http://seralekha.com/news/%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%80-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%80
একটি গালি খাওয়ার পোস্ট
একটি গালি খাওয়ার পোস্ট
সাম্প্রতিক বির্তকঃ নারীবাদী বনাম মানবতাবাদী
বন্ধুরা ভিন্ন মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখবে এই আশাতেই আমার বক্তব্য লেখা। আলোচনা – যুক্তি আসবে, কিন্তু গালি, মনোমালিণ্য, বন্ধু বিচ্ছেদ প্রার্থণীয় নয়। ব্যক্তিগত কোন আলোচনা
কিংবা বিষয় ও এটি নয়, এটুকু বন্ধুরা বুঝে নেবে
সেই আস্থা রাখছি
ছেলে বন্ধুরা
ট্রল করছে, কোন “নারীবাদী”
দেখে নি যার মুখে “মেকাপ” নেই। কেন রে ভাই, মেকাপ
করলে কি কালো কে কালো আর সাদা কে সাদা বলা বারণ? কোন শাস্ত্রে
আছে সেটা? সুন্দর সাজলে, শাড়ি পরলে চলমান
অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যাবে না? দুইয়ের মধ্যে বিরোধ কোন
জায়গায়? পোশাক কি হবে, শাড়ি না জীন্স সেটা ব্যক্তিগত কমফোর্টের ব্যাপার, আবহাওয়া
আর পরিবেশে ও ম্যাটার করে। নাগরিক অধিকার হিসেবে সচেতনতা কি পোশাক কিংবা মেকাপের
ওপর নির্ভর করে নাকি? আর এ কথাই বা প্রতিষ্ঠিত হবার কারণ কি, যারা যারা নিজের
অধিকার সর্ম্পকে সচেতন তারা আলাদা ধরনের মানুষ, তাদের পোশাক বা আচরন আলাদা হতে
হবে!
প্রসঙ্গত
একটা গ্রুপের আলোচনা মনে পরছে, কেউ একজন এ ধরনের একটা বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করার
চেষ্টা করছিলো, উচ্চ পদে আসীন, প্রতিষ্ঠিত নারীদের হীরের গয়না, দামী শাড়ি এগুলো
মানায় না। এগুলো ধনীর গৃহ বঁধূদেরই বেশি মানায়। সেখানেও প্রতিবাদ করেছিলাম, হীরের
গয়না, আইফোন, বিজনেস ক্লাশে ভ্রমণ, পাঁচ তারা হোটেলের আয়েশ এগুলো যার যার
ব্যক্তিগত অভিরুচি। কাকে কি মানাবে কিংবা কার কি প্রায়োরিটি জীবনে সেটা বাইরে থেকে
ঠিক করে দেয়ার, কিংবা এ ধরনের প্রথা তৈরী করে দেয়ার আমরা কে? এই জাজমেন্টাল দৃষ্টি
ভঙ্গীর পরিবর্তন আসার কি সময় আসে নি? মেয়েদের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হওয়া একটা
আলাদা কিছু সেটা আর কতকাল একটা ব্র্যাকেটের মধ্যে থাকবে? হীরের গয়না’র শখ বা
বিজনেস ক্লাশে ভ্রমণের শখ কেন ত্যাগ করতে হবে এই অপরাধে? কারো কাছে মনে হতেই পারে,
আমার সামর্থ্য আছে আমি আরাম করে ভ্রমণ করবো, আই ওয়ার্কড ফোর ইট। আবার কেউ ভাবতে
পারে না সে টাকায় আমি অনেক বিলাসী হোটেলে থাকবো, আমার সেটাই বেশি পছন্দ।
কাল বলেছি পাহাড়চূড়াই
ভালো আজ হয়তো সমুদ্রটাই চাই।
দুয়ের মধ্যে বিরোধ তো নেই কিছু মুঠোয় ভরি গোটা ভূবনটাই।
মেয়ে
বন্ধুরা ট্রল করছে, “মানবতাবাদী” শব্দটি নিয়ে। হ্যাঁ আমিও স্পষ্টই ভাবছি,
“নারীদিবস”, “মেয়েদের মেধাতালিকা”, “মেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতা” “নারী
প্রধানমন্ত্রী” “নারী লেখিকা” ইত্যাদি শব্দ গুলো কে পেছনে ফেলে সামনে তাকানোর সময়
আমাদের এখন হয়েছে। “প্রধানমন্ত্রী” একটি পদ যা যোগ্যতা দিয়ে আয়ত্ব করতে হয়, এর
মধ্যে নারী পুরুষের প্রসঙ্গ আশা খুবই অবান্তর। “স্টেফি গ্রাফ” একজন “স্টেফি গ্রাফ”
কারণ তিনি খেলায় অন্য ধরনের হারিয়েই “স্টেফি গ্রাফ” হয়েছেন, নারী হওয়ার কারণে নয়।
তাহলে এখন
প্রশ্ন, সমাজে কি নারী – পুরুষের কোন বৈষম্য নেই তবে?
কবিতায় ফিরি
আবার,
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে ?
মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন "মানুষ হইতে হবে" --- এই তার পণ
বৈষম্য কোথায়
না আছে? সাহিত্য – সংস্কৃতি যাকে সমাজের দর্পন হিসেবে ধরা হয়, তাতে শরৎচন্দ্র থেকে
বঙ্কিম, তারাশঙ্কর থেকে রবি ঠাকুর মেয়েদের সাজগোজ আর রান্নাবান্না, সেবাযত্ন, বড়ি
আচারে’র ওপরই আলোকপাত করে গেছেন। এখনো সিনামের হিট গান মানে, মেয়েদের ট্রল করা।
গাউছিয়া, বইমেলা, বৈশাখের উৎসব মানেই মেয়েদের হেনস্থা। তনু, খাদিজা, পূজা তো এই
বৈষম্যেরই বলি। পুলিশ অফিসারের স্ত্রী হয়েও রক্ষা পায় নি “মিতু”। মেয়েটি যতই
প্রগতিশীল চিন্তা ভাবনা রাখুক না কেন, এক সাথে চারজন ছেলে ঘিরে ধরলে কীভাবে
আত্মরক্ষা করতে হবে সেই প্র্যাক্টিক্যাল শিক্ষাটাই এখন তার জন্যে জরুরী। শুভ সংবাদ
হলো, অনেকেই এই ব্যাপারটা অনুধাবন করেছে এবং মেয়েরা এখন আকছার মার্শাল আর্টের
ক্লাশ করছে। অত্যাচারের প্রতিবাদ হতে হবে শক্তি। কেউ এক ঘুষি মারলে তাকে তিন ঘুষি
মেরে শুইয়ে দেয়ার মত শক্তি অর্জন করতে হবে।
প্রতিকূলতা
মেয়েদেরই বেশি, সর্ব সমাজে। কারণ মেয়েদের গর্ভ ধারণ করতে হয়। নারী শরীরই নারীর
প্রধান প্রতিকূলতা যা প্রকৃতি তাকে দিয়ে দিয়েছে। তার প্রতিবাদের ভাষাও অন্যরকম হতে
হবে। এই বিজনেস ওয়ার্ল্ডে কেউ কাউকে পাশ দেয় না তাই কারো কাছ থেকে কোন সহানুভূতি
কিংবা সাহায্যের আশা দূরাশা মাত্র। আবার এখানে কেউ কাউকে আটকেও রাখতে পারে না তাই
ইচ্ছে থাকলে কারো সাহায্য ছাড়াও এগোনো সম্ভব। আমি “নারী” আমাকে পাশ দাও, কিংবা
আমাকে অত্যাচার করো না, এ ধরনের কিছু আসলে কি কাজে এসেছে না আসে? নিজের যোগ্যতায়
যারা সামনে এগোচ্ছে তারা জানে জায়গা তৈরী করে নিতে হয়। এর উদাহরণ হিসেবে বহু নারীর
নাম নেয়া যায় আমাদের বাংলাদেশেই। “নারীবাদী” বলে নিজেকে আলাদা ট্যাগ না দিয়ে, বরং নিজেকে
কাজে প্রমান করে দেয়াটাই হবে কাজের কাজ। “মেয়েদের” মধ্যে আমি প্রথম হওয়ার চেয়ে
“সবার” মধ্যে আমি প্রথম হওয়াটাই আমার দৃষ্টিতে অন্তত শ্রেয়।
আমাদের সময়
ঢাকা ভার্সিটিতে এটা খুবই প্রতিষ্ঠিত ছিল, দু’ একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে “ফার্স্ট
ক্লাশ” মেয়েদের দখলে ছিলো কারণ মেয়েরা প্রচন্ড উচ্চাকাংখী ও পরিশ্রমী ছিলো যেটা
ছেলেরা ছিলো না। তারা আড্ডা দিয়ে, মিছিল করে, মেয়েদের পেছনে বখাটেপনা করে সময় নষ্ট
করতো।
তবে, আলোচনা
খুবই দরকারী, সময়পোযোগী। কিছুটা সামনে আমরা এগিয়েছি কিন্তু আরো সামনে আসতে হবে। এতো বাস্তব থেকে উদাহরণ
টানে আজকাল সবাই। হ্যাঁ আমিও বলছি, বিয়ে করে মেয়েকেই শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে কেন?
মেয়েকেই কেন ছেলের বাড়ির সাথে মানিয়ে নেয়ার স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে? সব দায়
কেন মেয়ের ওপর বর্তায় বা বর্তাবে? এই আলোচনা, প্রতিবাদ, সচেতনতা তৈরীর চেষ্টা আমাদেরকে
চালিয়ে যেতে হবে।
আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে!'
হায় কপাল
আমার, এখানেও ছেলেকেই বলা হয়েছে নতুন সূর্য আনতে। সেই উদাহরণ টেনেই বলছি, জানি
সমাজ একদিনে পরিবর্তন হয় না তাই লড়াই চলতেই থাকবে। বারবার বারবার কথাগুলো উচ্চারণ
করতে হবে যাতে মানুষের চিরাচরিত চিন্তায়, প্রথায় আঘাত পরে, চেতনা হয়, বৈষম্য গুলো
অনুধাবন করতে পারে, নজরে আসে। তবেই যদি কিছু হয়। সেই ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিংবা
রাজা রামমোহন রায় তো আর নেই যারা আমাদের হয়ে লড়তে আসবেন। ঠাকুর বাড়ি ও নেই সমাজকে
তোয়াক্কা না করে মেয়েদের – বউদের পড়াশোনা, গান বাজনা চর্চার সুযোগ দেবে। যদিও
ঠাকুর বাড়ি কখনোই মূল সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে নি। তারা সকল থেকে আলাদা তাদের সমাজ
গড়ে নিয়েছিলো।
আজকের
শ্লোগান হোক আবারো, মানুষ হওয়ার শ্লোগান।
আর নারী নয় আর পুরুষ নয়
পথে যখন নেমেছি তখন সকলই মানুষ হয়
হবেই হবে জয় একদিন নিশ্চয়
১১/০১/২০১৭
No comments:
Post a Comment