমস্যা বা আপত্তি ছিলো না। সে সকল বাংলাদেশীদের নৈতিকতার ভিত্তি কিংবা কার্য কলাপ নিয়েও তাদের মনে কোন সংশয় বা প্রশ্ন আসে নি। খুব কম গল্প, উপন্যাস কিংবা সাহিত্যে সেসব মানুষেরা নায়কের মর্যাদা পেয়েছেন। জীবিকার টানে বিদেশে আসা মানুষেরা দেশের মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে যেতেন, তারা শুধুই প্রবাসী। এ সকল প্রবাসীরা বিদেশে প্রচুর কষ্টকর কাজ করে দিনাতিপাত করেন, সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতে দেশ থেকে বুদ্ধিজীবি লেখকগন বিদেশে এসে প্রবাসী শ্রমিকদের খরচায় তাদের আতিথ্য নিয়ে নিজের সাথে আনা পয়সাটুকু বাঁচিয়ে নিয়ে যেতে কোন কুন্ঠাও বোধ করতেন না। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের উপঢৌকন নিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসেন।

কিন্তু এখন সেই “তেনারা”ই দিনরাত বিদেশে “রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থণার” ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন বিদ্বেষমূলক স্ট্যাটাস প্রসব করে যাচ্ছেন, যেনো ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা! এই বিদ্বেষের কারণ কি? কারণ আছেরে ভাই, আছে তো বটে। তারা বছরের পর বছর দিস্তা দিস্তা কাগজ খরচ করে ইয়া মোটা মোটা বই লিখে গেছেন, সে সব বই নিয়ে কখনো কোথাও কোন আলোচনা হয় নি। সমাজের কোন স্তরে তাদের লেখা শত শত পাতা কোন প্রভাব ফেলেনি। ইতিহাসে তো দূরের কথা বর্তমানেও তারা নেই। স্কুল – কলেজে পড়ুয়া তরুণ তরুণীদের প্রথম বয়োঃসন্ধি কালে এই সাহিত্যিকদের অবস্থান, মানুষ যত পরিনত হয়, তারাও ততো দূরে ছিটকে পরেন। নিজেরাই দলাদলির মাধ্যমে নিজেদের পুরস্কার দেয়া নেয়া করে কালাতিপাত করছিলেন। আর এদিকে, সেদিনের ছেলে ছোকরা গুলো এখন “ব্লগ” এর মত জিনিস লিখে আলোচনায় আসছে, মানুষকে প্রভাবিত করছে, দেশ তো বটেই বিদেশের সংবাদ মাধ্যমের নজরে আসছে, ববস এর মত প্রতিযোগিতায় অন্যান্য ভাষাভাষী ব্লগারদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পুরস্কার জিতে নিচ্ছে। বুকে পাশটাতে খোঁচা লাগে বই কি, আত্মভিমানেও লেগে যায়। তারা বড় জোর নিজেদের বই ফেরি করে কোলকাতা অব্ধি যেতে পারতেন, আর পুরস্কার বিজয়ী ব্লগাররা ইউরোপ হয়ে এমেরিকা চলে যাচ্ছে, সহ্য করা যায়?

নিজেরা বছর জুড়ে বই মেলার অপেক্ষায় বসে থাকে, সারা বছরের আমদানীর জন্যে। তার জন্যও কত কষ্ট করতে হয়, গোটা মাস প্রকাশনীর স্টলে গিয়ে বসে থেকে ডিউটি দিতে হয়, পাঠকদের সাথে ভেটকি ভেটকি মুখ করে সেলফি তুলতে হয়, অটোগ্রাফ দিতে হয় তাদের নানারকম প্রশ্নের জবাব দিয়ে তাদের কত আব্দার মেটাতে হয়। আধুনিক যুগের সেলস ম্যানদের মত, “ক্লায়েন্ট ইজ কিং” মেনে নিয়ে নিজেদের বই পাঠককে গছাতে কি ঝক্কিই না সামলান তারা। আর ব্লগাররা বিদেশে বসে থেকে পান্ডুলিপি প্রকাশককে মেইল করে পাঠিয়ে দেয়। সেই বই প্রকাশ হয়ে বইমেলাতে চলে আসে আর বহু সময় তাদের বইয়ের থেকে অনেক বেশি সংখ্যায় বিক্রিও হয়। সহ্য করা যায় এসব প্রাণে ধরে?

নিজেদের বইয়ের রিভিউ করার জন্যে, আলোচনায় থাকার জন্যে, সারাক্ষণ পত্রিকার সম্পাদকদের তেল মারে আর চামচামি করে আর সেখানে ব্লগাররা নিজের তুচ্ছ প্রাণ খানা দান করে আলোচনায় এসে যায় বার বার, মেনে নেয়া যায় এসব অভদ্রতা? তাদের সিনিয়ার রাইটারদের বহু চামচামি আর রাজনীতি সহ্য করে তারা আজকের এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছেন, সুতরাং মিডিয়ার সব এটেনশান এখন শুধু তাদের প্রাপ্য। যে সব ব্লগারদের তারা ঠিক করে নামও জানে না তারা এসে তাদের রাজ্যে ঢুকে ছিনিমিনি খেলবে,  না না এ কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না গোলাপী।

তাই তাদের এবারের সংগ্রাম, নিজেদের অস্তিত্বের মানে টিকে থাকার সংগ্রাম। 

তসলিমা এ চেহারা আগেই জেনেছিলেন বলে সমানে ক, খ, গ লিখে যাচ্ছেন, আজও।

No comments:

Post a Comment