কাপড়ের
আলমারীটা এলোমেলো, গোছানো হয়ে ওঠে নি অনেক দিন। গুলিস্তানের যানজটের মত ভয়ঙ্কর রুপ
ধারন করে আছে। নিদারুন আলসেমি বাংলাদেশের সরকারী অফিসারদের মত দিন দিন আরো কুড়ে
বানিয়ে দিচ্ছে। এমেরিকায় বসবাসকারীদের যেমন পৃথিবীর অন্যান্য সব দেশে বসবাসকারীদের
প্রতি অবজ্ঞা কাজ করে ঠিক তেমনই নিজের প্রতি অবহেলা আমার চিরদিনের।
আমি ব্যস্ত,
কাপড়ের সংখ্যাও মাংস ছিনিয়ে নিতে আসা কাকের মত মন্দ নয়।
মেঘ কাছে
আসতেই বাংলাদেশ পুলিশের গলায় বললাম, জনগন, আমাকে একটু সাহায্য করো।
মেঘ পাশের
বাসার লোভী খালাম্মার চোখ করে, এটা ওটা ভাঁজ করে দিতে দিতেই আবার দু একটা টপস ধরে
বলছে, এটা আমার অনেক পছন্দ, আমি নিতে পারি মামাই?
আমি মধুবালা
হাসি দিয়ে বললাম, নাও।
জোছনা ছড়ানো
হাসিতে মুখ আলো করে, কাপড় হাতে নিয়েই আদুরে বেড়াল পায়ে নিজের ঘরের দিকে ছুট। যেনো
এ ঘর থেকে ও ঘরে যেতে যেতে কিছুতেই ছিনতাই না হয়ে যায়।
মেঘ লম্বায়
অনেকটাই আমাকে ধরে ফেলেছে, প্রায় ছুঁই ছুঁই। তখন ওর সাথে হাসলেও বুকটা খঁচ খঁচ করছিলো।
মায়ের ধনী
জমিদারী ওয়ারড্রোবে ডাকু হাসিনার হাত আমিও দিয়েছি বহুবার, এমন কী এই, এইবারও।
মায়ের শাড়ি ভাঁজ করতে গেলে কতবার বলেছি,
এই শাড়িটা বড় হয়ে আমি নেবো। এটা আর পরো না, আমাকে দিয়ে দাও। কামিজ গুলো
নিতান্ত সাইজের কারণে দুটো নিলে দুটো ছেড়ে দিয়েছি। গয়না, দুল, চুড়ি, পারফিউম কী
নেই নি বা আজও নিয়ে যাচ্ছি।
আমি তো এখনো
সেই সময়েই আটকে আছি। পৃথিবী আমাকে পেছনে ফেলে কতোটাই এগিয়ে গেছে। বার বার আমি
সময়ের কাছে হেরে যাই। আজকাল মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, হয়ত সময় এসেছে এখন
সামনে এগোবার। আমার গায়ে লাগুক বা না লাগুক, বেলা তটে অনেক ঢেউ আছরে পরেছে ...
স্কুলে নতুন
বছর শুরু হয়েছে সবে। বিশ্বকাপ ফুটবলের সমর্থক সমক মেঘের উদ্যম উদ্দীপনার শেষ নেই। কর্পোরেট
অফিসারদের মত, ঠিক করে নাস্তা খেয়ে ওপরে এসে দাঁত ব্রাশ করে স্কুলে যায়, বাড়ি ফিরে
হোম ওয়ার্ক করে, টিফিন গুছিয়ে নেয় আর বার বার ট্রাম্পের গলায় আমাকে আশ্বস্ত করে, এ
বছর আমি সব ঠিক করে করবো মা, দেখো। আমি রুটিন ভাঙতে চাই না।
আমিও হিলারি
গলায় উৎসাহ দিয়ে বলি, আমি জানি তুমি পারবে, নিশ্চয় পারবে, সে বিশ্বাস আমার আছে। কঠিন
কিছু তো নয়, সবাই পারছে, কেনো তুমি পারবে না।
মেঘ দেখে
করিস নে ভয়, আড়ালে তার মা মুচকি হাসে ... আমিও তোর মত বয়সে মা, নতুন স্কুল বছরে
ঠিক এই ভেবেছি, করেছিও বছরের প্রথম কয়েক মাস। তারপর এই মনোটোনাস রুটিন, দিনের পর
দিন পড়া মুখস্থ, বাড়ির কাজ, পরীক্ষা, পাশ, ফেল, টিফিন নেয়া সব মিলিয়ে ক্লান্ত করে
ছেড়ে দিতো। আস্তে আস্তে আজ করবো তো কাল, কাল করবো তো পরশু, ফাঁকি দেয়া, মিথ্যে
বলা, সব কিছু মিলিয়ে ডাব্বা দিয়েই স্কুল ইয়ার শেষ হতো।
যদিও ইতিহাস
পরিবর্তন হয় না, খুব কম মানুষই তা পারে তবুও তোর জন্যে সেরাটাই কামনা করছি .........।।
12-09-2016
No comments:
Post a Comment